Loading AI tools
যিশুর জন্ম এবং জন্মস্থানের বর্ণনা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
যীশুর জন্ম বা খ্রিস্টের জন্ম লুক সুসমাচার এবং ম্যাথিউ সুসমাচারে বর্ণনা করা হয়েছে। দুটি সুসমাচারই একমত যে, যীশু যিহূদিয়া প্রদেশের (বর্তমান ফিলিস্তিনের) বাইতুল লাহাম (বেথেলহেম)-এ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার মা মরিয়মের বিয়ে হয়েছিল ইউসুফ (জোসেফ) নামে একজন ব্যক্তির সাথে, যিনি রাজা দাউদ (ডেভিড) এর বংশধর ছিলেন এবং তার কোনো জৈবিক পিতা ছিলেন না। আর তার জন্ম ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের কারণে হয়েছিল। অনেক আধুনিক পণ্ডিত জন্মের আখ্যানগুলিকে অনৈতিহাসিক বলে মনে করেন কারণ সেগুলো সব ধর্মতত্ত্বে পরিপূর্ণ এবং দুটি ভিন্ন বিবরণ উপস্থাপন করে, যা একটি একক সুসংগত আখ্যানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায় না। কিন্তু অনেকে ঐতিহাসিকতার আলোচনাকে গৌণ হিসাবে দেখেন, এই কারণে যে সুসমাচারদ্বয় প্রাথমিকভাবে কালানুক্রমিক সময়রেখার পরিবর্তে ধর্মতাত্ত্বিক দলিল হিসাবে লেখা হয়েছিল।
এই জন্মদিনকে বড়দিনের ছুটির ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় এবং খ্রিস্টীয় লিটার্জিকাল বছরে দিনটি একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। অনেক খ্রিস্টধর্মী তাদের বাড়িতে জন্মের চিত্রিত ছোট ছোট ম্যাঞ্জারের দৃশ্য প্রদর্শন করে, কেউ কেউ বাইবেলে জন্মচক্রের উপর নিবদ্ধ জন্মনাট্য প্রদর্শন করে, আর কেউ বা ক্রিসমাস প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। "ক্রেচ সিন" নামক বিস্তৃত জন্মপ্রদর্শনী বড়দিন মওসুমে অনেক ইউরোপীয় দেশের ঐতিহ্য, যার মধ্যে জীবনাকার মূর্তি ফিচার করা হয়।
৪র্থ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টান শিল্পীদের জন্য জন্মের শৈল্পিক চিত্রায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিলক্ষিত। ১৩'শ শতাব্দী থেকে জন্মদৃশ্যের শৈল্পিক চিত্রগুলিতে যীশুর নম্রতা প্রদর্শনের উপর জোর দিতে দেখা যায় এবং তার কোমল প্রতিমূর্তি প্রচার করতে দেখা যায়। এটি ছিল প্রারম্ভিক "লর্ড অ্যান্ড মাস্টার" চিত্রে আমূল পরিবর্তন, যা সমকালীন খ্রিস্টান যাজক মন্ত্রণালয়ের সাধারণ পদ্ধতির পরিবর্তনের প্রতিফলন করে।
শুধুমাত্র ম্যাথিউ এবং লুকের সুসমাচারেই যীশুর জন্ম সংক্রান্ত বর্ণনা পাওয়া যায়।[1] উভয়েই হিব্রু ধর্মগ্রন্থের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, জন্মের গল্পটি বনী ইসরায়েলের পরিত্রাণ হবার ইতিহাসের একটি অংশ এবং উভয় সুসমাচারই বনী ইসরায়েলের ঈশ্বরকে ঘটনা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে উপস্থাপন করে।[2] উভয়েই একমত যে, যীশু রাজা হেরোদের শাসনামলে বাইতুল্লাহাম (বেথলেহেম)-এ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মায়ের নাম ছিল মরিয়ম এবং তার স্বামী ইউসুফ (ইংরেজি উচ্চারণঃ জোসেফ) রাজা দাউদের বংশধর ছিলেন। উভয় সমাচার অবশ্য বংশধারার বিষয়ে একমত নয়। তাছাড়া উভয়ে সমাচারে মরিয়মের সাথে জোসেফের জৈবিক স্বামীত্ব বা গর্ভধারণে তার অংশীদারী অস্বীকার করে, বরং তা ঐশ্বরিকভাবে প্রভাবিত হয়ে হয়েছিল।[3]
