শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
ষোড়শ সংস্কার
প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে বর্ণিত উত্তরণের আচার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
ষোড়শ সংস্কার (সংস্কৃত: संस्कार) হচ্ছে ধর্মীয় সংস্কারের ধারণা ও ধরন ঐতিহ্য অনুসরণ করে হিন্দুদের সমগ্র জীবনে অনুষ্ঠিত ষোলোটি প্রধান মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। এই সংস্কারগুলি গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে শিশুর জন্ম, শিক্ষা, বিবাহ এবং মৃত্যুর পর্যন্ত বিস্তৃতি। ধর্মস্মৃতি শাস্ত্রগুলোতে প্রধান দশটি সংস্কারের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাদেরকে একত্রে দশবিধ সংস্কার বলা হয়।
সংস্কারসমূহের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গার্হ্যসূত্র মতে ঐচ্ছিক ও অবশ্যক সংস্কারের সংখ্যা ১২ থেকে ১৮টি। পরবর্তীকালে ১৬টি সংস্কার মান্যতা লাভ করে।[১] এগুলিকেই ষোড়শ সংস্কার বলা হয়। এই সংস্কারগুলি হল: গর্ভাধান, পুংসবন, সীমন্তোন্নয়ন, জাতকর্ম, নামকরণ, নিষ্ক্রমণ, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, কর্ণভেদ, বিদ্যারম্ভ, উপনয়ন, বেদারম্ভ, কেশান্ত ও ঋতুশুদ্ধি, সমাবর্তন, বিবাহ ও অন্ত্যেষ্টি। হিন্দুধর্মের বাইরেও জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের কোনো কোনো শাখাসম্প্রদায়ে এই সব আচার-অনুষ্ঠানের মান্যতা রয়েছে।
Remove ads
গর্ভাধান
গর্ভাধান (অর্থ: জরায়ুতে শুক্র স্থাপন) হিন্দুধর্মের ষোড়শ সংস্কারের প্রথম সংস্কার।[২] এটি স্ত্রীর দ্বিতীয় বিবাহরূপ সংস্কার। গর্ভাধান সংস্কারে স্ত্রীর প্রথম রজোদর্শনের ষোলো দিনের মধ্যে স্বামী পবিত্র হয়ে সন্ধ্যায় সূর্যার্ঘ্য প্রদান করে যথাবিধি বহ্নিস্থাপনের পর পঞ্চগব্য দ্বারা স্ত্রীকে শোধন করে সন্তান উৎপাদনার্থ গ্রহণ করেন।[৩]
পুংসবন
সীমন্তোন্নয়ন
জাতকর্ম
জাতকর্ম (IAST: Jātakarman, সংস্কৃত: जातकर्मन्) (আক্ষরিক অর্থে, জন্মগত আচার) হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রধান সংস্কর, যা একটি শিশুর জন্ম গ্রহণে করা হয়।[৪]
নাভিচ্ছেদন ও শিশুস্নান, যখন সন্তানের জন্ম হয় তখন প্রথমে ধাত্রী আদি স্ত্রীলোক সন্তানের শরীরকে জরায়ু হইতে পৃথক করে মুখ, নাসিকা, কর্ণ ও চক্ষুরাদি হইতে শীঘ্র মালিন্য দূর করিবে এবং কোমল বস্ত্রে মুছিয়া শুদ্ধ করিয়া তাহাকে পিতার ক্রোড়ে (কোলে) দেয়। যেখানে বায়ু ও শৈত্য প্রবেশ না করে, এরূপ স্থানে বসে পিতা (সন্তানের নাভিদেশ হইতে) নাড়ীর এক বিঘৎ পরিমাণ বাদ দিয়া উর্দ্ধ দিকে সূত্রদ্বারা বন্ধন করে । বন্ধনের উপর হইতে নাড়ী ছেদন করে ঈষদুষ্ণ জলে শিশুকে স্নান করাইয়া শুদ্ধ বস্ত্রে মুছিয়া নতুন শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে। এরপর পিতা যব, যষ্ঠিমধু ও ঘৃত দ্বারা সন্তানের জিহ্বা স্পর্শ করে মন্ত্রোচ্চারণ করেন এ কর্ম গুলোকে জাতকর্ম বলে। এটি সাধারণত উত্তরণের একটি ব্যক্তিগত আচার যা নতুন বাবা-মা, শিশুর আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও পালন করেন।[৫]
Remove ads
নামকরণ
হিন্দুধর্মে শিশুর নাম রাখার জন্য একটি সংস্কার হলো নামকরণ। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দশম, একাদশ, দ্বাদশ বা শততম দিবসে নামকরণ করণীয়। এই সংস্কারের দিন, শিশুকে স্নান করানো হয় এবং নতুন পোশাক পরানো হয়। পিতামাতার দ্বারা নির্বাচিত তাদের আনুষ্ঠানিক নাম ঘোষণা করা হয়।[৬] বেশিভাগ সময় এটি অন্নপ্রাশনের দিন একসাথে করা হয়।[৬]
