মৃৎশিল্প (শিল্পকলা)
From Wikipedia, the free encyclopedia
মৃৎশিল্প বলতে শিল্পকলার একটি শাখাকে বোঝায়, যেখানে কুমোরের মাটি বা এই জাতীয় গঠন-উপাদান দিয়ে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা হয়। টালি, ক্ষুদ্র মূর্তি, ভাস্কর্য এমনকি ব্যবহারিক কারিগরি মৃৎশিল্পে উৎপন্ন কিন্তু শৈল্পিক অভিব্যক্তিবিশিষ্ট খাবার টেবিলের তৈজসপত্রকেও মৃৎশিল্পের একেকটি রূপ হিসেবে গণ্য করা যায়। কিছু মৃৎশিল্পজাত তথা মৃন্ময় দ্রব্যকে চারুকলা (দৃশ্যকলা তথা ত্রিমাত্রিক রূপকলা) হিসেবে গণ্য করা হতে পারে, আবার কিছু মৃন্ময় দ্রব্যকে শোভাবর্ধক, শিল্পোৎপাদনমূলক অথবা ফলিত শিল্পবস্তু হিসেবেও গণ্য করা হতে পারে। এছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাতে মৃন্ময় বস্তুগুলিকে নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে আগ্রহজনক মানবনির্মিত বস্তু হিসেবে গণ্য করা হয়। মৃন্ময় বস্তুগুলিকে একজন ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তির একটি দল তৈরি করতে পারে। একটি মৃৎশিল্প কারখানা বা কর্মশালাতে একদল ব্যক্তি মৃন্ময় শিল্পসামগ্রীগুলি নকশা করেন, এগুলি হাতে উৎপাদন করেন এবং প্রয়োজনে এগুলির শোভাবর্ধন করেন।
ইংরেজিতে মৃৎশিল্পকে সাধারণত "পটারি" (Pottery) বা "সিরামিক আর্ট" (Ceramic art) নামে অভিহিত করা হয়। "সিরামিক" কথাটি গ্রিক শব্দ "কেরামিকোস" (κεραμικος) থেকে এসেছে, যেটি আবার আরেকটি গ্রিক শব্দ "কেরামোস" (κεραμος) থেকে এসেছে, যার অর্থ "কুমোরের মাটি"।[1] সিংহভাগ ঐতিহ্যবাহী মৃন্ময় দ্রব্য তৈরির সময় নমনীয় কুমোরের মাটিকে (বা কুমোরের মাটির সাথে অন্যান্য উপাদানের নমনীয় মিশ্রণকে) আকৃতি প্রদান করে, উচ্চতাপে উত্তপ্ত করে তারপরে শীতল করে কঠিন রূপ দান করা হয়। এখনও টেবিলের তৈজসপত্র ও শোভাবর্ধক মৃন্ময় দ্রব্য এভাবেই তৈরি করা হয়। আধুনিক মৃৎশিল্প প্রকৌশলে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মৃৎশিল্প বলতে যেকোনও অজৈব, অধাতব গঠন-উপাদান থেকে উত্তাপের মাধ্যমে শিল্পবস্তু তৈরি করার কলা ও বিজ্ঞানকে বোঝায়। তবে কাচ থেকে সৃষ্ট দ্রব্যগুলিকে মৃৎশিল্পের মধ্যে গণ্য করা হয় না।
প্রায় সমস্ত উন্নত সংস্কৃতিতে মৃৎশিল্পের প্রাচীন ইতিহাস বিদ্যমান। প্রায়শই মৃন্ময় বস্তুগুলি বিভিন্ন বিলুপ্ত সংস্কৃতির একমাত্র শৈল্পিক প্রমাণ হিসেবে বিরাজ করে। যেমন ২০০০ বছর আগে বিলুপ্ত আফ্রিকান নোক সংস্কৃতির মৃন্ময় দ্রব্যগুলি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমান যুগে যেসমস্ত সংস্কৃতি তাদের উৎকৃষ্ট মৃৎশিল্পের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেগুলির মধ্যে আছে চীনা মৃৎশিল্প, ভারতীয় উপমহাদেশের মৃৎশিল্প, ভূমধ্যসাগরের ক্রিট দ্বীপীয় মৃৎশিল্প, গ্রিক মৃৎশিল্প, পারসিক মৃৎশিল্প, মায়া সভ্যতার মৃৎশিল্প, জাপানি ও কোরীয় মৃৎশিল্প, এবং আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতিগুলিতে বিদ্যমান মৃৎশিল্প।
মৃৎশিল্পের মৌলিক উপাদানগুলি হল মৃন্ময় বস্তুর আকৃতি, এটির বহির্পৃষ্ঠে রঙচিত্র অঙ্কন করে বা খোদাই করে শোভাবর্ধন, এবং এটির উপরের চকচকে প্রলেপণ। ইতিহাসের পর্বভেদে ও সংস্কৃতিভেদে এই উপাদানগুলির উপরে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় জোর দেওয়া হয়েছে।