শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

হোলিকা

অসুর রাজা হিরণ্যকশিপু এর বোন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

হোলিকা
Remove ads

হোলিকা (সংস্কৃত: होलिका) যা সিংহিকা নামেও পরিচিত হলো হিন্দু বৈদিক ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত একজন অসুরা (নারী অসুর) যাকে বিষ্ণুর সহায়তায় পুড়িয়ে বধ করা হয়। তিনি অসুর রাজা হিরণ্যকশিপু এর বোন এবং প্রহ্লাদ এর পিসি ছিলেন। হোলিকা দহন কিংবদন্তি অশুভ শক্তির বিপরীতে শুভের জয় নির্দেশিত করে। হিন্দুদের রঙ এর উৎসব দোলযাত্রার এর আগের রাতে বার্ষিক অগ্ন্যুৎসবের সাথে হোলিকা সম্পর্কিত।[]

দ্রুত তথ্য হোলিকা, অন্যান্য নাম ...
Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

হোলিকা এবং প্রহ্লাদ

ভাগবত পুরাণ এর সপ্তম অধ্যায় অনুসারে,[][][][][] অসুর রাজা হিরণ্যকশিপু অমর হতে চান। এজন্য ব্রহ্মার নিকট হতে অমরত্বের বরপ্রাপ্তির জন্য তিনি কঠোর ধ্যানে নিমজ্জিত হন। কিন্তু দেবতারা খুব কমই অমরত্ব দান করে। কিন্তু হিরণ্যকশিপু এমন বর চান যা তাকে মনে করায় যে পরোক্ষভাবে তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন। তিনি যে বর লাভ করেন তা তাকে পাঁচটি বিশেষ ক্ষমতা দান করে। এগুলো হচ্ছে, তাকে মানুষও হত্যা করতে পারবে না, কোন প্রাণীও হত্যা করতে পারবে না; তাকে ঘরেও হত্যা করা যাবে না, আবার বাইরেও হত্যা করা যাবে না; তাকে দিনেও হত্যা করা যাবে না আবার রাতেও হত্যা করা যাবে না; তাকে অস্ত্রের (যা ছুড়ে মারা হয়) দ্বারাও হত্যা করা যাবে না আবার সস্ত্রের (যা হাতে থাকে) দ্বারাও হত্যা করা যাবে না; তাকে স্থল, জল বা বায়ু কোথাও হত্যা করা যাবে না। এই বর লাভ করে হিরণ্যকশিপু অহংকারী ও উদ্ধত হয়ে ওঠে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, কেবল তাকেই দেবতা হিসেবে পূজা করা হবে। কেউ তার আদেশ পালন না করলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন বা হত্যা করবেন।[] তার পুত্র প্রহ্লাদ তার সাথে সম্মত হয়নি। তিনি একজন বিষ্ণুভক্ত ছিলেন,[] তার পিতাকে দেবতা হিসেবে পূজা করতে তাই তিনি অস্বীকার করেন। প্রহ্লাদ বিষ্ণুকেই পূজা করা চালিয়ে যান।

Thumb
হিরণ্যকশিপুকে বধরত বিষ্ণুর অবতার নৃসিংহ

এতে হিরণ্যকশিপু খুব রাগান্বিত হন এবং প্রহ্লাদকে হত্যা করার বিভিন্ন চেষ্টা করেন। এগুলোর মধ্যে একবার হিরণ্যকশিপু তার বোন হোলিকার কাছে সাহায্য চান। হোলিকার একটি বিশেষ পোশাক ছিল যা তাকে আগুনে পুড়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করত। হিরণ্যকশিপুকে তিনি তার কোলে বসতে বলেন, আর হিরণ্যকশিপু তার কোলে বসলে তিনি প্রহ্লাদের উপর আগুন জ্বালিয়ে দেন।[] এতে প্রহ্লাদ আগুনে পুড়ে মারা যাবে কিন্তু হোলিকার কাছে থাকা বিশেষ বস্ত্রের জন্য তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু সেই আগুন জ্বলতেই হোলিকার শরীর থেকে সেই বস্ত্র খুলে গিয়ে প্রহ্লাদের শরীরকে আবৃত করে।[] এতে হোলিকা আগুনে পুড়ে যায়, আর প্রহ্লাদ ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়।[][]

