হর্ষবর্ধন
ভারতীয় সম্রাট যিনি উত্তর ভারত শাসন করেছিলেন (প্রা. ৫৯০-৬৪৭) (শাসন করেছিলেন ৬০৬-৬৪৭) / From Wikipedia, the free encyclopedia
হর্ষবর্ধন বা হর্ষ (৫৯০–৬৪৭ খ্রিস্টাব্দ) উত্তর ভারতের এক খ্যাতনামা সম্রাট যিনি ৬০৬ থেকে ৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ (মতান্তরে ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত শাসন করেন। তিনি পুষ্যভূতি বংশীয় রাজা প্রভাকর বর্ধনের সন্তান ছিলেন।
হর্ষবর্ধন | |
---|---|
মহারাজাধিরাজ বা সকলোত্তরপথনাথ | |
উত্তর ভারতের শাসক | |
রাজত্ব | আনু. ৬০৬ – আনু. ৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ |
পূর্বসূরি | রাজ্যবর্ধন |
উত্তরসূরি | অরুণাস্ব |
জন্ম | ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দ, থানেশ্বর, ভারত[2][3] |
মৃত্যু | ৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ, কনৌজ, ভারত[4] |
রাণী | পুষ্পবতীএবং রাজা বায়ুসেনের কন্যা দুর্গাবতী |
রাজবংশ | বর্ধন বংশ (পুষ্যভূতি) |
পিতা | প্রভাকরবর্ধন |
মাতা | যশোমতী |
ধর্ম | শৈব, পরবর্তীতে বৌদ্ধধর্ম |
৬ষ্ঠ শতকের মাঝের দিকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে উত্তর ভারত ছোট ছোট প্রজাতন্ত্র ও রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বড় ভাই থানেসারের রাজা রাজ্যবর্ধন গৌড়ের সম্রাট শশাংকের হাতে নিহত হলে ৬০৬ সালে হর্ষকে রাজা ঘোষণা করা হয়; তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। [5] হর্ষ পাঞ্জাব থেকে মধ্য ভারত পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রগুলোকে একত্রিত করেন। ক্ষমতার শীর্ষে পশ্চিমে পাঞ্জাব থেকে শুরু করে পূর্ব বঙ্গ ও ওড়িশা পর্যন্ত এবং দক্ষিণে নর্মদা নদীর উত্তরে অবস্থিত সমস্ত সিন্ধু-গাঙ্গেয় অববাহিকাতে হর্ষবর্ধনের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। নর্মদার দক্ষিণে রাজ্য বিস্তার করার চেষ্টা করার সময় দক্ষিণে চালুক্য বংশীয় রাজা দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে পরাজিত হন ৬১৮-৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে।
হর্ষের রাজত্বে সুশাসন এবং শান্তি বজায় থাকার কারণে বহুদূর দেশ থেকেও বহু শিল্পী , বিদ্বান ব্যক্তি ও ধর্ম প্রচারক তার রাজসভায় সমাদৃত হন। চিনা পরিব্রাজক হিউয়েনসাঙ্ রাজা হর্ষের রাজসভায় উপনীত হন এবং তার রাজসভার সুবিচার এবং রাজার দানশীলতার সম্বন্ধে প্রশস্তি বাক্য লেখেন নিজের ভ্রমণকাহিনীতে।
হর্ষবর্ধন কবিতা ও নাটক লিখতেন। তিনি নাগানন্দ, প্রিয়দর্শিকা এবং রত্নাবলী নামের তিনটি সংস্কৃত নাটক লেখেন। কনৌজ শহর ছিল হর্ষবর্ধনের রাজধানী এবং এখানে শিল্প-সাহিত্যের চর্চা হত। বিখ্যাত বাণভট্ট হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন। তিনি হর্ষবর্ধনের জীবনীমূলক গ্রন্থ হর্ষচরিত রচনা করেন; এটি ছিল সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রথম ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থ। হর্ষবর্ধন প্রথম জীবনে এক জন শৈব হলেও পরবর্তীকালে তিনি বৌদ্ধধর্মের অনুসারী হন; তিনি ভারতে বহু বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন এবং নালন্দা মহাবিদ্যালয়ে অনেক দান করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় রাজা যিনি চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।