Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ক্রিকেট খেলায়, ক্রিজ হচ্ছে খেলার মাঠের নির্দিষ্ট দাগাংকিত অঞ্চল, যা অনুসরণ করে ব্যাটিং ও ফিল্ডিংরত দলের জন্য বিভিন্ন উপায়ে খেলার বৈধতা নির্ণয় করা হয়ে থাকে। ব্যাটসম্যান এবং বোলারগণ কোন অঞ্চলের মধ্যে থাকতে পারবেন তা ক্রিজ দ্বারা নির্ধারিত হয়। ক্রিজ শব্দটি, বিশেষত পপিং ক্রিজ শব্দটি দাগাঙ্কিত যে কোন রেখাকেই নির্দেশ করতে পারে, কিংবা ঐ রেখাগুলো দ্বারা আবদ্ধ অঞ্চলকেও বোঝাতে পারে। ক্রিকেটের আইন এর সাত নম্বর আইন দ্বারা ক্রিজের রেখার আকার এবং অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। এই আইনে মূল রেখাকে ঘাসের ওপর দাগাঙ্কিত রেখার পুরুত্বের পশ্চাৎ ধার বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়, অর্থাৎ, ক্রিজের পুরু দাগটির যে ধারটি উইকেটের নিকটবর্তী প্রান্তে থাকে, সেটিই ক্রিজের রেখা ধরা হয়।
ক্রিকেট পিচের উভয় প্রান্তে, স্ট্যাম্প সেটের দুই পাশে মোট চারটি ক্রিজের (একটি পপিং ক্রিজ, একটি বোলিং ক্রিজ এবং দুইটি রিটার্ন ক্রিজ) দাগ কাটা থাকে। ব্যাটসম্যানগণ সাধারণত পিচের দুই প্রান্তে থাকা ক্রিজের দাগাঙ্কিত অঞ্চলের মধ্যে থেকেই ব্যাটিং করেন এবং দৌড়ে রান নিয়ে থাকেন। বোলিং ক্রিজের দৈর্ঘ্য ২২ গজ (২০.১২ মি); বোলিং ক্রিজের রেখাদ্বয় দ্বারা পিচের দুই প্রান্ত নির্দেশিত হয়। ফিল্ডিংরত দলের ক্ষেত্রে, বোলিং করার সময় বোলারের পা বোলিং ক্রিজ অতিক্রম করে পিচের মধ্যে পড়লে, কিংবা অনুমোদিত সময়ের আগেই উইকেট-রক্ষক উইকেটের পেছন থেকে সামনে এসে পড়লে, নো-বল ডাকা হয় (নিচে দ্রষ্টব্য)।
ক্রিজের উৎপত্তি কীভাবে তা অনিশ্চিত হলেও অষ্টাদশ শতাব্দির গোড়ার দিকেই নিশ্চিতভাবে এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। ঐ সময় সরু আঁচড়ের মত দাগ কেটে ক্রিজ তৈরি করা হত, উভয় প্রান্তে উইকেট থেকে ৪৬ ইঞ্চি (১১৬.৮৪ সেমি) সামনে পপিং ক্রিজ এর দাগ কাটা হত। কালের পরিক্রমায়, ক্রিজ আঁচড় থেকে বদলে এক ইঞ্চি গভীর ও এক ইঞ্চি পুরু খাঁজে পরিণত হয়; উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত ঐ রীতিই প্রচলিত ছিল।[1] ইংরেজ ক্রিকেটার আলফ্রেড শ'র পেশাদার জীবনের শুরুর দিকের কোন এক সময়ে, তিনি চুন দিয়ে ক্রিজের দাগ টানার প্রস্তাব করেন, পর্যায়ক্রমে ১৮৭০-এর দশকে তার প্রস্তাব গৃহীত হয়।[2]
"পপিং ক্রিজ" শব্দটি কোথা থেকে এসেছে, তা অজ্ঞাত। পিচের দুই প্রান্তে, স্ট্যাম্পের সামনে, পপিং ক্রিজ নির্দেশক একটি করে রেখা আঁকা হয়। বোলিং ক্রিজ থেকে ৪ ফুট (১.২২ মি) সামনে এবং সমান্তরালে পপিং ক্রিজের অবস্থান। যদিও এর দৈর্ঘ্য সীমাহীন হতে পারে (অর্থাৎ, পুরো মাঠের দৈর্ঘ্যের সমান লম্বা করে পপিং ক্রিজ টানা যেতে পারে), তবে পিচের দুই প্রান্তের কেন্দ্র থেকে উভয় পাশে, পিচের সাথে লম্বভাবে অন্তত ৬ ফুট (১.৮৩ মি) পর্যন্ত পপিং ক্রিজ আঁকা বাধ্যতামূলক।[3][4] পপিং ক্রিজের দাগ দ্বারা ব্যাটসম্যানদের জন্য "অনিরাপদ এলাকা" নির্দেশিত হয় (এই এলাকার মধ্যে থাকলে ব্যাটসম্যানগণ আউট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন)। বোলার কর্তৃক ব্যাটসম্যানের উদ্দেশ্যে বল ছোঁড়ার সময়, বলটি এই এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক।
ফিল্ডিংরত দলের ক্ষেত্রে, বোলারের ছোঁড়া কোন বলের বৈধতার অন্যতম নির্দেশক হচ্ছে পপিং ক্রিজ। অবৈধ বল বা নো-বল এড়ানোর জন্য, বল ছোঁড়ার সময় ফেলা পদক্ষেপে (মানে বলটি বোলারের হাত ত্যাগ করার সময় মাটিতে পড়া সামনের পায়ের প্রথম ছাপ), বোলারের সামনের পায়ের অন্তত কিছু অংশ পপিং ক্রিজের পেছনে থাকতে হবে; তবে পুরো পা মাটিতেই থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। পা দাগের ওপরেও থাকতে পারে, পায়ের কিছু অংশ দাগের পেছনে থাকলে সেটা নিয়ে কোন সমস্যা নেই।[3][5] এ কারণে "দ্য লাইন বিলংস টু দ্য আম্পায়ার" (ক্রিজের দাগ আম্পায়ারের হাতে) কথাটির প্রচলন ঘটেছে।[6] এছাড়াও, বোলার প্রান্ত থেকে ছোঁড়া বল যদি ব্যাটিং প্রান্তের পপিং ক্রিজ পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই একবারের বেশি মাটিতে পড়ে,[7] অথবা বল ছোঁড়ার সময় যদি পপিং ক্রিজের পেছনে, উইকেট-রক্ষক ব্যতিরেকে, অন-সাইডে দুইজনের বেশি ফিল্ডার থাকে, তাহলেও নো-বল ডাকা হয়।[8]
কোন ব্যাটসম্যান স্টাম্পড কিংবা রান আউট হয়েছে কি-না, তা নির্ধারিত হয় পপিং ক্রিজ দ্বারা (ব্যাটিং করার সময় যাকে ব্যাটিং ক্রিজ বলা যায়)। ক্রিকেটের আইন এর ২৯, ৩৮ এবং ৩৯ নম্বর আইনে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[4] উভয় ক্ষেত্রেই, বোলার কর্তৃক বল নিক্ষেপকালে, ব্যাটসম্যান যদি বলটি খেলার জন্য অথবা দৌড়ে রান সম্পন্ন করার জন্য পপিং ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসে, এবং পুনরায় পপিং ক্রিজের দাগের পেছনে পৌঁছাতে, ব্যাট অথবা শরীরের কোন অংশ দ্বারা দাগের পেছনে মাটি স্পর্শ করার আগেই যদি ফিল্ডিংরত দলের কোন খেলোয়াড় (স্টাম্পিং এর ক্ষেত্রে উইকেট-রক্ষক) উইকেট ভেঙে দেয়, তাহলে ঐ ব্যাটসম্যানকে আউট ঘোষণা করা হবে।[9] ২০১০ সালে ২৯ নং আইনের একটি সংশোধনীতে বলা হয় যে, যদি কোন ব্যাটসম্যান দাগের পেছনে মাটি স্পর্শ করে কিন্তু উইকেট ভেঙে দেওয়ার মুহূর্তে তার শরীর ব্যাটসমেত সম্পূর্ণ ভাসমান অবস্থায় থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানকে আউট অফ হিজ গ্রাউন্ড বলে গণ্য করা হবে না।[10]
পপিং ক্রিজ থেকে চারফুট সামনে, সমান্তরালভাবে বোলিং ক্রিজ টানা হয়। প্রতি প্রান্তে থাকা তিনটি স্ট্যাম্পের কেন্দ্র দিয়ে গমনকারী রেখাটিই হচ্ছে বোলিং ক্রিজ। এটি দৈর্ঘ্যে ৮.৬৭ ফুট (২.৬৪ মি), যার কেন্দ্রে স্ট্যাম্পগুলো বসানো থাকে।
পিচের উভয় প্রান্তে মোট চারটি রিটার্ন ক্রিজ অঙ্কন করা হয়, স্ট্যাম্পের উভয় পাশে একটি করে। পপিং ক্রিজ ও বোলিং ক্রিজের সাথে লম্বভাবে রিটার্ন, স্ট্যাম্পের উভয় পাশে ৪.৩৩ ফুট (১.৩২ মি) দূরত্বে এবং উভয় প্রান্তে থাকা মাঝের স্ট্যাম্প দুটিকে সংযোগকারী রেখার (কাল্পনিক) সাথে সমান্তরাল করে রিটার্ন ক্রিজের রেখা আঁকা হয়। প্রতিটি রিটার্ন ক্রিজ রেখা শুরু হয় পপিং ক্রিজ থেকে, কিন্তু এর অপর প্রান্তকে অসীম দৈর্ঘ্যের বলে বিবেচনা করা হয়। পপিং ক্রিজ থেকে অন্তত ৮ ফুট (২.৪৪ মি) পর্যন্ত রিটার্ন ক্রিজ টানা আবশ্যক।[3][4]
কোন বোলার নো-বল করেছেন কি-না, তা নির্ণয়ের জন্যই মূলত রিটার্ন ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। নো-বল এড়াতে হলে, বল ছোঁড়ার সময় বোলারের পেছনের পা রিটার্ন ক্রিজের দাগের ভেতর ফেলতে হবে (দাগ স্পর্শ করা যাবে না)। বোলার যেন ব্যাটসম্যানের উদ্দেশ্যে অন্যায্য কোণ থেকে (কোণাকুণি) বল ছুঁড়তে না পারেন, সেজন্যই এই নিয়ম প্রচলিত।[3]
যদিও ক্রিজের তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র আকারের কারণে, কোন ব্যাটসম্যান বা বোলার কোথায় দাঁড়াতে পারবেন কিংবা কোন জায়গা থেকে বল করতে পারবেন- তা অনেকটা সীমাবদ্ধ, তবে উপরিল্লিখিত সীমানার ভেতরে থেকে ক্রিজের ব্যাপ্তির মধ্যে তাদের চলাফেরা করার অনুমোদন রয়েছে। শট খেলার জন্য বা শট খেলার সময়, ব্যাটসম্যানগণ ক্রিজ ব্যবহার করে লেগসাইড কিংবা অফসাইডের দিকে সরে যান। বোলারগণ বল ছোঁড়ার সময়, ক্রিজ ব্যবহার করে স্ট্যাম্পের সাপেক্ষে তাদের পা ফেলার অবস্থান পরিবর্তন করেন, যেন তারা বলের নিক্ষেপণ কোণ এবং গতিপথে বৈচিত্র্য আনতে পারেন।[4][11]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.