মাইক্রোসফট কর্পোরেশন (ইংরেজি: Microsoft Corporation) একটি বহুজাতিক আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানি। এর সদরদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের রেডমন্ড, ওয়াশিংটনে অবস্থিত। মাইক্রোসফট সফটওয়্যার, ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স, ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও এর সাথে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সেবা উন্নয়ন, উৎপাদন, অনুমোদন, সমর্থন, ও বিক্রি করে থাকে। কোম্পানিটির বহুল পরিচিত সফটওয়্যার পণ্য এর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ধারা, অফিস স্যুট, এবং ইন্টারনেট এক্সফ্লোরার ও বর্তমানে এজ ওয়েব ব্রাউজার। আর উল্লেখযোগ্য হার্ডওয়্যার পণ্যের মধ্যে আছে এক্সবক্স ভিডিও গেম কনসোল ও সারফেস ব্যক্তিগত কম্পিউটার ধারা। ২০১৬ সালে মাইক্রোসফট ছিলো আয়ের ভিত্তিতে পৃথিবীর বৃহত্তর সফটওয়্যার নির্মাতা (বর্তমানে সে জায়গা আলফাবেটের দখলে)। [3] দুটো শব্দ "মাইক্রোকম্পিউটার" ও "সফটওয়্যার"-এর মিলনে "মাইক্রোসফট" নামটির সৃষ্টি।[4]
ধরন | পাবলিক |
---|---|
| |
আইএসআইএন | US5949181045 |
শিল্প |
|
পূর্বসূরী | ট্রাফ-ও-ডেটা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ৪ এপ্রিল ১৯৭৫ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্কে। |
প্রতিষ্ঠাতাগণ | |
সদরদপ্তর | ওয়ান মাইক্রোসফট ওয়ে, রেডমন্ড, ওয়াশিংটন , যুক্তরাষ্ট্র |
বাণিজ্য অঞ্চল | বিশ্বব্যাপী |
প্রধান ব্যক্তি |
|
পণ্যসমূহ | |
পরিষেবাসমূহ | |
আয় | মার্কিন$১২৫.৮ billion[1] (২০১৯) |
সুদ ও করপূর্ব আয় | মার্কিন$৪৩.০ billion[1] (২০১৯) |
নীট আয় | মার্কিন$৩৯.২ billion[1] (২০১৯) |
মোট সম্পদ | মার্কিন$২৮৬.৫৫ বিলিয়ন[1] (২০১৯) |
মোট ইকুইটি | মার্কিন$১০২.৩৩ billion[1] (২০১৯) |
কর্মীসংখ্যা | ১৫১,১৬৩[2] (২০১৯) |
ওয়েবসাইট | www |
৪ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে বিল গেটস ও পল অ্যালেন অল্টেয়ার ৮৮০০ এর জন্য বেসিক ইন্টারপ্রেটার নির্মান ও বিক্রির জন্য মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝিতে এসে মাইক্রোসফট তাদের এমএস-ডস দিয়ে অপারেটিং সিস্টেম বাজারে বিশেষ জায়গা করে নিতে শুরু করে। ১৯৮৬ সালে কোম্পানিটির আইপিও এবং তারপর ক্রমশ শেয়ারের মূল বৃদ্ধির ফলে কোম্পানির চাকরিজীবীদের মধ্যে ২ জন লক্ষকোটিপতি, ও ১২ জন লক্ষপতির সৃষ্টি হয়। ১৯৯০-এর দশক থেকে মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেমের বাইরেও বিভিন্ন দিকে ছড়ানো শুরু করে এবং এসময় তারা কিছু কোম্পানি অধিগ্রহণও করে। মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বড় অধিগ্রহণ লিংকডইন, যা তারা $২,৬০০ কোটির বিনিময়ে ২০১৬ সালে অধিগ্রহণ করে।
২০১৫-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], মাইক্রোসফট ব্যক্তিগত কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম বাজারে জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিশেষ স্থান দখল করে আছে, যার আশেপাশেও অন্য কোন অপারেটিং সিস্টেম নেই। তবে সব ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বিবেচনায় দীর্ঘদিন উইন্ডোজ সেখানেও সবচেয়ে প্রভাবশালী হলেও, বর্তমানে সে জায়গাটি অ্যান্ড্রয়েড দখল করে নিয়েছে।[5] কোম্পানিটি ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ও সার্ভারের জন্য বিস্তৃত ধরনের ভোক্তা ও এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার তৈরী করে, যার মধ্যে আছে ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন, ডিজিটাল সেবা বাজার, মিশ্র বাস্তবতা,ক্লাউড কম্পিউটিং ও সফটওয়্যার উন্নয়নের পণ্য।
ইতিহাস
১৯৭২–১৯৮৫: মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা
ছোটবেলার বন্ধু বিল গেটস আর পল অ্যালেন তাদের দুজনের সম্মিলিত প্রযুক্তিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটা ব্যবসায় শুরু করার কথা ভাবে।[6] ১৯৭২ সালে তারা দুজন ট্র্যাফ-ও-ডাটা প্রতিষ্ঠা করে। তারা অটোমোবিল যান চলাচল ডেটা ট্র্যাক ও বিশ্লেষণের একটা অপরিণত কম্পিউটার পণ্য বিক্রি করতো। গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো, আর অ্যালেন ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান স্নাতকে ।[7]"পপুলার ইলেকট্রনিকস"-এর ১৯৭৫ এর জানুয়ারি ইশুতে তারা এমআইটিএস অল্টেয়ার ৮৮০০ মাইক্রোকম্পিউটার নিয়ে লিখে,[8] আর এটা অ্যালেনকে প্রথম ভাবালো যে তারাওতো এ কম্পিউটারের জন্য একটা বেসিক ইন্টারপ্রেটার প্রোগ্রাম করতে পারতো। গেটস এমআইটিসএকে ফোন করলো এবং জানালো যে তার কাছে একটা কাজ করা ইন্টারপ্রেটার আছে, আর এমআইটিএস তাকে প্রদর্শনের অনুমতি দিলো। অ্যালেন অল্টেয়ারের জন্য একটা সিমুলেটর বানাোর কাজে লেগে গেলো, এবং তখন গেটস ইন্টারপ্রেটারটি নির্মানে সময় দিচ্ছিলো। আর তারা যখন মার্চ ১৯৭৫ সালে আলবুকার্কে এমআইটিএসের সামনে ইন্টারপ্রেটারটি প্রদর্শন করলো, তা চমৎকার ভাবে কোন সমস্যা ছাড়াই কাজ করলো। এমআইটিএস এটা বণ্টনে রাজী হলো, নাম দিলো অল্টেয়ার বেসিক। :১০৮, ১১২–১১৪ অ্যালেন ও গেটস ৪ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করে, গেটস যেখানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।[9] মাইক্রোসফট নামটি পল অ্যালেনের দেয়া।[10][11] ১৯৭৭-এর আগস্টে, কোম্পানিটি জাপানে আস্কি পত্রিকার সাথে একটা চুক্তিতে আসে, আর ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠা হয় প্রথম আন্তর্জাতিক আস্কি মাইক্রোসফট আপিস। [12] মাইক্রোসফট ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে তাদের সদরদপ্তর বেলভিউ, ওয়াশিংটনে স্থানান্তর করে।[9]
মাইক্রোসফট ১৯৮০ সালে নিজস্ব ইউনিক্স সংস্করণ জেনিক্সের মাধ্যমে প্রথম অপারেটিং সিস্টেম ব্য়বসায়ে পা রাখে,[13] কিন্তু তাদের সাফল্যের আলো দেখিয়েছিলো এমএস-ডস। আইবিএম নভেম্বর ১৯৮০ সালে মাইক্রোসফটের সাথে আইবিএম পিসির জন্এয কটা সিপি/এম ওএসের সংস্করণ প্রদানের জন্য একটা চুক্তি করে।[14] এ ডিলের জন্য, মাইক্রোসফট ৮৬-ডস নামে সিয়াটল কম্পিউটার প্রোডাকসের কাছ থেকে সিপি/এমের একটি ক্লোন কিনে নেয়, তারপর এর নাম দেয় এমএস-ডস। পরে যদিও আইবিএম এর নাম পরিবর্তন করে রাখে আইবিএম পিসি ডস। আইবিএম পিসি আগস্ট ১৯৮১ সালে বাজারে বের হওয়া পর্যন্ত মাইক্রোসফট তাদের স্বত্বাধিকার ধরে রাখে। আইবিএম তাদের বায়োস কপিরাইট করে রাখে, আর তার ফলে অন্য কোম্পানিগুলো তাদের নন-আইবিএম হার্ডওয়্যারকে আইবিএম পিসি সামঞ্জস্য করতে রিভার্স ইঞ্জিনারিঙের দ্ধারস্থ হতে হতো। আর ধীরে ধীরে মাইক্রোসফট অন্যতম পিসি অপারেটিং সিস্টেম বিক্রেতায় পরিণত হলো। [15][16]:২১০ কোম্পানিটি ১৯৮৩ সালে "মাইক্রোসফট মাউজ" বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে এর বাজারকে আরও বিস্তৃত করে। পল অ্যালেন অই বছরই হজকিন'স লিম্ফোমার কারণে মাইক্রোসফট থেকে পদত্যাগ করে। [17] অ্যালেন তার জীবনিতে দাবি করেন, গেটস তার এমন অবস্থায় সে কোম্পানিতে ঠিকমত কাজ করছে না, এমন উসিলা দিয়ে তার শেয়ার নিস্তেজ করতে চাচ্ছিলো।[18]
১৯৮৫–১৯৯৪: উইন্ডোজ ও অফিস
মাইক্রোসফট ২০ নভেম্বর ১৯৮৫ সালে এমএস-ডসের গ্রাফিক্যাল বিস্তৃত রূপ হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ মুক্তি দেয়, যদিও এর আগের আগস্টে তারা আইবিএমের সাথে একসাথে ওএস/২ উন্নয়ন শুরু করেছিলো।[19] ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ সালে মাইক্রোসফট তাদের সদরদপ্তর বেলভিউ থেকে রেডমন্ডে, ওয়াশিংটনে স্থানান্তর করে, এবং একই বছরেরই ১৩ মার্চ তারিখে তারা পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তর হয়। [20] এ সময় স্টকের মূল্য এত বেশি বৃদ্ধি পায় যে, মাইক্রোসফটের চারজন চাকরিজীবী শতকোটিপতি ও ১২ জন চাকরিজীবী লাখপতিতে পরিণত হয়।[21] মাইক্রোসফট ২ এপ্রিল ১৯৮৭ সালে ওইএমদের কাছে তাদের নিজস্ব ওস/২ বিক্রি করে। ১৯৯০ সালে ফেডারেল ট্রেড কমিশনের সাথে মাইক্রোসফটের আর আইবিএমের অংশীদারিত্ব নিয়ে আইনি জটিলতার শুরু হয়।[22] এ সময় মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এনটি নিয়ে কাজ শুরু করে। উইন্ডোজ এনটি ওএস/২ এর কোড দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলো। ২১ জুলাই ১৯৯৩ সালে নতুন মড্যুলার কার্নেল ও ৩২ বিট উইন৩২ এপিআই নিয়ে উইন্ডোজ এনটি মুক্তি পায়। মাইক্রোসফট আইবিএমকে উইন্ডোজ এনটির কথা জানালে, ওএস/২ অংশীদারিত্বের এখানেই সমাপ্তি হয়।[23]
১৯৯০ সালে মাইক্রোসফট মাইক্রোসফট অফিস বাজারে আনে, যেটা আলাদা আলাদা অ্যাপলিকেশন যেমন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও মাইক্রোসফট এক্সেলের একটা বান্ডল। ২২ মে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৩.০ বাজারে ছাড়ে। এ সময়ে অফিস এবং উইন্ডোজ দুটোই তাদের নিজস্ব জায়গায় প্রভাবশালী স্থান অর্জন করা শুরু করে।[24][25]
২৭ জুলাই ১৯৯৪ সালে বিচার বিভাগের এন্টিট্রাস্ট ডিভিশন মাইক্রোসফটকে প্রতিযোগী বিরোধী কার্যক্রমের জন্য মামলা করে।[26]
১৯৯৫–২০০৭: ইন্টারনেট, উইন্ডোজ ৯৫, উইন্ডোজ এক্সপি ও এক্সবক্স
১৯৯৫ সাল থেকে মাইক্রোসফট এর কবলান পুনসংজ্ঞায়িত করা শুরু করলো, একইসাথে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে এর পণ্য বিস্তার করতে লাগলো এ।[27] নেটস্কেপের মত কিছু আলাদা কোম্পানি ছাড়া, মাইক্রোসফটই ছিলো একমাত্র নতুন অনভিজ্ঞ কোম্পানি যারা খুব দ্রুত নিজেদের এ নতুন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের অংশ করে নিতে সক্ষম হয়েছিলো। অন্য কিছু কোম্পানি, যেমন, বোরল্যান্ড, ওয়ার্ডপারফেক্ট, নভেল, আইবিএম, ও লোটাস সফটওয়্যার, এ পরিগ্রহণে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায়, মাইক্রোসফট এ সুযোগে বাজারে বিশেষ জায়গা দখল করে নেয় অনায়াসে।[28] ২৪ আগস্ট ১৯৯৫ সালে মাইক্রোসফট একেবারে নতুন প্রি-এম্পটিভ মাল্টিটাস্কের সুবিধাসম্পনন ব্যবহারকারী ইন্টারফেস ও নভেল স্টার্ট বাটনসহ উইন্ডোজ ৯৫ প্রকাশ করে, উইন্ডোজ এনটির মত এটাও উইন৩২ এপিআই সুবিধা নিয়ে আসে।[29][30] উইন্ডোজ ৯৫ আসলো অনলাইন পরিষেবা এমএসএন, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সাথে নিয়ে। প্রথমে এ পরিষেবাকে ইন্টারনেটের প্রতিযোগী হিসেবে বণ্টন করা হয়েছিলো। তবে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে উন্নয়ন তখনও শেষ না হওয়ায়, এটা পরবর্তীতে আসে উইন্ডোজ ৯৫ প্লাস! প্যাকেজের সাথে। [31] ১৯৯৫ সালে জেনারেল ইলেকট্রিকের এনবিসি ইউনিটের সাথে একজোট হয়ে মাইক্রোসফট ২৪/৭ ক্যাবল নিউজ চ্যানেল এমএসএনবিসি বাজারে আনার মাধ্যমে নতুন এক বাজারে পা রাখলো। [32]
১৩ জানুয়ারি ২০০০ সালে বিল গেটস স্টিভ বালমারের কাছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব তুলে দেন। বালমার গেটসের পুরোনো কলেজ বন্ধু, তিনি মাইক্রোসফটে ১৯৮০ সাল থেকে চাকরি করে আসছেন। অক্টোবর ১৯৯৯ সালে মাইক্রোসফটসহ আরও কিছু কোম্পানি মিলে মেধাস্বত্তের নিরাপত্তার জন্য ট্রাস্টেড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম জোট তৈরী করে। সমালোচকরা এ জোটকে ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ব্যবহারে, কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করবেে তা বাধ্য করার একটি নোঙরা চাল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। [33][34] ২৫ অক্টোবর ২০০১ সালে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এক্সপি বাজারে ছাড়ে, যেখানে মূলধারার ও এনটি ধারা এনটি কোডভিতের আওতায় একীভূত করা হয়। [35] একই বছরের শেষের দিকে সনি আর নিন্টেন্ডোর কর্তৃত্বে থাকা বাজারে তারা এক্সবক্স প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়।[36] ২০০৫ সালের নভেম্বরে কোম্পানির দ্বিতীয় ভিডিও গেম কনসোল এক্সবক্স ৩৬০ বাজারে আসে।[37]
২০০৭–২০১১: মাইক্রোসফট আজুর, উইন্ডোজ ভিস্তা, উইন্ডোজ ৭, ও মাইক্রোসফট স্টোর
উইন্ডোজের পরবর্তী সংস্করণ ভিস্তা মুক্তি পায় ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে। উইন্ডোজের এ সংস্করণ নতুন সুবিধা, নিরাপত্তা ও নতুন ব্যবহারকারী ইন্টারফেস অ্যারোর উপর গুরুত্বারোপ করে। [38][39] মাইক্রোসফট অফিস ২০০৭ ও একইসময়েই মুক্তি পায়। অফিসের নতুন এ সংস্করণে রিবন ব্যবহারকারী ইন্টারফেস একটি উল্লেখযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তারকারী পরিবর্তন ছিলো। দুটো পণ্যেরই তুলনামূলক বেশি বিক্রয় ২০০৭ সালে মাইক্রোসফটকে রেকর্ডধারী মুনাফার্জনে সহায়তা করে। [40] অন্যান্য সার্ভার কোম্পানি, যেমন- সান ও আইবিএমের, মত মাইক্রোসফটও ২০০৭ সালে নতুন মাল্টি-কোর ইউনিট তৈরী করে। [41]
গেটস কেম্পানির প্রধান সফটওয়্যার নির্মতার পদ থেকে ২৭ জুন ২০০৮ সালে অবসর নেয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর অন্যান্য পদগুলো এখনও উনি ধরে রেখেছেন। [42][43] ২৭ অক্টোবর ২০০৮ সালে আজুর সেবা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোম্পানিটি ক্লাউড কম্পিউটিঙের বাজারে প্রবেশ করে।[44] ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে মাইক্রোসফট তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডে খুচরা দোকানের একটি চেন শুরু করার কথা জানায়। ২২ অক্টোবর ২০০৯ সালে স্কটসডেল, অ্যারিজোনায় প্রথম খুচরা মাইক্রোসফট স্টোর খোলা হয়, এবং একইদিনে জনসাধারণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উইন্ডোজ ৭ও মুক্তি পায়। উইন্ডোজ ৭ ছিলো ভিস্তার ভুলগুলো শুধরানো একটি সংস্করণ।[45][46][47]
২০০৭ সালে স্মার্টফোন শিল্পের নতুন যে যুগের শুরু হয়, তাতে মাইক্রোসফট অ্যাপল ও গুগলের সাথে টিকে থাকার জন্য নতুন আধুনিক স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম তৈরীর কথা ভাবে। ফলাফলস্বরূপ মাইক্রোসফটের পুরোনো উইন্ডোজ মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের জায়গা নিয়ে নেয় নতুন উইন্ডোজ ফোন ওএস দিয়ে। মাইক্রোসফট সফটওয়্যার শিল্পের নতুন জন্য নতুন পরিকল্পনার দ্বারস্থ হয়, নকিয়ার মত স্মার্টফোন প্রস্তুতকারকদের সাথে চুক্তিতে আসা ও সকল স্মার্টফোনে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি এ দীর্ঘ পরিকল্পনারই অংশ। মাইক্রোসফট "মেট্রো" কোডনামে নতুন একটা ব্যবহারকারী ইন্টারফেস ব্যবহার করা শুরু করে, যেখানে মিনিমালিজম ধারণার প্রয়োগ করে ভারী গ্রাফিক্যাল ব্যবহারকারীর বদলে সহজ গঠন, টাইপোগ্রাফি ও আইকোনগ্রাফির ব্যবহার করা হয়। ২৩ মার্চ ২০১১ সালে শুরু হওয়া ওপেন নেটওয়ার্কিং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের একজনও মাইক্রোসফট। এ অলাভজনক সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিলো সফটওয়্যার-ডিফাইনড নেটওয়ার্কিং নামে ক্লাউড কম্পিউটিঙের একটি উদ্যোগকে সমর্থন দেয়া।[48]
২০১১–২০১৪: উইন্ডোজ ৮/৮.১, এক্সবক্স ওয়ান, আউটলুক, ও সারফেস পণ্যসমূহ
