Loading AI tools
ভারত,মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার সীমান্তবর্তী জলের একটি দেহ। উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
লাক্ষাদ্বীপ সাগর বা লক্ষদ্বীপ সাগর ভারত (কেরল রাজ্য ও লাক্ষাদ্বীপ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল), মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রের সীমান্তে অবস্থিত ক্ষুদ্রতর জলরাশি। এটি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমে, কেরল রাজ্যের পশ্চিমে, তামিলনাড়ু রাজ্যের দক্ষিণে এবং লাক্ষাদ্বীপকে বেষ্টন করে অবস্থিত। এই উষ্ণস্রোতের সাগরে সারাবছর একই রকম তাপমাত্রা লক্ষ্য করা যওয়ায় জলজ প্রাণীর প্রাচুর্য দেখা যায়। শুধুমাত্র মান্নার উপসাগরেই রয়েছে ৩,৬০০ জলজ প্রজাতি। এই সাগরের উপকূল বরাবর রয়েছে মাঙ্গলুরু, কণ্ণুর, কালিকট, পোন্নানি, কোচি, কোল্লাম, তিরুবনন্তপুরম, তুতিকোরিন, কলোম্বো এবং মালের মতো বড়ো শহরগুলি। ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণতম বিন্দু কন্যাকুমারীও লাক্ষাদ্বীপ সাগরের সীমানা নির্দেশ করছে।[2][3]
আন্তর্জাতিক জল সর্বেক্ষণ সংগঠন লাক্ষাদ্বীপ সাগরের সীমানা নির্ধারণ করেছে এভাবে:[4]
পশ্চিম দিকে: কর্ণাটক রাজ্যে পশ্চিম সীমা বরাবর উত্তরে সদাশিবগড় (১৪°৪৮′ উত্তর ৭৪°০৭′ পূর্ব) থেকে কোরাদিভি (১৩°৪২′ উত্তর ৭২°১০′ পূর্ব) পর্যন্ত এবং লাক্ষাদ্বীপের পশ্চিম দিকে সীমান্ত থেকে মালদ্বীপ হয়ে সর্বদক্ষিণে মালদ্বীপের দক্ষিণতম বিন্দু আড্ডু প্রবালদ্বীপ।
দক্ষিণ দিকে: শ্রীলঙ্কার দক্ষিণতম দেবীনুবর থেকে পশ্চিম দিকে মালদ্বীপের দক্ষিণতম বিন্দু আড্ডু প্রবালদ্বীপ।
পূর্ব দিকে: শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের পশ্চিম সমুদ্রতট ভূমি।
উত্তর-পূর্ব দিকে: ভারত ও শ্রীলঙ্কার সংযোগ স্থাপনকারী আদম সেতু বা রাম সেতু।
লাক্ষাদ্বীপ সাগরে জলের উষ্ণতা সারা বছর প্রায় একই রকম থাকে, যা গ্রীষ্মকালে গড়ে ২৬–২৮ °সেন্টিগ্রেড এবং শীতকালে গড়ে ২৫ °সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা পরিমেয়। প্রতি হাজার এককে উত্তর ও মধ্য অংশের লবণাক্ততা ৩৪‰ এবং দক্ষিণ অংশের লবণাক্ততা ৩৫.৫‰ পর্যন্ত হয়ে থাকে। উপকূলবর্তী অঞ্চলে বালুকাময় হলেও সমুদ্রের অভ্যন্তর পলিকণাতে পরিপূর্ণ। সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে প্রবাল প্রাচীর দেখতে পাওয়া যায়। এরমধ্যে লাক্ষাদ্বীপ ১০৫ টি প্রবাল প্রজাতি যুক্ত প্রবালদ্বীপের সমাহার।[1][5][6]
মান্নার উপসাগর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল পিঙ্কটাডা রেডিয়াটা এবং পিঙ্কটাডা ফিউকাটা এই দুই প্রকার শুক্তির মুক্তার ভাণ্ডারের জন্য বিখ্যাত। রোমান লেখক, প্রকৃতিবিদ ও দার্শনিক প্লিনিও এই অঞ্চলের মুক্তাচাষকে বিশ্বের অন্যতম উৎকৃষ্ট ও উৎপাদনক্ষম বলে উল্লেখ করেছেন।[7][8] যদিও সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাকৃতিকভাবে মুক্তা আহরণ যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল কিন্তু তা সত্ত্বেও মান্নার উপসাগর অঞ্চলে এর বহুল প্রচলন করেছে।[9][10] মুক্তা সাথে সাথে শঙ্খ উৎপাদনেও মনোরম হওয়ায় আহরণের ক্ষেত্রে এই অঞ্চল যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করেছে।[9] আহরিত শঙ্খের বাজন খোলস বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। সমুদ্রের অন্যান্য কম্বোজী প্রাণী[11] হয় দুর্লভ নতুবা তার ধর্মীয় ব্যবহার ভারত বা ভারতীয় উপমহাদেশে লক্ষ্য করা যায় না, ফলে সেগুলির অর্থনৈতিক বিশেষ গুরুত্বও নেই।[12]
