Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হুসাইন বিন তালাল (Arabic: حسين بن طلال, Ḥusayn bin Ṭalāl; ১৪ নভেম্বর ১৯৩৫ – ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯) ছিলেন জর্ডানের বাদশাহ। ১৯৫২ সালে তার পিতা তালাল বিন আবদুল্লাহ ক্ষমতা ত্যাগ করার পর থেকে শুরু করে ১৯৯৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাদশাহ ছিলেন।[1] স্নায়ুযুদ্ধ ও আরব-ইসরায়েলি সংঘাতের সময়জুড়ে তার শাসনকাল বিস্তৃত ছিল।[2] ১৯৯৪ সালে তিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেন। আনোয়ার সাদাতের পর তিনি দ্বিতীয় আরব রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
হুসাইন বিন তালাল حسين بن طلال | |
---|---|
জর্ডানের বাদশাহ | |
রাজত্ব | ১১ আগস্ট ১৯৫২ – ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ |
পূর্বসূরি | তালাল বিন আবদুল্লাহ |
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় আবদুল্লাহ |
জন্ম | আম্মান, ট্রান্সজর্ডান আমিরাত | ১৪ নভেম্বর ১৯৩৫
মৃত্যু | ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ ৬৩) আম্মান, জর্ডান | (বয়স
সমাধি | রাগাদান প্রাসাদ |
দাম্পত্য সঙ্গী | দিনা বিনতে আবদুল হামিদ (বি. ১৯৯৫; বিচ্ছেদ. ১৯৫৭) প্রিন্সেস মুনা আল-হুসাইন (বি. ১৯৬১; বিচ্ছেদ. ১৯৭২) আলিয়া আল-হুসাইন (দাম্পত্যজীবন: ১৯৭২-৭৭; আলিয়ার মৃত্যু) রাণী নুর (দাম্পত্যজীবন: ১৯৭৮–৯৯; হুসাইনের মৃত্যু) |
বংশধর Details and adopted children | প্রিন্সেস আলিয়া বিনতে হুসাইন দ্বিতীয় আবদুল্লাহ প্রিন্স ফয়সাল বিন আল হুসাইন প্রিন্সেস আয়িশা বিনতে আল হুসাইন প্রিন্সেস জাইন বিনতে আল-হুসাইন প্রিন্সেস হায়া বিনতে আল হুসাইন প্রিন্স আলি বিন আল হুসাইন প্রিন্স হামজা বিন আল হুসাইন প্রিন্স হাশিম আল হুসাইন প্রিন্সেস ইমান বিনতে আল হুসাইন প্রিন্সেস রাইয়াহ বিনতে আল হুসাইন |
রাজবংশ | আল-হাশিম |
পিতা | তালাল বিন আবদুল্লাহ |
মাতা | জাইন আল-শারাফ তালাল |
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি) |
স্বাক্ষর |
হুসাইন নবী মুহাম্মদ এর সরাসরি বংশধর বলা হয়।[2]
হুসাইন ১৯৩৫ সালের ১৪ নভেম্বর আম্মানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাদশাহ তালাল বিন আবদুল্লাহ এবং রাণী জাইন আল-শারাফ তালালের সন্তান। আম্মানে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করার পর তিনি মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়ার ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশোনা করেছেন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডের হ্যারো স্কুলে ভর্তি হন। এখানে তার চাচাত ভাই দ্বিতীয় ফয়সালের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। এরপর তিনি রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে পড়াশোনা করেছেন।
১৯৫১ সালের ২০ জুলাই হুসাইন তার দাদা বাদশাহ প্রথম আবদুল্লাহর সাথে জুমার নামাজের জন্য জেরুজালেম যান। এদিন আবদুল্লাহ আততায়ীর হাতে নিহত হন। তবে হুসাইন হামলা থেকে বেঁচে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে হুসাইনের দিকে বন্দুকধারী আততায়ী নিশানা করে কিন্তু ইউনিফর্মের মেডেলে লাগার কারণে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।[2]
১৯৫১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তাকে যুবরাজ নিযুক্ত করা হয়। বাদশাহ তালাল তার মানসিক অসুস্থতাজনিত (ইউরোপীয় ও আরব চিকিৎসকদের মতে স্কিজোফ্রেনিয়া) কারণে পদত্যাগ করার পর ১৯৫২ সালের ১১ আগস্ট হুসাইনকে বাদশাহ ঘোষণা করা হয়।[3] এসময় হুসাইনের বয়স ছিল ১৬ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত শাসনকাজ পরিচালনার জন্য এসময় একটি কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল। ১৯৫৩ সালের ২ মে তিনি সিংহাসনে বসেন।[2]
১৯৫৬ সালের মার্চে হুসাইন জর্ডান সেনাবাহিনীর প্রধান গ্লাব পাশাকে অপসারণ করেন এবং সেনাবাহিনীর অন্যান্য ব্রিটিশ অফিসারদের স্থলে জর্ডানি অফিসার নিয়োগ করেন। গোত্রীয় সম্পর্কের কারণে এই নতুন বাহিনী তার প্রতি অধিক অনুগত ছিল।
