Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রিচমন্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী। এটি রিচমন্ড মেট্রোপলিটন এলাকা ও বৃহত্তর রিচমন্ড অঞ্চলের কেন্দ্র। ১৭৪২ সালে রিচমন্ডকে স্থানীয় শাসনের আওতাভুক্ত করা হয়। ১৮৭১ সাল থেকে রিচমন্ড একটি স্বাধীন শহর (অর্থাৎ যে শহর কোনো কাউন্টির অন্তর্ভুক্ত নয়)। ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী রিচমন্ড শহরের জনসংখ্যা ২,০৪,২১৪। [1] ২০১৯ সালে রিচমন্ডের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ২,৩০,৪৩৬। রিচমন্ড জনসংখ্যায় ভার্জিনিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর।
রিচমন্ড শহরটি উইলিয়ামসবুর্গ হতে ৪৪ মাইল পশ্চিমে, শার্লটসভিল হতে ৬৬ মাইল পূর্বে, লিচবার্গ হতে ৯১ মাইল পূর্বে ও ওয়াশিংটন ডি.সি. হতে ৯২ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। শহরটি হেনরিকো ও চেস্টারফিল্ড কাউন্টির সীমানায় অবস্থিত। শহরের উল্লেখযোগ্য শহরতলিগুলো হলো- দক্ষিণ-পশ্চিমের মিডলোথিয়ান,দক্ষিণের চেস্টারফিল্ড, পূর্বের স্যান্ডস্টোন, উত্তর-দক্ষিণে গ্লেন অ্যালেন, পশ্চিমে শর্ট পাম্প ও উত্তর-পূর্বে মেকানিকসভিল। [2][3]
রিচমন্ড পোহাটান কনফেডারেসির একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম ছিল। ১৬০৯-১৬১১ সালে জেমসটাউনে ইংরেজ উপনিবেশবাদীরা এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ১৭৩৭ সালে বর্তমান রিচমন্ড শহর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৮০ সালে এটি ভার্জিনিয়া প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৭৭৫ সালে প্যাট্রিক হেনরি এখানেই তার বিখ্যাত "আমাকে স্বাধীনতা দাও, না হলে মৃত্যু দাও" শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন। থমাস জেফারসন এ শহরেই "ধর্মীয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র" রচনা করেছেন। আমেরিকান গৃহযুদ্ধে রিচমন্ড কনফেডারেট যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ছিল। বিংশ শতকে এখানে বিশ্বের অন্যতম সফল বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিবহনব্যবস্থা গড়ে ওঠে। শহরের জ্যাকসন ওয়ার্ড এলাকা আফ্রো-আমেরিকান সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র।
আমেরিকার ১৩টি ফেডারেল আপিল আদালতের একটি ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ১২টি শাখার একটি রিচমন্ড শহরে অবস্থিত। "ডোমিনিয়ন এনার্জি" ও "ওয়েস্টরক"এর মত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় এ শহরে অবস্থিত।[4]
ভার্জিনিয়ার জেমসটাউন শহরে ১৬০৭ সালের এপ্রিলে প্রথম ইংরেজ স্থায়ী বসতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ক্যাপ্টেন ক্রিস্টোফার নিউপোর্ট জেমস নদীর উত্তর-পশ্চিমে অভিযাত্রীদলকে নেতৃত্ব দেন।[5]
১৬১১ সালে হেনরিকাসে মধ্য ভার্জিনিয়ার প্রথম ইউরোপীয় বসতি স্থাপিত হয়। ১৬১৯ সালে ভার্জিনিয়ার বসতি স্থাপনকারীরা "ফলিং ক্রিক ইস্পাত কারখানা" প্রতিষ্ঠা করেন।
১৭৩৭ সালে দ্বিতীয় উইলিয়াম বার্ড মেজর উইলিয়াম মায়োকে নগর পরিকল্পনার দায়িত্ব দেন। বার্ড ইংল্যান্ডের রিচমন্ড শহরের নামানুসারে শহরটির নাম দেন "রিচমন্ড।" জেমস নদী থেকে শহরটিকে যেমন দেখায়, থেমস নদী থেকে ইংল্যান্ডকেও ঠিক তেমনি দেখায়। এ থেকেই শহরটির নাম "রিচমন্ড" হয়। [6] ১৭৩৭ সালের এপ্রিলে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় ও ১৭৪২ সালে একে স্থানীয় শাসনের আওতাভুক্ত করা হয়।[7]