Thumb
১৩শ শতাব্দীর অগ্নিশিখায় প্রহ্লাদকে চিত্রিত করা প্রাচীন ভাস্কর্য।

বিষ্ণু নৃসিংহ অবতার (অর্ধমানব-অর্ধসিংহ) রূপে গোধূলি লগ্নে (দিন ও রাতের মাঝামাঝি সময়ে) আবির্ভূত হন, হিরণ্যকশিপুকে বাড়ির দোরগোড়ায় (না বাইরে না ঘরে) নিয়ে যান, তাকে নিজের কোলে (না বায়ুতে, না স্থলে) স্থাপন করেন, ও এরপর হিরণ্যকশিপুর নাড়িভুড়ি বের করে ও তার থাবা দিয়ে (না অস্ত্র না সস্ত্র) তাকে হত্যা করেন।[] এভাবে হিরণ্যকশিপুর লাভ করা বর তাকে বাঁচাতে পারে নি। প্রহ্লাসদ ও মানব জাতি বাধ্যবাধকতা ও ভয় থেকে মুক্তি পায়। নৃসিংহের দ্বারা হিরণ্যকশিপু বধ এর এই কাহিনী অশুভ এর উপর শুভের জয়কে নির্দেশ করে।[] হোলিকা দহন বা নেড়াপোড়া উৎসব এই ঘটনাটিকেই নির্দেশ করে।[]

Remove ads

কৃষ্ণ ও রাধা

হোলিকে ফাগ্বাহ (Phagwah)-ও বলা হয়, এবং এক্ষেত্রে হোলিকাকে বলা হয় পুতনা। কৃষ্ণের মামা এবং রাজা কংশ তার শিশু ভাগ্নে কৃষ্ণকে নিজের জীবনের জন্য সংকট বলে মনে করে। কংস রাক্ষসী পুতনাকে নারীর বেশে কৃষ্ণকে হত্যা করতে পাঠায়, যেখানে পুতনা রাক্ষসী কৃষ্ণকে স্তন্যদান করাতে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করে কৃষ্ণকে হত্যা করবে।[] কিন্তু শিশু কৃষ্ণ কেবল পুতনার বিষাক্ত দুধই পান করেনি, সেইসাথে পুতানার রক্তও পান করে। এরফলে পুতনা একজন রাক্ষসীতে পরিণত হয়। এরপর পুতানা পালিয়ে যায় ও আগুনে জ্বলে ওঠে, এবং কৃষ্ণের গায়ের রঙ ঘন নীল হয়ে যায়।

ফাগ্বাহ (Phagwah) উদ্‌যাপনের আগের রাতে পুতনার দহন উদযাপিত হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণ তার যৌবনে হতাশ হয়ে ভাবে, উজ্জ্বল বর্ণের রাধা ও অন্যান্য গোপিরা তার শ্যাম বর্ণের কারণে পছন্দ করবে কিনা। এতে কৃষ্ণের মা কৃষ্ণের হতাশায় ক্লান্ত হয়ে তাকে বলেন, রাধার কাছে গিয়ে সে রাধার মুখমণ্ডলকে যেকোন রঙ দিয়ে রাঙ্গিয়ে দিতে পারে। কৃষ্ণ তাই করে, এবং এরপর রাধা ও কৃষ্ণ জুড়ি হয়ে যায়। রাধা ও কৃষ্ণের এই রঙ নিয়ে খেলাই হোলি বা দোলযাত্রা হিসেবে পালিত হয়।[১০][১১]

Remove ads

হোলিকা দহন এর উৎস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

হিন্দুধর্মের অনেক ঐতিহ্যতেই, হোলি উৎসবের আগে হোলিকার মৃত্যুকে উদ্‌যাপন করা হয়, এবং এখান থেকেই বোঝা যায়, হোলি নামটা কোথা থেকে এসেছে। উত্তর ভারতে হোলি এর আগের রাতে এই ঐতিহ্য অনুসারে আগুন জ্বালানো হয়। এটা মনে রাখা প্রয়োজন, ভারতের কোন কোন অংশে এই উৎসবকে হোলিকা বলা হয়। প্রহ্লাদের গল্পের সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু কাজও করা হয়, কিন্তু হোলিকার আগুনে পোড়ানোর ব্যাপারটাই এখানে মুখ্য। এর দ্বারা রাজা হিরণ্যকশিপুর অশুভ শক্তির চেয়ে ভক্তির শক্তি বেশি - এই ব্যাপারটা প্রকাশ করা হয়, প্রহ্লাদ অনেক অত্যাচারের পরও তার বিশ্বাস হারায় নি।

Thumb
নেপালের কাঠমুণ্ডুতে হোলিকা দহন

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী হোলিকার দগ্ধ হওয়াটাই হোলি উদ্‌যাপনের সব থেকে বেশি পরিচিত ব্যাখ্যা। ভারতের বিভিন্ন স্থানে হোলিকার মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ দেখানো হয়:

  • বিষ্ণু বাধা দেন বলে হোলিকা আগুনে পোড়ে।
  • ব্রহ্মা হোলিকাকে এই শর্তে তার আগুনে না পুড়বার ক্ষমতাটি দান করেছিলেন যে, এই ক্ষমতাটিকে অন্য কারও ক্ষতির জন্য ব্যবহার করা হবে না।
  • হোলিকা ভাল নারী ছিলেন, এবং তার পোশাকের কারণে তাকে আগুনে পোড়ানো সম্ভব ছিল না। প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে এটা জেনে তিনি তার পোশাক প্রহ্লাদকে দিয়ে দেন এবং নিজে আগুনে পুড়ে আত্মত্যাগ করেন।
  • হোলিকা যখন আগুনের উপর বসেন, তিনি তার চাদর পরিধান করেন এবং প্রহ্লাদকে তার কোলের উপর বসান। প্রহ্লাদ বিষ্ণুর প্রতি প্রার্থনা শুরু করলে বিষ্ণু বাতাস পাঠিয়ে দেন, যা হোলিকার চাদরটিকে উড়িয়ে নিয়ে প্রহ্লাদকে তা দিয়ে আবৃত করে। এরফলে প্রহ্লাদ বেঁচে যায়, এবং হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা যায়।[১২]

বৈষ্ণবধর্ম ছাড়া শৈবধর্মশাক্তধর্মেও হোলি উৎসবের তাৎপর্য রয়েছে। হোলি নিয়ে আরেকটি গল্প আছে যা ভালোবাসার জন্য আগুনে পুড়ে আত্মত্যাগ এর সাথে সম্পর্কিত। এই গল্পটি শিবকামদেবের। শিবের সাথে পার্বতীর বিবাহ হবার পূর্বে, পার্বতী শিবকে যোগ ও ধ্যান থেকে বাস্তব জগতে ফিরিয়ে আনবার জন্য বসন্ত পঞ্চমীর দিনে প্রেমের দেবতা কামদেবের সাহায্য প্রার্থনা করেন। কামদেব (প্রেমের দেবতা) এবং তার স্ত্রী রতি (প্রেমের দেবী) পার্বতীকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন যাতে পার্বতী শিবকে তার স্বামী রূপে অর্জন করতে সক্ষম হন।[১৩] শিব যোগাসনে গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। কামদেব ও রতি শিবের ধ্যান ভঙ্গ করে পার্বতীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করানোর জন্য তার দিকে তীর ছোড়ে। কিন্তু ধ্যানে এই বিঘ্ন ঘটবার কারণে শিব তার তৃতীয় চক্ষু খোলেন এবং সেই চক্ষুর তেজদীপ্ত চাহনিতে কামদেব দগ্ধ হয়ে ছাইয়ে পরিণত হয়। এই ঘটনায় কামদেবের স্ত্রী রতি বিমর্ষ হয়ে পড়ে। তাদের তীর কাজ করেনি, বরং শিবকে বিদ্ধ করার আগেই এগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তিতে শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়। এই বিবাহের সময় রতি শিবের কাছে প্রার্থনা করেন যাতে কামদেবকে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। শিব সম্মত হন এবং কামদেবকে সত্যিকার আবেগ এর একটি অবাস্তব সত্তা হিসেবে তাকে ফিরিয়ে দেন। প্রেমের দেবতার এই ফিরে আসা বসন্ত পঞ্চমী উৎসবের চল্লিশ দিন পর হোলি হিসেবে পালিত হয়।[১৪][১৫] এই কামদেবের কিংবদন্তি ও হোলি উৎসবে এর তাৎপর্যের বিভিন্ন প্রকরণ আছে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে এই কিংবদন্তির বিভিন্ন রূপ দেখা যায়।[১৬]

Remove ads

তথ্যসূত্র

বহিঃস্থ সূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads