Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান বা পরমাণুকেন্দ্রীণ পদার্থবিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে পারমাণবিক নিউক্লিয়াস এবং তাদের উপাদান এবং মিথস্ক্রিয়া সমন্ধে অধ্যয়ন করা হয়। পারমাণবিক বিষয় বস্তুগুলির অন্যান্য বিন্যাস গুলিও এখানে অধ্যয়ন করা হয়। [1] নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান এর সাথে মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়, যেখানে সম্পূর্ণ পরমাণু এবং এর ইলেক্ট্রন সমন্ধে অধ্যয়ন করা হয়ে থাকে।
নিউক্লীয় পদার্থবিদ্যার আবিষ্কারগুলো অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এটি পারমাণবিক শক্তি, পারমাণবিক অস্ত্র, পারমাণবিক ঔষধ ও চৌম্বকীয় অনুরণন চিত্রধারন, শিল্পক্ষেত্র ও কৃষি আইসোটোপ, আয়ন প্রতিস্থাপন এবং বস্তু প্রকৌশল এবং ভূতত্ত্ব ও প্রত্নতত্ত্ব মধ্যে কার্বনের রেডিও আইসোটোপ এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের ব্যবহারগুলি পারমাণবিক প্রকৌশল ক্ষেত্রে অধ্যয়ন করা হয়।
কণা পদার্থবিজ্ঞান নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান থেকে অভিব্যক্ত এবং দুটি ক্ষেত্র সাধারণত ঘনিষ্ঠ অনুষঙ্গে শেখানো হয়। পারমাণবিক জ্যোতির্বিদ্যা জ্যোতির্বিজ্ঞানে পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রয়োগ, হচ্ছে তারকাসমূহের অভ্যন্তরীণ কাজগুলির এবং রাসায়নিক উপাদানের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৮৯৬ সালে হেনরি বেকেরেল এর তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার থেকে আণবিক পদার্থবিজ্ঞান এর ইতিহাস শুরু হয়। [2] যখন ইউরেনিয়াম লবণের অনুপ্রভা তদন্ত করা হয়। [3] জে. জে. থমসন কর্তৃক ইলেক্ট্রন আবিস্কারের [4] এক বছর পরে ধারণা হয় যে পরমাণুর অভ্যন্তরীন কাঠামো রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জে. জে. থমসনের "প্লাম পুডিং" নকশা গৃহীত ছিল যেখানে পরমাণু ছিলো ধনাত্নক চার্জযুক্ত বল তার সাথে এটাকে ঘিরে ছোট ঋণাত্নক চার্জযুক্ত ইলেক্ট্রন এর বলয়।
ওই বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে তেজস্ক্রিয়তা অন্বেষণ করা হয়, উল্লেখযোগ্য হলো মেরী কুরী এবং পিয়েরে কুরী, আর্নেস্ট রাদারফোর্ড এবং তার সহকারীরা। শতাব্দীর পর পদার্থবিদরা পরমাণু থেকে নিসৃত তিন ধরনের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন যা আলফা, বিটা, গামা তেজস্ক্রিয়তা নামে নামকরণ করা হয়। ১৯১১ সালে ওটো হান এবং ১৯১৪ সালে জেমস চ্যাডউইকের পরীক্ষায় আবিষ্কার হয় যে বিটা ক্ষয় পৃথক নয় বরং অবিচ্ছিন্ন। এটা হলো, পরমাণু থেকে পৃথক শক্তির পরিমানে (যা গামা এবং আলফা ক্ষয়ে দেখা যায়) নয় বরং ক্রমাগত শক্তির সীমায় ইলেকট্রন হয়। এটা ঐ সময়ে নিউক্লীয় পদার্থবিদ্যার সমস্যা ছিলো কারণ ওই ধরনের ক্ষয়ে শক্তির সংরক্ষণ হয়না।
১৯০৩ এ বেকেরেলকে তাঁর আবিষ্কার এবং মেরী ও পিয়েরে কুরীকে তাদের তেজস্ক্রিয়তার পরবর্তী গবেষণার জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯০৮ সালে রাদারফোর্ডকে তার মৌল সমূহের বিভেদ এবং তেজস্ক্রিয় মৌলের রসায়নে অনুসন্ধানের জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইন্সটাইন ভরশক্তি সমীকরণের ধারণা দেন। যখন বেকেরেল এবং মেরী কুরী বহুদিন তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণা করেন।
১৯০৬ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড "রেডিয়াম থেকে বিকিরিত আলফা কণাকে একটি বস্তুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করার প্রতিবন্ধকতা" প্রকাশ করেন। [5] হ্যানস গেইজার এই গবেষণাকে রয়্যাল সোসাইটির [6] যোগাযোগে রাদারফোর্ড যে পরীক্ষা গুলো সম্পন্ন করেন ঐ পরীক্ষা দ্বারাই, অ্যালুমিনিয়াম পাত, বাতাস, এবং স্বর্নপাতের মধ্য দিয়ে আলফা কণা প্রবাহিত করে বিস্তৃত করেন। আরও অবদান ১৯০৯ সালে গেইজার এবং আর্নেস্ট মার্সডেন [7] দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। এবং এরপর বিশেষভাবে বিস্তৃত ব্যাখ্যা ১৯১০ সালে গেইজার [8] দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। ১৯১১-১৯১২ সালে রাদারফোর্ড রয়্যাল সোসাইটিতে তার পরীক্ষাসমূহ ব্যাখ্যা এবং পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের নতুন প্রস্তাব দেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন যেটি আমরা এখন রাদারফোর্ডের মডেল হিসেবে বুঝি।
এ ঘোষণার মূল পরীক্ষা ১৯১০ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পাদনা করা হয়েছে : আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের দল একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরীক্ষা সম্পাদনা করেন যেখানে গেইজার এবং মার্সডেন রাদারফোর্ডের কার্যানুযায়ী আলফা কণা (হিলিয়াম নিউক্লিয়াস) কে পাতলা স্বর্ণপাতের মধ্য দিয়ে আঘাত করান। প্লাম পুডিং মডেল পূর্বাভাস দেয় যে আলফা কণাগুলো পরমাণুর নির্দিষ্ট আবর্তন পথ থেকে সামান্যই বেঁকে পাত ভেদ করে চলে আসে। কিন্তু রাদারফোর্ড তার দলকে এমন জিনিস পর্যবেক্ষণের জন্য ধাবিত করেন যেটি তাকে পর্যবেক্ষণে বিস্মিত করেছিল : কিছু কণা বড় কোণে ছড়িয়ে যাচ্ছিল এমনকি সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে ঘুরে আসছিল কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তিনি এটিকে টিসু পেপারে বুলেট ফায়ারে লাফিয়ে ওঠার সাথে তুলনা করেন। ১৯১১ সালে রাদারফোর্ডের বিশ্লেষণের উপাত্তগুলো রাদারফোর্ড মডেল আবিস্কারের দিকে ধাবিত করে, যেখানে পরমাণুর খুব ছোট, অতি ঘন নিউক্লিয়াস রয়েছে যা পরমাণুর প্রায় সমস্ত ভর ধারণ করে এবং উচ্চ ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট যা ইলেক্ট্রনের চার্জ নিরপেক্ষ করে (যখন নিউট্রন আবিষ্কার হয়নি)। উদাহরণ হিসেবে এই মডেলে (যেটি আধুনিক মডেলের অংশ নয়) নাইট্রোজেন-১৪ একটি নিউক্লিয়াস যেটির ১৪ টি প্রোটন এবং ৭ টি ইলেক্ট্রন (মোট ২১ টি কণা) এবং নিউক্লিয়াস আরও ৭ টি ইলেক্ট্রন দ্বারা গঠিত।
১৯২০ এর দিকে আর্থার এডিংটন তার পত্রিকা দ্যা ইন্টারন্যাশনাল কন্সটিটিউশন অব দ্য স্টারস [9][10] এ তারকাসমূহে নিউক্লিয়ার ফিউশনের পদ্ধতি আবিষ্কারের পূর্বপ্রত্যাশা করেছিলেন। ওই সময়ে নক্ষত্র উদ্ভূত শক্তি ছিল সম্পূর্ণ রহস্যজনক; এডিংটন নির্ভুলভাবে চিন্তা করেন যে সেই উৎস ছিল হিলিয়ামের মধ্যে হাইড্রোজেনের ফিউশন যা আইন্সটাইনের ভরশক্তি সমীকরণ E = mc2 অনুসারে শক্তি বিকিরণ করে। এটি ছিল আংশিকভাবে উল্লেখযোগ্য ক্রমবিকাশ যখন ফিউশন এবং তাপীয় পারমাণবিক শক্তি এমনকি তারকাসমূহের বৃহৎ পরিমাণ হাইড্রোজেনের (দেখুন ধাতব বৈশিষ্ট্য) দ্বারা গঠন তখনও আবিষ্কার হয়নি।
রাদারফোর্ড মডেল ১৯২৯ সালে ফ্রাঙ্কো রাসেটি এর পারমাণবিক ঘূর্ণনের অধ্যয়নের আগ পর্যন্ত যথেষ্ট আলোড়িত হয়েছে। ১৯২৫ এর মধ্যে জানা গিয়েছে যে প্রোটন এবং ইলেকট্রন উভয়ের +/-১⁄২ স্পিন রয়েছে। রাদারফোর্ড মডেলে নাইট্রোজেন-১৪,২০ এর মোট ২১ পারমাণবিক কণাগুলোর মধ্যে একটি আরেকটির স্পিন বাতিল করার জন্য জোড়ায় থাকে এবং সর্বশেষ বিজোড় কণাটি নিউক্লিয়াসকে ১⁄২ স্পিন প্রদান করে। রাসেটি নাইট্রোজেন-১৪ এর স্পিন ১ আবিষ্কার করেন।
১৯৩২ সালে চ্যাডউইক অনুধাবন করেন যে, ওয়াল্টার বোথে, হার্বার্ট বেকার, ইরেনে, এবং ফ্রেডরিক জুলিও কুরি কর্তৃক পর্যবেক্ষিত বিকিরন মূলত একটি নিরপেক্ষ কণার কারণে হয়যার ভর প্রোটন এর সমতুল্য এবং তিনি তার নাম দেন নিউট্রন (রাদারফোর্ড এর অনুরূপ কণার প্রয়োজনীয়তার পরামর্শ অনুসারে) [11] একই বছরে দিমিত্রি আইভানেনকো প্রস্তাব দেন যে নিউক্লিয়াসে কোন ইলেক্ট্রন নেই — শুধুমাত্র প্রোটন এবং নিউট্রন রয়েছে — এবং সেই নিউট্রন গুলোই ছিলো ১⁄২ স্পিনের কণা যা ভর ব্যাখা করে ; প্রোটন নয়। নিউট্রনের স্পিন অবিলম্বে নাইট্রোজেন-১৪ এর স্পিন/ঘুর্ণন সমাধান করে, যাতে একটি অযুগ্ম প্রোটন এবং একটি অযুগ্ম নিউট্রন ১⁄২ স্পিন বজায় রাখে যা মোট স্পিন ১ প্রদান করে।
নিউট্রনের আবিষ্কার দ্বারা বিজ্ঞানীরা অবশেষে পারমাণবিক ভরের সাথে প্রোটন এবং নিউট্রনের তুলনা করে প্রতি নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তির ভগ্নাংশ পর্যন্ত পরিমাপ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে পারমাণবিক ভরের পার্থক্য গণনা করা যেত। যখন পারমাণবিক বিক্রিয়া পরিমাপ করা হয়, তখন এটি ১৯৩৪ সালের ১% এর মধ্যে আইনস্টাইনের ভর ও শক্তির সমতুল্যের গণনার সাথে মিল পাওয়া গিয়েছে।
আলেক্সান্ডার প্রকা সর্বপ্রথম বৃহদায়তন ভেক্টর বোসন ক্ষেত্র সমীকরণ এবং পারমাণবিক বলের মেসন ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও বিবৃতি প্রদান করেন। প্রকা'র সমীকরনগুলো ওলফগ্যাঙ পাউলির [12] কাছে জানা ছিল যিনি সমীকরণ গুলো তার নোবেল ঠিকানায় উল্লেখ করেন, এবং সমীকরণ গুলো ইউকাওয়া, ওয়েনজেল, তাকেতানি, সাকাটা, কেমার, হিটলার এবং ফ্রহলিচ দের কাছেও জানা ছিল যারা নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের উন্নয়নের জন্য প্রকা'র সমীকরণ গুলো মূল্যায়ন করেন। [13][14][15][16][17]
১৯৩৫ সালে হিদেকি ইউকাওয়া[18] প্রথম শক্তিশালী বন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ব প্রস্তাব করেন যেখানে কীভাবে একত্রে ইলেকট্রন ধারণ হয়। ইউকাওয়া মিথস্ক্রিয়া একটি কার্যক্ষমতা সম্পন্ন কণা যাকে পরবর্তীতে মেসন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, প্রোটন ও নিউট্রন সহ সকল নিউক্লিয়নের বল গুলোর সাম্যাবস্থিত হয়। এই বল কিজন্য নিউক্লিয়াস প্রোটনের বিকর্ষণ থাকা সত্বেও অবক্ষয়িত হয়না তার ব্যাখ্যা প্রদান করে, এবং এটি আকর্ষক শক্তিশালী বল প্রোটনসমূহের মধ্যে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকর্ষনের তুলনায় আরও সীমিত সীমা ব্যাখ্যা দেয়। পরবর্তীতে পাই মেসনের আবিষ্কার এটিতে ইউকাওয়া'র কণার ধর্ম থাকা দেখিয়ে দেয়।
ইউকাওয়া'র কাগজের সাহায্যে, আধুনিক পরমাণু মডেল পরিপূর্ণ হয়। পরমাণুর কেন্দ্র নিউট্রন ও প্রোটন এর দৃঢ় সংলগ্ন বল ধারণ করে যেটা শক্তিশালী পারমাণবিক বল দ্বারা গঠিত। অস্থায়ী নিউক্লিয়াস আলফা ক্ষয় অতিক্রম করে যেটি উত্তেজিত হিলিয়াম নিউক্লিয়াস নিঃসরণ করে। অথবা বিটা ক্ষয় যেটিতে ইলেক্ট্রন অথবা পজিট্রন নির্গত হয়। এই ক্ষয়গুলোর মধ্যে একটির পর পরিসমাপ্ত নিউক্লিয়াস উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। এবং এই পরিস্থিতিতে এটি শেষ ধাপ উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ফোটন গামা রশ্মি ক্ষয় বিকিরণ করে।
১৯৩৪ সালে দুর্বল এবং শক্তিশালী পারমাণবিক বলের অধ্যয়ন (পরবর্তীতে এনরিকো ফার্মি ফার্মিওন কণার সাহায্যে ব্যাখ্যাকৃত) পদার্থবিদদের উচ্চ শক্তিতে নিউক্লিয়াস এবং ইলেকট্রনের সংঘর্ষ সম্পর্কে জাতে সাহায্য করে। এই গবেষণা কণা পদার্থবিজ্ঞানের মুকুট মণি হয়ে উঠেছে, যেটি কণা পদার্থের আদর্শ মডেল এবং শক্তিশালী, দুর্বল এবং তড়িৎচৌম্বকীয় বল ব্যাখ্যা করে।