লাক্ষাদ্বীপ সাগরের অপর একটি ঐতিহ্যগত জীবিকা হলো মাছ চাষ ও মাছ ধরা। লাক্ষাদ্বীপ সাগরে আহরিত মৎস্যের পরিমাণ বার্ষিক ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টন পরিমাণ, যার অধিকাংশ প্রায় ৭০ শতাংশই টুনা মাছ এবং বাকি অংশের সিংহভাগই হাঙর। প্রবাল প্রাচীরের নিকটস্থ স্থানগুলিতে পার্চ, হাফবিক, ক্যারাঙ্গিডি, নিডলফিশ, রেফিশ প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। মাছ ধরার জন্য লাক্ষাদ্বীপ সাগরের দ্বীপগুলির বাসিন্দারা চিংড়ি, একেলাটা পর্বের প্রাণী[1] এবং ছোটো মাছ হিসাবে স্প্র্যাটাস, পোমাসেণ্ট্রিডি এবং অ্যাপোগনিডি প্রজাতির মাছ ব্যবহার করে থাকেন।[13]
প্রায় ৩,৬০০ প্রজাতির জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদ সংবলিত মান্নার উপসাগর সারাবিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক জীবতাত্ত্বিক উৎস গুলির মধ্যে একটি। ৩,৬০০ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে শনাক্তকৃত ৪৪ টি সংরক্ষিত প্রজাতি, ১১৭ টি প্রবাল প্রজাতি, ৭৯ টি কর্কটী প্রজাতি, ১০৮ টি স্পঞ্জ প্রজাতি, ২৬০ টি কম্বোজী প্রজাতি, ৪৪১ টি পাখনা মাছের প্রজাতি, ১৪৭ টি সমুদ্রশৈবাল প্রজাতি ও ১৭ টি লবণাম্বুজ প্রজাতি।[14] ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ৫৬০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত ২১ টি দ্বীপ ও তার আশেপাশের সমুদ্রকে ঘিরে তামিলনাড়ু রাজ্যে তৈরী করা হয় মান্নার উপসাগর সামুদ্রিক জাতীয় উদ্যান। এই জাতীয় উদ্যান এবং আশেপাশের নিরাপদ অঞ্চল (বাফার জোন) ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের আওতায় আসে। মান্নার উপসাগর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পেয়ে সমুদ্রের ১০,৫০০ বর্গকিলোমিটার হয়। সাগর, দ্বীপ ও উপকূল জুড়ে বিস্তৃত এই সংরক্ষণটি ভারতের বৃহত্তম জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ। এই সংরক্ষিত অঞ্চলে বাইরে থেকে পর্যটক যাতায়াত নিষিদ্ধ এবং নৌপরিবহন কড়া নিয়ম এর মাধ্যমে সীমাবদ্ধ,[15] তবে স্থানীয়রা এই অঞ্চলে মৎস্যচাষের সঙ্গে যুক্ত এবং এটিই তাদের প্রধান জীবিকা। প্রায় ১,৫০,০০০ জন এই সংরক্ষণের নিরাপদ অঞ্চলে (বাফার জোন) বাস করেন এবং ৭০ শতাংশের অধিক উপকূলীয় সামুদ্রিক উৎসের উপর ভিত্তি করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানে ১২৫ টি মৎস্য শিকার কেন্দ্রিক গ্রাম রয়েছে যেখানে প্রায় ৩৫,০০০ ধীবর, ২৫,০০০ জন সামুদ্রিক শসা সংগ্রহ ও ৫,০০০ জন নারী সমুদ্র শৈবাল সংগ্রহের সাথে যুক্ত।[16][17] ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১,০৬,০০০ টন আজ মান্নার উপসাগর থেকে উত্তোলিত হয়েছিল। এর মধ্যে মূলত ছিল সার্ডিনেল্লা লঙ্গিসেপ্স, ছোট সার্ডিন, লেটোগ্নেথাস স্পিসিস, ম্যাকারেল, পেনেইডি চিংড়ি, পার্চ, স্কুইড, পুয়েরুলাস সেওয়েল্লি, কাঁকড়া, স্কেটফিশ ও রেফিশ।[12][18] সমুদ্র শৈবালের সংগ্রহ মূলত অগভীর জলের থেকে করা হয়ে থাকে এগুলির মধ্যে রয়েছে জেলিডিয়েলা অ্যাসেরোসা, গ্রাসিলারিয়া এডুলিস (আগারোফাইট), সারগ্যাসাম স্পিসিস, তুর্বিনারিয়া (অ্যালগিনোফাইট) এবং আলভা ল্যাকটুকা, যা মূলত অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে উত্তোলিত হয়। জাতীয় উদ্যানের সীমাবদ্ধতার জন্য এখানে সমুদ্রশৈবাল উত্তোলনের পরিমাণ ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ৫,৮০০ টন (শুষ্ক ওজন) থেকে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩,২৫০ টনে কমে যায়।[19]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.