শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

ব্রাজিল

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ব্রাজিলmap
Remove ads

সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল[][] (পর্তুগিজ: República Federativa do Brasil, পর্তুগিজ উচ্চারণ: [he'publikɐ fedeɾa'tʃivɐ du bɾa'ziw] বা হেপুব্লিকা ফ়েদেরাচিভ়া দু ব্রাজ়িউ শুনুন), যা প্রচলিতভাবে ব্রাজিল (পর্তুগিজ: Brasil, পর্তুগিজ উচ্চারণ: [bɾaˈziw] বা ব্রাজিউ) নামে পরিচিত, হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। এছাড়াও জনসংখ্যাভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ৮,৫১৪,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার (৫,২৯০,৮৯৯ বর্গমাইল) আয়তনের এই দেশটিতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি।[][১০] এটি আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ, এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র।[]

দ্রুত তথ্য সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল, রাজধানী ...

ব্রাজিলে পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। যার উপকূলীয়ভাগের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭,৪৯১ কিমি (৪,৬৫৫ মা)[] ব্রাজিলের উত্তরে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম, ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা। এছাড়াও এর উত্তর-পশ্চিমভাগে কলম্বিয়া; পশ্চিমে বলিভিয়াপেরু; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনাপ্যারাগুয়ে, এবং সর্ব-দক্ষিণে দক্ষিণে উরুগুয়ে অবস্থিত। ব্রাজিলীয় সীমানায় আটলান্টিক মহাসাগরের বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ[] ব্রাজিলের সাথে চিলিইকুয়েডর ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশেরই সীমান্ত-সংযোগ রয়েছে।

১৫০০ সালে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউয়ের ব্রাজিলে এসে পৌঁছানোর পর থেকে ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রাজিল ছিলো একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৮১৫ সালে এটি যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, ও আলগ্রেভিজের সাথে একত্রিত হয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা গঠন করে। মূলত ১৮০৮ সালেই ব্রাজিলের ‘পর্তুগিজ উপনিবেশ’ পরিচয়ে ফাটল ধরে, কারণ নেপোলিয়নের পর্তুগাল আক্রমণের রেশ ধরে পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র লিসবন থেকে ব্রাজিলের রিও দি জানেইরুতে সরিয়ে নওয়া হয়।[১১] ১৮২২ সালে ব্রাজিল, পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাথমিক ভাগে এটি ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্য হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করলেও ১৮৮৯ সাল থেকে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। ১৮২৪ সালে ব্রাজিলের প্রথম সংবিধান পাশ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে, যা বর্তমানে কংগ্রেস নামে পরিচিত।[১১] বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ব্রাজিল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র[১২] একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট, ২৬টি প্রদেশ, ও ৫,৫৬৪টি মিউনিসিপ্যালিটি নিয়ে এর যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছে।[১২][১৩]

ক্রয়ক্ষমতা সমতা[১৪]মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের[১৫] ভিত্তিতে ব্রাজিলের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। এর অর্থনৈতিক সংস্কার আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশটিকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে।[১৬] ব্রাজিল জাতিসংঘ, জি-২০, সিপিএলপি, লাতিন ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন অফ ইবেরো-আমেরিকান স্টেটস, মার্কুসাউইউনিয়ন অফ সাউথ আমেরিকান নেশন্স, এবং ব্রিক দেশগুলোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্রাজিল জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। ব্রাজিলে বিভিন্ন প্রকারের প্রকৃতি সংরক্ষণকেন্দ্র ও অভয়ারণ্য বিদ্যমান। এছাড়াও দেশটি সমৃদ্ধ খনিজসম্পদের অধিকারী, যা বিভিন্ন সময়ে এর অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।[]

ব্রাজিলে বিভিন্ন জাতের লোকের বাস। আদিবাসী আমেরিকান, পর্তুগিজ বসতিস্থাপক এবং আফ্রিকান দাসদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্রাজিলের জাতিসত্তাকে দিয়েছে বহুমুখী রূপ। ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৬শ শতকে পর্তুগিজদের আগমনের আগে বহু আদিবাসী আমেরিকান দেশটির সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ১৬শ শতকের মধ্যভাগে পর্তুগিজেরা কৃষিকাজের জন্য আফ্রিকা থেকে দাস নিয়ে আসা শুরু করে।[১৭][১৮] এই তিন জাতির লোকেদের মিশ্রণ ব্রাজিলের সংস্কৃতি, বিশেষ করে এর স্থাপত্য ও সঙ্গীতে এমন এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য এনেছে কেবল ব্রাজিলেই যার দেখা মেলে। ১৯শ শতকের শেষ দিকে ও ২০শ শতকের গোড়ার দিকে ব্রাজিলে আগমনকারী অন্যান্য ইতালীয়, জার্মান, স্পেনীয়, আরব, ও জাপানি অভিবাসীরাও ব্রাজিলের সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে।[১৯] মিশ্র সংস্কৃতির দেশ হলেও কিছু কিছু আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ব্রাজিলীয়, ইউরোপ ও এশিয়া থেকে আগত অ-পর্তুগিজ অভিবাসী, এবং আদিবাসী আমেরিকানদের অংশবিশেষ এখনও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি ধরে রেখেছে। তবে পর্তুগিজ সংস্কৃতির প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। পর্তুগিজ এখানকার প্রধান ভাষা এবং রোমান ক্যাথলিক প্রধান ধর্ম।[২০]

Remove ads

ব্যুৎপত্তি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ব্রাজিল নামটির বুৎপত্তি পরিষ্কার নয়। ঐতিহ্যগতভাবে ধারণা করা হয় ‘ব্রাজিল’ নামটি এসেছে ব্রাজিলউড থেকে, যা এক প্রকার কাঠ উৎপাদনকারী গাছ। ১৬ শতকের দিকে ব্রাজিল থেকে নাবিকরা ইউরোপে এই কাঠ রপ্তানি করতো।[২১] পর্তুগিজ ভাষায় ব্রাজিলউডকে ‘পাউ-ব্রাজিউ’ (pau-brasil) নামে ডাকা হয়, আর ‘ব্রাজিউ’ শব্দটির বুৎপত্তি হয়েছে ‘জলন্ত কয়লার মতো লাল’ শব্দগুচ্ছ থাকে। লাতিন ভাষায় ‘ব্রাজা’ (brasa) শব্দের অর্থ কয়লা এবং শেষের ‘-il’ উপসর্গটি লাতিন ‘-iculum’ বা ‘-ilium’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।[২২][২৩][২৪] পরবর্তীতে পর্তুগিজ ‘ব্রাজিউ’ শব্দটি থেকে ইংরেজিতে ব্রাজিল নামটি এসেছে। ব্যুৎপত্তির এই তত্ত্বটি ব্রাজিল ও পর্তুগালের স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে পড়ানো হয়।

ব্রাজিলীয় পণ্ডিত জুসে আদেলিনু দা সিলভা আজেভেদুর স্বীকার্য অনুসারে ‘ব্রাজিল’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিস্থল আরও অনেক পুরোনো এবং এর উৎপত্তি হয়েছে মূলত কেল্টিক বা ফিনিসিয়ীয় থেকে। ফিনিসিয়ীরা কেল্টিক দ্বীপগুলোর খনি থেক প্রাপ্ত এক প্রকার খনিজ দ্রব্য থেকে উৎপন্ন লাল রঞ্জন ইবেরিয়া থেকে আয়ারল্যান্ডে রপ্তানি করতো।[২৫] আয়ারল্যান্ডীয় পুরাণে হাই-ব্রাজিল নামে পশ্চিমে অবস্থিত একটি দ্বীপের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। টলকিনসহ কারও কারও মতে এই দ্বীপটির নাম থেকেই ‘ব্রাজিল’ শব্দটির উৎপত্তি।[২৬] ষোড়শ শতকে বিভিন্ন পণ্ডিতগণও এই তত্ত্বটিকে সমর্থন করেছেন।[২১]

দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী ভাষা গুয়ারানিতে ব্রাজিলকে ‘পিন্দুরামা’ নামে ডাকা হয়। অতীতে ব্রাজিল অঞ্চলটি আদিবাসীদের কাছে এই নামেই পরিচিত হতো। পিন্দুরামা শব্দের অর্থ ‘তাল গাছের ভূমি’।

Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

পর্তুগিজ উপনিবেশ

Thumb
পেড্রো দ্বিতীয়, ১৮৩১ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে ব্রাজিলের সম্রাট।

