চিত্তুর জেলা
অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চিত্তুর জেলা (তেলুগু: చిత్తూరు జిల్లా, প্রতিবর্ণী. চিত্তূরু জিল্লা) ( ) হল ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের রায়ালসীমা অঞ্চলের একটি জেলা। এই জেলার সদর শহর চিত্তুর। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই জেলার জনসংখ্যা ৪,১৭০,৪৬৮।[2] চিত্তুর জেলায় অনেকগুলি বিখ্যাত মন্দির রয়েছে। এগুলির মধ্যে তিরুপতি, কানিপকম ও শ্রীকালহস্তী মন্দির উল্লেখযোগ্য। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের সর্বদক্ষিণে পইনি নদী উপত্যকায় ৪ নং জাতীয় সড়কের চেন্নাই-বেঙ্গালুরু শাখায় এই জেলা অবস্থিত। চিত্তুর জেলা আম, খাদ্যশস্য, আখ ও মটরশুঁটির অন্যতম প্রধান বাজার।
চিত্তুর জেলা చిత్తూరు జిల్లా | |
---|---|
জেলা | |
স্থানাঙ্ক: ১৮°২৫′ উত্তর ৮৪°০১′ পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | অন্ধ্রপ্রদেশ |
অঞ্চল | রায়ালসীমা |
আয়তন | |
• মোট | ১৫,৩৫৯ বর্গকিমি (৫,৯৩০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৪১,৭০,৪৬৮[1] |
ভাষা | |
• সরকারি | তেলুগু |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | ISO 3166-2:IN |
সদর | চিত্তুর |
লিঙ্গানুপাত | পুং-৫০%/স্ত্রী-৪০% ♂/♀ |
সাক্ষরতার হার | ৭২.৯৬% |
লোকসভা আসন | ২ |
বিধানসভা আসন | ১৪ |
চিত্তুর জেলার নাম এই জেলার সদর শহর চিত্তুরের নাম থেকে এসেছে।[3]
১৯১১ সালের ১ এপ্রিল তদনীন্তন মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তর আরকট জেলার চিত্তুর, পালামানেরু, চন্দ্রগিরি এবং কাডাপা থেকে মদনপল্লী, বয়ালপদু এবং স্থানীয় জমিদারিগুলি থেকে পুঙ্গানুর, শ্রীকালহস্তী, করবেতিনগর অঞ্চলগুলিকে একত্রিত করে চিত্তুর জেলা গঠন করা হয়। পরে ১৯৬০ সালের ১ এপ্রিল মা. পো. সি. প্রমুখ নেতৃবর্গের দাবি মেনে চিত্তুর জেলার ৩১৯টি গ্রাম তামিলনাড়ু রাজ্যের কাঞ্চীপুরম জেলা ও তিরুবল্লুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
তিরুপতির শহরতলি অঞ্চলে অবস্থিত চন্দ্রগিরি ছিল বিজয়নগর সাম্রাজ্যের চতুর্থ রাজধানী।
চিত্তুর জেলা অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের রায়ালসীমা অঞ্চলের অংশ।[4] এই জেলার আয়তন ১৫,৩৫৯ বর্গকিলোমিটার (৫,৯৩০ মা২)।[5][6] চিত্তুর জেলার উত্তরপশ্চিমে অনন্তপুর জেলা, উত্তরে কাডাপা জেলা, উত্তরপূর্বে নেল্লোর জেলা এবং দক্ষিণ দিকে তামিলনাড়ু রাজ্যের কৃষ্ণগিরি জেলা, ভেল্লোর জেলা ও তিরুবল্লুর জেলা এবং পশ্চিম দিকে কর্ণাটক রাজ্যের কোলার জেলা অবস্থিত। চিত্তুর জেলা অন্ধ্রপ্রদেশের সর্বদক্ষিণে ১২°৩৭′ - ১৪°৮′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৮°৩′ - ৭৯°৫৫′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এই জেলার ৩০% অঞ্চল অরণ্যাবৃত।[7] চিত্তুর শহরের চারপাশে আম ও তেঁতুল গাছের বন দেখা যায়। পশুপালন এই জেলার অধিবাসীদের অন্যতম পেশা। এই জেলার মাটির ৫৭% লাল দো-আঁশ মাটি, ৩৪% লাল বেলে মাটি এবং বাকি ৯% কালো দো-আঁশ মাটি, কালো বেলে ও লাল মাটি। [7] চিত্তুর শহরটি চেন্নাই থেকে ১৬০ কিলোমিটার, বেঙ্গালুরু থেকে ১৮০ কিলোমিটার এবং হাদ্রাবাদ থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
চিত্তুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলি হল পোন্নাই ও স্বর্ণমুখী। এই নদীদুটির উৎস পূর্বঘাট পর্বতমালা। অন্যান্য নদনদীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কুশস্থলী, বীমা, বহুদা, পিঞ্চা, কল্যাণী, আরানিয়ার ও পেদ্দেরু। এই নদীগুলিতে সারা বছর জল থাকে না। জেলার প্রধান নদীগুলির মধ্যে স্বর্ণমুখী, কলঙ্গী, পাপঘ্নী, কৌণ্ডিণ্য, পেলেরু, অরণি, পিঞ্চচা, চেয়েরু, নীভা ও কুশস্থলীর নাম করা যায়।
চিত্তুর জেলার পশ্চিমাঞ্চলের পুঙ্গানুর, মদনপল্লী ও হর্সলে পর্বত অঞ্চলের তাপমাত্রা জেলার পূর্বাঞ্চলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম। এর কারণ হল, জেলার পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চতা পূর্বাঞ্চলের তুলনায় বেশি। পূর্বাঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪৬° সেন্টিগ্রেড স্পর্শ করে। অন্যদিকে এই সময় পশ্চিমাঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬° থেকে ৩৮° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থেকে। একই ভাবে শীতকালে পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। শীতকালে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা থাকে ১২° থেকে ১৪° সেন্টিগ্রেড এবং পূর্বাঞ্চলের তাপমাত্রা থাকে ১৬° থেকে ১৮° সেন্টিগ্রেড।[8]
