চিকুইতোসের জেসুইট মিশন
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চিকুইতোসের জেসুইট মিশন (স্পেনীয়: Jesuit Missions of Chiquitos) বলিভিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা সান্তা ক্রুজ ডিপার্টমেন্টে অবস্থিত। ঐ সকল সাবেক ছয়টি মিশনই বর্তমানে প্রাচীন পৌরসভার মর্যাদা পাচ্ছে। ১৯৯০ সালে মিশনগুলো সম্মিলিতভাবে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ইউরোপীয় ও আমেরিন্দিয়ান সাংস্কৃতিক প্রভাবে অনন্য স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হিসেবে অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পৃথকধর্মী। এ মিশনগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে স্থানীয় উপজাতিদেরকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করা।
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান | |
---|---|
মানদণ্ড | সাংস্কৃতিক: ৪র্থ, ৫ম |
সূত্র | ৫২৯ |
তালিকাভুক্তকরণ | ১৯৯০ (১৪শ সভা) |
বলিভিয়ার পূর্বাংশের সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উচ্চভূমিতে জেসুইট মিশনগুলোর অবস্থান। এছাড়াও মিশনগুলো ব্রাজিলের সীমান্তবর্তী এলাকায়। গরম ও অত্যন্ত রুক্ষ্ম নিচুভূমিতে ছয়টি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের বসতিগুলো রয়েছে। এর কাছাকাছি এলাকা হচ্ছে - সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় গ্রান চাকো। এর মাঝ দিয়ে প্যারাগুলোয় ও গুয়াপে নদী প্রবাহিত হচ্ছে।
নাফলো দে চাভেস নামীয় ষোড়শ শতাব্দীর স্পেনীয় অভিযান পরিচালনাকারী ও সান্তা ক্রুজ লা ভাইজা’র প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চিকুইতোস নামের সূচনা ঘটান। এর অর্থ হচ্ছে অন্যতম ক্ষুদ্র। এর মাধ্যমে ছোট দরজাবিশিষ্ট খড়ের গৃহগুলোতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাসস্থান।[nb 1][1] ভুলক্রমে অঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী হিসেবে চিকুইতোসকে পরিচয় ঘটানো হয়। সঠিক হচ্ছে চিকুইতানো। সম্মিলিতভাবে ৪০টি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিয়ে গ্রান চিকুইতানিয়ায় বসবাস করছে।[2][3] মূলতঃ চিকুইতোস বলতে কেবলমাত্র বর্তমানের বলিভিয়া ডিপার্টমেন্টের বা সাবেক বৃহত্তর পেরু অঞ্চলে (বর্তমানে বলিভিয়া) বসবাসকারীদের বুঝায়।
বর্তমানে সান্তা ক্রুজ ডিপার্টমেন্টের প্রাদেশিক বিভাগে মিশনভূক্ত এলাকার জেসুইট ধারণা অনুসরণ করে না। পাঁচটি আধুনিক প্রদেশ: অ্যাঞ্জেল স্যান্ডোভাল, জার্মান বুশ, হোস মিগুয়েল দে ভেলাস্কো, নাফলো দে চাভেজ ও চিকুইতোস প্রদেশে চিকুইতানিয়ারা বসবাস করছেন।[2][4][5]
পুরো অঞ্চলটি স্পেনীয় ও পর্তুগীজ আঞ্চলিক সীমানারেখা বরাবর অবস্থিত। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষদিক পর্যন্ত এ অঞ্চলের ব্যাপক অংশই অনুদঘাটিত ছিল। স্পেনীয় রাজতন্ত্রের অনুমোদনক্রমে জেসুইটরা এলাকাগুলো উদ্ঘাটন করে ও দূর্গম চিকুইতানিয়ায় ৭৬ বছরের মধ্যে এগারোটি বসতি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। এরপূর্বে স্পেনীয় আমেরিকার আন্তর্জাতিক সীমানায় এটি চিকুইতোস নামে পরিচিত ছিল। তারা গির্জা (‘টেম্পলোস’) নির্মাণে অগ্রসর হয়। স্থানীয় ও ইউরোপীয় ধাঁচের সংমিশ্রণে ভিন্নধর্মীয় এ গির্জাগুলোয় আদিবাসীরা বসবাস করতে থাকে। সেখানে তারা ইউরোপীয় সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করে যার অর্থ দাঁড়ায় রূপান্তরকরণ। মিশনগুলো স্বাবলম্বিতা সহযোগে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও দৃশ্যতঃ স্পেনীয় রাজতন্ত্রের শাসন থেকে স্বায়ত্বশাসন লাভ করে।