এছাড়া বাকি বিষয়গুলিতে উভয় সমাচারে একমত নয়।[4] ম্যাথিউর গসপেলে জোসেফ বিশিষ্টতম এবং লুকের গসপেলে মেরি বিশিষ্টতম, যদিও পরামর্শ যে এগুলো "শুভ ডিডাকশন" ছাড়া আর কিছু নয়।।[5] ম্যাথিউ সূচিত করে যে তখন জোসেফ বেথলেহেমে ছিলেন, সেখানে লুকে বলা হয়েছে যে, তখন জোসেফ নাজারেথে থাকতেন।[4] ম্যাথিউ অনুযায়ী, দেবদূত জোসেফের সাথে কথা বলেছিলেন, আর লুকে মেরির সাথে দেবদূতের একটি কথাই পাওয়া যায়।[5] শুধুমাত্র লুকেই জন দ্য ব্যাপটিস্টের জন্ম, কুইরিনিয়াসের আদমশুমারি, রাখালদের আরাধনা এবং অষ্টম দিনে মন্দিরে উপস্থাপনা সম্পর্কিত গল্প রয়েছে; আর শুধুমাত্র ম্যাথিউতে জ্ঞানী ব্যক্তি, বেথলেহেমের তারকা, হেরোদের চক্রান্ত, নিরপরাধদের গণহত্যা এবং মিশর গমণের বর্ণনা রয়েছে।[5] দুটি যাত্রাবৃত্তান্তই বেশ ভিন্ন। ম্যাথিউর বর্ণিত যীশুর পবিত্র পরিবারটির সূচনা বেথলেহেমে, জন্মের পর তারা মিশরে চলে যান এবং পরে নাজারেথে তারা বসতি স্থাপন করেন। লুক অনুযায়ী নাজারেথ থেকে তাদের উৎপত্তি, জন্মের জন্য বেথলেহেমে যাত্রা শুরু করে এবং অবিলম্বে নাজারেথে প্রত্যাবর্তন করে।[6] দুটি বিবরণকে একটি একক সুসঙ্গত বর্ণনায় সামঞ্জস্য করা যায় না বা একই Q উৎসে চিহ্নিত করা যায় না, নেতৃত্বদানকারী পণ্ডিতরা সেগুলিকে "বিশেষ ম্যাথিউ" (বা কেবল এম উৎস) এবং "বিশেষ লুক" (বা এল উৎস) হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন।[6]
যীশু মশীহের মা ম্যারি জোসেফের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, কিন্তু তিনি পবিত্র আত্মার মাধ্যমে গর্ভবতী বলে প্রমাণিত হন। জোসেফ তাকে নিঃশব্দে তালাক দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু একজন দেবদূত তাকে স্বপ্নে বলেছিলেন যে তিনি যেন তাকে তার স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন এবং অনাগত শিশুটির নাম যীশু রাখেন, "কারণ তিনিই তার লোকদের তাদের পাপ থেকে রক্ষা করবেন"। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী একজন কুমারী একটি পুত্রের জন্ম দেবে, যিনি ইমানুয়েল নামে পরিচিত হবেন, যার অর্থ "ঈশ্বর আমাদের সাথে আছেন"। স্বপ্ন দেখে জোসেফ ঘুম জেগে উঠলেন, এবং মরিয়মকে তার স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করলেন, কিন্তু পুত্র জন্ম না দেওয়া ও যীশু নাম না রাখা পর্যন্ত তার সাথে সঙ্গম করেননি। (Matthew 1:18-25)
এই চরণগুলিতে একটি সমস্যা দেখা যায়, তা হলো যীশুর পূর্ববর্তী ম্যাথিয়ান বংশোদ্ভূতিতে জোসেফকে ডেভিডের বংশধর হিসেবে দেখানো হয়েছে। এবং দেবদূত তাকে "ডেভিডের পুত্র" বলে সম্বোধন করেছেন ও যিহূদার রাজ্যের উত্তরাধিকারী করেন। কিন্তু ম্যাথিউ ১:১৬ তে আছে যে, যীশু জোসেফের পুত্র নন, কিন্তু ম্যাথিউ এইভাবে তাকে কখনই উল্লেখ করেন নাই।[7] সন্তানের নামকরণে জোসেফের ভূমিকা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তিনি আইনিভাবেই যীশুর দত্তক নিয়েছিলেন, এবং এভাবেই "ডেভিডের পুত্র" জোসেফ যীশুর আইনী পিতা বনে যান।[7]
