শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
হিন্দু পঞ্জিকা
হিন্দুদের দ্বারা অনুসৃত পঞ্জিকাবিশেষ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
হিন্দু পঞ্জিকা বা হিন্দু পঞ্চাঙ্গ হল হিন্দু ধর্মে প্রথাগত ভাবে ব্যবহৃত চান্দ্র-নাক্ষত্র এবং নাক্ষত্র পঞ্জিকাসমূহের সমষ্টিগত নাম। আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের কারণে হিন্দু পঞ্জিকার অসংখ্য সংস্করণ দেখা যায়। এদের মধ্যে অধিক প্রভাবশালী জাতীয় ও আঞ্চলিক হিন্দু পঞ্জিকাগুলি হল– নেপালের সরকারি নেপালি পঞ্জিকা এবং ভারতের বাংলা পঞ্জিকা, পঞ্জাবি পঞ্জিকা, ওড়িয়া পঞ্জিকা, মলয়ালম পঞ্জিকা, কন্নড় পঞ্জিকা, টুলু পঞ্জিকা, তামিল পঞ্জিকা, বিক্রম সংবৎ ও দাক্ষিণাত্যের কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গাণা আর অন্ধ্র প্রদেশের শালিবাহন পঞ্জিকা।[১]
এই নিবন্ধটি যাচাইযোগ্যতার জন্য প্রাথমিক উৎসের উপর প্রবলভাবে নির্ভর করে। |

আঞ্চলিক হিন্দু পঞ্জিকাগুলির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল, বারোটি মাসের নাম সব পঞ্জিকাতেই একই আছে। যদিও বিভিন্ন অঞ্চলে বছরের প্রথম মাসটি বিভিন্ন। কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ বর্ষপঞ্জি আর কিছু সৌর-চান্দ্র পঞ্জিকা হিন্দু পঞ্জিকারই প্রাচীন সংস্করণের উপর প্রতিষ্ঠিত।
বেশিরভাগ হিন্দু পঞ্জিকাই ৫ম ও ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্তযুগের আর্যভট্ট ও বরাহমিহিরের জ্যোতির্বিদ্যার ফসল। এই জ্যোতির্বিদ্যার মূল আধার ছিল প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থ বেদাঙ্গ জ্যোতিষ, যাকে পরে সংস্কার করে সূর্য সিদ্ধান্ত গ্রন্থটি লিখিত হয়। মধ্যযুগের এই পঞ্জিকার আঞ্চলিক বৈচিত্র্য সৃষ্ট হতে থাকে। দ্বাদশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় ভাস্কর জ্যোতির্বিদ্যার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। বর্ষপঞ্জির আঞ্চলিক সংস্করণে ওই গুপ্তযুগীয় গণনারই কিছু পার্থক্য দেখা যায়, তবে প্রতিটি সংস্করণের ভিত্তি মূলত হিন্দু সৌর-চান্দ্র পঞ্জিকা।
১৯৫৭ সালে সেই হিন্দু পঞ্জিকার ওপর ভিত্তি করেই ভারতের জাতীয় বর্ষপঞ্জি শক সংবৎ গঠিত হয়।
Remove ads
দিন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হিন্দু পঞ্চাঙ্গে, দিন বা দিবস হল দুটি সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়। চাঁদের কৌণিক অবস্থানের (তিথি, নিচে দেখুন) ওপর ভিত্তি করে দিন নির্ধারণ করা হয়। এর জন্য আলাদা করে দিনের সংখ্যার কোনো প্রয়োজন হয় না।
দিন নির্ধারণের পাঁচটি অঙ্গ রয়েছে। যথা,
- তিথি (চাঁদের দশাকোণ, নাক্ষত্র মাসের ১⁄৩০ অংশ), দিনের ৬৩⁄৬৪ অংশ।
- বাসর বা বার (সপ্তাহের একদিন); যেমন, রবিবার, সোমবার, প্রভৃতি। সাতটি বার মিলে এক সপ্তাহ।
- নক্ষত্র (চান্দ্র মাসের ১⁄২৭ অংশ), প্রায় ২৫১⁄৬০ ঘণ্টা।
- যোগ (নাক্ষত্র মাসের ১⁄২৭ অংশ)।
- করণ (চাঁদের অর্ধদশা, নাক্ষত্র মাসের ১⁄৬০ অংশ)।
এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বা অঙ্গ নিয়ে তৈরি হয় পঞ্চাঙ্গ (পঞ্চ + অঙ্গ)।
নক্ষত্র, যোগ এবং করণ সাধারণত জ্যোতিষ ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
তিথি
নাক্ষত্র মাসের ১⁄৩০ অংশকে তিথি বলা হয়। সূর্য ও চাঁদের পারস্পরিক প্রতিটি ১২° কোণই হল প্রতিটি তিথি। এক-একটি তিথির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯ থেকে ২৬ ঘণ্টা হতে পারে।[২]
কোনো তিথির সময়সীমার মধ্যে একটি সূর্যোদয় পড়লে, সূর্যোদয়ের সময় থেকে ওই তিথি অনুযায়ী দিনটির তারিখ বা সংখ্যা নির্ধারিত হয়। একটি তিথির মধ্যে দুটো সূর্যোদয় পড়লে, দ্বিতীয় দিনটি অতিরিক্ত দিন হিসেবে গণ্য হয়। আবার তিথির ভেতরে কোনো সূর্যোদয় না থাকলে, ওই তিথির জন্য কোনো তারিখ দেওয়া হয় না।
বার
সপ্তাহের সাতটি দিনের এক-একটি দিনকে বাসর বা বার বলে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে এই বারের ধারণা ও নামের সাথে হিন্দু বারগুলির গভীর মিল আছে।
সংস্কৃত শব্দ বাসরকে বিভিন্ন সংস্কৃত-জাত ও প্রভাবিত ভাষাতে বার বলা হয়। বারগুলির নাম বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় বিভিন্ন হতে পারে। তবে মূলত ওই বারের সাথে সম্পর্কিত মহাজাগতিক বস্তু বা গ্রহের নাম অনুযায়ী বারের নাম হয়।
নক্ষত্র
সূর্যের অয়নবৃত্তকে ২৭টি নক্ষত্র-তে ভাগ করা যায়, এগুলির প্রত্যেকটি বাস্তবে কিছু তারামণ্ডল। নক্ষত্রগুলি গ্রহের পরিক্রমণকে এক-একটি নির্দিষ্ট তারার সাপেক্ষে চিহ্নিত করে। ২৭টি নক্ষত্রের মোট সময়কাল ২৭ দিন ৭৩⁄৪ ঘণ্টা। অতিরিক্ত ভগ্নাংশ সময়টি নিয়ন্ত্রিত হয় ২৮তম একটি নক্ষত্র দ্বারা, যার নাম অভিজিৎ। ঋগ্বেদের সময় (১৫০০ খ্রিঃপূঃ) থেকে নক্ষত্রের এই গণনা চলে আসছে।
অয়নবৃত্ত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিক বরাবর ২৭টি নক্ষত্রে ভাগ করা হয়েছে। চিত্রা (Spica) নামক নক্ষত্রের ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত একটি বিন্দুকে এই চক্রের আদিবিন্দু ধরা হয়েছে (মতান্তরও আছে)। একে বলা হয় মেষাদি; এই অবস্থা তখন আসে, যখন বিষুবরেখা অয়নবৃত্তকে ছেদ করে। একে মহাবিষুবও বলা হয়। বর্তমানে এটি মীন রাশিতে অবস্থান করছে, মেষ রাশির শুরু থেকে ২৮° আগে। মেষাদি ও বর্তমান বিষুবরেখার অবস্থানের পার্থক্যকে বলা হয় অয়নাংশ – মহাবিষুব তার নিরয়ণ অবস্থান থেকে কতটুকু বিচ্যুত হয়েছে, তার কৌণিক মান দিয়ে এটি গণনা করা হয়। একটি পুরো অয়নবৃত্ত পরিক্রমণের সময় ২৫৮০০ বছর। মোটামুটি ২৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সূর্যসিদ্ধান্ত লিখবার সময় বিষুবরেখা ঠিক চিত্রা নক্ষত্রের বিপরীতে অবস্থান করেছিল।
নিচে নক্ষত্রসমূহের নাম ও মহাকাশে তাদের অবস্থানের একটি ছক দেওয়া হল। স্বাভাবিকভাবে এরও কিছু ভিন্ন সংস্করণ আছে। ছকের ডানদিকে সেই সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত নাম দেওয়া হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় যে, নক্ষত্র শব্দটি কোনো একটি তারাকে নির্দেশ করে না, বরং শব্দটির দ্বারা কোনো একাধিক তারা-সমন্বিত তারামণ্ডলকে বোঝানো হয়। আসলে সংস্কৃতে একাধিক তারাকে একসাথে নক্ষত্র বলে।
যোগ
সংস্কৃত শব্দ যোগ-এর অর্থ "যুক্ত করা", কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যায় শব্দটি "শ্রেণিবদ্ধ করা" অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রথম ক্ষেত্রে, মেষ রাশি বা মেষাদিকে আদিবিন্দু ধরে নিয়ে কোনো গ্রহের কক্ষপথের কৌণিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। একে ওই গ্রহের দ্রাঘিমা বলা হয়। তারপর সূর্যের দ্রাঘিমা ও চাঁদের দ্রাঘিমা যোগ করে, তাকে সরল করে ০° থেকে ৩৬০°-এর মধ্যে একটি মানে নিয়ে আসা হয় (মান ৩৬০°-এর বেশি হলে, তা থেকে ৩৬০ বিয়োগ করা হয়)। এই যোগফলকে ২৭টি ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেকটি ভাগ ৮০০’-এর সমান (এখানে ‘ বা মিনিট হল এক ডিগ্রির ১/৬০ অংশ)। এক-একটি ভাগকে যোগ বলা হয়। এদের নাম:
- বিষ্কুম্ভ
- প্রীতি
- আয়ুষ্মান্
- সৌভাগ্য
- শোভন
- অতিগণ্ড
- সুকর্মা
- ধৃতি
- শূল
- গণ্ড
- বৃদ্ধি
- ধ্রুব
- ব্যাঘাত
- হর্ষণ
- বজ্র
- অসৃক
- ব্যতিপাত
- বরীয়ান্
- পরিঘ
- শিব
- সিদ্ধ
- সাধ্য
- শুভ
- শুক্ল
- ব্রহ্ম
- মাহেন্দ্র
- বৈধৃতি
এরও একাধিক সংস্করণ উপলব্ধ। দিনের সূর্যোদয়ের সময় যে যোগ চলমান থাকে, তাকেই সংশ্লিষ্ট দিনের যোগ ধরে নেওয়া হয়।
করণ
করণ হল তিথির অর্ধেক। সূর্য ও চাঁদের মধ্যে ০° থেকে ৬° কোণ সম্পূর্ণ করতে যে কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়, তা-ই হল করণ।
১টি তিথি = ২টি করণ। অর্থাৎ তিথি মোট ৩০টি হলে, করণের সংখ্যা মোট ৬০টি। কিন্তু ৩০টি তিথিকে সম্পূর্ণ করতে মোটে ১১টি করণই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারটি ধ্রুবকরণ (স্থির) ও সাতটি চরকরণ (চলমান)।
৪টি ধ্রুবকরণ হল:
- শকুনি
- নাগ
- চতুষ্পাদ
- কিন্তুঘ্ন
৭টি চরকরণ হল:
- বব
- বালব
- কৌলব
- তৈতিল
- গর
- বণিজ্
- বিষ্টি
- শুক্ল পক্ষের প্রথমা তিথির প্রথমার্ধ
সর্বদা কিন্তুঘ্ন করণ হয়। তাই এই করণটি ধ্রুব।
- এরপর সাতটি চরকরণ পরবর্তী ৫৬টি অর্ধ-তিথিকে পূরণ করতে পরপর ৮ বার পুনরাবৃত্ত হয়।
- বাকি তিনটি অর্ধ-তিথিতে কিন্তুঘ্ন বাদে অন্য তিনটি ধ্রুবকরণ অবস্থান করে।
- এইভাবে ১১টি করণ মিলে একত্রে ৬০টি করণ গঠন করে।
বৈদিক দিন শুরু হয় সূর্যোদয় দিয়ে। সূর্যোদয়ের সময় চলমান করণটিই হয় সারাদিনের নির্দিষ্ট করণ।
Remove ads
মাস বা রাশি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