১৭০৮ সালে বর্তমান স্থানে প্রথম জেসুইট মিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।[2] আরও দশটি মিশন ১৬৯০-এর দশক, ১৭২০-এর দশক ও ১৭৪৮ সালের পর - এ তিনটি সময়কালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৬৯০-এর দশকে স্যান রাফায়েল দে ভেলাস্কো, স্যান হোস দে চিকুইতোস, কনসেপসিওন ও স্যান জুয়ান বোতিস্তা প্রতিষ্ঠা পায়। তবে, স্যান জুয়ান বোতিস্তা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় যুক্ত হয়নি। একমাত্র ধ্বংসাবশেষ হিসেবে এর পাথুড়ে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বর্তমান তাপেরাস গ্রামে রয়েছে।
১৭০১ থেকে ১৭১৪ সময়কালে সংঘটিত স্পেনীয় উত্তরাধিকারী নির্ধারণের কারণে যুদ্ধের প্রভাবে মিশনগুলো স্থায়ীত্বকাল স্বল্পমেয়াদে পরিণত হয় ও এর কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়তে থাকে। ফলে এ সময়কালে নতুন কোন মিশন তৈরী করা হয়নি। ১৭১৮ সালের মধ্যে স্যান রাফায়েল সর্ববৃহৎ চিকুইতোস মিশন ছিল। এর অধিবাসীর সংখ্যা ছিল ২,৬১৫জন।[6] ১৭২১ সালে জেসুইট ফাদার ফেলিপ সুয়ারেজ ও ফাদার ফ্রান্সিস্কো হার্ভাস স্যান রাফায়েল মিশনকে বিভক্ত করে স্যান মিগুয়েল দে ভেলাস্কো মিশনে পরিণত করেন। দক্ষিণের স্যান ইগনাসিও দে জামুকস ১৭২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৭৪৫ সালে এটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। বর্তমানে এর কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই।[2][7]
১৬৯১ থেকে ১৭৬০ সালের মধ্যে এ এলাকায় এগারোটি মিশন নির্মাণ করা হয়েছিল।[8] এছাড়াও, আগুন, বন্যা, প্লেগ, দুর্ভিক্ষ ও প্রতিপক্ষীয় উপজাতি কিংবা দাস ব্যবসায়ীদের কারণে অনেক মিশনকেই পুণঃপ্রতিষ্ঠিত বা পুণঃনির্মাণ করতে হয়েছিল।[1] তৃতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত মিশনগুলোর নির্মাণ কার্য ১৭৪৮ সালে শুরু হয়। স্যান ইগনাসিও দে ভেলাস্কো প্রতিষ্ঠা করা হলেও বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
১৭৬৭ সালে স্পেনীয় অঞ্চলগুলোয় জেসুইট আদেশনামার প্রসার ঘটলে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে জেসুইটদের কার্যক্রম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ও একপর্যায়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে সাবেক চিকুইতোসের জেসুইট মিশনগুলো অনন্য ছিল। কেননা তাদের বসতিগুলো ও সম্পৃক্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলো ব্যাপক অর্থে টিকে থাকে।
১৩ জানুয়ারি, ১৭৫০ তারিখে স্বাক্ষরিত মাদ্রিদ চুক্তির ফলে বর্তমানের ব্রাজিলের রিও গ্রান্দে দো সাল রাজ্যের সাতটি মিশনকে স্পেনীয়দের নিয়ন্ত্রণ থেকে পর্তুগীজদের দায়িত্বে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় আদিবাসী গুয়ারানি উপজাতিরা তাদের জমিকে পর্তুগালের কাছে দিয়ে দেয়ায় অখুশী ছিল। কেননা, শতাব্দীকাল ধরে তারা শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হতো। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিদ্রোহের সূচনা ঘটে ও গুয়ারানি যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।[9] ইউরোপে জেসুইটরা আক্রমণের শিকারে পরিণত হলে, স্থানীয় আদিবাসীরা সহায়তা ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে।[9] ১৭৫৮ সালে পর্তুগালের রাজাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের দায়ে জেসুইটদের অভিযুক্ত করা হয় যা তাভোরা ঘটনা নামে পরিচিত।