কোপ্পাল জেলা
কর্ণাটকের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কর্ণাটকের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কোপ্পাল জেলা হলো দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত কর্ণাটক রাজ্যের উত্তর দিকে অবস্থিত একটি জেলা৷ এটি কর্ণাটকের চারটি প্রশাসনিক বিভাগের গুলবার্গা বিভাগের অন্তর্গত৷ জেলাটির সদর কোপ্পাল শহরে অবস্থিত৷ পূর্বে কোপ্পাল 'কোপন নগর' নামে পরিচিত ছিলো৷ কর্ণাটকের অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হাম্পির কিছু অংশ এই জেলাতে রয়েছে, যা সদর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ এছাড়া আনেগোন্দি এই জেলার অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন স্থল৷
কোপ্পাল জেলা ಕೊಪ್ಪಳ | |
---|---|
কর্ণাটকের জেলা | |
কর্ণাটক রাজ্যের কোপ্পাল জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ১৫°৩৪′৩১″ উত্তর ৭৬°০′৪৮″ পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
রাজ্য | কর্ণাটক |
প্রতিষ্ঠিত | ২৪শে আগস্ট ১৯৯৭ |
সদর | কোপ্পাল |
তালুক | কোপ্পাল, গঙ্গাবতী, ইয়েলবার্গা, কুষ্টাগি, কনকগিরি, কুকনুর, কারটাগি |
সরকার | |
• ডেপুটি কমিশনার | পি. সুনীল কুমার, আইএএস |
আয়তন | |
• মোট | ৭,১৯০ বর্গকিমি (২,৭৮০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ১৩,৮৯,৯২০ |
• জনঘনত্ব | ১৯০/বর্গকিমি (৫০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | কন্নড়, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৫৮৩২ |
টেলিফোন কোড | ০৮৫৩৯ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-KA |
যানবাহন নিবন্ধন |
|
ওয়েবসাইট | koppal |
বর্তমান জেলাসদর কোপ্পাল পুর্বে কোপননগর নামে পরিচিত ছিলো, যা ছিলো জৈনদের একটি বৃহৎ পবিত্র তীর্থক্ষেত্র৷ পুরাণ অনুসারে এই জেলার পাল্কিগুণ্ডু ছিলো বিখ্যাত "ইন্দ্রকেল্লা পর্বত"৷ এই পর্বতের কাছাকাছি "মালে মল্লেশ্বর" নাম্নী একটি শিব মন্দির রয়েছে৷ ইন্দ্রকেল্লা পর্বতে পাল্কিগুণ্ডু ও গোবীমঠে অশোকের দুটি শিলালেখ রয়েছে৷ পশ্চিমা কল্যাণ চালুক্য সাম্রাজ্যের অধীনে শৈলহার সামন্ত রাজাদের একটি জ্ঞাতিবংশের রাজধানী ছিলো এই কোপ্পাল শহর৷ শিবাজীর শাসনকালে দক্ষিণ মারাঠা দেশের আটটি প্রান্ত তথা বিভাগের একটি প্রান্তের একটি ছিলো কোপ্পাল ও প্রশাসনিক দপ্তর ছিলো এই কোপ্পাল শহর৷ [2] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে ঐ ঘটনার রেশ ধরে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে কোপ্পালে মুন্দার্গী ভীম রাও এবং হেম্মিগে কাঞ্চনগৌড়া ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে লড়তে লড়তে মৃত্যুবরণ করেন৷ কোপ্পাল থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কিন্নাল গ্রামটি ঐতিহ্যবাহী রঙিন কারুশিল্পের জন্য বিখ্যাত৷ [3][4]
কোপ্পাল জেলাটি ৭১৯০ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফল জুড়ে বিস্তৃত৷ ২০০১ খ্রিস্টাব্দে এই জেলার ১৬.৫৮ শতাংশ লোক শহরবাসী ছিলেন৷ [5] ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে রায়চুর জেলা থেকে কোপ্পাল জেলাটি গঠন করা হয়৷ জেলাটির উত্তর দিকে রয়েছে বাগলকোট জেলা, উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে রায়চুর জেলা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে বেল্লারী জেলা এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে গদাগ জেলা৷
২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২০১১ ভারতের জনগণনা|ভারতের জনগণনা অনুসারে কোপ্পাল জেলার মোট জনসংখ্যা ১৩,৮৯,৯২০ জন,[1] যা আফ্রিকার ইসোয়াতিনি রাষ্ট্রের[6] বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ রাজ্যের জনসংখ্যার সমতুল্য৷ [7] ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ৬৪০ টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যার বিচারে এই জেলাটি ৩৫০তম স্থান দখল করেছে৷[1] জেলাটির জনঘনত্ব ২৫০ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৬৫০ জন/বর্গমাইল)৷[1] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জেলাটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ১৬.৩২ শতাংশ৷ [1] এখানে প্রতি হাজার পুরুষে ৯৮৩ জন নারী বাস করেন৷ [1] জেলাটি সর্বমোট সাক্ষরতার হার ৬৮.০৯ শতাংশ, যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৭৮.৫৪ শতাংশ ও নারী সাক্ষরতার হার ৫৭.৫৫ শতাংশ৷ [1]
বছর | জন. | ব.প্র. ±% |
---|---|---|
১৯০১ | ২,৮৪,১৮৪ | — |
১৯১১ | ৩,০৫,১৪৫ | +০.৭১% |
১৯২১ | ২,৯০,০৮৩ | −০.৫% |
১৯৩১ | ৩,১৭,২৬২ | +০.৯% |
১৯৪১ | ৩,৫৫,৮৫১ | +১.১৫% |
১৯৫১ | ৪,২১,০৪৩ | +১.৭% |
১৯৬১ | ৪,৬৫,৫৪৫ | +১.০১% |
১৯৭১ | ৬,১১,৯২৮ | +২.৭৭% |
১৯৮১ | ৭,৪৮,২২২ | +২.০৩% |
১৯৯১ | ৯,৫৮,০৭৮ | +২.৫% |
২০০১ | ১১,৯৬,০৮৯ | +২.২৪% |
২০১১ | ১৩,৮৯,৯২০ | +১.৫১% |
উৎস:[8] |
পশ্চিমা কল্যাণ চালুক্য সময়কালীন সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য ইয়েলবার্গা তালুকের ইটগি অবস্থিত এই মহাদেবের মন্দিরটি৷
পশ্চিমা চালুক্য সাম্রাজ্যের সময়ে তাদের তৎপরতায় নির্মিত শিব ঠাকুরের জন্য উৎসর্গীকৃত একাধিক মহাদেব মন্দিরের মধ্যে ইটাগির এই মন্দিরটি বৃহত্তর এবং সম্ভবত সর্বাধিক জনপ্রিয়৷ শিলালেখ অনুসারে এটি তৎকালীন সমস্ত মন্দিরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলো৷[9] এখানে মূলমন্দির ও শিবলিঙ্গ সহ গর্ভগৃহের চারিপাশে আরো ১৩টি ছোটো ছোটো মণ্ডপিকা রয়েছে এবং প্রতিটিতে আলাদা আলাদা একটি করে শিবলিঙ্গও রয়েছে৷ মূল মন্দিরে আরো দুটি মূর্তি রয়েছে, এগুলি হলো যথাক্রমে মহাদেবের পিতা মূর্তিনারায়ণ এবং মাতা চন্দ্রালেশ্বরী দেবী৷ এই মূর্তি দুটি মূলত তৎকালীন রাজা ও রাণী যারা এই মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন৷[10] আশেপাশের হাবেরী, সাবনূর, ব্যাড়গি, মোটেবেন্নুর, হাঙ্গল প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে সাজিমাটি পাওয়া যায়৷ বাদামীর চালুক্যদের ব্যবহৃত অতিপ্রাচীন বড় আকারের সাজিমাটির অট্টালিকা তৈরীর রীতি এই সময়ে বর্জিত হয়ে ছোটো ছোটো সাজিমাটির গাঁথন দিয়ে বড় কোনো স্থাপত্য নির্মাণ শুরু হয়৷[11] নতুন এই পদ্ধতিতে নির্মিত প্রথম মন্দিরটি হলো ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের ধারওয়াড় জেলায় অবস্থিত আন্নিগেরির অমৃতেশ্বর মন্দির৷ এই মন্দিরটিকে আদিরূপ ধরেই তার আদলে ইটাগির মহাদেব মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। [12] খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চল এবং আশেপাশের অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে আরো নতুন পদ্ধতি পুরাতন পদ্ধতির মধ্যে সংযোজিত হয়। ইটাগির মহাদেব মন্দির এবং হাবেরীর সিদ্ধেশ্বর মন্দির এই নতুন সংযোজনের আদর্শ নির্মাণ। মোটামুটি একই ধাঁচের মন্দির হলেও এগুলির শালা (ছাদ) এবং মিয়ার গুলির আকার আকৃতি ও ভাস্কর্য সম্পূর্ণ আলাদা হতো। [13]
নবলিঙ্গ মন্দির এবং মহাদেব মন্দির নির্মাণের সময় পার্থক্য প্রায় অর্ধশতাব্দী। একাদশ শতাব্দীর ইন্দ্রিয়পরায়ণ শিল্পশৈলী আরো পরিস্ফুট হয়ে মন্থর শিল্পশৈলীতে পরিণত হয়েছে। [14]
কর্ণাটকের অন্যতম বিখ্যাত মন্দির গুলোর মধ্যে রাষ্ট্রকূটদের নির্মিত কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং পট্টডাকালে অবস্থিত জৈন নারায়ন মন্দিরদুটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকার অন্তর্ভুক্ত। [15] অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলি হল কোন্নুরের পরমেশ্বর মন্দির, সাবড়ির ব্রহ্মদেব মন্দির, আইহোলে অবস্থিত সেত্তব্ব মন্দির, দ্বিতীয় কোণ্টিগুড়ি মন্দির, জাদরগুড়ি মন্দির এবং অম্বিকেরগুড়ি মন্দির, রনে অবস্থিত মল্লিকার্জুন মন্দির, হুলির অন্ধকেশ্বর মন্দির, সোগলের সোমেশ্বর মন্দির, লোকপুরার জৈন মন্দিরসমূহ, কুকনুরের নবলিঙ্গ মন্দির, গুলবার্গার সন্দুরের কুমারস্বামী মন্দির এবং গদাগের ত্রিকুণ্ঠেশ্বর মন্দির৷ প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এই মন্দির গুলির মূল কাঠামো পরবর্তীকালে হৈসল রাজারা বহুল পরিমাণে ব্যবহার করেছিলেন, যা বেলুরু এবং হালেবিড়ুর শিল্প নৈপুণ্য প্রমাণিত হয়। [16] ঐতিহাসিক শাস্ত্রীয় দ্রাবিড়ীয় শিল্পরীতির বিপরীতে এই কর্ণাটক দ্রাবিড়ীয় শিল্পরীতির প্রচলন দক্ষিণ ভারতের স্থাপত্য গুলিকে আরো বৈচিত্রময় করেছে।[17]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.