শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

সল বেলো

সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

সল বেলো
Remove ads

সল বেলো (সলোমন বেলো ১৯১৫-২০০৫) একজন কানাডীয়-আমেরিকান লেখক। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি পুলিৎজার, নোবেল এবং ন্যাশনাল মেডেল অব আর্টস অর্জন করেন।[] তিনিই একমাত্র লেখক, যিনি ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড ফর ফিকশান তিন তিনবার[] অর্জন করেন এবং যিনি কিনা আমেরিকান বর্ণমালায় অনবদ্য অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশান থেকে আজীবন সম্মাননা পান[]

দ্রুত তথ্য সল বেলো, জন্ম ...

সুইডিশ নোবেল কমিটির মতে, ''বেলোর লেখায় সমৃদ্ধ পিকারেস্ক উপন্যাসের মিশ্রণ প্রকাশ পেয়েছিলো, যার সাথে ছিলো দার্শনিক কথোপোকথনের মধ্য দিয়ে আমাদের সংস্কৃতি, বিনোদনমূলক এডভেঞ্চার, কঠোর ও মর্মান্তিক অংশ গুলোর সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ। আর এ সব-ই গড়ে উঠে একজন মজার কথক এর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বর্ণনার মধ্য দিয়ে যা আমাদের অভিনয়ের দিকে ধাবিত করে অথবা অভিনয় থেকে দূরে রাখে- আর তা আমাদের বয়সের সংকট বলা যেতে পারে''। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্য রয়েছে- দ্য এডভেঞ্চার অব অগি মার্চ, হেণ্ডারসন দ্য রেইন কিং, হেরযগ, মি. স্যামলার’স প্ল্যানেট, সী'জ দ্য ডে, হামবোল্ড’স গিফট এবং রেবেলস্টেইন। তাকে বিশ শতকের সবচেয়ে সেরা লেখক বলে বিবেচনা করা হয়।

Remove ads

জীবনী

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রারম্ভিক জীবন

সল বেলো নামে পরিচিত হলেও তার পারিবারিক নাম ছিলো সলোমন বেলো। মা লেস্কা এবং বাবা আব্রাহাম বেলোর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে কানাডার কুইবেক শহরের লেশিন নামক স্থানে স্থানান্তরের প্রায় দুই বছর পর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।  বড় তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় বোন জেল্ডা জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৭ সালে, ভাই ময়েশে (পরবর্তীতে যার নাম হয় মরিচ) ১৯০৮ সালে এবং শ্যামুয়েল জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালে।  বেলোর পরিবার ছিলো লিথুনীয় ইহুদী, তার বাবা ভিলনিয়াসে জন্মগ্রহণ করেন। বেলো জুলাইতে জন্মগ্রহণ করলেও মে মাসে তিনি তার জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন করতেন।

আট বছর বয়সের শ্বাসনালীর প্রদাহ জনিত অসুস্থতার সময়টা তাকে আত্ম-নির্ভরশীল হতে শেখায়, এমনকি এই সময়টাই বই পড়ার প্রতি তার তীব্র ক্ষুধা মেটানোর সুযোগ এনে দেয়। এ সময় হ্যারিয়েট বিচার স্টো’র আংকেল টম’স কেবিন পড়ে তিনি লেখক হবার স্বপ্ন দেখেন।

সল বেলোর পরিবার যখন শিকাগোর পশ্চিমে হাম্বলডট পার্কে স্থানান্তরিত হয়, তার বয়স তখন মাত্র নয় বছর। এই শহরই তার অধিকাংশ উপন্যাসের পটভূমি তৈরি করেছিলো। এখানে তার বাবা পেঁয়াজের ব্যবসা শুরু করেন, পাশাপাশি তিনি একটা বেকারীতে কয়লা সরবরাহের কাজ করতেন। সতেরো বছর বয়সে সল বেলো তার মাকে হারান। সলের মা ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক এবং তিনি চাইতেন সল একজন ইহুদী পণ্ডিত হউক কিংবা একজন কনসার্ট বেহালা বাদক। সল এই চাওয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন- পরবর্তীতে তিনি তার ধর্মীয় চেতনায় এভাবে বেড়ে ওঠার নাম দেন সাফোকেটিং অর্থোডক্সি এবং তরুণ বয়সেই লেখালেখি শুরু করেন। বেলো উইলিয়াম শেকসপিয়র এবং রাশিয়ার সেরা সাহিত্যিকদের লেখা পড়ে বেড়ে ওঠেন। শিকাগোতে তিনি এন্থ্রোপোসোফিক্যাল সোসাইটি অব শিকাগোর সাথে এন্থ্রোপোসোফিক্যাল স্টাডিতে যোগ দেন। বেলো যখন শিকাগোর টিউলি হাই স্কুলে ছিলেন তখন তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সে সময়কার আরেকজন লেখক আইজ্যাক রোজেনফেল্ডের। পরবর্তীতে তার এই বন্ধুর চরিত্রকে ভিত্তি করেই তিনি ১৯৫৯ সালে হেন্ডারসন দ্য রেইন কিং’র কিং-ডাহফু চরিত্র সৃষ্টি করেন।

শিক্ষা ও প্রারম্ভিক কর্মজীবন

বেলো ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে পড়াশুনা শুরু করলেও তিনি নর্থ-ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে চলে যান। মূলত সাহিত্য বিষয়ে পড়তে চাইলেও তিনি ইংরেজি বিভাগে ইহুদী-বিদ্বেষী মনোভাব বুঝতে পারেন।তাই সাহিত্যের পরিবর্তে তিনি নৃতত্ত্ব ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। নৃতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশুনা করার ফলে তার লেখায় ও লেখার ধরনে নৃতত্ত্বের প্রভাব পড়ে। তার বিভিন্ন কাজে নৃতত্ত্ব বিষয়ক জ্ঞানের উল্লেখ পাওয়া যায়। কাছের বন্ধু এলান ব্লুমকে নিয়ে করা বেলোর বর্ণনাকে কে আরো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে গিয়ে জন পোডরের্টজ বলেন- বেলো এবং ব্লুম দুজনই বই এবং আইডিয়াকে ঠিক সেভাবেই গ্রহণ করতো, শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় আমরা যেমন বাতাস গ্রহণ করি।
১৯৩০ এর দশকে বেলো ওয়ার্কস প্রোগ্রেস এডমিনিস্ট্রেশান রাইটার্স প্রোজেক্টর শিকাগো শাখায় যুক্ত ছিলেন, যেখানে রিচার্ড রাইট এবং নেলসন এলেগ্রেন এর মতো শিকাগোর ভবিষ্যত উদীয়মান সাহিত্যিকগণও সেখানে ছিলেন।তাদের অনেকেই ছিলেন উগ্রবাদী এবং যুক্ত্ররাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টীর সদস্য। অন্যদিকে বেলো ছিলেন ট্রটস্কি চেতনা ধারার। যেহেতু স্টালীনীয় ধারার লেখকের সংখ্যা সেখানে বেশি ছিলো- তাই বেলো সব সময়ই বিদ্রুপের শিকার হতো।
সেনাবাহিনীতে নাম লেখানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বেলো আবিষ্কার করেন ছোটবেলা থেকে তিনি এতোদিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বাস করছেন এবং এরপর ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ নাগরিকত্ব পান। মার্চেন্ট মেরিন বা নেভির সদস্যরা যুদ্ধের সময় নৌ পথে সৈনিক এবং প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও মালামাল সরবরাহ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলো মার্চেন্ট মেরিন এ যোগ দেন। এখানে কর্তব্যপালনরত সময়ে ১৯৪৪ সালে তিনি তার প্রথম উপন্যাস ড্যাংলিং ম্যান রচনা করেন।
১৯৪৬ সাল থেকে তিনি ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭ সালের শুরুর দিকে তার দ্য ভিক্টিম উপন্যাসের প্রচারনার জন্য ৫৮ অরলিন স্ট্রীটের বিশাল একটি পুরনো বাড়িতে গিয়ে উঠেন। ১৯৪৮ সালে গাগেনহিম ফেলোশিপ অর্জন করেন যা তাকে প্যারিস যাওয়ার সুযোগ এনে দেয়। ১৯৫৩ সালে প্যারিসে তিনি দ্য এডভেঞ্চার অব অগি মার্চ উপন্যাস রচনা শুরু করেন।সমালোচকরা তার পিকারেস্ক উপন্যাসের সাথে সতেরো শতকের স্প্যানিশ ক্ল্যাসিক ডোন কিক্সোট এর সাদৃশ্য খুজে পান।
কথাবার্তার ভিতর দিয়ে কাহিনী এগিয়ে চললেও দ্য এডভেঞ্চার অব অগি মার্চর দার্শনিক ঢঙ্গের জন্য এটি ঠিকই বেলোকে একজন প্রধান লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৫৮ সালে বেলো আবার ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার শিক্ষকতায় ফিরে আসেন। এসময় তিনি এবং তার স্ত্রী সাশা মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পল মিহ্ল এর কাছ থেকে মনো-চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালের স্প্রিং টার্মে তিনি ইউনিভার্সিটি অব পুয়ের্তো রিকো তে সৃজনশীল লেখা বিষয়ে পাঠদান করেন। উইলিয়াম কেনেডি ছিলো তার অন্যতম একজন ছাত্র, যিনি বেলোর কাছ থেকেই কল্পকাহিনী লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।

শিকাগোতে প্রত্যাবর্তন ও মধ্য-কর্মজীবন

বেলো কয়েক বছর নিউ ইয়র্কে থেকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়'র কমিটি অন সোশ্যাল থট এর একজন অধ্যাপক হিসেবে শিকাগোতে ফিরে আসেন ১৯৬২ সালে। এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য ছিলো মেধাবী গ্র্যাজুয়েটদেরকে অধ্যাপকদের খুব কাছে থেকে বহুমুখী কাজ করার ও শেখার সুযোগ করে দেয়া। বেলো তার প্রিয় বন্ধু দার্শনিক এলান ব্লুমের সাথে এখানে ৩০ বছরেরও বেশি সময় শিক্ষকতা করেন।
বেলোর শিকাগোর ফিরে আসার পিছনে কিছু কারণ ছিলো এবং তিনি সেখানে তার তৃতীয় স্ত্রী সুশান গ্লাসম্যানকে নিয়ে হাইডপার্কের কাছাকাছি জায়গায় উঠেন। শিকাগো অমার্জিত,কুরুচিপূর্ণ জায়গা হলেও তার কাছে এ শহরকে প্রাণবন্ত মনে হয়েছিলো এবং তিনি মনে করতেন নিউ ইয়র্কের চাইতে আমেরিকাকে প্রতিনিধিত্ব করতে শিকাগোই বরং বেশি যোগ্য। তিনি পুরনো স্কুল বন্ধু এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ১৯৮২ সালের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেলোর এলাকাটি ছিলো শিকাগোর অপরাধ জগতের মূলকেন্দ্র, বেলো লেখালেখির জন্য এমন জায়গাতে বাস করাকে উপযুক্ত মনে করতেন এবং নিজের ‘বন্দুকটির সাথে লেগে থাকেন’।
১৯৬৪ সালে হেরযগ উপন্যাস এর মাধ্যমে সেরা বিক্রির তালিকায় অন্তর্ভূক্তি পায়। বেলো একজন মধ্যবয়স্ক, সমস্যায় জর্জরিত অধ্যাপক চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কাহিনীর এই সেরেব্রাল উপন্যাসের এতো ব্যাপক বিক্রি দেখে অবাক হন। বেলো আবারো মানসিক অস্থিরতা আর মেধাবীদের সাথে এর সম্পর্ক নিরুপণে মনোযোগ দেন এবং রচনা করেন হামবোল্ড’স গিফট। বেলো এখানে তার প্রয়াত বন্ধু, সম-সাময়িক ও প্রতিদ্বন্দ্বী সাহিত্যিক, মেধাবী কিন্তু মানসিক বিপর্যয়গ্রস্ত ডেলমোর শোয়ার্ কে ভিত্তি করে উপন্যাসের মূল চরিত্র ভন হাম্বল্ড ফ্লেইশার সৃষ্টি করেন।তিনি ১৯৬৯ সালে আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস এন্ড সায়েন্স এর ফেলো নির্বাচিত হন।

সাহিত্যে নোবেল অর্জন ও পরবর্তী কর্মজীবন

হাম্বল্ডট’স গিফট এর সাফল্যের জন্য বেলোকে ১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।সুইডেনের স্টকহোমের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে রাখা বক্তৃতায় সেদিন বেলো লেখক সমাজকে মানসিক স্থবিরতা ভেংগে জেগে ওঠার ও সভ্যতার বিকাশ সাধনের আহবান জানান।
তার পরের বছর ন্যাশনাল এন্ডৌমেন্ট ফর দ্য হিউম্যানিটি তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্যের সর্বোচ্চ সম্মানজনক জেফারসন লেকচারের জন্য মনোনীত করেন। মানবতায় অবদানকারীদেরকে এ মনোনোয়ন দেয়া হয়। তার লেকচারের শিরোনাম ছিলো-‘লেখক এবং তার দেশ, পরস্পরের দিকে তাকিয়ে’
১৯৮১ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৮২ সালের মার্চ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টোরিয়ায় ভিজিটিং ল্যান্সডাউন স্কলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তিনি রাইটার ইন রেসিডেন্স উপাধি লাভ করেন।
বেলো জীবনভর পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন, ইউরোপে যেতেন সবচেয়ে বেশি। এমনও হয়েছে- বছরে দুইবারও ইউরোপ গিয়েছিলেন। তরুণ বয়সে বেলো একদিন লিয়ন ট্রটস্কির সাথে দেখা করতে মেক্সিকোতে যান। কিন্তু রাশিয়ান নির্বাসিন বিপ্লবীর হাতে তাদের দেখা হওয়ার আগের দিন ই ট্রটস্কি খুন হন।
বেলো ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং তার সামাজিক সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে বেশ বৈচিত্র থাকতো। আমেরিকান ঔপন্যাসিক এবং সাহিত্য সমালোচক রালফ এলিজন তার কাছের বন্ধু ছিলেন। তার অন্যান্য বন্ধুদের মধ্যে আছেন শিকাগো ডেইলি নিউজ পত্রিকার সাংবাদিক সিডনি জে. হ্যারিস এবং আমেরিকান কবি জন বেরিম্যান
বেলোর প্রথম উপন্যাসগুলোর বিক্রি তেমন ভালো না হলেও হারযগ’র বিক্রির সাথে সাথে সেগুলোর বিক্রিও বেড়েছিলো। বেলো তার বৃদ্ধ বয়সেও শিক্ষকতা চালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে তিনি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও ধ্যান-ধারণার আদান-প্রদানের ব্যাপারগুলো বেশ উপভোগ করতেন। তিনি ইয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি', প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, 'ইউনিভার্সিটি অব পুয়ের্তো রিকো, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, বার্ড কলেজ এবং বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। বোস্টনে তিনি ইংরেজ ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার এবং সাহিত্য সমালোচক জেমস উডের সাথে শিক্ষকতা করেন, সেসময় তার সাথে সী’জ দ্য ডে নিয়ে আলোচনা করতেন। বোস্টনে যোগদানের জন্য তিনি ১৯৯৩ সালে শিকাগো থেকে ম্যাসাচুসেটের ব্রুকলিনে চলে আসেন আর এখানেই ২০০৫ সালের ৫ এপ্রিল ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাতেলেব্রোতে অবস্থিত শহী-হারেম নামক ইহুদী সমাধিক্ষেত্রে সমাধিস্থ করা হয়।
প্রচুর পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি ভায়োলিনও বাজিয়েছেন আবার খেলাধুলার খোজ-খবরও রাখতেন। কাজ ছিলো তার জীবনের ধ্রুব সত্য। এরপরো মাঝেমাঝে তিনি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গুলোকে হতাশ করে উপন্যাস লেখা প্রায় থামিয়ে দিতেন।

Remove ads

ব্যক্তিগত জীবন

বেলো ৫ বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পঞ্চমবার ছাড়া প্রত্যকবারই বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথম স্ত্রীর পুত্র গ্রেগ বেলো একজন সাইকোথেরাপিস্ট। গ্রেগ তার বাবার মৃত্যুর প্রায় এক যুগ পরে ২০১৩ সালে সল বেলো’স হার্ট: আ সন্স মেমোয়ের[] প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর পুত্র এডাম এর সত্য কাহিনী ভিত্তিক ইন প্রেইজ অব নেপোটিজম প্রকাশ পায় ২০০৩ সালে। ২০০০ সালে যখন তার বয়স ৮৪ বছর, পঞ্চম স্ত্রী ফ্রীডম্যান তার চতুর্থ সন্তান ও প্রথম কণ্যার জন্ম দেন[]

Remove ads

ভিত্তি ও রচনাশৈলী

বেলোর লেখা আধুনিক সভ্যতার বিশৃংখলার কথা বলে, বলে- মানুষের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার ক্ষমতার কথা এবং মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের কথা। বেলো আধুনিক সভ্যতার ভয়ংকর কিছু সমস্যা, এদের উন্মাদনা (উন্মত্ততা) ও বিষয়াসক্তি তৈরির ক্ষমতা এবং জ্ঞানকে ভুল দিকে প্রবাহিত করার সম্ভাবনা দেখেছেন। তার রচিত কল্পকাহিনীর প্রধান চরিত্রগুলোর এমন বৈশিষ্ট্যসূচক ক্ষমতা থাকে, যা তাদেরকে সমাজের নেতিবাচক শক্তির বিরুদ্ধে দাড়াতে সাহায্য করে। প্রায়ই এইসব চরিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয় একজন ইহুদিকে এবং তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী চেতনা কাজ করে।

যদিও বেলো ইহুদী লেখক নন, তার লেখায় সাধারনত ইহুদীদের জীবন ও পরিচয় প্রধান বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান পায়। তার লেখায় আমেরিকাকে বেশ মর্যাদা দিতে দেখা যায়। আমেরিকার প্রতি তার মুগ্ধতার কথা স্বতন্ত্র ও স্বচ্ছন্দ লেখনিতে প্রকাশ পায়।

বেলোর প্রচুর কাজের সাথে এমনকি বেশ কিছু উক্তির সাথে মার্সেল প্রুস্ত্‌'হেনরি জেমস' এর কাজের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। বেলোর রসিক ধাঁচের উপস্থাপনের ফলে লেখাগুলো বৈচিত্র পেয়েছে। বিভিন্ন ফিকশান বা কল্পনাধর্মী কাহিনীতে তিনি তার নিজের জীবনের বিভিন্ন অংশকেই তুলে ধরেছেন।তার সৃষ্ট অনেক চরিত্রের সাথে তার নিজের মিল পাওয়া যায়।

সমালোচনা, বিতর্ক এবং রক্ষণশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

সারাংশ
প্রসঙ্গ

মার্টিন এমিস বেলোর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন- ''তিনি আমার দৃষ্টিতে আমেরিকার সর্বকালের সেরা লেখক। তিনি যেন প্রকৃতিরই উপহার। তিনি পূর্বের সব নিয়ম বদলে দিয়েছেন।'' তিনি আরো বলেন-''অন্য যে কারো চেয়ে তার বাক্য গুলো বেশি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ। ''
লিন্ডা গ্র্যান্ট'' বলেন- ''বেলো তার কল্পিত কাহিনীতে আমাদেরকে যা বলতে চেয়েছিলেন, তা কাহিনীকে গুরুত্ববহ করে ঘটনাকে জীবন্ত করে তোলে''। লিন্ডা গ্র্যান্ট মনে করেন বেলোর তেজ, জীবনীশক্তি, রসবোধ আর আবেগ সব সময়ই তার মানসিক দৃঢ়তার সাথে মানিয়ে যেত। গণমাধ্যমের একঘেয়ে প্রচারণা কিংবা ফেলা আসা ষাটের দশকের কটূক্তি কোন কিছুই তার চিন্তার ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি।

নিন্দুকেরা বেলোর লেখা প্রচলিত ও পুরণো ধাঁচের বলে মনে করেন। তারা বলেন বেলো যেন উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপিয়ান উপন্যাসগুলোকে সজীবরূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। একটি ব্যক্তিগত চিঠিতে ভ্লাদিমির নভোকোভ তাকে ‘দৈন্য মধ্যযুগী’ বলে আখ্যা দেন। সাংবাদিক এবং লেখক রন রোজেনবাম মনে করেন লেখক হিসেবে বেলোর ব্যর্থতাকে মোকাবেলা করতে পারা একমাত্র বই রেভেলস্টাইন। বেলোর তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন- ‘প্রাক-রেভেলস্টাইন বেলোতে আমার সমস্যা হলো- তিনি প্রায়শই দুটি সাংঘর্ষিক বিষয়কে জোরপূর্বক তার মতো করে এক করতে চাইতেন’। তিনি মনে করেন বেলোর লেখায় মনোমুগ্ধকর দার্শনিক চিন্তা কিংবা কল্পনা থাকে না। তিনি আরো বলেন ''তার গদ্যে পৃথিবী এবং প্রাণী দুটোই মূর্ত ও রূপান্তরিত হতে পারে।''

ভি. এস. প্রিচেট বেলোর স্তুতি গেয়ে বলেছেন- তার কাজের মধ্যে ছোট উপন্যাসগুলো সেরা। তিনি বেলোর নোবেলা সী’জ দ্য ডে কে ‘ধূসর ছোট মাস্টারপিস’ বলে উল্লেখ করেন।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেলো নিজেকে বাম রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে শুরু করেন এবং রক্ষনশীলদের সাথে ঘনিষ্ঠ হন। তার বিরোধীদের মধ্যে রয়েছে- নারীবাদী চেতনা, ছাত্ররাজনীতি এবং উত্তর-আধুনিকতা। ইহুদী ও আফ্রিকান-আমেরিকান প্রসঙ্গে চলমান বিতর্ক বেলোকে বিদ্ধ করতো।

Remove ads

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • ১৯৪৮ সালে গাগেনহিম ফেলোশিপ
  • ১৯৫৪ সালে ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড ফর ফিকশান
  • ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড ফর ফিকশান
  • ১৯৭১ সালে ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড ফর ফিকশান
  • ১৯৭৬ সালে পুলিৎজার পুরস্কার
  • ১৯৭৬ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
  • ১৯৮০ সালে ও’ হেনরি এওয়ার্ড
  • ১৯৮৬ সালে সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরী এসোসিয়েটস থেকে সেন্ট লুইস সাহিত্য পুরস্কার[][]
  • ১৯৮৮ সালে মেডেল ফর আর্টস
  • ১৯৮৯ সালে পেগি ভি. হেল্মেরিক স্বতন্ত্র সাহিত্যিক পুরস্কার
  • ২০১০ সালে শিকাগোর হল অব ফেইমে অন্তর্ভূক্তি[]

ন্যাশনাল পোর্টেট গ্যালারিতে সল বেলোর ৬ টি প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে। এরমধ্য রয়েছে আর্ভিং পেন[] এর তোলা একটি ছবি, সারাহ ইয়াস্টারের[১০] একটি চিত্র, সারা মিলার[১১] নির্মিত আবক্ষ মূর্তি এবং এডওয়ার্ড সোরেল ও আর্থার হার্শেল লিডয়ের[১২][১৩][১৪] আঁকা একটি করে চিত্র। সারা মিলার নির্মিত মূর্তির আরেকটি ১৯৯৩ সালে হ্যারল্ড ওয়াশিংটন লাইব্রেরী সেন্টারে স্থাপন করা হয়েছে[১৫]। তার গবেষণাপত্র গুলো ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

Remove ads

গ্রন্থ তালিকা

উপন্যাস ও নোভেলা বা দীর্ঘ গল্প

  • ড্যাংলিং ম্যান (১৯৪৪)
  • দ্য ভিক্টিম (১৯৪৭)
  • দ্য এডভেঞ্চার অব অগি মার্চ (১৯৫৩)
  • সী’জ দ্য ডে (১৯৫৬)
  • হেরযগ (১৯৬৪)
  • মি. স্যামলার’স প্ল্যানেট (১৯৭০)
  • হাম্বোল্ড’স গিফট (১৯৭৫)
  • দ্য ডীন’স ডিসেম্বার (১৯৮২)
  • মোর ডাই অব হার্টব্রেক (১৯৮৭)
  • এ থেপ্ট (১৯৮৯)
  • দ্য বেলারোজা কানেকশান (১৯৮৯)
  • দ্য একচুয়াল (১৯৯৭)
  • রেভেলস্টেইন (২০০০)

সংকলিত ছোট-গল্প

  • মজবি’জ মেমোয়ের’স (১৯৬৮)
  • হিম উইথ হিস ফুট ইন মাউথ (১৯৮৪)
  • সামথিং টু রিমেম্বার মি বাই: থ্রী টেইলস (১৯৯১)
  • সংকলিত গল্প (২০০১)

নাটক

  • দ্য লাস্ট এনালাইসিস (১৯৬৫)

লাইব্রেরী অব আমেরিকা সংস্করণ

  • ১৯৪৪-১৯৫৩ সালের উপন্যাস: ড্যাংলিং ম্যান, দ্য ভিক্টিম, দ্য এডভেঞ্চার অব অগি মার্চ (২০০৩)
  • ১৯৫৬- ১৯৬৪ সালের উপন্যাস: সী’জ দ্য ডে, হেন্ডারসন দ্য রেইন কিং (২০০৭)
  • ১৯৭০- ১৯৮২ সালের উপন্যাস: মি. স্যামলার’স প্ল্যানেট, হাম্বোল্ড’স গিফট, দ্য ডীন’স ডিসেম্বার (২০১০)
  • ১৯৮৪-২০০০ সালের উপন্যাস: হোয়াট কাইন্ড অব ডে ডিড ইউ হ্যাভ?, মোর ডাই অব হার্টব্রেক, আ থেপ্ট, দ্য বেলারোজা কানেকশান, দ্য একচুয়াল, রেভেলস্টেইন (২০১৪)

অনুবাদ

  • আইজ্যাক বেশেভিশ সিংগারের ছোট গল্প ‘‘গিম্পেল দ্য ফুল (১৯৪৫)- অনুবাদ (১৯৫৩)

বাস্তবধর্মী রচনা

  • টু জেরুজালেম এন্ড ব্যাক (স্মৃতিকথা ১৯৭৬)
  • ইট অল এডস আপ (প্রবন্ধ-সংকলন ১৯৯৪)
  • বেঞ্জামিন টেলর সম্পাদিন সল বেলো: পত্রসমূহ (২০১০)
  • দেয়ার ইজ সিমপ্লি টুউ মাচ টু থিংক এবাউট: নন-ফিকশান রচনা সংগ্রহ (২০১৫)
Remove ads

লেখককে নিয়ে রচিত গ্রন্থ ও অন্যান্য

  • সল বেলো’জ হার্ট: এ সন্স মেমোয়ের, গ্রেগ বেলো, ২০১৩
  • সল বেলো, টনি টেনার (১৯৬৫)
  • সল বেলো, ম্যালকম ব্র্যাবুরি (১৯৮৬)
  • সল বেলো ড্রামলিন উডচাক, মার্ক হ্যারিস, ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া প্রেস।
  • হ্যান্ডসাম ইজ: এডভেঞ্চার উইথ সল বেলো, হ্যারিয়েট ওয়াসারম্যান (১৯৯৭)
  • সল বেলো এন্ড দ্য ডিকলাইন অব হিউম্যানিজম, মাইকেল কে গ্লিনডে (১৯৯০)
  • সল বেলো: আ বায়োগ্রাফি অব দি ইমাজিনেশান, রুথ মিলার, সেন্ট মার্টিন্স (১৯৯১)
  • সল বেলো: মডার্ণ ক্রিটিক্যাল ভিউজ, হ্যারল্ড ব্লুম সম্পাদিত (১৯৮৬)
  • বেলো: এ বায়োগ্রাফি, জেমস এটলাস (২০০০)
  • সল বেলো এন্ড আমেরিকান ট্রান্সেন্ডালিজম, এম এ কাইউম (২০০৪)
  • ‘ইভেন লেটার’ এন্ড ‘দ্য আমেরিকান ঈগল’- মার্টিন এমিস, দ্য ওয়ার এগেইনেস্ট ক্লিশে (২০০১) আর সেলিব্রেটরি।
  • ২০০৪ সালে জেমস উডের দ্য ইরেসপন্সিবল সেলফ: অন লাফটার এন্ড দ্য নোভেল’ এ সল বেলো’জ কমিক স্টাইল
  • দ্য হিরো ইন কনটেম্পোরারি আমেরিকান ফিকশান: দ্য ওয়ার্ক্স অব সল বেলো এন্ড ডন ডে ডিলো- স্টেফানি হল্ডরসন (২০০৭)
  • গান সল বেলো – গীতিকার ও সুরকার-সাফিয়ান স্টিভেন্সের (দ্য এভালেঞ্চ)
  • দ্য লাইফ অব সল বেলো: টু ফেইম এন্ড ফরচুন, ১৯১৫-১৯৬৪ (২০১৫)- জ্যাকারি লীডার
  • দ্য লাইফ অব সল বেলো: লাভ এন্ড স্ট্রাইফ, ১৯৬৫-২০০৫ (২০১৮) – জ্যাকারি লীডার
Remove ads

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads