হোবার্ট
অস্ট্রেলিয়ার টাসমানিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী শহর / From Wikipedia, the free encyclopedia
হোবার্ট (ইংরেজি: Hobart) অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া (Tasmania) অঙ্গরাজ্যের রাজধানী, বৃহত্তম শহর ও প্রধান বন্দর। এটি ট্যাসমেনিয়া দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ডারওয়েন্ট নদীর তিন কিলোমিটার প্রশস্ত মোহনার কাছে নদীটির পশ্চিম তীরে অবস্থিত। নদীমুখ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। শহরটি তুষারাবৃত ওয়েলিংটন পর্বতের (Wellington) (উচ্চতা ১২৭০ মিটার) পূর্বপাশের ঢাল ও পাদদেশ ধরে অবস্থিত। নগরীর দক্ষিণে নেলসন পর্বতটি অবস্থিত। হোবার্ট অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দক্ষিণের নগরী। এছাড়া এটি সিডনী নগরীর পরে দেশটির দ্বিতীয় প্রাচীনতম অঙ্গরাজ্য-পর্যায়ের রাজধানী। হোবার্ট মহানগর এলাকাটিকে “বৃহত্তর হোবার্ট” বলা হয়; মূল হোবার্ট নগরীটি এর পাঁচটি স্থানীয় প্রশাসনিক অঞ্চলের একটি গঠন করেছে।[4] হোবার্টের জলবায়ু মৃদু নাতিশীতোষ্ণ মহাসাগরীয় ধরনের। গ্রীষ্মকালের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা জানুয়ারি মাসে ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। অন্যদিকে শীতকালে জুলাই মাসে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে।
হোবার্ট তাসমানিয়া | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক | ৪২°৫২′৫০″ দক্ষিণ ১৪৭°১৯′৩০″ পূর্ব | ||||||||
জনসংখ্যা | ২,১৭,৯৭৩ (2013)[1] (11th) | ||||||||
• জনঘনত্ব | ১২৪.৮/বর্গ কি.মি. (৩২৩/ব.মা.) (2011)[2] | ||||||||
প্রতিষ্ঠার তারিখ | 20 February 1804[3] | ||||||||
আয়তন | ১,৬৯৫.৫ বর্গ কি.মি.(৬৫৪.৬ বর্গমাইল) | ||||||||
সময় অঞ্চল | AEST (ইউটিসি+10) | ||||||||
• দিবালোক সংরক্ষণ সময় | AEDT State: Tasmania. (ইউটিসি+11) | ||||||||
অবস্থান |
| ||||||||
রাজ্য নির্বাচনী এলাকা | Denison, Franklin | ||||||||
কেন্দ্রীয় বিভাগ | Denison, Franklin | ||||||||
|
ব্রিটিশ বসতিস্থাপনের আগে এখানে সম্ভবত ৩৫ হাজার বছর ধরে অর্ধ-যাযাবর আদিবাসী তাসমানীয় জাতির নুয়েন্নোনে (অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব) গোত্রের মৌহিনিয়ার উপগোত্রটি বাস করত।[5] এদের বংশধরেরা বর্তমানে নিজেদেরকে পালাওয়া (Palawa) নামে ডাকে। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের সাথে ভয়াবহ যুদ্ধ এবং তাদের সংস্পর্শে এসে নতুন রোগের শিকার হয়ে আদিবাসীদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। বর্তমানে প্রায় ৫% তাসমানীয় অধিবাসী নিজেদেরকে আদিবাসীদের বংশধর বলে দাবী করে। ১৭৯৮ সালে ব্রিটিশ নাবিক জর্জ ব্যাস (George Bass) মোহনা এলাকাটিতে অভিযান চালান এবং সেটির অবস্থান দেখে চমৎকৃত হন। পাঁচ বছর পরে ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের প্রশাসক গভর্নর ফিলিপ গিডলি কিং (Philip Gidley King) সরাসরি ব্রিটিশ শাসনাধীন নয় এমন সমস্ত জেলাগুলিতে ফরাসি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে একজন লেফটেন্যান্টকে পাঠান যার দায়িত্ব ছিল ডারওয়েন্ট নদীর তীরে রিজডন কোভ (Risdon Cove) এলাকাতে একটি বসতি স্থাপন করা। এই বসতিটির নাম দেওয়া হয়েছিল হোবার্ট টাউন (Hobart Town) বা হোবার্টন (Hobarton)। বাকিংহামশার.