২০০৫ বালি বোমা হামলা
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
২০০৫ বালি বোমা হামলা ছিল ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে, ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদী আত্মঘাতী হামলা এবং গাড়ি বোমা আক্রমণ। বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল দুটি জায়গায়- জিম্বারান বিচ রিসর্ট এবং ৩০ কিমি (১৯ মা) দূরে কুটায়, দুটিই দক্ষিণ বালি অঞ্চলে অবস্থিত। সন্ত্রাসী হামলায় ২০ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং ১০০ জনেরও অধিক আহত হয়। হামলায় তিন হামলাকারীর মৃত্যু ঘটে।
২০০৫ বালি বোমা হামলা | |
---|---|
স্থান | বালি, ইন্দোনেশিয়া |
তারিখ | ১লা অক্টোবর, ২০০৫ ১৮:৫০ – প্রায় ১৯:০০ নাগাদ ডবলুআইটিএ (ইন্দোনেশিয়ার সময়) (ইউটিসি+৮) |
লক্ষ্য | ওয়ারাঙ্গ এর মধ্য কুটার প্রধান ক্ষেত্র, জিম্বারান সৈকত বরাবর |
হামলার ধরন | আত্মঘাতী বোমা হামলা, গাড়ি বোমা হামলা |
নিহত | ২৩ (৩ অপরাধী সহ) |
আহত | ১০০র বেশি মানুষ |
হামলাকারী দল | জামায়াতে ইসলামী |
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা, এএনটিএআরএ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম দুটি বিস্ফোরণ ঘটে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬:৫০ নাগাদ, জিম্বারান খাবার দোকানের নিকট, তৃতীয়টি সন্ধ্যা ৭:০০ নাগাদ কুটার প্রধান চত্বরে। অন্যান্য রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে বিস্ফোরণ ঘটেছে আনুমানিক সন্ধ্যা ৭:১৫ নাগাদ।
একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে মধ্য কুটার কুটা চক বাজার অঞ্চলে রাজার রেস্তোরাঁয়। অন্য দুটি বিস্ফোরণ ঘটেছে জিম্বারান সৈকত বরাবর ওয়ারাঙ্গে, তার মধ্যে একটি ফোর সিজন্স হোটেলের নিকট। এই এলাকায় সাধারণত পশ্চিমা পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়।[1] পুলিশ পরে বলে যে তারা জিম্বারানে তিনটি অবিস্ফোরিত বোমা পেয়েছে। প্রথম বিস্ফোরণের পর নিরাপত্তা বাহিনী তাড়াতাড়ি দ্বীপের মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ায় সেগুলো ফাটতে পারেনি।[2]
ইন্দোনেশিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থার প্রধান, মেজর জেনারেল আনসিয়াদ বাইয়ের মতে, প্রাথমিক প্রমাণ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে হামলা চালানো হয় ২০০২ সালের বোমা হামলার মতোই, অন্তত তিনটি আত্মঘাতী বোমা দ্বারা। ব্যাকপ্যাক এবং অত্যধিক বিকৃত শরীরের অবশিষ্টাংশ দেখে আত্মঘাতী বোমা হামলা বোঝা যাচ্ছে। সম্ভাবনা আছে যে বিস্ফোরণের আগে ব্যাকপ্যাকগুলো টার্গেট রেস্তোরাঁর ভিতরে লুকানো ছিল।[3][4][5] অস্ট্রেলিয়ান ফেডারাল পুলিস কমিশনার মিক কীল্টি বলেছেন যে ব্যবহৃত বোমাগুলো দেখে মনে হচ্ছে সেগুলো আগের বিস্ফোরণ থেকে আলাদা কারণ অধিকাংশ মৃত এবং আহতরা শ্রাপ্নেলের ঘায়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন, রাসায়নিক বিস্ফোরণে নয়। একজন মেডিকেল অফিসারের রঞ্জন রশ্মিতে দেখা যাচ্ছে অনেক আক্রান্তের দেহে কিছু বাইরের বস্তুসমূহ, যাদের "পেলেটস" বলা হয় এবং একজন আক্রান্ত অভিযোগ করেছেন তার পিঠে বল বিয়ারিং ঢুকে গেছে।[6]
যেদিন ইন্দোনেশিয়ায় জ্বালানীর ওপর ভর্তুকি কমানো হয় এবং গ্যাসের দাম ৬৭৫% বেড়ে গেল, বোমা হামলা সেই একই দিনে ঘটল এবং দিনটি ছিল মুসলিমদের রমযান শুরুর মাত্র দুদিন পূর্বে এবং ২০০২ বালি বোমা বিস্ফোরণের তৃতীয় বার্ষিকীর ১১ দিন আগে।
বালি বোমা হামলা ১লা অক্টোবর ২০০৫ | |||
জাতীয়তা | মৃত্যু | আহত | উৎস |
ইন্দোনেশিয়া | ১৫ | ৬৮ | [7] |
অস্ট্রেলিয়া | ৪ | ১৯ | [8][9] |
জাপান | ১ | ৪ | [10] |
দক্ষিণ কোরিয়া | – | ৮ | [11] |
যুক্তরাষ্ট্র | – | ৬ | [12][13] |
কানাডা | – | ৩ | [12] |
যুক্তরাজ্য | – | ১ | [14] |
অজানা | – | ২০ | |
সর্বমোট | ২০* | ১২৯ | [15][16] |
* ৩ হত্যাকারীকে বাদ দিয়ে |
সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০ জন মৃত এবং ১০১ থেকে ১২৯ জন আহত।[7] এর পূর্বে কিছু প্রতিবেদনে ২৬ থেকে ৩৬ জন লোকের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এই পরিসংখ্যান ক্রমশ কমেছে। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ১৫ জন ইন্দোনেশীয়, ৪ জন অস্ট্রেলীয় এবং একজন জাপানি নাগরিক। আহতদের মধ্যে আছেন অনেক ইন্দোনেশীয়, অধিকাংশ হিন্দু এবং বাকিদের মধ্যে ১৯ জন অস্ট্রেলীয় , ৮ জন দক্ষিণ কোরীয়, ৬ জন মার্কিন, ৪ জন জাপানি, ৩ জন কানাডীয় এবং ১ জন ব্রিটিশ। যেহেতু হাসপাতাল এবং মর্গে আক্রান্তরা কোথা থেকে এসেছেন তার কোন রেকর্ড নেই, আলাদাভাবে প্রতিটি বিস্ফোরণস্থলে হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আক্রান্তদের অধিকাংশকেই পাঠানো হয়েছিল বালির সাংলা জেনারেল হাসপাতাল এবং বেশিরভাগেরই ভাঙা কাচ দ্বারা সৃষ্ট আঘাতের জন্য চিকিৎসা হয়েছিল।[17] বাকিদের পাঠানো হয় গ্রিয়া আসিহ হাসপাতালে।[18] ২০০২ সালের বোমা হামলার মতোই, কিছু আহতকে, প্রাথমিকভাবে বিদেশী নাগরিক, চিকিৎসা সুবিধার জন্য অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।[19][20] অল্প আহতদের স্থানান্তরন করা হয় সিঙ্গাপুরে, অন্যান্য আহতদের, তাদের মধ্যে আছেন অস্ট্রেলীয়, জাপানি এবং একজন ইন্দোনেশীয়, চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরণ করা হয় রয়াল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্সের লকহিড সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানে করে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে।
২০০২ বালি বোমা বিস্ফোরণ, যেখানে অন্য কোন নাগরিকদের তুলনায় বেশি অস্ট্রেলীয় হতাহত হয়েছিলেন এবং জাকার্তায় ২০০৪-এর অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে বোমা হামলার পর, সর্বশেষ আক্রমণ অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল এবং কিছু কর্মকর্তারা দ্বারা নিন্দা করা হয়, যেমন ফেডারেল অপোজিশন লিডার কিম বিজলি, অস্ট্রেলীয়দের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে।[19]
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি দেশের মানুষদের আরো বোমা হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এবং অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক বিভাগ (ডিএফএটি) ঘটনার দুদিন পূর্বে সতর্কতা জারি করেছিলেন, তাই ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এমন একটি ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল। তবে অস্ট্রেলীয় সরকার দাবি করেন যে তারা বালিতে আসন্ন সন্ত্রাসী হামলার কোন নির্দিষ্ট পূর্ব সতর্কতা পায় নি। মন্ত্রী ডোনারও, সেপ্টেম্বরের শেষ দিনে ডিএফএটি-এর সতর্কবার্তা পাবার পরও, সম্ভাব্য ঘটনার কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ পাবার কথা নাকচ করেছেন।[21] ডিএফএটি ইন্দোনেশীয় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয়দের সতর্ক করে দিয়েছিল ২০০২ সালের হামলার আগে থেকেই – সতর্কতা এখনও কার্যকর। পশ্চিমী পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় স্থানে সমাবিষ্ট না হতে ভ্রমণকারীদের পরামর্শ দিয়েছিল।
২০০৫ সালের মে মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ইন্দোনেশিয়া অপরিহার্য ভ্রমণের বিরুদ্ধে একটি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে। ভ্রমণ সতর্কবার্তা সর্বশেষ হালনাগাদ হয় ৯ই জানুয়ারি ২০০৭ সালে।[22]
একজন ফিলিপাইন নিরাপত্তা কর্মী বলেছেন যে কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তথ্য পাচ্ছিল যে আল-কায়েদার সাথে সংযুক্ত জেমা ইসলামিয়া দল একটি বড় হামলার পরিকল্পনা করছে, সম্ভবত ফিলিপাইন বা ইন্দোনেশিয়ায়, কিন্তু পরিকল্পনার বিস্তারিত কর্মসূচী সময় মত উন্মোচন করে এটি প্রতিরোধ করতে পারেনি।[23]
৩১শে আগস্ট ২০০৫ সালে, দ্বিতীয় বালি বোমা হামলার এক মাস পূর্বে, সন্ত্রাসীরা একটি আংশিকভাবে তৈরি বোমা কুটা প্যারাডিসো হোটেলের চতুর্থ তলায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বোমাটি হোটেলের নিরাপত্তা পরীক্ষায় ধরা পড়েনি এবং হোটেলের নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলো ভাঙ্গা ছিল।
হামলাগুলোতে সক্রিয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক জেমা ইসলামিয়া (জেআই)-এর ছাপ দেখা যায়, যারা ২০০২ বালি নৈশক্লাব বোমা বিস্ফোরণ, ২০০৩ মেরিয়ট হোটেল বোমা হামলা এবং ২০০৪ অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে বোমা হামলা সহ ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন বোমা হামলার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অফ ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রধান রোহন গুনরত্ন, এজেন্সি ফ্রান্স প্রেসকে বলেন যে "জেমা ইসলামিয়া হল একমাত্র দল যাদের ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমী পর্যটকদের বিরুদ্ধে সমন্বিত এবং একযোগে আক্রমণ করার অভিপ্রায় এবং ক্ষমতা আছে।"[24]
যদিও জেআই-এর সাথে সংযোগ নিশ্চিত করা যায়নি, তবুও কর্তৃপক্ষ দ্রুত সন্ত্রাসী বোমা হামলার নিন্দা করে। পুলিশ মেজর জেনারেল আনসিয়াদ বাই, ইন্দোনেশিয়ার সন্ত্রাসবাদ বিরোধী একজন শীর্ষ কর্মকর্তা, এসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন যে বোমা হামলা "পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাসীদের কাজ"।[25] মেজর জেনারেল বাই, হামলার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী হিসেবে, মালয়শীয় লোকেদের চিহ্নিত করেছেন, যারা ইতিমধ্যেই ইন্দোনেশিয়ায় পূর্বের বোমা হামলার সাথে জড়িত ছিল। প্রধান সন্দেহভাজন ছিল আজাহারি হুসিন, জেআই-এর একজন সভ্য, একজন প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ এবং ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং-এর প্রাক্তন শিক্ষাবিদ এবং ডক্টরেট (১৯৮০ এর দশকের শেষ দিকে)। হুসিনকে ডাকা হত "ধ্বংসকারী মানুষ" বলে এবং দ্বিতীয় সন্দেহভাজন : নূরদিন মোহাম্মদ টপ, একজন বোমা প্রস্তুতকারক যার স্ত্রীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাকে আশ্রয় দেবার জন্য জন্য, এর সঙ্গে সহযোগিতা ছিল বলে মনে করা হয়।[26] আজাহারি নভেম্বর ২০০৫ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় এবং নূরদিন "একটি দীর্ঘ এবং সহিংস অবরোধের পরে" নিহত হয়, ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ প্রধান বলেন, ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে যথেষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।[27]
বোমা হামলার জন্য প্ররোচনা কি ছিল তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। সংবাদমাধ্যমগুলো মনে করে যে ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যাতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষতি সর্বাধিক হয়। অপরদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের ড. সিডনি জোন্স, বিশ্বাস করেন যে "অপরিহার্যভাবে" এটি গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টা ছিল না, বরং জিহাদবাদী চরমপন্থার একটি উদাহরণ: "আমি মনে করি তারা খুব দুনিয়া দেখে খুব সহজভাবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফের... [ওরা দেখে] যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে অবিশ্বাসীরা একটি খ্রিস্টান-ইহুদী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অত্যাচার করতে এবং আক্রমণ করতে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের নির্মূল করতে বেরিয়েছে, এবং তাই, [তাদের] পালাতে হবে"। যাহোক, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে, ড. জোন্স বিশ্বাস করেন আক্রমণ নির্বিচার ছিল এবং "সহজাতভাবে" শুধুমাত্র অস্ট্রেলীয়দের উপর ছিল না। তিনি মনে করেন, বালিকে হামলাস্থল হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল কারণ সেখানে ইন্দোনেশিয়ার গ্যাংস্টারদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল এবং "কয়েকজন বিদেশিকে পাওয়ার একটি সুযোগ" ছিল।[28]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.