Loading AI tools
ভিত্তোরিও দে সিকা পরিচালিত ১৯৪৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (ইতালীয়: Ladri di biciclette, অনুবাদ 'সাইকেল চোর') ১৯৪৮ সালে ভিত্তোরিও দে সিকা নির্মিত একটি ইতালীয় নব্যবাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র।[3][4] লুইজি বার্তোলিনির একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটির চিত্রনাট্য রচনা করেন সিসারে জাভাত্তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রোম শহরে এক দরিদ্র পিতা ও তার পুত্রের চুরি হয়ে যাওয়া সাইকেল অনুসন্ধানের গল্প চিত্রিত হয়েছে এ চলচ্চিত্রে।[5] এতে পিতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন লামবের্তো মাজ্জোরানি এবং তার পুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেন এনজো স্তায়োলা।
লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে | |
---|---|
পরিচালক | ভিত্তোরিও দে সিকা |
প্রযোজক | জিউসেপ্পে আমাতো |
রচয়িতা | ভিত্তোরিও দে সিকা সিসারে জাভাত্তিনি সুসু চেচ্চি দামিকো জেরার্দো গুয়েরিরি ওরেস্তে বিয়ানকোলি আদলফো ফ্রাঙ্কি গল্প: লুইজি বার্তোলিনি |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | আলেসান্দ্রো চিচোগনিনি |
চিত্রগ্রাহক | কার্লো মনতোরি |
সম্পাদক | এরালদো দ্য রোমা |
পরিবেশক | ইতালি: এন্তে নাজিওনেল ইন্দাস্ত্রি সিনেমাতোগ্রাফিক যুক্তরাষ্ট্র: আর্থার মেয়ার জোসেফ বার্স্ট্রিন |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ৯৩ মিনিট |
দেশ | ইতালি |
ভাষা | ইতালীয় |
নির্মাণব্যয় | $১৩৩,০০০[2] |
আয় | $৩৭১,১১১ (যুক্তরাষ্ট্র)[1] |
চলচ্চিত্রটি ১৯৪৮ সালের ২৪শে নভেম্বর ইতালিতে এবং ১৯৪৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায়। এটি ইতালীয় নব্যবাস্তবতাবাদী শ্রেষ্ঠকর্ম হিসেবে বিবেচিত। ছবিটি ১৯৫০ সালে একটি একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার লাভ করে। মুক্তির মাত্র চার বছর পরেই ছবিটি সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের আয়োজিত ভোটে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সমালোচকদের ভোটে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি লাভ করে,[6] এবং ৫০ বছর পর একই ভোটে ছবিটি সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে।[7] এটি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এর তালিকাভুক্ত সেরা দশ চলচ্চিত্রের একটি যা আপনার ১৪ বছর বয়সের মধ্যে দেখা উচিত বলে বিবেচিত।[8]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর রোমের পার্শ্ববর্তী শহর ভাল মেলাইনায় আন্তোনিও রিচ্চি তার স্ত্রী মারিয়া ও পুত্র ব্রুনোর ভরণপোষণের জন্য কাজের সন্ধান করছে। সে বিজ্ঞাপনের পোস্টার লাগানোর কাজ পায়, কিন্তু মারিয়াকে জানায় যে তার এই চাকরিতে যোগ দিতে একটি সাইকেল লাগবে। মারিয়া তাদের বিয়েতে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত বিছানার চাদরগুলো বন্ধক রেখে সাইকেল নেয়। মারিয়া সাইকেলের ক্রসবারে বসে ও আন্তোনিও সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফিরার পথে মারিয়া তাকে এক স্থানে সাইকেল থামাতে বলে। আন্তোনিও আবিষ্কার করে এক ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল সে চাকরি পাবে। মারিয়া তার ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যাওয়ার কারণে তাকে টাকা দেয়। আন্তোনিও তাকে তার এই বোকামির জন্য তাচ্ছিল্য করে।