নিষ্ক্রমণ
নিষ্ক্রমণ (IAST: Niṣkrāmaṇa, সংস্কৃত: निष्क्रम) আক্ষরিক অর্থ: "বাইরে যাওয়া, বেরিয়ে আসা"।[৭] এই উত্তরণের অনুষ্ঠানে বাবা-মা শিশুকে বাইরে নিয়ে যান এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটি প্রথমবারের মতো বাইরের পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়।[৬][৮] এটি সাধারণত জন্মের পর চতুর্থ মাসে পালন করা হয়। এই আচার উপলক্ষ্যে নবজাতককে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, চাঁদ বা সূর্য দেখানো হয়। কিছু পরিবার শিশুটিকে প্রথমবার মন্দিরে নিয়ে যায়।[৬]
উত্তরণের আচারের শিশুকে স্নান করানো এবং তাকে নতুন পোশাক পরানো হয়। শিশুর ভ্রমণে মা এবং বাবা উভয়ই, ভাইবোন (যদি থাকে) সেইসাথে কিছু কাছের প্রিয়জন সাথে থাকে।[৮][৯]
Remove ads
অন্নপ্রাশন
অন্নপ্রাশন হিন্দুধর্মীয় শুদ্ধিজনক সংস্কারের অন্যতম একটি বিশেষ সংস্কার বা অনুষ্ঠান। সাধারণ পুত্রের ষষ্ঠ মাসে এবং কন্যার পঞ্চম, অষ্টম বা দশম মাসে পূজাদি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম অন্নভোজনের নাম অন্নপ্রাশন। বৈদিক হিন্দু সংস্কৃতিতে অন্নপ্রাশন না হওয়া পর্যন্ত শিশু অন্ন গ্রহণ করে না।[১০][১১] এ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করতে হয়। নিমন্ত্রিত আত্মীয়েরা আশীর্বাদ সহযোগে সাধ্যমাফিক উপহার সামগ্রী প্রদান করে। এটি পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশ মুখেভাত, কেরালায় চোরোনু, হিমাচল প্রদেশে ভাথ খুলাই এবং নেপালে পাসনিও নামেও পরিচিত ।[১২]
Remove ads
চূড়াকরণ
চূড়াকরণ (সংস্কৃত: चूडाकरण) হলো শিশুর প্রথম চুল কাটার আনুষ্ঠিকতা।[৬] এই সংস্করটি প্রথম বছরের শেষে বা তৃতীয় বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সংঘটিত হয়। এই দিনে মা কখনো কখনো তার বিয়ের শাড়ি পরিধান করে এবং বাবার সাথে শিশুর চুল এবং নখ কাটা হয়।[৬] উত্তরণের এই আচারের তাৎপর্য হ'ল শিশুর স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য চক্রাকার পদক্ষেপ।[১৩] আচারটিকে পবিত্রতার উত্তরণ হিসেবে দেখা হয়। এটি সাধারণত প্রথম জন্মদিনের দিনেও করা হতে পারে। তবে কিছু পাঠ্য অনুযায়ী এটি তৃতীয় বা সপ্তম বছরের আগে সম্পন্ন অবশ্যক।[১৪]
Remove ads
কর্ণভেদ
কর্ণভেদ (সংস্কৃত: कर्णवेध) আক্ষরিক অর্থ "কান ভেদ করা বা কানে ছিদ্র করা"। এটি একটি ছোটখাটো ঐচ্ছিক আচার যা অধিকাংশ গৃহসূত্রে উল্লেখ নেই। এই ঐচ্ছিক আচারের উদ্দেশ্য হল প্রাথমিকভাবে শরীরের অলংকরণ এবং এটি শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া এবং সংস্কৃতির উদ্ভবের অংশ। ছিদ্র সাধারণত একটি পরিষ্কার সোনার সুতো বা রূপার সুই দিয়ে করা হয়। এই সংস্কারটি মেয়ে শিশুদের বেশি পালন করতে দেখা যায়। অনেক সময় কানের সাথে সাথে নাকেও ছিদ্র করা হয়।
বিদ্যারম্ভ
বিদ্যারম্ভম ( সংস্কৃত : विद्यारम्भम्) হল একটি হিন্দু ঐতিহ্য, যা ছোট বাচ্চাদের জ্ঞান, অক্ষর এবং শেখার প্রক্রিয়ার জগতে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই অনুষ্ঠানটি ২-৫ বছরের মধ্যে একটি শিশুর জন্য সঞ্চালিত হতে পারে
উপনয়ন
উপনয়ন একটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৈদিক ও শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বী বালকেরা গায়ত্রী মন্ত্র সংস্কারে দীক্ষিত হয়। সনাতন বৈদিক শাস্ত্রানুসারে, উপনয়ন সনাতন ধর্মালম্বী বালকদের বৈদিক শিক্ষাদিক্ষা আরম্ভকালীন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার অনুষ্ঠান।