রাজা হেরোদ (হেরোদ দ্য গ্রেট) এর সময়ে যিহূদিয়ার বেথলেহেমে যীশুর জন্ম সংঘটিত হয়েছিল। এ সময় পূর্ব থেকে পুরোহিতমণ্ডলী জেরুজালেমে আসেন, এবং জিজ্ঞাসা করেন কোথায় তারা ইহুদি রাজার নবজাতক শিশুটিকে খুঁজে পাবে, কারণ তারা বেথেলহেমের তারকাকে উদিত হতে দেখেছে, আর তারা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে চায়। হেরোদসহ সমস্ত জেরুজালেম যখন এটা শুনে, তারা চিন্তায় পড়ে যায়। কিন্তু হেরোদ, প্রধান যাজক এবং ধর্মগুরুদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে মশীহ বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করবেন। তাই তিনি পুরোহিতদের সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং ফিরে এসে কখন তারা তাকে খুঁজে পেয়েছেন তা জানাতে বলেন। পুরোহিতমণ্ডলী বেথলেহেমে শিশুটির উপাসনা শুরু করে এবং তাকে সোনা, লোবান এবং গন্ধরস উপহার দেয়। কিন্তু একজন দেবদূত তাদের স্বপ্নে সতর্ক করেন যে, হেরোদের কাছে যেন তারা ফিরে না যান। পরদিন তারা অন্য উপায় অনুসরণ করে তাদের বাড়িতে ফিরে যায়।
হেরোদ যখন জানতে পারলেন যে পুরোহিতুমণ্ডলী তার সাথে প্রতারণা করেছে, তিনি রেগে যান এবং বেথলেহেমের আশেপাশের দুই বছরের কম বয়সী সব শিশুকে হত্যা করেন (ইহাকে নির্দোষদের গণহত্যা বলা হয়)। ভাববাদী যিরমিয়ার ভাষায়: "রামায় একটা শব্দ শোনা গেল, কান্নার রোল ও তীব্র হাহাকার, রাহেল তাঁর সন্তানদের জন্য কাঁদছেন৷ তিনি কিছুতেই শান্ত হতে চাইছেন না, কারণ তারা কেউ আর বেঁচে নেই৷" কিন্তু একজন স্বর্গদূত স্বপ্নে জোসেফের কাছে দেখা দেন এবং তাকে সতর্ক করেন যে, তিনি যেন শিশু ও তার মাকে নিয়ে মিশরে পালিয়ে যায় এবং হেরোদ মারা না যাওয়া পর্যন্ত পবিত্র পরিবার ভাববাদীর কথা "মিসর থেকে আমি আমার পুত্রকে ডাকিয়া লইয়াছি" পূর্ণ করার জন্য সেখানেই থেকে যায়। হেরোদের মৃত্যুর পর একজন স্বর্গদূত জোসেফকে আবার স্বপ্নে দেখা দেন এবং তাকে শিশু ও তার মাকে নিয়ে বনী ইস্রায়েলে ফিরে যেতে বলেন, কিন্তু হেরোদের পুত্র তখন যিহূদিয়ার শাসক ছিলেন এবং পুণরায় স্বপ্নে সতর্ক করার পর জোসেফ গ্যালিলে চলে যান, সেখানে তিনি নাজারেতে তার বাড়ি করেন, "যাতে ভাববাদীদের মাধ্যমে যা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়, "তাকে নাসরানি বলে ডাকা হবে।" Matthew 2
এই পারাতে ম্যাথিউ দেখান যে "নাসরাতের যিশু" প্রকৃতপক্ষে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যে শহরে ডেভিডের জন্ম হয়েছিল, কেননা "ডেভিডের পুত্র" হিসেবে জন্মগ্রহণকারী "ইহুদিদের রাজা" হবে। এই পদবীটি ক্রুশবিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত ম্যাথিউতে আর পাওয়া যায় না।[7] এই পারাতে হেরোদের ভয় এবং পুরোহিতদের সফর রাজকীয় জন্মকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যেমনিভাবে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক লিখা এই অধ্যায়ে উদ্ধৃত বা উল্লেখ করা হয়েছে।[7]
হেরোদ যখন যিহূদিয়ার রাজা ছিলেন, তখন ঈশ্বর জিবরাঈলকে গ্যালিলির নাসরাতে মরিয়ম নামে এক কুমারীকে সুসংবাদ দেবার জন্য পাঠান, যে কিনা জোসেফ নামে একজন ব্যক্তির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। সুসংবাদ দেওয়া হয় যে, তার একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হবে এবং সে তার নাম রাখবে যীশু, কারণ তিনি ঈশ্বরের পুত্র হবেন এবং চিরকাল বনি ইসরায়েলের উপর রাজত্ব করবেন। যখন জন্মের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন সিজার অগাস্টাস রোমান শাসিত অঞ্চলের আদমশুমারির নির্দেশ দেন এবং জোসেফ মরিয়মকে দাউদের প্রাচীন শহর বাইতুল্লাহমে (বেথেলহেম) নিয়ে যান, কারণ তিনি দাউদের বংশধর। যীশু বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করলেন; যেহেতু শহরে তাদের থাকার কোন জায়গা ছিল না, তাই শিশু যীশুকে একটি খাঁচায় শুইয়ে রাখা হয়, তখন ফেরেশতারা তার জন্মের ব্যাপারে একদল রাখালদের কাছে জানান দেয়, যারা তাকে পরে মশীহ এবং প্রভু হিসাবে উপাসনা করেছিল।
