Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পিরালী ব্রাহ্মণ বা পীরালি ব্রাহ্মণ বাংলার ব্রাহ্মণ সমাজের একটি "থাক" বা উপসম্প্রদায়। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রেই এই থাকের ব্রাহ্মণদের দেখা যায়। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা ছিলেন এই থাকভুক্ত ব্রাহ্মণ।
ঐতিহাসিকভাবে এই "পিরালী" (বা "পীরালি") শব্দটি অপবাদমূলক ও নিন্দাসূচক অর্থদ্যোতক। নগেন্দ্রনাথ বসুর "বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস" গ্রন্থের ব্রাহ্মণ কাণ্ডের তৃতীয় ভাগে ব্যোমকেশ মুস্তফী "পিরালী ব্রাহ্মণ বিবরণ" প্রথম খণ্ডে কুলাচার্য নীলমণি ভট্টের কারিকা ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "সেই সময়" গ্রন্থে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় । এইসমস্ত গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পিরালী থাকের উৎপত্তির বিবরণ নিম্নরূপ: যশোর জেলার চেঙ্গুটিয়া পরগণার এক জমিদারের চার পুত্র- কামদেব, জয়দেব, রতিদেব ও শুকদেবের মধ্যে প্রথম দুই জন অর্থাৎ কামদেব ও জয়দেব স্থানীয় শাসক মামুদ তাহির বা পীর আলির অধীনে কর্মচারী ছিলেন । তাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটনাবহুল । পীর আলি নিজেও ছিলেন নব-ধর্মান্তরিত মুসলমান । এক সুন্দরী মুসলমান রমণীর প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হয়ে নিজের জাতধর্ম পরিত্যাগ করেন তিনি । একজন ব্রাহ্মণ সন্তান হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র প্রণয়ের জন্য ইসলাম গ্রহণ করেন । ঐ সময়ে হিন্দু ধর্ম নতুন কারুকে গ্রহণ করত না বরং কেউ একবার ধর্মান্তরিত হলে তাকেও আর গ্ৰহন করত না। ধর্মান্তরিত ব্রাহ্মণ সন্তান মামুদ তাহির যশোরের কাছে পিরল্যা নামের এক গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় তার মুসলমানী নামের এক সুন্দর রূপ পাওয়া যায়- 'পীর আলী'। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তিনি তাঁর প্রভু খান জাহান আলীর নেকনজরে পড়লেন ও বকশিশ হিসেবে পেলেন একটি পরগণা যার নাম চেঙ্গুটিয়া। কথায় বলা হত 'নওমুসলিম গোরু খাওয়ার যম'। পীর আলী নিজে যেমন গোমাংস ভক্ষণ করতেন তেমনি তার সাঙ্গোপাঙ্গদেরও গোমাংস ভক্ষণের উপকারিতা বিষয়ে নানা কথা শোনাতেন। রমজান মাসে একদিন পীর আলী একটি গন্ধরাজ লেবু নাকের কাছে এনে মাঝেমধ্যে শুঁকছেন। এই দৃশ্য কামদেব ও জয়দেবের দৃষ্টিগোচর হয় ও তারা পীর আলীকে বলেন যে নাকের কাছে গন্ধ শোঁকায় তার যে রোজা ভঙ্গ হয়ে গেল। কারণ তাদের ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ঘ্রাণেন অর্ধভোজনম। এই কথা শুনে পীর আলী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হলেন ও এর প্রতিশোধ গ্রহণের ফন্দি আঁটতে লাগলেন। একদিন পীর আলী তার সভায় সমস্ত কর্মচারীদের ডেকেছেন। সেখানে কামদেব ও জয়দেবও ছিল। হঠাৎ পীর আলী তাঁর অনুগামীদের কিছু ইশারা করলেন ও তারা সভাকক্ষে অনেকগুলো জ্বলন্ত উনুন নিয়ে এল। সেই উনুনে গোমাংস রান্না হচ্ছে। লোকশ্রুতি এই যে , সেইদিন পীর আলী একশত গো-বধ করেছিলেন। গোমাংসের গন্ধ পেয়ে অনেক হিন্দু নাকে কাপড় দিলেন,অনেকে সভা ছেড়ে পালালেন। পীর আলী চেপে ধরলেন কামদেব ও জয়দেবকে। তিনি তাদের বললেন যে তোমাদের শাস্ত্রমতে তোমাদের অর্ধেক ভোজন হয়ে গেছে এবং সেই অনুযায়ী তোমাদের জাত গেছে। এই বলে তিনি তাদের বাকি ভোজনটুকুও সেরে নিতে বললেন। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়ার পর কামদেবের নাম হয় 'কামালউদ্দিন'ও জয়দেবের নাম হয় 'জামালউদ্দিন' এবং উপহার হিসেবে পেল জায়গীর । কিন্তু ঘ্রাণেন অর্ধভোজনমের মতন হিন্দু পরিবারের অর্ধেক মুসলমান হলে বাকি অর্ধেকও নিস্কৃতি পায় না। কামদেব ও জয়দেবের আর দুই ভাই রতিদেব ও শুকদেবের প্রতি সমাজ খড়্গহস্ত হল ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে জল-অচল হল এবং পীর আলীর নামের সুবাদে এদের পরিবারের নামের সঙ্গে পিরালী অপবাদ যুক্ত হয়ে গেল। লোকে এদের পুরোপুরি ব্রাহ্মণ না বলে বলতে আরম্ভ করলো 'পিরালীর বামুন'। আত্মীয়স্বজনদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এই দুই ভাইয়ের মধ্যে রতিদেব গৃহত্যাগ করল। খুব সম্ভব তার কোনো পুত্র কন্যা ছিল না , তাই বৈরাগ্য গ্রহণ তার পক্ষে সহজ হয়েছিল। কিন্তু শুকদেব পড়লেন মহা বিপদে । তার নিজের বিবাহযোগ্যা কন্যা রয়েছে। তার এক ভগ্নীরও তখনো পর্যন্ত বিবাহ হয়নি। পরিবারে খুঁত লেগে আছে বলে এই দুই কন্যার বিবাহের জন্য কোনো পাত্র পাওয়া যায় না। তখন শুকদেব সমাজের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করল তাঁর শেষ অস্ত্র,যার চেয়ে অমোঘ অস্ত্র আর হয় না। টাকা দিয়ে সে কিনে ফেললো দুজন ব্রাহ্মণকে। শুকদেবের ভগ্নীর বিবাহ হল ফুলে গ্রামের মঙ্গলানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এবং তাঁর কন্যার বিবাহ হল রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ খুলনার পিঠাভোগ গ্রামের জগন্নাথ কুশারীর সঙ্গে। যৌতুক হিসেবে তারা পেল প্রচুর জমি ও ধন। পরবর্তীকালে শুকদেব,মঙ্গলানন্দ ও জগন্নাথের সন্তানসন্ততিরা সকলেই পিরালী ব্রাহ্মণ বলে চিহ্নিত হয়ে রইল।[1] [2] ব্যোমকেশ মুস্তফীর অনুমান, এই ঘটনা ঘটে পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনো সময়ে । [3][4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.