বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ
From Wikipedia, the free encyclopedia
বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ হলো একটি অপবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস যাতে মানব প্রজাতিকে জৈবিকভাবে "বর্ণ" নামে বিভিন্ন স্বতন্ত্র ট্যাক্সায় বিভক্ত করা যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়।[1][2][3] এটিকে কখনও কখনও জৈবিক বর্ণবাদ নামেও অভিহিত করা হয়। বর্ণবাদ, বর্ণগত নিকৃষ্টতা বা বর্ণগত শ্রেষ্ঠত্বকে সমর্থন বা ন্যায্যতা প্রদান করা জন্য এই অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।[4][5][6] ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ের কিছুটা আগে, বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ ধারণাটি গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে এটিকে আর বৈজ্ঞানিক হিসাবে বিবেচনা করা হয় না।[5][6] বিভিন্ন গবেষণা মডেল, মানসিক বৈশিষ্ট্য বা অন্যান্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে জৈবিকভাবে পৃথক গোষ্ঠীতে মানবজাতির বিভাজনের ধারণাতে যারা বিশ্বাস করে বা সমর্থন সমর্থন করে তারা এটিকে বর্ণবাদের বদলে বর্ণত্ববাদ, বর্ণ বাস্তববাদ বা বর্ণ বিজ্ঞান হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন। আধুনিক বৈজ্ঞানিক মতামত এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আধুনিক বংশাণুবিজ্ঞান গবেষণার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। [7]
বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ নৃবিজ্ঞান (উল্লেখযোগ্যভাবে শারীরিক নৃতত্ত্ব), ক্র্যানিওমিতি, বিবর্তনীয় জীববিদ্যা, এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক শাখা বা অপ-শাখাগুলোকে নৃতাত্ত্বিক টাইপোলজির প্রস্তাবের মাধ্যমে ভুলভাবে প্রয়োগ করে, ভুল ধারণা দেয় বা বিকৃত করে যাতে মানব জনসংখ্যাকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন মানব জাতিতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় এবং এসব শ্রেণির মধ্যে কিছু শ্রেণিকে উৎকৃষ্ট বা কোনোটিকে অন্যদের থেকে নিকৃষ্ট বলে ধরা হয়। ১৬০০-এর দশক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ সাধাণভাবেই প্রচলিত ছিল এবং ১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে ২০ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপীয় এবং আমেরিকান একাডেমিক লেখাগুলিতে বিশেষভাবে এর উল্লেখ ছিল। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে, বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদকে সেকেলে ধারণা হিসাবে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং সমালোচনা করা হয়েছে। তবুও বর্ণবাদী শ্রেণিবিভাগের অস্তিত্ব ও তাৎপর্য এবং উচ্চতর ও নিকৃষ্টের শ্রেণিবিন্যাসের উপর ভিত্তি করে বর্ণবাদী বিশ্ব-দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থন বা বৈধতা দেওয়ার জন্য বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদের ধারণাটিকে ব্যবহার করা হয়েছে।[8]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর, তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক উভয়ভাবে বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা করা হয়েছিল, বিশেষ করে ১৯৫০ সালে ইউনেস্কোর প্রাথমিক জাতিবিদ্বেষী বিবৃতি "বর্ণের প্রশ্ন" (The Race Question) -তে বলা হয়েছে "বর্ণবাদের জৈবিক সত্যতা এবং প্রচলিত 'বর্ণ' ধারণাকে আলাদা করা উচিত। সমস্ত ব্যবহারিক সামাজিক উদ্দেশ্যে প্রচলিত 'বর্ণ' একটি সামাজিক কৃষ্টি বা সংস্কারের মতো, এটি জৈবিক কোনো ঘটনা নয়। 'বর্ণ' সংস্কার বা ধারণা মানবজাতি ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, মানুষের জীবনে আঘাত, এবং অকথ্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এটি একটি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।" [9] সেই সময় থেকে, মানব বিবর্তনীয় বংশাণুবি্জ্ঞান এবং জৈবিক নৃবিজ্ঞানের উন্নয়ন নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যে একটি নতুন ঐক্যমতের সৃষ্টি করেছে যে "মানব জাতি" কোনো জৈবিক ধারণা নয় বরং একটি সামাজিক রাজনৈতিক ধারণা। [10] [11] [12] [13]
বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ শব্দটি সাধারণত মর্যাদাহানিকর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে এই ধরনের কাজগুলি বর্ণবাদী বিভিন্ন ছলছুতোকে স্বীকৃতি দেয়, যেমন বর্ণ এবং বুদ্ধিমত্তা সাথে জেনেটিক সংযোগ রয়েছে, কিন্তু আদতে এ ধারণার কোনো প্রমাণ উপলব্ধ নেই। [14] ম্যানকাইন্ড কোয়ার্টারলি- এর মতো প্রকাশনাগুলো স্পষ্টভাবে একটি "বর্ণ-সচেতন" জার্নাল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এবং সাধারণত বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ তারা মানব বিবর্তন, বুদ্ধিমত্তা, নৃতাত্ত্বিক, ভাষা, পৌরাণিক কাহিনী, প্রত্নতত্ত্ব এবং বর্ণ সম্পর্কে মূলধারাহীন ব্যাখ্যা প্রকাশ করে।