ইহুদি আইন অনুসারে, তার বাবা-মা জেরুজালেমের মন্দিরে শিশু যীশুকে উপস্থাপন করেন, সেখানে মন্দিরের দুই ব্যক্তি, শামাউন এবং হান্না ঈশ্বরের শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন যিনি তার পরিত্রাণকে তাদের কাছে পাঠিয়েছেন। জোসেফ এবং মেরি তারপর নাসরাতে ফিরে আসেন। সেখানে “শিশুটি বেড়ে ওঠে, শক্তিশালী ও জ্ঞান দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তাঁর ওপর সবসময়ই ইশ্বরের অনুগ্রহ ছিলো।” প্রতিবছর তাঁর মাতাপিতা জেরুজালেম পেসাক উদ্যাপন করতে যেত এবং যিশুর বয়স যখন বরো বৎসর তাঁকে দেখা গেল মন্দিরে দিক্ষাগুরু সামনে বসে তার কথা শুনছে ও প্রশ্ন করছে আর উপস্থিত জনতা তাঁর প্রশ্ন শুনে অভিভূত হচ্ছে। মাতা মেরী তাঁকে তিরস্কার করল, কারণ তাঁকে খুজে না পেয়ে তারা দুজনে উদ্বিগ্ন ছিল, তখন যিশু বললো সে তার পিতার গৃহে অবস্থান করছে। ”তারপর তিনি মাতাপিতার সাথে নাজারাতে ফিরে গিয়েছিলেন আর তিনি তাদের বাধ্য হয়ে থাকতেন, কিন্তু তাঁর মায়ের মনে এইসব কিছুই জমা ছিল এবং যিশু দৈহিক ও জ্ঞানের দিক দিয়ে ঈশ্বর ও মানুষের ভালোবাসায় বেড়ে উঠতে লাগলেন।”
খ্রীষ্টীয় ধর্মমতে ঐশ্বরিক ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্য মূলত অরাজকতা,অন্ধকার,কুসংস্কার থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে যিশুর জন্ম হয়। চতুর্থ শতাব্দী থেকে খ্রীষ্টান চিত্রশিল্পদের কাছে যিশুর জন্মদৃশ্য একটা গুরুত্বর্পূন বিষয়। তের শতকের পর থেকে, যিশুর জন্ম দৃশ্যটি যিশুর নম্রতার ওপর জোর দিয়েছে এবং তার আরও আবেগপ্রবণ চিত্র তুলে ধরেছে, যা ছিল যিশুর প্রথম দিককার ”প্রভূ বা মনিব “ ভাবর্মূতির সর্ম্পূন বিপরীত মূলত এর মধ্যে খ্রিস্টান যাজক মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ছিল। খ্রিস্টীয় লিটার্জিকাল বছরে যিশুর জন্মতত্ব একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।
পাশ্চাত্য ঐতিহ্যের খ্রিস্টীয় সম্প্রদায় (ক্যাথলিক চার্চ, ওয়েস্টার্ন চার্চ অর্ধপরিবাহক, অ্যাংলোকনিক কমিউনীয়ন এবং অনেক প্রটেস্ট্যান্ট সহ) ক্রিসমাসের আগে চার রবিবার আগমনের ঋতু উদ্যাপন শুরু করে। তার জন্মের ঐতিহ্যিক ভোজ-দিন(feast-day) ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে পড়ে। ইস্টার্ন অর্থডক্স চার্চের খ্রিস্টান এবং ওরিয়েন্টাল ওডথক্স চার্চ একই রকমভাবে যিশুর আবির্ভাব অনুষ্ঠান পালন করে থাকে, কখনও কখনও একে খ্রীষ্টের আবির্ভাব বলা হয় কিন্তু মূলত এটা ক্রিসমাসের চল্লিশ দিন আগে শুরু হয় "নেটিভিটি-ফেস্ট" নামে।
ইস্টার্ন অর্থডক্স চার্চের খ্রিস্টান এবং ওরিয়েন্টাল অর্ধপরিষদ চার্চ একই সময়ে যিশুর আবির্ভাব অনুষ্ঠান পালন করে, কখনও কখনও একে আবির্ভাব বলা হয় কিন্তু এটি "জন্মদিনের ফাস্ট" নামেও পরিচিত, যা ক্রিসমাসের ৪০ দিন আগে শুরু হয়। কিছু ইস্টার্ন অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা (উদাঃ গ্রীক এবং সিরিয়ান) ডিসেম্বর ২৫ তারিখে ক্রিসমাস উদ্যাপন করে,অন্যান্য অর্থডক্স (যেমন, কপ্ট, ইথিওপিয়ান, জর্জিয়ান এবং রাশিয়ানরা) ৭ জানুয়ারী (গ্রেগরিয়ান) (কক্সক ২৯ টা কপটিক ক্যালেন্ডারে) ক্রিসমাস উদ্যাপন করে কারণ তারা গ্রীগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে।
ম্যাথিউ এবং লুক একমত যে যীশু হেরোড দ্য গ্রেটের রাজত্বকালে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। [4] [5] লুক-এ নবজাতক শিশুকে একটি গামলায় রাখা হয় "কারণ কাতালিমাতে কোন স্থান ছিল না"। "কাতালিমা" বলতে কখনো একটি ব্যক্তিগত ঘর কিংবা একটি সরাইখানা বোঝায়, কিন্তু এখানে কোনটি বোঝানো হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব। [5]
২য় শতাব্দীতে, জাস্টিন মার্টিয়ার বর্ণনা দেন যে, যীশু শহরের বাইরে একটি গুহায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে জেমসের প্রোটোভাঞ্জেলিয়াম একে পাশের কোন গুহায় "কিংবদন্তি জন্ম" হিসেবে আখ্যা দেন।[8][9] সেন্ট হেলেনা দ্বারা নির্মিত শহরের অভ্যন্তরে চার্চ অফ দ্য নেটিভিটিতে গুহা ও গামলা স্থানটি রয়েছে যা ঐতিহ্যগতভাবে যিশুর জন্মস্থান হিসাবে পূজা করা হয়, যা মূলত দেবতা তাম্মুজের ধর্মের একটি স্থান হতে পারে। [10] কন্ট্রা সেলসাম ১.৫১-এ, অরিজেন, যিনি ২১৫ সালের শুরুতে ফিলিস্তিন জুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন, তিনি এই "যীশুর গামলা" সম্পর্কে লিখেছেন।[11]
নাসরাতের যীশুর জন্মের তারিখটি সুসমাচার কিংবা কোনো ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যে উল্লেখ করা হয়নি। তবে বেশিরভাগ পণ্ডিতরা খ্রিস্টপূর্ব ৬ থেকে ৪ এর মধ্যে একটি তারিখ ধরে নেন।[12] ঐতিহাসিক প্রমাণগুলি কোন একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণের ব্যাপারে স্পষ্ট নয়।[13] তবে তারিখটি ম্যাথিউ অধ্যায় ২ এবং লুক অধ্যায় ২ [14] এ উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির মাধ্যমে অনুমান করা হয়েছে কিংবা আনুমানিকভাবে যীশুর পরিচর্যা যখন থেকে শুরু হয় তখন থেকে পিছনের দিকে গণনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে।[15][16]
ম্যাথু এবং লূক উভয়ের সুসমাচারগুলি বেথলেহেম যিশুর জন্মস্থান হিসেবে স্বিকৃতি দেয়। যদিও ম্যাথু স্পষ্টভাবে বলেননি জোসেফ এর উত্পত্তি স্থান বা যেখানে তিনি যিশুর জন্ম পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন হিসাবমতে, এটা বলা হয় যিশুর পরিবার বেথলেহেমে বসবাস করেছিল, এবং ব্যাখ্যা করে যে তারা পরবর্তীকালে নাসরথে বসতি স্থাপন করেছিল। অন্যদিকে লূক ১:২.২৬–২৭ স্পষ্টভাবে বলে মেরী গ্যব্রিয়েলের ঘোষণার সময় এবং যিশুর জন্ম পূর্বে নাজরাতে বসবাস করত।
লূক সুসমাচার বর্ণনা করে মেরী যিশুখ্রিস্টের জন্ম দেন এবং তাকে একটি গবাদী পশুর পান পাত্রে রাখেন কারণ তাদের থাকার কোন জায়গা(কাটালুমা) ছিলো না এবং এখানে যিশুর জন্মস্থান সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট স্থানের কথা উল্ল্যেখ করা হয়নি। গ্রিক শব্দ "কাটালুমা" দুইভাবে অনুবাদ করা যায় সরাইখানা অথবা অতিথিশালা এবং কিছু সংখ্যক পণ্ডিত মনে করেন যে মেরী এবং জোসেফ এর সরাইখানার চেয়ে আত্মীয়র অতিথিশালায় থাকার যৌক্তিকতা