হুমায়ুনের সমাধিসৌধ
মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিসৌধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিসৌধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হুমায়ুনের সমাধিসৌধ (হিন্দি: हुमायूँ का मक़बरा, উর্দু: مقبرہ ہمایوں) হল মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিসৌধ। ১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ুনের পত্নী হামিদা বানু বেগম এই সমাধিটি নির্মাণ করান। এটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন পারসিক স্থপতি মিরাক মির্জা গিয়াস।[1] হুমায়ুনের সমাধিই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম উদ্যান-সমাধিক্ষেত্র।[2] দিল্লির নিজামুদ্দিন পূর্ব অঞ্চলে হুমায়ুন ১৫৩৩ সালে যে দিনা-পানাহ বা পুরানা কিল্লা নির্মাণ করেছিলেন, তার সন্নিকটেই এই সমাধিসৌধটি অবস্থিত। লাল বেলেপাথরের এত বড় মাপের স্থাপনাগুলির মধ্যে হুমায়ুনের সমাধিসৌধই ভারতে প্রথম।[3][4] ১৯৯৩ সালে এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষিত হয়।[2] তদবধি এই সমাধিসৌধ চত্বরটি বড়ো রকমের সংস্কারকাজ চলছে।
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান | |
---|---|
মানদণ্ড | সাংস্কৃতিক: ii, iv |
সূত্র | ২৩২ |
তালিকাভুক্তকরণ | ১৯৯৩ (সপ্তদশ সভা) |
সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যু হয় ১৫৫৬ সালের ২০ জানুয়ারি। তাঁর দেহ প্রথমে দিল্লিতে তাঁর রাজপ্রাসাদেই সমাহিত করা হয়। পরে খঞ্জর বেগ এটিকে নিয়ে যান পাঞ্জাবের সিরহিন্দে। সেখানে ১৫৫৮ সালে হুমায়ুনের পুত্র তথা তদানীন্তন মুঘল সম্রাট আকবর এটি দেখেন। পরে ১৫৭১ সালে হুমায়ুনের সমাধিসৌধের কাজ সমাপ্ত হলে আকবর এটির পরিদর্শনে এসেছিলেন।[5][6][7]
হুমায়ুনের বিধবা পত্নী হামিদা বানু বেগমের নির্দেশে ১৫৬৫ সালে হুমায়ুনের মৃত্যুর নয় বছর পরে এই সমাধিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৫৭২ সালে। সৌধটি নির্মাণ করতে সেযুগে খরচ হয়েছিল ১৫ লক্ষ টাকা।[1] মনে রাখা দরকার, এই হামিদা বানু বেগম ও হুমায়ুনের প্রথমা পত্নী হাজি বেগম এক ব্যক্তি নন। আইন-ই-আকবরি অনুসারে, জনৈকা হাজি বেগম জীবনের শেষ পর্বে এই সমাধির তদারকি করতেন। তিনি ছিলেন হুমায়ুনের মামাতো বোন।[8]
যে অল্প কয়েকজন সমসাময়িক ঐতিহাসিক এই সৌধের উল্লেখ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম আবদ আল-কাদির বাদাউনি। তিনি লিখেছেন, সৌধটির নকশা প্রস্তুত করেন পারসিক স্থপতি মিরাক মির্জা গিয়াস (যিনি মিরাক গিয়াসুদ্দিন নামেও পরিচিত)। তাকে হেরাত (উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান) থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ইতঃপূর্বে তিনি হেরাত, বুখারা (অধুনা উজবেকিস্তান) ও ভারতের অন্যান্য অংশে অনেকগুলি ভবন নির্মাণ করেন। তবে নির্মাণকার্য শেষ হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় এবং তার পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ ইবন মিরাক গিয়াথুদ্দিন পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন।[5][6]
হুমায়ুনের সমাধিটি দিল্লীতে যমুনা নদীর তীরে নির্মিত হয়। কারণ এই জায়গাটি ছিল দিল্লির সুফি নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সমাধিস্থল নিজামুদ্দিন দরগার নিকটবর্তী। দিল্লির শাসকেরা এই সুফি সন্তকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। এঁর বাসভবন চিল্লা নিজামুদ্দিন আউলিয়া হুমায়ুনের সমাধিস্থলের ঠিক উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। মুঘল শাসনের শেষ পর্বে, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ তাঁর তিন পুত্রকে নিয়ে এখানে আশ্রয় নেন। পরে ক্যাপ্টেন হডসন তাঁকে বন্দী করেন এবং বিচারের পর তাঁকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করা হয়।[1][9] দাস রাজবংশের শাসনকালে এই জায়গাটি নাসিরুদ্দিনের (১২৬৮-৮৭) পুত্র সুলতান কায়কোবাদের রাজধানী কিলোখেরি দুর্গের অন্তর্গত ছিল।
হুমায়ুনের মূল সমাধিসৌধটি ছাড়াও পশ্চিমের প্রধান দরজা থেকে সেই সমাধি পর্যন্ত যে পথটি গিয়েছে তার দুপাশে অনেকগুলি ছোটো ছোটো স্মারক রয়েছে। এটি হুমায়ুনের সমাধিরও ২০ বছর আগে নির্মিত হয়। এই সমাধিচত্বরটি সুরি শাসক শের শাহের রাজসভার আফগান অভিজাতপুরুষ ইসা খান নিয়াজির। উল্লেখ্য, নিয়াজি মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। ১৫৪৭ সালে এই সমাধিচত্বরটি নির্মিত হয়।
হুমায়ুনের সমাধিসৌধ চত্বরে হুমায়ুনের সমাধি ছাড়াও রয়েছে তার পত্নী হামিদা বেগম এবং পরবর্তীকালের মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র দারাশিকোর সমাধিস্থলও। এছাড়া রয়েছে জাহান্দর শাহ, ফারুকশিয়ার, রফি উল-দৌলত ও দ্বিতীয় আলমগির প্রমুখ পরবর্তীকালের মুঘল শাসকদের সমাধিও।[10]
এ সমাধিসৌধে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর এক বিশেষ উত্তরণ ঘটেছে। সমাধি চত্বরের চারবাগ গার্ডেন পারসিক বাগিচার একটি উদাহরণ, যা ভারতে পূর্বে কখনও দেখা যায়নি। কাবুলে (আফগানিস্তান) বাগ-ই-বাবর নামে পরিচিত মুঘল সম্রাট বাবরের যে সমাধিসৌধটি রয়েছে, তা তুলনামূলকভাবে সাদামাটা। হুমায়ুনের ক্ষেত্রে সেই ধরনের সাধারণ সমাধিসৌধ নির্মিত হয়নি। যদিও নন্দনকানন-প্রতিম উদ্যানে রাজকীয় সমাধি নির্মাণ বাবরের ক্ষেত্রেই প্রথম দেখা যায়।[11] হুমায়ুনের সমাধিসৌধটি সমরকন্দে অবস্থিত তার পূর্বপুরুষ তথা এশিয়াবিজয়ী তৈমুরের সমাধি গুর-ই আমির-এর আদলে নির্মিত। এই সমাধিসৌধ আগ্রার তাজমহল সহ একাধিক সুরম্য রাজকীয় মুঘল স্থাপত্য নিদর্শনের পূর্বসূরি।[12][13][14]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.