বাকিংহামশারের ৪র্থ আর্ল, যুক্তরাজ্যের যুদ্ধ ও উপনিবেশ বিষয়ক সচিব ও তদানীন্তন অস্ট্রেলীয় উপনিবেশগুলির সচিব লর্ড রবার্ট হোবার্টের (Robert Hobart) নামে শহরটির নামকরণ করা হয়। ১৮০৪ সালে পোর্ট ফিলিপ বসতি পরিত্যাগকারী সেনা, বসতিস্থাপক ও অপরাধীদের সাথে রিজডন কোভের বাসিন্দাদেরকে কাপ্তান ডেভিড কলিন্সের অধীনে বর্তমান হোবার্ট শহর যেখানে অবস্থিত, সেই স্থানে অর্থাৎ সালিভান্স কোভে (Sullivans Cove) সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে শহরটিকে মূলত ব্রিটিশ অপরাধীদের শাস্তিদানকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হত। এই সব অপরাধীদেরকে নতুন উপনিবেশটির নির্মাণকাজে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। কোনও কোনও অপরাধী পালিয়ে যায়; এইসব ফেরারি অপরাধীদেরকে বুশরেঞ্জার বলা হত। বাকীরা শেষ পর্যন্ত মুক্তি লাভ করে এবং হোবার্ট উপনিবেশের উন্নয়নে সাহায্য করে। ১৮৪২ সালে বসতিটিকে একটি নগরীর মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি এটি দক্ষিণ মহাসাগরে তিমি ও সীলমাছ শিকারী জাহাজগুলির একটি প্রধান বন্দরে পরিণত হয়। এগুলির পাশাপাশি শহরটিতে সংশ্লিষ্ট শিল্প যেমন জাহাজ নির্মাণ শিল্পও উন্নতিলাভ করে। কিন্তু মূল অস্ট্রেলীয় ভূখন্ডের তুলনায় ট্যাসমেনিয়া দ্বীপের প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার সীমিত ছিল বলে শহরটির উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৮২৫ সালে হোবার্ট টাউন শহরকে ট্যাসমেনিয়ার রাজধানী বানানো হয়। প্রশাসনিক নথিতে বা গেজেটে ১৮৪২ সালে এটিকে একটি বিশপশাসিত শহর, ১৮৫২ সালে একটি পৌরসভা এবং ১৮৫৭ সালে একটি ধর্মনিরপেক্ষ শহর হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ১৮৮১ সালে শহরটির নাম বদলে হোবার্ট রাখা হয়। ১৯৫৭ সালে হোবার্ট শহরের প্রান্তসীমায় দাবানল ছড়িয়ে পরে এবং এতে প্রায় ১০০০ ঘরবাড়ি বিনষ্ট হবার পাশাপাশি ৫৩ জন লোকের প্রাণহানি ঘটে।
হোবার্ট শহরে একটি চমৎকার গভীর পানির বন্দর আছে যেটি জোয়ারভাটার প্রভাবমুক্ত। এর পোতাশ্রয়টি বিশ্বের ২য় গভীরতম প্রাকৃতিক বন্দর। জাহাজ পরিবহন শহরের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হোবার্ট ভৌগলিকভাবে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা এবং দক্ষিণ মহাসাগরের কাছে অবস্থিত। একারণে এটিকে অ্যান্টার্কটিকার প্রবেশদ্বার শহর হিসেবে গণ্য করা হয়। হোবার্ট অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের অ্যান্টার্কটিকা-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের জন্য প্রধান বন্দর। প্রতি বছর অস্ট্রেলীয় গবেষণা জাহাজ অরোরা অস্ট্রালিসের (Aurora Australis) জন্য বন্দরটি ২ হাজার টন মালামাল ওঠায়। হোবার্ট বন্দরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজ ও প্রমোদতরীর জন্য অবকাঠামো আছে। ফরাসি বরফভাঙা জাহাজ লাস্ত্রোলাবের (l'Astrolabe) একটি সরবরাহ বিন্দু হিসেবে কাজ করে। অস্ট্রেলীয় ও ফরাসি অ্যান্টার্কটিক প্রকল্পগুলির প্রধান বন্দর হল হোবার্ট। এখানে