চিত্তুর জেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯১৮.১ মিলিমিটার। দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তরপূর্ব মৌসুমি বায়ু এই জেলায় বৃষ্টিপাতের প্রধান উৎস। দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই জেলায় গড়ে ৪৩৮.০ মিলিমিটার (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এবং উত্তরপূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে গড়ে ৩৯৬.০ মিলিমিটার (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) বৃষ্টিপাত হয়। ২০০২ ও ২০০৩ সালে এই জেলায় যথাক্রমে গড়ে ৯৮৪.২ মিলিমিটার ও ৯৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।[9]
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, চিত্তুর জেলার জনসংখ্যা ৪,১৭০,৪৬৮।[10][11][12] জনসংখ্যার হিসেবে ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে এই জেলার স্থান ৪৭তম।[10] এই জেলার জনঘনত্ব ২৭৫ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৭১০ জন/বর্গমাইল)।[10] ২০০১-২০১১ দশকে এই জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১১.৩৩%।[10] চিত্তুরের লিঙ্গানুপাতের পার প্রতি ১০০০ পুরুষে ১০০২ জন মহিলা[10] এবং সাক্ষরতার হার ৭২.৩৬%।[10]
২০০৭-২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশানাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সেস এই জেলার ৩৮টি গ্রামের ১০১০ জন গৃহস্থের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।[13] এই সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ৯২.৭% বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, ৯৯.৬% বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, এবং ৫৩.৮% বাড়িই পাকা বাড়ি।[13] এই জেল্র ২৯.৩% বালিকার বিবাহ হয়ে যায় বিবাহযোগ্য বয়সে (১৮ বছর বয়স) পৌঁছানোর আগেই।[14] ৮৮.২% ব্যক্তির একটি বিপিএল রেশন কার্ড আছে।[13]
তেলুগু এই জেলার স্থানীয় তথা সরকারি ভাষা। তামিলনাড়ু রাজ্যের নিকটবর্তী হওয়ায় তামিল ভাষাও এই জেলায় চলে। জেলার ৩০% জনসংখ্যার মাতৃভাষা তামিল।[15][16] জেলার পশ্চিম দিকে কর্ণাটক-সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রচুর কন্নড়-ভাষীও বাস করেন।
চিত্তুর জেলায় ৩টি রাজস্ব বিভাগ আছে। এগুলি হল: চিত্তুর, তিরুপতি ও মদনপল্লী।[17] প্রতিটি রাজস্ব বিভাগ আবার মণ্ডলে বিভক্ত। এই জেলায় মোট ৬৬টি মণ্ডল রয়েছে।[18] চিত্তুর জেলায় দুটি পৌরসংস্থা আছে। এগুলি হল: চিত্তুর ও তিরুপতি। এছাড়া এই জেলায় ৬টি পুরসভাও আছে। এগুলি হল: মদনপল্লী, পুঙ্গানুর, পালামনের, নাগরী, শ্রীকালহস্তী ও পুত্তুর।[19]
অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভার ১৪টি কেন্দ্র চিত্তুর জেলায় অবস্থিত।[20]
২০০৬ সালে ভারত সরকার দেশের ২৫০টি সর্বাধিক অনগ্রসর জেলার তালিকায় চিত্তুর জেলার নাম নথিভুক্ত করে।[21] অন্ধ্রপ্রদেশের যে ১৩টি জেলা অনগ্রসর অঞ্চল অনুদান তহবিল কর্মসূচির অধীনে অনুদান পায়, চিত্তুর জেলা তার মধ্যে অন্যতম।[21]
তিরুপতিতে একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শ্রীবেঙ্কটেশ্বর বিশ্ববিদ্যালয়, অন্ধ্রপ্রদেশের প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় শ্রীপদ্মাবতী মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ম্, রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত বিদ্যাপীঠ তিরুপতি শহরে অবস্থিত। এছাড়াও তিরুপতি নগর অঞ্চলে অনেক কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কুপ্পমে দ্রাবিড়ীয় বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।[22] চিত্তুর জেলায় ন্যাশানাল অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্চ ল্যাবোরেটরি অবস্থিত। এটি মহাকাশ মন্ত্রকের অধীনস্থ। এখানে বায়ুমণ্ডল ও মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে মৌলিক ও ফলিত গবেষণা চলে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.