Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বনায়ন হলো বন তৈরি বা এক সারি গাছ লাগানো যেখানে পূর্বে কখনো গাছ ছিল না।[1]
অনেক সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা বনায়ন তৈরিতে সরাসরি অংশ গ্রহণ করছে, যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে।
মাঝেমধ্যে বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় যা গাছ লাগানোকে সহজ ও দ্রুত করে দেয়।
কিছু জায়গাতে, পরিবেশজনিত কারণে বন তৈরি করার জন্য সেগুলোতে বিশেষ পরিচর্চা করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে, শুষ্ক এলাকায়, যখন একবার বনকে ধ্বংস করা হয়, মাটি খুবই শুকিয়ে যায় এবং নতুন গাছ বেড়ে উঠার জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আরেকটি বিষয় হলে মাত্রাতিরিক্ত পশুচারণ, বিশেষ করে ভেঁড়া, গরু। এসব কিছু মিলে মরুকরণ দেখা দিতে পারে এবং কর্ষণযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস পায়; মাটি ছাড়া, বন বেড়ে উঠতে পারেনা। কিছু গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে, বন উজাড়ের কারণে দুরজং এর সৃষ্টি হগে পারে যা পানি প্রবেশ ও মূলের বৃদ্ধির জন্য মাটিতে বন্ধ করে দিতে পারে। কিছু এলাকায়, পুনরায় বন তৈরি করা অসম্ভব কারণ মানুষ সেগুলো ব্যবহার করছে। অন্যান্য এলাকায়, দুরজংকে ধ্বংসের জন্য যন্ত্রের প্রয়োজন, যত্ন এবং নিয়মিত পানি দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে, আবার বিশেষ প্রতিরক্ষা যেমন বেড়া দেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।
বিভিন্ন পরীক্ষায় বলা হয়ে থাকে বন বৃষ্টিকে আকর্ষিত করে এবং এটি থেকে বুঝা যায় কেন পশ্চিম আফ্রিকার মতো পৃথিবীর কিছু দেশে বারবার কেন খড়া দেখা দেয়। নাসার জেট পরিচালনা ল্যাবরেটরির ক্যারোল রাসমুসেনের একটি নতুন গবেষণা থেকে প্রথম জানা যায়, দক্ষিণ আমাজন অরণ্য গাছের পাতার জলীয়বাষ্প দ্বারা এটির বর্ষাকালকে নিয়ন্ত্রণ করে।[2] এই গবেষণা থেকে বুঝা যায় বন উজাড় কম বৃষ্টিপাতের সাথে সম্পৃক্ত। ডগলাস শেল এবং ড্যানিয়েল মুর্দিয়ার্সোর করা নতুন গবেষণা অনুযায়ী পূর্বে যা চিন্তা করা হতো তার থেকে বন বৃষ্টিপাতে বড় ভূমিকা পালন করে। এটি বিবরণ করে কীভাবে বনাঞ্চল ব্যাপক পরিমাণে জলীয়বাষ্প উৎপাদন করে।[3] ম্যাকারিভা এবং গর্শকোভ একটি প্রকল্প করেছেন যা বিবরণ করে কীভাবে বনাঞ্চল আর্দ্র বায়ুকে আকর্ষিত করে এবং গাছ দ্বারা ঢাকা অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।[4]
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এডেলেইডে, (২০১৬ সালের জুন মাস অনুযায়ী ১.৩ মিলিয়ন লোকের একটি শহর)[5] প্রিমিয়ার মাইক রান (২০০২ থেকে ২০১১) ২০০৩ সালে শহরের ভেতর ৩০০টি প্রকল্প এলাকায় ২০১৪ সালের মাঝে ৩০ লক্ষ গাছ ও গুল্ম লাগানোর একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। এডেলেইডের হাজারটা নাগরিক বিভিন্ন এলাকায় যেমন, পার্ক, বিদ্যালয়, তটরেখা, জলপ্রপাত প্রভৃতিতে গাছ লাগানোর দিন অংশগ্রহণ করে। বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে শুধুমাত্র স্থানীয় গাছগুলোই লাগানো হয়। তিনি বলেন এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল শহরকে সুন্দর করা এবং আরও বাসযোগ্য করে তুলা; বাতাস এবং পানির মান উন্নত করা এবং এক বছরে ৬০০,০০০টন কার্বন ডাই-অক্সাইড কমিয়ে এডেলেইডে গ্রীনহাউজ গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করা।[6]
এখানে অতিরিক্তমাত্রায় আমাজনে বন উজাড় চলছে।
ব্রাজিলেও বনায়নের জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ব্রাজিলের প্যারাতে করা একটি বনায়ন প্রকল্প অনুসারে, ২০১৩ সালের মাঝে বন উজাড়িত জায়গাতে ১০০ কোটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।[7]
ইতিহাস থেকে জানা যায় চীনের বেশিরভাগ গাছপালায় ঢাকা জায়গাতে বন উজাড় হয়ে গিয়েছে। যদিও চীন পুনর্বনায়ন তৈরিতে লক্ষ্য তৈরি করেছে, কিন্তু এই লক্ষ্যগুলো ৮০ বছরের অধিক সীমানায় স্থাপিত এবং ২০০৮ সালের মাঝে এটি তেমন পূর্ণ হয়নি। চীন এই সমস্যাগুলো দূর করতে চীনের সবুজ প্রাচীরের মতো কিছু প্রকল্প করেছে, যেটির উদ্দেশ্য হলো ব্যাপক পরিমাণ বন তৈরি এবং গোবি মরুভূমির বিস্তৃতি বন্ধ করা।
১৯৮১ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয় যে প্রত্যেক স্কুল শিক্ষার্থী যাদের বয়স ১১ বছরের উপরে তাদেরকে প্রতিবছর কমপক্ষে একটি গাছ লাগাতে হবে। যার কারণে, পৃথিবীর যেকোন দেশ বা অঞ্চল থেকে চীনে বনায়নের হার সবচেয়ে বেশি, ২০০৮ সালে বনাঞ্চলের পরিমাণ ছিল ৪৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার।[9] যদিও, আন্তর্জাতিক গড় থেকে মোট জমির হিসেবে বনাঞ্চলের পরিমাণ অনেক কম।[10]
কার্বন ব্রিফের মতে, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মাঝে চীনই সবচেয়ে বেশি গাছ লাগিয়েছিল। কারণ ১৯৯৯ সালে চীন সরকার $১০০ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ করে বনায়নের জন্য, যা দিয়ে ১২টি প্রদেশে ৩৫বিলিয়নের বেশি গাছ লাগানো হয়। ২০১৫ সালে, চীনের বনাঞ্চল তৈরি হয় ৭৯এম হেক্টর জমি।
ইউরোপের বেশিরভাগ ঐতিহাসিক বনাঞ্চল উজাড় করা হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে বনায়নের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কৃষকদের অর্থ প্রদান করে আসছে, এটি কৃষকদের কৃষিজমিকে পুনরায় বনে পরিণত করতে এবং সেই বনের ব্যবস্থাপনার জন্য খরচ দিয়ে থাকে। ১৯৯৩ এবং ১৯৯৭ সালের মাঝে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই নীতির কারণে ৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে পুনর্বনায়ন করা সম্ভব হয়েছে। ২০০০ এবং ২০০৬ সালের মাঝে আরেকটি দ্বিতীয় কার্যক্রমে, ১,০০০বর্গ কিলোমিটার জমিতে বনায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এই ধরনের তৃতীয় কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালে। এই কার্যক্রমগুলোর জন্য ইউরোপে বনাঞ্চল প্রতি বছর ৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার মতে, ১৯৯০-২০০৫ সালের মাঝে ইউরোপের স্পেনে বনায়নের হার তৃতীয় দ্রুততম ছিল, যা ছিলো যথাক্রমে আইসল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের পরে। ঐ বছরগুলোতে, সর্বমোট ৪৪,৩৬০ বর্গ কিলোমিটার বনায়ন করা হয় এবং বনাঞ্চলের পরিমাণ ১৩,৫ থেকে ১৭,৯ মিলিয়ন হেক্টরে উন্নিত হয়। ১৯৯০সালে, স্প্যানিশ অঞ্চলের ২৬.৬% এলাকা বনাঞ্চল ছিল। ২০০৭সাল অনু্যায়ী, এই পরিমাণ বেড়ে ৩৬.৬% হয় যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাঝে পঞ্চম বৃহত্তম বনাঞ্চল এলাকা।
সারা পৃথিবীর তুলনায় ইরানে সবচেয়ে কম বনাঞ্চল রয়েছে যা হলো মোট জমির প্রায় ৭ শতাংশ। প্রায় ৬০ লক্ষ্য বনের দ্বারা এই মান কমে গিয়েছে যাদের মাঝে আছে ওক, আলমন্ড এবং পেস্তা বাদাম। অন্যান্য উর্বর উষ্ণ অঞ্চলের থেকে এখানে মাটির নিম্নস্তরের কারণে, বৃহৎ আকারে বনায়ন করা কষ্টকর।
২৪০ মিলিয়নের অধিক গাছ নিয়ে, ব্যাপক বনায়ন উদ্যোগে ইসরায়েলই প্রথম দুটি দেশের একটি দেশ যেটি ২১শতাব্দীতে এই পরিমাণ গাছ লাগাতে পেরেছে। বেশিরভাগ ইসরায়েলের বন তৈরি হয়েছে ইহুদি জাতীয় তহবিল দ্বারা করা ব্যাপক বনায়ন উদ্যোগ থেকে।
সমালোচকরা তর্ক করেন যে পশ্চিম তীরে থাকা বেশিরভাগ ইহুদি জাতীয় তহবিলের জমি ফিলিস্তিন শরণার্থীদের থেকে বাজেয়াপ্ত করা, এবং সেজন্যই ইহুদি জাতীয় তহবিল এই এলাকাগুলোতে কোন কিছু করতে পারবেনা। শল এফরাইম কোহেন দাবি করেন যে গাছগুলো নিষিদ্ধ এলাকায় লাগানো হয়েছে। সুজান ন্যাথান লেখেন ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর পরিত্যক্ত আরব গ্রামে বনগুলো লাগানো হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে, নতুন শহর রাওয়াবির (রমল্লাহর উত্তরে) তীরে তৈরি হওয়া বনাঞ্চলের জন্য ইহুদি জাতীয় তহবিল ফিলিস্তিন সরকারকে ৩,০০০ উদ্ভিদের চারা প্রদান করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে বনায়ন প্রকল্প শুরু হয়, যখন বনগুলো কড়িকাঠের জন্য পরিষ্কার ছিল। এবং এটি করা হয় প্রবাসী কৃষকদের আকর্ষণ করতে তৃণভূমি তৈরির জন্য। যখন তৃণভূমিগুলো পরিত্যক্ত করা হয় তখন জাপানে বনের জন্য নতুন পরিকল্পনা ব্যবস্থা উত্থাপন করা হয়।
বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশ যেগুলোর সীমানা সাহারা মরুভূমির সাথে রয়েছে সেগুলো মহাসবুজ প্রাচী প্রকল্পে কাজ করছে। $৮-বিলিয়নের এই প্রকল্প ২০৩০ সালের মাঝে ১০০ মিলিয়ন হেক্টর অনুর্বর জমিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আমার উদ্যোগ নিয়েছে।
তাছাড়া উত্তর আফ্রিকাতে, সামুদ্রিক পানি গ্রীনহাউজের সাথে সাহারা বন প্রকল্পও প্রস্তাব করা হয়েছে। সেনেগালের মতো কিছু দেশেও মরুকরণ প্রতিরোধ করতে কয়েকটি প্রকল্প উন্মোচন করা হয়েছে। ২০১০ সাল অনুযায়ী, আফ্রিকান নেতারা কার্যকারীতা বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদকে একত্রিক করা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাছাড়া, অন্যান্য প্রকল্প যেমন নিগারের কিটা প্রকল্প পূর্বে উন্মোচন করা হয়েছিল এবং সেটি মরুদ্যানের ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল।
যেহেতু গত কয়েক হাজার বছরে তুর্কিতে বন উজাড় করা হয়, কিছু লেখক এই ধরনের বনের উৎপত্তিকে "বনায়ন" এবং কিছু লোক "পুনর্বনায়ন" বলে থাকে। তুর্কি শব্দ "ağaçlandırma" দ্বারা এই দুই বনের প্রত্যেকটিকেই বুঝাতে পারে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.