সনাতন ধর্মীয় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণের জন্য উপনয়নের ন্যূনতম বয়স যথাক্রমে সাত, তেরো ও সতেরো বছর কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বয়স সীমা ১৮, ২১ অথবা ২৪ বছর বয়স।[১৫] উপনয়নকালে বালকদের বৈদিক মন্ত্রোপদেশ শিক্ষা দেওয়া হয়। মনুস্মৃতি অনুযায়ী, এরপর তারা ব্রহ্মচারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। বাঙালি হিন্দু সমাজে উপনয়ন সংস্কার শুধু ব্রাহ্মণদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তবে ব্রহ্ম পুরাণ অনুযায়ী শূদ্রও সংস্কার ও আগম জ্ঞান সম্পন্ন হলে দ্বিজ হতে পারে।[১৬]

Remove ads
বেদারম্ভ
বেদারম্ভ হল উত্তরণের আচার যা গুরুকুল বা পাঠশালায় (স্কুল) বেদ ও উপনিষদ শেখার সূচনা করে। এটি একটি অগ্নি আচার ছিল ( যজ্ঞ ), যেখানে শিক্ষক এবং ছাত্র একসাথে বসে, শিক্ষক দীক্ষা স্তোত্র আবৃত্তি করে এবং ছাত্র অনুসরণ করে। এই আচারটি পুরানো পাঠ্যগুলিতে অনুপস্থিত, এবং পান্ডে পরামর্শ দেন যে পরবর্তী ঐতিহ্য একটি স্কুলে গৃহীত হওয়ার মধ্যে পার্থক্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং বেদ অধ্যয়নের প্রকৃত সূচনা হয় যখন ছাত্র সেই পাঠগুলি শেখার জন্য প্রস্তুত হয়।
ঋতুশুদ্ধি
ঋতুশুদ্ধি, যাকে ঋতু কালা সংস্করণও বলা হয়। মেয়েদের বয়সের এই অনুষ্ঠান হয় ঋতুস্রাব বা প্রথম মাসিকের পরে। একটি মেয়ের জীবনে এই মাইলফলকটি তার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবরা উপহার দিয়ে এবং মেয়েটি অনুষ্ঠানের জন্য শাড়ি পরে পালন করে। [১৭][১৮] আধুনিক সময়ে "অর্ধ-শাড়ি পার্টি" বা অর্ধ-শাড়ি অনুষ্ঠান হিসেবে পালিত হয়। যেখানে মেয়েটির মহিলা আত্মীয় এবং বন্ধুরা জড়ো হয় এবং সে অর্ধ-শাড়ি এবং অন্যান্য উপহার গ্রহণ করে এবং পরিধান করে।
সমাবর্তন
পাঠ শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা গুরুগৃহ থেকে নিজগৃহে ফিরে আসার সময় যে অনুষ্ঠান হয় তার নাম সমাবর্তন । এই অনুষ্ঠানে শিক্ষকমহাশয় বা গুরু শিক্ষার্থীকে অনেক মূল্যবান উপদেশ দেন ।
বিবাহ
বিবাহ ( IAST : Vivāha, সংস্কৃত: विवाह) হল সংস্কারগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরণ এবং আচার-অনুষ্ঠান। বিবাহের আচার এবং অনুষ্ঠানগুলি একটি দম্পতির বাগদানের সাথে শুরু হয় এবং বিবাহের সমাপ্তির পরে উত্তরণের অনুষ্ঠান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এগুলি সাধারণত খুব রঙিন হয় এবং উদযাপনগুলি বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। হিন্দু বিবাহের বিস্তারিত আচার এবং প্রক্রিয়া ভিন্ন হয়। তথাপি, হিন্দু বিবাহে প্রচলিত কয়েকটি মূল আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে - কন্যাদান, পানিগ্রহন এবং সপ্তপদী, যেগুলি যথাক্রমে, পিতার দ্বারা কন্যাকে দান দেওয়া, মিলন বোঝাতে স্বেচ্ছায় আগুনের কাছে হাত ধরা এবং প্রতিটি ধাপে সাতটি পদক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত। আগুনের আগে একে অপরের কাছে একটি শপথ/প্রতিশ্রুতি। বিবাহ সংস্কর মূলত একটি বৈদিক যজ্ঞআচার, বৈদিক স্তোত্র আবৃত্তি সহ। একটি হিন্দু বিবাহের প্রাথমিক সাক্ষী হল বৈদিক অগ্নিদেবতা (বা পবিত্র অগ্নি) অগ্নি, পরিবার এবং বন্ধুদের উপস্থিতিতে।
অন্ত্যেষ্টি
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads