Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ফেরদৌস বাগান (ফার্সি: باغ فردوس বাগ-ই-ফেরদৌস) ইরানের উত্তর তেহরান শহরের শেমিরান জেলার তাজরিশ অঞ্চলে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক কমপ্লেক্স। কাজার রাজবংশের রাজত্বকালীন সময়ে কমপ্লেক্সটি নির্মিত। এটি দুটি প্রাসাদ নিয়ে গঠিত যার মধ্যে প্রাক্তনটি ক্ষয়ে গেছে।[1] বর্তমান প্রাসাদটি ২০০২ সাল থেকে ইরানের চলচ্চিত্র জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।[2][3]
ফেরদৌস বাগান | |
---|---|
বাগ-ই-ফেরদৌস | |
অবস্থান | শেমিরান (উত্তর তেহরান), ইরান |
স্থানাঙ্ক | ৩৫.৭২৬১° উত্তর ৫১.৩০৮৬° পূর্ব |
আয়তন | ২.৬ মাইল (৪.২ কিমি) |
প্রতিষ্ঠিত | ১৮শ শতক |
প্রতিষ্ঠাতা | কাজার রাজবংশ |
আচেমেনিড সাম্রাজ্যের সময়, প্যারিডাইজা (আভেস্তান) শব্দটি দ্বারা সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে নির্মিত বিস্তৃত এই বাগানকে বোঝায়।[4] এটি প্রোটো-ইরানি প্যারিডাইজা থেকে উদ্ভূত, যার আক্ষরিক অর্থ "বৃত্তাকার সীমানা"। আধুনিক ফার্সি ফারদৌস (فردوس) এবং ফারদিস (پردیس) একই শব্দ থেকে উদ্ভূত, যা গ্রিক ভাষায় প্যারাডিসোস (παράδεισος) হিসাবে এসেছে এবং ইংরেজিতে হ্যাভেন রূপে প্রবেশ করেছে।
অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান ও দেহখোদা অভিধান অনুসারে, খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে ব্যাবিলনে ইহুদিদের আগমনের পর এই শব্দটি পার্দেস (פַּרְדֵּס), হিসাবে হিব্রু ভাষায় প্রবেশ করেছিল। এই আগমনের পূর্ববর্তী পুরাতন নিয়মের অংশগুলিতে, "স্বর্গ" এবং "নরক" এর ধারণাগুলি নির্দিষ্ট নয়; শুধুমাত্র pārdēs শব্দটি রয়েছে, যার মূল অর্থ "বাগান" এবং "ফলবাগিচা", আধ্যাত্মিক অর্থে সমৃদ্ধ হয়েছে যা এই শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে।
দেহখোদা উল্লেখ করেছেন যে পার্দেস হিব্রু গান শব্দের প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ "অনন্ত সুখের বাগান"। তিনি আরও বলেছেন যে কুরআনে ফিরদাউস শব্দটি ২ বার ব্যবহৃত হয়েছে, যা ইহুদি এবং খ্রিস্ট ধর্মেও এ ধরনের শব্দ রয়েছে।
বাগ-ই-ফেরদৌস এবং এর প্রাসাদ দুইটি কখন নির্মিত হয়েছিল তার সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কোনো লিখিত তথ্য পাওয়া যায় না। কমপ্লেক্সটির উৎপত্তি কাজার রাজবংশের মোহাম্মদ শাহের (১৮০৮-১৮৪৮) শাসনামলে, যিনি তাজরিশে মোহাম্মদী নামে একটি প্রাসাদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৮৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি মারা যান এবং অসমাপ্ত কাঠামোটি পরবর্তীকালে অব্যবহৃত থেকে যায়।[5][6]
পরবর্তীকালে, মোহাম্মদ শাহের ঘনিষ্ঠ দরবারী হোসেন আলী খান (মোয়ায়ের ওল মামালেক) একই এলাকার মধ্যে একটি দ্বিতল কাজর-শৈলীর প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নাসের এদ দীন শাহের শাসনামলে (১৮৪৮-১৮৯৬), হোসেন আলী খানের পুত্র দাস্ত-আলি খানের (নেজাম ওদ দৌল) কাছে ঘেরের মালিকানা হস্তান্তর করা হয়। তিনি কমপ্লেক্সটি সংস্কার করেন এবং এর নামকরণ করেন ফেরদৌস। পরে, দাস্ত-আলি খানের পুত্র এবং নাসের এদ দীন শাহের জামাতা দাস্ত-মোহাম্মদ খান ঘেরের দক্ষিণে একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করেন। তিনি এই নির্মাণে এসফাহন এবং ইয়াজদের স্থপতিদের কারিগর ব্যবহার করেন এবং এটির নাম দেন রাস্ক ই বেহেস্ত, যার অর্থ "স্বর্গের ঈর্ষা"। বাগানের পরবর্তী মালিক, মির্জা হোসেন তেহরানি, উত্তর ভবনটি ভেঙে ফেলেন এবং নেজাম ওদ দৌল যে গাছগুলি রোপণ করেছিলেন তা উপড়ে ফেলেন।[1] তেহরানির মৃত্যুর পর, বাগানটি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, যারা একের পর এক তাদের অংশ বিক্রি করে দেয়। ১৩৮১ হিজরিতে, মোজাফফর আদ-দীন শাহের শাসনামলে, আমিন-ও-সুলতান আতাবকের ভাই ইসমায়েল খান আমিন-ওল-মামালেক সম্পত্তিটি ক্রয় করেন এবং আবার বাগানটি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন। তিনি বাগানের পশ্চিম প্রান্তে একটি অভ্যন্তরীণ ভবন এবং একটি গোসলখানা নির্মাণ করেছিলেন। তবে তিনিও বাগানটিকে উপযুক্ত অবস্থায় রাখতে ব্যর্থ হন।[1]