একটি ভারী নিউক্লিয়াস শত শত নিউক্লিয়ন ধারণ করতে পারে। এর মানে এটা দাঁড়ায় যে কিছু অনুমানে এটিকে কোয়ান্টাম-মেকানিক্যাল এর পরিবর্তে ক্লাসিক্যাল সিস্টেম হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। লিকুইড-ড্রপ মডেল,[19] অনুযায়ী, নিউক্লিয়াসের এমন শক্তি রয়েছে যা আংশিকভাবে পৃষ্ঠটান এবং প্রোটনের বৈদ্যুতিক বিকর্ষণ থেকে উদ্ভূত হয়। লিকুইড-ড্রপ মডেলটি বন্ধন শক্তির সাধারণ প্রবণতা (ভর সংখ্যা অনুযায়ী) এবং নিউক্লিয়ার ফিশন এর ঘটনা সহ নিউক্লিয়াসের অনেক বৈশিষ্ট্য পুনর্গঠন করতে পারে।
প্রথম শ্রেণীর ছবিগুলোতে উপরিপাতিত হওয়া কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল এর প্রভাব পারমাণবিক কক্ষপথ মডেল দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় যা মারিয়া গোপার্ট মেয়ার [20] এবং জে. হেনস ডি. জেসন [21] কর্তৃক একটি বড় অংশে উন্নীত হয়েছিল। নির্দিষ্ট সংখ্যক নিউট্রন এবং প্রোটন (ম্যাজিক নম্বর ২, ৮, ২০, ২৮, ৫০, ৮২, ১২৬, ...) দ্বারা গঠিত নিউক্লিয়াস বিশেষত স্থিতিশীল কারণ তাদের কক্ষপথ ইলেক্ট্রন দ্বারা পূর্ণ।
নিউক্লিয়াসের আরও জটিল মডেল প্রস্তাবিত হয়েছে যেমন বোসন মডেল, যেখানে এক জোড়ার ইলেক্ট্রনের অনুরূপ একজোড়া নিউট্রন এবং প্রোটন বোসন হিসেবে পরস্পরের উপর ক্রিয়া করে।
এবি ইনিশিও পদ্ধতি নিউক্লিয়াস এবং তাদের মিথস্ক্রিয়া থেকে শুরু করে মাটি থেকে পারমাণবিক অনেক শারীরিক সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করে। [22]
নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে বেশিরভাগ গবেষণা বেশিরভাগই উচ্চ ঘূর্ণন এবং উত্তেজনা শক্তির মতো চূড়ান্ত অবস্থার অধীনে নিউক্লিয়াস অধ্যয়ন সম্পর্কে বিবৃত করে। নিউক্লিয়াস চরম আকারের (এমনকি রুগবি বল বা নাশপাতির মত) বা চরম নিউট্রন-প্রোটন অনুপাতও হতে পারে। পরীক্ষাকারীরা কৃত্রিমভাবে প্ররোচিত ফিউশন বা নিউক্লিয়াস ট্রান্সফার প্রতিক্রিয়া ও ত্বারক থেকে আয়ন বিম ব্যবহার করে এই ধরনের নিউক্লিয়াসকে তৈরি করতে পারে। উচ্চতাপমাত্রায় নিউক্লিয়াস তৈরী করতে উচ্চ শক্তির বিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পরীক্ষা সাধারন নিউক্লিও বস্তু হতে নতুন অবস্থায় ফেজ ট্রানজিশন উৎপাদন করে, কোয়ার্ক-গ্লুওন প্লাজমা, যেখানে কোয়ার্ক একটির সাথে অপরটি জুড়ে যায় নিউট্রন এবং প্রোটন ট্রিপলেটে বিভক্ত হয়ে যায়।
৮০ টি মৌলের কমপক্ষে ১ টি স্থায়ী আইসোটোপ রয়েছে যেটি কখনো তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিঃসরণ করেনা, মোট ২৫৪ স্থায়ী আইসোটোপ শনাক্ত করা হয়েছে। যাইহোক হাজার হাজার আইসোটোপের অস্থায়ী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই "তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ" গুলো এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ থেকে শুরু করে ট্রিলিয়ন বছর সময় পর্যন্ত ক্ষয় হতে পারে। পারমাণবিক সংখ্যা এবং নিউট্রন সংখ্যা, নিউক্লাইডেরর বন্ধনশক্তি যেটি স্থায়িত উপত্যকা হিসেবে পরিচিত একটি নকশায় অঙ্কিত। স্থায়ী নিউক্লাইডগুলো এই শক্তি উপত্যকার নিচের দিকে অবস্থিত যেখানে অস্থায়ী নিউক্লাইডগুলো উপত্যকার দেয়াল বরাবর অবস্থিত এবং এদের দুর্বল বন্ধন শক্তি বিদ্যমান।
অধিক স্থায়ী নিউক্লিয়াস নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে পতিত হয় অথবা নিউট্রন ও প্রোটনের ভারসাম্য : খুব কম বা খুব বেশি নিউট্রন (প্রোটন সংখ্যার সাথে সম্পর্ক যুক্ত) ক্ষয়ের কারণ ঘটায়। উদাহরণ হিসেবে, বিটা ক্ষয়ের ক্ষেত্রে একটি নাইট্রোজেন-১৬ পরমাণু (৭ প্রোটন, ৯ নিউট্রন) সৃষ্টি হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি অক্সিজেন-১৬ পরমাণুতে (৮ প্রোটন, ৮ নিউট্রন) [23] রূপান্তরিত হয়। এই ক্ষয়ে নাইট্রোজেন নিউক্লিয়াসের একটি নিউট্রন দুর্বল মিথস্ক্রিয়া দ্বারা একটি প্রোটন, একটি ইলেকট্রন এবং একটি অ্যান্টি নিউট্রিনোতে রূপান্তরিত হয়। মৌলটি ভিন্ন প্রোটন সংখ্যার অন্য মৌলে রূপান্তরিত হয়।
আলফা ক্ষয়ে (যেটা সাধারণত ভারী নিউক্লিয়াসের ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়) তেজস্ক্রিয় মৌল অন্য মৌল গঠন করতে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস (২ প্রোটন এবং ২ নিউট্রন) ক্ষয় করে, হিলিয়াম-৪ সহ। অনেক ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি এই ধরনের কতগুলি ধাপে অন্যান্য ক্ষয়সহ (সাধারণত বিটা ক্ষয়) বজায় রাখে যতক্ষণ না স্থায়ী মৌল গঠিত না হয়।
গামা ক্ষয়ে একটি নিউক্লিয়াস উত্তেজিত অবস্থা থেকে নিন্ম শক্তির অবস্থায় গামা রশ্মি বিকিরণ করে। এই পদ্ধতিতে মৌলটি অন্য মৌলে পরিবর্তন হয়না (নিউক্লিয়ার পরিবর্তন নেই)
অন্যান্য আরও বাহ্যিক ক্ষয় সম্ভব। (প্রথম মূল প্রবন্ধ দেখুন)। উদাহরণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ক্ষয়ে শক্তি উত্তেজিত নিউক্লিয়াস গঠন করে মধ্যবর্তী অরবিটাল ইলেক্ট্রনগুলোর একটি প্রক্ষেপ করে এমন এক পদ্ধতিতে যেটা উচ্চ শক্তি উৎপন্ন করে ; কিন্তু এটা বিটা ক্ষয় নয়, এবং বিটা ক্ষয়ের মত একটি মৌলকে অন্য মৌলে রূপান্তরিত করে না।
নিউক্লিয়ার ফিউশনে, দুটি নিম্ন ভরের নিউক্লিয়াস একে অপরের খুব নিকটে আসে, যাতে শক্তিশালী বল তাদেরকে একীভূত করে। এটাতে নিউক্লিয়াসদ্বয়ের মধ্যে তড়িৎ বিকর্ষণ অতিক্রম করে তাদের একীভূত করতে প্রবল শক্তি অথবা নিউক্লিয়ার বলের প্রয়োজন হয় ;যেখানে নিউক্লিয়ার ফিউশন উচ্চ তাপমাত্রা বা উচ্চ চাপে সংঘটিত হয়। যখন নিউক্লিয়াস একীভূত হয়, প্রচুর পরিমানে শক্তি নির্গত হয় এবং মিলিত নিউক্লিয়াস নিন্ম শক্তির স্তরে অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতি নিউক্লিয়নে নিকেল-৬২ পর্যন্ত ভরসংখ্যার সাথে বন্ধন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
সূর্যের মত তারকাসমূহ চারটি প্রোটন হিলিয়াম নিউক্লিয়াসে, দুটি পজিট্রন এবং দুটি নিউট্রিনোর ফিউশন দ্বারা গঠিত। হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিণত হওয়ার অনিয়ন্ত্রিত ফিউশন পারমাণবিক তাপ নামে পরিচিত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বর্তমান গবেষণা সীমান্তে উদাহরণ হিসেবে জয়েন্ট ইউরোপিয়ান টোরাস (জেট) এবং আইটিইআর হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তির ব্যবহারে টেকসই পদ্ধতির উন্নয়ন।
নিউক্লিয়ার ফিউশন হলো শক্তির মূল (আলো রূপ এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ) আমাদের সূর্য সহ সকল তারকা থেকেই ক্ষয় হয়।
নিউক্লিয়ার ফিশন হলো ফিউশন এর বিপরীত প্রক্রিয়া। নিকেল-৬২ এর পরবর্তী ভারী মৌলের নিউক্লিয়াসে ভরসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বন্ধন শক্তি হ্রাস পায়। যদি ভারী নিউক্লিয়াসটি দুটি হালকা নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হয় তাহলে শক্তি নির্গমন সম্ভব হয়।
আলফা ক্ষয় পদ্ধতি নিউক্লিয়ার ফিশনের বিশেষ একটি ধরন। এটা উচ্চ অপ্রতিসম ফিশন কারণ চারটি কণা যা আলফা কণাকে দৃঢ়ভাবে বন্ধন করে ফিশনে এই নিউক্লিয়াস উৎপাদন একই রকম প্রায়।
নির্দিষ্ট ভারী নিউক্লিয়াস যার ফিশনে একটি মুক্ত নিউট্রনের উৎপত্তি হয় এবং যেটি সহজে নিউট্রনকে ফিশন শুরু করতে নিবিষ্ট করে, একটি নিজেই উত্তেজিত হওয়া ধরনের নিউট্রন ফিশনে উদ্ভব হতে পারে যাকে চেইন বিক্রিয়া বলা হয়। চেইন বিক্রিয়া পদার্থবিজ্ঞানের পূর্বে রসায়নে জানা যায় এবং প্রকৃতপক্ষে আগুন এবং রাসায়নিক বিস্ফোরণের মত অনেক পরিচিত প্রক্রিয়া ঘটে। ফিশন অথবা ফিশনে উৎপন্ন নিউট্রন ব্যবহার করে নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া হলো নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র এবং ফিশন প্রকৃতির নিউক্লিয়ার বোমার শক্তির উৎস যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে বিস্ফোরিত পারমাণবিক বোমা। ভারী নিউক্লিয়াস যেমন ইউরেনিয়াম এবং থোরিয়াম স্বতঃস্ফূর্ত ফিশন বিক্রিয়া দেয় কিন্তু এ ক্ষয় আলফা ক্ষয়ের অনুরূপ।
একটি আদি নিউট্রন শিকল বিক্রিয়া ঘটতে অবশ্যই নির্দিষ্ট শর্তে নির্দিষ্ট স্থানে একটি সর্বনিম্ন ভরের প্রাসঙ্গিক আইসোটোপ থাকতে হবে। সর্বনিম্ন ভর নিসৃত নিউট্রন এবং তাদের ধীরতা বা সীমাবদ্ধতা সংরক্ষিত হয় যাতে করে বড় ক্রস সেকশন বা তাদের অন্য ফিশন শুরু করার সম্ভাবনা থাকা প্রয়োজন। অকলো, গেবন, আফ্রিকা, প্রাকৃতিক নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়কের দুটি এলাকা ১.