Loading AI tools
বিলুপ্ত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
লাতিন (লাতিন: latīnum, উচ্চারণ: [laˈt̪iːnʊ̃] লাতীনুঁ; অথবা lingua latīna, উচ্চারণ: [ˈlɪŋɡʷa laˈt̪iːna] লিঙ্ওয়া লাতীনা) একটি প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা, যা প্রাচীন রোম এবং পার্শ্ববর্তী লাতিউম এলাকাতে প্রচলিত ছিল। রোমান শক্তির বিস্তারের সাথে সাথে প্রাচীন ইউরোপ ও সংলগ্ন প্রায় সব অঞ্চলে ভাষাটি ছড়িয়ে পড়ে এবং পশ্চিম ইউরোপের প্রধান ভাষাতে পরিণত হয়। ১৮শ শতক পর্যন্ত এটি ইউরোপে জ্ঞানচর্চা ও কূটনীতির ভাষা ছিল। আজ পর্যন্ত এটি রোমান ক্যাথলিক ধর্মীয় রচনাবলির ভাষা।
লাতিন | |
---|---|
লিঙ্গুয়া লাতিনা | |
উচ্চারণ | [laˈtiːna] |
দেশোদ্ভব | Latium, Roman Monarchy, Roman Republic, রোমান সাম্রাজ্য, Medieval and Early modern Europe, Armenian Kingdom of Cilicia (লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে), ভ্যাটিকান সিটি |
জাতি | রোমানস্ |
যুগ | Vulgar Latin developed into Romance languages, 6th to 9th centuries; the formal language continued as the scholarly lingua franca of medieval Western Europe and as the liturgical language of the Roman Catholic Church.
|
ইন্দো-ইউরোপীয়
| |
Latin alphabet | |
সরকারি অবস্থা | |
সরকারি ভাষা | ভ্যাটিকান সিটি |
নিয়ন্ত্রক সংস্থা | প্রাচীনত্ব, ব্যাকরণ ও অলঙ্কারশাস্ত্রের রোমান স্কুল।[1] বর্তমানে, লাতিনের জন্য বিশপদের কর্তব্যাদিসংক্রান্ত একাডেমী। |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-১ | la |
আইএসও ৬৩৯-২ | lat |
আইএসও ৬৩৯-৩ | lat |
লিঙ্গুয়াস্ফেরা | 51-AAB-a |
রোমান সাম্রাজ্যের সর্বাধিক প্রসার, লাতিন ভাষাভাষী অনুযায়ী প্রশাসিত এলাকায় দেখাচ্ছে। সাম্রাজ্যে কথিত লাতিন ছাড়া অন্যান্য বহু ভাষাসমূহ, উল্লেখযোগ্য গ্রিক। | |
ইউরোপে রোমান্স ভাষার পরিসীমা, আধুনিক লাতিনের উত্তরপুরূষ। | |
লাতিন ভাষাটি ইতালির স্থানীয় ভাষা ছিল না। প্রাগৈতিহাসিক যুগে উত্তর দিক থেকে ইতালিক জাতির লোকেরা ইতালীয় উপদ্বীপে ভাষাটি নিয়ে এসেছিল। ভাষাটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ইতালিক উপ-পরিবারের সদস্য। ইতালিতে লাতিন ছিল মূলত রোম ও তার আশেপাশের অঞ্চলের একটি উপভাষা। ইতালিক ভাষাসমূহের মধ্যে লাতিন, ফালিস্কান ও অন্যান্য কিছু ভাষা মিলে লাতিনীয় দল গঠন করেছে। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে লাতিনীয় ভাষাতে লেখা শিলালিপি পাওয়া গেছে। সুস্পষ্ট রোমান লাতিনে লেখা বিভিন্ন প্রাচীনতম রচনা বেশির ভাগই খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের। উত্তর ইতালিতে প্রচলিত কেল্টীয় উপভাষাগুলি, মধ্য ইউরোপে প্রচলিত অ-ইন্দো-ইউরোপীয় এত্রুস্কান ভাষা, এবং দক্ষিণ ইতালিতে প্রচলিত গ্রিক ভাষা (খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতক থেকেই প্রচলিত) লাতিন ভাষাকে প্রভাবিত করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের দ্বিতীয়ার্ধে গ্রিক সাহিত্যগুলি লাতিনে অনুবাদ করা হয়। গ্রিক ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাবে লাতিন একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক ভাষায় পরিণত হয়।
লাতিন সাহিত্যিক ভাষার ইতিহাসকে চারটি পর্বে ভাগ করা যায়। এগুলি প্রাচীন লাতিন সাহিত্যেরও পর্ববিভাগ নির্দেশ করে।
২৪০-৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। এসময় এন্নিউস, প্লাউতুস এবং তেরেন্কে-র রচনাবলি উল্লেখযোগ্য।
খ্রিস্টপূর্ব ৭০ অব্দ থেকে ১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এসময়কার বিখ্যাত রচনাবলির মধ্যে আছে ইউলিয়ুস কাইসার, কিকেরো এবং লিভির লেখা গদ্য এবং কাতুল্লুস, লুক্রেতিয়ুস, ভির্গিল, হোরাকে, এবং ওভিদের লেখা কাব্য। এই পর্বে গদ্য ও পদ্য উভয় ক্ষেত্রে লাতিন ভাষা ভাব প্রকাশের জন্য একটি উৎকৃষ্ট, সমৃদ্ধ শৈল্পিক মাধ্যমে পরিণত হয়।
১৪ থেকে ১৩০ খ্রিস্টাব্দ। এ সময় আলঙ্কারিক ব্যাখ্যা এবং চাতুর্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদানের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। বিশেষ করে দার্শনিক ও নাট্যকার সেনেকা এবং ইতিহাসবিদ তাকিতুসের রচনাবলিতে এর প্রমাণ মেলে।
২য় শতক থেকে ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্ত। এই পর্বে ফাদার্স অভ দ্য চার্চের লেখা পাত্রিস্তিক লাতিন নামের সাহিত্য উল্লেখযোগ্য। এই পর্বের শেষ দিকে বিদেশী হানাদারেরা রোমান সাম্রাজ্য আক্রমণ করলে লাতিন ভাষাতে বহু বিদেশী শব্দ ও বাগধারা প্রবেশ করে। এই পরিবর্তিত লাতিন ভাষাটিকে নাম দেওয়া হয় লিঙুয়া রোমানা। অন্যদিকে প্রাচীন ধ্রুপদী ভাষাটির নাম দেওয়া হয় লিঙুয়া লাতিনা।
প্রাচীন অভিজাত রোমানদের মুখের ভাষা অনেক লেখকের সাহিত্যে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে প্লাউতুস এবং তেরেঙ্কে রচিত হাস্যরসাত্মক নাটকগুলি, কিকেরোর চিঠিপত্র, হোরাকে ও পেত্রোনিয়ুসের বিদ্রূপাত্মক রচনা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলি সের্মো কোতিদিয়ানুস বা ভদ্র সমাজের মুখের ভাষা নামে পরিচিত। এর বাইরেও ছিল সের্মো প্লেবেইয়ুস বা অশিক্ষিত জনগণের মুখের ভাষা; এই লাতিন ভাষাতে বাক্যগঠন ও বাক্যে পদের ক্রম সরল এবং নতুন শব্দের সংখ্যা বেশি। সের্মো প্লেবেইয়ুস প্রাকৃত লাতিন নামেও পরিচিত। আধুনিক রোমান্স ভাষাগুলি (ফরাসি, ইতালীয়, স্পেনীয়, ইত্যাদি) সাহিত্যিক লাতিন থেকে নয়, বরং এই প্রাকৃত লাতিনের শেষ পর্যায় লিঙুয়া রোমানা থেকে উৎপত্তি লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ সাহিত্যিক লাতিনে equus শব্দটি দিয়ে ঘোড়া বোঝানো হত। কিন্তু কথ্য প্রাকৃত লাতিনে এটির পরিবর্তে caballus ব্যবহার করা হয়, এবং এই caballus থেকেই রোমান্স ভাষার ঘোড়া নির্দেশকারী শব্দগুলি এসেছে। যেমন ঘোড়াকে ফরাসিতে বলা হয় cheval, আর স্পেনীয় ভাষাতে বলা হয় caballo। একইভাবে রোমান্স ভাষাতে মস্তক ধারণাটি প্রকাশের জন্য শব্দগুলি (যেমন ফরাসি tête, স্পেনীয় testa) লাতিন caput থেকে নয়, বরং একটি লাতিন স্ল্যাং testa থেকে এসেছে, যার অর্থ পাত্র।
মধ্যযুগে লাতিন ছিল পশ্চিম ইউরোপের শিক্ষাদীক্ষার ভাষা। একে মধ্যযুগীয় লাতিন বা নিম্ন লাতিন বলা হয়। এমনকি সাধারণ মানুষেও লাতিনে কথা বলত, কেননা গির্জাতে বিপুল পরিমাণে ধর্মীয় গদ্য ও পদ্য রচিত হত। কিন্তু ভাষাটির বহু পরিবর্তন সাধিত হয়। এর বাক্যগঠনের নিয়মগুলি সরল করা হয়, বিভিন্ন উৎস থেকে নতুন শব্দ গ্রহণ করা হয় এবং শব্দের নতুন নতুন অর্থও যুক্ত হয়। তবে অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষা যেমন ফরাসি বা ইংরেজির তুলনায় লাতিনে এই যুগে পরিবর্তন ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল।
১৫শ ও ১৬শ শতকে নতুন লাতিন বা আধুনিক লাতিনের আবির্ভাব ঘটে। রেনেসাঁ যুগের লেখকেরা লাতিন ভাষাতে নতুন ও অত্যন্ত উচ্চমানের লাতিন গ্রন্থ রচনা করেন, যেগুলিতে ধ্রুপদী লাতিন ভাষার লেখক বিশেষ করে কিকেরোর লেখার ধরন অনুকরণ করা করেছিল। ঐ দুই শতকে পাশ্চাত্যের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক এবং ধর্মীয় গ্রন্থাবলি লাতিন ভাষাতে লেখা হয়েছিল। এদের মধ্যে ওলন্দাজ পণ্ডিত দেসিদেরিয়ুস এরাসমুস, ইংরেজ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন, ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী আইজাক নিউটনের বিভিন্ন কাজ উল্লেখযোগ্য। লাতিন ছিল এসময় ইউরোপীয় দেশগুলির কূটনৈতিক ভাষা। কেবল ১৭শ শতকের শেষে এসেই আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে লাতিন ভাষার ব্যবহার উঠে যায়। তবে ১৮শ ও ১৯শ শতকেও এটি ধ্রুপদী পাণ্ডিত্যের ভাষা ছিল। এমনকি বিংশ শতাব্দীতে এসেও কিছু কিছু লাতিনে লেখা জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। আজও রোমান ক্যাথলিক গির্জা সরকারী কাজকর্মে লাতিন ভাষা ব্যবহার করে।
লাতিনের আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতিতে এটি উচ্চারণের বেশ কিছু পদ্ধতি পাশাপাশি প্রচলিত। একটি হল মহাদেশীয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি আধুনিক ইউরোপীয় ভাষাগুলির উচ্চারণের উপর ভিত্তি করে তৈরি। প্রধান মহাদেশীয় উচ্চারণ পদ্ধতিটি হল রোমান ক্যাথলিক গির্জার অনুসৃত পদ্ধতি। এতে ইতালীয় ভাষার প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। ইংরেজি পদ্ধতিতে লাতিন শব্দগুলি ইংরেজির মত করে উচ্চারিত হয়, তবে প্রতিটি সিলেবল আলাদা আলাদা করে উচ্চারিত হয়। রোমান পদ্ধতিতে কিকেরোর সময়কার ধ্রুপদী লাতিন যেভাবে উচ্চারিত হত, সেই ধরনের কাছাকাছি একটি উচ্চারণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়; স্কুল কলেজে লাতিন পাঠদানের সময় এই পদ্ধতিটিই ব্যবহৃত হয়। তবে ব্যক্তি বা স্থান নামগুলি সাধারণত যে দেশের যে ভাষা, সেই ভাষার মত করে উচ্চারিত হয়। যেমন লাতিন কিকেরো নামটি ইংল্যান্ডে সিসেরো, ফ্রান্সে সিসেরো, স্পেনে থিথেরো, ইতালিতে চিচেরো, এবং জার্মানিতে ৎসিৎসেরো উচ্চারিত হয়।
আদি লাতিন ভাষাতে গ্রিক ভাষার তুলনায় সৌন্দর্য ও নমনীয়তা কম ছিল। এর শব্দভাণ্ডার ছিল সীমিত এবং বিমূর্ত ধারণাসমূহ ব্যাখ্যার জন্য এটি সম্পূর্ণ উপযুক্ত ছিল না। রোমানরা তাদের ভাষার সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারে এবং গ্রিক থেকে বহু শব্দ ধার করে। বাক্যতাত্ত্বিক নিয়মাবদ্ধতা ও শব্দচয়নের গুরুত্ব লাতিন ভাষাকে এক ধরনের ওজস্বিতা ও সঠিকতা প্রদান করে, যার ফলে বহু শতাব্দী ধরে ভাষাটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা প্রকাশের বাহক ভাষা হিসেবে পাশ্চাত্যে আদৃত হয়ে এসেছে। লাতিন বর্তমানে দুইভাবে বেঁচে আছে। প্রথমত সাহিত্যিক লাতিন এখনও বহুল পঠিত এবং কেউ কেউ এ ভাষাতে এখনও লিখে থাকেন। দ্বিতীয়ত আধুনিক রোমান্স ভাষাগুলিও (ফরাসি, স্পেনীয়, পর্তুগিজ, ইতালীয়, রোমানীয়) আসলে প্রাকৃত লাতিনের আধুনিক বিবর্তিত রূপ। আধুনিক বিশ্বের আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি হলেও ইংরেজি প্রথমে সরাসরি এবং পরে ফরাসির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে লাতিন ভাষা থেকে বহু ঋণ গ্রহণ করে সমৃদ্ধ হয়েছে। লাতিন ভাষা কেবল এর উৎকৃষ্ট সাহিত্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আধুনিক ইউরোপের অনেকগুলি প্রধান ভাষার ইতিহাস লাতিনের ইতিহাসের সাথে জড়িত।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.