১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউ পরিচালিত একটি পর্তুগিজ নৌবহর বর্তমানের ব্রাজিলে এসে পৌঁছায় এবং পর্তুগালের রাজা প্রথম মানুয়েলের নামে ভূখণ্ডটিতে পর্তুগালের অধিকার দাবি করে।[২৭] সে সময় পর্তুগিজরা ব্রাজিলে বসবাসরত প্রস্তর যুগের আদিবাসীদের সাথে পরিচিত হয়। এসকল আদিবাসীদের বেশিরভাগ-ই কথা বলতো তুপি-গুয়ারানি পরিবারের বিভিন্ন ভাষায়, এবং আদিবাসী গোত্রগুলো পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিল।[২৮]

১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিলে প্রথম পর্তুগিজ উপনিবেশটি গোড়াপত্তন হয়। তবে ১৫৩৪ সালে ডম তৃতীয় জোয়াউঁ কর্তৃক সমগ্র অঞ্চলটি ১২টি পৃথক বংশানুক্রমিক নেতৃত্বে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।[২৯][৩০] কিন্তু পরবর্তীকালে এই প্রথাটি সমস্যাপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের রাজা পুরো উপনিবেশ প্রশাসনের জন্য একজন গভর্নর-জেনারেল নিয়োগ দেন।[৩০][৩১] পর্তুগিজরা কিছু আদিবাসী গোত্রকে নিজেদের দলে নেয়।[৩২] অপরদিকে বাকিদেরকে তঁরা দাস হিসেবে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে। এছাড়াও কিছু কিছু গোত্রকে দীর্ঘ যুদ্ধে হারিয়ে ও রোগ বিস্তারের মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়। ইউরোপীয় রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় সেসকল আদিবাসীদের জানা ছিল না, তাই খুব সহজেই তারা রোগাক্রান্ত হয়।[৩৩][৩৪] ১৬শ শতকের মধ্যভাগে ঔপনিবেশিকেরা উত্তর-পূর্ব উপকূলের ভালো মাটি ও ক্রান্তীয় জলবায়ুর সুযোগ নিয়ে সেখানে চিনির প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে। সে সময় চিনি ছিল ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য।[২৮][৩৫] আন্তজার্তিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার[৩৩][৩৬] সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্তুগিজরা আফ্রিকান দাসদেরও ব্রাজিলে নিয়ে আসা শুরু করে।[১৭][১৮]

Thumb
ব্রাজিলীয় চিত্রশিল্পী ভিক্তর মিরিইলেসের অঙ্কিত ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ব্রাজিলের প্রথম খ্রিষ্ঠীয় গণ-নৈশভোজের চিত্র

ফরাসিদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে পর্তুগিজরা তাদের দখলকৃত ভূখণ্ড ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত করতে থাকে। ১৯৫৭ সালে তারা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত রিউ দি জানেইরু ও ১৬১৫ সালে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাউঁ লুইসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।[৩৭] ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তারা আমাজন অরণ্য অভিমূখে অভিযান শুরু করে ও ঐ অঞ্চলে অবস্থিত ব্রিটিশ ও ওলন্দাজ উপনিবেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।[৩৮] নিয়ন্ত্রণ লাভের পর পর্তুগিজরা অঞ্চলগুলোতে নিজেদের গ্রাম ও দুর্গ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকে আরও সুসংহত করে।[৩৯] ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে তাদের এ অভিযান সর্ব দক্ষিণে বিস্তৃত হয়। সেখানে রিও দে লা প্লাতা নদীর তীরে তারা সাক্রামেন্তো শহরের গোড়াপত্তন করে, বর্তমানে যা উরুগুয়ের অংশ।[৪০]

১৭ শতকের শেষভাগে ব্রাজিলের চিনি রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে,[৪১] তবে ১৬৯০-এর দশকে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে বেশ কিছু স্বর্ণখনি আবিষ্কৃত হয়। পর্তুগিজ ভাষায় বান্দিরাঞ্চিস (Bandeirantes) নামে পরিচিত এই পর্তুগিজ স্কাউটরা বর্তমান ব্রাজিলের মাতু গ্রসোগোইয়াস অঞ্চলে স্বর্ণখনির সন্ধান পান। তৎকালীন সময়ে জায়গাটির নামকরণ করা হয় মিনাজ জেরাইস (বাংলা অর্থ ‘সাধারণ খনি’), যা বর্তমানে ব্রাজিলের একটি প্রদেশ। স্বর্ণখনি আবিস্কারের ফলে চিনি রপ্তানি কমে যাওয়া থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে পর্তুগিজ উপনিবেশ রক্ষা পায়।[৪২] এছাড়াও স্বর্ণখনিতে কাজের উদ্দেশ্যে সমগ্র ব্রাজিলসহ পর্তুগাল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী এ অঞ্চলে পাড়ি জমায়।[৪৩] এই সময় দেশের অভ্যন্তরভাগে বসতি স্থাপিত হয় এবং অর্থনীতি ও জনসংখ্যার প্রধান কেন্দ্র দেশের উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে স্থানান্তরিত হয়।

স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকগণ এ অঞ্চলে পর্তুগিজ উপনিবেশের সম্প্রসারণে বাঁধা প্রদান করে আসছিল। ১৪৯৪ সালে স্পেন অধিকৃত ভূখণ্ডে পর্তুগিজদের উপনিবেশ সম্প্রসারণ রোধে উভয়পক্ষের মধ্যে তোর্দিজিলাস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৭ সালে স্পেনীয়রা পর্তুগিজ অধিকৃত বান্দা ওরিয়েন্টাল নিজেদের দখলে আনতে সমর্থ হয়। যদিও পরবর্তীকালে এ বিজয় নিষ্ফল বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ ঐ বছরেই পর্তুগিজ ও স্পেনীয় সাম্রাজ্যের ভেতর প্রথম সান লিদিফোনসো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুসারে এ অঞ্চলের পর্তুগিজদের সম্প্রসারিত সকল অঞ্চলে পর্তুগালের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়। বর্তমান ব্রাজিলের সীমানাও মূলত এই সম্প্রসারিত ভূখণ্ডের সীমানার প্রতি লক্ষ্য রেখেই নির্ধারিত হয়েছে।[৪৪]

১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ রাজ পরিবার, পর্তুগালে অনুপ্রবেশকৃত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীকে তাড়ানোর চেষ্টা করছিল। সে সময় নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী পর্তুগালসহ মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ স্থানেই নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিল। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে রাজ পরিবার নিজেদেরকে ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরুতে সরিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে এটি সম্পূর্ণ পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।[৪৫] ১৮১৫ সালে ডম ষষ্ঠ জোয়াউঁ, তার অকর্মক্ষম মায়ের পক্ষে রিজেন্ট হিসেবে ব্রাজিলকে পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে উন্নীত করে পর্তুগালের সাথে একত্রিত একটি সার্বভৌম যুক্তরাজ্যীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম হয় ইউনাইটেড কিংডম অফ পর্তুগাল, ব্রাজিল, অ্যান্ড দি আলগ্রাভিস[৪৫] ১৮০৯ সালে পর্তুগিজরা ফরাসি গায়ানা দখল করে (যদিও পরবর্তীকালে ১৮১৭ সালে তা ফ্রান্সের কাছে ফিরিয়ে দেয়)।[৪৬] এছাড়ারও ১৮১৬ সালে ইস্টার্ন স্ট্রিপও তারা নিজেদের দখলে নেয়, ও কিসপ্লাতিনা নামে নামকরণ করে।[৪৭] কিন্তু ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিল এ অঞ্চলটির ওপর তার নিয়ন্ত্রণ হারায়, এবং অঞ্চলটিতে উরুগুয়ে নামের একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়।[৪৮]

স্বাধীনতা ও সাম্র্যাজ্য

Thumb
১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম পেদ্রু কর্তৃক ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা
Thumb
1888 সালে ব্রাজিলে দাসত্ব বিলুপ্ত করার আইন।

১৮২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজা ষষ্ঠ জোয়াউঁ ইউরোপে ফিরে যান, ও যাবার পূর্বে তার বড় ছেলে পেদ্রু জি কান্তারাকে ব্রাজিলের রিজেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেন।[৪৯] পরবর্তীতে পর্তুগিজ সরকার ব্রাজিলকে পুনরায় পর্তুগিজ উপনিবেশে পরিণত করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ১৮০৮ সাল থেকে চলে আসা অঞ্চলটির নিজেদের অর্জন থেকে বঞ্চিত[৫০] ব্রাজিলীয়রা পুরনায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করে। রিজেন্ট পেদ্রু পর্তুগালে ফিরতে অস্বীকৃত জানান ও ব্রাজিলীয়দের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন। ১৮২২ সালের ৭ নভেম্বর পেদ্রু আনুষ্ঠানিকভাবে পর্তুগালের কাছে থেকে ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।[৫১] একই বছরের ১২ অক্টোবর ডম পেদ্রু ব্রাজিলের প্রথম সম্রাট হিসাবে স্থলাভিষিক্ত হন, এবং ১৮২২ সালের ১ ডিসেম্বর সিংহাসনে আরোহণ করেন।[৫২] এর মাধ্যমেই ব্রাজিলে ৩২২ বছর ধরে চলে আসা পর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটে।

তৎকালীন সময়ে ব্রাজিলীয়রা রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন, এবং গণতন্ত্র ততোটা জনপ্রিয় ছিল না।[৫৩][৫৪] স্বাধীনতার ঘোষণার ফলস্বরূপ ব্রাজিলের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, যা ব্রাজিলের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, ও দক্ষিণাঞ্চলসহ পর্তুগিজ অধিকৃত প্রায় সম্পূর্ণ অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছিল।[৫৫] অবেশেষে ১৮২৪ সালের ৮ মার্চ পর্তুগিজ সৈন্যরা ব্রাজিলীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করে,[৫৬] এবং ১৮২৫ সালের ২৯ আগস্ট পর্তুগাল ব্রাজিলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।[৫৭]

১৮২৪ সালের ১৫ মার্চ ব্রাজিলের প্রথম সংবিধানটি জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করার পূর্বে এটি মিউনিসিপ্যালিটি কাউন্সিলগুলোর অনুমোদন লাভ করে।[৫৮][৫৯][৬০][৬১] ১৮৩১ সালের ১ এপ্রিল প্রথম পেদ্রু সিংহাসন ছেড়ে দেন ও তার কন্যার রাজত্ব পুনরায় দাবি করার উদ্দেশ্যে পর্তুগালে পাড়ি জমান। যাবার পূর্বে তিনি তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে নির্বাচিত করে যান, যিনি পরবর্তীতে ডম দ্বিতীয় পেদ্রু নামে সিংহাসনে আরোহণ করেন।[৬২] যেহেতু নতুন সম্রাটের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল, তাই এ সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্যে রিজেন্সি পদ্ধতি চালু করা হয় ও সম্রাটের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রিজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়।[৬৩]

রিজেন্সি চালুর পর ব্রাজিলের বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্রোহে রূপ নেয়। এটি রিজেন্সি ব্যবস্থাটিকে বেশ অস্থিতিশীল করে তোলে ও রিজেন্টদের শাসনে ব্রাজিল প্রায় অরাজক একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।[৬৪] বিদ্রোহের ফলস্বরূপ কিছু কিছু প্রদেশ ব্রাজিল থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র গঠন করে, যদিও এসকল গোষ্ঠীর বিদ্রোহটি সত্যিকার অর্থে রাজতন্ত্রের বিপক্ষে ছিল না।[৬৫][৬৬] তবে এসব কিছুই বলবৎ ছিল যতোদিন দ্বিতীয় পেদ্রু নিজে রাষ্ট্রভার গ্রহণে অসমর্থ ছিলেন।[৬৭] এমতাবস্থায় রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পেদ্রুর আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের বয়স কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়, এবং তিনি শাসনভার গ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি এক টানা ৫৮ বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার রাজত্বকালে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকার পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নও সাধিত হয়।[৬৮]

Thumb
ওয়ার অফ দ্য ট্রিপল অ্যালায়েন্সের যুদ্ধে ব্রাজিলীয় বাহিনীর (নীল পোশাক পরিহিত) সাথে প্যারাগুয়েইয়ান সেনাবাহিনীর (কিছু লাল শার্ট পরিহিত ও বাকীরা খালি গায়ে) যুদ্ধ

দ্বিতীয় পেদ্রুর ৫৮ বছরের শাসনামলে ব্রাজিল তিনটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধে জয়লাভ করে। যুদ্ধগুলো ছিল প্লেটাইন যুদ্ধ, উরুগুয়েইয়ান যুদ্ধ, এবং ওয়ার অফ ট্রিপল অ্যালায়েন্স[৬৯] এছাড়াও পেদ্রুর শাসনামলেই ব্রাজিল রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয়। মূলত সফল নির্বাচন ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়।[৭০] এই ৫৮ বছরের শাসনামলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনটি ছিল দাস প্রথার বিলোপ সাধন। ১৮৫০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে দাস পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। এর পরেই ব্রাজিল ধীরে ধীরে দাস প্রথা বিলোপের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে,[৭১] ও শেষ পর্যন্ত ১৮৮৮ সালে সম্পূর্ণরূপে দাস প্রথার বিলোপ সাধিত হয়।[৭২] অবশ্য স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাজিলে দাসদের সংখ্যা ধীরে কমতে শুরু করেছিল। ১৮২৩ সালে মোট জনগণের ২৩% ছিল দাস, আর ১৮৮৭ সালে এই হার নেমে আসে মাত্র ৫%-এ।[৭৩]

১৮৮৯ সালে রাজতন্ত্রের অবলোপনের পর[৭৪] সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে কেউ ততোটা আগ্রহী ছিল না।[৭৫] দ্বিতীয় পেদ্রু তখনও জনসাধারণের মাঝে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন,[৭৬][৭৭] কিন্তু তার নিজের ইচ্ছাতেই রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে।[৭৮] তার দুই ছেলের মৃত্যুর পর পেদ্রুর মনে হয়েছিল এই রাজত্ব তার মৃত্যুর সাথেই শেষ হয়ে যাবে।[৭৯] রাজত্ব রক্ষার ব্যাপারে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন না।[৮০][৮১] তাই তিনি নিজে এটি রক্ষার ব্যাপারে কিছু করেন নি ও কাউকে কিছু করতেও দেন নি। দাস প্রথা বিলোপের সময় এর বিরোধীতাকারীরা সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে যাতে কোনো প্রকার সামরিক ক্যু ঘটাতে না পার তা ঠেকাতেই মূলত তিনি গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হন।[৮২][৮৩][৮৪]

Thumb
ইগ্রেজা ডি সান্তা রিতা দে ক্যাসিয়া

প্রজাতন্ত্রের প্রাথমিক সময়

সমসাময়িক যুগ

Remove ads

ভূ-তত্ত্ব

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
ব্রাজিলের টপোগ্রাফিক চিত্র

ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভাগের সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে, সেই সাথে মহাদেশটির সবচেয়ে বেশি অংশটিও এই দেশটির আওতাধীন।[৮৫] ব্রাজিলের দক্ষিণে উরুগুয়ে; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনাপ্যারাগুয়ে; পশ্চিমে বলিভিয়াপেরু; উত্তর-পশ্চিমে কলম্বিয়া; এবং উত্তরে ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা, এবং ফরাসি দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা অবস্থিত। ব্রাজিলের সাথে ইকুয়েডরচিলি ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশের সাথেই সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। ব্রাজিলীয় সীমানায় বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ[][] এর সুবিশাল আকৃতি, জলবায়ু, এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ব্রাজিলকে ভূ-তাত্ত্বিকভাবে একটি বৈচিত্রময় দেশে পরিণত করেছে।[৮৫] দেশটির আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জগুলো ধরলে ব্রাজিলের সীমানা ২৮° পশ্চিম থেকে ৭৪° পশ্চিম অক্ষরেখা থেকে, ৬° উত্তর থেকে ৩৪° দক্ষিণ দ্রাঘিমা রেখা পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ হিসেবে রাশিয়া, কানাডা, চীন, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ব্রাজিলের অবস্থান। কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এটি আমেরিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এর সর্বমোট আয়তন ৮৫,১৪,৮৭৬.৫৯৯ কিমি (৩২,৮৭,৬১২ মা),[৮৬] যার ভেতর জলভাগের আয়তন প্রায় ৫৫,৪৫৫ কিমি (২১,৪১১ মা)[] দেশটিতে মোট তিনটি সময় অঞ্চল অবস্থিত। পশ্চিমের প্রদেশগুলো ইউটিসি-৪, পূর্বের প্রদেশগুলো ইউটিসি-৩ (এটি একই সাথে ব্রাজিলের সরকারি সময়), এবং আটলান্টিক দ্বীপপুঞ্জগুলো ইউটিসি-২ সময় অঞ্চলের অন্তর্গত।[৮৭]

ব্রাজিলে টপোগ্রাফি যথেষ্ট বৈচিত্রময়। দেশটিতে পাহাড়, পর্বত, সমভূমি, উচ্চভূমি, চরণভূমি প্রভৃতি বৈচিত্রের ভূভাগ বিদ্যমান। এর ভূখণ্ডের বেশিরভাগের উচ্চতা ২০০ মিটার (৬৬০ ফুট) থেকে ৮০০ মিটার (২,৬০০ ফুট)-এর মধ্যে।[৮৮] দেশটির দক্ষিণ অর্ধাংশেই বেশিরভাগে উচ্চভূমি অবস্থিত।[৮৮] উত্তর-পশ্চিম অংশের সমভূমিগুলো ঢালু ও ভাঙা ভাঙা পাহাড় দিয়ে ঘেরা।[৮৮]

দেশটির দক্ষিণাঞ্চল বেশ অমসৃণ, এবং বেশিরভাগ অঞ্চলই রিজ ও পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। এ অঞ্চলের গড় উচ্চতা ১,২০০ মিটার (৩,৯০০ ফুট) পর্যন্ত।[৮৮] এসকল পর্বতমালার মধ্যে রয়েছে মান্তিকিরা, এসপিনাসো পর্বতT এবং সেরা দু মার[৮৮] উত্তরে গুয়াইয়ানা উচ্চভূমি একটি বড় নিষ্কাশন বিভক্তির মাধ্যমে আমাজন বেসিনের দিকে প্রবাহিত নদীগুলো থেকে ভেনেজুয়েলা থেকে উত্তর দিকের ওরিনোকো নদী ব্যবস্থায় এসে সমাপ্ত হওয়া নদীগুলোকে পৃথক করেছে। ব্রাজিলের সর্বোচ্চ পর্বত হচ্ছে পিকু দা নেবলিনা যার উচ্চতা প্রায় ২,৯৯৪ মিটার (৯,৮২৩ ফুট), এবং সর্বনিম্ন অঞ্চল হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগর।[]

ব্রাজিলে ঘন ও বেশ জটিল নদী ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা বিশ্বের অন্যতম জটিল নদী ব্যবস্থা। ব্রাজিলে মোট আটটি নদী নিষ্কাশন ব্যবস্থা অবস্থিত, যার সবকটি-ই আটলান্টিক মহাসাগরে এসে শেষ হয়েছে।[৮৯] ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাজন, যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী ও নিষ্কাশিত জলের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী। এছাড়াও আছে পারান ও এর গুরুত্বপূর্ণ শাখানদী ইগুয়াসু (ইগুয়াসু জলপ্রপাত সহ), নিগ্রো, সাউঁ ফ্রান্সিসকু, শিজু, মেদেইরা, ও টাপাজুস নদী।[৮৯]

জলবায়ু

ব্রাজিলের মানচিত্রে কোপেন জলবায়ু শ্রেণীবিভাগ অঞ্চলগুলির মানচিত্র: ব্রাজিলের জলবায়ুতে একটি বড় এলাকাজুড়ে এবং বৈচিত্র্যময় ভূভাগ জুড়ে বিস্তৃত আবহাওয়ার অবস্থা রয়েছে, তবে দেশের বেশিরভাগ অংশই ক্রান্তীয়। কোপেন সিস্টেম অনুসারে, ব্রাজিলে ছয়টি প্রধান জলবায়ু উপপ্রকার রয়েছে: মরুভূমি, নিরক্ষীয়, ক্রান্তীয়, উপশুষ্ক, মহাসাগরীয় এবং উপক্রান্তীয়। বিভিন্ন জলবায়ুর পরিস্থিতি উত্তরে নিরক্ষীয় রেইনফরেস্ট এবং উত্তর-পূর্বে উপশুষ্ক মরুভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণে নাতিশীতোষ্ণ শঙ্কুযুক্ত বন এবং মধ্য ব্রাজিলে ক্রান্তীয় সাভানা পর্যন্ত পরিবেশ তৈরি করে।

২০২০ সালে, ব্রাজিলে বন কভার প্রায় ৫৯% মোট ভূমি এলাকা, যা ৪৯৬,৬১৯,৬০০ হেক্টর (হা) বন ২০২০ সালে ১৯৯০ সালে ৫৮৮,৮৯৮,০০০ হেক্টর (হা) থেকে কমেছে। ২০২০ সালে, প্রাকৃতিকভাবে পুনর্জন্মিত বন ৪৮৫,৩৯৬,০০০ হেক্টর (হা) এবং রোপিত বন ১১,২২৩,৬০০ হেক্টর (হা) কভার করেছিল। প্রাকৃতিকভাবে পুনর্জন্মিত বনের মধ্যে, ৪৪% রিপোর্ট করা হয়েছে প্রাথমিক বন (মানুষের ক্রিয়াকলাপের কোনো স্পষ্ট দৃশ্যমান ইঙ্গিত ছাড়াই দেশীয় গাছের প্রজাতি সমন্বিত) এবং প্রায় ৩০% বনভূমি সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালের জন্য, রিপোর্ট অনুযায়ী ৫৬% বনভূমি ছিল পাবলিক মালিকানার অধীনে এবং ৪৪% ব্যক্তিগত মালিকানার অধীনে।

অনেক অঞ্চলে বিশিষ্টভাবে ভিন্ন মাইক্রোক্লিমেট রয়েছে। উত্তর ব্রাজিলের একটি নিরক্ষীয় জলবায়ু বৈশিষ্ট্যযুক্ত। কোন সত্যিকারের শুষ্ক মৌসুম নেই, তবে বছরের সময়গুলিতে বৃষ্টির সময় কিছু পরিবর্তন রয়েছে। তাপমাত্রা গড়ে ২৫ °সে (৭৭ °ফ) থাকে, রাতে এবং দিনে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঋতুর তুলনায় বেশি হয়। মধ্য ব্রাজিলের উপর, বৃষ্টিপাত আরো মৌসুমি, সাভানা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য। এই অঞ্চলটি আমাজন বেসিনের মতোই ব্যাপক কিন্তু এটি দক্ষিণে উচ্চতর উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ায় এর জলবায়ু অনেক আলাদা। অভ্যন্তরীণ উত্তর-পূর্বে, মৌসুমি বৃষ্টিপাত আরও চরম হয়। বাহিয়ার দক্ষিণে, উপকূলের কাছাকাছি, এবং দক্ষিণে সাও পাওলো রাজ্যের বেশিরভাগ অংশে, বৃষ্টিপাতের বন্টন পরিবর্তিত হয়, বছরের বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণে উপক্রান্তীয় অবস্থা উপভোগ করে, শীতল শীতকালে এবং বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৮ ° সে (৬৪.৪ ° ফ) ছাড়িয়ে যায় না; সর্বোচ্চ এলাকায় শীতের ফ্রস্ট এবং তুষারপাত বিরল নয়।

ব্রাজিলের নদীর তালিকা

ব্রাজিলের টপোগ্রাফিক মানচিত্র: ব্রাজিলের ভূ-প্রকৃতিও বৈচিত্র্যময় এবং এতে পাহাড়, পর্বত, সমভূমি, উচ্চভূমি এবং ঝোপঝাড় রয়েছে। অনেক ভূখণ্ডের উচ্চতা ২০০ মিটার (৬৬০ ফুট) থেকে ৮০০ মিটার (২,৬০০ ফুট) এর মধ্যে অবস্থিত। প্রধান উচ্চভূমির এলাকা দেশের দক্ষিণার্ধের বেশিরভাগ অংশ দখল করে। মালভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশে প্রশস্ত, ঘূর্ণায়মান ভূখণ্ড রয়েছে যা নিম্ন, গোলাকার পাহাড় দ্বারা ভেঙে গেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব অংশটি আরও রুক্ষ, যার একটি জটিল শৃঙ্গ এবং পর্বতমালার উচ্চতা ১,২০০ মিটার (৩,৯০০ ফুট) পর্যন্ত পৌঁছায়। এই শৃঙ্গগুলির মধ্যে ম্যান্টিকুয়েরা এবং এস্পিনহাসো পর্বতমালা এবং সেররা দো মার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উত্তরে, গায়ানা হাইল্যান্ডস একটি প্রধান নিষ্কাশন বিভাজন গঠন করে, যা আমাজন বেসিনে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত নদীগুলিকে ভেনিজুয়েলার ওরিনোকো নদী ব্যবস্থায় উত্তর দিকে আলাদা করে। ব্রাজিলের সর্বোচ্চ স্থান পিকো দা নেব্লিনা ২,৯৯৪ মিটার (৯,৮২৩ ফুট), এবং সর্বনিম্ন আটলান্টিক মহাসাগর।

ব্রাজিলের নদী ব্যবস্থা ঘন এবং জটিল, বিশ্বের অন্যতম বিস্তৃত, আটটি প্রধান নিষ্কাশন বেসিন রয়েছে, যেগুলি আটলান্টিকে নিষ্কাশিত হয়। প্রধান নদীগুলির মধ্যে রয়েছে আমাজন (বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী এবং জলের পরিমাণের দিক থেকে বৃহত্তম), পারানা এবং এর প্রধান উপনদী ইগুয়াসু (যাতে ইগুয়াসু জলপ্রপাত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে), নিগ্রো, সাও ফ্রান্সিসকো, জিংগু, মাদেইরা এবং তাপাজোস নদী।

প্রধান নিবন্ধ: ব্রাজিলের পরিবেশ, ব্রাজিলের বন্যপ্রাণী এবং ব্রাজিলে সংরক্ষণ আরও তথ্য: ব্রাজিলের পরিবেশগত সমস্যা এবং ব্রাজিলের সংরক্ষিত এলাকা

টোকো টুকান হল ব্রাজিলিয়ান সাভান্নাসের একটি সাধারণ প্রাণী। ব্রাজিলের বন্যপ্রাণী দক্ষিণ আমেরিকার দেশের সমস্ত প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান প্রাণী, উদ্ভিদ এবং ছত্রাক অন্তর্ভুক্ত করে। আমাজন রেইনফরেস্টের ৬০% এর আবাসস্থল, যা বিশ্বের সমস্ত প্রজাতির প্রায় এক দশমাংশের জন্য দায়ী, ব্রাজিলকে বিশ্বের যে কোনও দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্যের অধিকারী বলে মনে করা হয়, যেখানে সমস্ত প্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতির ৭০% এর বেশি তালিকাভুক্ত। ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি পরিচিত উদ্ভিদের প্রজাতি (৫৫,০০০), মিঠা পানির মাছ (৩,০০০) এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী (৬৮৯ এর বেশি) রয়েছে। এছাড়াও এটি সবচেয়ে বেশি পাখি প্রজাতি (১,৮৩২) সহ দেশগুলির তালিকায় তৃতীয় এবং সবচেয়ে বেশি সরীসৃপ প্রজাতি (৭৪৪) সহ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ফাঙ্গাল প্রজাতির সংখ্যা অজানা কিন্তু বড়।

ব্রাজিল তার বৃহৎ অঞ্চল নিয়ে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র গঠন করেছে, যেমন আমাজন রেইনফরেস্ট, যা বিশ্বের বৃহত্তম জৈবিক বৈচিত্র্য হিসাবে স্বীকৃত, যেখানে আটলান্টিক বন এবং সেরাদো সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য বজায় রেখেছে। দক্ষিণে, আরাউকারিয়া আর্দ্র বন নাতিশীতোষ্ণ অবস্থায় বৃদ্ধি পায়। ব্রাজিলের সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক আবাসস্থলের বিভিন্নতা প্রতিফলিত করে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে ব্রাজিলে উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির মোট সংখ্যা প্রায় চার মিলিয়নের কাছাকাছি হতে পারে, বেশিরভাগ অমেরুদণ্ডী। বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে মাংসাশী পুমা, জাগুয়ার, ওসেলটস, বিরল বুশ কুকুর এবং শিয়াল এবং তৃণভোজী পেকারি, টাপির, অ্যান্তিটার, অলস প্রাণী, অপোসাম এবং আর্মাডিলো। দক্ষিণে হরিণ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এবং নতুন বিশ্বের বানরের অনেক প্রজাতি উত্তর রেইন ফরেস্টে পাওয়া যায়।

মোটকথা, ব্রাজিলে যে কোনো আমাজন দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অরণ্য উজাড় এবং অবনতি হয়েছে। ব্রাজিলে আমাজন রেইনফরেস্টের এক-পঞ্চমাংশের বেশি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ৭০টিরও বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণী বিপন্ন। বিলুপ্তির হুমকি বেশ কয়েকটি উত্স থেকে আসে, যার মধ্যে রয়েছে বন উজাড় এবং শিকার। আটলান্টিক বনে বিলুপ্তি আরও সমস্যাযুক্ত, যেখানে প্রায় ৯৩% বন সাফ করা হয়েছে। ব্রাজিলে ২০২টি বিপন্ন প্রাণীর মধ্যে ১৭১টি আটলান্টিক বনে রয়েছে। ১৯৭০-এর দশক থেকে আমাজন রেইনফরেস্ট দ্রুত অর্থনৈতিক এবং জনসংখ্যার প্রসারণের কারণে বন উজাড়ের সরাসরি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ব্যাপক আইনি এবং অবৈধ লগিং প্রতি বছর একটি ছোট দেশের আকারে বন ধ্বংস করে এবং এর সাথে আবাসস্থল ধ্বংস এবং আবাসস্থল ভাঙ্গনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বৈচিত্র্যময় সিরিজ ধ্বংস করে। ১৯৭০ সাল থেকে, লগিং দ্বারা আমাজন রেইনফরেস্টের ৬০০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের (২৩০,০০০ বর্গ মাইল) বেশি সাফ করা হয়েছে।

২০১৭ সালে, সংরক্ষিত দেশীয় উদ্ভিদ ব্রাজিলিয়ান ভূখণ্ডের ৬১% দখল করেছিল। কৃষি শুধুমাত্র জাতীয় ভূখণ্ডের ৮% দখল করেছে এবং চারণভূমি ১৯.৭%। তুলনার জন্য, ২০১৯ সালে, যদিও পুরো ইউরোপীয় মহাদেশের ৪৩% বন রয়েছে, ইউরোপের মোট বনভূমির মাত্র ৩% দেশীয় বন। ব্রাজিলের সংরক্ষণে একটি শক্তিশালী আগ্রহ রয়েছে, কারণ এর কৃষি খাত সরাসরি এর বনগুলির উপর নির্ভর করে। ২০২০ সালে, ব্রাজিল সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে তার বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪৩% কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি যদি দেশ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার পায় তবে ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার একটি সূচকীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

পরিবেশ

ব্রাজিলের সশস্ত্র বাহিনী সক্রিয় কর্মীদের দ্বারা ল্যাটিন আমেরিকার বৃহত্তম এবং সামরিক সরঞ্জামের দিক থেকে বৃহত্তম। ২০২১ সালে দেশটিকে বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম সামরিক শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। এটি ব্রাজিলিয়ান আর্মি (যার মধ্যে আর্মি এভিয়েশন কমান্ড অন্তর্ভুক্ত), ব্রাজিলিয়ান নেভি (যার মধ্যে মেরিন কর্পস এবং নাভাল এভিয়েশন অন্তর্ভুক্ত) এবং ব্রাজিলিয়ান এয়ার ফোর্স নিয়ে গঠিত। ব্রাজিলের চাঁদাবাজির নীতিটি এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনীর মধ্যে একটি করে তোলে, প্রতি বছর ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি রিজার্ভিস্ট অনুমান করা হয়। বিমানবাহিনী ল্যাটিন আমেরিকার বৃহত্তম এবং এতে প্রায় ৭০০ ক্রু বিমান এবং প্রায় ৬৭,০০০ কর্মী রয়েছে।

ব্রাজিলিয়ান সেনাবাহিনী প্রায় ২৩৬,০০০ সক্রিয় কর্মী নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সাঁজোয়া যান রয়েছে, যার মধ্যে সাঁজোয়া পরিবহন এবং ট্যাঙ্ক অন্তর্ভুক্ত। সংবিধান অনুসারে রাজ্যের সামরিক পুলিশ এবং সামরিক অগ্নিনির্বাপক বাহিনীকে সেনাবাহিনীর সহকারী বাহিনী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, তবে এগুলি প্রতিটি রাজ্যের গভর্নরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ব্রাজিলের নৌবাহিনী একসময় বিশ্বের কিছু শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ পরিচালনা করেছিল দুটি মিনাস জেরেস-শ্রেণির ড্রেডনটগুলির সাথে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং চিলির মধ্যে একটি নৌবাহিনীর অস্ত্রের দৌড়কে উস্কে দিয়েছিল। আজ, এটি একটি সবুজ জল বাহিনী এবং তার উপকূল বরাবর ব্রাজিলিয়ান তেল প্ল্যাটফর্মগুলি রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ইউনিট GRUMEC সহ একটি বিশেষায়িত এলিট গ্রুপ রয়েছে। ২০২২ সালের হিসাবে, এটি ল্যাটিন আমেরিকার একমাত্র নৌবাহিনী যা একটি হেলিকপ্টার বাহক, NAM Atlântico পরিচালনা করে এবং বিশ্বের বারোজন নৌবাহিনীর মধ্যে একটি পরিচালনা করে বা একটি নির্মাণাধীন রয়েছে।

Remove ads

রাজনীতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

আইন

ব্রাজিলের আইন সিভিল আইন আইনি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে এবং সিভিল আইন ধারণাগুলি সাধারণ আইন অনুশীলনের উপর প্রাধান্য পায়। ব্রাজিলের বেশিরভাগ আইন কোডিফাই করা হয়েছে, যদিও অ-কোডিফাইড অধ্যাদেশগুলিও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উপস্থাপন করে, যা একটি পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। আদালতের সিদ্ধান্তগুলি ব্যাখ্যামূলক নির্দেশিকা নির্ধারণ করে; তবে, সেগুলি কমই অন্যান্য নির্দিষ্ট মামলায় বাধ্যতামূলক। ধর্মতাত্ত্বিক কাজ এবং শাস্ত্রীয় বিচারকদের কাজগুলি আইন সৃষ্টিতে এবং আইনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। বিচারক এবং অন্যান্য বিচারক কর্মকর্তাদের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিয়োগ দেওয়া হয়।

আইনি ব্যবস্থা ফেডারেল সংবিধানের উপর ভিত্তি করে, যা ৫ অক্টোবর ১৯৮৮ তারিখে প্রচারিত হয়েছিল, এবং ব্রাজিলের মৌলিক আইন। অন্যান্য সমস্ত আইন এবং আদালতের সিদ্ধান্তগুলি এর নিয়মগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত, ১২৪টি সংশোধনী হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত হল সুপ্রিম ফেডারেল কোর্ট। রাজ্যের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে, যা ফেডারেল সংবিধানের বিরোধী হওয়া উচিত নয়। পৌরসভা এবং ফেডারেল জেলা "জৈব আইন" (leis orgânicas) রয়েছে, যা সংবিধানের মতো কাজ করে। আইন প্রণয়নকারী সত্তা হল অধ্যাদেশের প্রধান উত্স, যদিও কিছু বিষয়ে বিচারিক এবং নির্বাহী সংস্থা আইনি নিয়ম তৈরি করতে পারে। বিচার বিভাগীয় সত্তা দ্বারা বিচার করা হয়, যদিও বিরল পরিস্থিতিতে ফেডারেল সংবিধান ফেডারেল সেনেটকে আইনি রায় দেওয়ার অনুমতি দেয়। এছাড়াও বিশেষায়িত সামরিক, শ্রম এবং নির্বাচনী আদালত রয়েছে।

বৈদেশিক সম্পর্ক

দেশটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দেশের পাসপোর্টে ১১০টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা পাসপোর্ট শক্তি সূচকে ১২তম স্থানে রয়েছে। [৯০]

সামরিক বাহিনী

ব্রাজিলের সশস্ত্র বাহিনী সক্রিয় কর্মীদের দ্বারা ল্যাটিন আমেরিকার বৃহত্তম এবং সামরিক সরঞ্জামের দিক থেকে বৃহত্তম। ২০২১ সালে দেশটিকে বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম সামরিক শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। এটি ব্রাজিলিয়ান আর্মি (যার মধ্যে আর্মি এভিয়েশন কমান্ড অন্তর্ভুক্ত), ব্রাজিলিয়ান নেভি (যার মধ্যে মেরিন কর্পস এবং নাভাল এভিয়েশন অন্তর্ভুক্ত) এবং ব্রাজিলিয়ান এয়ার ফোর্স নিয়ে গঠিত। ব্রাজিলের চাঁদাবাজির নীতিটি এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনীর মধ্যে একটি করে তোলে, প্রতি বছর ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি রিজার্ভিস্ট অনুমান করা হয়। বিমানবাহিনী ল্যাটিন আমেরিকার বৃহত্তম এবং এতে প্রায় ৭০০ ক্রু বিমান এবং প্রায় ৬৭,০০০ কর্মী রয়েছে।

ব্রাজিলিয়ান সেনাবাহিনী প্রায় ২৩৬,০০০ সক্রিয় কর্মী নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সাঁজোয়া যান রয়েছে, যার মধ্যে সাঁজোয়া পরিবহন এবং ট্যাঙ্ক অন্তর্ভুক্ত। সংবিধান অনুসারে রাজ্যের সামরিক পুলিশ এবং সামরিক অগ্নিনির্বাপক বাহিনীকে সেনাবাহিনীর সহকারী বাহিনী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, তবে এগুলি প্রতিটি রাজ্যের গভর্নরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ব্রাজিলের নৌবাহিনী একসময় বিশ্বের কিছু শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ পরিচালনা করেছিল দুটি মিনাস জেরেস-শ্রেণির ড্রেডনটগুলির সাথে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং চিলির মধ্যে একটি নৌবাহিনীর অস্ত্রের দৌড়কে উস্কে দিয়েছিল। আজ, এটি একটি সবুজ জল বাহিনী এবং তার উপকূল বরাবর ব্রাজিলিয়ান তেল প্ল্যাটফর্মগুলি রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ইউনিট GRUMEC সহ একটি বিশেষায়িত এলিট গ্রুপ রয়েছে। ২০২২ সালের হিসাবে, এটি ল্যাটিন আমেরিকার একমাত্র নৌবাহিনী যা একটি হেলিকপ্টার বাহক, NAM Atlântico পরিচালনা করে এবং বিশ্বের বারোজন নৌবাহিনীর মধ্যে একটি পরিচালনা করে বা একটি নির্মাণাধীন রয়েছে।

প্রশাসনিক বিভাগ

Remove ads

অর্থনীতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
ব্রাজিলীয় এমব্রেয়ার কোম্পানির ইআরজে-১৩৫ মডেলের বাণিজ্যিক জেট বিমান। ব্রাজিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমান উৎপাদনকারী দেশ

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলবিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ, বাজার বিনিময়ের ভিত্তিতে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম, ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। দেশটির যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যা এর অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, সামনের কয়েক দশকে ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম অর্থনীতির একটি হিসেবে পরিণত হবে।[৯১] এর বর্তমান গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হচ্ছে ১০,২০০ মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ৬৪তম। ব্রাজিলের বৃহৎ ও উন্নত কৃষি, খনিশিল্প, উৎপাদন ব্যবস্থা, এবং সেবাখাত রয়েছে। সেই সাথে দেশটিতে শ্রমিকের প্রাচুর্যও বিদ্যমান।[৯২]

ব্রাজিলের রপ্তানিখাত অত্যন্তু দ্রুত বিস্তৃত ও বিকশিত হচ্ছে, এবং টাইকুনের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করছে।[৯৩] ব্রাজিলের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গাড়ি, ইথানল, টেক্সটাইল, পাদুকা, লৌহ আকরিক, ইস্পাত, কফি, কমলার রস, সয়াবিন, এবং কর্নড বিফ[৯৪] দেশটি ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ ও পণ্যবাজারে নিজের উপস্থিতি আরও বিস্তৃত করে চলেছে। এছাড়াও ব্রাজিল উত্থানশীল অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর সংগঠন ব্রিকের সদস্য।[৯৫]

১৯৯৪ সাল থেকে মুদ্রা হিসেবে ব্রাজিলীয় রিয়াল ব্যবহার করে আসছে। ১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া, ১৯৯৮ সালে রাশিয়া,[৯৬] এবং এর রেশ ধরে বহুস্থানে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মুদ্রা নীতি সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে। বিনিময়ের হারের অব্যাহত দরপতনের ফলে সৃষ্ট মুদ্রা সংকট মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িকভাবে মুদ্রা বিনিময় হার নির্দিষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে ব্রাজিল পুনরায় মুক্তবাজার বিনিয়ময় হারে ফিরে যায়।[৯৭]

অর্থনৈতিক জটিলতা কাটিয়ের ওঠার জন্য ব্রাজিল ২০০২-এর মধ্যভাগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৩০.৪ বিলিয়ন ডলারের একটি রেকর্ড পরিমাণ ঋণ সহায়তা লাভ করে।[৯৮] ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকলেও ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যংক ২০০৫ সালেই আইএমএফ-এই ঋণ পরিশোধ করে।[৯৯] সাম্প্রতিককালে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির যেসকল বিষয় মোকাবেলা করেছে তার মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের পুজির পরিমাণ আনুমানের চেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জটিলতা। এর ফলেই ঐ সময়কালে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলীয় রিয়ালের দরপতন ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়।[১০০] তবে দীর্ঘমেয়াদে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকৃত অর্থ অনুমানের চেয়ে কম হারে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছিল। ২০০৭ সালে এর আনুমানিক পরিমাণ ছিল ১৯৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[১০১] বর্তমানে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী ঋণে সুদের পরিমাণ মুদ্রানীতির আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশটির মুদ্রস্ফীতির হার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ।[১০২]

বিষয়বস্তু ও শক্তিখাত

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

পরিবহন

Thumb
ফর্তালিজা শহরের বাইরে বিআর-১১৬ মহাসড়ক

ব্রাজিলে বিস্তুত ও বৈচিত্রময় পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান। জনপরিহন ও পণ্যপরিবহনে মূলত সড়ক পথই ব্যবহৃত হয়। ২০০২ সালের হিসাব অনুযায়ী ব্রাজিলের বিদ্যমান সড়ক পথের মোট দৈর্ঘ্য্য ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার (১২ লক্ষ ৩০ হাজার মাইল)। ১৯৬৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছরে দেশটিতে পাকাকৃত সড়কের দৈর্ঘ্য্য ৩৫,৪৯৬ কিলোমিটার (২২,০৫৬ মাইল) থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৮৪,১৪০ কিলোমিটার (১,১৪,৪২৫ মাইল)।[১০৩]

