বিদ্যাসাগর সেতু বা দ্বিতীয় হুগলি সেতু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে হুগলি নদীর ওপর অবস্থিত একটি সেতু। এর মাধ্যমে হাওড়া ও কলকাতা শহর দুটির মধ্যে যোগাযোগ রক্ষিত হচ্ছে। সেতুটি সব রকম যানবাহনের ক্ষেত্রেই টোল সেতু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮২২.৯৬ মিটার। এটি ভারতের দীর্ঘতম ঝুলন্ত (কেবল-স্টেইড) সেতু এবং এশিয়ার দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুগুলির মধ্যে একটি। সেতুটি নির্মাণ করতে মোট ৩৮৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর সেতুটির উদ্বোধন করা হয়।[1][2] হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই সেতুটি নির্মিত হয়েছিল।[3]
বিদ্যাসাগর সেতু দ্বিতীয় হুগলি সেতু | |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ২২°৩৩′২৫″ উত্তর ৮৮°১৯′৪০″ পূর্ব |
বহন করে | দুটি পথ, প্রতি পথে তিনটি সবরকম যানবাহন চলাচলের উপযোগী লেন |
অতিক্রম করে | হুগলি নদী |
স্থান | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ |
দাপ্তরিক নাম | বিদ্যাসাগর সেতু |
অন্য নাম | দ্বিতীয় হুগলি সেতু |
রক্ষণাবেক্ষক | হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স |
বৈশিষ্ট্য | |
নকশা | ঝুলন্ত সেতু |
মোট দৈর্ঘ্য | ৮২২.৯৬ মিটার (২,৭০০ ফু) |
প্রস্থ | ৩৫ মিটার (১১৫ ফু) |
দীর্ঘতম স্প্যান | ৪৫৭.২ মিটার (১,৫০০ ফু) |
নিন্মে অনুমোদিত সীমা | ২৬ মিটার (৮৫ ফু) |
ইতিহাস | |
চালু | ১০ অক্টোবর, ১৯৯২ |
পরিসংখ্যান | |
টোল | হ্যাঁ, টোল সেতু |
অবস্থান | |
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত রবীন্দ্র সেতুর (হাওড়া ব্রিজ) ১২ কিলোমিটার (৭.৫ মা) দক্ষিণে অবস্থিত বিদ্যাসাগর সেতু হুগলি নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সেতু। উনিশ শতকের বাঙালি শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে।[1][3][4]
প্রকৃতপক্ষে এই সেতু কলকাতা-সন্নিকটস্থ গঙ্গাবক্ষে স্থিত অপর দুই সেতু রবীন্দ্র সেতু ও বিবেকানন্দ সেতুর সহযোগী সেতু হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। বিদ্যাসাগর সেতু একটি কেবল-স্টেইড বা ঝুলন্ত সেতু। এর প্রধান বিস্তার ৪৫৭ মিটারের কিছু বেশি এবং ডেকের প্রস্থ ৩৫ মিটার। এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭৮ সালে এবং সেতুটির উদ্বোধন হয় ১০ অক্টোবর, ১৯৯২, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রয়াণ শতবর্ষে। সেতুর তদারককারী সংস্থা হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি)। তবে সেতু নির্মাণ করেছিল বিবিজে নামে ব্রেথওয়েট, বার্ন ও জেশপ নামে তিনটি সংস্থার একটি যৌথ গোষ্ঠী।
ইতিহাস
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশের বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ও জনসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। হাওড়া ও কলকাতা শহর দুটির মধ্যে হুগলি নদীর ওপর সেই সময় একটি মাত্র সেতুই ছিল রবীন্দ্র সেতু বা হাওড়া ব্রিজ। এই সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে, নদীর ওপর একটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়। এমন একটি সেতুর পরিকল্পনা করা হয়, যে সেতুটি নিকটস্থ জাতীয় সড়কের মাধ্যমে মুম্বই, দিল্লি ও চেন্নাই শহর তিনটিকে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করতে পারবে।[4]
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এই সেতুর শিলান্যাস করেন।[5] যদিও এই ঝুলন্ত সেতু (সেই সময়ে এই সেতুটি একই ধরনের সেতুগুলির মধ্যে বিশ্বের দীর্ঘতম স্প্যান ব্রিজ ছিল) নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই। কলকাতার নদীতীরে একটি কূপ খননের মাধ্যমে।[6] সেতুটি সম্পূর্ণ হতে মোট ২০ বছর (অবশ্য তার মধ্যে সাত বছর কোনো নির্মাণকাজই হয়নি) সময় লেগেছিল। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সভাপতিত্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমহা রাও সেতুটির উদ্বোধন করেন।
বৈশিষ্ট্য
বিদ্যাসাগর সেতু একটি মাল্টি-কেবল স্টেইড [১৪৪টি (৩৮x৪) কেবল] সেতু। ১২৭.৬২ মিটার (৪১৮.৭ ফু) লম্বা দুটি ইস্পাত-নির্মিত পাইলন কেবলগুলিকে ধরে আছে। সেতুটিতে দুটি ইস্পাতের কাঠামোযুক্ত কংক্রিট ডেক রয়েছে। ডেকের দুটি ক্যারেজওয়ের মোট প্রস্থ ৩৫ মিটার (১১৫ ফু)। সেতুটিতে মোট তিনটি লেন এবং দু-পাশে ১.২ মিটার (৩ ফু ১১ ইঞ্চি) প্রস্থবিশিষ্ট ফুটপাত রয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই মানুষের নিরাপত্তার কারণে বিদ্যাসাগর সেতুর ফুটপাত দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত নিষিদ্ধ আছে। রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার্থে কলকাতার দিকে উত্তরের ইস্পাত পাইলনের ধার ঘেঁষে একটি স্বয়ংক্রিয় উন্নায়ক বা লিফট প্রথম থেকেই তৈরি করা হয়েছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের কার্যালয় কলকাতার 'মহাকরণ' থেকে হাওড়া শিবপুরের 'নবান্ন'তে স্থানান্তরিত হওয়ায় বিদ্যাসাগর সেতুর গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। ডেকটি মূল ৪৫৭.২০ মিটার (১,৫০০.০ ফু) দীর্ঘ বিস্তার এবং দু-পাশের প্রতিপাশের ১৮২.৮৮ মিটার (৬০০.০ ফু) বিস্তারের ওপর রয়েছে। এটিকে ধরে আছে সমান্তরাল তারের কেবল। সেতুটির নকশা করেছিল শ্লেইচ বার্গারম্যান অ্যান্ড পার্টনার, নকশা পরীক্ষা করে ফ্রিম্যান ফক্স অ্যান্ড পার্টনার ও বৃহৎ শিল্প নিগম লিমিটেড। সেতুটি নির্মাণ করে গ্যামন ইন্ডিয়া লিমিটেড।[2][7]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.