Loading AI tools
উইকিমিডিয়ার তালিকা নিবন্ধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে বর্তমান মিয়ানমারে জনবসতির অবস্থান সর্ম্পকে জানা যায়। পিউ নামের উপজাতিরা ১ম শতকে বার্মা এলাকাতে দক্ষিণ দিকের ইরাবতী উপত্যকা দিয়ে প্রবেশ করে। অপর দিকে উত্তর দিক দিয়ে মন জাতি প্রবেশ করে। ৯ম শতকে মিরানমা জাতি ইরাবতী উপত্যকার উপরে বসবাস শুরু করে। শাসকদল আর সেনাবাহিনীতে বর্মীদের আধিক্য থাকলেও মিয়ানমারে বর্মীদের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৬৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট ১৩৫ টি জাতিগোষ্ঠীর লোক নিয়ে বাকি ৩২ ভাগ গঠিত । এর বাইরেও আরো বেশ কিছু জাতি রয়েছে যাদেরকে মিয়ানমার সরকার নিজেদের লোক বলে স্বীকার করে না।[1][2][3] এর মধ্যে আছে রোহিঙ্গা[4], অ্যাংলো বার্মিজ, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এবং বার্মিজ ইন্ডিয়ানসহ আরো বেশ কিছু জাতি। ১৩৫টি জাতিকে মিয়ানমার সরকার ৮টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছে। এই ভাগাভাগি জাতিভিত্তিক নয়, হয়েছে প্রদেশ অনুসারে।
বার্মার জনগোষ্ঠী | ||||
---|---|---|---|---|
নৃগোষ্ঠী | পার্সেন্ট | |||
বর্মী জনগোষ্ঠী | ৬৮% | |||
শান জাতি | ৯% | |||
কারেন জাতি | ৭% | |||
রাখাইন জাতি | ৩.৫% | |||
বর্মী চীনা | ২.৫% | |||
মন জাতি | ২% | |||
জিংপো জাতি | ১.৫% | |||
বর্মী ভারতীয় | ১.৩% | |||
চিন জাতি | ১% | |||
কায়াহ | ০.৮% | |||
অন্যান্য জাতি | ৫% |
মিয়ানমারের ভাষাভাষীদের মধ্যে অন্যতম বড় জাতি শান সর্ববৃহৎ প্রদেশ শান প্রদেশে বসবাস করে। এরা অসংখ্য ক্ষুদ্র জাতিতে বিভক্ত। কৃষিপ্রধান শানেরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হলেও এরা যোদ্ধা জাতি। এদের নিজস্ব ভাষা আছে[5]। ১৩-১৫ শতকে উত্তর মিয়ানমারে তারা আভা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। পরে বার্মিজ রাজারা তাদেরকে বর্তমান শান প্রদেশে ঠেলে দেন। ব্রিটিশ আমলে শান প্রদেশ কিছুটা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতো। পরে ১৯৪৮ সালে তারা নিজস্বতা বজায় রেখেই ইউনিয়ন অব বার্মাতে যোগ দেয়। ১৯৬১ সালে জেনারেল নে ইউন ক্ষমতায় এসে শানদের সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শান স্টেট আর্মি তাদের অস্ত্র কেনার টাকা জোগাড় করতো আফিম চাষ করে। বস্তুত ক্রমাগত যুদ্ধের খরচের চাপেই মিয়ানমারসহ আশেপাশের দেশজুড়ে কুখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের সৃষ্টি হয়। খুন সা নামের এক ভুঁইফোঁড় নেতা নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করে ফেলেন এই আফিমের টাকা দিয়ে। প্রায় ৫০ বছর ধরে শান প্রদেশে যুদ্ধ চলে। নানা সময়ে চীনা কুয়োমিন্টাং বাহিনী, বিভিন্ন শান বিদ্রোহী দল, মিয়ানমার সেনাবাহিনী, থাই সেনাবাহিনী এবং কম্যুনিস্ট যোদ্ধারা শান পর্বতমালা এবং আফিমের দখল নিয়ে যুদ্ধ করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও বিদ্রোহীরা সক্রিয় আছে। শানদের সংস্কৃতিতে বৌদ্ধ ধর্ম আর নানা প্রাচীন পাহাড়ী বিশ্বাসের সংমিশ্রণ দেখা যায়। পুরুষ ও নারী উভয়ই গায়ে উল্কি আঁকে।
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব মিয়ানমারে কারেনদের বাস। মূলত অনেকগুলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাভাষীদেরকে কারেন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ফেলা হয়। কারেন লোকগাঁথা অনুসারে, তাদের পূর্বপুরুষেরা এসেছে মঙ্গোলিয়ার গোবি অঞ্চল থেকে। বামার এবং শান জনগোষ্ঠীর পরে কারেন'রা মিয়ানমারের তৃতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী। [6]
কারেনরা ব্রিটিশদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিল। বহু কারেন খ্রিস্টান হয়ে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করে। এই শিক্ষিত কারেনরাই ১৮৮১ সালে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন গঠন করে।[7] দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় কারেনরা জাপানী এবং বার্মিজ ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করায় স্বাধীনতার পর তাদেরকে প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বিশেষ করে ৮০'র দশকে এর ভয়াবহতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কারেন প্রদেশে এখনো থেমে থেমে যুদ্ধ চলছে। বহু কারেন পালিয়ে গিয়েছে থাইল্যান্ডে। পেশায় মূলত কৃষক এই জাতির লোকেদের নিজস্ব ভাষা আছে এবং মিয়ানমারের অন্য অনেক জাতিগোষ্ঠীর মতোই তাদের ধর্মাচারণে অনেক প্রাচীন ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশিক প্রশাসন কারেন নববর্ষের দিনকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করে।[8][9]
মিয়ানমারের সর্ব উত্তরের কাচিন প্রদেশে এই জাতির লোকেরা বাস করে। কাচিন জনগোষ্ঠীর অধিবাসীদের চীনের ইউনান প্রদেশেও দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে এরা জিংপো নামে পরিচিত। অনেকগুলো সিনো তিব্বতীয় ভাষায় তারা কথা বলে। বেশিরভাগ কাচিনই খ্রিস্টান, বাকিরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। কাচিনরা তাদের রণকৌশল, কুটির শিল্প এবং বিচিত্র সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে আছে ঢোল ও তরবারি সহকারে বিখ্যাত মানাউ নাচ। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে গোটা অঞ্চল জুড়ে মানাউ নাচের আয়োজন করা হয়। ১৯৬১ সাল থেকে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। কাচিন অঞ্চলে প্রচুর মূল্যবান রত্ন, সোনা এবং বনজ সম্পদ পাওয়া যায়। এগুলোর চোরাকারবার করেই কাচিন বিদ্রোহীরা মূলত অস্ত্র সংগ্রহ করে থাকে। অঞ্চলটি মাদকের কারবারের জন্যেও কুখ্যাত।
আদিকালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাস ছিল মনদের[10]। ১০০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে যুদ্ধবাজ খেমার জাতির লোকেরা মনদেরকে ঠেলে থাইল্যান্ড আর মিয়ানমারের দক্ষিণ অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়। অদ্যাবধি সেখানেই বাস করে তারা। মিয়ানমারে প্রায় ১১ লক্ষ মনের বাস। এরা পশ্চিমা মন বলে পরিচিত। মনদের সাথে বর্মীদের ঐতিহাসিক সংযোগ খুব নিবিঢ়। মন রাজারা দীর্ঘদিন বর্মীদের বিরুদ্ধে নিস্ফলা যুদ্ধ করেছেন বটে, কিন্তু মনদের উন্নত সংস্কৃতি ঠিকই বর্মী রাজদরবারে স্থান করে নিয়েছে। বর্মী ভাষা লেখা হয় মন অক্ষরে।
ব্রিটিশ শাসনামলে মনরা বর্মীদের হাত থেকে রক্ষা পেতো। পরিবর্তে তারা ব্রিটিশদের সাহায্য করতো। পরে অবশ্য মনরাও স্বাধীনতা দাবি করতে থাকে। কিন্তু ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হলে আবার মনদের ওপরে নির্যাতন শুরু হয়। কিছুদিন যুদ্ধ চলে। পরিস্থিতি ঠান্ডা না হলেও মিয়ানমারের অন্যান্য জাতির তুলনায় মনরা অপেক্ষাকৃত বেশি নিরুপদ্রব জীবনযাপন করে বলা যায়।
পালা-পার্বনে জাইলোফোন সহকারে খুব জাঁকজমকপূর্ণ নাচের আয়োজন করে থাকে মনরা। ধর্মগত দিক থেকে তারা বৌদ্ধ। থাইল্যান্ডের রাজ পরিবারও জাতিতে মন।
দুর্ধর্ষ ওয়া জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের দুর্গম সব পাহাড়ে বাস করে। ১২০০ শতাব্দীর চীনা ইতিহাসবিদের লেখনীতে ওয়াদের কথা পাওয়া যায়। বিংশ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটিশরা ওয়াদের সাক্ষাৎ হয়। ওয়ারা তাদের প্রতিপক্ষের মাথা কেটে নিতো। তাদের বিশ্বাস- এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশরা ওয়াদেরকে অসভ্য আর বর্বর মনে করলেও উঁচু পাহাড়ে ছাওয়া এই অঞ্চলের দুর্ধর্ষ অধিবাসীদের সাথে লড়াইয়ে নামবার বোকামি করেনি।
স্বাধীনতার পর ওয়ারা কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। বেঁধে যায় যুদ্ধ। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি এবং পার্টির। তবে সমাজতন্ত্রের স্বপ্নকে সরিয়ে জায়গাটা দখল করে নেয় মাদক। ওয়া অঞ্চলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের অংশ হলেও ওয়ারা একরকম স্বাধীনভাবেই থাকে। নিজস্ব সেনাবাহিনী তাদের বিস্তীর্ণ আফিম ক্ষেতগুলোকে সুরক্ষা দেয়। বর্তমানে মিয়ানমারে যত ইয়াবা উৎপন্ন হয় তার অর্ধেকই আসে ওয়া অঞ্চলগুলো থেকে।
ওয়াদের সাথে ভারতের নাগাদের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। নাগাদের মতো ওয়ারাও পূজোয় মহিষ বলি দেয়। পালা-পার্বণে মদ্যপান করে নাচগান করা ওয়াদের খুব পছন্দের বিষয়। তাদের সমাজে বিয়ের আগে নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেওয়া হয়। তবে বিয়ের পর বহুগামিতা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মাথা কেটে নেওয়ার প্রবণতা এখন কমে গেছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.