প্রথম দিন আন্তোনিও পুত্র ব্রুনোকে নিয়ে কাজে যায়। কাজের প্রথম দিনে মইয়ের উপর ওঠে পোস্টার লাগানোর সময় এক যুবক তার সাইকেল চুরি করে পালায়। আন্তোনিও তার পিছে তাড়া করে কিন্তু চোরের এক বন্ধু পথ আটকালে সে তাকে হারিয়ে ফেলে। পুলিশ তাকে জানায় তারা তেমন কিছুই করতে পারবে না এবং জানায় যে চুরিকৃত জিনিসপত্র পিয়াজ্জা ভিত্তোরিও বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। আন্তোনিও তার কয়েকজন বন্ধু ও ব্রুনোকে নিয়ে সেখানে সাইকেলের খুঁজে যায়। একটি সাইকেল আন্তোনিও সাইকেলের মত দেখতে পেয়ে তারা পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করে, কিন্তু সাইকেলের নম্বর মিলে না।
পোর্তা পর্তাসে বাজারে আন্তোনিও ও ব্রুনো চোরকে এক বৃদ্ধের সাথে খুঁজে পায়। চোর তাদেরকে এড়িয়ে যায় এবং বৃদ্ধ লোকটি না জানার ভান করে। তারা লোকটিকে একটি গির্জা পর্যন্ত অনুসরণ করে এবং সেখানে সেও তাদের থেকে পালিয়ে যায়। ব্রুনো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়লে আন্তোনিও তাকে থাপ্পর দিলে ব্রুনো কাঁদতে শুরু করে। ব্রুনো একটি পুলের উপর বসে থাকে এবং আন্তোনিও বৃদ্ধ লোকটির খুঁজে যায়। হঠাৎ একটি ছেলে পানিতে ডুবে যাচ্ছে এমন হৈ-হুল্লোড় শুনে সে ফিরে আসে এবং ডুবন্ত ছেলেটি ব্রুনো নয় তা দেখে স্বস্তি অনুভব করে। আন্তোনিও একটি রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবারের জন্য নিয়ে যায় এবং সাময়িক সময়ের জন্য দুঃখ ভুলার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের পাশে একটি ধনী পরিবারকে উন্নত খাবার খেতে দেখে আন্তোনিওর পুনরায় তার দুঃখ-দুর্দশা ও তার সাইকেল হারানোর কথা মনে পড়ে।
হতাশ আন্তোনিও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টার কাছে যায়। ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা তাকে জানায় সে হয় আজ তার সাইকেল খুঁজে পাবে নয়ত কখনো পাবে না। ভবিষ্যৎ দ্রষ্টার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার আর ব্রুনো পুনরায় চোরের সাথে দেখা হয়। আন্তোনিও তাকে একটি পতিতালয়ে খুঁজে পায়, সেখানকার বাসিন্দারা তাদের সেখান থেকে বের করে দেয়। রাস্তায় কথোপকথন ও ধরপাকড়ে আন্তোনিও চোরকে অভিযুক্ত করে বিচার চাইলে জনগণ আন্তোনিওকেই দোষারোপ করে। এই সময় ব্রুনো একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে আসে যে চোরের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে কিছুই পায় না। পুলিশ আন্তোনিওকে জানায় মামলাটি দুর্বল, তার পক্ষে কোন সাক্ষী নেই এবং প্রতিবেশীরাও চোরের চুরির ঘটনাস্থলে না থাকার ওজর দেখায়। এমতাবস্থায় আন্তোনিও ও ব্রুনো প্রতিবেশীদের বিদ্রুপ ও হুমকির মধ্য থেকে নিরাশ হয়ে সে স্থান ত্যাগ করে।