সড়ক পথের সম্প্রসারণের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় ১৯৪৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে ব্রাজিলের রেলপরিবহন ব্যবস্থার পরিধি সংকুচিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে দেশটির রেললাইনের সর্বমোট দৈর্ঘ্য্য ছিলো ৩১,৮৪৮ কিলোমিটার (১৯,৭৮৯ কিলোমিটার), এবং ২০০২ সালে এসে এই দৈর্ঘ্য্য হয় ৩০,৮৭৫ কিলোমিটার (১৯,১৮৬)। রেলওয়ে ব্যবস্থার বেশিরভাগ অংশ সরকারি মালিকানাধীন ফেডারেল রেইলরোড কর্পোরেশনের আয়ত্তাধীন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে সরকার ৭টি লাইন বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়।[১০৪] সাঁউ পাইলু মেট্রা ব্রাজিলের প্রথম পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থা। অন্যান্য পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে আছে রিউ দি জানেইরু, পর্তু আলেগ্রে, হেসিফি, বেলু হরাইজন্তে, ব্রাসিলিয়া, তেরেসিনা, ফর্তালিজা, এবং সালভাদোর

ব্রাজিলে প্রায় ২,৫০০ বিমানবন্দর ও বিমান অবতরণের স্থান রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।[১০৫] সাঁউ পাউলু শহরে কাছে অবস্থিত সাঁউ পাউলু-গুয়ারুলহোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দেশটির অভ্যন্তরীন জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক পরিবহনের একটি বড় ও বৈচিত্রময় অংশ এই বিমানবন্দরে সম্পন্ন হয়। এছাড়াও আন্তজার্তিকভাবে এই বিমান বন্দরটি ব্রাজিলকে বিশ্বের সকল বড় শহরগুলোর সাথে যুক্ত করেছে।[১০৬]

উপকূলের পরিবহন সংযোগগুলো দেশটির স্বত্বন্ত্র অংশ। বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের সান্তোশের বন্দরগুলো মুক্তভাবে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। ব্রাজিলের ৩৬টি গভীর-জল বন্দর রয়েছে যার মধ্যে সান্তোশ, ইতাজাই, রিউ গ্রাঁদ, পারানাগুয়া, রিউ দি জানেইরু, সেপেতিবা, ভিতোরিয়া, সাউপে, মানাউশ, এবং সাঁউ ফ্রান্সিসকো দু সুই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।[১০৭]

Remove ads

জনপরিসংখ্যান

সারাংশ
প্রসঙ্গ
আরও তথ্য বর্ণ/জাতি (২০০৮) ...

২০০৮ সালের গণনা অনুযায়ী ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি।[১০৮] জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২২.৩১ জন, এবং পুরুষ ও নারীর অনুপাত ০.৯৫:১।[১০৯] মোট জনসংখ্যার ৮৩.৭৫% ভাগ শহরাঞ্চলে বসবাস করে।[১১০] ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ বাস দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব (৭ কোটি ৯৮ লক্ষ) ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (৫ কোটি ৩৫ লক্ষ)। যদিও ভৌগোলিকভাবে দেশটির সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে এর মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল, যা ব্রাজিলের মোট ভূখণ্ডের ৬৪.১২% ভাগ দখল করে আছে, কিন্তু সে অঞ্চলগুলোতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৯১ লক্ষ।

মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় ১৯৪০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। যদিও এ সময় জন্মহারও সামান্য পরিমাণে হ্রাস পায়। ১৯৪০-এর দশকে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ২.৪%। ১৯৫০-এর দশকে এসে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩.০%; ও ১৯৬০-এর দশকে এই হার ছিল ২.৯%। এ বছরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৪৪ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ বছরে উন্নীত হয়।[১১১] ২০০৭ সালে এসে ব্রাজিলের মানুষের গড় আয়ু হয় ৭২.৬ বছর।[১১২] ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৫০-৫০-এর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৩.০৪%। ২০০৮ সালে এসে এ হার দাঁড়ায় মাত্র ১.০৫%-এ। ধারণা করা হয়, এমনভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক অঙ্কে পৌঁছাবে, এবং হার হবে -০.২৯%।[১১৩][১১৪]

ব্রাজিলের ইন্সটিটিউট অফ জিওগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের ২০০৮ সালের গণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যার ৪৮.৪৩% ভাগ (প্রায় ৯ কোটি ২০ লক্ষ) নিজেদেরকে শেতাঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করেছে; এবং ৪৩.৮০% ভাগ বাদামী (মিশ্র) (প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ), ৬.৮৪% কৃষ্ণাঙ্গ (১ কোটি ৩০ লক্ষ), ০.৫৮% এশীয় (১১ লক্ষ), এবং ০.২৮% নিজেদের আমেরিন্ডিয়ান (৫ লক্ষ ৩৬ হাজার) হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে ০.০৭% (প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার) মানুষ নিজেদের বর্ণ পরিচয় দেয়নি।[১১৫]

২০০৭ সালে জাতীয় ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে ব্রাজিলে ৬৭টি ভিন্ন উপজাতীয় গোত্রের অবস্থান উল্লেখ করা হয়, যাঁদের সাথে কোনো রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ নেই। ২০০৪ সালে যোগাযোগহীন এসকল গোত্রের সংখ্যা ছিল ৪০। ব্রাজিলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অযোগাযোগকৃত মানুষের বাস করে বলে ধারণা করা হয়।[১১৬]

ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ দেশটির আদিবাসী জনগণ, পর্তুগিজ উপনিবেশক, এবং আফ্রিকান দাসদের বংশদ্ভূত।[১১৭] ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজদের আগমনের পর থেকে এই তিন জাতির মাঝে বৈবাহিক সম্পর্কের সৃষ্টি হতে থাকে, যা ব্রাজিলকে একটি বৈচিত্রময় জাতিসত্ত্বা উপহার দিয়েছে। ব্রাজিলের বাদামী বর্ণের জনগোষ্ঠীর (পর্তুগিজ ভাষায় এদেরকে ‘প্রাদু’ (prado) নামে সম্বোধন করা হয়[১১৮][১১৯]) বিভিন্ন ভাগের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাগ গুলোর মধ্যে আছে শেতাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাবোক্লু’ (Caboclo), শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বংশদ্ভূত ‘মুলাতু’ (Mulatto), এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাফুজু’ (Cafuzo)।[১১৭][১১৮][১১৯][১২০][১২১][১২২] বেশিরভাগ কাবোক্লু জনগণ দেশটির উত্তর, উত্তর-পূর্ব, এবং মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে।[১২৩] গরিষ্ঠ সংখ্যাক মুলাতু জনগণ বাস করে বায়া ও থেকে পারাইবা পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘেঁষে চলে আসা পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল,[১২২][১২৪] উত্তর মারানাউঁ,[১২৫][১২৬] দক্ষিণ মিনাস জেরাইস[১২৭] এবং পূর্ব রিউ দি জানেইরু অঞ্চলে।[১২২][১২৭] ১৯শ শতক থেকে অভিবাসীদের জন্য ব্রাজিলের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ১৮০৮ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ব্রাজিলে বিশ্বের ৬০টি দেশ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটে। এসকল অভিবাসীর বেশিরভাগই এসেছিল পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, জাপান, এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।[১২৮]

২০০৮ সালে ব্রাজিলে সার্বিক নিরক্ষরতার হার ছিল ১১.৪৮%,[১২৯] এবং তরুণদের ভেতর (বয়স ১৫–১৯) এই হার ছিল ১.৭৪%। এই হার সবচেয়ে বেশি ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (২০.৩০%), যেখানে বেশ বড় সংখ্যক গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস।[১৩০] গড় হিসাবে নিরক্ষতার হার গ্রামীণ জনগণের মাছে বেশি (২৪.১৮%) ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মাঝে কম (৯.০৫%)।[১৩১]

নগরায়ণ

ভাষা

ব্রাজিলের সরকারী ভাষা হল পর্তুগিজ (ফেডারেল প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ধারা ১৩), যা প্রায় সমস্ত জনগণই বলে এবং এটি প্রায় একমাত্র ভাষা যা সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন এবং ব্যবসায়িক এবং প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। ব্রাজিল আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজ-ভাষী দেশ, যা ভাষাটিকে ব্রাজিলিয়ান জাতীয় পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তোলে এবং এর স্পেনীয়-ভাষী প্রতিবেশীদের থেকে একটি আলাদা জাতীয় সংস্কৃতি প্রদান করে।

ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজের নিজস্ব উন্নয়ন হয়েছে, যা মূলত ১৬ শতকের মধ্য ও দক্ষিণের ইউরোপীয় পর্তুগিজের উপভাষার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ (যদিও উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক বসতি স্থাপনকারী এবং আরও সাম্প্রতিক অভিবাসী এসেছেন, এবং সামান্য মাত্রায় পর্তুগিজ ম্যাকারোনেশিয়া), কিছু প্রভাব রয়েছে অ্যামেরিন্ডিয়ান এবং আফ্রিকান ভাষা থেকে, বিশেষত ওয়েস্ট আফ্রিকান এবং বান্টু শুধুমাত্র শব্দভাণ্ডারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলস্বরূপ, ভাষাটি মূলত ধ্বনিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পর্তুগাল এবং অন্যান্য পর্তুগিজ-ভাষী দেশগুলির ভাষা থেকে কিছুটা আলাদা (অন্য দেশগুলির উপভাষাগুলি, আংশিকভাবে এই অঞ্চলে পর্তুগিজ ঔপনিবেশিকতার আরও সাম্প্রতিক শেষের কারণে, সমসাময়িক ইউরোপীয় পর্তুগিজের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে)। এই পার্থক্যগুলি আমেরিকান এবং ব্রিটিশ ইংরেজির মধ্যে পার্থক্যের সাথে তুলনীয়।

২০০২ সালের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ আইন সরকারী কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি সংস্থাগুলিকে লিংগুয়া ব্রাসিলেইরা দোস সাইনাইস বা "লিব্রাস", ব্রাজিলিয়ান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে তথ্য গ্রহণ এবং প্রদানের জন্য প্রয়োজন এবং ২০০৫ সালের রাষ্ট্রপতি আদেশ এটিকে শিক্ষা এবং বক্তৃতা এবং ভাষা পাঠ্যক্রমের অংশ হিসাবে ভাষা শেখানোর প্রয়োজনের জন্য প্রসারিত করে। লিব্রাস শিক্ষক, প্রশিক্ষক এবং অনুবাদকরা স্বীকৃত পেশাদার। স্কুল এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি বধিরদের প্রবেশাধিকার ("অন্তর্ভুক্তি") প্রদান করতে হবে।

সারা দেশ জুড়ে সংখ্যালঘু ভাষায় কথা বলা হয়। ১৮০টি আমেরিন্ডিয়ান ভাষায় দূরবর্তী এলাকায় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অন্যান্য ভাষায় অভিবাসী এবং তাদের বংশধরদের দ্বারা কথিত হয়। সাও গ্যাব্রিয়েল দা কাচোইরার পৌরসভায়, নিহেংগাতু (একটি বর্তমানে বিপন্ন ক্রেওল ভাষা যার তুপি লেক্সিকন এবং পর্তুগিজ-ভিত্তিক ব্যাকরণ রয়েছে যা তার দক্ষিণের আত্মীয় লিংগুয়া জেনারেল পলিস্টার সাথে একবার ব্রাজিলে একটি প্রধান লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ছিল), বানিওয়া এবং তুকানো ভাষাগুলি পর্তুগিজের সাথে সহ-সরকারী মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে জার্মান (মূলত ব্রাজিলিয়ান হান্সরাকিসচ, একটি উচ্চ জার্মান ভাষার উপভাষা) এবং ইতালীয় (মোটামুটিভাবে তেলিয়ান, একটি ভেনিসীয় উপভাষা) উত্সের উল্লেখযোগ্য সম্প্রদায় রয়েছে, যাদের পূর্বপুরুষদের মাতৃভাষা ব্রাজিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং যা এখনও বেঁচে আছে সেখানে, পর্তুগিজ ভাষা দ্বারা প্রভাবিত হয়। তেলিয়ানকে রিও গ্র্যান্ডে দো সুলের একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এবং কয়েকটি পৌরসভায় দুটি জার্মান উপভাষার সহ-সরকারী মর্যাদা রয়েছে। ইতালিয়ানকেও সান্তা টেরেসা এবং ভিলা ভেলহাতে জাতিগত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এস্পিরিটো সান্টো রাজ্যে এবং স্কুলে বাধ্যতামূলক দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শেখানো হয়।

Remove ads

সংস্কৃতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
কার্নিভালে সাম্বা স্কুল প্যারেডের সাম্বা নৃত্য উপস্থাপন। কার্নিভাল ও সাম্বা নৃত্য বহিঃবিশ্বের কাছে ব্রাজিলের সংস্কৃতির সবচেয়ে পরিচিত অংশগুলোর একটি।

তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পতুগিজ ঔপনিবেশকদের শাসনের ফলে, ব্রাজিলের সংস্কৃতির মূল অংশটি এসেছে পর্তুগালের সংস্কৃতি থেকে। পর্তুগিজরা ব্রাজিলের সংস্কৃতির যেসকল স্থানে প্রভাব ফেলেছে তার মধ্যে আছে পর্তুগিজ ভাষা, ক্যাথলিক ধর্ম, এবং ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশিল্প।[১৩২] এছাড়াও ব্রাজিলের সংস্কৃতি আফ্রিকান, ও আদিবাসী ইন্ডিয়ানের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দ্বারাও বেশ প্রভাবান্বিত হয়েছে।[১৯] এছাড়া ব্রাজিলে অভিবাসী হিসেবে আসা ইতালীয়, জার্মান, ও অন্যান্য ইউরোপীয় অভিবাসীদের সংস্কৃতিও ব্রাজিলীয় সংস্কৃতিতে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করেছে। ১৮-১৯শত শতকের দিকে দলে দলে আসা এ সকল অভিবাসীরা ব্রাজিলের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বসবাস করা শুরু করেছিল, এবং বর্তমানেও ঐ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।[১৩৩] তবে সামগ্রিকভাবে আদিবাসী আমেরিন্ডিয়ানরা ব্রাজিলের ভাষা ও রন্ধনশিল্পে প্রভাব ফেলেছে; অপরদিকে আফ্রিকানরা প্রভাব ফেলেছে ব্রাজিলের রন্ধনশৈলী, সঙ্গীত, নৃত্যকলা, ও ধর্মে।[১৩৪]

১৬শ শতকের পর থেকে ব্রাজিলীয় চিত্রকলা বিভিন্ন ধারায় বিস্তৃত হতে থাকে। পূর্বে ব্রাজিলের চিত্রকলায় বারুকি ধারার প্রভাব ছিল খুব বেশি,[১৩৫][১৩৬] কিন্তু ১৬শ শতকের পর বারুকি থেকে তা রোমান্টিকতা, আধুনিকতা, অভিব্যক্তিবাদ, কিউবিজম, পরাবাস্তবাদ, বিমূর্তবাদ প্রভৃতি দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

ব্রাজিলীয় চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয় ১৯শ শতকের শেষ দিকে। অনেক অভ্যন্তরীণ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রাজিলের চলচ্চিত্র দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে।[১৩৭]

সঙ্গীত

সাহিত্য

ব্রাজিলীয় সাহিত্য বিশ্বে অন্যতম আলোড়ন তোলা সাহিত্য।ব্রাজিলের লেখক পাওলো কোয়েলহো বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত লেখক।এছাড়া মাচাদো দ্যে অ্যাসিস ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা লেখক হিসেবে সুপরিচিত।

রন্ধনশিল্প

খেলাধুলা

ফুটবল খেলাই ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে চিহ্নিত। দলটি এ পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়লাভ করেছে যা একটি রেকর্ড।[১৩৮]

ভলিবল, বাস্কেটবল, অটো রেসিং এবং মার্শাল আর্ট ক্রীড়াও ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়। ব্রাজিলের পুরুষ জাতীয় ভলিবল দলটি ওয়ার্ল্ড লীগ, বিশ্ব ভলিবল গ্রাঁ চ্যাম্পিয়ন্স কাপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ এবং বিশ্বকাপের বর্তমানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। ব্রাজিলের অন্যান্য খেলার মধ্যে রয়েছে - টেনিস, হ্যান্ডবল, সুইমিং এবং জিমন্যাসটিক্‌স যা গত কয়েক দশক ধরে চর্চা হচ্ছে। ব্রাজিলে বেশকিছু ক্রীড়ার উদ্ভব ঘটেছে। তন্মধ্যে - বীচ ভলিবল[১৩৯], ফুটসাল[১৪০] এবং ফুটভলি অন্যতম। মার্শাল আর্টে ক্যাপোইরা[১৪১], ভ্যালে টুডো[১৪২] এবং ব্রাজিলিয়ান জি-জিতসু[১৪৩] ক্রীড়ার প্রচলন ঘটিয়েছে। অটো রেসিংয়ে এ পর্যন্ত তিনজন ব্রাজিলীয় ড্রাইভার ফর্মুলা ওয়ানে আটবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছে।[১৪৪][১৪৫][১৪৬]

Remove ads

শহর

আরও দেখুন

  • ব্রাজিলের সূচি - সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহ

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads