Loading AI tools
হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্র তত্ব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রেম জিহাদ বা লাভ জিহাদ[5] হল হিন্দুত্ববাদ প্রবক্তাদের তৈরি করা একটি ষড়যন্ত্র তত্ব-সম্পর্কীয় বিষয়,[6] এতে মনে করা হয় যে, একটি সংগঠিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে মুসলিমদের বৃহত্তর জনসংখ্যাগত যুদ্ধের জন্যে [7][8][9][10][11] তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে মুসলিম পুরুষরা হিন্দু মহিলাদের [12] ইসলামে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে প্রলোভন, প্রেমের জাল, প্রতারণা, অপহরণ বা তাদের বিবাহ করে থাকে। কেবল মুসলিমদের ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রয়োগ হলেও খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রেও এর আংশিক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। [13][14][15][16][17][18] [19][20][21][22][23] [13]
বিশ্লেষকগণ প্রেম জিহাদ তত্বকে একটি ষড়যন্ত্র তত্ব ও অলীক-কল্পনা বা একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।[24] এমনকি এটিকে ধর্মীয় ঘৃণা ও ভুল ধর্মীয় তথ্য ছড়ানোর একটি অভিযান হিসেবে অস্বীকার করেন। [16][13][14][15][25][26][27][28] ২০০৯ সালে প্রথম ভারতে চর্চা হওয়া শুরু হয়। ২০১০ সালে কেরলের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভি. এস. অচ্যুতানন্দন প্রথম এই বিষয়টিকে প্রেম জিহাদ হিসেবে উত্থাপন করেন এবং এরপর মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে তা ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করে। [29][30]
২০০৯ সালে একটি প্রোপাগান্ডার অংশ হিসাবে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি তৈরি হওয়ার পর হিন্দুত্ব প্রকাশনা দ্বারা প্রচার করা হয়। যেমন: সনাতন প্রভাত এবং হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি হিন্দুসমাজকে তাদের মহিলাদের মুসলিম পুরুষদের থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানায়, একই সাথে তাদেরকে কুৎসিত ও ধর্ষক হিসাবে চিত্রিত করা হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, বিশ্ব হিন্দুপরিষদকে ভারত ও বিদেশে এই তত্ব বিস্তারের জন্য দায়ী করা হয়।[31] এই তত্ত্বটি উত্তর প্রদেশ একটি উল্লেখযোগ্য বিশ্বাস হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করা হয় এবং ২০১৪ সালে রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রচারের সাফল্যে অবদান রাখে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনের পর ভারতে ধারণাটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে এবং সরকারপন্থী ডানপন্থী বিভিন্ন টেলিভিশন মিডিয়া ; যেমন : টাইমস নাউ, রিপাবলিক টিভি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণাকে সাধারণত এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়। বিজেপি দল দ্বারা শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যে কথিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং যোগী আদিত্যনাথ সরকার দ্বারা উত্তর প্রদেশ রাজ্যে প্রয়োগ করা হয়েছে। সেখানে এটি মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং ক্র্যাকডাউনের একটি উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। [32][33][34][35][36][37]
২০০৯ সালের নভেম্বরে জ্যাকব পুন্নজ জানান যে, কোনো দলের ধর্মান্তরের জন্য মেয়েদের প্রেমের ধোঁকা দেয়ার যথাযথ প্রমাণের অভাব আছে। তিনি কেরালা হাইকোর্টকে জানান, তার কাছে আসা ১৮টি ঘটনার ৭ টিই সন্দেহযুক্ত।[38] ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বিচারপতি কে.টি. সঙ্করণ পুন্নজের কথার উত্তরে একটি ঘটনার ডায়রি থেকে নিষ্পত্তি করেন যে, এই বিষয়ে কিছু শক্ত তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে, পুলিশের রিপোর্ট থেকে পাওয়া যায় যে, মহিলাদের ধর্মান্তরের জন্য কিছু সংযুক্ত দল রয়েছে। প্রেম জিহাদে অভিযুক্ত দুজনের মামলা চলার সময় জানানো হয়, গত ৪ বছরে ৩০০০-৪০০০ এমন ধর্মান্তর ঘটেছে। তবে এসব ঘটনা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়। [39] ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে কেরালা হাইকোর্ট দুজন অভিযুক্তকে মুক্তি দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকে। যদিও এতে পুলিশের অনুসন্ধান সমালোচিত হয়।[40] পরে বিচারপতি এম.শশীধরন নম্বিয়া কর্তৃক অনুসন্ধান কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ পুন্নজ প্রেম জিহাদের যথাযথ প্রমাণ পাননি।[16]
কর্ণাটক সরকার ২০১০ সালে জানায় যে, অনেক বড় অংশে হিন্দু মহিলা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে।[41] ২০১২ সালে প্রেম জিহাদ অনুসন্ধানের ২ বছর পর কেরালা পুলিশ যথাযথ প্রমাণের অভাবে এটিকে অস্তিত্বহীন অভিযান হিসেবে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে আরেকটি কেস চালু হয় একটি ওয়েবসাইটের বিষয়ে, যেখানে মুসলিমদের সংগঠন মেয়েদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য মুসলিম যুবকদের টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। সেপ্টেম্বর, ২০০৪ সালে তিন মাসের মধ্যে প্রেম জিহাদ সম্পর্কে উত্তর প্রদেশ পুলিশ- এর কাছে ৬টি এমন ঘটনার আসে। কিন্ত যথাযথ প্রমাণ না মেলায় পুলিশ জানায় এসব মামলায় এই ঘটনার কোনো প্রমাণ নেই।[42]
২০১৭ সালে কেরালা হাইকোর্ট কথিত প্রেম জিহাদ বন্ধে আইন করে যে, হিন্দু মেয়েদের মুসলিম ছেলেদের বিয়ে করা অবৈধ। একজন মুসলিম স্বামী এই আইনের পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন। যেখানে কোর্ট রাষ্ট্ৰীয় অনুসন্ধান সংস্থার (এনআইএ) কাছ থেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ চায় এবং এনআইকে প্রেম জিহাদ সম্পর্কিত সকল ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। এতে এনআইএ বিভিন্ন সন্দেহজনক ঘটনা অনুসন্ধান করে যার মাধ্যমে তারা খোঁজ করে যে, কোনো নিষিদ্ধ সংস্থা যেমন: সিমি হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তর করে মুসলিম সন্ত্রাসী হিসেবে তৈরি করছে কিনা। [43][44][45][46] এনআইএ আদালতকে জানায়, এই মামলা শুধুমাত্র একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, রাজ্যের মধ্যে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে। তারা আরো বলে যে, সেই মামলার একই ব্যক্তি যে প্ররোচক হিসেবে কাজ করেছিল তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা রয়েছে। তবে তা প্রমাণিত হয়নি।[47]
এই তত্বটি জাতীয় নজরে আসে প্রথম ২০০৯ সালে, যখন কর্ণাটক ও কেরালায় ব্যাপক হারে ধর্মান্তর ঘটে। ধীরে ধীরে এটি ভারতের বাইরে, যেমন: পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১৪ সালের ব্যাপক প্রচারণার জন্য প্রেম জিহাদ বিভিন্ন হিন্দু, শিখ ও খ্রিস্টান সংস্থার মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করে যদিও মুসলিম সংস্থাগুলো অভিযোগটিকে অস্বীকার করে। রয়টার্সের ভাষ্যমতে, এটি অনেকের কাছে একটি সামাজিক উদ্বেগের কারণ হিসেবে বিবেচিত হলেও অনেক ভারতীয় প্রধানদের মতে এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা বৈ কিছু নয়।[48] আগস্ট, ২০১৭-তে রাষ্ট্ৰীয় অনুসন্ধান সংস্থা(এনআইএ) জানায় যে, তারা প্রেম জিহাদ সম্পর্কে মামলাগুলোতে কিছু সাধারণ প্রমাণ পেয়েছে তবে তা তত্ত্বটি প্রমাণে যথেষ্ট নয়। [49][24]
দ্য অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অফ রিলিজিয়াস কনভার্সন উল্লেখ করে যে, মানুষের এক ধর্মবিশ্বাস থেকে অন্য ধর্মবিশ্বাসে ধর্মান্তরের জন্য আবেগের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় এবং মাঝে মাঝেই ধর্মীয় নেতারা এর ব্যবহার করে।[50] প্রেম জিহাদ তত্বের প্রবক্তাদের বক্তব্য হলো, লাভ জিহাদ একটি এমন কাজ যেখানে মুসলিম যুবকরা আবেগ ও চাকচিক্যের সাহায্যে প্রেমে ধোঁকা দিয়ে মেয়েদের ধর্মান্তর করে থাকে–অনেক সময় এগুলো বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা বা অর্থ দিয়েও করানো হয়। তবে ইসলামে ধর্মান্তরিত কেউ এমন কথা স্বীকার করেনি। [13][51][52]
শিকাগো ট্রিবিউনের ফরেন পলিসি সাংবাদিক সিদ্ধার্থ মহন্ত প্রতিবেদন করেন, প্রেম জিহাদের ভিত্তি শেকড় সূচিত হয় ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের ঘটনায়। [53] এই বিভক্তির কারণে পাকিস্তান অধিরাজ্য থেকে (যেটি পরবর্তীতে ইসলাম প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে ভাগ হয়) বিভিন্ন সার্বভৌম রাষ্ট্রের তৈরি হয় এবং ভারত অধিরাজ্যের (পরবর্তীতে ভারত প্রজাতন্ত্র) সৃষ্টি হয়। দুটি দেশের সৃষ্টি ও দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকার কারণে বৃহৎ আকারে দেশান্তরিতা দেখা দেয় যেখানে লাখ লাখ মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করে এবং এক ধর্মের নারীরা অন্য ধর্মের পুরুষদের দ্বারা জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও ধর্ষণের শিকার হয়।[53][54][55] উভয় দেশের নারীরা এই ঘটনায় আক্রান্ত হয়। ভারতীয় সরকার কর্তৃক পুনরুদ্ধার অপারেশন করে ১৯৪৭-১৯৫৬ সালের মধ্যে ২০০০০ মুসলিম এবং ৯০০০ অমুসলিম নারীকে এমন ঘটনা থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়।[55] মহন্তের মতে, উভয় ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আন্তঃবিবাহ একটি সাংস্কৃতিক চাপ হিসেবে সংকটপূর্ণ ইতিহাস হয়ে দুই ধর্মালম্বীদের ভেতর বিভিন্ন দশকে সংঘর্ষে রূপ নেয়, যা পরবর্তীতেও চলতে থাকে।[53] ২০২২ সালে একটি রিপোর্ট অনুসারে ভারতে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা হল ৮১%, যা ভারতের প্রধান ধর্ম এবং মুসলিমরা হল ১৪.৬%, যারা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী।[56]
ভারতে আনুষ্ঠানিক বিয়ে সংস্কৃতি বিদ্যমান, যেখানে বর ও কনে তার জীবনসঙ্গী বেছে নেয়। ২০০০- এর দশক ও ২০১০-এর দশক জুড়ে ভারতে প্রেম করে বিয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যদিও দুটি ধর্মের মাঝে বিয়ে করা তখনও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিষয় ছিল না।[57][58] ২০১২ সালে দ্য হিন্দু জানায় আন্তঃধর্মীয় বিয়েতে দম্পতিদের অবৈধভাবে ভয় দেখানোর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।[59] একই বছর উত্তর প্রদেশে যারা সমাজের কাছ থেকে তাদের আন্তঃধর্মীয় বিয়ে লুকিয়ে রাখছিল, তাদের উৎসাহিত করতে বিয়ের নীতি অনুসারে ধর্ম জানার প্রয়োজনীয়তাকে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়।[57]
আন্তঃধর্মীয় বিয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যে এটি জোরপূর্বক ধর্মান্তর এবং বৈবাহিক ধর্মান্তরের সাথে সম্পর্কিত।[58][60] কিছু রীতিনীতি সাপেক্ষে ইসলামে এ ধরনের বিয়ে বৈধ। যেখানে মুসলিম নারীরা শুধুমাত্র মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত, পক্ষান্তরে মুসলিম পুরুষরা "আহলে কিতাব", বর্ণনানুসারে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের এবং হিন্দুদের ধর্মান্তরের মাধ্যমে বিয়ে করতে পারে।[61] ২০১৪ সালে মুম্বাই মিরর একটি প্রবন্ধে জানায়, সামান্য সংখ্যক অমুসলিম কনেরা বিয়ের জন্য মুসলিম-হিন্দু ধর্মান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, যেখানে অন্যরা ১৯৫৪ সালের স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট অনুসারে আইনসংগত বিয়ে করে থাকে।[58] ১৯৫৪ সালের স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট অনুযায়ী মুসলিম মেয়েদের ও ছেলেদের কোনো হিন্দু পুরুষ বা নারী (শিখ ও বৌদ্ধসহ)কে বিয়ে করা বৈধ।
প্রেম জিহাদ তত্ব প্রথম জাতীয় আলোচনার বিষয় হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে।[51] [62] তখন কেরালা ও কর্ণাটক অঞ্চলের মাঙ্গালোরে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তর হওয়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটে। কেরালা ক্যাথোলিক বিশপ্স কাউন্সিলের তথ্য মতে, কেরালার ৪৫০০ জন মেয়েকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতি দাবি করে যে, কেবল কর্ণাটকেই ৩০,০০০ জন হিন্দু মেয়েকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে।[63][64][65] শ্রী নারায়ণা ধর্ম পরিপালনার জেনারেল সেক্রেটারি ভেল্লাপল্লি নাতেসান বলেন, তাদের কাছে প্রেম জিহাদ সম্পর্কে রিপোর্ট রয়েছে।[66][67] এছাড়া পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যে একই ধরনের কাজের রিপোর্ট রয়েছে বলে তারা দাবি করে।[68][69][70] সানি হুন্দাল নামে একজন ব্লগার দাবি করে যে, ৯০ এর দশকে একটি নামবিহীন পত্রিকা (অনুমান করা হয়, এটি হিজবুত তাহরির কর্তৃক প্রকাশিত) প্রচার করে যে মুসলিম পুরুষরা শিখ মেয়েদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য তাদের উৎসাদ দেয়।[71]
২০১৪ সালে বিভিন্ন অঞ্চলে লাভ জিহাদের কেস বের করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে: বিহার,[72] কানপুর,[73] গওয়ালিয়র[74] ও ইংল্যান্ড।[75] দ্য শিখ কাউন্সিলের ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদন দাবি করে যে, ব্রিটিশ শিখ পরিবারের মেয়েরা প্রেম জিহাদের শিকার হচ্ছে। তাখ্ত জাতেদার দাবি করে যে, শিখ কাউন্সিল কিছু মেয়ে ফিরিয়ে এনে তাদের তাদের পিতা-মাতার কাছে ফেরত পাঠায়।[75]
মৌলবাদী ইসলামি সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া ও ক্যাম্পাস ফ্রন্টকে লাভ জিহাদ বিস্তারের জন্যে এর প্রবক্তারা দায়ী করে থাকে এবং [52][76] তারা দাবি করে যে, কেরালার কিছু সিনেমায় প্রেম জিহাদকে তুলে ধরা হয় এবং চলচ্চিত্রনির্মাতারা এর দায় মেনে নিতে চায় না।[77] ২০০৯ সালের পর ২০১০, ২০১১ ও ২০১৪ সালে এটি পুনরায় আলোচনার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।[78][79][80] ২৫ জুন, ২০১১ সালে কেরালার মন্ত্রী উম্মেন চান্দি রাজ্যের আইনসভায় জানান যে, ২০০৬ সালের মধ্যে সে রাজ্যে ২৬৬৭ জন যুবক মেয়েদেরকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে। কিন্তু এর কোনো যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[80] দিল্লীর একটি মামলার সাথে সম্পর্কিত একটি ঘটনায় ইন্ডিয়া টিভি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশ করে, যে প্রেম জিহাদের মামলার পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মুসলিম ছেলে ও হিন্দু মেয়েদের সম্পর্কে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে।[81]
২০১৪ সালে ভারতের জাতীয় শুটার তারা শাহদেও দাবি করেন যে, তার স্বামী ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য তাকে জোর করে কিন্তু তারা সে দাবি না মানায় তাকে নির্যাতন করেছে। এর জেরে পরবর্তীতে তার স্বামীকে গ্রেফতার হয়।[82] তবে দীর্ঘদিন মামলা চলার পরও তা প্রমাণিত হয়নি এবং ২০১৮ সালে আদালত তাদের বিচ্ছেদ মঞ্জুর করে। এভাবে একজন ভারতীয় তাওয়েকোন্দ খেলোয়াড় ২০১৪ সালে দাবি করে যে, সে প্রেম জিহাদের শিকার হয়, যখন সে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। তার স্বামীকে পরে অপহরণ করার জন্য এবং অপ্রাপ্তবয়স্ককে বিয়ে করতে জোর করার জন্য গ্রেফতার করা হয়।[83] তবে এসব ঘটনার কোনোটি আদালতে সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তাই অনেক বিশ্লেষক লাভ জিহাদ তত্বকে মুসলিম নির্যাতনের একটি হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[8]
২০০৯ সালে লাভ জিহাদ তত্ব প্রচারিত হওয়ার পর বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী ও খ্রিস্টান মৌলবাদী সংগঠন এর প্রতিরোধে একত্র হয়। যেমন : বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও ক্রিসচিয়ান এসোসিয়েশন ফর সোশিয়াল একশন এটি বন্ধের আহ্বান জানায় এবং হিন্দু পরিষদ একটি হিন্দু হেল্পলাইন তৈরি করে, যা ৩ মাসে প্রেম জিহাদ সম্পর্কে ১৫০০ কলের উত্তর দেয় বলে দাবি করে।[13] এরপর দ্য ইউনিয়ন অফ ক্যাথলিক এশিয়ান নিউজ একটি প্রতিবেদনে জানায় যে, ক্যাথলিক চার্চ এই ঘটনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।[84] কেরালা ক্যাথলিক বিশপস কাউন্সিল (কেসিবিসি) তাদের ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে সতর্ক করে।[63] সেপ্টেম্বরে কেরালার তিরুবনন্তপুরমে শ্রী রাম সেনা নামে একটি হিন্দুত্ববাদী দল প্রেম জিহাদ সম্পর্কে একটি পোস্টার প্রকাশ করে।[85] ডিসেম্বরে দলটি ঘোষণা করে যে তারা দেশব্যাপী প্রেম জিহাদ সম্পর্কিত একটি প্রচরণা চালাবে যার নাম সেভ আওয়ার ডটারস, সেভ ইন্ডিয়া।[86]
কেরালার মুসলিম সংগঠনগুলি এটিকে আক্রোশপূর্ণ ও ভুল তথ্য সংবলিত প্রচারণা বলে অভিহিত করে।[87] পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই) কমিটির সদস্য নাসিরউদ্দিন ইলামারাম অস্বীকার করেন যে, পিএফআই কখনো প্রেম জিহাদের সাথে যুক্ত ছিল। তিনি বলেন, মানুষ হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্মেও ধর্মান্তরিত হলে সেটি কোনো অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না, কিন্তু অন্য ধর্ম থেকে কেউ মুসলিম হলেই এসব তত্ব হাজির করা হয়।[84] দক্ষিণ কর্ণাটকের উদুপি জেলার মুসলিম সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যরা বলেন, মুসলিম বিশ্বাস ও সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধন করার জন্যই হিন্দু ও খ্রিস্টানরা এই ষড়যন্ত্র করে।[88]
২০১০ সালের জুলাইয়ে প্রেম জিহাদ বিষয়টি পুনরায় সংবাদে আসে, যখন মন্ত্রী ভি.এইচ. অচুটন্ডন নামে কেরালার তৎকালীন একজন মন্ত্রী উদাহরণ হিসেবে বলেন, কেরালাকে মুসলিম প্রধান রাজ্য তৈরি করতেই অমুসলিম মেয়েদের ধর্মান্তর করা হচ্ছে। [78][89] কেরালায় বিষয়টি তদন্তের জন্য পিএফআই তার বক্তব্যটি অগ্রাহ্য করে।[89] কিন্তু বিজেপি মহিলা মোর্চা প্রধান ও ভারতীয় জনতা পার্টি এনআইএ-এর কাছে অনুসন্ধানের আবেদন জানায়।[90] কেরালাতে কংগ্রেস পার্টি সেই মন্ত্রীর মন্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানায় এবং এটিকে খুবই নিকৃষ্ট ও বিপজ্জনক বিষয় হিসেবে বর্ণনা করে।[78]
২০১১ সালে বিষয়টি পুনরায় কর্ণাটকের আইনসভায় উত্থাপিত হয়। তখন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ মল্লিকা প্রসাদ দাবি করে, দেশে এখনো গোপনে প্রেম জিহাদ চলছে। সে বছরের জানুযারি থেকে নভেম্বরে পালিয়ে যাওয়া ৮৪ জন মেয়ের মধ্যে ৬৯ জন দাবি করে যে, তারা মুসলিম যুবকদের প্রেমে পড়ে প্রতারিত হয়েছে।[79] তবে তাদের কারো দাবি মতে, প্রেম জিহাদ প্রমাণিত হয়নি। টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার এন.যোগিস ভাট ও এস.সুরেশ কুমার সরকারের পক্ষ সমর্থন করলেও কংগ্রেস সদস্য বি. রামানথ রায় ও অভয়চন্দ্র জাইন বিরোধিতা করে বলে যে, সমাজের একতা বিনষ্ট করার জন্যই বিজেপির নেতারা বিষয়টি পুনরায় আইনসভায় উত্থাপন করেছে।[79]
সে বছরই হিন্দু হিতরক্ষণা ভেদির ১৫ জন সদস্যকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নেতারা পুনরায় এই তত্বটি সামনে নিয়ে আসে । তারা দাবি করে যে, পুলিশ মুসলিম যুবকদের ধরতে ভয় পায় এবং তারা হিন্দু মেয়েদের ফোন ব্যবহার করায় সাবধান হতে বলেন এবং দাবি করে যে, লাভ জিহাদের প্রসারে এসব অনেক বড় ভূমিকা রাখে।[91] চলচ্চিত্রনির্মাতা পরমিতা ভোহরাও বিষয়টি তুলে ধরে এটিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করে।[92]
২০১২ সালের ২৫ জুন কেরলের তৎকালীন মন্ত্রী উম্মেন চান্দি রাজ্যের আইনসভায় পুনরায় প্রেম জিহাদ তত্ব উত্থাপন করেন এবং নিজের দাবির পক্ষে বেশ কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।[93]
২০১৪ সালে, প্রেম জিহাদের জন্য সংঘর্ষমূলক প্রতিবাদ শুরু হয়। যদিও রয়টার্স' এটিকে ভারতীয় প্রধান ও বুদ্ধিজীবীদের একটি ষড়যন্ত্র বলে।[48] বিজেপি এমপি যোগী আদিত্যনাথ বলেন যে, প্রেম জিহাদ হলো ভারতকে লক্ষ্য করে একটি ষড়যন্ত্র।[94] তিনি একটি টেলিভিশনে ঘোষণা করেন, মুসলিমরা জোরপূর্বক যা চায় তা ভারতে করতে পারে না, তাই তারা এখানে প্রেম জিহাদ পদ্ধতি ব্যবহার করছে।[95] হিন্দু কর্মীরা উত্তর প্রদেশের মেয়েদের সাবধান করে যে তারা যেন মুসলিমদের কাছ থেকে দূরে থাকে ও তাদের সাথে যেন বন্ধুত্ব না করে।[95] উত্তর প্রদেশের একটি কমিটি অখিল ভারতীয় বাইশ্য একতা পরিষদ বলে এই সমস্যায় কেউ যাতে আক্রান্ত না হয় সেজন্য যুবতী মেয়েদের ফোনের ব্যবহার হ্রাস করা উচিত।[96]
এই ঘোষণার পর, টাইমস অফ ইন্ডিয়া প্রতিবেদন করে যে পুলিশের নিয়ন্ত্রক শালাব মাথুর বলেছে প্রেম জিহাদ শব্দটি শুধু ভয় ও সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।[96] মুসলিম নেতারা বলেন ২০১৪ সালের এই বিষয়টির প্রচার করা একটি ঘৃণ্য কাজ।[95]অনেক নারী প্রবক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এই ধরনের কাজ নারীদের মুক্ত পছন্দ বন্ধ করে নারীদের অধিকারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।[58][97][98][99]
ভারতীয় জনতা পার্টির নেত্রী ও পানি মন্ত্রী উমা ভারতী, যুবক মেয়ে ও ছেলেদের প্রেম জিহাদ থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন সমাজের নেতাদের নিয়ে একটি সামাজিক আলোচনার ডাক দেন।[100]
সেপ্টেম্বর ২০১৪-এ, বিজেপি এমপি সাক্ষী মহারাজ বলেন মাদ্রাসার মুসলিম ছেলেদের বিভিন্ন অর্থের লোভ দেখিয়ে (শিখ মেয়ের সাথে সম্পর্কের জন ১১ লক্ষ, হিন্দু মেয়ের সাথে সম্পর্কের জন্য ১০ লক্ষ এবং জাইন মেয়ের সাথে সম্পর্কের জন্য ৭লক্ষ টাকা) প্রেম জিহাদে উৎসাহিত করা হয়। তিনি বলেন তিনি এগুলো কিছু মুসলিমদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন।[101] জামিয়া উলামা হিন্দ এর সহ-সভাপতি আব্দুল রাজ্জাক খান এসব কাজ অস্বীকার করে ও মন্তব্য করে দেশের শান্তি বিনষ্টে এটি ষড়যন্ত্রের অংশ।[102] উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মন্ত্রী মোঃ আজম খান উক্ত মন্তব্যকে নির্দেশ করে বলেন, দেশকে ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে।[103]
১৩ অক্টোবর, ইন্ডিয়া টুডে প্রতিবেদনে জানায়, যে নারী তাকে গণধর্ষণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ করেছিল, সে তার বক্তব্য পরিবর্তন করেছে ও পুলিশকে জানিয়েছে তাকে গোপনে চাপ দেওয়া হয়েছে।[104]
জানুয়ারিতে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নারী দল দুর্গা বাহিনী তাদের ম্যাগাজিনে প্রেম জিহাদ নিয়ে বোরকায় ঢাকা কারিনা কাপুরের ছবি প্রকাশ করে।[105] চিত্রের নিচে শিরোনাম ছিল:কনভার্সন অফ ন্যাশনালিটি থ্রো রেলিজিয়াস কনভার্সন।[106]
মে ২০১৭, কেরালা হাই কোর্ট একজন ধর্মান্তরিত মেয়ে অখিলার (ধর্মান্তরের পরে হাদিয়া) সাথে একজন মুসলিম ছেলে শাফিন জাহানের বিয়েকে নাকচ করে দেয় কারণ ধর্মান্তরের সময় কনের পিতামাতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তার বাবা বলেন আইএসআইএসের নির্দেশে এই বিয়ে ও ধর্মান্তর হয়েছে। তারপর কেরালার ডিজিপিকে প্রেম জিহাদ সম্পর্কিত কেস অনুসন্ধান করার জন্য ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরের ঘটনা খোঁজ করার আদেশ দেয়া হয় যেটা এই ধরনের সংগঠনের অস্তিত্ব প্রমাণ করবে ও এদের কাজ করার পেছনের ঘটনার ধারণা দিবে। কেরালার অধিকাংশ যুবক আইএসআইএস এর সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটা আরো নজরে আনবে যদি বৃহৎ কোন সংস্থা এর সাথে যুক্ত থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।[107] মেয়ের বাবা বলেন মেয়েকে একটি সংস্থা মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করতে প্রলুব্ধ করে যার কারণে মেয়েটি পিতামাতার কথা শোনে না।[108]
মেয়ের বাবা অশোকান মণি জানান ২০১৬ সালে, যখন তার মেয়ে যেখানে পড়ত সেই ক্যাম্পাস থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় তখন তিনি একটি হ্যাবিয়াস কর্পাস আবেদন লেখেন। তিনি জানান তার মেয়েকে জোর করে ধর্মান্তর করা হয়েছে ও তার মেয়ে অনেক সময়ই পরিবারকে জানাতো যে তাকে তার সহপাঠী জসীনা আবুবকর ও ফসীনা তার ইচ্ছার বাইরে কাজ করতে বাধ্য করত। যদিও অখিলাকে যখন পাওয়া যায় তখন সে জানায়, সে ২০১২ সাল থেকে ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করছে ও সে নিজ ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছে। সে আরও জানায় যে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ ছিল না। সে বলে সে তার রুমমেটদের কাছ থেকে এই ধর্মের শিক্ষা সম্পর্কে জানার পর এ ধর্মে আগ্রহী হয়েছে। সে জানায় সে ইসলাম ধর্ম জানার জন্য থারিভাথুল ইসলাম সভা কর্তৃক আয়োজিত একটি কোর্সে যোগ দেয়। সে আরো জানায় সে ব্রিফের সময় আবুবকরের সাথে ছিল ও মঞ্জেরীর সত্যসরণি হোস্টেলে চলে যায়, যেই প্রতিষ্ঠানটি ইসলামে ধর্মান্তর করছিল এবং এটি পিএফআই এর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সেখানে ইরনাকুলামে সে সৈনাবার সাথে পরিচিত হয় যার সাথে সে তার বাবার আবেদন করার পর থাকে। জুনে সে সত্যসারণীতে ভর্তি হওয়ার প্রমাণ দিলে কোর্ট সৈনাবার সাথে তার থাকা বৈধ করে ও তার বাবার আবেদন খারিজ করে। দুই মাস পর তার বাবা আবার আবেদন করেন ও বলেন তার মেয়ে আইএসআইএস এর নির্দেশে ধর্মান্তরিত হয়েছে ও তার শঙ্কা সে আফগানিস্তানে উক্ত দলে যোগ দিবে, তিনি উদ্ধৃত করেন কেরালার দুই নারীর কথা যারা মুসলিম পুরুষদের দ্বারা ধর্মান্তরিত হয়েছে ও উক্ত দলে যোগ দিয়েছে। ডিসেম্বরে, অখিলা শাফিনকে বিয়ে করে ও আশোকানের আবেদন মন্জুর করা হয় জানুয়ারি ২০১৭ সালে। আখিলা বিয়ের সার্টিফিকেট কোর্টকে দেখায় কিন্তু এটা নাকচ করা হয়।[107][108]
জুলাই ২০১৭ সালে,শাফিন জাহান কোর্টের সিদ্ধান্তকে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে চ্যালেঞ্জ করে।[108] শাফিন তার পরিবারের সাথে প্রথম মেয়েকে দেখে আগস্ট ২০১৬-তে একটি বৈবাহিক ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপনে।[109] সুপ্রিমকোর্টে কেসের কাজ শুরু হয় ৪ আগস্ট ২০১৭-এ। মেয়ের বাবা বলেন তার মেয়েকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে।[110] সুপ্রিমকোর্ট একইসাথে কেরালা সরকার ও এনআইএ-এর কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে।[111] প্রাক্তন বিচারক আর.বি. রবীন্দ্রন এনআইএ'কে ১৬আগস্ট বিষয়টি অনুসন্ধান করার নির্দেশ দেন যখন এনআইএ প্রকাশ করে যে, মেয়েটির বিয়ে করা ও ধর্মান্তরের ঘটনা ভিন্ন নয় এবং রাজ্যে এমন ঘটনা দেখা দিয়েছে, আরো বলেন তারা একই লোকের আরো একটি কেস পেয়েছেন।.[47] এনআইএ জানায় কেসে মেয়েটির স্বামী ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট-এর সাথে যুক্ত।[112] যারা হয়তো এই বিয়ে সম্পাদন করেছে।[113]
২০১৮ সালের ৮ মার্চে সুপ্রিম কোর্ট কেরালা উচ্চ আদালত থেকে হাদিয়ার বিবাহ বাতিল সম্পর্কিত রায়টি তুলে নেয় এবং সেখান থেকে জানানো হয় তিনি তার নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। অবশ্য জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের জন্য সুপ্রিম কোর্ট এনআইএকে তাদের তদন্ত অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দান করেছে।[114]
২০০৯ সালের অক্টোবরে, কর্ণাটক সরকার জানায় তারা প্রেম জিহাদ বন্ধে কাজ করবে যেটি একটি গুরুতর বিষয়ে পরিণত হয়েছে।[115] ঘোষণার এক সপ্তাহ পর, সরকার একটি অনুসন্ধানের জন্য সিআইডি নিযুক্ত করে যা এমন সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে যারা মেয়েদের ধর্মান্তরিত করতে চায়, আর কে বা করা এটিকে অর্থায়ন করছে তা জানার চেষ্টা করে।[116] ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত একজন মেয়ের ঘটনা সামনে আসলে তাকে তার পিতামাতার সাথে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়। কিন্তু কোর্টে সে জোর করে ধর্মান্তরের বিষয় অস্বীকার করলে তাকে তার স্বামীর কাছে ফেরত দেয়া হয়।[117][118] ২০১০ সালের এপ্রিলে, মহীশূর থেকে পুলিশের কাছে এমন আরেকটি ঘটনা আসে যেখানে এক ১৭ বছরের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে অপহরণ ও জোর করে ধর্মান্তর করা হয়েছে।[119]
থিরুবানানথাপুরাম,কেরালায় শ্রী রাম সেনা কর্তৃক একটি পোস্টার অভিযান চালু করার সময় পুলিশ সেই সংস্থার উপস্থিতির উপর অনুসন্ধান করে।[85] ২০০৯ সালের অক্টোবরে, পুলিশ বলে তারা প্রেম জিহাদ নামে কোনো সংস্থার যথাযথ প্রমাণ খুঁজে পায়নি।[120][121] তারা কিছু তথ্য পায় যে বিদেশী অর্থায়নকৃত কিছু সংগঠন রয়েছে যারা ধর্মান্তরে উৎসাহিত করে, কিন্তু যথাযথ প্রমাণ পায় না।[122]
২০০৯ সালে, কর্ণাটক সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনবেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) যদিও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিল, তবে যথাযথ প্রমাণ পায়নি।[123] ২০০৯-এর শেষের দিকে, ডিজিপি (ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ) জ্যাকব পুন্নজ জানান যে অনুসন্ধান চালানো সত্ত্বেও যথাযথ প্রমাণ মিলেনি যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যক্তি প্রেমের মাধ্যমে কোনো মেয়েকে ইসলাম ধর্মে রূপান্তরের চেষ্টা করেছে।[123][124] তারা অনুসন্ধান করে জানতে পারেন হিন্দু মেয়েদের একটি বড় অংশ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।[125]
৯ ডিসেম্বর ২০০৯, কেরালা হাইকোর্টের বিচারক কে.টি. সঙ্করণ একটি বিষয়ে মনোযোগ দেন যখন তিনি জানতে পারেন একজন মুসলিম যুবকের মুক্তি সম্পর্কে যে স্বীয় ক্যাম্পাসের দুজন মেয়েকে জোর করে ধর্মান্তর করে। সঙ্করণের মতে, পুলিশ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে ধর্মান্তরের জন্য কিছু দল সাহায্য করে, ৪ বছরে প্রেমের সম্পর্কের পর প্রায় ৩০০০-৪০০০ ঘটনা রয়েছে।[126] তিনি জানতে পারেন যে ভালোবাসার নামে জোর করে ধর্মান্তর ঘটছে ও পরামর্শ দেন, এই ধরনের প্রতারণামূলক কাজ ঠেকাতে আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন।[126]
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর মতে, তার বক্তব্য প্রেমের এসকল ঘটনা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটত যা রাজ্য সরকার অস্বীকার করে।[127] ২০১০ সালের শুরুতে, রাজ্য সরকার কর্ণাটক হাইকোর্টকে জানায় যে, হিন্দু মেয়েদের একটি বড় অংশ ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে।[125]
বিচারক কে.টি.সঙ্করণের কাছে "প্রেম জিহাদ" ও "রোমিও জিহাদ" শব্দ দুটি ব্যবহার বন্ধের জন্য দরখাস্ত করা হয়, কিন্তু গণমাধ্যমে ব্যবহারের জন্য অতি দ্রুত নিষেধাজ্ঞা জারি না করে তিনি দরখাস্তটি নাকচ করে।[127] ধারাবাহিকভাবে, হাইকোর্ট পুলিশের অনুসন্ধান জারি রাখে কেননা পুলিশ কোনো যথাযথ প্রমাণ পায় না এবং অনুসন্ধানটি শুধু একটি দলকে লক্ষ্য করে ছিল।[16][128]
জানুয়ারি ২০১২-তে, কেরালার পুলিশ যথাযথ প্রমাণ না পেয়ে প্রেম জিহাদকে একটি অস্তিত্বহীন অভিযান বলে এবং www.hindujagruti.org ওয়েবসাইটটিকে ধর্মীয় ঘৃণা ও ভুল প্রজ্ঞা প্রচার করে বলে অভিযোগ আনে।[16]
সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে, জাতীয়ভাবে পুনরুত্থানের পর[80] রয়টার্স জানায় উত্তর প্রদেশের পুলিশ প্রেম জিহাদ সম্পর্কিত পাঁচ ছয়টি অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ পায়নি। এ.এল.ব্যানার্জি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখি একজন মুসলিম ছেলে ও একজন হিন্দু মেয়ে বাবা-মার অনিচ্ছাতে বিয়ে করে।[48]
একই মাসে, যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ও প্রেম জিহাদ শব্দটি ব্যবহার বন্ধের আবেদনের প্রতিক্রিয়া প্রদান করার জন্য এলাহাবাদ হাইকোর্ট ও উত্তর প্রদেশের নির্বাচন কমিশন সরকারকে ১০দিন সময় দেয়।[53][94][129]
লাভ জিহাদের কথিত ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সহযোগীরা বলে যে, তারা মুসলিম মহিলাদের সাথে হিন্দু পুরুষদের বিবাহ হওয়ার লক্ষ্যে একটি বিপরীত লাভ জিহাদের প্রচারণা শুরু করেছে। [130] উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অংশ থেকে এর প্রচারণার সাথে সম্পর্কিত ঘটনাগুলি রিপোর্ট করে যে, এর ফলে সেখানে মুসলিম মহিলাদের ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতরা এসব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে এবং তারা নিজেদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্টদের দ্বারা পুরস্কৃত হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কুশিনগর জেলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম মেয়েদের নিখোঁজ বা অপহৃত হওয়ার ৩৮৯ টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং পূর্ব উত্তর প্রদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় উচ্চ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাসহ এলাকায় একই ধরনের প্রবণতা পাওয়া গেছে। [131] [132]
বিপরীত লাভ জিহাদ শব্দটি বজরং দল লাভ জিহাদ ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে বোঝাতেও ব্যবহার করে, যাতে কথিত শিকার একজন হিন্দু পুরুষ একজন মুসলিম মহিলার সাথে চাকরি ও বিয়ের সম্ভাবনার সাথে ইসলাম ধর্মে প্রলোভিত হচ্ছে। [133]
ভারতীয় আইনব্যবস্থায় লাভ জিহাদ কোনো স্বীকৃত শব্দ নয়।[134]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.