Loading AI tools
আফগানিস্তানের আমির উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দোস্ত মুহাম্মদ খান (ফার্সি: دوست محمد خان, পশতু: دوست محمد خان, ২৩ ডিসেম্বর ১৭৯৩ – ৯ জুন ১৮৬৩) ছিলেন আফগানিস্তানের বারাকজাই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং আফগানিস্তানের আমির।[3] দুররানি রাজবংশের পতনের পর তিনি আফগানিস্তানের আমির হন। ১৮২৬ থেকে ১৮৩৯ এবং ১৮৪৫ থেকে ১৮৬৩ এই দুই মেয়াদে তিনি আমিরের দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি জাতিগতভাবে একজন পশতুন ছিলেন। তিনি তার পিতা এবং বারাকজাই গোত্রের প্রধান সর্দার পায়েন্দা খানের একাদশ পুত্র। পায়েন্দা খান ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জামান শাহ দুররানি কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন।[2] দোস্ত মুহাম্মদ খানের দাদা ছিলেন হাজি জামাল খান।
দোস্ত মুহাম্মদ খান | |||||
---|---|---|---|---|---|
আফগানিস্তানের আমির, আমিরুল মুমিনিন | |||||
আফগানিস্তানের আমির | |||||
রাজত্ব | ১৮২৬–১৮৩৯ ১৮৪৫–১৮৬৩ | ||||
পূর্বসূরি | শাহ শুজা দুররানি | ||||
উত্তরসূরি | শের আলি খান | ||||
জন্ম | ২৩ ডিসেম্বর ১৭৯৩ কান্দাহার, দুররানি সাম্রাজ্য | ||||
মৃত্যু | ৯ জুন ১৮৬৩ (৬৯ বছর) হেরাত, আফগানিস্তান আমিরাত | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | ২৫ জন স্ত্রী[1] | ||||
বংশধর | ২৭ পুত্র ও ২৫ কন্যা[2] | ||||
| |||||
রাজবংশ | বারাকজাই রাজবংশ | ||||
পিতা | সর্দার পায়েন্দা খান মুহাম্মদজাই (সরফরাজ খান) | ||||
মাতা | জয়নব বেগম[1] |
দোস্ত মুহাম্মদ খান ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর কান্দাহারের একটি প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[4] তার বাবা পায়েন্দা খান ছিলেন বারাকজাই গোত্রের প্রধান এবং দুররানি সাম্রাজ্যের একজন বেসামরিক কর্মচারী। তারা তাদের বংশলতিকা হাজি জামাল খান, ইউসুফ, ইয়ারু, মুহাম্মদ, উমর খান, খিসার খান, ইসমাইল, নিক, দারু, সাইফাল এবং বারাকের মাধ্যমে আবদালি গোত্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদালের সাথে সম্পর্কিত করেন। আবদালের চার পুত্র ছিল। তারা হলেন পুপাল, বারাক, আচাক এবং আলাকু।[5]
তার বড় ভাই এবং বারাকজাই প্রধান ফাতেহ খান ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে মাহমুদ শাহ দুররানির ক্ষমতা লাভ এবং ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় ক্ষমতা লাভে সহায়তা করেছিলেন। আক্রমণকারী শিখদের বিরুদ্ধে আটোকের যুদ্ধে দোস্ত মুহাম্মদ খান তার বড় ভাই এবং কাবুলের প্রধানমন্ত্রী উজির ফাতেহ খানের সাথে ছিলেন। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে মাহমুদ শাহ দুররানি কর্তৃক ফাতেহ খান নিহত হন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মাহমুদ শাহ হেরাত ছাড়া তার শাসনাধীন বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ হারান এবং এসকল অংশ ফাতেহ খানের ভাইদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। এসকল অংশের মধ্যে দোস্ত মুহাম্মদ খান গজনি লাভ করেছিলেন। ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সেসময়ের সবচেয়ে সম্পদশালী আফগান প্রদেশ কাবুলকে এর সাথে যুক্ত করেন।
ক্ষমতারোহণের সময় থেকে তার সাথে পাঞ্জাবের শিখ শাসক রণজিৎ সিঙের সাথে দ্বন্দ্ব ছিল। রণজিৎ সিং দোস্ত মুহাম্মদ খানের বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত শুজা শাহ দুররানির সাথে মিত্রতা করেছিলেন। ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে শুজা শাহ দুররানি তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য শেষ চেষ্টা চালান। এতে তিনি দোস্ত মুহাম্মদ খানের কাছে পরাজিত হন। তবে রণজিৎ সিং এই সুযোগে পেশাওয়ার দখল করে নেন। শিখদের পরাজিত করার জন্য জামরুদের যুদ্ধে দোস্ত মুহাম্মদ খান তার পুত্র ওয়াজির আকবর খানকে পাঠিয়েছিলেন।[4]
ব্রিটিশ, রুশ ও কিছুটা ফরাসিদের কারণে রাজনৈতিক পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে। দোস্ত মুহাম্মদ খান রুশদের ফিরিয়ে দিয়ে ব্রিটেনের সাথে মিত্রতা গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে কাবুলে আলেক্সান্ডার বার্নসকে স্বাগত জানান। কিন্তু বার্নস গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ডকে রাজি করাতে সক্ষম হননি। দোস্ত মুহাম্মদ খানকে পেশাওয়ার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা ছেড়ে দিতে এবং আফগানিস্তানের বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়। এর বদলে তিনি রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড অকল্যান্ড তার বিরুদ্ধে সেনা প্রেরণ করেন।
১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে দোস্ত মুহাম্মদ খান পেশাওয়ার পুনরুদ্ধারের জন্য খাইবার পাসের দিকে অগ্রসর হন। ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে শিখ সেনাপতি হরি সিং নালওয়া এবং রাজপুত্র নাও হিনাল সিং এই সীমান্তে ছিলেন। তারা কয়েকটি দুর্গ তৈরী করেছিলেন। এর মধ্যে জামরুদ ছিল খাইবার পাসের একেবারে পূর্বপ্রান্তে। দোস্ত মুহাম্মদ আরেক প্রান্তের আলি মসজিদে আরেকটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে নাও নিহাল সিং বিয়ের জন্য লাহোর আসেন এবং রণজিৎ সিং ও তার দরবার বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
জামরুদের উদ্দেশ্যে দোস্ত মুহাম্মদ খান ২৫,০০০ সৈনিকের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। এদের মধ্যে অনেক স্থানীয় অনিয়মিত সৈনিক ছিল। এছাড়াও তাদের সাথে ১৮টি ভারি কামান ছিল। এখানকার শিখ ঘাটিতে সৈনিক সংখ্যা ছিল ৬০০ এবং তাদের অল্প কয়েকটি হালকা কামান ছিল। আফগানরা দুর্গ অবরোধ করে এবং এর পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সেসাথে শাবকাদারের দুর্গ থেকে যাতে সহায়তা আসতে না পারে সেজন্য সেখানেও একটি দল পাঠানো হয়। জামরুদের কমান্ডার চারদিন পর্যন্ত আফগানদের ঠেকিয়ে রাখেন এবং পেশাওয়ারে হরি সিং নালওয়ার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। এরপর নালওয়া জামরুদের দিকে অগ্রসর হন।
১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল চূড়ান্ত যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে হরি সিং মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে শিখ সম্রাট ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে অংশ নেন। এর ফলে ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে ব্রিটিশ সহায়তায় শুজা শাহ দুররানি কাবুলের ক্ষমতা লাভ করেন। দোস্ত মুহাম্মদ খান ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মসুরিতে নির্বাসিত হন। ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে শুজা শাহ নিহত হওয়ার পর তিনি পুনরায় ক্ষমতা পান।
ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর দোস্ত মুহাম্মদ খান নিজ শাসনের ভিত্তি মজবুত করা শুরু করেন। ১৮৪৬ থেকে তিনি ব্রিটিশদেরকে আক্রমণের নীতিতে পরিবর্তন আনেন এবং শিখদের সাথে মিত্রতা করেন। কিন্তু শিখরা ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি গুজরাটে পরাজিত হওয়ার পর তিনি তার পরিকল্পনা ত্যাগ করে তার বাহিনীকে আফগানিস্তান ফিরিয়ে আনেন। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বলখ জয় করেন[6] এবং ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে কান্দাহারের অধিকারের মাধ্যমে দক্ষিণের আফগান গোত্রগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন।
১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন।[7] ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশদের সাথে সম্মিলিতিভাবে পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সেই বছরের জুলাই মাসে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে হেরাত প্রদেশ এক বারাকজাই রাজপুত্রের হাতে সমর্পণ করা হয়। সিপাহী বিদ্রোহের সময় তিনি বিদ্রোহীদের সহায়তা প্রদান থেকে বিরত ছিলেন। তার পরের বছরগুলোতে তিনি হেরাত ও বুখারার সমস্যার কারণে সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন। ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে পার্সিয়ানরা হেরাতের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়। তিনি ব্রিটিশদের কাছে সহায়তা চান এবং তাদের বিতাড়িত করেন। ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মে তিনি পুনরায় হেরাত অধিকার করেন। সে বছরের ৯ জুন তিনি মারা যান। এরপর তার পুত্র শের আলি খান আমির হন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.