১৭৭৫ সালে প্যাট্রিক হেনরির "আমাকে স্বাধীনতা দাও,নাহলে মৃত্যু দাও" বক্তৃতাটি স্বাধীনতা আন্দোলনে ভার্জিনিয়ার অংশগ্রহণের পথ সুগম করে।[8] ১৭৮০ সালের ১৮ এপ্রিল উইলিয়ামসবুর্গ থেকে রাজধানী রিচমন্ড শহরে স্থানান্তর করা হয়। ধারণা করা হয়, রিচমন্ড ব্রিটিশ আগ্রাসন থেকে সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু বেনেডিক্ট আর্নল্ডের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী রিচমন্ড পুড়িয়ে দেয় ও গভর্নর থমাস জেফারসন ভার্জিনিয়া পালিয়ে যান।[9]
১৭৮৬ সালে রিচমন্ড শহরে থমাস জেফারসন ধর্মীয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করেন। শার্ল লুই ক্লারিসো ১৭৮৮ সালে ভার্জিনিয়া ক্যাপিটল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেন।
জেমস নদী হতে কার্গো যাতায়াতের সুবিধার্থে জর্জ ওয়াশিংটন জেমস নদী ও কানাওহা খালের গতিপথ পরিবর্তন করে অ্যাপালাচিয়ান পর্বত, ওহাইও ও মিসিসিপি নদী-র সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। এতে শহরটি পানিসম্পদ ব্যবহারের এক অনন্য ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। ১৮৫০ সালে রিচমন্ড ও পিটার্সবুর্গ রেলসড়কের মাধ্যমে রিচমন্ড শহরটি ওয়াল্টহল বন্দরের সাথে যুক্ত হয়। রিচমন্ড, ফ্রেডেরিকসবুর্গ ও পোটোম্যাক রেলসড়কের মাধ্যমে শহরটি আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের সাথে যুক্ত হয়।
১৮৬১ সালের ১৭ এপ্রিল সামটার দুর্গে কনফেডারেট সৈন্যরা আক্রমণ করলে রাজ্য বিধানসভা ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে কনফেডারেট যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান করে। মন্টগামারি হতে রাজধানী রিচমন্ড শহরে স্থানান্তরিত করা হয়। রিচমন্ড শহরটি সরবরাহরেখার শেষ প্রান্তে হওয়ায় একে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ইউনিয়ন বাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য ছিল রিচমন্ড দখল করা।
আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে বড় ইস্পাত ও অস্ত্র কারখানা রিচমন্ড শহরে অবস্থিত ছিল। ভার্জিনিয়া বিধানসভা ভবনে কনফেডারেট বিধানসভা গড়ে ওঠে। এর দুই ব্লক দূরেই কনফেডারেট রাষ্ট্রপতির বাসভবন অবস্থিত ছিল। ১৮৬২ সালের জুন-জুলাইয়ে জেনারেল জর্জ বি ম্যাকক্লেয়ান রিচমন্ড দখলের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন।
১৮৬৫ সালের মার্চে রিচমন্ডকে রক্ষা করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ১ এপ্রিল ফিলিপ শেরিডান কনফেডারেট জেনারেল জর্জ পিকেটকে পরাজিত করেন। অতঃপর তার সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়ে ৫,০০০ কনফেডারেট সৈন্যকে হত্যা করে। তখন কনফেডারেট সেনাবাহিনীর প্রধান রবার্ট ই লি রাষ্ট্রপতি জেফারসন ডেভিস-কে রিচমন্ড ত্যাগের অনুরোধ জানান।
১৮৬৫ সালের ২ এপ্রিল কনফেডারেটরা রিচমন্ড থেকে পলায়ন করে। যাওয়ার আগে তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে। ১৮৬৫ সালের ৩ এপ্রিল শহরের মেয়র আত্মসমর্পণ করেন। ইউনিয়ন বাহিনী আগুন নিভাতে সক্ষম হলেও শহরের ২৫% স্থাপনা পুড়ে যায়।
আব্রাহাম লিংকন ৩ এপ্রিল জেনারেল ইউলিসেস এস গ্রান্টের সাথে পিটার্সবুর্গ শহরে দেখা করেন এবং সেখান থেকে তিনি রিচমন্ড শহরে পৌঁছান। সেখানে কনফেডারেট যুদ্ধ প্রতিমন্ত্রী জন এ ক্যাম্পবেলকে তিনি আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ক্যাম্পবেল মনে করেন, লিংকন দাসপ্রথা বহাল রাখতে সম্মত হয়েছেন। তাই লিংকন এ প্রস্তাব খারিজ করে দেন। সেলার্স খাঁড়িতে ৮,০০০ কনফেডারেট সৈন্যের মৃত্যুর পর রবার্ট ই লি আত্মসমর্পণ করেন।
গৃহযুদ্ধের পরে বিশ্বের প্রথম তিন-রেলসড়কের-মিলনস্থল এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়। শহরটি তামাকব্যবসায়ও সাফল্য করে। ১৮৮৮ সালে এখানে বিদ্যুচ্চালিত স্ট্রিটকার পরিবহনব্যবস্থা চালু হয়। এর পরিবর্তে ১৯৪৯ সালে সম্পূর্ণ বাসভিত্তিক পরিবহনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
১৯০৩ সালে ম্যাগি এল ওয়াকার এখানে সেন্ট লুক পেনি সেভিংস ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন ও এর প্রথম মহিলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। তিনি আমেরিকার প্রথম মহিলা ব্যাংক-সভাপতি। এর বর্তমান নাম "কনসোলিডেটেড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রাস্ট কোম্পানি"। এটি দেশের প্রাচীনতম আফ্রো-আমেরিকান ব্যাংক। [10] ১৯১০ সালে ম্যানচেস্টার ও ১৯১৪ সালে বার্টন হেইটস, গিন্টার পার্ক ও হাইল্যান্ডস পার্ক রিচমন্ডের সাথে যুক্ত করা হয়। [11] ১৯১৪ সালে এখানে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯২০ এর দশকে এখানে কতগুলো থিয়েটার বা রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৫ সালে শহরের প্রথম রেডিও স্টেশন ডব্লিউআরভিএ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। এখানে পরবর্তীতে ডব্লিউটিভিআর টিভি স্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।[12]
১৯৬৮ সালের অক্টোবরে এখানে ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালে এর আয়তন ২৭ বর্গমাইল বৃদ্ধি করা হয়। চেস্টারফিল্ড কাউন্টির বাসিন্দারা এর বিরোধিতা করলেও সুপ্রিম কোর্টে হেরে যান।
রিচমন্ড শহরটির আয়তন ৬২ বর্গমাইল। এর ৬০ বর্গকিলোমিটার স্থল ও বাকিটুকু জল।[13] শহরটি পিটার্সবুর্গের ২১.৬৯ মাইল উত্তরে, শার্লটসভিলের ৬৬.১০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে, নরফোকের ৭৯.২৪ মাইল উত্তর-পশ্চিমে, ওয়াশিংটন ডিসির ৯৬.৮৭ মাইল দক্ষিণে ও র্যালেইয়ের ১৩৮.৭২ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
রিচমন্ডের জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় ধরনের। গ্রীষ্মকালে জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র, শীতকালে আবহাওয়া সামান্য ঠাণ্ডা থাকে। তাপমাত্রা কদাচিৎ ০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে নেমে আসে। বছরে গড়ে ১০.৫ ইঞ্চি তুষারপাত হয়।
২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী রিচমন্ডের জনসংখ্যা ২,০৪,২১৪। বাসিন্দাদের ৫০.৬% কৃষ্ণাঙ্গ, ৪০.৮% শ্বেতাঙ্গ, ২.৩% এশীয়, ০.৩% আদিবাসী আমেরিকান ও ০.১% প্রশান্ত মহাসাগরীয়। এদের ৬.৩% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।[14]
শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ৩৮,৩৪৮ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩০,৮৭৪ ও মহিলাদের গড় আয় ২৫,৮৮০ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ২০,৩৩৭ ডলার। ১৭.১% পরিবার ও ২১.৪% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের মধ্যে ৩২.৯% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ১৫.৮% এর বয়স ৬৫ এর উপরে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.