[10] ১৭৫৯ সালে যিশু সম্প্রদায়ের সকল সদস্যকে পর্তুগীজ অঞ্চলগুলো থেকে বিতাড়িত করা হয়।[11] ১৭৬৪ সালে ফরাসী অঞ্চলগুলো থেকেও বিতাড়ণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।[12] ১৭৬৬ সালে মাদ্রিদের এস্কুইলাসে দাঙ্গায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ জেসুইটদের উপর বর্তানো হয়। ফলশ্রুতিতে ১৭৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্পেনের তৃতীয় চার্লস রাজকীয় আদেশজারীর মাধ্যমে স্পেনীয় অঞ্চলগুলো থেকে যিশু সম্প্রদায়ভূক্ত জেসুইটদেরকে চলে যাবার নির্দেশ দেন।[9]
এরপর থেকেই আধ্যাত্মিক ও মৌলবাদী প্রশাসন কঠোরভাবে তা পৃথক করে দেন।[13] বিতাড়নকালীন দশটি চিকুইতানিয়া মিশনের কমপক্ষে ২৪,০০০জনের মধ্যে ২৫জন বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করে অবস্থান করেন।[nb 2][6] চিকুইতোস মিশনগুলোয় ২৫টি বিস্তৃত ভূ-অঞ্চল (র্যাঞ্চ), ৩১,৭০০ গবাদিপুশ ও ৮৫০টি ঘোড়া ছিল। গ্রন্থাগারগুলোয় ২,০৯৪টি খণ্ড ছিল।[14]
বিতাড়নের দুই বছরের মধ্যে চিকুইতোস মিশনের জনসংখ্যা ২০,০০০-এর নিচে চলে যায়।[15] বসতিস্থাপনে সাধারণ পরিবেশ বজায় না থাকলেও গির্জা ভবনটি রক্ষণাবেক্ষন করা হতো। কিছু ক্ষেত্রে শহরের অধিবাসীদের আগমন ঘটতে থাকে। সান্তা আনা দে ভেলাস্কো গির্জার অবকাঠামো এ সময়কালে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। চিকুইতানো নিয়ে গবেষণারত প্রত্নতত্ত্ববিদ বার্নড ফিসারম্যান ধারণা করেন যে, জেসুইটদের বিতাড়নের পরও তিনটি কারণে চিকুইতানো ঐতিহাসিক স্থাপনারূপে স্বীকৃতি পায়।[16] জেসুইটদের সাথে তাদের সমৃদ্ধির স্মৃতিচারণ; সভ্য খ্রিস্টানদের মেস্তিজো ও শ্বেতাঙ্গদের মাঝে আবির্ভাব ও বিভিন্ন মিশ্র সাংস্কৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন দলগুলোকে একই ভাষায় এনে সংগঠিতকরণ এবং জেসুইটদের কাছ থেকে রীতি-প্রথা বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ।[nb 3]
জেসুইটরা খুব দ্রুত আদিবাসীদের ভাষাগুলো করায়ত্ত্ব করতে সক্ষমতা দেখান। এরফলে মিশনারী কাজ-কর্ম সম্পাদন করতে সহজ হয় ও মিশনের সফলতায় এর তৎপরতা বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট উপজাতিদের জন্য পৃথক ধরনের গৃহ নির্মাণ করতে হয়, অগণিত উপজাতি পরিবার চিকুইতানিয়ায় বাস করতে থাকে ও প্রায়শইঃ একই মিশনের অন্যান্যদের সাথে পরিচিতি ঘটানোর প্রয়াশ চালানো হয়। ১৭৪৫ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, মিশনগুলোয় ১৪,৭০৬জন ব্যক্তি বাস করতেন। ৬৫.৪% চিকুইতানো, ১১% আরাওয়াক, ৯.১% অতুকুইস, ৭.৯% জামুকস, ৪.৪% চাপাকুরা ও ২.১% গুয়ারানিভাষী ছিলেন।[7] জেসুইটদের বিতারনের তিন বছরের মধ্যে ১৭৭০ সালে স্পেনীয় কর্তৃপক্ষ নতুন নীতির প্রবর্তন করে। এতে জোরপূর্বক কাস্তিলিয়ান বা হিস্পানিক ভাষা ব্যবহারের কথা বলা হয়। এরফলে স্থানীয়ভাষীদের সংখ্যা কমতে শুরু করে।[17]
অনেক ইন্ডিয়ান পর্তুগীজদের দাস ব্যবসা থেকে রক্ষা পেতে কিংবা স্পেনীয় দখদারদের সুনজরে আসতে মিশনে যোগ দেয়। অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা মুক্ত ও স্বাধীন ছিল। মিশনের জমিগুলো সকলের সম্পত্তি ছিল। বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য ব্যক্তিগত সম্পদরূপে প্রদান করা হতো।[1] সকল ক্ষেত্রেই জেসুইটরা একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতো। তাহলো - আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে বাঁধার মুখোমুখি হলেই সুখ-সমৃদ্ধি শান্তিময় শহর স্থাপন করা।[18][19]
পেরুর ভাইসরয়্যালিটির অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বসতিগুলোর অবস্থান হলেও রয়্যাল চারকাস অডিয়েন্সিয়া ও সান্তা ক্রুজ চার্চের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় বিধায় তাদেরকে স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ১৫১৫ সালের দিকে ফ্রাঙ্কিস্কান ফ্রায়ার বার্তোলোম দে লাস কাসাস ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠীর জন্য বিদেশী আইনের প্রয়োগ লক্ষ্য করেন। সেখানে জেসুইট ও কর্তৃপক্ষ বাদে কোন শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ছিল না ও বসবাসের অনুমতি পেতো না। ব্যবসায়ীদেরকে সর্বোচ্চ তিনদিন অবস্থান করার অনুমতি দেয়া হতো।[2][8]
সুপ্রাচীনকাল থেকেই অধিকাংশ চিকুইতোস উপজাতিরা জুম চাষ প্রথায় কৃষিকাজ করতে। ভুট্টা ও ইয়াকা স্বল্প পরিমাণে উৎপাদন করতো।[7] স্পেনীয়দের সাথে যোগাযোগের পর কোকোয়া ও ধান উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হয়। শুষ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত পুষ্টির জন্য শিকার ও মাছ ধরতে থাকে। জেসুইটরা গবাদিপশু উৎপাদনের সূচনা ঘটায়।[1][11]
প্রত্যেক বসতিতেই একজন জেসুইট চার্চের বিষয়ে, অন্যজন বাণিজ্য ও বাদ-বাকীরা সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করতো। এ বিষয়ে সুই পাদ্রী, সঙ্গীতজ্ঞ ও স্থপতি ফাদার মার্টিন স্মিড ১৭৪৪ সালে স্যান রাফায়েল থেকে পত্র লেখেন।[2]
খননকার্য পরিচালনা শুরু করার পর মিশন এলাকায় পর্যটকদের মনোযোগের কেন্দ্রে পরিণত হয় ও ১৯৭৭ সালে ইউনেস্কো থেকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।[nb 4][8]
পর্যটনকদের স্থান নির্ধারণে মিশন এলাকায় ট্রাভেল এজেন্সি, বণিক সমিতি, শহরের মেয়র, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য সংগঠন লাঞ্জামিয়েন্তো মুন্দিয়াল দেল দেসতিনো টুরিস্টিকো চিকুইতোস নামে পাঁচদিনের পর্যটন অনুষ্ঠান পালন করে।[nb 5] ২৩-২৭ মার্চ, ২০০৬ সালে এ অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয়েছিল।[20] সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সফর পরিচালনাকারীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণকেন্দ্রের পরিচিত দেখানো হয়। এছাড়াও, জাদুঘল পরিদর্শন, স্থানীয়ভাবে কর্মপন্থা নির্ধারণ, বিভিন্ন কনসার্ট, আদিবাসী নৃত্য, উঁচুমানের অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, কারুশিল্প প্রদশর্নী ও স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। আয়োজকেরা প্রারম্ভিকভাবে প্রতিবছরে ২৫,০০০ পর্যটক থেকে বৃদ্ধি করে দশ লক্ষ পর্যটক আগমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। এতে $৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের প্রস্তাবনা দেয়া হয়।[21][22] অন্যদিকে, বলিভীয় সরকারের কাছ থেকে উদাসীনতাও লক্ষ্যণীয় ছিল। পাশাপাশি জাতীয় ও স্থানীয় অর্থনীতিতে নিম্নমূখীতা থাকা স্বত্ত্বেও প্রতি বছরে গড়পড়তা দুই থেকে আড়াই লক্ষ পর্যটকের ঢল নেমেছিল।