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে সক্রিয় ছিল [24] প্রাকৃতিক নিউট্রিনো নিঃসরনের পরিমাপ প্রদর্শন করে যে পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে নির্গমিত অর্ধেক তাপ তেজস্ক্রিয় ক্ষয় ঘটায়। যাইহোক, এটি জানা যায়নি এগুলোর মধ্যে কোনটি ফিশন চেইন বিক্রিয়া সংঘটিত করেছে কিনা। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তত্ব মতে, বিগ ব্যাঙ এর পর মহাবিশ্ব যখন শীতল হয় অবশেষে অতিপারমানবিক বস্তু যা আমরা জানি (নিউট্রন, প্রোটন এবং ইলেকট্রন) নির্গত হওয়া সম্ভব হয়। বিগ ব্যাঙ বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি সৃষ্টি হয়েছে প্রোটন এবং ইলেকট্রন (সমান সংখ্যক)। অবশেষে প্রোটন হাইড্রোজেন পরমাণু গঠন করে। বিগ ব্যাঙ এর প্রথম তিন মিনিটে প্রায় সব নিউট্রন হিলিয়াম-৪ এ শোষিত হয় এবং এই হিলিয়াম বর্তমান মহাবিশ্বের সকল হিলিয়াম সৃষ্টির জন্য দায়ী। (দেখুন বিগ ব্যাঙ সংশ্লেষন)।
বিগ ব্যাঙ এ হিলিয়ামের পাশাপাশি কিছু অল্প পরিমাণে লিথিয়াম, বেরিলিয়াম, এবং সম্ভবত বোরন সৃষ্টি হয়েছিল। প্রোটন এবং নিউট্রনের পারস্পরিক সংঘর্ষে সকল ভারী মৌল সমূহ যা আমরা বর্তমানে দেখি (কার্বন - ৬ নং মৌল) এবং আরও বেশি পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট মৌল তারকার অভ্যন্তরে ফিউশন ধাপের সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল, যেমন প্রোটন-প্রোটন শিকল, সিএনও চক্র এবং ত্রৈধ আলফা পদ্ধতি। পর্যায়ক্রমে তারকার বিবর্তনের মাধ্যমে আরও মৌল সমূহ সৃষ্টি হয়।
প্রতি নিউক্লিয়ন চূড়ায় বন্ধন শক্তি কেবলমাত্র ফিউশন প্রক্রিয়ায় শক্তি নির্গত হয়, লোহা(৫৬ নিউক্লিয়ন) এর চেয়ে ছোট পরমাণু গঠনে। ফিউশনে ভারী নিউক্লিয়াস তৈরীতে শক্তির প্রয়োজন, প্রকৃতির অবলম্বনে বাকি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। নিউট্রন তাদের চার্জের অভাবে নিউক্লিয়াস দ্বারা শোষিত হয়। ভারী মৌলগুলো ধীর নিউট্রন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে অথবা দ্রুত নিউট্রন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে সৃষ্টি হয়। ধীর পদ্ধতি তাপীয় স্পন্দন তারকা (এজিবি বা বিশাল অনন্ত তারকা) এবং এটি ভারী মৌল লেড ও বিসমাথে পৌছতে শত শত থেকে সহস্র বছর সময় নেয়। দ্রুত পদ্ধতি সুপারনোভা বিস্ফোরণে সংঘটিত হয় যেটি উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ নিউট্রন ফ্লাক্স এবং নির্গত বস্তু সরবরাহ করে। এই নাক্ষত্রিক দশা নিউট্রন ধারণ পদ্ধতিকে দ্রুত করে। খুব নিউট্রন-সমৃদ্ধ প্রজাতি যা তখন ভারী উপাদানগুলির সাথে বিটা-ক্ষয়, বিশেষ করে তথাকথিত অপেক্ষা বিন্দুতে বন্ধ করে দিয়ে নিউট্রন এবং (জাদু সংখ্যা) সহ আরও স্থিতিশীল নিউক্লাইডের সাথে মিলিত হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.