বেশি। এবং অতিথিশালা কোন কারণে ভর্তি থাকার কারণে তারা আস্তাবলে আশ্রয় নেয়। আস্তাবলটি বেথলেহেমের ভেড়ার আস্তাবল হতে পারে যার নাম মিগলেল ইডার (পালকের টাওয়ার)। যা সর্ম্পকে নবি মিখা ভবিষ্যতবানী করেছিলেন । দ্বীতিয় শতাব্দীতে ,জাষ্টিন মার্টা বর্ণনা করেন যে যিশুখ্রিস্ট শহরের বাইরে একটি গুহায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে তার সুসমাচারে বর্ণনা করেছেন, কিংবদন্তি গুহাটির অবস্থান শহরের ভিতরে সেন্ট হেলেনা নির্মিতচার্চ অফ ন্যটিভিটির কাছে। সেখানে প্রচলিত বর্ণনা অনুসারে গুহা এবং আস্তাবল রয়েছে এবং যিশুর জন্মস্থান হিসেবে সেখানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এছাড়া জায়গাটি প্রাচীন মেসপটেমিয়ান মেষপালক দেবতা তমুজ এর উপসনা স্থান ও হতে পারে। এ কাহিনী গ্রীক দার্শনিক সেলসেস ২১৫ প্যালেষ্টাইন ভ্রমনের ওপর ভিত্তি করে মেন্জার অফ যেশােসে লিখেন।
যিশুখ্রিস্টের জন্ম পবিত্র আল কুরআনে বর্নিত হয়েছে সুসমাচারের মতই, বেথলেহেমকেই যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
হেলমুট কোয়েস্টার লিখেছেন যে, যখন ইহুদি পরিবেশে ম্যাথিউর আখ্যানটি তৈরি হয়, তখন গ্রিকো-রোমান বিশ্বের কাছে লুকের আখ্যান আবেদন করার জন্য নমুনা করা হয়েছিল মাত্র।[17] বিশেষ করে, কোয়েস্টারের মতে, যীশুর সময়ে ইহুদিরা মেষপালকদের নেতিবাচকভাবে বিবেচনা করলেও, গ্রিকো-রোমান সংস্কৃতিতে তাদেরকে "স্বর্ণযুগের প্রতীক" হিসেবে দেখানো হত, যখন দেবতা ও মানুষ শান্তিতে বসবাস করত এবং প্রকৃতি সামঞ্জস্য ছিল।[17] রুডিক জুনিয়র লিখেন যে, লূকের যীশু ও জনের জন্মের বর্ণনাগুলি জেনেসিস, অধ্যায় ২৭-৪৩ থেকে অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।[18][19] নির্বিশেষে, লুকের জন্মবৃত্তান্তে যীশুকে সমস্ত মানুষের জন্য একজন ত্রাণকর্তা হিসাবে চিত্রিত করা হয়, যেখানে তিনি আদম পর্যন্ত মানবজাতির বংশ পরম্পরার সন্ধান দেন, তার সাধারণ মানবতা প্রদর্শন করেন এবং একইভাবে তার জন্মের নিচু অবস্থার কারণও দর্শান। লুক, অইহুদি শ্রোতাদের জন্য লেখা। এখানে শিশু যীশুকে বিধর্মীদের পাশাপাশি ইহুদিদের জন্য ত্রাণকর্তা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।[20] অন্যদিকে ম্যাথিউ ইহুদি কিতাবাদি থেকে বিভিন্ন উদ্ধৃতি ব্যবহার করে, মুসার জীবনের স্মৃতি ভাবাবেগ করেন, এবং তার বংশ তালিকায় একটি সাংখ্যিক সিলসিলা দেখান, যাতে যীশুকে দাউদ, ইব্রাহিম এবং ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে দেখানো যায়। লুকের উপক্রমণিকা অনেক দীর্ঘ, এতে পবিত্র আত্মার সময়কাল এবং ইহুদি ও বিধর্মী উভয়ের জন্য একজন ত্রাণকর্তার আগমনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।[21]
মূলধারার পণ্ডিতরা ম্যাথিউ-এর জন্মবৃত্তান্তকে ব্যাখ্যা করেন যে, যিশু নতুন মুসারূপে আবির্ভুত হয়েছেন, যার বংশ ইব্রাহিম পর্যন্ত পৌঁছেছে,[22][5] অথচ উলরিখ লুজ ম্যাথিউর বিবরণকে যিশুর নতুন মোশিরূপ আবার মোশির সম্পূর্ণ বিপরীত হিসাবে দেখতে চান, শুধুমাত্র মোশির গল্পের পূণরাবৃত্তি হিসেবেই না।[23] লুজ আরও উল্লেখ করেন যে, নরসংহারগাঁথায় আরও একবার সিদ্ধি উদ্ধরণ দেওয়া হয়েছে: রাহেল, বনি ইসরায়েলের মাতা, তার মৃত সন্তানদের জন্য কাঁদছেন (ম্যাথু 2:18)।[24][25]
