Loading AI tools
আহার্য সামগ্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আমরা যে সব বস্তু আহার করি তাকে আহার্য সামগ্রী বলে। কিন্তু সকল আহার্য সামগ্রীই খাদ্য নয়। যেমন, থোড় সেলুলোজ দিয়ে গঠিত হওয়ায় আমাদের পরিপাক নালীতে পাচিত হয় না। ফলে এটি পুষ্টি সহায়ক নয়। সুতরাং সেই সব আহার্য সামগ্রীকেই[1] খাদ্য বলা যাবে, যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
জীবদেহে শক্তির প্রধান উৎস হল খাদ্য। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকালে সৌরশক্তি উদ্ভিজ খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় স্থৈতিক শক্তি তাপ শক্তি গতিশক্তিতে মুক্ত হয়, জীবদেহের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া, যেমন : শ্বসন, রেচন,পুষ্টি গ্রহণ ইত্যাদি এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ, যেমন-বৃদ্ধি, চলন-গমন, জনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং প্রাণ ধারণের জন্য প্রত্যেক জীবকেই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তাই, যে সব আহার্য সামগ্রী গ্রহণ করলে জীবদেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি, শক্তি উৎপাদন,ক্ষয়পূরণ হয় ও রোগ প্রতিরোধ করে তাকেই খাদ্য বলে।
খাদ্য ব্যবস্থার স্থায়িত্ব, জৈবিক বৈচিত্র্য, অর্থনীতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পানি সরবরাহ এবং খাদ্য নিরাপত্তা সহ অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলির বিস্তৃত পরিসরে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। খাদ্য সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয় যেমন খাদ্য সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা , ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট , ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম , খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য তথ্য কাউন্সিল ।
খাদ্যের কাজ
(১) দেহবৃদ্ধির এবং দেহের উপাদান সুরক্ষার জন্য খাদ্য প্রয়োজন।
(২) খাদ্য থেকে দেহের মধ্যে প্রয়োজনীয় শক্তি এবং তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। ফলে আমরা সমস্তরকম কাজ করতে পারি। তাপশক্তি দেহের তাপমাত্রা অপরিবর্তন- শীল রাখতে সাহায্য করে।
(৩) অপচিতি চলার ফলে দেহকোষের উপাদান প্রতিনিয়ত ক্ষয় পায়। সেই ক্ষতির পূরণের জন্য খাদ্য থেকে উপাদান সংগৃহীত হয়।
(৪) ভিটামিন,খনিজ লবণ এবং জল থেকে দেহে শক্তি উৎপন্ন হয় না ঠিকই কিন্তু দেহকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে এবং রোগ জীবাণুর হাত থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্য এগুলি দরকার।[2]
খাদ্য হল যে কোন পদার্থ যা একটি জীবকে পুষ্টির সহায়তা এবং শক্তি প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়।[3][4] এটি কাঁচা, প্রক্রিয়াজাত বা প্রণয়ন করা যেতে পারে এবং প্রাণীদের মুখের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় যার ফলে শারীরিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য বা আনন্দ পাওয়া যায়।[5] খাদ্য প্রধানত জল, লিপিড , প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট দ্বারা গঠিত। খনিজ পদার্থ (যেমন লবণ) এবং জৈব পদার্থ (যেমন ভিটামিন ) খাবারে পাওয়া যায়।[6] উদ্ভিদ, শৈবাল এবং কিছু অণুজীব সালোকসংশ্লেষণ ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব কিছু পুষ্টি উপাদান তৈরি করে।[7] জল অনেক খাবারে পাওয়া যায় এবং এটি নিজেই একটি খাদ্য।[8] জল এবং ফাইবারে কম শক্তি ঘনত্ব বা ক্যালোরি আছে। অন্যদিকে চর্বি হল সবচেয়ে শক্তিপূর্ণ ঘন উপাদান।[9] কিছু অজৈব (অ-খাদ্য) উপাদানও উদ্ভিদ ও প্রাণীর কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য।[10]
মানুষের খাদ্য বিভিন্ন উপায়ে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে, হয় সম্পর্কিত বিষয়বস্তু দ্বারা বা এটি কীভাবে প্রক্রিয়া করা হয় তার দ্বারা।[11] খাদ্য দলের সংখ্যা এবং গঠন পরিবর্তিত হতে পারে। বেশিরভাগ ব্যবস্থায় চারটি মৌলিক গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্ণিত করা হয় যা তাদের উত্স এবং আপেক্ষিক পুষ্টির কার্যকারিতা বর্ণনা করে: শাকসবজি এবং ফল, সিরিয়াল এবং রুটি, দুগ্ধ এবং মাংস।[12] গবেষণায় খাদ্য হজম মানের উপর ভিত্তি করে গোটা শস্য/শস্য, পরিশোধিত শস্য/শস্য, শাকসবজি, ফল, বাদাম, লেবু, ডিম, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছ, লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয়গুলিকে খাদ্য হিসেবে।[13][14][15] খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উনিশটি খাদ্য শ্রেণীবিভাগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এগুলি হল সিরিয়াল, শিকড়, ডাল এবং বাদাম, দুধ, ডিম, মাছ এবং শেলফিশ, মাংস, পোকামাকড়, শাকসবজি, ফল, চর্বি এবং তেল, মিষ্টি এবং চিনি, মশলা এবং মশলা, পানীয়, পুষ্টিকর ব্যবহারের জন্য খাবার, খাদ্য সংযোজন, যৌগিক খাবার এবং সুস্বাদু স্ন্যাকস।[16]
জীবদেহে খাদ্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্য কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-
খাদ্যে ছ'টি উপাদান থাকে, যথা- শর্করা, আমিষ বা প্রোটিন, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ এবং জল।
কার্বোহাইড্রেট যে সকল উপাদান দ্বারা গঠিত তা হল কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। শর্করায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে। শর্করার আণবিক সংকেত C
n(H
2O)
n; যেমন গ্লুকোজ C
6H
12O
6, সুক্রোজ C
12H
22O
11 ইত্যাদি। বেশিরভাগ খাদ্যে কম বেশি খাদ্য উপাদান থাকে। শর্করা বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন খাদ্যে থাকে যেমন শ্বেতসার হিসেবে শর্করা যে সকল খাদ্যে পাওয়া যায় তা হল ধান বা চাল, গম, ভূট্টা, বাজরা, আলু, ওলকপি, কচু, বীট, গাজর ইত্যাদি। খেজুর, আঙ্গুর, আপেল ইত্যাদিতে শর্করা দ্রাক্ষাশর্করা বা গ্লুকোজ হিসেবে পাওয়া যায়। শাক-সবজি, বেল, তরমুজ, থোড় ইত্যাদিতে সেলুলোজ হিসেবে। আম, কলা, কমলালেবু প্রভৃতি পাকা ফলে ফল শর্করা বা ফুক্টোজ হিসেবে। চিনি, গুড়, মিছরী ইত্যাদিতে ইক্ষু শর্করা বা সুক্রোজ হিসেবে শর্করা উপস্থিত থাকে। দুধে দুগ্ধ শর্করা বা ল্যাক্টোজ হিসেবে এবং পাঁঠার যকৃৎ ও পেশীতে গ্লাইকোজেন বা প্রাণীজ শ্বেতসার হিসেবে শর্করা পাওয়া যায়।
প্রত্যেক অণুতে সরল শর্করার এক বা একাধিক এককের উপস্থিতি অনুসারে কার্বোহাইড্রেটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ছে। এগুলো হল যথা:
শর্করা দেহে পুষ্টি জুগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন করে সেইসাথে খাদ্য হজমে সহায়তা করে কোষ্ঠ দূর করতে (সেলুলোজ) ভূমিকা রাখে। গ্লাইকোজেন যকৃত ও পেশীতে সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনের সময় গ্লুকোজে পরিণত হয়ে দেহে অতিরিক্ত তাপ শক্তি উৎপাদন করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। ১ গ্রাম শর্করা ৪ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন করে। রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ হল প্রতি ১০০ মিলি. রক্তে ৮০-১২০ মিলিগ্রাম। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ না করেও শুধুমাত্র প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য খেয়ে মানুষ সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন যাবৎ বেঁচে থাকতে পারে। এই জন্য শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যকে প্রোটিন বাঁচোয়া খাদ্য বলে
প্রোটিন-অণু অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এই পর্যন্ত প্রায় ২২ টি অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া গেছে। এতে রয়েছে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন। অনেক সময় সালফার এবং ফসফরাসও প্রোটিনে থাকে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা ইত্যাদিতে প্রাণিজ প্রোটিন এবং ডাল, সয়াবিন, বীন, গম ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রাণীজ প্রোটিনে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রায় সবগুলিই থাকে বলে প্রাণিজ প্রোটিনকে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন বলা হয়।
প্রোটিনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যে সব প্রোটিন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল প্রোটিন বলে। উদাহরণ হল অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, প্রোটমিন, হিস্টোন, গ্লায়াডিন, গ্লুটেলিন ইত্যাদি। অন্যদিকে সরল প্রোটিন যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন তাদের সংযুক্ত প্রোটিন বলে। যেমন হিমোগ্লোবিন, হিমোসায়ানিন, ফসফোপ্রোটিন, লাইপোপ্রোটিন ইত্যাদি। আরেকটি প্রোটিন রয়েছে যা পরিপাক নালীতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকের সময় উদ্ভূত হয়, তাদের লব্ধ প্রোটিন বলে। যেমন পেপটন, পেপটাইড ইত্যাদি।
প্রোটিন দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে। তাপ শক্তি উৎপাদন করে। দেহস্থ উৎসেচক, হরমোন ইত্যাদি সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখে। অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করা হল প্রোটিনের অন্যতম কাজ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ১ গ্রাম প্রোটিন জারিত হলে ৪.১ কিলোগ্ৰাম ক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ১০০-১৫০ গ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন।
কার্বন, হাইড্রোজেন, এবং অক্সিজেন নিয়ে স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট গঠিত হয়। স্নেহ পদার্থে অক্সিজেন অনুপাত শর্করার তুলনায় কম এবং শর্করার মত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে না। ফ্যাট প্রকৃতপক্ষে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত এস্টার বিশেষ। প্রকৃতিতে প্রচুর খাদ্য হতে কম বেশি স্নেহ পদার্থ পাওয়া যায়। যেমন বাদাম, নারিকেল, সরষে, রেড়ী বীজ, তুলা বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট থাকে এবং মাখন, ঘি, চর্বি ইত্যাদিতে প্রাণীজ ফ্যাট থাকে। সাধারণ উত্তাপে যে সমস্ত ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে, তাদের তেল হিসেবে জানি আমরা।
যে সব ফ্যাট অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল ফ্যাট বলে। যথা: ওয়াক্স বা মোম, ল্যানোলিন ইত্যাদি সরল ফ্যাটের উদাহরণ। সরল ফ্যাট যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন তাদের যৌগিক ফ্যাট বলে। যথা: ফসফোলিপিড, গ্লাইকোলিপিড, অ্যামাইনো-লিপিড ইত্যাদি।
প্রাণীদেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ ও তাপ শক্তি উৎপন্ন করা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের প্রধান কাজ। ফ্যাট মেদরুপে ভবিষ্যতের খাদ্যের উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে। ফ্যাট ভিটামিনকে দ্রবীভূত রাখে এবং এদের শোষণে সাহায্য করে। ফ্যাট যকৃৎ থেকে পিওরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণে সাহায্য করে। স্নেহপদার্থ মলাশয় ও পায়ু পিচ্ছিল করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে। কোলেস্টেরল নামক ফ্যাট থেকে ভিটামিন-ডি, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরণ নামক হরমোন উৎপন্ন হয়। ১ গ্রাম ফ্যাট জারিত হলে ৯.৩ কিলোগ্ৰাম ক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রত্যহ প্রায় ৫০ গ্রাম স্নেহপদার্থ প্রয়োজন।
যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে। দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিনগুলিকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যে সব ভিটামিন তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়, তাদের স্নেহপদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন বলে। যেমন: ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে। অন্যদিকে যে সব ভিটামিন জলে দ্রবীভূত হয়, তাদের জলে দ্রবণীয় ভিটামিন বলে। যেমন ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন পি।
ভিটামিন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, প্রাণীদের যকৃৎ, মাছের যকৃৎ হতে নিঃসৃত তেল, মাখন, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ছোলা, মুগ, বীট, গাজর, মটরশুঁটি, পালংশাক, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেবু, আম, আমলকি, আপেল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ভিটামিনের এই সব উৎসের মধ্যে দুধ, ডিম, পালংশাক, টমেটো, মটরশুঁটি, কলা, আপেল ইত্যাদিতে বেশীর ভাগ ভিটামিন পাওয়া যায়। ভিটামিন এ এবং ডি এর উৎস মোটামুটি এক, যেমন : কড্, হ্যালিবাট যকৃত নিঃসৃত তেল (লিভার অয়েল), মাখন, দুধ, ডিম,গাজর, বাঁধাকপি, ইত্যাদি।
খনিজ লবণ হল অজৈব খাদ্য উপাদন। এরা শক্তি সরবরাহ করে না। খনিজ লবণ জীব দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির অভাব পূরণ করে। জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খনিজ লবণের প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও তৈরি করতে খনিজ লবণ অত্যন্ত প্রয়োজন।
পানি বা জল খাদ্যের একটি উপাদান। মানবদেহের জন্য পানি অপরিহার্য। দেহের গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাজ জল ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের দৈহিক ওজনের ৬০-৭০% পানি। আমাদের রক্ত মাংস, স্নায়ু, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানি প্রয়োজন। জীবের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও গ্যাসীয় উপাদান জল-মাধ্যমেই কোষ থেকে কোষে যায়। কোষের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ জল-মাধ্যমেই বাহিত হয়ে নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গে যেতে পারে। উন্নত উদ্ভিদেরা মাটি থেকে মূলরোমের সাহায্যে জল শোষণ করে। প্রাণীরা খাদ্যদ্রব্য থেকে জল সংগ্রহ করে এবং আলাদাভাবে শুধু জল পানও করে। জীবদেহে জলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিচে বর্ণনা করা হল:
[১] জল প্রোটোপ্লাজমের প্রধান উপাদান।
[২] জল-মাধ্যমে ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ ইত্যাদি ভৌত প্রক্রিয়াগুলি জীবদেহে সাধিত হয়।
[৩] সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে জল গ্রহণ করে। জল ছাড়া সালোকসংশ্লেষ সম্ভব নয়।
[৪] উদ্ভিদ-দেহের অতিরিক্ত জল বাষ্পমোচনে পরিত্যক্ত হয় বলে উদ্ভিদের দেহের পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকে এবং উদ্ভিদ আরও জল শোষণ করতে সক্ষম হয়।
[৫] জীবকোষে অধিকাংশ বিপাকীয় কাজ জলের উপস্থিতিতে ঘটে।
[৬] জীবদেহের বিভিন্ন অংশের ঘর্ষণজনিত আঘাত থেকে জল রক্ষা করে।
[৭] জীবদেহে পরিবহণের ব্যবস্থা একান্তভাবেই জলনির্ভর। জল ছাড়া পরিবহণ সম্ভব নয়।
[৮] প্রাণীদের দেহে তাপমাত্রা বজায় রাখতে জল সাহায্য করে।
[৯] জলের উপস্থিতিতে আয়ন গঠন তাড়াতাড়ি হয়।
[১০] জল মাধ্যমে বিভিন্ন উৎসেচক তাদের কর্মক্ষমতা বজায় রাখে।
[১১] কোষের রসস্ফীতির চাপ বজায় রেখে কোষের বা সমগ্র দেহের নির্দিষ্ট আকার রাখতে জল সাহায্য করে। জলের অভাবে, জলশূন্যতা (dehydration) উপসর্গ দেখা দেয়।
(১২) বিভিন্ন খনিজ লবণ জল-মাধ্যমে জীবদেহে গৃহীত হয়।
উল্লেখ্য, ৭০ কিলোগ্রাম ওজনের মানুষের দেহে প্রায় ৪৭ লিটার জল থাকে। মানুষের চামড়ায় ২০%, পেশীতে ৭৫%, রক্ত-কণিকায় ৬০%, রক্ত রসে ৯২% জল থাকে [17]
গ্রামের সব থেকে বেশি লাভজনক চাষের জন্য উপযোগী জমি, বীজ জল ব্যবস্থা থাকা দরকার। গ্রামগঞ্জে সব থেকে বেশি চাষ হয় গম,ধান, সবজি, ভুট্টা, পেঁয়াজ, আলু।
বেশিরভাগ খাবারের উদ্ভব হয় উদ্ভিদ থেকে। কিছু খাবার সরাসরি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়; এমনকি প্রাণীদের খাদ্যের উৎস হিসাবে আমরা গাছপালা থেকে প্রাপ্ত খাবারকেই বিবেচনা করি। সিরিয়াল নামক শস্যটি হ'ল একটি প্রধান খাদ্য যা অন্য যে কোনও ফসলের চেয়ে বিশ্বজুড়ে বেশি খাদ্যশক্তি সরবরাহ করে। [18] বিশ্বব্যাপী সমস্ত শস্য উৎপাদনের ৮৭ ভাগ জুড়ে আছে ভুট্টা, গম এবং চাল (তাদের বিভিন্ন জাত মিলিয়ে)।[19][20][21] বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত বেশিরভাগ শস্য প্রাণীসম্পদগুলিকে বৃদ্ধি করতে খাওয়ানো হয়।
উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত কিছু খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ভোজ্য ছত্রাক, বিশেষত মাশরুম অন্তর্ভুক্ত। খামিরযুক্ত এবং আচারযুক্ত খাবার যেমন খামিরযুক্ত রুটি, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়, পনির, আচার, কম্বুচা এবং দই তৈরিতে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। আর একটি উদাহরণ হল নীল-সবুজ শেত্তলা যেমন স্পিরুলিনা।[22] অ জৈবজাতীয় পদার্থ যেমন লবণ, বেকিং সোডা এবং টারটার ক্রিম ব্যবহার করে কোনও উপাদান সংরক্ষণ বা রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত করতে ব্যবহৃত হয়।
সালোকসংশ্লেষণের সময় সূর্য থেকে শক্তি শোষিত হয় এবং বায়ু বা মাটিতে থাকা জল এবং কার্বন ডাই অক্সাইডকে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজে রূপান্তর করতে ব্যবহৃত হয়। তারপরে অক্সিজেন মুক্তি পায় এবং গ্লুকোজ শক্তির রিজার্ভ হিসাবে সঞ্চিত হয়।[23] সালোকসংশ্লেষিত উদ্ভিদ, শৈবাল এবং কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রায়শই খাদ্য শৃঙ্খলের সর্বনিম্ন বিন্দুকে প্রতিনিধিত্ব করে[24][25]। সালোকসংশ্লেষণকে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জীবনের জন্য শক্তি এবং খাদ্যের প্রাথমিক উৎস।[26]
উদ্ভিদগুলি বায়ু, প্রাকৃতিক জল এবং মাটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি এবং খনিজগুলি শোষণ করে।[27] কার্বন, অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন বায়ু বা জল থেকে শোষিত হয় এবং উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য এগুলি প্রয়োজনীয় মৌলিক পুষ্টি।[28] উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য মাটি থেকে শোষিত তিনটি প্রধান পুষ্টি উপাদান হল নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির সাথে ক্যালসিয়াম, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন বোরন, ক্লোরিন, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, কপার মলিবডেনাম এবং নিকেল।[29]
অনেক গাছপালা এবং উদ্ভিদের অংশ খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয় এবং প্রায় ২,০০০ উদ্ভিদ প্রজাতি খাদ্যের জন্য চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদগুলোর বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন স্বতন্ত্র জাত রয়েছে। [30]
মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর জন্য গাছের বীজ হ'ল খাবারের একটি উৎস, কারণ এগুলিতে ওমেগা ফ্যাটগুলির মতো অনেক স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সহ উদ্ভিদের প্রাথমিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। আসলে, মানুষের ভোজ্য বেশিরভাগ খাদ্যই বীজভিত্তিক। ভোজ্য বীজের মধ্যে সিরিয়াল ( ভুট্টা, গম, চাল, ইত্যাদি ), বীচি জাতীয় ( শিম, মটরশুটি, মসুর ডাল, ইত্যাদি) এবং বাদাম রয়েছে। তেলবীজগুলিকে প্রায়শই সমৃদ্ধ তেল উৎপাদন করতে পিষে নেওয়া হয় যেমন সূর্যমুখী, ফ্ল্যাকসিড, রেপসিড ( ক্যানোলা তেলসহ), তিল ইত্যাদি। [31]
বীজগুলিতে সাধারণত অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে এবং পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে, সমস্ত বীজই ভোজ্য নয়। বড় বীজ, যেমন লেবু থেকে পাওয়া বীজ দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে, অন্যদিকে চেরি এবং আপেলের বীজগুলিতে সায়ানাইড থাকে যা কেবলমাত্র অধিক পরিমাণে খাওয়া হলে তা বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। [32]
ফল হল গাছের পূর্ণাঙ্গ পাকাপোক্ত ডিম্বাশয়,এর মধ্যে বীজ আছে। অনেক উদ্ভিদ
বিবর্তিত বেশিরভাগ ফলের মধ্যে মিষ্টি,টক,কষ,স্বাদবিহীন বিভিন্ন স্বাদের ফল হয়ে থাকে,বিভিন্ন ঘ্রাণযুক্ত ও ঘ্রাণহীন ফলের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। খাদ্যাভ্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল ফল। টমেটো, কুমড়ো এবং বেগুনের মতো কিছু বোটানিকাল ফল সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। [33] (আরও তথ্যের জন্য, ফলের তালিকা দেখুন। )
শাকসবজি দ্বিতীয় ধরনের উদ্ভিদজ খাদ্য উৎস যা সাধারণত খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয়। এর মধ্যে আছে শিকড় জাতীয় শাকসবজি ( আলু এবং গাজর ), স্তরজাতীয় ( পেঁয়াজ পরিবার), গাছের পাতা জাতীয় ( শাক এবং লেটুস ), ডাঁটা জাতীয় শাকসবজি ( বাঁশের কাণ্ড এবং শতমূলী), এবং পুষ্পবিন্যাস শাকসবজি ( গ্লোব আর্টিচোক এবং ব্রোকলি এবং অন্যান্য শাকসবজি যেমন বাঁধাকপি বা ফুলকপি)।[34]
উৎপাদিত প্রাণীসম্পদ তাদের দিয়ে তৈরি করা পণ্যে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাণীর কাছ থেকে নেওয়া মাংস হল প্রত্যক্ষ পণ্যের উদাহরণ, যা পেশী সিস্টেমগুলি বা অঙ্গগুলি ( অফাল ) থেকে আসে।
প্রাণীদের দ্বারা উৎপাদিত খাদ্য পণ্যগুলির মধ্যে স্তন্যপায়ী গ্রন্থিগুলির দ্বারা উৎপাদিত দুধও রয়েছে, যা অনেক সংস্কৃতিতে ডুবিয়ে বা ডেইরি প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় যেমন পনির, মাখন ইত্যাদি। এছাড়াও, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী যারা ডিম দেয় তা প্রায়শই খাওয়া যায় এবং মৌমাছিরা মধু উৎপাদন করে (ফুল থেকে একটি আহরিত অমৃত) যা অনেক সংস্কৃতিতে একটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাদ্য। কিছু সংস্কৃতিতে রক্ত খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়। কখনও কখনও রক্ত সসেজ হিসেবে যা সস ঘন করতে ব্যবহৃত হয় বা খাদ্য ঘাটতির সময়ে একটি নিরাময়কৃত, লবণাক্ত আকারে তা খাওয়া হয় এবং অন্যরা স্টিউতে রক্ত ব্যবহার করে যেমন ভাপে সিদ্ধ খরগোশ রান্নায়। [35]
কিছু রীতি নীতির অনুসারে এবং কোন কোন মানুষ সাংস্কৃতিক কারনে, খাদ্যাভ্যাসের জন্য, স্বাস্থ্য রক্ষায়, নৈতিক কারণে বা আদর্শগত কারণে মাংস বা পশু খাদ্য পণ্য গ্রহণ করেন না। নিরামিষাশীরা প্রাণীজ উৎস থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের খাবার ত্যাগ করতে পছন্দ করেন। নিরামিষবাদীরা কোনও প্রাণীর উৎস থেকে উপাদান নিয়ে বা প্রাণীজ উৎস থাকে এমন কোনও খাবার গ্রহণ করে না।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.