অ্যান্টার্কটিক অভিযান চালনাকারী অন্যান্য দেশ এবং অ্যান্টার্কটিক প্রমোদভ্রমণের জন্য সেবার ব্যবস্থা আছে। অ্যান্টার্কটিক ও দক্ষিণ মহাসাগরীয় অভিযানের জন্য শীতল জলবায়ুসহ সামগ্রী, সেবা ও বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞ জ্ঞান, ইত্যাদি দেবার জন্য এ বন্দরে বিশেষ সুব্যবস্থা আছে। গ্রীষ্মের মাসগুলিতে হোবার্ট শহরটি প্রমোদতরীগুলির একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল । ২০১৬-২০১৭ গ্রীষ্মকালে এরকম ৪৭টি প্রমোদতরী হোবার্ট বন্দরে ভেড়ে। শহর থেকে উত্তর ও উত্তর-পূর্বে মালবাহী রেলপথ চলে গিয়েছে। শহরটি চ্যানেল, মিডল্যান্ড, হুঅন এবং ট্যাসমান মহাসড়কগুলির সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এখানে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও আছে, যেখান থেকে বিমানে করে মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন এবং রাজধানী ক্যানবেরা ছাড়া পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার উইলকিন্স বিমান অবতরণস্থলে (Wilkins Runway ) পৌঁছানো যায়। এসব কিছু মিলে হোবার্ট যোগাযোগ ও বাণিজ্যের একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ট্যাসমেনীয় সরকারের অনুদানে নির্মিত মেট্রো ট্যাসমেনিয়া বাস ব্যবস্থাটি হোবার্ট শহরের একমাত্র গণপরিবহন ব্যবস্থা। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ছয়টি লেনে ট্রাম চলত, যেগুলির লাইন আজও পুরাতন রাস্তাগুলিতে দেখতে পাওয়া সম্ভব। মূল হোবার্ট শহরটি ট্যাসমান সেতু (১৯৬৫) এবং বাওয়েন সেতুর (১৯৮৪) মাধ্যমে ডারওয়েন্ট নদীর পশ্চিম তীরে ও পূর্ব তীরে গড়ে ওঠা শহরতলীগুলির সাথে সংযুক্ত।
হোবার্টে অর্থনীতি মূলত এর সেবাখাতের উপরে নির্ভরশীল, যার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, সরকারী প্রশাসন, খুচরা ব্যবসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত। হোবার্ট বন্দরটি একটি প্রধান জাহাজযোগে পণ্য প্রেরণ কেন্দ্র। এই বন্দর থেকে মূলত পশম, খনিজ আকরিক, তক্তা, শস্য, আজিঘ এবং ফল রপ্তানি করা হয়। শহরে ধাতু (দস্তা) গলনকেন্দ্র, চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, ময়দা ও কাঠের তক্তা বানানোর কারখানা, মদ চোলাইকরণ কারখানা এবং পশমদ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পকারখানা অবস্থিত। আরও আছে মিষ্টদ্রব্য, বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, আসবাবপত্র ও অন্যান্য পণ্য নির্মাণের কারখানা। ১৯৭০-এর দশকের পরে মহানগরী এলাকাতে শিল্পকারখানার অবনতি ঘটে। তবে ২১শ শতকে এসেও ডারওয়েন্ট নদীর তীরে অবস্থিত একটি দস্তা গলন-পৃথকীকরণ কারখানা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজের কারখানা রয়েছে। স্থানীয় অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০১৬ সালে হোবার্টে ১৮ লক্ষ পর্যটক বেড়াতে আসেন, যা পার্থ বা ক্যানবেরা থেকে বেশি এবং ব্রিসবেনের সমান।[6]
হোবার্টে ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলি বিশেষ যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলির বেশিরভাগই জর্জীয় ও ভিক্টোরীয় আমলের বেলেপাথরে তৈরি স্থাপত্য। ফলে হোবার্ট শহরটিতে একটি অনন্য "পুরনো বিশ্ব" আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। একসময় এই স্থাপনাগুলির স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য লজ্জার বিষয় ছিল, কেননা এগুলি শহরটির অপরাধীবহুল অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু বর্তমানে এগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করার অন্যতম হাতিয়ার। শহরকেন্দ্রের বেশি কিছু এলাকা, যেমন সালামানকা চত্ত্বরটির কাছে, শহরের অনেকগুলি ঐতিহ্যবাহী হিসেবে চিহ্নিত ভবনগুলি বিদ্যমান। এছাড়া শহরতলীগুলিতেও ঐতিহাসিক বাসভবন ও অভিজাতদের জাঁকজমকপূর্ণ বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের তুলনায় হোবার্টে সুউচ্চ ভবনের সংখ্যা খুবই কম। এর আংশিক কারণ হল ডারওয়েন্ট নদী ও ওয়েলিংটন পর্বতের কাছে অবস্থিত বলে ভবনের উচ্চতার উপর আরোপিত বিধিনিষেধ। হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন মঞ্চভবন অবস্থিত, যার নাম থিয়েটার রয়াল। হোবার্ট শহরে অ্যাংলিকান ও রোমান ক্যাথলিক ক্যাথেড্রাল ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম ইহূদি মন্দিরটি (১৮৪২-১৮৪৫) অবস্থিত। এখানে ১৮৯০ সালে ট্যাসমেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়াও এখানে আরও কিছু মহাবিদ্যালয়, সংসদ ভবন, রাজ্য গ্রন্থাগার, এবং ট্যাসমেনীয় জাদুঘর ও শিল্প প্রদর্শনীকেন্দ্র অবস্থিত; শেষোক্তটিতে আদিবাসী ইতিহাস ও সংস্কৃতির জন্য নিবেদিত একটি শিল্পকলা প্রদর্শনীস্থল আছে। শহরের নিকটে অবস্থিত বিনোদন এলাকাগুলির মধ্যে আছে রেস্ট পয়েন্ট ক্যাসিনো (Wrest Point Casino, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম আইনসম্মত ক্যাসিনো), ওয়েলিংটন পর্বত, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত নেলসন পর্বতমালা, এবং বেলরিভ (Bellerive) নামক সমুদ্রসৈকতস্থিত পর্যটনকেন্দ্র। রয়াল টাসমেনিয়ান বোটানিকাল গার্ডেনস শহর থেকে কিছু দূরে অবস্থিত একটি বিনোদন স্থল। এটি অস্ট্রেলিয়ার ২য় প্রাচীনতম উদ্ভিদ উদ্যান এবং এখানে ছয় হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদের সংগ্রহ আছে। এছাড়া একটি সামুদ্রিক জাদুঘর আছে, যাতে হোবার্টের সাথে সমুদ্রের সম্পর্কের উপর পাঠদান করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম সামরিক ঘাঁটিটিও এখানে অবস্থিত, যেখানে বর্তমানে সামরিক জাদুঘর অবস্থিত। পুরাতন ও নতুন শিল্পকলা জাদুঘর বা মিউজিয়াম অফ ওল্ড অ্যান্ড নিউ আর্ট (Museum of Old and New Art, MONA) দক্ষিণ গোলার্ধের বৃহত্তম ব্যক্তিমালিকানাধীন জাদুঘর। নদীর তীরে অবস্থিত সালামাংকা চত্ত্বরে প্রতি শনিবার যে সালামাংকা হাটটি বসে, সেখানে ৩০০টি অস্থায়ী দোকানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টাটকা খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি স্থানীয় হস্ত ও কারুশিল্পজাত দ্রব্য বিক্রি করা হয়। এছাড়া ক্যাসকেড ব্রিউয়ারি বা মদ চোলাইকরণ কারখানা ও ক্যাডবেরি চকলেট প্রস্তুতকারক কারখানা দুইটিও পর্যটকদের জন্য আগ্রহজনক। ট্যাসমেনিয়ার অন্যান্য অংশে ভ্রমণ করতে হোবার্ট নগরী ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
মূল হোবার্ট শহরটির জনসংখ্যা প্রায় অর্ধ লক্ষ হলেও ২০১৬ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী বৃহত্তর হোবার্ট এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার, যা সমগ্র ট্যাসমেনিয়ার জনসংখ্যার প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ। হোবার্ট শহরের ইতিহাসে ১৮৫০ সালে অপরাধীদের আগমন বন্ধ হবার পর থেকে এর জনসংখ্যার বহুবার উত্থান-পতন হয়েছে। ২০শ শতকের শুরুর দিকে খনিশিল্প, কৃষি এবং অন্যান্য কাঁচামাল নির্ভর প্রাথমিক শিল্পের কারণে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাদের প্রেরণের ফলে জনসংখ্যা হ্রাস পায়। আবার ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিদেশ থেকে আগত অভিবাসীদের সুবাদে শহরের জনসংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করে। [7] ২০শ শতকের শেষভাগে এসে হোবার্টের বেশির ভাগ অভিবাসীই এশিয়া মহাদেশ ও অন্যান্য অ-ইংরেজিভাষী দেশ থেকে আসতে শুরু করে। তবে সামগ্রিকভাবে হোবার্টের জনগণ মূলত যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড থেকে এসেছে এবং তারাই শহরটির মূল জাতি। অস্ট্রেলিয়ার প্রাদেশিক রাজধানী শহরগুলির মধ্যে হোবার্টেই অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া অধিবাসীর হার সবচেয়ে বেশি।[8] বর্তমানে হোবার্ট অস্ট্রেলিয়ার অঙ্গরাজ্যের রাজধানী নগরীর মধ্যে সবচেয়ে কম জনসংখ্যাবিশিষ্ট, তবে নরদার্ন টেরিটরি অঞ্চলের ডারউইন নগরীর জনসংখ্যা এর চেয়েও কম।[9]
হোবার্ট নগরীটি জাহাজচালনা ও সমুদ্রের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এখনও উদ্যাপন করে। ১৯৪৫ সাল থেকে প্রতি বছর ডিসেম্বরের ২৬ তারিখে বক্সিং দিবসে অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডের সিডনি বন্দরনগরী থেকে হোবার্ট পর্যন্ত ডজন খানের ইয়াট জাহাজের প্রতিযোগিতা হয়। জাহাজগুলি শত শত কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ডারওয়েন্ট নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে ক্যাস্ট্রে এস্প্লেনেডে (Castray Esplanade) এসে প্রতিযোগিতা শেষ করে। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর যে টার্গা ট্যাসমেনিয়া র্যালি গাড়ি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, হোবার্ট শহরে এসে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রতিবছর বসন্তকালে রয়াল ট্যাসমেনিয়ান বোটানিকাল গার্ডেনসে (রাজকীয় ট্যাসমেনীয় উদ্ভিদ উদ্যান) টিউলিপ ফুলের উৎসব হয়। প্রতি দুই বছর অন্তর এখানে অস্ট্রেলীয় কাঠনির্মিত নৌকার উৎসব ঘটে। একই সময়ে রয়াল হোবার্ট রেগাটা উৎসবটিও পালিত হয়, যা ট্যাসমেনিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ক্রীড়া উৎসব। ক্রিকেট শহরের একটি জনপ্রিয় খেলা। শহরের পূর্ব তীরে বেলরিভ ওভাল নামের মাঠে ট্যাসমেনিয়ান টাইগার্স নামের ক্রিকেট দল তাদের নিজমাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলি খেলে। হোবার্ট হারিকেনস নামের একটি নতুন দল অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লীগে অংশগ্রহণ করছে। এখান থেকে বিশ্বমানের বেশ কিছু ক্রিকেট খেলোয়াড় এসেছেন, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অস্ট্রেলীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং।