উপালি
একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু তথা গৌতম বুদ্ধের প্রধান দশ শিষ্যের অন্যতম / From Wikipedia, the free encyclopedia
উপালি[note 1] ছিলেন একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু তথা গৌতম বুদ্ধের প্রধান দশ শিষ্যের অন্যতম।[1] আদি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি থেকে জানা যায়, প্রথম বৌদ্ধ সংগীতিতে উপালি বিনয়[note 2] পাঠ ও পর্যালোচনার দায়িত্বে বৃত ছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক নিম্নবর্ণীয় নাপিতের ঘরে। বুদ্ধের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল শৈশবেই। পরবর্তীকালে যখন শাক্য রাজকুমারগণ পবজ্জা (সংস্কৃত: প্রবজ্যা; বৌদ্ধ ভিক্ষু রূপে দীক্ষা) গ্রহণ করেন, তখন উপালিও তাঁদেরই সঙ্গে দীক্ষা গ্রহণ করেন। বর্ণাশ্রম প্রথা অস্বীকার করে রাজকুমারদের আগে উপালিকে দীক্ষা প্রদান করা হয়েছিল। দীক্ষা গ্রহণের পর উপালি ধম্ম[note 3] ও বিনয় অধ্যয়ন করেন। তার শিক্ষাগুরু ছিলেন কপ্পিটক। উপালি পরিচিত ছিলেন বিনয় প্রসঙ্গে তার জ্ঞান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুজীবনের নিয়মাবলি সম্পর্কে তার কঠোর মনোভাবের জন্য। এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের মীমাংসার জন্য তার সঙ্গে আলোচনা করা হত। এই রকম একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ভিক্ষু অজ্জুকের ঘটনা; যাঁর বিরুদ্ধে জমি-সংক্রান্ত একটি বিবাদে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। প্রথম সংগীতিতে উপালি বিনয় পাঠের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তার পরিচিতি প্রধানত এই কারণেই।
থেরো উপালি | |
---|---|
অন্য নাম | 'বিনয়ের ভাণ্ডার' (পালি: বিনয়ে অগ্গনিক্খিত্তো; 'বিনয়ের অগ্রণী' (পালি: বিনয়-পামোক্খ) |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
ধর্ম | বৌদ্ধধর্ম |
শিক্ষালয় | সকল, তবে পালি বৌদ্ধধর্মেই সর্বাধিক আলোচিত |
বংশ | বিনয়ধর |
যে জন্য পরিচিত | বিনয় (ভিক্ষুজীবনের নিয়মাবলি) বিশেষজ্ঞ, প্রথম সংগীতিতে ভিক্ষু-নীতিমালা পর্যালোচনা করেন |
অন্য নাম | 'বিনয়ের ভাণ্ডার' (পালি: বিনয়ে অগ্গনিক্খিত্তো; 'বিনয়ের অগ্রণী' (পালি: বিনয়-পামোক্খ) |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
শিক্ষক | বুদ্ধ, কপ্পিটক |
কাজের মেয়াদ | আদি বৌদ্ধধর্ম |
উত্তরসূরী | দাসক |
শিক্ষার্থী
| |
দীক্ষা | অনুপিয়া বুদ্ধ কর্তৃক |
আদি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে উল্লিখিত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা উপালি-সহ বুদ্ধের অন্যান্য শিষ্যদের ভূমিকা পর্যালোচনা করে থাকেন। তাঁদের অনুমান, ইতিহাসের যে পর্যায়ে ভিক্ষুজীবনের নিয়মাবলির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপিত হতে শুরু করে, সেই যুগেই উপালির ভূমিকার উপরেও গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই যুগপর্যায়েই মহাকস্সপ (সংস্কৃত: মহাকাশ্যপ) ও উপালি বুদ্ধের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিষ্য হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীকালে উপালি ও তার শিষ্যগণ বিনয়ধর[note 4] নামে পরিচিত হন। এঁরাই বুদ্ধের পরিনিব্বান[note 5] লাভের পর তারাই ভিক্ষুজীবনের নিয়মাবলি সংরক্ষণ করেন। পরবর্তীকালে এই ধারাটি সিংহলি ও বর্মি বৌদ্ধধর্মের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়। চীনে সপ্তম শতাব্দীর বিনয় শাখাটি উপালিকে তাঁদের প্রবর্তক হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, উপালিই জন্মান্তরে তাঁদের অন্যতম প্রবর্তক রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। বিনয় প্রসঙ্গে বুদ্ধ ও উপালির প্রায়োগিক কথোপকথন পালি ও সর্বাস্তিবাদ শাখায় নথিবদ্ধ রয়েছে এবং মার্কিন বৌদ্ধধর্মের আধুনিক নীতিশাস্ত্রের অধ্যয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গৃহীত হয়।