মাস গণনার দুটি প্রথা প্রচলিত রয়েছে। অমাবস্যান্ত (বা অমান্ত) প্রথাটি প্রধানত পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে ব্যবহৃত হয় (অন্ধ্র প্রদেশ, গোয়া, গুজরাত, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ু), চান্দ্র মাসের যে দিনটির সূর্যোদয়ের আগের তিথিটি অমাবস্যা হয়, সে দিনটি এই পদ্ধতিতে মাসের প্রথম দিন। অন্যদিকে, পূর্ণিমান্ত প্রথায় চান্দ্র মাসের পূর্ণিমার পরের দিনটিই হয় মাসের শুরুর দিন। এই প্রথাটির ব্যবহার ভারতের উত্তর ও পূর্বের রাজ্যগুলিতে দেখা যায় (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, হিমাচল প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, পঞ্জাব, ওড়িশা, রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশ)। দুটি প্রথায় মাসের নাম একই হলেও গণনায় পার্থক্য থাকার জন্য দুই পদ্ধতিতে মাসের প্রথম ও শেষ দিনের সময়কালের গড়ে ১৫ দিনের পার্থক্য দেখা যায়। ফলস্বরূপ, শ্রাবণ মাসের কিছু বিশেষ উৎসবের দিনক্ষণের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় দুই পদ্ধতিতে। অমাবস্যান্ত মাস অনুসরণকারীদের জন্য তাই শ্রাবণ মাসের শুরু ও উৎসবের নির্ঘণ্ট ১৫ দিন পিছিয়ে যায়।
একটি মাস দুটি পক্ষ নিয়ে গঠিত হয় ― শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ। প্রত্যেক তিথিতে ১৫টি দিন থাকে। দুটি পদ্ধতির ভিন্নতার জন্য পক্ষ গণনাতেও এর প্রভাব পড়ে:
- অমাবস্যান্ত বা মুখ্য মান পদ্ধতি ― এই মাস অমাবস্যা তিথি দিয়ে শুরু ও শেষ হয় (প্রথমে আসে শুক্লপক্ষ, পরে কৃষ্ণপক্ষ), দক্ষিণ ভারতে অধিক প্রচলিত।
- পূর্ণিমান্ত বা গৌণ মান পদ্ধতি ― এই ক্ষেত্রে মাস পূর্ণিমা তিথি দিয়ে শুরু ও শেষ হয় (প্রথমে কৃষ্ণপক্ষ, পরে শুক্লপক্ষ), উত্তর ভারতে এর প্রচলন অধিক। বরাহমিহির এই পদ্ধতির প্রচলন করেন এবং পূর্ণিমান্ত মাসকে শুক্লান্ত মাস নামে অভিহিত করেন।
কোনো মাসে যেই রাশি প্রবেশ করে, সেই রাশি অনুসারে সংশ্লিষ্ট মাসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। যে মাসে কোনো রাশি প্রবেশ করে না, সেই মাসকে বলে অধিক মাস (মলমাস)। একটি মাসে দুটি রাশি থাকলে দ্বিতীয় রাশিটি ক্ষয় মাস সৃষ্টি করে।
মাসের নাম
হিন্দু চান্দ্র পঞ্জিকায় ১২টি মাস রয়েছে (সংস্কৃত: मासाः)। এই পঞ্জিকায় বছর শুরু হয় চৈত্র মাস থেকে যেখানে হিন্দু পঞ্জিকা থেকে উদ্ভুত বিভিন্ন পঞ্জিকা যেমন বাংলা পঞ্জিকা শুরু হয় বৈশাখ মাস থেকে।[৩]
- বৈশাখ
- জ্যেষ্ঠ
- আষাঢ়
- শ্রাবণ
- ভাদ্রপদ বা ভাদ্র মাস বা প্রোষ্ঠপদ
- আশ্বিন
- কার্তিক
- অগ্রহায়ণ বা মার্গশীর্ষ
- পৌষ
- মাঘ
- ফাল্গুন
- চৈত্র
মাসের এই নামগুলি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রত্যেকটি মাসের নাম এসেছে সেই মাসের পূর্ণিমার দিনে চলমান নক্ষত্রের নাম থেকে। যেমন, যে মাসের পূর্ণিমায় চিত্রা নক্ষত্র থাকে, সেই মাসের নাম চৈত্র; পূর্ণিমায় অশ্বিনী নক্ষত্র অবস্থান করলে সেই মাস হয় আশ্বিন।
রাশি মোট ১২টি, প্রত্যেকটি রাশি এক-একটি মাসের জন্য। যে মাসে সূর্য মেষ রাশিতে গমন করে, সেই মাসটি হয় চৈত্র, এই মাসে মীন ও মেষ ― উভয় রাশিই দেখা যায়। যে মাসে সূর্য বৃষ রাশিতে গমন করে, সেই মাসের নাম হয় বৈশাখ, এই মাসেও মেষ ও বৃষ ― দুটি রাশিই থাকে। এই ভাবে অন্যান্যগুলি চলতে থাকে।
হিন্দু পঞ্জিকায় পুরুষোত্তম মাস নামে একটি অধিক ত্রয়োদশ মাস আছে। চান্দ্র ও সৌর পঞ্জিকার সামঞ্জস্য বিধানের জন্য এটিকে রাখা হয়েছে।
ঋতু
বিভিন্ন রাশিতে সূর্যের গমনের উপর ভিত্তি করে যে মাসচক্র গঠিত হয়েছে, তাকে সৌর মাস বলা হয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী এদের স্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না। নিচের ছকে সৌর মাস এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ঋতু ও গ্রেগরীয় মাসের নাম দেওয়া হল:
কোনো চান্দ্র মাসের পূর্ণিমার দিন যে নক্ষত্র থাকে, সেই নক্ষত্রের নাম থেকে মাসের সংস্কৃত নামগুলি এসেছে। সেই বিশেষ নক্ষত্রটি চিত্রা হলে মাসটির নাম চৈত্র। আবার পূর্ণিমা বিশাখা নক্ষত্রে পড়লে সেই মাসের নাম হয় বৈশাখ।
একই ভাবে জ্যেষ্ঠা, পূর্বাষাঢ়া, শ্রবণা, পূর্ব ভাদ্রপদ, অশ্বিনী (পূর্বনাম অশ্বযুজ) কৃত্তিকা, মৃগশিরা, পুষ্যা, মঘা, পূর্বফল্গুনী নক্ষত্রের নাম থেকে বাকি মাসের নামগুলি এসেছে।
অধিক মাস বা মলমাস
যে চান্দ্র মাসে সূর্য একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করে না, বরং মাসজুড়ে একটি নির্দিষ্ট রাশিতেই অবস্থান করে, তাহলে সেই মাসটির নাম পরবর্তী মাসের নাম অনুসারে হয় এবং এর সাথে "অধিক" শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। বাংলায় অধিক মাসকে মলমাস বলে। উদাহরণ হিসেবে, যদি কোনো মাসে সূর্য মেষ রাশিতে গমন না করে পূর্ববর্তী রাশিতেই স্থিত থাকে, তবে ওই মাসটির নাম হবে অধিক চৈত্র মাস বা চৈত্র মলমাস। পরবর্তী মাসে সূর্য অন্য রাশিতে আবার গমন করে, তাই সেই পরবর্তী মাসের নামের সাথে নিজ কিংবা শুদ্ধ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। ওপরের অ্যানিমেশনে দেখা যাচ্ছে, ২য় বর্ষে ভাদ্রপদ মাস পরপর দু'বার আসছে, প্রথমবার সূর্য পুরোপুরি সিংহ রাশিতে অবস্থান করে, অর্থাৎ মলমাস সৃষ্ট হয়।
মলমাসের অন্য নাম পুরুষোত্তম মাস। বলা হয়, ভগবান বিষ্ণু তার নাম অনুসারে এই মাসের নাম দেন। ১২টি হিন্দু মাস মিলে মোট ৩৫৪ দিন হয়, কিন্তু সূর্য সম্পূর্ণ একটি নিরয়ণ রাশিপথ ৩৬৫ ১⁄৪ দিনে সম্পন্ন করে। এর ফলে যে ১১ দিনের ফারাক তৈরি হয়, সেই অতিরিক্ত ১১ দিন প্রতি (২৯.৫৩/১০.৬৩) = ২.৭১ বছরে বা ৩২.৫ মাসে যোগ করে সমতা বিধান করা হয়। কার্তিক ও মাঘ মাসে কোনো মলমাস পড়ে না।
মলমাস চলাকালীন মচ্ছেগাওঁ নামে শহরে একটি মাসব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়। সাধারণ বিশ্বাস অনুযায়ী, মচ্ছেনারায়ণ-এর জলে এই সময় স্নান করলে সমস্ত পাপমোচন হয়।
ক্ষয় মাস
একটি চান্দ্র মাসের মধ্যেই যদি সূর্য পরপর দুটি রাশিতে গমন করে, তবে ওই দুটি রাশি সাপেক্ষেই মাসটির নামকরণ করতে হয়, আর নামের আগে "ক্ষয়" শব্দটি বসানো হয়। ক্ষয় মাস নাম দেবার কারণ হল, এই ক্ষেত্রে দুটি রাশির জন্য একটি মাস নির্ধারিত হয়। কিন্তু স্বাভাবিক উপায়ে একটি চান্দ্র মাসে সূর্য একটি রাশিতেই গমন করলে, দুটি রাশির জন্য দুটি মাস নির্ধারণ করা হয়।
উদাহরণ হিসেবে, একই মাসে সূর্য মেষ ও বৃষ রাশিতে গমন করলে, সংশ্লিষ্ট মাসের নাম হবে চৈত্র-বৈশাখ ক্ষয় মাস। তখন চৈত্র ও বৈশাখ বলে কোনো আলাদা মাস থাকবে না।
ক্ষয় মাসের উপস্থিতি খুবই বিরল। আনুমানিক ১৯ থেকে ১৪১ বছর পর ক্ষয় মাসগুলি পুনরাবৃত্ত হয়। শেষ ক্ষয় মাস দেখা গিয়েছিল ১৯৮৩ সালে। সেই বছরে ১৫ই জানুয়ারি থেকে ১২ই ফেব্রুয়ারির সময়কাল ছিল পৌষ-মাঘ ক্ষয় মাস। ১৩ই ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ফাল্গুন মলমাস শুরু হয়েছিল।
বিশেষ অবস্থা
কোনো একটি চান্দ্র মাসে সূর্যের রাশি পরিবর্তন না হলে, কিন্তু পরবর্তী মাসে দু'বার রাশির পরিবর্তন হলে, সেক্ষেত্রে,
- প্রথম মাসটি প্রথম রাশির পরিবর্তন অনুযায়ী নামাঙ্কিত হয়, আর দ্বিতীয় মাসটি মলমাস হিসেবে গণ্য হয়।
- পরবর্তী মাসটি দুই রাশির সাপেক্ষে ক্ষয় মাসের স্বাভাবিক নাম অনুযায়ী নামকরণ করা হয়।
এই ঘটনার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। ১৩১৫ সালে শেষ দেখা গিয়েছিল। ৮ই অক্টোবর থেকে ৫ই নভেম্বর ছিল কার্তিক মলমাস। ৬ই নভেম্বর থেকে ৫ই ডিসেম্বর ছিল কার্তিক-মার্গশীর্ষ ক্ষয় মাস। ৬ই ডিসেম্বর থেকে আবার পৌষ শুরু হয়েছিল।
মলমাস ও ক্ষয়মাসের ধর্মীয় গুরুত্ব
সাধারণ মাস, মলমাস ও ক্ষয় মাসের মধ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য সাধারণ মাস সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে বিজয়াদশমী পালিত হয়। কোনো বছরে আশ্বিন মাসে মলমাস পড়লে, অর্থাৎ বছরে দুটো আশ্বিন মাস থাকলে, প্রথম মলমাসে ওই দিনে কোনো অনুষ্ঠান পালিত হবে না এবং দ্বিতীয় শুদ্ধ মাসে অনুষ্ঠানটি পালিত হবে। যদিও দ্বিতীয় মাসটি ক্ষয় আশ্বিন মাস হলে, উৎসবটি প্রথম মলমাসেই পালন করা বাঞ্ছনীয়।
ক্ষয় মাসের ক্ষেত্রে দুটো মাস একইসাথে পড়ে। এই অবস্থায় দুটি মাসের উৎসবগুলি ওই একই ক্ষয় মাসের মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়, যদি না পূর্বে কোনো মলমাস থেকে থাকে। মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রি ব্রত পালিত হয়। ১৯৮৩ সালে পৌষ ও মাঘ মাস মিলে পৌষ-মাঘ ক্ষয় মাস সৃষ্টি হয়েছিল। এর পরের মাস ছিল শুদ্ধ মার্গশীর্ষ। ওই বছরে শিবরাত্রি ব্রত পালিত হয়েছিল পৌষ-মাঘ ক্ষয় কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে।
বৈষ্ণব পঞ্জিকা
Remove ads
চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকায় বর্ষ
হিন্দু পঞ্জিকায় চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদের দিন বছরের শুরু বা নববর্ষ। কিন্তু চৈত্র মাসে মলমাস কিংবা ক্ষয়মাস থাকলে, বিধান অনুযায়ী কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:
- শুদ্ধ চৈত্রের আগে মল চৈত্র থাকলে, শুদ্ধ চৈত্রেই বর্ষারম্ভ হবে (যেমন, ২২ ফেব্রুয়ারি, ১০১৫ খ্রি)।
- মল চৈত্র ও চৈত্র-বৈশাখ ক্ষয় পরপর থাকলে, বর্ষারম্ভ মল চৈত্রেই হয়।
- চৈত্র-বৈশাখ ক্ষয়ের আগে কোনো মল চৈত্র না থাকলে, ওই মাসেই নববর্ষ হবে।
- ফাল্গুন-চৈত্র ক্ষয় সৃষ্টি হলে, সেই মাসেই বর্ষারম্ভ হয়।
অন্য চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
উপরের সমস্ত গণনায় অমাবস্যান্ত মানকে ধরা হয়েছে। কিন্তু অন্য একপ্রকার চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকাও আছে, যেখানে মাসগুলির সজ্জারীতি পূর্বে বর্ণিত পঞ্জিকা থেকে কিছুটা আলাদা। যে দিনে সূর্যোদয়ের আগে পূর্ণিমা থাকে (অমাবস্যা নয়), সেই দিনটিকে মাসের শুরু বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে ওই চান্দ্র মাসের শেষও হয় পূর্ণিমা দিয়ে। একে পূর্ণিমান্ত মান বলে।
সংজ্ঞা থেকে অনেক অনুসিদ্ধান্ত পাওয়া যায়:
- মাসের প্রথম পক্ষটি হবে কৃষ্ণপক্ষ, এবং দ্বিতীয়টি হবে শুক্লপক্ষ।
- তবে নববর্ষ চৈত্রের শুক্লপক্ষের প্রতিপদেই থাকে।
লক্ষণীয়:
- শেষ চান্দ্র মাস হল ফাল্গুন মাস। পূর্ণিমান্ত পদ্ধতিতে বছরের শেষ পক্ষ হল ফাল্গুন শুক্লপক্ষ।
- কোনো মাসের (ধরা যাক, চৈত্র) শুক্লপক্ষের দিনগুলি দুটি পদ্ধতিতেই একই দিনে পড়ে। কিন্তু কৃষ্ণপক্ষের দিনগুলি দুই পদ্ধতিতে আলাদা। কারণ, পূর্ণিমান্ত পদ্ধতিতে শুক্লপক্ষ কৃষ্ণপক্ষের পরে থাকে, কিন্তু অমাবস্যান্ত মাসে তা কৃষ্ণপক্ষের আগে থাকে।
- এক্ষেত্রে, সাধারণ মাসগুলি পূর্ণিমা দিয়ে নির্দেশিত হলেও মলমাস ও ক্ষয়মাস অমাবস্যা দিয়েই নির্দেশিত হয়। অর্থাৎ পূর্ণিমান্ত পদ্ধতি হলেও মলমাস ও ক্ষয়মাস অমাবস্যা দিয়েই শুরু ও শেষ হয়।
- তাই মলমাস শুদ্ধ মাসের দুটি পক্ষের মাঝখানে অবস্থান করে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রাবণ মলমাস চলাকালীন পক্ষের ক্রম এইরূপ হয়:
- শুদ্ধ শ্রাবণ কৃষ্ণপক্ষ
- মল শ্রাবণ শুক্লপক্ষ
- মল শ্রাবণ কৃষ্ণপক্ষ
- শুদ্ধ শ্রাবণ শুক্লপক্ষ
এরপরে ভাদ্রপদ কৃষ্ণপক্ষ শুরু হয় স্বাভাবিক নিয়মেই।
- মল চৈত্র উপস্থিত থাকলে, বছরের শেষের শুদ্ধ চৈত্র কৃষ্ণপক্ষের পরে থাকে। আবার শুদ্ধ চৈত্র শুক্লপক্ষ দিয়ে বছর শুরু হয়। তবে একমাত্র ক্ষয়মাস উপস্থিত থাকলে ব্যতিক্রম দেখা যায়। নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
- যেসব ক্ষেত্রে পূর্ণিমান্ত গণনায় মলমাসের পরে ক্ষয় মাস থেকে, সেগুলির গণনা অত্যন্ত জটিল। প্রথমে ধরে নেওয়া যাক, আশ্বিনের শুক্লপক্ষ দুই পদ্ধতিতে একই। তাহলে, পক্ষের ক্রম হবে:
- শুদ্ধ কার্তিক কৃষ্ণপক্ষ
- মল কার্তিক শুক্লপক্ষ
- মল কার্তিক কৃষ্ণপক্ষ
- কার্তিক-মার্গশীর্ষ ক্ষয় শুক্লপক্ষ
- মার্গশীর্ষ-পৌষ ক্ষয় কৃষ্ণপক্ষ
- পৌষ শুক্লপক্ষ
এরপরে সাধারণভাবে মাঘ কৃষ্ণপক্ষ আরম্ভ হয়।
- নববর্ষ নির্ধারিত হয় নিম্নলিখিত উপায়ে:
- চৈত্র-বৈশাখ ক্ষয় শুক্লপক্ষ উপস্থিত থাকলে,
- তার আগে মল চৈত্র থাকলে, মল চৈত্র শুক্লপক্ষে নববর্ষ হয়।
- মল চৈত্র না থাকলে ক্ষয় শুক্লপক্ষেই নববর্ষ হয়।
- ফাল্গুন-চৈত্র ক্ষয় শুক্লপক্ষ উপস্থিত থাকলে, বর্ষারম্ভ সেই পক্ষেই হয়।
- চৈত্র-বৈশাখ ক্ষয় শুক্লপক্ষ উপস্থিত থাকলে,
যদিও এইসব জটিল গণনার জন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনক্ষণের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেহেতু দুই পদ্ধতিতে কৃষ্ণপক্ষের আগমনকালের তফাৎ থাকে, তাই যেসব অনুষ্ঠান কৃষ্ণপক্ষে থাকে, সেগুলোর মাসের নামের অদল-বদল করে দিলেই দুই পদ্ধতিতেই উৎসব একই দিনে পড়ে। সেই অনুসারে, অমাবস্যান্ত মান অনুযায়ী মহাশিবরাত্রি মাঘের কৃষ্ণ চতুর্দশীতে পালিত হয়। পূর্ণিমান্ত মান অনুযায়ী ব্রতটি একই দিনে পড়ে ঠিকই, কিন্তু দিনটির নাম ফাল্গুনের কৃষ্ণ চতুর্দশী।
Remove ads
বর্ষের সংখ্যা
হিন্দু পঞ্জিকায় (সৌর ও চান্দ্র-সৌর উভয়ই) বর্তমান যুগের প্রারম্ভিক দশা (শূন্যতম বর্ষের প্রথম দিনের শুরুর বিন্দু) অবস্থান করছে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জির হিসেবে ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ৩১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে; আর প্রলেপ্টিক বর্ষপঞ্জির হিসেবে ২৩শে জানুয়ারি, ৩১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। পুরাণ অনুসারে, এই দিনেই শ্রীকৃষ্ণ বৈকুণ্ঠধামে প্রত্যাগমন করেন। সৌর ও চান্দ্র-সৌর ― উভয় পঞ্জিকাই এই তারিখ থেকে শুরু হয়। এরপরে যতগুলো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, তার ভিত্তিতে বছরের নাম দেওয়া হয়।
এটিই হিন্দু পঞ্জিকার একটি ব্যতিক্রমী ধর্ম। বেশিরভাগ বর্ষপঞ্জিই বর্তমান বছরের পূরণবাচক সংখ্যাটিকে বছরের চিহ্ন হিসাবে ধরে। মানুষের বয়স গণনা করা হয়, তার জন্মের পর কত বছর পার হয়েছে, তার ভিত্তিতে। কিন্তু হিন্দুরা এটা শুরুর থেকে করেন। ৩১শে অগাস্ট ২০১৪-য় হিন্দু পঞ্জিকার ৫১১৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সৌর পঞ্জিকার থেকে চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকা কিছুটা আগে শুরু হয়, তাই প্রতি বছর একই দিনে বছর শুরু নাও হতে পারে।
Remove ads
বর্ষের নাম
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সংখ্যাগত চিহ্ন ছাড়াও, হিন্দু পঞ্জিকায় ৬০টি বর্ষনামের একটি চক্র আছে, একে সংবৎসর বলা হয়। এই চক্র প্রথম বছরে শুনো হয়েছিল (যখন অতিক্রান্ত বর্ষের সংখ্যা শূন্য), এবং পর্যায়ক্রমে চলছে:
- প্রভাব (১৯৮৭-৮৮)
- বিভব (১৯৮৮-৮৯)
- শুক্ল (১৯৮৯-৯০)
- প্রমোদ (বা প্রমোদূত) (১৯৯০-৯১)
- প্রজাপতি (বা প্রাজোপতি) (১৯৯১-৯২)
- অঙ্গিরা (১৯৯২-৯৩)
- শ্রীমুখ (১৯৯৩-৯৪)
- ভাব (১৯৯৪-৯৫)
- যুব (১৯৯৫-৯৬)
- ধাত্রী (১৯৯৬-৯৭)
- ঈশ্বর (১৯৯৭-৯৮)
- বহুধান্য (১৯৯৮-৯৯)
- প্রমাথী (১৯৯৯-২০০০)
- বিক্রম (২০০০-০১)
- বৃষ (২০০১-০২)
- চিত্রভানু (২০০২-০৩)
- স্বভানু (২০০৩-০৪)
- তারণ (২০০৪-০৫)
- পার্থিব (২০০৫-০৬)
- ব্যয় (২০০৬-০৭)
- সর্বজিৎ (২০০৭-০৮)
- সর্বধারী (২০০৮-০৯)
- বিরোধী (২০০৯-১০)
- বিকৃত (২০১০-১১)
- খর (২০১১-১২)
- নন্দন (২০১২-১৩)
- বিজয় (২০১৩-১৪)
- জয় (২০১৪-১৫)
- মন্মথ (২০১৫-১৬)
- দুর্মুখ (২০১৬-১৭)
- হেবিলম্বী (২০১৭-১৮)
- বিলম্বী (২০১৮-১৯)
- বিকারী (২০১৯-২০)
- সাবর্ণি (২০২০-২১)
- প্লব (২০২১-২২)
- শুভকৃতি (২০২২-২৩)
- শোভাকৃতি (২০২৩-২৪)
- ক্রোধী (২০২৪-২৫)
- বিশ্ববসু (২০২৫-২৬)
- পরাভব (২০২৬-২৭)
- প্লবাঙ্গ (২০২৭-২৮)
- কীলক (২০২৮-২৯)
- সৌম্য (২০২৯-৩০)
- সাধারণ (২০৩০-৩১)
- বিরোধীকৃতি (২০৩১-৩২)
- পরিধাবী (২০৩২-৩৩)
- প্রমাদীচ (২০৩৩-৩৪)
- আনন্দ (২০৩৪-৩৫)
- রাক্ষস (২০৩৫-৩৬)
- অনল (২০৩৬-৩৭)
- পিঙ্গল (২০৩৭-৩৮)
- কালযুক্তি (২০৩৮-৩৯)
- সিদ্ধার্থী (২০৩৯-৪০)
- রৌদ্র (২০৪০-৪১)
- দুর্মাথী (২০৪১-৪২)
- দুন্দুভি (২০৪২-৪৩)
- রুধিরোদ্গারী (২০৪৩-৪৪)
- রক্তাক্ষী (২০৪৪-৪৫)
- ক্রোদন (২০৪৫-৪৬)
- অক্ষয় (২০৪৬-৪৭)
জুলিয়ান বর্ষপঞ্জির মতোই এই পদ্ধতিতেও অধিবর্ষ-এর ধারণা আছে। প্রতি চার বছর অন্তর, বছরে ৩৬৫ দিনের জায়গায় ৩৬৬ দিন থাকে। বছর শুরুর বিন্দুটি হল মেষাদি বা মেষ সংক্রান্তি (হিন্দু সৌরবর্ষে মেষ-এর প্রথম দিন)। এতে দিনের হিসেবও রাখা হয়। প্রথম দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১৮৬৪০০০-এর বেশি দিন কেটে গিয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান কলিযুগের (চতুর্যুগের ১/১০ অংশ) অনেকটা দিনই পার হয়ে গিয়েছে।
Remove ads
যুগ
হিন্দুধর্মে মোট সময়কাল চারটি যুগ-এ বিভক্ত।[৪][৫] চারটি যুগ হল:
- কৃত যুগ বা সত্য যুগ
- ত্রেতা যুগ
- দ্বাপর যুগ
- কলি যুগ
ইংরেজিতে এদের যথাক্রমে স্বর্ণ (Golden), রৌপ্য (Silver), ব্রোঞ্জ (Bronze) এবং লৌহ (Iron) যুগ বলা হয়। চারটি যুগে ক্রমান্বয়ে ধর্ম, জ্ঞান, শিক্ষা, পরম জ্ঞান, জীবনকাল এবং মানসিক ও দৈহিক শক্তির অবনমন ঘটে বলে বিশ্বাস।[৬][৭] আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর আগে কলিযুগ আরম্ভ হয়েছিল।[৮][৯] দ্বাপর, ত্রেতা ও সত্য যুগের সময়কাল কলিযুগের থেকে যথাক্রমে দুই, তিন ও চারগুণ বেশি।[৮][১০]
সাধারণ বিশ্বাস অনুযায়ী, এক হাজার ও অন্য এক হাজার (মোট দু'হাজার) চতুর্যুগের মোট সময়কাল সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার যথাক্রমে এক দিন ও রাত হিসেবে ধরা হয়। ব্রহ্মা ওইরূপ "দিবস" দিয়ে গঠিত ১০০ বছর বেঁচে থাকেন।[১১] অন্তিমকাল উপস্থিত হলে তিনি তার সৃষ্টিসমেত পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যান।
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
বৈদিক যুগ থেকে হিন্দু পঞ্জিকার প্রচলন চলে আসছে। বেদে পঞ্জিকার গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। ষষ্ঠ বেদাঙ্গ, যাকে জ্যোতিষও বলা হয়, তাতে সমস্ত রকম পঞ্জিকার ধারণা পাওয়া যায়। পরবর্তী বৈদিক যুগে হিন্দু পঞ্জিকার উন্নয়নে আর্যভট্ট (৫ম শতাব্দী), বরাহমিহির (৬ষ্ঠ শতাব্দী) ও ভাস্করের (১২শ শতাব্দী) মতো অনেক ভারতীয় জ্যোতির্বিদ অবদান রাখেন।
হিন্দু পঞ্জিকার গঠন সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা স্বচ্ছ ধারণা দেয় সূর্য সিদ্ধান্ত নামে গ্রন্থটি। এর রচনাকাল সঠিক জানা যায়নি। যদিও কারোর অভিমতে, এটি ১০ম শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল।
প্রাচীন বৈদিক পঞ্জিকায় বছরের শুরু হত অগ্রহায়ণ (অগ্র = প্রথম + অয়ন = সূর্যের গতি) বা মার্গশীর্ষ মাস দিয়ে। এই মাসে সূর্য বিষুবরেখাকে অতিক্রম করে। এই মাসের অপর নাম মার্গশীর্ষ এসেছে ৫ম নক্ষত্র মৃগশিরার (ল্যাম্ডা ওরিঅনের কাছে) নাম থেকে। পৃথিবীর অক্ষের ধীর সরণের জন্য বিষুবরেখা বর্তমানে মীন রাশিতে অবস্থান করছে, অর্থাৎ প্রথম মাসের নাম চৈত্র। হাজার-হাজার বছর ধরে বিষুবরেখার এই সরণের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের নানা অঞ্চলে নানা মাস দিয়ে বছর শুরু করার প্রথা চালু হয়। কিছু পঞ্জিকা (যেমন, বিক্রম সংবৎ) চৈত্র মাসকে বছরের শুরু ধরে নিয়েছে, এই চৈত্র মাসেই বর্তমান বিষুবরেখা অবস্থান করছে। আবার কিছু পঞ্জিকা বৈশাখ মাসকে বর্ষারম্ভ মেনে নিয়েছে (যেমন, বঙ্গাব্দ)। অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র ― অর্থাৎ বিষুবরেখার সরণ হয়েছে চার মাস। আর পৃথিবীর অক্ষের সম্পূর্ণ সরণের সময়কাল ২৫,৮০০ বছর। এর থেকে গণনা করে বোঝা যায়, আনুমানিক চার হাজার কিংবা পাঁচ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিষুবরেখা অগ্রহায়ণে অবস্থান করছিল।
Remove ads
আঞ্চলিক সংস্করণ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১৯৫২ সালে ভারতীয় পঞ্জিকা পুনর্গঠন বিভাগ দেশজুড়ে ৩০টিরও বেশি সুসংগঠিত পঞ্জিকাকে চিহ্নিত করেছিল। এদের প্রত্যেকটিই সূর্য সিদ্ধান্তের পৃথক পৃথক সংস্করণ, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হত। এদের মধ্যে দুটি বহুল ব্যবহৃত পঞ্জিকা হল বিক্রম সংবৎ ও শালিবাহন পঞ্জিকা এবং তাদের আঞ্চলিক সংস্করণসমূহ। তামিলনাড়ুতে তামিল পঞ্জিকা নামে একটি সৌর পঞ্জিকা ব্যবহৃত হয় এবং কেরলে ব্যবহৃত হয় কোল্লবর্ষম্ পঞ্জিকা।
ভারতে বহুল প্রচলিত দুটি পঞ্জিকার মধ্যে বিক্রম সংবৎ বর্তমানে নেপালের জাতীয় পঞ্জিকা এবং ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। শালিবাহন বা শক সংবৎ অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও গোয়ায় প্রচলিত।
৫৬ খিষ্টপূর্বাব্দে উজ্জয়িনীর সম্রাট বিক্রমাদিত্য শকদের সাথে যুদ্ধে তার বিজয় উপলক্ষে বিক্রম সংবৎ চালু করেন। ঠিক একইভাবে ৭৮ খ্রিষ্টাব্দে সাতবাহন রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী শকদের পরাজিত করে শক সংবৎ চালু করেন।
বিক্রম ও শালিবাহন ― উভয় পঞ্জিকায় চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকা, এতে বছর বারোটি মাসে বিভক্ত, আবার প্রতিটি মাস দুটি পক্ষে বিভক্ত: শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ;প্রথম পক্ষে চন্দ্রকলার বৃদ্ধি হয়, অপর পক্ষে ক্ষয় হয়। অর্থাৎ, যে পক্ষ অমাবস্যা দিয়ে শুরু ও পূর্ণিমা দিয়ে শেষ হয়, সেটি হয় শুক্লপক্ষ, বিপরীতক্রমে পূর্ণিমা দিয়ে শুরু হয়ে অমাবস্যায় শেষ হলে, পক্ষের নাম হয় কৃষ্ণপক্ষ।
দুই পঞ্জিকাতে ১২টি মাসের নাম ও তাদের ক্রমও একই; যদিও নববর্ষ পালিত হয় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। আবার পঞ্জিকা দুটিতে "শূন্যতম বর্ষ"ও আলাদা। বিক্রম সংবতে এই শূন্যতম বছরটি হল ৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, শালিবাহনে ৭৮ খ্রিস্টাব্দ। বিক্রম সংবতে বছরের শুরু হয় বৈশাখ (এপ্রিল) মাসে (যদিও গুজরাতে কার্তিক মাসে হয়)। শালিবাহন পঞ্জিকায় বছর শুরু করা হয় চৈত্র মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর), উগাদি বা গুড়ি পাড়বা উৎসবের মধ্য দিয়ে।
এছাড়াও দুটি পঞ্জিকার মধ্যে আরও কিছু পার্থক্য রয়েছে: শালিবাহন পঞ্জিকায় মাসের প্রথম পক্ষ হয় শুক্লপক্ষ আর দ্বিতীয় তথা শেষ পক্ষ হয় কৃষ্ণপক্ষ, বিক্রম সংবতে এর বিপরীত ঘটনাটি ঘটে। সেই অনুযায়ী, শালিবাহন মাস অমাবস্যা দিয়ে শেষ ও শুরু হয়, কিন্তু বিক্রম সংবতের মাসে সেটা হয় পূর্ণিমা দিয়ে (বিক্রম সংবৎ মেনে চললেও গুজরাতি পঞ্জিকা একটি ব্যতিক্রম, এতে যে কোনো মাস, এমনকি নববর্ষও, শুরু ও শেষ হয় অমাবস্যা তিথি দিয়ে)।
গুজরাতে বিক্রম সংবৎ বর্ষের শেষ দিনে দীপাবলি পড়ে, ঠিক পরের দিনটিই নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। স্থানীয় ভাষায় একে অন্নকূট বা নূতন বর্ষ্ বা বেসতুঁ বরস বলে। উত্তর ভারতে প্রচলিত হিন্দু পঞ্জিকায় বছর শুরু হয় চৈত্র শুক্ল প্রতিপদ (মার্চ-এপ্রিল) দিয়ে।
সংবৎ পঞ্জিকা
ভারতে প্রচলিত পঞ্জিকাগুলির মধ্যে সংবৎ হল এক বিশেষ ধরনের পঞ্জিকা:
- বিক্রম সংবৎ: চান্দ্র মাস, নিরয়ণ সৌর বর্ষ
- শক সংবৎ (প্রাচীন): চান্দ্র মাস, নিরয়ণ সৌর বর্ষ
- শক সংবৎ (আধুনিক): সায়ন সৌর বর্ষ
- বাংলা পঞ্জিকা: সায়ন সৌর বর্ষ
- তামিল পঞ্জিকা: সায়ন সৌর বর্ষ, তামিলনাড়ু ও কেরলে ব্যবহৃত
- নেপালি পঞ্জিকা: নিরয়ণ সৌর বর্ষ, বিক্রম সংবতের রূপভেদ।
বেশিরভাগ ভারতীয় উৎসবই প্রথম দুটি পঞ্জিকার নির্দেশে পালিত হয়। সংক্রান্তি (নিরয়ণ সৌর) ও নববর্ষের (সায়ন সৌর; পয়লা বৈশাখ, বৈসাখী) মতো অল্পসংখ্যক কিছু উৎসব সৌর রীতিতে আয়োজিত হয়।
মাস ও তার আনুমানিক সময়কাল
নিচে শক সংবৎ অনুযায়ী ভারতীয় মাসগুলি দেওয়া হয়েছে। শক ও চৈত্রাদি বিক্রম সংবৎ বছর চৈত্র মাস থেকে শুরু হয়: এই রীতিটি ভারতের উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলে প্রচলিত। গুজরাতে কার্তিকাদি বিক্রম সংবৎ বছর প্রচলিত, যা কার্তিক মাস দিয়ে শুরু হয়।
বিষুববৃত্তকে মেষাদি (০°) থেকে শুরু করলে প্রতিটি নক্ষত্র ১৩° ২০' কৌণিক স্থান দখল করে। প্রত্যেক মাসের পূর্ণিমার দিনে যেই নক্ষত্র থাকে, তার নাম অনুসারে মাসের নাম দেওয়া হয়।
Remove ads
ভারতীয় কালচক্র
ভারতের কালচক্রগুলি হল:[১২][১৩]
- ৬০ বর্ষ চক্র
- এক বর্ষ
- বছরের ছয়টি ঋতু
- একটি ঋতুর ৬০ দিন (দু'মাস)
- মাস (চান্দ্র)
- প্রতি মাসে দুই পক্ষ, শুক্ল ও কৃষ্ণ
- একটি পক্ষে ১৫টি তিথি (১–১৪ হল প্রতিপদ থেকে চতুর্দশী, ১৫তম হল পূর্ণিমা অথবা অমাবস্যা)
- ২৪ ঘণ্টায় ৬০টি ঘটিকা (বা ৩০ মুহূর্ত বা ৮ প্রহর)
- এক মুহূর্তে প্রায় ৩০টি কাল
- এক কালে ৩০টি কাষ্টা
- এক কাষ্ঠায় ১৫টি নিমিষ
প্রতি তিন বছরে একটি অতিরিক্ত মাস যোগ করে নিরয়ণ ও সায়ন বর্ষের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা হয়। এই অতিরিক্ত মাসকে "অধিক মাস" বলে। পূর্ব ভারতে একে মলমাস বলে।
Remove ads
তারিখ রূপান্তরণ
ভারতীয় পঞ্জিকার তারিখকে সাধারণ জুলিয়ান বর্ষপঞ্জির তারিখে রূপান্তরিত করতে অনেক জটিল গণনা করতে হয়। আনুমানিক খ্রিস্টীয় তারিখে পৌঁছোতে:
- চৈত্রাদি বিক্রম (প্রাচীন): চৈত্র-পৌষ: ৫৭ বিয়োগ করতে হবে; পৌষ-ফাল্গুন: ৫৬ বিয়োগ করতে হবে।
- শক: ৭৮-৭৯ যোগ করতে হবে
- কালচুরি: ২৪৮-২৪৯ যোগ করতে হবে
- গুপ্ত (বলভী): ৩১৯-৩২০ যোগ করতে হবে
- বঙ্গাব্দ: ৫৯৩-৫৯৪ যোগ করতে হবে
- বীর নির্বাণ সংবৎ: ৫২৭-৫২৬ বিয়োগ করতে হবে
- যুধিষ্ঠির সংবৎ: ৩১০১ যোগ করতে হবে (১২৫তম বর্ষে শ্রীকৃষ্ণের উত্তরণ)
- শ্রীকৃষ্ণ সংবৎ: ৩২২৬ যোগ করতে হবে (শ্রীকৃষ্ণের জন্ম)
- বলভী সংবৎ: ৩২০ যোগ করতে হবে।
Remove ads
রূপভেদ
- উত্তর ভারতের বিহার, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থানের মতো কিছু এলাকায় পূর্ণিমান্ত মাস (মাস শেষ হয় পূর্ণিমায়) গণনা করা হয়। দক্ষিণ ভারতের গুজরাত, মহারাষ্ট্র ও অন্যান্য এলাকায় ব্যবহৃত হয় অমাবস্যান্ত মাস (মাসের শেষ অমাবস্যা দিয়ে)।
- বর্ষগুলি গত কিংবা বর্তমান হতে পারে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাতীয় বর্ষপঞ্জি
১৯৫৭ সালে শালিবাহন পঞ্জিকার একটি রূপভেদকে সংস্কার ও ব্যবহারযোগ্য করে তাকে ভারতীয় জাতীয় পঞ্জিকার মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। এই পঞ্জিকা শালিবাহন শক পঞ্জিকার উপর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, এর প্রথম মাস চৈত্র এবং বছর গণনা শুরু হয়েছিল ৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। এই পঞ্জিকায় প্রতিমাসে দিনসংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না। এতে অধিবর্ষের ব্যবস্থাও আছে।
১৫৮৪ সালে প্রবর্তিত বাংলা পঞ্জিকা বা বঙ্গাব্দ পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও অসম রাজ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৬৬ সালে বর্তমান বাংলাদেশে এই পঞ্জিকার কিছুটা সংস্কার করে বাংলাদেশের জাতীয় পঞ্জিকা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়, এতেও প্রত্যেক মাসে দিনসংখ্যা অপরিবর্তিত আর অধিবর্ষ আছে। নেপালে বিক্রম সংবৎ প্রচলিত। মায়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে প্রায় বৌদ্ধ পঞ্জিকার মতো একই মাস ও সময়কালযুক্ত বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন পঞ্জিকার সম্পর্ক
হুইটেকার্স অ্যালামনাক-কে প্রমাণ বা নির্দেশক হিসেবে ধরে নিলে, দেখা যায় গ্রেগরীয় সাল ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ নিম্নলিখিত পঞ্জিকার বছরগুলির সাথে সমান হয়:
- কলিযুগ পঞ্জিকায় ৫১০২তম বর্ষ; (শূন্যতম বর্ষ ৩১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
- বুদ্ধ নির্বাণ পঞ্জিকায় বর্ষ ২৫৪৪; (৫৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
- থাই সৌর বর্ষের (৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বৌদ্ধ সংবতে বর্ষ ২৫৪৩
- বিক্রম সংবতে বর্ষ ২০৫৭; (৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
- শকাব্দে বর্ষ ১৯২২; (৭৮ খ্রিষ্টাব্দ)
- বেদাঙ্গ জ্যোতিষ পঞ্জিকায় (৫ বর্ষ চক্র হিসেবে) বর্ষ ১৯২১; (৭৯ খ্রিষ্টাব্দ)
- বাংলা পঞ্জিকায় বর্ষ ১৪০৭; (৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দ)
- বর্মী পঞ্জিকায় বর্ষ ১৩৬২; (৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দ)
- মলয়ালম বা কোল্লবর্ষম্ পঞ্জিকায় বর্ষ ১১৭৬; (৮২৪ খ্রিষ্টাব্দ)
- গৌড়াব্দ বা গৌড়ীয় পঞ্জিকায় বর্ষ ৫১৪; (১৪৮৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads