কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান
ভারতের একটি জাতীয় উদ্যান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের একটি জাতীয় উদ্যান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান (অসমীয়া: কাজিৰঙা ৰাষ্ট্ৰীয় উদ্যান) হল ভারতের আসাম রাজ্যের গোলাঘাট ও নগাঁও জেলায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। বিশ্বের একশৃঙ্গ গণ্ডারের দুই-তৃতীয়াংশ এই জাতীয় অরণ্যে বাস করে।[1] কাজিরাঙায় একটি সংরক্ষিত অঞ্চল আছে। এখানে বেঙ্গল টাইগারের ঘনত্ব বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। ২০০৬ সালে এটি ব্যাঘ্র প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। এই জাতীয় উদ্যানে প্রচুর হাতি, বুনো মহিষ ও বারশৃঙ্গার পাওয়া যায়।[2] এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংরক্ষণ করা হয় বলে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশানাল একে "গুরুত্বপূর্ণ পক্ষীক্ষেত্র" বলেও ঘোষণা করেছে। ভারতের অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তুলনায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজিরাঙার সাফল্য তুলনামূলকভাবে বেশি। পূর্ব হিমালয় বায়োডাইভার্সিটি হটস্পটের সীমান্তে অবস্থিত বলে এই উদ্যানে বহু বিচিত্র প্রজাতির সমাগম দেখা যায়।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান কাজিৰঙা ৰাষ্ট্ৰীয় উদ্যান | |
---|---|
আইইউসিএন বিষয়শ্রেণী II (জাতীয় উদ্যান) | |
অবস্থান | গোলাঘাট ও নগাঁও জেলা, অসম, ভারত |
নিকটবর্তী শহর | জোরহাট, তেজপুর |
স্থানাঙ্ক | ২৬°৪০′ উত্তর ৯৩°২১′ পূর্ব |
আয়তন | ৪৩০ বর্গকিলোমিটার (১৭০ মা২) |
স্থাপিত | ১৯০৫ |
কর্তৃপক্ষ | ভারত সরকার, আসাম সরকার |
প্রাতিষ্ঠানিক নাম | কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান |
ধরন | প্রাকৃতিক |
মানদণ্ড | ৯ম, ১০ম |
মনোনীত | ১৯৮৫ (৯ম সেশন) |
সূত্র নং | 337 |
দেশ | ভারত |
অঞ্চল | এশিয়া-প্যাসিফিক |
কাজিরাঙায় ছন জাতীয় ঘাস ও জলাভূমি প্রচুর দেখা যায়। এখানে নিরক্ষীয় আর্দ্র দীর্ঘপত্র অরণ্যটি বেশ গভীর। ব্রহ্মপুত্র নদ সহ চারটি নদী এই বনের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে। বনের মধ্যে অসংখ্য বিল আছে। এই বনের উপর অনেক তথ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে। ১৯০৫ সালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে এই উদ্যান স্থাপিত হয়। তাই ২০০৫ সালে এই উদ্যানের শতবর্ষ উদ্যাপিত হয়েছে।
সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে কাজিরাঙার ইতিহাসের সূচনা হয় ১৯০৪ সালে। ওই বছর ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের স্ত্রী মেরি ভিক্টোরিয়া লেইটার কার্জন এই অঞ্চলে বেড়াতে আসেন। সেই সময়ও এই অঞ্চলটি গণ্ডারের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু একটাও গণ্ডার দেখতে না পেয়ে তিনি তার স্বামীকে এই বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলির সংরক্ষণের জন্য অনুরোধ করেন। কার্জনও গণ্ডার সংরক্ষণের জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।[3] ১৯০৫ সালের ১ জুন ২৩২ বর্গকিলোমিটার (৯০ বর্গমাইল) এলাকা নিয়ে কাজিরাঙা প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনাঞ্চল (কাজিরাঙা প্রোপোজড রিজার্ভ ফরেস্ট) গঠিত হয়।[4]
পরবর্তী তিন বছরে উদ্যানের এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের তীর পর্যন্ত আরও ১৫২ বর্গ কিলোমিটার (৫৬ বর্গ মাইল) বৃদ্ধি করা হয়।[5] ১৯০৮ সালে কাজিরাঙ্গাকে একটি পরিপূর্ণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯১৬ সালে কাজিরাঙ্গাকে শিকার অভয়ারণ্য (Game Sanctuary) হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় কাজিরাঙ্গা শিকার অভয়ারণ্য। এই নাম ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত বহাল থাকে। এ সময় বনাঞ্চলে শিকার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে দর্শনার্থীরা বনে প্রবেশ করতে পারতেন।
পরবর্তীতে অরণ্য সংরক্ষক পি. ডি. স্ট্রেচির উদ্যোগে উদ্যানের নাম থেকে "শিকার" শব্দটি বাদ দিয়ে নাম রাখা হয় "কাজিরাঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য"। মূলত আগের নামটির সাথে যুক্ত "শিকার" শব্দটি ভুল তাৎপর্য বহন করে বলে এই নতুন নামকরণ। ১৯৫৪ সালে আসাম সরকার "আসাম (গণ্ডার) বিধি" অনুমোদন করে। আইনে গণ্ডার শিকারের অপরাধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়। চৌদ্দ বছর পর, ১৯৬৮ সালে প্রাদেশিক সরকার "আসাম জাতীয় উদ্যান আইন, ১৯৬৮"-এর অনুমোদন দেয় এবং কাজিরাঙ্গাকে একটি জাতীয় উদ্যান বলে ঘোষণা করে। ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার কাজিরঙ্গাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আর সম্বৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য ইউনেস্কো কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বলে স্বীকৃতি দেয়।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কাজিরাঙ্গা বহু প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উপচে ওঠা পানি থেকে সৃষ্ট বন্যা জীববৈচিত্র্যে বহু ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে।[6] উদ্যানের প্রান্তসীমায় জমি জবরদখলের ফলে ক্রমে উদ্যানের এলাকা সংকীর্ন হয়ে আসছে। আসামে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম বা উলফা বহু বছর ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চালিয়ে আসছে এবং আসামের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ এই উলফা।[5] কিন্তু এই আন্দোলনে কাজিরাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোন খবর পাওয়া যায় নি। বরং বিদ্রোহীরা উদ্যানের বন্যপ্রাণী রক্ষা করে আসছে। এমনকি ১৯৮০ সালে উলফা কর্তৃক চোরাশিকারী নিহত হওয়ার খবর জানা গিয়েছে।[3]
অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে ২০০৫ সালে কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের শতবর্ষ উদ্যাপিত হয়। এই উপলক্ষে মেরি ও লর্ড কার্জনের বংশধরদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।[3] ২০০৭ সালের শুরুর দিকে কাজিরাঙ্গা থেকে হাতি ও দুইটি গণ্ডার মানস জাতীয় উদ্যানে স্থানান্তর করা হয়। এটা ভারতের জাতীয় উদ্যানসমূহের মধ্যে হাতি আদানপ্রদানের প্রথম ঘটনা।[7]
কাজিরাঙ্গা নামের উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে এ বিষয়ে অসংখ্য লোকগাঁথা ও জনশ্রুতি চালু আছে। একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী কাজি নামের কার্বী জেলার এক তরুণ পার্শ্ববর্তী গ্রামের রাঙ্গা নামের এক তরুণীকে ভালবাসত। কিন্তু তাদের পরিবার তাদের এ ভালবাসা মেনে নেয় নি। তারা দু'জনে মিলে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। তাদের আর কখনও দেখা যায় নি। তাদের দু'জনের নামানুসারে বনের নাম রাখা হয় কাজিরাঙ্গা। আরেকটি কিংবদন্তি মতে ষোড়শ শতকের বৈষ্ণব সাধু শ্রীমন্ত শংকরদেব একবার কাজি ও রাঙাই নামের এক সন্তানহীন দম্পতিকে এই বলে আশীর্বাদ করেছিলেন যে, তারা যদি একটি পুকুর খুঁড়তে পারে তবে তাদের সন্তান হবে। তাদের নাম থেকেই এলাকাটির নাম হয়েছে কাজিরাঙ্গা।[8]
প্রাচীন নথিপত্রে কাজিরাঙ্গা নামের বহু উল্লেখ রয়েছে। সপ্তদশ শতকে অহম রাজ প্রতাপ সিংহ এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় এখানকার মাছের স্বাদে মুগ্ধ হয়ে জানতে চান এমন সুস্বাদু মাছ কোথা থেকে এসেছে। তিনি উত্তর পান-কাজিরাঙ্গা থেকে।[9] কাজিরাঙ্গা বলতে রাঙা ছাগের (হরিণ) দেশও বোঝায়। কার্বি ভাষায় কাজি মানে ছাগল ও রাঙা মানে লাল।[9]
ঐতিহাসিকগণের মতে, কাজিরাঙ্গা নামটি এসেছে কার্বি শব্দ কাজির-এ-রং থেকে। কাজির-এ-রং মানে কাজির গ্রাম বা কাজির গাঁও। কাজির কার্বিদের মধ্যে মেয়েদের খুব প্রচলিত নাম। ধারণা করা হয়, কাজির নামক নারী এই পুরো এলাকা শাসন করতেন। কাজিরাঙ্গায় কার্বি শাসনের নজির হিসেবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য প্রস্তরখণ্ড এই ধারণার সপক্ষে সাক্ষ্য দেয়।
কাজিরাঙ্গা ২৬°৩০' উত্তর থেকে ২৬°৪৫' উত্তর অক্ষরেখা এবং ৯৩°০৮' পূর্ব থেকে ৯৩°৩৬' পূর্ব দ্রাঘিমারেখার মধ্যে অবস্থিত। আসামের কালিয়াবর মহকুমার নগাঁও জেলা ও বোকাখাট মহকুমার গোলাঘাট জেলা, এই দুই জেলা জুড়ে কাজিরঙ্গা জাতীয় উদ্যান বিস্তৃত।
উদ্যানটির দৈর্ঘ্য পূর্ব পশ্চিমে প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) এবং উত্তর দক্ষিণে ১৩ কিলোমিটার (৮ মাইল)।[10] কাজিরাঙ্গার মোট আয়তন বর্তমানে ৩৭৮ বর্গকিলোমিটার (১৪৬ বর্গ মাইল)। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর মোট ৫১.১৪ বর্গ কিলোমিটার (১৪৬ বর্গ মাইল) ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।[10] সব মিলিয়ে মোট ৪২৯ বর্গ কিলোমিটার (১৬৬ বর্গ মাইল) এলাকা কাজিরঙ্গা জাতীয় উদ্যানের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পুরো এলাকাটি বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আবাস ও প্রজননস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া কাজিরাঙ্গা কার্বি আংলং পাহাড়ে বন্যপ্রাণীদের চলাচলের একটি নিরাপদ পথ হিসেবে হিসেবে বহু আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[11] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কাজিরাঙ্গার উচ্চতা ৪০ মিটার থেকে ৮০ মিটার পর্যন্ত। উদ্যানের পুরো উত্তর ও পূর্ব সীমা জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদ বিস্তৃত রয়েছে। আর দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মরা ডিফলু নদী। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদীর মধ্যে ডিফলু ও মরা ধানসিঁড়ি নদী অন্যতম।[11]
কাজিরাঙ্গার ভূমি উর্বর পলিমাটি দ্বারা আবৃত। শত শত বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে এবং এর প্রবাহিত পলি জমে কাজিরাঙ্গার ভূমি সৃষ্টি হয়েছে। অসংখ্য চর রয়েছে এখানে। আরও রয়েছে বন্যাবাহিত বিস্তীর্ণ জলাশয়। এসব জলাশয় বিল নামে পরিচিত। কাজিরাঙ্গার মোট এলাকার পাঁচ শতাংশ দখল করে আছে এসব বিল। এছাড়াও কিছু উচ্চভূমি রয়েছে যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে চাপরি বলা হয়। বন্যার সময় পশুপাখি এসব চাপরিতে এসে আশ্রয় নেয়। বন্যার সময়ে প্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় বহু কৃত্রিম চাপরি সৃষ্টি করা হয়েছে।[12][13]
কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান ইন্দোমালয় ইকোজোনের অন্তর্ভুক্ত। এর প্রধান প্রধান পরিবেশসমূহের মধ্যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও অর্ধ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশস্তপত্রী বৃক্ষের বনভূমির অন্তর্গত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার অর্ধ-চিরসবুজ অরণ্য এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও অর্ধগ্রীষ্মমণ্ডলীয় তৃণভূমি, সাভানা ও গুল্মভূমির অন্তর্গত তেরাই-ডুয়ার সাভানা ও তৃণভূমি অন্যতম।
কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানে তিনটি ঋতু অনুভূত হয়: গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল। শীতকাল শুষ্ক এবং তীব্র নয়। এ সময় সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ২৫° সে. থেকে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ৫° সে. পর্যন্ত হয়। অধিকাংশ বিল ও খালগুলো শুকিয়ে যায়।[11] মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭° সে. পর্যন্ত হয়। এ সময় প্রচণ্ড গরম থাকে আর পশুপাখিরা জলাশয়ের আশেপাশে থাকে। শুষ্ক মৌসুমগুলোতে বন্যপ্রাণীদের খাদ্যের প্রচণ্ড অভাব দেখা দেয়। জুন থেকে বর্ষাকাল শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই দীর্ঘ বর্ষাকাল কাজিরাঙ্গার বার্ষিক ২,২২০ মিলিমিটার (৮৭ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাতের জন্য অনেকাংশে দায়ী। জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে এবং উদ্যানের পশ্চিম ভাগের দুই তৃতীয়াংশ তলিয়ে যায়। এসময় বন্যপ্রাণীরা উদ্যানের দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের উঁচু ভূমিতে আশ্রয় নেয়। মিকির পর্বতমালা এদের অন্যতম আশ্রয়স্থল। ২০১২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় উদ্যানের প্রায় ৫৪০টি বন্যপ্রাণী ভেসে যায়; এদের মধ্যে ১৩টি গণ্ডার আর বেশিরভাগই প্যারা হরিণ।[14] [15]
কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান প্রায় ৩৫ ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজনন ও আবাসস্থল।[16] এদের মধ্য ১৫টি প্রজাতিই আইইউসিএন লাল তালিকায় বিপদগ্রস্ত বলে বিবেচিত। বিশ্বে এশীয় একশৃঙ্গ গণ্ডার (১৮৫৫টি)[17][18], বুনো মহিষ (১,৬৬৬টি)[19] ও বারশিঙ্গা (৪৬৮টি)[20] সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এ উদ্যানে। অন্যান্য বড় প্রাণীর মধ্যে রয়েছে হাতি (১,৯৪০টি),[21], ভারতীয় বাইসন বা গৌর (৩০টি) এবং সম্বর হরিণ (৫৮টি)। এছাড়া অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে মায়া হরিণ, বন্য শূকর ও প্যারা হরিণ।[15][22] সমগ্র পৃথিবীর ৫৭% বুনো মহিষের আবাসস্থল এই কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান।[23]
আফ্রিকা ছাড়া পৃথিবীর যেসব অল্পসংখ্যক জায়গায় বিড়ালজাতীয় প্রাণীদের একসাথে দেখতে পাওয়া যায়, কাজিরাঙ্গা তাদের অন্যতম। কাজিরাঙ্গা একই সাথে চিতাবাঘ ও বেঙ্গল টাইগারের নিরাপদ আবাস।[16] ২০০৬ সালে কাজিরঙ্গাকে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সারা পৃথিবীতে কাজিরাঙ্গায় বাঘের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।