উইন্ডোজ ফোনের মুক্তির পর মাইক্রোসফট ২০১১ এবং ২০১২ সালে করপোরেশনের লোগো, পণ্য, পরিষেবা ও ওয়েবসাইটকে মেট্রো ডিজাইন ভাষায় পরিবর্তনের মাধ্যমে পণ্যসারির রিব্র্যান্ডিঙের উদ্যোগ নেয়।[49] মাইক্রোসফট এ সময় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট কম্পিউটার উভয়ের জন্য উপযোগী করে জুন ২০১১ সালে উইন্ডোজ ৮ প্রকাশ করে।[50] ১৩ সেপ্টেম্বরে ডেভেলপার প্রাকদর্শন প্রকাশিত হয়, যেটি পরবর্তীতে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২তে ভোক্তা প্রাকদর্শন দ্ধারা প্রতিস্থাপিত হয়, এবং মেতে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। [51] সারফেস ১৮ জুনে প্রকাশ করা হয়, এটাই মাইক্রোসফটের তৈরী প্রথম কোন হার্ডওয়্যার। [52] ২৫ জুনে মাইক্রোসফট সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ইয়ামার ১২০ কোটি মার্কিন ডলারে কিনে নেয়।[53] জিমেইলের সাথে প্রতিযোগিতার দৌড়ে ৩১ জুলাইয়ে তারা আউটলুক ওয়েবমেইল পরিষেবার সূচনা করে। [54] ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ বাজারে ছাড়ে। [55]
জুলাই ২০১২ সালে মাইক্রোসফট তার ৫০% স্বত্ব এমএসএনবিসির কাছে বিক্রি করে দেয়।[56] ২৬ অক্টোবর ২০১২ সালে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৮ ও উইন্ডোজ সারফেস ল্যাপটপ বাজারে ছাড়ে। এর তিনদিন পর বাজারে আসে উইন্ডোজ ফোন। ২৯ মার্চ ২০১৩ সালে মাইক্রোসফট একটি প্যাটেন্ট ট্র্যাকার লঞ্চ করে। [57]
আগস্ট ২০১২ সালে নিউ ইয়র্কের পুলিশ বিভাগ মাইক্রোসফটের সাথে নিউ ইয়র্ক শহরের নজরদারির জন্য ডোমেইন অ্যাওয়ারনেস সিস্টেম তৈরীর জন্য মাইক্রোসফটের সাথে অংশীদারিত্বে আসে।[58]
কিনেক্ট নামে মাইক্রোসফটের ডিজাইন করা একটি মোশন-সেন্সিং ভিডিও গেম কন্ট্রোলার, যেটি ২০১০ সালে প্রথম মুক্তি পায়, ২০১৩ সালের এক্সবক্স ওয়ানের জন্য আবার হালনাগাদ করা হয়। [59]
জুলাই ২০১৩ সালে মাইক্রোসফট ঘোষণা দেয় তারা তাদের ব্যবসায়কে অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপলিকেশন, ক্লাউড ও ডিভাইস নামে চারটি ব্যবসায় বিভাগে পুনসংগঠিত করবে। এবং এরপর আগের সমস্ত বিভাগের কর্মচারী ও অন্যান্য সম্পত্তি চারটি বিভাগে চলে আসবে। [60] ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে মাইক্রোসফট ৭০০ কোটি ডলারে নকিয়ার মোবাইল বিভাগ কিনে নিতে রাজী হয়,[61] এমি হুদের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এটা হয়। [62]
২০১৪–বর্তমান: উইন্ডোজ ১০, মাইক্রোসফট এজ ও হোলোলেন্স
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে স্টিভ বালমার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে অবসর নেন, এবং তার সে জায়গা নেন তৎকালীন মাইক্রোসফটের ক্লাউড ও এন্টারপ্রাইজ বিভাগের প্রধান সত্য নাদেলা।[63] একই দিনে বিল গেটসকে প্রতিস্থাপিত করে জন ডব্লিউ থম্পসন চেয়ারম্যানের জায়গা নিয়ে নেন, এবং বিল গেটস তখন থেকে একজন প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।