এ অঞ্চলে পর্যটনশিল্প অর্থ উপার্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কেবলমাত্র কনসেপসিওন মিউনিসিপিওতেই $২৯৬,১৪০ ডলার উপার্জিত হয় যা বার্ষিক মোট আয়ের ৭.২%। এছাড়াও, অতিরিক্ত $৪০,০০০ ডলার আসে হস্তশিল্প থেকে।[23] কোঅর্ডিনাদোরা ইন্তারিস্তিতুসন্যাল দে লা প্রভিন্সিয়া ভেলাস্কো’র ২০০৭ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, ২০০৬ সালে অঞ্চলটির সর্ববৃহৎ শহর স্যান ইগনাসিও দে ভেলাস্কোয় ১৭,৩৮১জন পর্যটক এসেছিলেন। তন্মধ্যে, বলিভিয়ার বাইরে থেকে এসেছেন প্রায় ৩০%। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ছিল - কাছাকাছি স্যান মিগুয়েল দে ভেলাস্কো, স্যান রাফায়েল দে ভেলাস্কো ও সান্তা অ্যানা দে ভেলাস্কো।[nb 6] ২০০৬ সালে স্যান ইগনাসিও দে ভেলাস্কো ৭,৮২১,৪৫০ বলিভিয়ানোস আয় করে।[24] পর্যটন খাত থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করার কথা থাকেও উদ্দীষ্ট প্রকল্পে ব্যয় না করার বিষয়টি সমালোচনার আকার ধারণ করছে। মিশনারী এলাকয় অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সঙ্গীত উৎসবের পাশাপাশি নদী, লাগুন, উষ্ণ প্রস্রবন, গুহা ও জলপ্রপাতের ন্যায় অনেকগুলো প্রাকৃতিক নিদর্শন রয়েছে। তবে, পর্যটন শিল্পকে ঘিরে এগুলোর অবকাঠামো গড়ে উঠেনি।
১৯৭২ সালে সাবেক সুইস জেসুইট পাদ্রী ও স্থপতি হ্যান্স রথের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় অনেক ঔপনিবেশিক ভবন ও মিশনারী গির্জাগুলো রক্ষায় সহকর্মী ও স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে ১৯৯৯ সালে নিজের মৃত্যু-পর্যন্ত ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ঐ সকল সাবেক জেসুইট মিশনগুলো কিছু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে থাকে।
১৯৯৬ সাল থেকে অ-লাভজনক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়াসিওন প্রো আর্তে ওয়াই কালচারা’ দ্বি-বার্ষিক আন্তর্জাতিক সঙ্গীত উৎসব পালন অগ্রসর হয় যা জনপ্রিয়তা লাভ করে।[25] এতে মিশন সংলগ্ন শহরগুলোয় অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ঐ অঞ্চলের বসতিস্থাপনকারীদের অংশগ্রহণ ঘটতে থাকে।[26]
১৯৯০ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় এলাকার ছয়টি স্থানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে স্যান ইগানাসিও দে ভেলাস্কো, সান্তিয়াগো দে চিকুইতোস ও সান্তো কোরাজন গির্জাগুলোর সংস্কার কার্য শুরু হলে সেগুলো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি। স্যান জুয়ান বোতিস্তার ভগ্নাবশেষই কেবল বাকী থাকে। খ্রিস্টধর্মীয় স্থাপত্যশৈলীতে স্থানীয় পরিবেশ ও অনন্য সাধারণ স্থাপত্যশৈলীতে কাঠের দণ্ড ও বানিস্টার সহযোগে তৈরী এ গির্জাটিকে চতুর্থ ও পঞ্চম শর্তাবলীতে তালিকায় স্থান দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক স্থাপনা ও স্থানবিষয়ক আন্তর্জাতিক কাউন্সিল ইকোমস সতর্ক করে দিয়েছে যে, ১৯৫৩ সাল থেকে আগ্রহ নিয়ে পুণর্গঠন প্রক্রিয়া চালানো হলেও ভেঙ্গে পড়া আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এ অঞ্চলটি হুমকির মুখে রয়েছে। মনোনয়নকালীন প্রো সান্তা ক্রুজ কমিটি, কর্দেক্রুজ[nb 7] প্লান রেগুলাদর দে সান্তা ক্রুজ[nb 8] ও মিশনভূক্ত শহরগুলোর স্থানীয় মেয়র কমিটি কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো রক্ষণাবেক্ষন করা হতো।[8]
দ্য মিশন চলচ্চিত্রে জেসুইট মিশনের শুরুর দিনগুলোর অনেক দৃশ্য তুলে ধরা হয়। প্যারাগুয়ের গুয়ারানি মিশনের জীবনধারা নিয়ে এর পটভূমি গড়ে উঠে। জেসুইটদের চলে যাবার ঘটনাক্রম ফ্রিৎজ হোসোয়াল্দারের নাটক ‘দাস হেইলিজ এক্সপারিমেন্টে’ বিষয়বস্তু ছিল। উভয়ক্ষেত্রেই এর দৃশ্যধারণ পর্ব প্যারাগুয়েতে সম্পন্ন হয়।[27] নাটকের বিষয়কে কেন্দ্র করে নতুন করে গবেষকদের হারিয়ে যাওয়া জেসুইট মিশনের বিষয়ে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.