বাড়ি ফিরার পথে তারা দেখলো ফুটবল স্টেডিয়াম স্তাদিও নাজিওনেল পিএনএফ এ খেলা চলছিল এবং বাইরে সারিবদ্ধ সাইকেল তাদের মালিকের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। আন্তোনিও একটি দরজার কাছে সারি থেকে বিচ্ছিন্ন একটি সাইকেল দেখলো। সে কতক্ষণ বিক্ষিপ্ত পদচারণার পর মাথার টুপি নিয়ে হাতে ব্রুনোর পাশে বসল। খেলা শেষ হলে সকলেই তাদের সাইকেল নিয়ে পথে নামল। সে পুনরায় পদচারণা শুরু করল। তারপর ব্রুনোকে কিছু পয়সা দিয়ে বলল কোন গাড়ি ধরে নিকটস্ত কোন স্টপে নেমে তার জন্য অপেক্ষা করতে।
আন্তোনিও সারি থেকে বিচ্ছিন্ন সাইকেলটির দিকে সাহস নিয়ে এগিয়ে যায় এবং তাতে দ্রুত চড়ে বসে। সেই মুহূর্তেই গাড়ি ধরতে না পাওয়া ব্রুনো হৈ-হুল্লোড় শুনতে পায় এবং দেখতে পায় তার বাবাকে চারদিকে অনেক মানুষ ঘিরে ধরে আছে, সাইকেল থেকে নামিয়ে থাপ্পড় ও অপমান করছে এবং তার মাথার টুপি মাটিতে পড়ে আছে। যখন আন্তোনিওকে পুলিশ থানার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সাইকেলের মালিক দেখতে পায় ব্রুনো মাটি থেকে আন্তোনিওর মাথার টুপি তুলছে। দয়া পরবেশ হয়ে সে অন্যদের আন্তোনিওকে ছেড়ে দিতে বলে।
আন্তোনিও ও ব্রুনো ভীড়ের মধ্যে ধীরে ধীরে হেঁটে যায়। ব্রুনো তার বাবার হাতে তার মাথার টুপি দেয়, ক্রন্দনরত আন্তোনিও হতবুদ্ধি হয়ে সামনে এগিয়ে যায়। একটি ট্রাক তার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় তার কাঁধে লেগে ব্যাথা পেলেও সে সামনের দিকে যেতে থাকে। তারা অল্প সময়ের জন্য একে অপরের দিকে তাকায়। আন্তোনিও তার কান্নাকে দমন করে, ব্রুনো তার হাত ধরে হাটতে থাকে এবং তারা ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়।
লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে ছবিটি ইতালীয় নব্যবাস্তবতাবাদ বিষয়ক শ্রেষ্ঠকর্ম হিসেবে বিবেচিত। নব্যবাস্তববাদ আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৫ সালে রোবার্তো রোসেলিনির রোমা, চিত্তা আপের্তা দিয়ে, যা চলচ্চিত্রে বাস্তববাদের এক অভিনব মাত্রা যোগ করে।[9] দে সিকা এই ছবির কাজে হাত দেওয়ার অল্প কিছুদিন পূর্বে বিতর্কিত শুশশা (১৯৪৬) চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। তিনি বড় কোন স্টুডিও থেকে এই চলচ্চিত্রের জন্য আর্থিক সাহায্য পান নি। ফলে তিনি নিজেই তার বন্ধুদের কাছ থেকে এই চলচ্চিত্রের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইতালির দারিদ্র ও বেকারত্ব তুলে ধরতে চান তিনি।[10][11] কবি ও চিত্রকর লুইজি বার্তোলিনির সেই সময়ের স্বল্প পরিচিত উপন্যাসের শিরোনাম ও কয়েকটি কাহিনীচিত্র অবলম্বনে তিনি এবং সিসারে জাভাত্তিনি ও অন্যান্যরা মিলে চলচ্চিত্রের গল্প ও চিত্রনাট্য রচনা করেন।[12]
প্রাত্যহিক জীবনে নাটকীয়তার উন্মোচন, দৈনিক সংবাদে বিস্ময়। -আব্বিয়ামো দোমান্দাতো আ দে সিকা পেরকে ফা উন ফিল্ম দাল লাদ্রো দি বিচিক্লেত্তে (আমরা দে সিকাকে প্রশ্ন করেছিলাম কেন তিনি 'সাইকেল চোরের' উপর চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন) এ ভিত্তোরিও দে সিকা – লা ফিয়েরা লেত্তেরারিয়া, ৬/২/৪৮
