খাদ্য অপচয়
যেসব খাদ্য অভুক্ত অবস্থায় বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয় / From Wikipedia, the free encyclopedia
খাদ্য অপচয়, খাদ্য বর্জ্য বা খাদ্য নষ্টকরণ বলতে অভুক্ত খাদ্যকে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার ঘটনাটিকে বোঝানো হয়। খাদ্য ব্যবস্থার সর্বত্র যেমন খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য বিতরণ, খাদ্য খুচরা বিক্রয় এবং খাদ্য ভোগ, ইত্যাদি বিভিন্ন স্তরে বহু বিভিন্নভাবে খাদ্যের অপচয় ঘটে। বিশ্ব পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্যের[2] এক-তৃতীয়াংশ[3] থেকে অর্ধেক[4] পরিমাণ অপচয় বা নষ্ট হয়। নিম্ন-আয়ের দেশগুলিতে বেশিরভাগ অপচয় উৎপাদন পর্যায়ে ঘটে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলিতে ভোক্তা পর্যায়ে, প্রতি বছর জনপ্রতি প্রায় ১০০ কিলোগ্রাম হারে খাদ্যের অপচয় ঘটে।[5]
খাদ্যের অপচয় জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষির নেতিবাচক প্রভাবের অন্যতম উপাদান। এছাড়া এটিকে পরিবেশগত আরও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয়। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০১৪ সালে হিসাব করে যে খাদ্যের অপচয়ের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২.৬ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতির সৃষ্টি হয় এবং এটি বিশ্বে শতকার ৮ ভাগ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী।[6] অধিকন্তু, যেসব অপচয়কৃত বা নষ্ট খাদ্য পুনরুদ্ধার করে অন্য কাজে লাগানো হয় না (যেমন কম্পোস্ট সার), সেগুলি পরিবেশের উপর বহুসংখ্যক নেতিবাচক পরিণামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ জৈব বর্জ্যের জীবাণু কর্তৃক অবাত হজমের ফলে যেসব আবর্জনাভূমি গ্যাস উৎপন্ন হয়, সেগুলি মিথেন নামক গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রধান একটি উৎস। খাদ্য বর্জ্যে যে ফসফরাস থাকে, সেগুলি পুনরুদ্ধার না করার ফলে ফসফেট খনন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া খাদ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্তরে খাদ্য অপচয় হ্রাস করলে এগুলিতে পানি, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদের ব্যবহার হ্রাস পাবে, ফলে পরিবেশের উপরে কৃষির নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস পাবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খাদ্যের অপচয় হ্রাসকে একটি টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলির মধ্যে "বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু খাদ্য অপচয় অর্ধেক" করার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[7] অধিকন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন উপশমকরণ কৌশলগুলির মধ্যে খাদ্য অপচয় হ্রাস অন্যতম একটি কৌশল হিসেবে স্বীকৃত, যার ফলে খাদ্যব্যবস্থার কার্বন তীব্রতা (Carbon intensity) অপেক্ষাকৃত অধিকতর দক্ষভাবে হ্রাস করা সম্ভব।[6]