[64] মাইক্রোসফটের ইতিহাসে থম্পসন দ্বিতীয় কোন চেয়ারম্যান।[65] ২৫ এপ্রিল ২০১৪ মাইক্রোসফট ৭২০ কোটি ডলারে নকিয়ার যন্ত্র ও পরিষেবা বিভাগ কিনে নেয়। [66] নতুন এ অধিগ্রহণের নামকরণ করা হলো মাইক্রোসফট মোবাইল ওই। [67] ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে মাইক্রোসফট "মাইনক্রাফট"-খ্যাত গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠাতা মোজাং ২৫০ কোটি ডলারে কিনে নেয়।[68] ৮ জুন ২০১৭ সালে মাইক্রোসফট হেক্সাডাইট নামে একটি ইসরায়েলি নিরাপত্তা ফার্ম ১ কোটি টাকায় কিনে নেয়। [69][70]
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন জানায় যে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের নিরাপত্তার জন্য তারা তাদের সাইবার নিরাপত্তা পরিষেবা অ্যাকাউন্টগার্ড জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেনসহ ১২টি নতুন বাজারে প্রদান করবে।[71]
২৬ মার্চ ২০২০ সালে মাইক্রোসফট ঘোষণা দেয় যে তারা অ্যাফার্মড নেটওয়ার্কডস ১৩৫ কোটি টাকায় কিনে নিচ্ছে। [72][73]
২০১৯–২০ করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর জন্য মাইক্রোসফট ১৭ মার্চ ২০২০ সালে ঘোষণা দেয় যে তারা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সমস্ত খুচরা দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে। [74]
করপোরেট পরিচয়
পরিচালনা পর্ষদ
পাবলিক কোম্পানির বিধিমোতাবেক কোম্পানিটি বহিরাগত পরিচালকদের সমন্বয়ে তৈরী একটি পরিচালনা পর্ষদ দ্ধারা পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের মে মাস অনুযায়ী এ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, সত্য নাদেলা, রিড হফম্যান, হিউ জনসন, টেরি লিস্ট-স্টল, পিটারসন, শার্ফ, জন ডব্লিউ থম্পসন, জন ডব্লিউ স্ট্যান্টন, পাডমাশ্রি ওয়ারিয়রসহ অনেকে। [75] প্রত্যাকবছর বার্ষিক শেয়ারধারীদের মিটিঙে সংখ্যাগুরু ভোট পদ্ধতিতে পর্ষদের সদস্যদের নির্বাচিত করা হয়। পর্ষদের মধ্যে আরও নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য পাঁচটি কমিটি রয়েছে, অডিট কমিটি, বেতনভাতা কমিটি, অর্থায়ন কমিটি, এবং শাসন ও মনোনীতকরণ কমিটি। [76] ১৩ মার্চ ২০২০ সালে গেটস ঘোষণা দেয় যে তিনি তার তথাকথিত মানব-হিতৈষী কাজের জন্য পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করছেন।
উল্লেখযোগ্য বিপনী বিতানসমূহ
২৬ অক্টোবর ২০১৫ কোম্পানিটি তাদের প্রথম খুচরা বিক্রির জায়গা নিউ ইয়র্ক শহরের ফিফথ এভিনিউতে খুলে। জায়গাটির মোট আয়তন ২২,২৭০ বর্গ ফুট।[77] কোম্পানির নির্বাহীদের মতে মাইক্রোসফট ২০০৯ সাল থেকে খুচরা বিক্রির জন্য এমন উপযুক্ত একটা জায়গা খুঁজছিলো। [78] এ খুচরা বিক্রির দোকানগুলো কোম্পানিটির ভোক্তার সাথে আরও গভীরতম সম্পর্ক তৈরীর বড় পরিকল্পনার একটি অংশ। ১২ নভেম্বর ২০১৫ সালে মাইক্রোসফট সিডনির পিট স্ট্রিট মলে তাদের দ্বিতীয় এমন বিপনী বিতান খুলে।[79]
চাকরিচ্যুতিকরণ
