শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
হিলির যুদ্ধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের যুদ্ধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
হিলির যুদ্ধ বা বগুড়া যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম ঘটনা। এই যুদ্ধ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সবচাইতে আলোচিত যুদ্ধ। ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১ থেকে ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত হিলির যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উল্লেখ্য যে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গরূপে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।[১]
Remove ads
যুদ্ধ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তান এর উত্তরাঞ্চল থেকে পাকিস্তানি সৈন্য হটিয়ে বগুড়াকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া। আর বগুড়ায় প্রবেশের সবচাইতে সুবিধাজনক অঞ্চল হচ্ছে "হিলি"। পাকিস্তান দুর্গের সম্মুখ যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অতঃপর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকবাহিনীর পেছন থেকে বাধার সৃষ্টি করে যা ফোর-এফএফ ব্যাটেলিয়নকে বগুড়ার হিলি প্রতিরোধ বাতিল করতে বাধ্য করে।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর এই সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনী অংশ গ্রহণ করে। মেজর জেনারেল লছমন সিংয়ের নেতৃত্বে ২০ ভারতীয় মাইউন্টেইন ডিভিশন নিয়ে ভারতীয় বাহিনী অংশগ্রহণ করেছিল। এতে ছিল ৬৬-বিগ্রেড, ১৬৫-বিগ্রেড, ২০২-বিগ্রেড ও ৩৪০-বিগ্রেড (সকল পদাতিক সৈন্য), ৩-আর্মড বিগ্রেড, ৪৭১-ইঞ্জিনিয়ার বিগ্রেড এবং অতিরিক্ত ৩৩ কর্প আর্টিলারি সমৃদ্ধ ২টি আর্টিলারি বিগ্রেড এর সমন্বয়। স্থল সৈন্যরা রকেট, বন্দুক ও ১০০ পাউন্ডের বোমা দ্বারা সজ্জিত ভারতীয় বিমান বাহিনী দ্বারা আকাশ পথে সাহায্য লাভ করে, যা উত্তরাঞ্চলের আকাশপথের দখল নিয়েছিল।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী
পাকিস্তানি বাহিনীর এরিয়া অব রেস্পন্সিবিলিটি (এওআর) ছিল বিগ্রেডিয়ার (পরবর্তীতে জেনারেল হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত) তাজাম্মুল হুসেইন মালিক এর নেতৃত্বাধীন ২০৫ বিগ্রেডের অধীনে। মাত্র চারদিন পূর্বে তিনি এই বিগ্রেডে যোগদান করেন, যখন তিনি পাক সৈন্যদের জিএইচকিউ, রাওয়ালপিন্ডি ছাড়তে সহায়তা করেন এবং তাদের পূর্ব পাকিস্তানে নেতৃত্ব দেন। বিগ্রেডিয়ার তাজাম্মুল এক শক্ত প্রতিরোধের সৃষ্টি করেন যা বিভিন্ন শিবির থেকে প্রশংসা অর্জন করে।
যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ঘটনা
তাজাম্মুল হুসেইন মালিক রেললাইন এর আশেপাশে এবং রেলওয়ে স্টেশন কমপ্লেক্সে নজরদারির ব্যবস্থা করেন। পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের সমস্ত পথে এই প্রতিরোধী অবস্থান নেয়া হয়। সমগ্র ভারতীয় ডিভিশন এবং মুক্তিবাহিনী যতক্ষণ না পর্যন্ত হিলি-র দিকে বাইপাস করে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে বাঁধার সৃষ্টি করে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাকবাহিনী লড়াই করে। অতঃপর বিগ্রেডিয়ার তাজাম্মুল হক মালিক ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে হিলি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেন।
যৌথবাহিনীর ব্যাপক সংখ্যক মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সেনা বগুড়াকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছিল। তবে ব্রিগ্রেডিয়ার তাজাম্মুল ১৬ ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তান কমান্ড ঢাকা দখলের পরও প্রতিরোধ চালিয়ে যান। তিনি পতাকা ও তারকা সংবলিত স্টাফ গাড়িতে করে বগুড়ার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে তার সৈন্যদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দিয়ে যান। তারপর ভারতীয় সেনাবাহিনী সমগ্র বগুড়া শহর ঘিরে ফেলে। ৫০ জনের মত ওআরসহ বিগ্রেড মেজর আত্মসমর্পণ করলেও তাজাম্মুল হক তখনও আত্মসমর্পণ এর সুযোগ প্রত্যাখ্যাত করেন।
বিগ্রেডিয়ার তাজাম্মুল তখন তার বাকি সৈন্যদের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নোয়াগঞ্জে ছড়িয়ে যেতে নির্দেশ দেন। সেখানে তার একটি দল তখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে, সড়কপথে তার গাড়ি আচমকা আক্রমণের শিকার হয়, তিনি ও তার সহসৈন্য গুরুতর আহত হন। মুক্তিবাহিনী তাদের আটক করে এবং নির্যাতনের জন্য আদেশ দেয়। তার হাত ভেঙে যাওয়া এবং মাথা থেঁতলে যাওয়ায় তাকে ইন্ডিয়ান আর্মি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিগ্রেডের এই অবস্থায়ও বিগ্রেডিয়ার তাজাম্মুলের আত্মসমর্পণ নাকচ করে দেয়ায়, মেজর জেনারেল নাজের শাহ ১৮ ডিসেম্বর,১৯৭১ এ নাটোর থেকে বিশেষ ভাবে এসে পৌছান। বন্দিদশা থেকে ফিরে আসার পর, তাজাম্মুল হুসেইন মালিক, যিনি পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ৩২ বা তার বেশি বিগ্রেডিয়ারদের মধ্যে একমাত্র, তাকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়।
Remove ads
তাৎপর্য
হিলির যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হওয়ায় এটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য যে, এ যুদ্ধের উভয় পক্ষের সেনারাই নিজ নিজ দেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান লাভ করে। ২০ ভারতীয় মাউন্টেন ডিভিশনের এক অন্যতম পদাতিক ব্যাটেলিয়ন ৫/১১ গোরখা রাইফেলস নিজেদের স্বাতন্ত্র্য লাভ করে, পরবর্তীতে ভারতীয় ব্যাটেলিয়নের কমান্ডিং অফিসার বগুড়া যুদ্ধ সম্মান লাভ করে। এছাড়াও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এফ টি দায়াস ভারতীয় আর্মির লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নিত হন।এছাড়াও, মেজর জে বি এস যাদব লেফটেন্যান্ট জেনারেল, মেজর অভিজিৎ মামিক বিগ্রেডিয়ার, ক্যাপ্টেন বি কে বোপান্না ভারতীয় আর্মদ ফোর্সের লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নিত হন। এসবই ছিল সশস্ত্র বাহিনীর জন্য অসামান্য সম্মান।
এই যুদ্ধ আরো একটি বিশেষ কারণে সমালোচিত। এ যুদ্ধ পাক-ভারত যুদ্ধের আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবার আগে শুরু হয় এবং পাকিস্তানের লিখিত সমর্পণ পর্যন্ত সংঘটিত হয়।
Remove ads
সম্মাননা
- বাংলাদেশ
- মেজর কাজী নূরুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের একক সাহসীকতার জন্য দ্বিতীয় সম্মাননা বীর উত্তম পদে সম্মানিত হন, কিন্তু হাজারো শহীদ মুক্তিসেনার প্রতি সম্মান রেখে এই পদক তিনি প্রত্যাখ্যান করেন এবং কোনো সম্মাননা গ্রহণ করেন নি।
- ভারত
- ১৪ গার্ড অব ইন্ডিয়ান আর্মির ল্যান্স নায়েক অ্যালবার্ট এক্কা, যিনি এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, ১৯৭১ সালের পূর্ব সেক্টরের একমাত্র পরম বীর চক্র পুরস্কার লাভ করেন।
- ৫/১১ গোরখা রাইফেলস এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর জে বি এস যাদব (পরবর্তীতে লে: জেনারেল) এবং মেজর অভিজিৎ মামিক (পরবর্তীতে বিগ্রেডিয়ার) উভয়ই ভারতীয় সাহসিকতা র তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মান বীর চক্র লাভ করেন।
- পাকিস্তান
- পাকিস্তানের মেজর মুহাম্মাদ আকরাম শহীদ, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান নিশান-ই-হায়দার লাভ করেন।
- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরবর্তীতে বিগ্রেডিয়ার) তারিক আনিস মালিক সিতার-ঈ-জুরাত লাভ করেন।
- জেনারেল তাজম্মুল হুসেইন মালিক কেও সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান নিশান-ঈ-মালিক (মরণোত্তর) দেয়া হয়।[২][৩]
আরও দেখুন
- মেজর মুহাম্মাদ আকরাম শহীদ
- ল্যান্স নায়েক আলবার্ট এক্কা
- হামিদুর রহমান
- শেষ অবস্থান
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
আরো পড়ুন
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads