এসজিআর
From Wikipedia, the free encyclopedia
কোমল গামা রিপিটার (এসজিআর) হলো এক ধরনের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যা অনিয়মিত বিরতিতে গামা-রে এবং এক্স-রের বিস্ফোরণ নির্গত করে। অনুমান করা হয় যে, এরা এক ধরনের ম্যাগনেটার বা নিউট্রন তারা যার চারপাশে অশ্মীভূত চাকতি বিদ্যমান।[1]
৫ মার্চ ১৯৭৯ সালে,[2] একটি শক্তিশালী গামা-রে বিস্ফোরণ শনাক্ত করা হয়। সৌরজগৎের বিভিন্ন স্থান হতে প্রচুর গ্রাহ-যন্ত্র কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এই বিস্ফোরণ শনাক্ত করে। ফলে, এর অভিমুখ নির্ধারণ করা যায় যা ছিলো বৃহৎ ম্যাগেলানিক মেঘের একটি সুপারনোভা ধ্বংসাবশেষের কাছাকাছি।[3]
সময়ের সাথে সাথে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে এটি কোনও স্বাভাবিক গামা-রে বিস্ফোরণ ছিল না। কোমল গামা-রে এবং কঠিন এক্স-রের পরিসরে ফোটনগুলি ছিল কম শক্তিশালী এবং বিস্ফোরণটি একই অঞ্চল থেকে পুনরাবৃত্ত হচ্ছিলো।
নাসার মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টার ইউনিভার্সিটির স্পেস রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসআরএ) -এর জ্যোতির্বিদ ক্রিসা কাউভেলিওটু এই তত্ত্বটি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন যে, কোমল গামা রিপিটারগুলি আসলে ম্যাগনেটার। এই তত্ত্বানুসারে, এমন বিস্ফোরণ বস্তুটির আবর্তন হার কমিয়ে দেয়। ১৯৯৮ সালে, তিনি কোমল গামা রিপিটার, এসজিআর ১৮০৬-২০ -এর পর্যাবৃত্তি সাবধানতার সাথে তুলনা করেন। এর পর্যায়কাল ১৯৯৩ সালের পর্যায়কাল থেকে ০.০০৮ সেকেন্ড বৃদ্ধি পায় এবং তার হিসাবে এটি ৮ × ১০১০ টেসলার (৮ × ১০১৪ গাউস) চৌম্বক ক্ষেত্র সম্পন্ন একটি ম্যাগনেটার দ্বারা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। এটিই আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে, কোমল গামা রিপিটারগুলি প্রকৃত পক্ষে ম্যাগনেটার তা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
২৭ আগস্ট ১৯৯৮ সালে, একটি অস্বাভাবিকভাবে দর্শনীয় কোমল গামা রিপিটারের বিস্ফোরণ, এসজিআর ১৯০০+১৪ লক্ষ্য করা যায়। পৃথিবী হতে এই এসজিআরটির দূরত্ব দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও, আনুমানিক ২০,০০০ আলোকবর্ষ, এই বিস্ফোরণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বড় প্রভাব পড়ে। আয়নোস্ফিয়ারের পরমাণুগুলি, যা সাধারণত দিনের বেলায় সূর্যের বিকিরণে আয়নিত হয় এবং রাতে পুনরায় নিরপেক্ষ পরমাণুতে সমন্বিত হয় তা রাতেই প্রায় সাধারণ দিনের মত আয়নিত হয়ে যায়। আকাশের ভিন্ন অংশে পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও, রসি এক্স-রে টাইমিং এক্সপ্লোরার (আরএক্সটিই), একটি এক্স-রে উপগ্রহ সেই মুহূর্তে তার শক্তিশালী সংকেত পেয়েছিল, যেখানে সাধারণভাবে রেডিয়েশনটি প্রতিহত হওয়ার কথা ছিল।
কিছু সুপরিচিত এসজিআর:[4]
এসজিআর | আবিষ্কার | টীকা |
---|---|---|
এসজিআর ০৫২৫-৬৬ | ১৯৭৯ | |
এসজিআর ১৮০৬-২০ | ১৯৭৯/১৯৮৬ | এখন পর্যন্ত সনাক্তকৃত সবথেকে শক্তিশালী এসজিআর বিস্ফোরণ এই এসজিআরটি থেকেই নির্গত হয় যা ২৭ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে সংঘটিত হয়। |
এসজিআর ১৯০০+১৪ | ১৯৭৯/১৯৮৬ | ২০,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই এসজিআরটি খুবই শক্তিশালী যা এমনকি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলকেও প্রভাবিত করেছিল। |
এসজিআর ১৬২৭-৪১ | ১৯৯৮ | |
এসজিআর জে১৫৫০-৫৪১৮[5] | ২০০৮ | প্রতি ২.০৭ সেকেন্ডে এক বার আবর্তীত হওয়া এই ম্যাগনেটারটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুত ঘূর্ণয়মান ম্যাগনেটার। |
এসজিআর ০৫০১+৪৫১৬ [6] | ২০০৮ | পৃথিবী থেকে ১৫,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এসজিআরটির এক্স-রে বিস্ফোরণ ২২ আগস্ট ২০০৮ সালে সুইফট কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়। |
পিএসআর জে১৭৪৫-২৯০০ | ২০১৩ | একটি কোমল গামা রিপিটার যা ধনু এ* নামক কৃষ্ণ গহব্বরকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। |
এসজিআর ১৯৩৫+২১৫৪ | ২০২০ | ৩০০ আলোক বর্ষ দূরে; মিল্কিওয়েতে সনাক্তকৃত প্রথম এফবিআর এবং প্রথম কোনো জ্ঞাত উৎসের সাথে সংযুক্ত। |
নামের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংখ্যাগুলি আকাশে এদের অবস্থান জানায়। উদাহরণস্বরূপ, এসজিআর ০৫২৫-৬৬ এর বিষুবাংশ ৫ঘ২৫মি এবং বিষুবলম্ব -৬৬°। আবিষ্কারের তারিখটি কখনও কখনও ১৯৭৯/১৯৮৬ এর মতো বিন্যাসে উপস্থাপিত হয়। যে বছরে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল সেই বছরটি এবং তার সাথে কোমল গামা রিপিটারটি আসলে "স্বাভাবিক" গামা-রে বিস্ফোরণ নয় বরং বস্তুর একটি পৃথক শ্রেণি হিসাবে স্বীকৃতী পাওয়ার বছরটি উল্লেখ করার জন্য এমন ব্যবস্থা।