Loading AI tools
বাংলাদেশি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (যা কেবল শিবির নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের একটি ইসলামী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন।[১] এটি ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন। ইসলামি ছাত্র সংগঠন গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম প্রধান। পাকিস্তান আমলে এই দলটির পূর্ব নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘ (ইসলামী জমিয়তে-ই-তালাবা পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান শাখা)।[২] মুসলিম ছাত্র ব্যতীত কেউ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য হতে পারেনা। তবে যে কোনো ধর্ম বা মতবাদের অনুসারী শুধুমাত্র ছাত্ররা এই সংগঠনের সমর্থক হতে পারে।[৩][৪] তাদের সংগঠন সঙ্গীত হল “পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে আমরা শিবির গড়েছি, শপথের সঙ্গীন হাতে নিয়ে সকলে নবীজীর রাস্তা ধরেছি”।[৩]
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির | |
---|---|
সভাপতি | মঞ্জরুল ইসলাম |
মহাসচিব | জাহিদুল ইসলাম |
প্রতিষ্ঠা | ৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ |
সদর দপ্তর | ৪৮/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা |
ভাবাদর্শ | ইসলামী সমাজ বির্নিমাণ |
জাতীয় অন্তর্ভুক্তি | বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী |
সংবাদপত্র | ১।ছাত্রসংবাদ ২।নতুন কিশোরকণ্ঠ (শিশু-কিশোর পত্রিকা) |
ওয়েবসাইট | shibir |
১৯৭১ এর পূর্বে জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংস্থার নাম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুযায়ী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। জামায়াতে ইসলামীসহ এর ছাত্রসংগঠনের রাজনীতির মূল উপজীব্য যেহেতু ধর্ম, সেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে জামায়াতসহ এর ছাত্রসংগঠনের সাংগঠনিক অস্তিত্ব দৃশ্যত বিলীন হয়ে যায়।[৫]
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালের ৩রা মে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম কর্তৃক একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নম্বর ধারা বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।[৬] এরপর ১৯৭৭ সালে পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংগঠনটি "বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির" নামে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শিবির প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মীর কাশেম আলী এবং প্রতিষ্ঠাকালীন দলটির সদস্য ছিলো মাত্র ছয় জন। সংগঠনের নীতি অনুসারে এদের কার্যক্রম পাঁচটি দফার উপর প্রতিষ্ঠিত।[৭]
আশির দশকে ইসলামী ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সক্রিয় হতে থাকে। এ সময়ে বেশকিছু সহিংসতা ও হত্যার ঘটনাও ঘটে। এর মধ্যে ১৯৮২ সালের ১১ই মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনটির নবীন বরণ অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। হামলায় শিবিরের কর্মী সাবিবর আহমদ, আবদুল হামিদ, আইয়ুব আলী, আবদুল জাববার নিহত হয়। এই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ,ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র মৈত্রীকে দায়ী করা হয়। তাই শিবির প্রতিবছর এই দিনটিকে "শহীদ দিবস" হিসেবে পালন করে।[৮] ১৯৮৯ সালে হামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রদল নেতা নিহত হন, যার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হয়। এই ঘটনার জেরে পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।[৯] এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরকে রাজনীতি না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।[৯] তবে প্রায় ৩৫ বছর পর ২৯ অক্টোবর ২০২৪ সালে ইসলামী ছাত্রশিবির এক বিবৃতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি বলে দাবি করে।[১০] ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে ফারুক হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবির অভিযুক্ত হলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।[১১] তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানায় পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোন সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারবে না৷[১২]
০১ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জামায়াতে ইসলামীর সাথে এই ছাত্র সংগঠনটিও নিষিদ্ধ হয়। তারপর অসহযোগ আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা জনরোষে পালিয়ে গেলে তার সরকারের পতন হয়, ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে নতুন অন্তর্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতের উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়।[১৩][১৪]
ক্রম | সভাপতি | সেক্রেটারি জেনারেল | দায়িত্ব গ্রহণ | দায়িত্ব সমাপ্তি |
---|---|---|---|---|
০১ | মীর কাশেম আলী | ড. আব্দুল বারী(প্রথম সেশন)
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান(দ্বিতীয় সেশন) |
ফেব্রুয়ারী ১৯৭৭ | অক্টোবর ১৯৭৮ |
০২ | মুহাম্মদ কামারুজ্জামান | মাওলানা আবু তাহের | অক্টোবর ১৯৭৮ | অক্টোবর ১৯৭৯ |
০৩ | মাওলানা আবু তাহের | এনামুল হক মঞ্জু | অক্টোবর ১৯৭৯ | অক্টোবর ১৯৮১ |
০৪ | মুহাম্মদ এনামুল হক মঞ্জু | আহমদ আব্দুল কাদের বাচ্চু | অক্টোবর ১৯৮১ | জানুয়ারী ১৯৮২ |
০৫ | আহমদ আব্দুল কাদের বাচ্চু | ফরিদ আহমদ রেজা | জানুয়ারী ১৯৮২ | মে ১৯৮২ |
০৬ | মুহাম্মদ সাইফুল আলম খান মিলন | মোহাম্মদ তাসনিম আলম | মে ১৯৮২ | অক্টোবর ১৯৮৩ |
০৭ | মুহাম্মদ তাসনিম আলম | ডা. সৈয়দ আব্দুল্যাহ মোহাম্মদ তাহের | জানুয়ারী ১৯৮৪ | জানুয়ারী ১৯৮৬ |
০৮ | ডা. সৈয়দ আব্দুল্যাহ মোহাম্মদ তাহের | শামসুল ইসলাম | জানুয়ারী ১৯৮৬ | জানুয়ারী ১৯৮৮ |
০৯ | শামসুল ইসলাম | ড. আমিনুল ইসলাম মুকুল | জানুয়ারী ১৯৮৮ | জানুয়ারী ১৯৯০ |
১০ | ডা. আমিনুল ইসলাম মুকুল | ড. আবু জাফর মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ | জানুয়ারী ১৯৯০ | জানুয়ারী ১৯৯২ |
১১ | আবু জাফর মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ | ব্যারিস্টার হামিদুল ইসলাম আযাদ | জানুয়ারী ১৯৯২ | জানুয়ারী ১৯৯৩ |
১২ | ব্যারিস্টার হামিদুল ইসলাম আযাদ | রফিকুল ইসলাম খান | জানুয়ারী ১৯৯৩ | জানুয়ারী ১৯৯৪ |
১৩ | রফিকুল ইসলাম খান | মুহাম্মদ শাহজাহান | জানুয়ারী ১৯৯৪ | জানুয়ারী ১৯৯৬ |
১৪ | মুহাম্মদ শাহজাহান | মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া (প্রথম সেশন) মুহাম্মদ মতিউর রহমান আকন্দ (দ্বিতীয় সেশন) | জানুয়ারী ১৯৯৬ | জানুয়ারী ১৯৯৮ |
১৫ | মুহাম্মদ মতিউর রহমান আকন্দ | আ স ম মামুন শাহীন (প্রথম সেশন) এহসানুল মাহাবুব জুবায়ের (দ্বিতীয় সেশন) | জানুয়ারী ১৯৯৮ | জানুয়ারী ২০০০ |
১৬ | এহসানুল মাহবুব জুবায়ের | নুরুল ইসলাম বুলবুল | জানুয়ারী ২০০০ | জানুয়ারী ২০০১ |
১৭ | নুরুল ইসলাম বুলবুল | মুজিবুর রহমান মঞ্জু | জানুয়ারী ২০০১ | জানুয়ারী ২০০৩ |
১৮ | মুজিবুর রহমান মঞ্জু[১৫] | মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন | জানুয়ারী ২০০৩ | জানুয়ারী ২০০৪ |
১৯ | মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন | ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ | জানুয়ারী ২০০৪ | জানুয়ারী ২০০৬ |
২০ | ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ[১৬] | মো.জাহিদুর রহমান | জানুয়ারী ২০০৬ | জানুয়ারী ২০০৮ |
২১ | মো. জাহিদুর রহমান | ড. রেজাউল করিম | জানুয়ারী ২০০৮ | জানুয়ারী ২০০৯ |
২২ | ড. মুহাম্মাদ রেজাউল করিম | এডভোকেট শিশির মনির (প্রথম সেশন)
ডা. ফখরুদ্দীন মানিক (দ্বিতীয় সেশন) |
জানুয়ারী ২০০৯ | জানুয়ারী ২০১১ |
২৩ | ডা. ফখরুদ্দীন মানিক | মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন | জানুয়ারী ২০১১ | জানুয়ারী ২০১২ |
২৪ | মুহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন | মোহাম্মদ আবদুল জব্বার | জানুয়ারী ২০১২ | জানুয়ারী ২০১৪ |
২৫ | মোহাম্মাদ আব্দুল জাব্বার | আতিকুর রহমান | জানুয়ারী ২০১৪ | ডিসেম্বর ২০১৫ |
২৬ | আতিকুর রহমান | ইয়াছিন আরাফাত | ডিসেম্বর ২০১৫ | ডিসেম্বর ২০১৬ |
২৭ | ইয়াছিন আরাফাত | ড. মোবারক হোসাইন | ডিসেম্বর ২০১৬ | জানুয়ারী ২০১৯ |
২৮ | ড. মোবারক হোসাইন | সিরাজুল ইসলাম | জানুয়ারী ২০১৯ | ডিসেম্বর ২০১৯ |
২৯ | সিরাজুল ইসলাম | সালাহউদ্দীন আইউবী | ডিসেম্বর ২০১৯ | ডিসেম্বর ২০২০ |
৩০ | সালাহউদ্দিন আইউবী | হাফেজ রাশেদুল ইসলাম | ডিসেম্বর ২০২০ | ডিসেম্বর ২০২১ |
৩১ | হাফেজ রাশেদুল ইসলাম | রাজিবুর রহমান পলাশ | ডিসেম্বর ২০২১ | ডিসেম্বর ২০২২ |
৩২ | রাজিবুর রহমান পলাশ | মঞ্জুরুল ইসলাম | ডিসেম্বর ২০২২ | ডিসেম্বর ২০২৩ |
৩৩ | মঞ্জুরুল ইসলাম | জাহিদুল ইসলাম | ডিসেম্বর ২০২৩ | বর্তমান |
শিবির সদস্যরা তাদের সংগঠন পরিচালনার অর্থ তাদের কর্মী, সাথী, সদস্য ও শুভাকাঙ্খীদের নিকট থেকে মাসিকভাবে আদায় করে থাকে। তাদের সাংগঠনিক প্রকাশনীর মুনাফা ও শরিয়াত অনুমোদিত অন্যান্য খাত হলো বায়তুলমালের অন্যতম আয়ের উৎস।[১৭][১৮][১৯] তবে শরিয়াত অনুমোদিত অন্যান্য খাতের অর্থের হিসাব আলাদা রেখে শরিয়ত নির্ধারিত পন্থায় ব্যয় করা হয়।[২০][২১]
১৯৭১ সালে, শিবিরের পূর্বসূরি, ইসলামী ছাত্র সংঘের,[২২] সদস্যরা আল-বদর গঠনে নেতৃত্ব দেয়, যারা ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল; আল-বদরের কিছু সদস্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত ও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল।[২৩][২৪][২৫][২৬][২৭]
এই ছাত্র সংগঠনটি অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে সহিংস সংঘর্ষে জড়িত ছিল,[১৮][২৮] এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকার গুজব রয়েছে।[২৯] এই দলটি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কিছু বড় ইসলামিক সংগঠনের সাথে যুক্ত।[২৯] শিবির কর্মীরা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের রগ কেটে আঘাত করার জন্য পরিচিত।[৩০][৩১][৩২][৩৩] যদিও শিবিরের রগ কাটার বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই বলে দাবি করেন শিবিরের নেতৃবৃন্দ।[৩৪]
ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা আইএইচএস জেন'স "আইএইচএস জেন'স ২০১৩ গ্লোবাল টেররিজম অ্যান্ড ইনসার্জেন্সি অ্যাটাক ইনডেক্স" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে শিবির ২০১৩ সালে সবচেয়ে সক্রিয় অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল।[৩৫]
ছাত্র শিবির প্রতিবেদনটির ফলাফলের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ করে। তারা নিজেদেরকে একটি অসশস্ত্র সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদনটির উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বলেছিল: "তারা প্রতিবেদনটিতে কোনো একটি ঘটনাও উল্লেখ করেনি, যা আমাদের সশস্ত্র আক্রমণে জড়িত থাকার প্রমাণ দিতে পারে।"[৩৬]
১৯৮২ সালের মার্চ মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে চারজন শিবির সদস্য নিহত হন।[৩৭]
২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আল-মুকাদ্দাস (২২) এবং দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্স প্রার্থী মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ (২৩) কে নিজেদের র্যাব-৪ ও ডিবি পুলিশের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাভার থেকে গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে তারা গুম হন বলে অভিযোগ রয়েছে।[৩৮][৩৯][৪০] তারা উভয়ই ইসলামী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্য ছিলেন[৪১] এবং ৪ ফেব্রুয়ারি তাদের র্যাব ও ডিবি পুলিশের সদস্যদের দ্বারা আটক করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়। তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি। র্যাব এক বিবৃতিতে এই দুই ব্যক্তিকে আটক করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে বিভিন্ন সূত্রের রিপোর্ট ও তৎকালীন সময়ে র্যাব কর্তৃক সংঘটিত গুমের ঘটনার প্রবণতা, এক্ষেত্রে র্যাবের এই অস্বীকৃতির উপর সন্দেহের সৃষ্টি করে।[৪২][৪৩][৪৪] অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন এই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।[৪৫] ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল রাত ২টা ২৫ মিনিটে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৫ এর সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঙ্গারিয়াপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম এবং মোসাম্মত নুরজাহান বেগমকে রাজশাহী জেলার রাজপাড়া থানার অন্তর্গত বিল-শিমলা মহল্লার ১৭৫ নং বাড়ি থেকে আটক করেন। পরে, পরিবারের সদস্যরা র্যাব-৫ এর অফিসে যোগাযোগ করলে র্যাব জানায় যে আনোয়ারুলকে তাদের দ্বারা আটক করা হয়নি। আনোয়ারুলের পরিবারের সদস্যরা র্যাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ আনেন। তদন্তে জানা যায়, আনোয়ারুল রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। তাছাড়া, তিনি রাজশাহী জেলার ইসলামী ছাত্র শিবিরের অফিস সম্পাদক ছিলেন।[৪৬]
২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর ছাত্রশিবিরের ছয় নেতাকর্মীর গুমের অভিযোগে তাদের পরিবারের সদস্যরা র্যাব ও ডিবির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখিত শিবির নেতারা হলেন শাহ মো. ওয়ালীউল্লাহ, মো. মোকাদ্দেস আলী, হাফেজ জাকির হোসেন, জয়নাল আবেদীন, রেজোয়ান হোসাইন এবং মু. কামরুজ্জামান। শিবিরের আইন বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমানুল্লাহ আল জিহাদী জানান, পরিবারের সদস্যরা ৬ আগস্ট র্যাব সদর দপ্তরে গুম হওয়া নেতাদের সন্ধান চেয়েছিলেন, কিন্তু এখনও কোনো তথ্য পাননি।[৪৭][৪৮]
২০১০ সাল থেকে শিবিরের বিরুদ্ধে একাধিকবার দমন-পীড়ন পরিচালিত হয়েছে।[৪৯] পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বলেছিল, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং পুলিশের উপর হামলা বন্ধ করা জরুরি, কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এটিকে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন হিসেবে দেখেছে।[৫০] ২০১০ সাল থেকে, ছাত্রাবাসে এলোপাতাড়ি তল্লাশি চালিয়ে সেখানে থাকা শিবির সমর্থকদের আটক করা হয়। ২০১০ সালে, সরকারি সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিবিরের উপস্থিতি শনাক্ত করতে এবং তাদের প্রভাব দূর করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়।[৫১] এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাধারণ শিবির সদস্য এবং হামলায় জড়িত সন্দেহভাজনদের পৃথক করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি, এবং তাদের আইনি পরামর্শ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল[৫০] ৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশ পুলিশ চট্টগ্রাম শহরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদর দপ্তরে অভিযান চালায় এবং পরে ৯০ জন শিবির সদস্যের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক উদ্ধারের মামলাও দায়ের করে।[৫২] এটি সাম্প্রতিক সময়ে শিবিরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় দমন-পীড়ন ছিল। যদিও সংগঠনটি ঘটনার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এবং মামলার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানায়।[৫৩]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.