কুশীলবদের মধ্যে কেউই প্রশিক্ষিত অভিনয়শিল্পী ছিলেন না, যেমন - লামবের্তো মাজ্জোরানি ছিলেন একজন ফ্যাক্টরি শ্রমিক। কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর ভূমিকা তাদের বাস্তব জীবনের সাথে মিল থাকায় তা চলচ্চিত্রে বাস্তববাদ যোগ করে।[13] মাজ্জোরানি তার পুত্রকে চলচ্চিত্রের অডিশনের জন্য নিয়ে আসলে দে সিকা তাকে এই চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন। পরে দে সিকা রাস্তায় বাবার ফুল বিক্রির কাজে সাহায্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের নির্মাণ দেখতে আসা ৮ বছর বয়সী এনজো স্তায়োলাকে ব্রুনো চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন।[10]
নব্যবাস্তবতাবাদের আলোকে দে সিকা শুধুমাত্র লোকেশনেই চিত্রগ্রহণ করেন এবং কোন স্টুডিও সেট ব্যবহার করেন নি। চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যে যেখানে আন্তোনিও ও ব্রুনো ক্যামেরা কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছিল তা ছিল চার্লি চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। চ্যাপলিন ছিলেন দে সিকার প্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা।[10]
লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে ইতালিতে মুক্তি পাওয়ার পর চলচ্চিত্রটি ইতালীয়দের নেতিবাচকভাবে দেখানোর জন্য বৈরিতার মুখোমুখি হয়। ইতালীয় সমালোচক গুইদো আরিস্তার্কো ছবিটির প্রশংসা করেন, কিন্তু তার অভিযোগ ছিল যে ছবিটি "অতি আবেগপ্রবণতা কিছু ক্ষেত্রে শৈল্পিক আবেগকে ছাপিয়ে গেছে।" সমসাময়িক ইতালীয় নব্যবাস্তববাদী চলচ্চিত্র পরিচালক লুকিনো ভিসকোন্তি চলচ্চিত্রটির সমালোচনা করে বলেন, লাম্বের্তো মাজ্জিওরানির সংলাপ একজন পেশাদারী অভিনেতাকে দিয়ে ডাবিং করানোটা একটা ভুল ছিল।[10] যে উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দে সিকা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন সে বইয়ের লেখক লুইজি বার্তোলিনি চলচ্চিত্রটির ব্যাপারে উচ্চমাত্রার সমালোচনা করেন এবং বলেন বইটির যে রকম ভাবগাম্ভীর্য ছিল তা ছবিতে সম্পূর্ণ প্রকাশ পায় নি, কারণ তার উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির বুদ্ধিজীবী এবং তার মূলভাব ছিল নৈরাজ্যপূর্ণ সমাজতন্ত্রের মুখে সভ্য সমাজের পতন।[14]
চলচ্চিত্রটি দেশের বাইরে মুক্তির পর ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং উচ্চ প্রশংসিত হয়। চলচ্চিত্র পর্যালোচনাভিত্তিক ওয়েবসাইট রটেন টম্যাটোস-এ ৫৪ জন সমালোচকের পর্যালোচনার ভিত্তিতে ৯.১/১০ গড়ে ছবিটির রেটিং স্কোর ৯৮%। ওয়েবসাইটির পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, "ইতালীয় নববাস্তববাদের একটি আদর্শ চলচ্চিত্র বাইসাইকেল থিবস এর উজ্জ্বল অভিনয় এবং আবেগের মধ্য দিয়ে উন্নতি লাভ করেছে।"[15]