জুলাই ২০১৪ সালে মাইক্রোসফট ঘোষণা দেয় যে তারা ১৮,০০০ কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫ জুন ২০১৪ অনুযায়ী মাইক্রোসফট সর্বমোট ১,২৭,১০৪ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে, এবং যার ফলে এ ১৪% শতাংশ কর্মী ছাটাই মাইক্রোসফটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, যার মধ্যে ১২,৫০০ বৃত্তিমূলক ও কারখানার কর্মিবৃন্দ রয়েছেন। এর আগে ২০০৯ সালে ২০০৮-২০১৭ এর মহামন্দার সময় মাইক্রোসফট ৫,৮০০ কর্মী ছাটাই করে।[80][81] সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে মাইক্রোসফট ২,১০০ কর্মী ছাটাই করে, যার মধ্যে এর সদরদপ্তরে কর্মরত ৭৪৭ কর্মীও ছিলো। এ ছাটাই পূর্বের ঘোষণাকৃত ছাটাইয়ের দ্বিতীয় পর্যায় ছিলো, যেটা মোট প্রত্যাশিত সংখ্যার ১৮,০০০ থেকে ১৫,০০০ এসে পৌঁছালো। অক্টোবর ২০১৪ সালে মাইক্রোসফট প্রকাশ করে যে তারা তাদের ১৮,০০০ কর্মী ছাটাইয়ে পরিপূর্ণ সফল হয়েছে। [82] জুলাই ২০১৫ সালে মাইক্রোসফট আবারও পরের কয়েক মাসে ৭,৮০০ কর্মী ছাটাইয়ের ঘোষণা দেয়। [83] মে ২০১৬ সালে মাইক্রোসফট আবারও ১,৮৫০ কর্মী ছাটাইয়ের কথা জানায়, যার অধিকাংশই তাদের (নকিয়া) মোবাইল বিভাগে কর্মরত।
সদরদপ্তরসমূহ
মাইক্রোসফটের সদরদপ্তরসমূহ যেগুলো অনেকের কাছে মাইক্রোসফট রেডমন্ড ক্যাম্পাস নামে পরিচিত, রেডমন্ড, ওয়াশিংটনের ওয়ান মাইক্রোসফট ওয়েতে অবস্থিত। মাইক্রোসফট প্রথম ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসের এ জায়গায় স্থানান্তরিত হয়, সেসময় থেকে ক্যাম্পাসটিকে কয়েকবার সম্প্রসারিত করা হয়। বর্তমানে ক্যাম্পাসটির মোট আয়তন ৮০ লাখ ফুট২ (৭৫০,০০০ মিটার২), যেখানে প্রায় ৩০,০০০-৪০,০০০ কর্মচারী কর্মরত রয়েছে।[84] অন্য অপিসসমূহ বেলভিউ ও ইসাকোয়াহয় অবস্থিত (বিশ্বব্যাপী যেখানে ৯০,০০০ কর্মচারী কর্মরত রয়েছে)। কোম্পানিটি তার মাউন্টেন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাসকে বিশাল মাপে পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে। এ ক্যাম্পাসটি ১৯৮১ সাল থেকে মাইক্রোসফটের মালিকানায় রয়েছে। ২০১৬ সালে মাইক্রোসফট ৩২ একর ক্যাম্পাসটি কিনে নেয়।[85] মাইক্রোসফটের চার্লোট, উত্তর ক্যালোরিনায়ও একটি ক্যাম্পাস রয়েছে। [86]
লোগো
- ১৯৮২-১৯৮৭: ১৯৮২ সালে তৃতীয় মাইক্রোসফটের লোগো
- ১৯৮৭–২০১২: মাইক্রোসফটের তথাকথিত "প্যাক-ম্যান" লোগো
- ২০১২–বর্তমান: পঞ্চম মাইক্রোসফট লোগো[87]
স্পন্সরশিপ
কোম্পানিটি ইউরোবাস্কেট ২০১৫-তে ফিনল্যান্ডের জাতীয় বাস্কেটবল দলের প্রাতিষ্ঠানিক স্পন্সার ছিলো।
জনহিতৈষণা
২০১৮-১৯ করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর সময় মাইক্রোসফট ঘোষণা দেয় ১৫,০০০ সুরক্ষা গগলস, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, সুরক্ষা স্যুট ও মেডিকেল কেপ সিয়াটলে বিনামূল্যে বিতরন করা হয়েছে এবং জানানো হয় ভবিষ্যতে আরও বিতরন করা হবে। [88]
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.