Loading AI tools
লিখিত ইতিহাসের পূর্ববর্তী কালসমূহের ইতিহাস উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মানুষের প্রাগিতিহাস (prehistory) হচ্ছে হোমিনিনদের দ্বারা আনুমানিক ৩৩ লক্ষ বছর পূর্বে পাথরের সরঞ্জাম বানানোর সময় থেকে লিখন পদ্ধতির আবিষ্কারের মধ্যবর্তী সময়কাল। প্রথম লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার হয় আনু. ৫৩০০ বছর আগে, কিন্তু বিস্তৃত পরিসরে লিখন পদ্ধতির গৃহীত হতে আরও হাজার বছর লেগে যায়, এবং কিছু মানব সংস্কৃতিতে ১৯ শতক অবধি লিখন পদ্ধতি ছিল না, আজও অনেক সংস্কৃতিতে কোন লিখন পদ্ধতি নেই। একারণে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে প্রাগৈতিহাসিক কাল বা প্রাগিতিহাসের সমাপ্তি ঘটে, এবং যেসব সমাজে খুব সম্প্রতি প্রাগিতিহাস সমাপ্ত হয়েছে সেসব সমাজে খুব কমই এই শব্দটির ব্যবহার হয়।
মেসোপটেমিয়ার সুমের, সিন্ধু সভ্যতা এবং প্রাচীন মিশর ছিল প্রথম সভ্যতা যারা তাদের নিজেদের ঐতিহাসিক নথিসমূহকে সংরক্ষণ করার জন্য লিপির আবিষ্কার করে। এটি প্রাথমিক ব্রোঞ্জ যুগের শুরুতেই ঘটে যায়। প্রতিবেশী সভ্যতাগুলো প্রথম এদেরকে অনুসরণ করে। অন্যান্য বেশিরভাগ সভ্যতাতেই লৌহ যুগের সময় প্রাগিতিহাসের সমাপ্তি ঘটায়। প্রাগিতিহাসকে শ্রেণিবিভাগ করার তিন-যুগ পদ্ধতি অনুসারে প্রাগিতিহাস গঠিত হয় প্রস্তর যুগ, এরপর ব্রোঞ্জ যুগ ও এরপর লৌহ যুগ নিয়ে। এই পদ্ধতিটি ইউরেশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার অনেক অঞ্চলের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু সেই সব অঞ্চলের ক্ষেত্রে এই যুগপদ্ধতিগুলোর ব্যবহার হয় না যেখানে ইউরেশীয় সংস্পর্শের ফলে শক্ত ধারু পৌঁছায়, যেমন আমেরিকাসমূহ, ওশেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, এবং সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার অনেক অংশ। প্রাক-কলম্বীয় সভ্যতার কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এই অঞ্চলগুলো ইউরেশীয়দের সংস্পর্শে আসার পূর্বে জটিল লিখন পদ্ধতির বিকাশ ঘটায়নি, এবং তাদের প্রাগিতিহাস তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক কালে সমাপ্ত হয়; উদাহরণস্বরূপ ১৭৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রাগিতিহাস সমাপ্ত হয় বলে সাধারণত ধরা হয়।
যে যুগে একটি সংস্কৃতি সম্পর্কে অন্যদের দ্বারা লেখা হয়, কিন্তু সেই সংস্কৃতি তার নিজস্ব লিখন পদ্ধতির বিকাশ ঘটায় নি, তাকে সেই সংস্কৃতির আদি ইতিহাস (protohistory) বলে। সংজ্ঞা অনুসারে,[1] মানব প্রাগিতিহাসের কোন লিখিত নথি নেই, তাই প্রাগৈতিহাসিক বস্তুসমূহের কার্বন ডেটিং করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১৯ শতকের পূর্বে ডেটিং করার স্পষ্ট পদ্ধতিসমূহ সুবিকশিত ছিল না।[2]
প্রাগিতিহাসের ধারণাটির উদ্ভব হয় আলোকিত যুগে প্রাচীন নিদর্শনাদি সংগ্রাহকদের কাজের মাধ্যমে যারা লিখন পদ্ধতির পূর্বের সমাজকে বর্ণনা করতে "আদিম" (primitive) শব্দটি ব্যবহার করতেন।[9] ইংরেজিতে "prehistory" শব্দটির প্রথম ব্যবহার দেখা যায় ১৮৩৬ সালে ফরেইন কোয়াটারলি রিভিউ-তে।[10]
প্রাক-মানব সময়কালের জন্য ভূতাত্ত্বিক সময় স্কেল, এবং মানব প্রাগিতিহাসের জন্য তিন-যুগ ব্যবস্থা চালু হয় ১৯ শতকের শেষের দিকে ইংরেজ, জার্মান ও স্কান্ডিনেভীয় প্রত্নতাত্ত্বিক, প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রাহক এবং নৃতাত্ত্বিকদের দ্বারা।[8]
প্রাগিতিহাসের তথ্যের প্রধান উৎস্য হচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব, কিন্তু কোন কোন শিক্ষায়তনিক প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের থেকে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অধিক ব্যবহার করেন।[11][12][13] এই দৃষ্টিভঙ্গিটি[কোনটি?] গভীর ইতিহাস এর অনুসারীগণ অনুসরণ করেন।
মানব প্রাগিতিহাস এর প্রাথমিক গবেষকগণ ছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিক এবং জীববিজ্ঞানগত বা শারীরিক নৃতাত্ত্বিকগণ যারা খনন, ভূতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক জরিপ, এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের দ্বারা প্রাক-সাক্ষর ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর প্রকৃতি ও আচরণকে উদ্ঘাটন ও ব্যাখ্যা করেন।[4] মানব জনসংখ্যা বংশানুবিদ বা হিউম্যান পপুলেশন জেনেটিসিস্ট এবং ঐতিহাসিক ভাষাতাত্ত্বিকগণও এই প্রশ্নগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছেন।[3] সাংস্কৃতিক নৃতাত্ত্বিকগণ সহায়তা করেছেন সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার প্রসঙ্গ প্রদান করে, যার মাধ্যমে মানব উদ্ভবের বিষয়গুলো জনসংখ্যার মধ্যে প্রবেশ করে, যার ফলে মানব প্রাগৈতিহাসিক প্রসঙ্গে আসা যেকোন বিষয়কে বিশ্লেষণ করা যায়।[3] তাই প্রাগিতিহাস সংক্রান্ত উপাত্তসমূহ পাওয়া গেছে বিস্তৃত পরিসরের প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসমূহ থেকে, যেমন জীবাশ্মবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রত্নজ্যোতির্বিজ্ঞান, তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, আণবিক বংশানুবিদ্যা, পরাগবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়।
মানব প্রাগিতিহাস কেবল এর কালনিরূপণবিদ্যা অনুযায়ী ইতিহাস থেকে ভিন্ন নয়, একই সাথে এটি এইদিক থেকেও ইতিহাসের থেকে পৃথক যে, এটি ইতিহাসের মত নামযুক্ত জাতি ও ব্যক্তি নিয়ে নয়, বরং প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতিসমূহ নিয়ে আলোচনা কএ। এটি লিখিত নথি নয়, বরং বস্তুগত প্রক্রিয়াসমূহ, ধ্বংসাবশেষ ও হস্তনির্মিত বস্তু নিয়ে কাজ করে। প্রাগিতিহাস নামবিহীন বলে কখনও কখনও প্রাগৈতিহাসিকদের ব্যবহৃত সংজ্ঞায়িত আধুনিক প্রমাণ শব্দগুলো যেমন , নিয়ান্ডারথাল, লৌহ যুগ বিতর্কের মুখে পড়ে।
প্রস্তর যুগ এর ধারণাটি পৃথিবীর বেশিরভাগ অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্বেই কার্যকরী, যদিও আমেরিকা অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্বে এটিকে ভিন্ন নামে ডাকা হয়, এবং এটি প্রস্তরীয় স্তর (Lithic stage), অথবা কখনও প্রত্নভারতীয় (Paleo-Indian) যুগ দিয়ে শুরু হয়। নিচে বর্ণিত উপবিভাগসমূহ ইউরেশিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, এবং সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ধারাবাহিকভাবে ব্যবহৃত হয়না।
এই যুগে প্রথম পাথরের তৈরি সরঞ্জামের ব্যবহার শুরু হয়। পুরাপ্রস্তর যুগ হচ্ছে প্রস্তর যুগের সর্বপ্রথম সময় কাল।
পুরাপ্রস্তর যুগের প্রথম অংশকে বলা হয় নিম্ন পুরাপ্রস্তর যুগ, যা হোমো সেপিয়েন্স এর উদ্ভবের পূর্বেই শুরু হয়, এই সময়ে হোমো হ্যাবিলিস ও সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতিগুলো ছিল, আর তারা প্রায় ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে প্রাথমিক পাথরের সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করত।[14] নিম্ন পুরাপ্রস্তর যুগে মানুষের দ্বারা আগুনের নিয়ন্ত্রণের সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো অনিশ্চিত, এবং এটায় সীমিত সংখ্যক শিক্ষায়তিক সমর্থন রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমর্থিত দাবিটি এই যে, হোমো ইরেক্টাস বা হোমো এরগ্যাস্টার আজ থেকে ৭৯০,০০০ থেকে ৬৯০,০০০ বছর পূর্বে ইজরায়েলের ব্নট ইয়াকভ সেতুতে (ডটারস অফ জ্যাকব সেতু) প্রথম আগুনের প্রচলন ঘটায়। আগুনের ব্যবহারের ফলে মানুষেরা রান্না করা শেখে, উষ্ণতা লাভ করে, এবং রাতে আলোকের উৎস্য পায়।
প্রাথমিক হোমো সেপিয়েন্স এর উদ্ভব হয় দুই লক্ষ বছর পূর্বে, যার ফলে মধ্য পুরাপ্রস্তরযুগের সূত্রপাত হয়। শারীরগত পরিবর্তনসমূহ ইঙ্গিত করে, মধ্য পুরাপ্রস্তরযুগে আধুনিক ভাষিক দক্ষতারও উদ্ভব ঘটে।[15] মধ্য প্রস্তরযুগীয় সময়ে, মানুষের আগুনের ব্যবহারের প্রথম স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। জাম্বিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে দগ্ধ হাড় ও কাঠ পাওয়া গেছে যেগুলোকে ডেট করে দেখা গেছে আজ থেকে ৬১ হাজার বছর পুরনো। পদ্ধতিগত মৃতদেহ সৎকার, সংগীত, প্রাথমিক শিল্পকলা, উন্নত বহুমুখী পাথুরে সরঞ্জাম হচ্ছে মধ্য পুরাপ্রস্তর যুগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
সমগ্র পুরাপ্রস্তরযুগ ধরে, মানুষেরা সাধারণত যাযাবর শিকারী সংগ্রাহক হিসেবে জীবন যাপন করত। শিকারী-সংগ্রাহক সমাজগুলো খুব ছোট ও সমানাধিকারী হত[16], যদিও যেসব শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পদ বা অগ্রসর খাদ্য-সংগ্রহ পদ্ধতি ছিল সেগুলো জটিল সামাজিক কাঠামো যেমন সরদারি প্রথা (Chiefdom) এবং সামাজিক স্তরবিন্যাস সহ স্থায়ী জীবনধারার বিকাশ ঘটায়।[17] এইসময়ে অধিক দূরবর্তী যোগাযোগের প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকতে পারে, যেমনটা অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের "রাজপথ" সংলাইন এর ক্ষেত্রে দেখা যায়।[18]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.