ম্যাথিউর যীশুকে দ্বিতীয় মোশির ভূমিকায় প্রতিফলনকে যে পণ্ডিতরা ব্যাখ্যা করেন, তাদের যুক্তি হল যে, মোশির মতো শিশু যীশুও একজন খুনি অত্যাচারীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন; তিনি তার মাতৃদেশ থেকে পালিয়ে যান যতক্ষণ না নির্যাতক মারা যায় এবং তার জনগণের ত্রাণকর্তা হিসেবে ফিরে আসা নিরাপদ না হয়।[26] এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, ম্যাথিউ-এর বিবরণটি মোশির জন্ম সম্পর্কিত ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। মূসার জন্মের কথাও পুরোহিতরা ফেরাউনকে জানিয়ে দিয়েছিল; একইভাবে শিশুটিকেও হুমকি দেওয়া হয় এবং উদ্ধার করা হয়; পুরুষ ইস্রায়েলীয় শিশুদের একইভাবে একজন দুষ্ট রাজার দ্বারা হত্যা করা হয়। [27] [26]
উলরিখ লুজের মতে, ম্যাথিউ-এর বর্ণনার শুরুটা বাইবেলের প্রাচীন গল্পগুলোর মতো। যেমন, যিশুর জন্মের বার্তা (ম্যাথিউ ১:১৮-২৫)[28] ইসমাইল (জেনেসিস ১৬:১১, জেনেসিস ১৭),[29] আইজ্যাক (জেনেসিস ২১:১),[30] স্যামসনের (বিচারকগণ ১৩:৩, ১৩:৫),[31] জন্মের বিবরণগুলিকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং মূসার জন্মের হ্যাগাডিক ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তবুও লুজের দৃষ্টিতে, রূপগুলি আংশিকভাবে আশ্চর্যজনকভাবে যুগপৎ ঘটে এবং উল্টাতে দেখা যায়। যেমন সেই মিশর, পূর্বের সেই জুলুমের দেশ একটি আশ্রয়স্থল হয়ে উঠল এবং ইস্রায়েলদের রাজা ফেরাউনের ভূমিকা গ্রহণ করল! তবুও "ম্যাথিউ কেবল মোশির গল্পের পুনরাবৃত্তি" এটা তিনি মানেন না। পরিবর্তে তার মতে, যিশুর গল্পটি সত্যিই একটি নতুন গল্প: এখানে যীশু একই সাথে নতুন মোশি আবার মোশির বিপরীতও।" [32]
ম্যাথিউ ১:২২ এবং ম্যাথিউ ২:২৩ কি ওল্ড টেস্টামেন্টের নির্দিষ্ট কোন এবারতের দিকে নির্দেশ করে কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতগণ বিতর্ক করেছেন। কোডেক্স সিনাইটিকাসের মতো চতুর্থ শতাব্দীর নথিগুলোতে ম্যাথিউ ১:২২এর বিবৃতিতে ভাববাদী ইশাইয়ার উল্লেখ নেই, বিবৃতিটি: "প্রভু যা বলেছিলেন তা পূরণ করার জন্যই এই সব ঘটেছে"। কিন্তু ৫ম-৬তম শতাব্দীর ম্যাথিউ-এর কিছু কপি, যেমন কোডেক্স বেজাইতে সেটা উল্লেখ আছে। "ভাববাদী ইশাইয়া" পড়ে দেখুন।[33] ম্যাথিউ ১:২৩-এর বিবৃতিতে ["শোনো! এক কুমারী গর্ভবতী হইবে"] গ্রীক শব্দ παρθένος এর ব্যবহার পাওয়া যায় যার অর্থ "কুমারী", যেমনিভাবে সপ্ততি ইশাইয়াতেও আছে। কিন্তু ইশাইয়া ৭:১৪ কিতাবে এক্ষেত্রে হিব্রু শব্দ אלמה (আলমাহ) ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হতে পারে "কন্যা","যুবতী রমণী" বা "কুমারী মেয়ে"।[34] রেমন্ড ই. ব্রাউন বলেছেন যে, সপ্ততির খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীর অনুবাদকরা এই প্রসঙ্গে হিব্রু শব্দ אלמה (আলমাহ) বলতে যে কুমারী বোঝানো হয়েছে তা বুঝতে পেরেছিলেন বিধায় এমন গ্রিক প্রতিশব্দ ব্যবহার করেন।[34]
