মিনারে পাকিস্তান
পাকিস্তানের জাতীয় স্তম্ভ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পাকিস্তানের জাতীয় স্তম্ভ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মিনারে পাকিস্তান (উর্দু: مینارِ پاکستان) হলো লাহোরে অবস্থিত পাকিস্তানের জাতীয় স্তম্ভ।[2] ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের জন্য পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রথম ডাক হিসেবে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কর্তৃক পাসকৃত লাহোর প্রস্তাব ঘোষণার স্থানে ১৯৬০ থেকে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। এই প্রস্তাবটি পরবর্তীতে দ্বিজাতি তত্ত্বে রূপ লাভ করে। এই বিভাজন পরবর্তীকালে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন পাকিস্তানের রূপ লাভ করে।
মিনারে পাকিস্তান | |
---|---|
مینارِ پاکستان | |
সাধারণ তথ্য | |
অবস্থা | পাকিস্তানের জাতীয় স্তম্ভ |
ধরন | সাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্তম্ভ |
অবস্থান | লাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান |
স্থানাঙ্ক | ৩১.৫৯২৫° উত্তর ৭৪.৩০৯৫° পূর্ব |
নির্মাণকাজের আরম্ভ | ২৩ মার্চ ১৯৬০ |
নির্মাণকাজের সমাপ্তি | ২১ অক্টোবর ১৯৬৮ |
উচ্চতা | |
ছাদ পর্যন্ত | ৭০ মিটার (২৩০ ফু)[1] |
নকশা এবং নির্মাণ | |
স্থপতি | নাসরেদ্দিন মুরাত-খান |
কাঠামো প্রকৌশলী | এ রেহমান নিয়াজি |
পরিসেবা প্রকৌশলী | মিয়াঁ আবদুল ঘানি মুঘল |
প্রধান ঠিকাদার | মিয়াঁ আবদুল খালিক কোম্পানি |
স্তম্ভটিতে মুঘল বা ইসলামি স্থাপত্য ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে।
স্তম্ভটি নির্মাণ ও তদারকি করেন রুশ বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি স্থপতি ও পুর প্রকৌশলী নাসরেদ্দিন মুরাত-খান।[3] ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ স্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। আট বছর নির্মাণ কাজ চলার পর ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর স্তম্ভের কাজ শেষ হয়। স্তম্ভটি নির্মাণে প্রায় ৭০,৫৮,০০০ পাকিস্তানি রূপি খরচ হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর আখতার হুসেনের দাবির প্রেক্ষিতে সিনেমা ও ঘোড়দৌড়ের টিকিটে অতিরিক্ত কর বসিয়ে স্তম্ভ নির্মাণের অর্থ আদায় করা হয়েছিল। বর্তমানে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে অক্ষম ব্যক্তিদের টাওয়ার থেকে প্যানোরামিক দর্শনের জন্য উত্তোলক স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপনার পাশের উদ্যানে মার্বেল পাথরের ঝরনা ও একটি কৃত্রিম হ্রদ নির্মাণ করা হয়েছে।
মিনারের পাদদেশের বেদি ভূমি থেকে ৮ মিটার উঁচু। পাদভূমি থেকে মিনারের উচ্চতা ৬২ মিটার। অর্থাৎ ভূমি থেকে মিনারের মোট উচ্চতা ৭০ মিটার। উন্মোচিত ফুলেল পাপড়ির মতো ভিত্তিটি ৯ মিটার উঁচু। টাওয়ারের ব্যাস প্রায় ৯.৭৫ মিটার। টাওয়ারের ভিত্তি নকশাদার টালি দ্বারা নির্মিত এবং বাদশাহি মসজিদের দিকে মুখ করে দণ্ডায়মান। ভিত্তিতে মোট চারটি মঞ্চ বিদ্যমান। নীত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রারম্ভের প্রতীকায়ন হিসেবে প্রথম মঞ্চটি তক্ষশীলা থেকে আনা আকাটা শিলা ও দ্বিতীয় মঞ্চে ভাঙা শিলা ব্যবহৃত হয়েছে। আবার তৃতীয় ধাপ বা মঞ্চে পালিশ করা পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। চতুর্থ বা চূড়ান্ত ধাপের পালিশ করা মার্বেল পাথরের ভিত্তি সফল পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতীকায়ন করে।[4] লেখক ও লাহোরের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার মুখতার মাসুদ স্তম্ভ নির্মাণ সমিতির সদস্য ছিলেন। স্তম্ভটির নির্মাণ করে মিয়াঁ আবদুল খালিক অ্যান্ড কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী মিয়াঁ আবদুল ঘানি মুঘল পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থাপনা, যেমন লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম, গুজরানওয়ালার সিটি হাসপাতাল, চাঁদ দা কেল্লা বাইস পাস গুজরানওয়ালা, লর্ডস হোটেল এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গুজরানওয়ালা ক্যাম্পাসের নির্মাণ করেন।
স্তম্ভের ভিত্তিমূলে সাদা মার্বেলে দশটি ফুলেল সমকেন্দ্রিক স্মারক প্রস্তরলিপি রয়েছে। লিপিতে উর্দু, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লাহোর প্রস্তাব এবং ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল উত্থাপিত দিল্লি প্রস্তাব খোদিত আছে। অন্য খণ্ডে আরবি ভাষায় চারুলিপিতে কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর ৯৯টি নাম খোদিত আছে। এছাড়াও অন্যান্য খণ্ডের লিলির মধ্যে উর্দু, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত, মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ভাষণ এবং সেই সাথে আল্লামা ইকবালের কিছু খোদিত ছন্দ উল্লেখযোগ্য।[4]
বিভিন্ন মিছিলে মিনারে পাকিস্তানকে দেশের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।[5]
স্তম্ভটির নির্মাণ ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়ে আট বছর পর ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হয়। বাজেটে এর নির্মাণ খরচ ধরা হয় প্রায় ৭০ লাখ (৭ মিলিয়ন) রূপি। পাকিস্তানি লোকদের থেকে থিয়েটার বা সিনেমার টিকিটে অতিরিক্ত ১০ থেকে ১৫ টাকা কর আদায় করে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। টাওয়ারটি ইসলামি স্থাপত্য এবং সেই সাথে জাতীয় স্থাপত্যের মিশেলে তৈরি। স্তম্ভের ভিত্তি দেখতে অনেকটা ফুলের মতো। স্তম্ভটির আশেপাশে উদ্যান ও ফুলের বাগান করা হয়েছেম বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই এলাকা ব্যবহৃত হয়। একে অনেক সময় পাকিস্তানের "স্বাধীনতা স্তম্ভ"ও বলা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.