কমপ্লেক্সটি বেশকয়েকটি হাত পরিবর্তিত হয় এবং এর পুরানো প্রাসাদটি শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যায়। অবশিষ্ট কাঠামোটি খালাতবাড়ি আমিন-ওল-মোলকের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে সিপাহসালার মোহাম্মদ ওয়ালি খান টোনেকাবোনি ক্রয় করেন,[1] যিনি ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় গিলন এবং মজান্দারন প্রদেশের সংবিধানবাদী বিপ্লবী বাহিনীর নেতা ছিলেন। তিনি এটিকে পুনরায় বসবাসের উপযোগী করে সমৃদ্ধ করেন। তিনি কমপ্লেক্সের ভূগর্ভস্থ খালটি পেয়েছিলেন এবং বাগানের চারপাশে বেশকয়েকটি পুল এবং ফোয়ারা তৈরি করেছিলেন[1] যা শুরুর বছরগুলিতে বাগানটিকে জল সরবরাহ করত। বাগানের বর্তমান ফটকটিও সেই সময়ের নির্মিত। মোহাম্মদ ওয়ালি খান ট্রেড হাউসের কাছে ঋণগ্রস্থ ছিলেন এবং সময়মতো টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে পাওনাদার ঋণ দাবি করার জন্য মামলাটি আদালতে নিয়ে যান। ফলস্বরূপ, বাগান এবং ভবনটির মালিকানা মোহাম্মদ ওয়ালি খানের কাছ থেকে টোমানিয়ানদের কাছে চলে যায়।[1]
পরবর্তীতে তৎকালীন ইরান সরকার ট্রেড হাউসের ঋণের জন্য বাগানটি বাজেয়াপ্ত করে এবং ৫ বছরের কিস্তি পরিকল্পনায় প্রতি মিটারে ২ টোমান হারে জমি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের কাছে বিক্রি করে। ১৯৩৭ সালে, ইরানের তৎকালীন বিজ্ঞানমন্ত্রী আলী-আসগর হেকমতের নির্দেশে বাগানের বিদ্যমান অংশটি ক্রয় করা হয় এবং ভবনটি সংস্কার করে একটি বিদ্যালয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৫৭ সালে, বাগ-ই ফেরদৌসকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তেহরানের পৌরসভার কাজে ব্যবহার করা হয়। স্থানটি সংস্কার করে শিল্প ও সংস্কৃতি উদযাপনের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্তের পর, ফারাহ পাহলভি ফাউন্ডেশন পৌরসভার কাছ থেকে সম্পত্তিটি কিনে নেয় এবং ইরানের রেডিও ও টেলিভিশন সংস্থাকে বাগান কমপ্লেক্সের মেরামত ও পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব দেয়। তারপর থেকে, বাগানটি শৈল্পিক কার্যকলাপের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর, ২০০২ সাল পর্যন্ত, এটি সংস্কৃতি ও ইসলামী নির্দেশনা মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি হয়ে ওঠে এবং বেশকয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিশাবে এটিকে ব্যবহার করা হয়। ২০০২ সাল থেকে, বাগ-ই-ফেরদৌস বাগান কমপ্লেক্স ইরানের চলচ্চিত্র জাদুঘর হিশেবে পরিচালিত হচ্ছে। জাদুঘরে ইরানের শতাব্দী প্রাচীন চলচ্চিত্র শিল্পের সরঞ্জাম, ছবি এবং পোস্টারগুলির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হয়েছে। কমপ্লেক্সে একটি সিনেমা ক্যাফে রয়েছে।[1]
কমপ্লেক্সের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শৈলীর মধ্যে রয়েছে এর বারান্দা, দেয়াল, কলামের বিস্তারিত ফুলের প্লাস্টারওয়ার্ক এবং খিলানযুক্ত কাঠের ফ্রেমযুক্ত জানালা।
ফেরদৌস গার্ডেন, ৫ ও'ক্লক ইন দ্য আফটারনুন (২০০৫), সিয়ামক শায়েঘি রচিত, প্রযোজিত ও পরিচালিত একটি ইরানি চলচ্চিত্র, যার প্রধান ভূমিকায় রেজা কিয়ানিয়ান, লাদান মোস্তোফি এবং আজিটা হাজিয়ান অভিনয় করেছেন। জে যেখানে পাবলিক পার্ক থেকে মূল প্রাসাদটি দৃশ্যায়ন করা হয়েছে।[7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.