Loading AI tools
১৯২৫ সালের সিনেমা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দ্য গোল্ড রাশ হল ১৯২৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মার্কিন নির্বাক হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র। এটি রচনা, প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন চার্লি চ্যাপলিন। এতে চ্যাপলিনকে তার লিটল ট্রাম্প সত্তায় দেখা যায় এবং অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেন জর্জিয়া হেল, ম্যাক সোয়াইন, টম মুরে, হেনরি বার্গম্যান, এবং ম্যালকম ওয়েট।
দ্য গোল্ড রাশ | |
---|---|
পরিচালক | চার্লি চ্যাপলিন |
প্রযোজক | চার্লি চ্যাপলিন |
রচয়িতা | চার্লি চ্যাপলিন |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | (১৯৪২-এ পুনঃমুক্তি)
|
চিত্রগ্রাহক | রোল্যান্ড টথেরোহ |
সম্পাদক | চার্লি চ্যাপলিন |
পরিবেশক | ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ৮৫ মিনিট (মূল) ৭২ মিনিট (১৯৪২-এ পুনঃমুক্তি) |
দেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | নির্বাক ইংরেজি আন্তঃভাষ্য |
নির্মাণব্যয় | $৯২৩,০০০ |
আয় | $২.৫ মিলিয়ন (যুক্তরাষ্ট্র/কানাডা)[1] $৪ মিলিয়ন (বিশ্বব্যাপী)[2] |
দ্য গোল্ড রাশ ১৯২৫ সালের ২৬ জুন মুক্তি পায়। ১৯৪২ সালে পুনঃমুক্তি দেওয়া হলে ছবিটি ১৫তম একাডেমি পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ হাস্যরসাত্মক বা নাট্য চলচ্চিত্রের সুর এবং শ্রেষ্ঠ শব্দ মিশ্রণ বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে। বর্তমানে এটি চ্যাপলিনের সবচেয়ে প্রশংসিত কাজের একটি এবং তিনি নিজেই কয়েকবার বলেছিলেন তিনি তার এই কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি স্বীকৃতি পেতে চান।[3][4] ছবিটি "সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং নান্দনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ" বিবেচনায় ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের জাতীয় চলচ্চিত্র রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়।[5]
নিচে ১৯৪২ সালের পুনঃমুক্তির কাহিনী দেওয়া হয়েছে।
বিগ জিম ক্লন্ডিক গোল্ড রাশকালীন সময়ে একজন স্বর্ণ অনুসন্ধানী, যে প্রবল তুষার ঝড়ের পর তার বসত ভূমিতে বিশাল স্বর্ণের মজুদ খুঁজে পায়। একই তুষার ঝরে নিঃসঙ্গ অনুসন্ধানীও স্বর্ণ খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যায়। সে এক ফেরারী ব্ল্যাক লারসেনের কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে। লারসেন তাকে বাইরে বের করে দিতে চায়। সেই সময় বিগ জিমও সেই ঘরে প্রবেশ করে। লারসেন তাদের দুজনকেই তার বন্দুক দিয়ে ভয় দেখাতে চায়, কিন্তু জিমের সাথে কুলিয়ে ওঠতে পারে না, এবং তারা তিনজনই এই ঘরে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
যখন তুষার ঝড় বাড়তে থাকে এবং খাদ্য শেষ হতে থাকে, তখন তিনজন তাসের পাতা নিয়ে ড্র করে ঠিক করে কে বাইরে খাবার আনতে যাবে। লারসেন ড্রতে হারে এবং খাবার আনার জন্য বাইরে যায়। সেখানে তার তাকে ধরতে আসা দুজনের সাথে দেখা হয় এবং সে তাদের দুজনকে গুলি করে হত্যা করে। অন্যদিকে, কুঁড়েঘরে রয়ে যাওয়া দুজন খাবারের জন্য এতটা উদগ্রীব হয়ে পড়ে যে তারা লিটল ম্যানের একটি জুতা রান্না করে খায়। পরবর্তীতে জিম বিকারগ্রস্থ হয়ে পরে এবং লিটল ম্যানকে একটি বড় মুরগী হিসেবে ভাবতে শুরু করে এবং তাকে আক্রমণ করে। এই সময় একটি ভল্লুক তাদের ঘরে ঢোকলে, লিটল ম্যান তাকে গুলি করে এবং তাদের খাবারের সংস্থান হয়।
ঝড় কমার পর দুজনেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়, লিটল ম্যান পরবর্তী স্বর্ণ খনির সন্ধানে শহরের দিকে যাত্রা করে এবং জিম তার স্বর্ণের মজুদের কাছে ফিরে যায়। সেখানে লারসেন তাকে কোদাল দিয়ে আঘাত করে। খনির কিছু স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথে লারসেন বরফের গিরিগাত্রে পড়ে মারা যায়। লিটল ম্যান শহরে আসে এবং এক দয়ালু অনুসন্ধানীর বাড়িতে আশ্রয় লাভ করে। শহরে এক ড্যান্স হলে তার জর্জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ হয়। জ্যাক নারীদের কাছে প্রিয়, সে জর্জিয়াকে বারবার তার সাথে নাচার জন্য আমন্ত্রণ জানালে এবং বিরক্ত করলে, সে সিদ্ধান্ত নেয় "ড্যান্স হলের সবচেয়ে অসুন্দর দেখতে ট্রাম্পের" সাথে নাচবে। লিটল ম্যান তৎক্ষণাৎ তার প্রেমে পড়ে যায়। সখীদের সাথে খেলতে গিয়ে জর্জিয়ার আবার লিটল ম্যানের সাথে তার বাড়িতে সাথে দেখা হয়। সেখানে জর্জিয়া তার একটি ছবি খুঁজে পায় এবং তার গোপন প্রেমের কথা জানতে পারে। লিটল ম্যান তাদের নববর্ষের রাতে খাবারের নিমন্ত্রণ জানায়। জর্জিয়া ও তার সখীরা নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে। নিমন্ত্রিতদের খাবারের টাকা জোগাড় করতে সে তুষার পরিষ্কার করে। কিন্তু নিমন্ত্রণের রাতে তাদের জন্য অপেক্ষা করাকালীন লিটল ম্যান তাদের কাঁটা চামচে ব্রেড নিয়ে নাচ দেখিয়ে বিনোদন দেওয়ার কথা ভাবে। মধ্য রাত হয়ে গেলেও তারা না আসলে সে রাস্তায় হতাশ হয়ে হাঁটতে থাকে। এই মুহূর্তে জর্জিয়ার নিমন্ত্রণের কথা মনে পরে এবং জ্যাক ও তার সখীদের নিয়ে লিটল ম্যানের বাড়িতে যায়। সে ফিরে গিয়ে বাড়ি শূন্য অবস্থায় পায় কিন্তু রাতের খাবার এবং তাদের জন্য উপহার দেখতে পেয়ে সে তার মন পরিবর্তন করে এবং তার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে লিটল ম্যানকে তার সাথে কথা বলতে জানায়।
ইতিমধ্যে জিম জ্ঞান ফিরে পায় এবং উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরতে থাকে। কিন্তু আঘাতের ফলে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। শহরে ফিরে আসার পর সে তার স্মৃতি কিছুটা ফিরে পায় এবং মনে করতে পারে যে সে একটি বড় স্বর্ণের খনি খুঁজে পেয়েছিল। শহরের শেরিফদের সে তা জানায় কিন্তু মনে করতে পারে সেই খনির অবস্থান কোথায়। তার শুধু সেই কুঁড়েঘরটার কথা মনে পড়ে। শেরিফরা তাকে পাগল ভাবে। ফলে সে লিটল ম্যানকে খুঁজতে বেড়িয়ে যায় এই আশা নিয়ে যে সে ঐ কুঁড়েঘরের অবস্থান বলতে পারবে।
লিটল ম্যান পরের দিন ড্যান্স হলে গেলে জ্যাক তাকে বিরক্ত করে এবং জর্জিয়া তাকে খুঁজছে এমনটা জানালে সে রেগে যায় এবং তার ঐ মুখে জর্জিয়ার নাম না নেওয়ার কথা বলে। লিটল ম্যানের হাতে চিঠিটি দিলে সে জর্জিয়াকে খুঁজতে শুরু করে। একই সময়ে জিম তাকে খুঁজে পায় এবং তাকে নিয়ে স্বর্ণের খনি খুঁজতে যায়। যাওয়ার আগে সে শুধু জর্জিয়াকে এইটুকু বলেতে পারে যে সে অচিরেই একজন মিলিয়নিয়ার হতে যাচ্ছে। জিম এবং লিটল ম্যান কুঁড়েঘরটি খুঁজে পায় এবং রাতে সেখানে অবস্থান করে। রাতে তুষার ঝড়ে ঘরটি উড়ে যায় এবং জিমের স্বর্ণের মজুদের কাছাকাছি চলে আসে। পরদিন সকালে তারা আবিষ্কার করে ঘরটি পাহাড়ের খাড়া চূড়ায় আটকে আছে এবং তারা সেখান থেকে বের হতে চেষ্টা করে। অবশেষে জিম ঘর থেকে বের হয় এবং লিটল ম্যানকে ঘর থেকে নিরাপদে বের করার পর ঘরটি পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে পড়ে যায়।
এক বছর পর এখন তারা দুজনেই ধনী। কিন্তু লিটল ম্যান এখনো জর্জিয়াকে খুঁজে পায় নি। তার একটি জাহাজে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসে। জর্জিয়াও সেই জাহাজে ভ্রমণ করছিল যা তারা জানত না। যখন লিটল ম্যান তার পুরনো পোশাক পরে ছবি তুলতে যায়, সে সিঁড়ি থেকে নিচে পরে যায় এবং আবার জর্জিয়ার সাথে দেখা হয়। জর্জিয়া তাকে বিনা টিকেটের যাত্রী মনে করে তাকে জাহাজের কর্মকর্তা থেকে বাঁচাতে যায়, তখন জিম ও অন্যান্যরা জাহাজের কর্মকর্তাকে তার আসল পরিচয় দেয়। জর্জিয়ার ভুলও ভাঙ্গে এবং তারা দুজনে সুখে বাস করতে থাকে।
চলচ্চিত্রের লিখিত পাণ্ডুলিপি হাতে থাকার পরও ছবির কাজ দেরী হচ্ছিল অন্য একটি কারণে। চ্যাপলিন প্রধান নারী চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল লিটা গ্রেকে নির্বাচন করেন। গ্রের বয়স ছিল তখন মাত্র ১৬ আর চ্যাপলিনের ৩৬। তারা ১৯২৪ সালের মাঝামাঝিতে বিয়ে করেন। গ্রে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয়ও করেন। কিন্তু পরে তার স্থলে জর্জিয়া হেলকে নেওয়া হয় এবং তার সকল দৃশ্যগুলো পুনরায় হেলকে দিয়ে নতুন করে ধারণ করা হয়।[6] ২৪ বছর বয়সী জর্জিয়া তখন শিকাগোর একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা জিতে হলিউডে আসেন এবং জোসেফ ফন স্টার্নবার্গের দ্য সালভেশন হান্টার্স চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[7]