"তাকে একজন নাযারিন বলা হবে", ম্যাথইউ ২:২৩-র এই বিবৃতিতে ওল্ড টেস্টামেন্টের কোন নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদের উল্লেখ হয় নি, এবং এটি কী নির্দেশ করতে পারে সে সম্পর্কে একাধিক পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে।[35] বারবারা অ্যাল্যান্ড এবং অন্যান্য পণ্ডিতরা মনে করেন যে, গ্রীক শব্দ "Ναζωραίος" (Nazoréos), "নাযারিন" বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে যার ব্যুৎপত্তি ও অর্থ নির্ণেয় নয়।[36] কিন্তু এম মেনকেন বলেন যে, এটি একটি প্রত্যক্ষ নাম যা দ্বারা "নাযারেথের বাসিন্দা" বোঝানো হয়।[37] মেনকেন আরও বলেন যে, হয়তো শব্দটি দ্বারা বিচারকচরিত ১৩:৫ এ বর্ণিত শব্দটিকে বোঝানো হয়েছে।[38] গ্যারি স্মিথ বলেন যে, নাযিরিত বলতে বোঝানো হতে পারে ঈশ্বরের প্রতি পবিত্র কাউকে, অর্থাৎ একজন তপস্বীকে; অথবা ইহা ইশাইয়া ১১:১তে বিবরণের প্রতি নির্দেশ করে।[39] অক্সফোর্ড বাইবেল ভাষ্য মতে, ইশাইয়া ৪:৩-এর "নাযিরিত", "ঈশ্বরের পবিত্র অনন্যতা" শব্দের ব্যবহারের উপর একটি বুদ্ধিদীপ্ত তর্ক হতে পারে, [40] যা দ্বারা নাযারিনদের সাথে যীশুকে চিহ্নিত করা বোঝায়। নাযারিন হলো একটি ইহুদি সম্প্রদায় যারা ফরীশীদের থেকে ভিন্ন ছিল শুধুমাত্র এই কারণে যে, তারা যীশুকে মসীহ হিসাবে গ্রহণ করেছে।[41] সুইস ধর্মতাত্ত্বিক উলরিখ লুজ, যিনি সিরিয়ায় ম্যাথিয়ান সম্প্রদায়ের সন্ধান করেছেন, তিনি উল্লেখ করেছেন যে সিরিয়ার খ্রিস্টানরাও নিজেদের নাযারিন বলে ডাকে।[42]
ভিন্ন ধর্ম ইসলামে, খ্রিস্টান বলতে কিছু নেই। তাদের মতে ইসা নবীর (যীশু) অনুসারীদের "নাসারা" বা "নাসরানি" বলা হয়। মহানবী মুহাম্মদ সা এর কাছে যে সব খ্রিস্টানগণ এসেছেন তারা নিজেদের "নাসরানি" পরিচয় দিয়েছেন। কুরআনে বহু আয়াতে "নাসরানি" শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। হয়তো ভাষা ভিন্নতার কারণে 'নাযারিন' এর "য" ও 'নাসরানি' এর "স" এর উচ্চারন বেশকম হতে পারে। এ বিষয়ে ইসলাম ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেখা যেতে পারে। ডক্টর ইজ্জত হিজাযি বলেন, "নাসারা" শব্দের একবচন হল "নাসরানি"। বনী ইসরাঈলরা এই শব্দটি ব্যবহার করত "যে ব্যক্তি তাওরাতকে সমর্থন করে, তার কথা সম্পূর্ণরূপে মেনে চলে" তাদেরকে বোঝাতে। এবং "নাসারা" শব্দটি খ্রিস্টের জন্মের আগেও যারা তাওরাত সমর্থন করত তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। আরও সুনির্দিষ্ট অর্থে, ইস্রায়েলীয়দের জন্য যারা কাজ, আদেশ এবং নিষেধাজ্ঞার তাওরাতে যা আছে তা মেনে চলে তাদের নাসারা বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে নিকিয়া কাউন্সিল যখন খ্রিস্টানদের পবিত্র বাইবেল রচনার জন্য বিভিন্ন লেখা ও পুস্তক বেছে নিতে শুরু করে, তখন "নাসারা" শব্দের "তাওরাতের খেদমতকারী" অর্থটি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে গিয়ে "নাসিরাথ গ্রামের অধিবাসী"তে পরিণত হয়ে যায়। অর্থাৎ এই নামের কোন গ্রামের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়, "তাওরাত মোতাবেক জীবনচালনাকারী" অর্থটি আর রইলো না। এমনকি "নাসরানি" শব্দের আরবি অনুবাদটিও সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়ে যায়, যেটি আসলে ছিল একটি আরামীয় শব্দ। ফলে এটি "নাসারা" শব্দের সাথে প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়, যাতে "নাসিরাত" নামে পরিচিত শহরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। তাছাড়া ইসলামের ইসা তথা যীশুর জন্মবৃত্তান্ত খ্রিস্টানদের থেকে যোজন যোজন আলাদা।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.