হুসাইনের শাসনামলে আঞ্চলিক শান্তি রক্ষার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। ১৯৬৩ সালের দিকে হুসাইনের সাথে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবা ইবান ও গোল্ডা মেয়ার বৈঠক করেন। জর্ডানের সাথে ইসরায়েলের দীর্ঘতম স্থলসীমান্ত রয়েছে। জর্ডান এসময় ইসরায়েলের সাথে শান্তি বজায় রাখতে চেয়েছিল।
হুসাইন ইসরায়েলের সাথে আলোচনার পক্ষে ছিলেন। ইরাক ও সিরিয়ার বাথপন্থি শাসন এবং নাসেরের আরব জাতীয়তাবাদি আদর্শ সামরিক বাহিনীর উপর প্রভাব বিস্তার করার ঘটনা এই ইচ্ছার উপর প্রভাব ফেলেছে। ১৯৬৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর হুসাইন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী লেভি এশকলের প্রতিনিধি কূটনৈতিক ইয়াকভ হার্জগের মধ্যে প্রথম গোপন বৈঠক হয়।[4]
১৯৬৬ সালের ১৩ নভেম্বর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বাদশাহ হুসাইনের সাথে স্বাক্ষরিত একটি গোপন চুক্তি লঙ্ঘন করে জর্ডানের সীমানার ভেতরে অভিযান চালায়। এটি সামু ঘটনা নামে পরিচিত।
ইসরায়েলের সাথে শান্তিপূর্ণ অবস্থা মেনে চলার জন্য হুসাইনের প্রচেষ্টা অন্যান্য আরব নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। মিশরের রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসের প্রায় হুসাইনকে "সাম্রাজ্যবাদের ভৃত্য" হিসেবে অভিহিত করতেন।[5] সেনাপ্রধান জাইদ বিন শাকির একটি সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করে বলেন যে যদি জর্ডান যুদ্ধে যোগ না দেয় তবে জর্ডানে গৃহযুদ্ধ দেখা দেবে।[6] দেশে এবং আরব বিশ্বে বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখার জন্য তিনি ১৯৬৭ সালের ৩০ মে মিশরের সাথে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
জর্ডানের নাগরিকদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য হুসাইন অর্থনৈতিক ও শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৬০ এর দশকে জর্ডানের মূল শিল্প যেমন ফসফেট, পটাশ ও সিমেন্ট শিল্প গড়ে তোলা হয়। এছাড়াও দেশজুড়ে মহাসড়কের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়।
সামাজিক সূচকে হুসাইনের সাফল্য প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৫০ সালে শুধুমাত্র ১০% জর্ডানি পানি, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুত সুবিধা পেত। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৯% শতাংশ হয়েছে। ১৯৬০ সালে ৩৩% জর্ডানি শিক্ষিত ছিল। ১৯৯৬ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫.৫% হয়। ১৯৬১ সালে জর্ডানের বাসিন্দাদের গড় দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ছিল ২১৯৮ ক্যালরি। ১৯৯২ সাল নাগাদ তা ৩৭.৫% বৃদ্ধি পায় এবং পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০২২ ক্যালরি। ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮১ ও ১৯৯১ সালের মধ্যে জর্ডানের শিশু মৃত্যু হার হ্রাস সবচেয়ে দ্রুততম ছিল। ১৯৮১ সালে এই হার ছিল প্রতি হাজারে ৭০ জন, ১৯৯১ সালে এই হার দাঁড়ায় প্রতি হাজারে ৩৭ জন।
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধে জর্ডান পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ হারায়। এসময় দ্বিতীয়বারের মত ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুরা জর্ডানে ব্যাপক আকারে প্রবেশ করতে থাকে। তাদের অনেককে জর্ডানের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিস্তিনির উপস্থিতির কারণে তারা কিছু কিছু এলাকায় তারা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠে।[7]
১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে বিতাড়নের জন্য হুসাইন জর্ডানের সেনাবাহিনীকে আদেশ দেন। ১৯৭১ সালের জুলাই পর্যন্ত ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের উপর হামলা চালানো হয়। এসময় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নির্বাসিত হয়, তাদের অধিকাংশ প্রতিবেশী লেবাননে পালিয়ে যায়।[8]
১৯৬৭ সালের যুদ্ধ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ২৪২ গ্রহণের পর গানার জেরিং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার বিশেষ প্রতিনিধি নিযুক্ত হন এবং জেরিং মিশনের নেতৃত্ব দেন। মিশর ও ইসরায়েল উভয়ে শান্তি প্রক্রিয়ার সমর্থনে জেরিঙের প্রস্তাবে সাড়া দেয়, তবে এই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি হয়নি।[9] মিশরের রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত এবং সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি হাফিজ আল আসাদ ১৯৭৩ সালে বাদশাহ হুসাইনের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে সাক্ষাত করেন। কিন্তু পুনরায় ইসরায়েলের কাছে অঞ্চল হারানোর আশঙ্কায় তিনি তা নাকচ করে দেন। তিনি পশ্চিম তীরকে জর্ডানের অংশ বলে মনে করতেন। কিন্তু আনোয়ার সাদাত প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতকে প্রতিশ্রুতি দেন যে যুদ্ধে বিজয়ী হলে পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনিদেরকে দেয়া হবে, তাই হুসাইন সন্দিহান ছিলেন। ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারকে আসন্ন সিরিয়ান আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য হুসাইন গোপনে হেলিকপ্টার করে তেল আভিভ রওয়ানা হন।[10] গোল্ডা মেয়ার তার কাছে জানতে চান যে সিরিয়ানরা কি মিশরীয়দের ছাড়া যুদ্ধ করবে কিনা? জবাবে হুসাইন বলেন যে তিনি তেমন মনে করেন না এবং তার ধারণা মিশরীয়রা সহযোগিতা করবে।[11]
১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর জর্ডানকে ছাড়া মিশর ও সিরিয়া ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করে। ২৩ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়। তবে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত লড়াই চলেছিল। ১৪ মাসব্যপী মিশর, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর ১৯৭৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মিশরের রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিনের মধ্যে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৯৪ সালে হুসাইন ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধাবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত করেন। এসময় ইসরায়েল-জর্ডান শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৬০ এর দশকে তিনি গোপনে ইসরায়েলের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছিলেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে ইসরায়েলি নেতৃস্থানীয়দের সাথে তিনি কমপক্ষে ৫৫ বার গোপন বৈঠক করেছেন। এই নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে কমপক্ষে সাতজন প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।[12]
আলোচনার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হওয়ায় রবিনের শেষকৃত্যে হুসাইনকে বিশেষ বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
১৯৯৬ সালের ১৩ মার্চ মিশরের শার্ম আল-শাইখে "শান্তিপ্রতিষ্ঠাতাদের সম্মেলন" অনুষ্ঠিত হয়। মিশরের রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারক এর আয়োজন করেছিলেন। বাদশাহ হুসাইন ছাড়াও তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সুলাইমান ডেমিরেল, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি বরিস ইয়েলতসিন এতে অংশ নেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনার ব্যাপারে এই সম্মেলন হয়।
হুসাইন অনেক সময় ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। বলা হয় যে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে তার ১১ ঘণ্টাব্যপী হস্তক্ষেপের পর ফিলিস্তিনি চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের হেবরন শহরের অধিকাংশ থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার বিষয়ে এক চুক্তিতে উপনীত হন।
১৯৯৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দুইজন মোসাদ এজেন্ট জর্ডানে বসবাসরত খালিদ মিশালকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এর ফলে চুক্তি ঝুকির মুখে পড়ে। হুসাইন একে জর্ডানের সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেন এবং মিশালের মৃত্যু হলে তিনি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবেন বলে সতর্ক করে দেন। তবে মিশাল এই হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান।[13]
১৯৯৮ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন ওয়াই নদী মেমোরেন্ডামে অংশ নেয়ার জন্য হুসাইনকে আমন্ত্রণ জানান। এসময় হুসাইন ক্যামোথেরাপি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
১৯৯৮ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে হুসাইনের লিম্ফেটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মেয়ো ক্লিনিকের চিকিৎসকরা তার রোগ নির্ণয় করেছিলেন। চিকিৎসার জন্য তিনি ক্যামোথেরাপি গ্রহণ শুরু করেন। চিকিৎসকরা তার সুস্থতার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জর্ডানের টেলিভিশনে দেয়া বক্তৃতায় জর্ডানের জনগণকে তিনি জানান যে তার রোগ নিরাময়যোগ্য। তবে তিনি দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন। ক্যান্সারের কারণে ইতিপূর্বে ১৯৯২ সালে তার একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।[14]
১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফেরার সময় তিনি লন্ডনে যাত্রাবিরতি করেন।[15] দুর্বলতার কারণে চিকিৎসকরা তাকে কয়েক সপ্তাহের জন্য ইংল্যান্ডে বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি জর্ডানে ফিরে আসেন[16]
জর্ডানে ফিরে আসার পর পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সাধারণ নাগরিকদের স্রোত তাকে স্বাগত জানায়। জর্ডানের সরকারি সূত্রমতে এই সংখ্যা ৩০ লক্ষ।[7]
মৃত্যুর পূর্বে হুসাইন তার অসিয়ত পরিবর্তন করেছিলেন। ইতিপূর্বে তার ভাই হাসান বিল তালান উত্তরসুরি মনোনীত হয়েছিলেন। হুসাইন তা বদলে তার পুত্র দ্বিতীয় আবদুল্লাহ উত্তরসুরি মনোনীত হন। ১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাবস্থা থেকে তিনি জর্ডানে ফিরে আসেন।
সেই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হুসাইন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশিদিনব্যাপী প্রভাব ফেলা নেতাদের অন্যতম।[2] ৪৬ বছর যাবত তিনি জর্ডানের বাদশাহ ছিলেন। এসময় তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের একজন প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিস্টিয়ান আমানপোরকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন যে, আরব-ইসরায়েলি সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।[17]
৮ ফেব্রুয়ারি তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তার পাঁচ পুত্রের সকলে, বিদেশি ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন। এছাড়া হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৮,০০,০০০ জর্ডানি নাগরিক অংশ নেয়।[18][19]
তার মৃত্যুর পরে তার পুত্র দ্বিতীয় আবদুল্লাহ জর্ডানের বাদশাহ হন।
হুসাইন একজন শৌখিন রেডিও অপারেটর ছিলেন এবং তার কাছে দ্য রেডিও সোসাইটি অফ হ্যারোর সম্মানসূচক সদস্যপদ ছিল। এছাড়াও তিনি আমেরিকান রেডিও রিলে লীগের আজীবন সদস্য ছিলেন।[20] [21] শৌখিন রেডিও সম্প্রদায়ের কাছে তার জনপ্রিয়তা ছিল। এসকল অপারেটরদের তিনি তার উপাধির বদলে শুধু নাম দ্বারা সম্বোধন করতে বলতেন।
হুসাইন এছাড়াও একজন প্রশিক্ষিত পাইলট ছিলেন। উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার চালানো তার শখ ছিল। তার মোটরসাইকেল সংগ্রহের শখও ছিল।[22] জর্ডানের রাণী নুরের লিপ অফ ফেইথ: মেমোয়ার্স অফ এন আনএক্সপেক্টেড লাইফ বইয়ের পেপারব্যাক সংস্করণে তাদের দুইজনের হার্লে-ডেভিডসনে চড়ার ছবি ছিল।
বাদশাহ হুসাইন চারবার বিয়ে করেছেন:
হুসাইন নিম্নোক্ত জর্ডানি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন:
রাস্তা, চত্বর, পার্ক
হুসাইন, জর্ডানের রাজার পরিবার | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.