যদিও কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে গ্রের কিছু ছবি পাওয়া যায়, তবে আননোন চ্যাপলিন এবং চ্যাপলিন টুডে: দ্য গোল্ড রাশ প্রামান্যচিত্রে তার কোন ফুটেজ পাওয়া যায় নি। প্রামাণ্যচিত্র আননোন চ্যাপলিন-এ চলচ্চিত্রের নির্মাণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে হেল প্রকাশ করেন যে তার শৈশব থেকে চ্যাপলিন তার আদর্শ ছিলেন, এবং মূল সংস্করণের শেষ দৃশ্যে তাদের দুজনের চুম্বন মূলত সেই সময়ে তাদের সম্পর্ক নির্দেশ করে। এই চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় লিটা গ্রের সাথে চ্যাপলিনের বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। হেল চ্যাপলিনের সাথে তার সম্পর্কের কথা তার স্মৃতিকথা চার্লি চ্যাপলিন: ইন্টিমেট ক্লোজ-আপ্স বইয়ে বর্ণনা করেন।
চ্যাপলিন ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছবির চিত্রধারণ শুরু করেন।[6] দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রাকির কাছাকাছি কয়েকটি স্থানে চিত্রধারণ করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি অনেকগুলো ফুটেজ বাদ দেন যেখানে তুষারের মধ্যে বিগ জিম ট্রাম্পকে তাড়া করছে। এর পরিবর্তে একটি কুড়েঘরের চারপাশে তাকে তাড়া করছে এমন একটি দৃশ্য রাখেন। শেষ দৃশ্য ধারণ করা হয় চ্যাপলিনের হলিউড স্টুডিওর মঞ্চে।[7] ছবিটির চিত্রগ্রহণ সমাপ্ত হয় ১৯২৫ সালের মে মাসে।[6]
দ্য গোল্ড রাশ ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সফলতা লাভ করে। এটি চলচ্চিত্রের ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ আয়কারী নির্বাক চলচ্চিত্র, যা ১৯২৬ সালে বক্স অফিসে ৪,২৫০,০০১ মার্কিন ডলারের বেশি আয় করে। ছবিটি থেকে ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চ্যাপলিন নিজে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা অর্জন করেন।[2]
সমালোচকগণ ১৯২৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সংস্করণের প্রশংসা করেন। পর্যালোচনা ভিত্তিক ওয়েবসাইট রটেন টম্যাটোসে ৪৬ জন সমালোচকের পর্যালোচনার ভিত্তিতে ছবিটির রেটিং স্কোর ১০০%।[8] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মোরডন্ট হল লিখেন, "এই হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রে কাব্য, করুণ রস, কোমলতা ও কর্কশ বিষয় রয়েছে। এটি চ্যাপলিনের সকল চলচ্চিত্রের মধ্যে অনন্য একটি মণি, এবং তার অন্যান্য সেরা কাজ, যেমন দ্য কিড ও সোল্ডার আর্ম্স থেকেও এতে গভীর ভাব ও মৌলিকত্ব রয়েছে।[9] ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনেও প্রশংসামূলক পর্যালোচনা ছাপা হয়, যেখানে বলা হয় "এটি এখন পর্যন্ত নির্মিত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে বিস্তৃত হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র, এবং অনেক বছর এই ক্ষেত্রে বড় ধরনের হিট চলচ্চিত্র হিসেবে থাকবে, নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র হিসেবে যেমন দ্য বার্থ অব আ নেশন রয়ে গেছে।[10]
১৯৫৮ সালে ব্রাসেলস বিশ্ব মেলায় সমালোচকগণ ছবিটিকে সের্গেই আইজেনস্টাইন পরিচালিত ব্রনিয়েনোসেৎস পটিয়োমকিন ছবির পরে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯২ সালে দ্য গোল্ড রাশ ছবিটিকে "সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং নান্দনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ" বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের জাতীয় চলচ্চিত্র রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়।[11]
চলচ্চিত্রটি আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে নিম্নোক্ত স্বীকৃতি লাভ করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.