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সমালোচক বসলি ক্রোথার তার পর্যালোচনায় চলচ্চিত্রটি এবং এর বার্তার প্রশংসা করেন। তিনি লিখেন, "ভিত্তোরিও দে সিকার আধুনিক নাগরিক জীবনের দুঃখপূর্ণ নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র দ্য বাইসাইকেল থিফ দিয়ে ইতালীয়রা পুনরায় আমাদের একটি মেধাদীপ্ত এবং বিধ্বস্ত চলচ্চিত্র দিয়েছে।" তিনি ছবিটিকে "হতাশার হৃদয়-বিদারক চিত্র" বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এটি "এখানে [ওয়ার্ল্ড থিয়েটার] তার পরম জয়জয়কারের সমস্ত পূর্বাভাস দিচ্ছে।"[4] সিনেমা দাউজোর্দ-এ পিয়ের লেপ্রোহন লিখেন, "ছবিতে শুরুতে যে চরিত্রে দেখানো হয়েছে তা নয় বরং এর চূড়ান্ত সময়ে যা দেখানো হয়েছে সামাজিক স্তরে তা কখনোই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। রিচ্চি যে পরিস্থিতির স্বীকার ও সংকোচিত মানুষ, যিনি তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন, তা বুঝতে হলে শুধু তার চেহারা, তার উদ্দেশ্যবিহীন চলাফেরা, তার দ্বিধাগ্রস্ত বা ভীতিজনক মনোভাবের দিকে নজর দিতে হবে।" লত্তে এইজনার এটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী শ্রেষ্ঠ ইতালীয় চলচ্চিত্র বলে উল্লেখ করেন এবং রবার্ট উইনিংটন এটিকে "ব্রিটিশ চলচ্চিত্রে কোন বিদেশি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সফল অন্তর্ভুক্তি" বলে উল্লেখ করেন।[10]
১৯৯০ এর দশকে চলচ্চিত্রটি পুনরায় মুক্তি পেলে সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল-এর চলচ্চিত্র সমালোচক বব গ্রাহাম ছবিটির ইতিবাচক সমালোচনা করেন এবং লিখেন, "অপেশাদার অভিনয়শিল্পীগণ বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, পিতার ভূমিকায় লামবের্তো মাজ্জোরানি এবং পুত্রের ভূমিকায় এনজো স্তায়োলা, যাকে কখনো কখনো ক্ষুদ্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে দেখা গেছে। তারা দে সিকার যুদ্ধোত্তর ইতালি অবিচ্ছিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে। জীবনের চাকা পরিবর্তিত হয় এবং মানুষকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে নিচে নিয়ে যায়; সকালে যে উপরে থাকে রাতের মধ্যে সে নিচে চলে যায়। দে সিকার এই চলচ্চিত্রকে এই গল্পকে এর বাইরে অন্য কোন রূপে চিন্তা করা অসম্ভব।"[16] শিকাগো সান-টাইমস-এর সমালোচক রজার ইবার্ট চলচ্চিত্রটিকে ৪-এ ৪ রেটিং দিয়েছেন এবং বলেন, "দ্য বাইসাইকেল থিফ দাপ্তরিক শ্রেষ্ঠকর্ম হিসেবে এতটা সু-প্রোথিত যে অনেক বছর পর পুনরায় এটা দেখলে অল্পই চমকে যাবেন এবং বুঝতে পারবেন যে তা এখনো সজীব এবং এর শক্তি এবং সতেজতা রয়েছে।"[6] দ্য গার্ডিয়ান-এর সমালোচক পিটার ব্র্যাডশ ছবিটিকে ৫-এ ৫ দিয়েছেন এবং বলেন, "নব্যবাস্তববাদ ভিত্তোরিও দে সিকার ধ্রুপদী বাইসাইকেল থিবস ছবিটি বাস্তবতাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।" তিনি ছবিটি সম্পর্কে আরও বলেন, এটি "মেধাদীপ্ত ও কৌশলবর্জিত শিল্পের বাস্তব কর্ম।"[17]
পুরস্কার | বছর | পুরস্কারের বিভাগ | মনোনীত | ফলাফল | সূত্র |
---|---|---|---|---|---|
লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব | ১৯৪৯ | বিশেষ জুরি পুরস্কার | লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে | বিজয়ী | |
ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ পুরস্কার | ১৮ ডিসেম্বর ১৯৪৯ | শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র | বিজয়ী | [18] | |
শ্রেষ্ঠ পরিচালক | ভিত্তোরিও দে সিকা | বিজয়ী | |||
নিউ ইয়র্ক ক্রিটিকস সার্কেল পুরস্কার | ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ | শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র | লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে | বিজয়ী | [19] |
গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার | ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ | শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র | বিজয়ী | [20] | |
একাডেমি পুরস্কার | ২৩ মার্চ ১৯৫০ | একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র) | বিজয়ী | [21] | |
শ্রেষ্ঠ লেখনী, চিত্রনাট্য | সিসারে জাভাত্তিনি | মনোনীত | |||
বাফটা পুরস্কার | ২৯ মে ১৯৫০ | শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (যেকোন ভাষা) | লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে | বিজয়ী | [22] |
বডিল পুরস্কার | ৩০ এপ্রিল ১৯৫১ | শ্রেষ্ঠ ইউরোপীয় চলচ্চিত্র | বিজয়ী | [23] |
চলচ্চিত্রটি বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র পরিচালকদের প্রভাবিত করেছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইরানীয় নিউ ওয়েব পরিচালক জাফর পানাহী[26] এবং দারিয়ুশ মেহরজুই।[10] এই চলচ্চিত্রটিকে তাদের প্রেরণা বলে দাবী করেন এমন অন্যান্য পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন বাঙালি পরিচালক সত্যজিৎ রায়[27] ও বিমল রায়,[28] ইংরেজ পরিচালক কেন লোক,[29] ইতালীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় পরিচালক জিওর্জিও মাঞ্জিয়ামেলে,[30] ভারতীয় পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ,[31] বালু মহেন্দ্র, বাসু চ্যাটার্জী[32] এবং ইসাও তাকাহাতা।
১৯৭৮ সালের জামাইকান চলচ্চিত্র রকার্স ছবির কিছু অংশ এই ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে।[33] এই চলচ্চিত্রটিকে ১৯৮৫ সালের টিম বার্টন পরিচালিত কাল্ট ক্লাসিক পি-উইস বিগ অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্রের উৎস সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে পি-উই হারমান তার চুরি হওয়া সাইকেল সারা দেশব্যাপী খুঁজে বেড়িয়েছেন।[34] ইতালীয় পরিচালক মরিজিও নিকেত্তির ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত লাদ্রি দি সাপোনেত্তে ছবিটির নাম এই ছবির নাম থেকে অনুপ্রাণিত এবং এই ছবিটিকে ব্যঙ্গ করেছে।[35]
২০১৪ ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণ ভল্লুক প্রাপ্ত সুইডিশ ব্ল্যাক-কমেডিধর্মী এন দুভা সাত পা এন গ্রেন ওখ ফুন্দেরাদে পা তিলভারন ছবির পরিচালক রয় অ্যান্ডারসন বলেন তার ছবিটি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে থেকে অনুপ্রাণিত।[36][37] নেটফ্লিক্সের ধারাবাহিক মাস্টার অব নান এর দ্বিতীয় মৌসুমের প্রথম পর্বটি (২০১৭) এই চলচ্চিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। পর্বের শুরুতে দেখা যায় ছবিটির ডিভিডি ডেভের ডিভিডি স্ট্যান্ডের সবার উপরে অবস্থান করছে এবং এই ছবির সাইকেল চোরকে তাড়া করার মত ডেভও ইতালির এক শহরে তার মুঠোফোন চোরকে তাড়া করছে।[38]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.