Loading AI tools
ভারতীয় উপমহাদেশের জ়রথুষ্ট্রীয় সম্প্রদায় যারা পারস্য অভিবাসীদের থেকে এসেছে উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পারসি বা পারসী (ইংরেজি উচ্চারণ: /ˈpɑrsiː/ (অসমর্থিত টেমপ্লেট); গুজরাতি : પારસી Pārsī) ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী দুটি বৃহত্তর জরথুস্ট্রীয় সম্প্রদায়ের অন্যতম। লোকবিশ্বাস অনুসারে এরা প্রায় ১০০০ বছর আগে ইরান থেকে পশ্চিম ভারতে এসেছিল। ৬৩৩-৬৫৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পারস্য মুসলিম খিলাফতে অন্তর্ভুক্ত হলে,তারা পারস্য থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে পাড়ি জমায়। পারসিদের জাতিগত ধর্ম জরথুষ্ট্রবাদ। কুইসা-ই সান্জান অনুসারে, পারসিরা সাসানীয় সাম্রাজ্য থেকে গুজরাতে চলে এসেছিল। যেখানে মুসলিম বিজয়ের পর তাড়না থেকে বাঁচাতে তাদেরকে সা.কা. ৮ ম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। পার্সী শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে উদ্ভূত এবং আক্ষরিক অর্থে 'ফার্সি' উচ্চারণ করা হয়। (Persian language#New Standard Persian: پارسیان, 'Pārsiān' – i.e. 'Pārsi').[1])। পারসিক ভাষাকে স্থানীয়ভাবে 'ফার্সি' বলা হয়,যা পার্সী শব্দের আরবিক রূপ। ইরান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান এবং প্রাক্তন পারস্য সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলগুলিতে ভাষাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই নিবন্ধটিকে উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে এর বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। (এপ্রিল ২০২১) |
ঐতিহ্যবাহী পোশাকে আধুনিক মুম্বাইয়ের পারসি পরিবার | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
---|---|
ভারত | 70% |
Pakistan | .0017% |
in the diaspora | 27% |
ভাষা | |
গুজরাটি, ইংরেজি | |
ধর্ম | |
জরাথুস্ট্রবাদ |
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুসারে, পার্সী পার্সী পুরোহিতগণ জোরোস্টা ভারতে তাদের কিছু অনুগামীদের তাদের জরথুষ্ট্রবাদ ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন। পারসিকরা, "পার্সিয়ান", পারসিরা জরথুষ্ট্র থেকে আগত যারা মুসলমানদের দ্বারা ধর্মীয় নিপীড়ন এড়াতে ভারতে চলে এসেছিল। তারা মূলত মুম্বাই এবং বেশিরভাগ মুম্বাইয়ের দক্ষিণে কয়েকটি শহর এবং গ্রামে বাস করে। তবে করাচি (পাকিস্তান) এবং চেন্নাইয়ের নিকটবর্তী কয়েকটি অঞ্চলে তারা সংখ্যালঘু হিসেবে বাস করে। বেঙ্গালুরুতে, পুনেতেও পারসিদের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে। কয়েকটি পার্সী পরিবার কলকাতা এবং হায়দরাবাদেও বাস করে।[2] যদিও সঠিকভাবে বলতে গেলে, পারসিরা একটি নির্দিষ্ট বর্ণ নয়, যেহেতু তারা হিন্দু নয়। তারা একটি সুস্পষ্ট সংজ্ঞায়িত আলাদা সম্প্রদায় গঠন করে। পারসিরাদের স্থানান্তরের ঘটনার সঠিক তারিখ অজানা।ঐতিহাসিকভাবে, পারসিরা প্রথমে পারস্য উপসাগর হরমুজে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিল। তবে তারা মুসলিমদের পারস্য বিজয়কালে আতঙ্কিত হয়ে ৮ম শতাব্দীতে ভারতের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, দশম শতাব্দীর শেষের দিকে অথবা উভয় শতাব্দীতে স্থানান্তরের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তারা প্রথমে Diu Kathiawar এ বাস করা শুরু করে, তবে সেখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা দক্ষিণ গুজরাটে চলে যায়। যেখানে তারা একটি ক্ষুদ্র কৃষিজীবী জনগোষ্ঠী হিসেবে প্রায় ৮০০ বছর ধরে টিকে আছে।[2]
প্রাচীন পারস্যে ঋষি জরথ্রুষ্ট ধর্মীয় মত প্রচার করেন যে জগতে শুভ এবং অশুভ দুই শক্তির বিচরণ রয়েছে। এই দুই শক্তি ক্ষমতা ও বলে একে অপরের সমকক্ষ । কিন্তু এরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দী এবং সর্বদা লড়াই এ লিপ্ত। প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব শুভ শক্তির বা আলোর পথে আসা এবং অশুভ শক্তির কুমন্ত্রনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা । জীবদ্দশায় মানুষ যে পথ অনুসরণ করবে মৃত্যুর পর সেই অনুযায়ী তাঁর গন্তব্য নির্ধারিত হবে। যারা আশা বা সৎ ও সত্যের পথ অনুসারী্ তাঁদের ঠিকানা হবে স্বর্গে। দ্রুজ বা অসৎ অশুভ পথ অবলম্বনকারির ঠাই হবে নরকে। বাকীরা দুইয়ের মাঝামাঝি স্থান হামিস্তাগান -এ অধিষ্ঠিত হবেন। বিচার কর্য পরিচালিত হবে চিনভত নামক এক সেতুর উপর এবং বিচার কারয পরিচালনা করবে একটি তরবারি। ফলাফল প্রাপ্ত ম্রত মৃত ব্যক্তি ও তাঁর আত্মা একত্রে প্রবেশ করবেন নিজেদের গন্ত্যবে, যেখানে অতিবাহিত হবে মৃত্যু পরবর্তী বাকী জীবন । তবে এই ভাবে অনন্তকাল অতিবাহিত হবে না । একদিন শুভ ও অশুভ শক্তির চূড়ান্ত সংঘাত ও মহাপ্রলয়ের মধ্য দিয়ে জগত সংসারের ইতি ঘটবে । এরপর সকল পুনর্জীবিত সকল মানুষ শাশ্বত স্বর্গে প্রবেশ করবেন, যদিও তাঁর আগে তাঁদের একটি অগ্নি নদ অতিক্রম করতে হবে, যেখানে সকল পাপ দগ্ধ হয়ে খন্ডিত হবে। জরথ্রুস্ট ধর্মের প্রবিত্র গ্রন্থের নাম আবেস্তা ।এটি আবেস্তা ভাষায় রচিত, যার সাথে বেদ গ্রন্থে ব্যবহত সংস্কৃত ভাষার সাদৃশ্য আছে।
ভারতে আগমনের পরবর্তীকালে পার্সি সম্প্রদায়ের জীবন ও অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তা জানার একমাত্র সুত্র কিসসা এ সানজান নামক গ্রন্থটি । তৎকালীন সময়ে পার্সি জীবন বৃতান্তের অন্য কোনও উৎসের খোঁজ মেলে না। জরথ্রুষ্টদের ভারত আগমনের অন্তত ছয়শ বছর পরে রচিত কিসসা এ সানজান গ্রন্থটি । গ্রন্থটির ভাষ্য মতে জরথ্রুষ্ট ধর্মানুসারীদের যে গোষ্ঠীটি সর্ব প্রথম ভারতে এসেছিল তাঁদের আদি নিবাস স্থল ছিল মধ্য এশিয়ার বৃহত্তর খোরাসান অঞ্চলে। ইতিহাস খ্যাত খোরাসান অঞ্চলটির ভৌগোলিক ব্যাপ্তি বিশাল । কয়েকটি রাষ্ট্র জুড়ে এর ব্যপ্তি । তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের অংশবিশেষ সহ এটি ইরান ও আধুনিক আফগানিস্তান রাষ্ট্রের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত । বর্তমান ইরানের অন্তর্গত অংশটি খোরাশান প্রদেশ নামেই পরিচিত ।
কিসসা এ সানজান গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী জাদি রানা নামক একজন ভারতীয় শাসক ভারতে আগত জরথ্রুষ্ট গোষ্ঠিটি কে নিজ রাজ্যে বসবাসের অনুমতি দেন। তবে তাঁর বিনিময়ে তাঁদেরকে ঐ রাজ্যের প্রচলিত ভাষা এবং (নারীদের ক্ষ্রেত্রে)পোশাক পরিচ্ছেদ (শাড়ী) .[৪২] গ্রহণ করতে বলা হয় । প্রদত্ত শর্ত দুটি মেনে নিয়ে গোষ্ঠিটি ভারতে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করে। তাঁদের এই বসতিই পরবর্তীতে সানজান নামক জনপদে পরিণত হয়। বলা হয় পারস্যে নিজেদের আদিনিবাসস্থল সানজান নগর এর নামানুসারে তাঁরা এই বসতির নামকরণ করেন। ইতিহাসের প্রাচীন সেই সানজান নগর বর্তমানে তুর্কমেনিস্তান রাষ্ট্রের মারভ নামক অঞ্চল এর সংলগ্ন।এরও প্রায় পাঁচ বছর পর ইরানের বৃহৎতর খোরাশান অঞ্চল থেকেই জরথ্রুষ্ট দের আরও একটি গোষ্ঠি ভারতেবর্ষে আগমন করে। এই গোষ্ঠিটি নিজেদের সঙ্গে সাথে কিছু ধর্মীয় উপকরণ (আলাত) ও নিয়ে এসেছিল । এই দুই গোষ্ঠী কে অনেকসময় একত্রে খোরাস্তানী বা কোহিস্তানি বলে ডাকা হত, যার অর্থ পাহাড়ী। এঁদের পরেও ইরানের সারি অঞ্চল থেকে জরথ্রুষ্ট দের আরও একটি গোষ্ঠি ভারতে এসেছি বলে জানা যায়।
ধারণা করা হয় সানজান জনপদ স্থাপনাকারী জরথ্রুষ্ট ঐ গোষ্ঠিটিই ভারতের প্রথম স্থায়ী জরথ্রুষ্ট অভিবাসী । তবে তাঁদের আগমনের সময়কাল নিয়ে মতভেদ আছে। কোনও নির্ভর যোগ্য তথ্যসূত্র না থাকায়, ঐতিহাসিকেরা কিসসা-এ-সানজান - গ্রন্থে বর্ণিত ঘটনাবলী থেকেই আগমনের সময়কাল নির্ণয় করার প্রয়াস করেন। কিসসা এ সানজান এ বর্ণিত অনেক ঘটনার সময়কাল অস্পষ্ট হওয়ায় এবং উল্লেখিত অনেক তারিখে অসঙ্গতি থাকায়, ঐতিহাসিকেরা কোনও তারিখকেই নির্ভুল দাবী করতে পারছেন না।ঐতিহাসিকেরা ধারণা করছেন সানজান অভিবাসীদের আগমনের তিনটি সম্ভাব্য তারিখ থাকতে পারে- যেগুলো হলঃ ৭১৬, ৭৬৫ এবং ৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ। তাঁরা এই তিনটির মধ্যে যে কোনো একটি তে এসে থাকবেন।আগমনের তারিখ নিয়ে এহেন মতভেদ পার্সি সমাজেও তুমুল বাক বিতন্ডা এমনকি লড়াই সৃষ্টি করেছে। তবে শেষ কথা হল এই যে ১৮ শতকের পূর্বে রচিত পার্সি কোনও লেখাতেই সাল তারিখ উল্লেখ নেই, তাই তারিখ নিয়ে কোনও দাবীই সন্দেহাতীত নয় যে যাই দাবী করুক না কেন, সবগুলোই প্রকৃতপক্ষে অনুমান ভিত্তিক। যদি আমরা মেনেও নেই যে কিসসা মূলত কল্পনামিশ্রিত কিছু উপগাথার সংকলন যা মৌখিকভাবে পার্সিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহন করে আসছেন, তবুও ইতিহাস চর্চা ও অনুসন্ধানে এই গ্রন্থটির ভূমিকা কোনও ভাবেই খাটো করে দেখবার উপায় নেই। কেননা উপ্যাখানগুলো কল্পনামিশ্রিত হলেও নিঃসন্দেহে এগুলো পারসি সমাজের মুল্যবোধ, সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গি এবং নিজস্ব চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটায়। ভারতীয় সমাজে তাঁদের এবং তাঁদের ধর্মের আপেক্ষিক অবস্থান ও মর্যাদার ও ধারণা পাওয়া যায় বহু শতাব্দী পূর্বে রচিত এই কাহিনী গুলো থেকে।
সূনিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে সানজান অধিবাসীদের পুরবেও বিভিন্ন সময়ে উপমহাদেশে জরথ্রুষ্টদের আগমন ঘটেছিল ও পদচারনা ছিল। ইরান বিশ্ব বা পারস্যের সর্ব পূর্ব সীমান্তে আছে বালোচিস্তান প্রদেশ। আর বালোচিস্তান প্রদেশ ঘেঁষে অবস্থিত সিন্ধু উপ্যতাকা। এই সিন্ধু প্রদেশ ও কিছু কাল ইরান পারস্যের শাসক দের এর শাসনাধীন ছিল। সেই সময়টাই পারস্যে সাসানিদ সাম্রাজ্যের (২২৬-৬৫ খ্রিস্টাব্দ) অধীনে। ফলত সাসানিদ সাম্রাজ্যের বহু সামরিক প্রতিনিধি ও শিবির ছিল সিন্ধু প্রদেশএ।সিন্ধু প্রদেশ হাতছাড়া হবার পরও ইরানীদের প্রতিপত্তি ও প্রভাব ফুরিয়ে যায় নি সিন্ধ প্রদেশে। ইরান ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় নি। নবম শতাব্দীর আরব ইতিহাসবিদ আল-মাসুদির গ্রন্থে জরথ্রুষ্ট সম্প্রদায়ের ভারতে বসবাসের অবস্থানের সংক্ষিপ্ত উল্লেখ পাওয়া যায় । তিনি উল্লেখ করেন যে আল-হিন্দ ও আল-সিন্ধ এ এই ধর্মনুসারীদের অগ্নি মন্দির ছিল। দ্বাদশ ও ক্রয়োদশ শতাব্দী তেও জনা কয়েক পার্সি ব্যক্তিদের সিন্ধ প্রদেশে বসবাসের প্রমাণ মেলে।তবে বর্তমানে যে পার্সি সম্প্রদায় টি সিন্ধ এ অঞ্চলে এ বাস করেন তাঁরা তাঁদের আগমন অনেক পরে, সম্ভবত ব্রিটিশদের আগমনের সময় থেকে। প্রাচীন ভারতবরষ ও পারস্যের মধ্যে বাণিজ্য চলত, সমুদ্র পথ ও স্থল পথে। খ্রিষ্টের জন্মের অনেক পূর্ব থেকেই ইরান ও ভারত মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় যোগাযোগ ছিল। হিন্দু পুরাণ ও মহাভারতে সিন্ধু নদের পশ্চিমের অধিবাসীদের অভিহিত করা হয়েছে পারসিক নামে।
পারস্যে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সুপ্রাচীন জরথ্রুষ্ট ধর্ম হুমকির মুখে পরে। নিজ ধর্মের অস্তিত টিকিয়ে রাখতে রাখার তাগিদে জরথ্রুষ্ট ধর্মানুসারীগণ মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হন। অন্তত পার্সি উপগাথাগুলো তে এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে তাঁদের পুরবপুরুষের দেশান্তরের কাহিনী। বিভিন্ন তারিখ পরযালোচনা করে দেখা যায় যে ইরান এ আরব আগ্রাসন এর পরপরই ভারতের পশ্চিম তীরবর্তী তটে পার্সিরা বসতি গুলো গড়ে উঠে । কিন্ত তা স্বত্বেও এতে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয় না যে আরবদের আগ্রাসনই পার্সিদের দেশান্তরের জন্য পেছনে দায়ী। কেননা যদি প্রচলিত মতবাদ সঠিক হয়ে থাকে হয় তবে পার্সিরা ভারতে স্থায়ী হয়েছিলেন ৮ম শতাব্দীতে, অথচ সেই সময় পর্যন্ত জরথ্রুষ্টই পারস্যের প্রধান বা মুখ্য ধর্ম ছিল । তবে কি অন্য কোনও ঘটনা দায়ী ছিল তাঁদের দেশান্তর এর পেছনে? উন্নত জীবিকার সন্ধানে তাঁরা দেশান্তরী হয়ে থাকতে পারেন এমন সম্ভাবনা রয়েছে ।যদি মধ্য এশিয়া তাঁদের এই গোষ্ঠির আদি-নিবাস হয়ে থাকে (যেমনটা বলা আছে কিসসা তে) তবে এই সম্ভাবনা আরো প্রবল। তবে বাস্তবতা যাই হোক না কেন, ১৭দশ শতাব্দী তে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চ্যাপলিন হেনরি লর্ড মত প্রকাশ করেন যে পার্সিরা চেতনার বিকাশ ও উন্মুক্তির খোঁজে ভারতগামী হয়েছিল । কিন্ত একই সাথে তিনি এও মন্তব্য করেন যে , “ জাত ব্যাবসায়ী পার্সিরা ব্যাবসা বাণিজ্য পরিচালনার সুত্রে ভারত অভিমুখী হয়েছিলেন।মুসলিম সাম্রাজ্যে অমুসলিম ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত শুল্ক উসুল আদায় করা হত বিভিন্ন মুসলমানদের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন বন্দর গুলো তে। এবং অনেকের মতে এই ধরনের বেষ্যম মূলক আচরণ নিষ্পেষণ এর পর্যায়ে পরে। তবে শুধুমাত্র এই একটি কারণেই একটি জাতি দেশান্তরী হয়েছিলেন তাঁর সম্ভাবনা ক্ষীণ ।
১৭ শতকের গোড়ার দিকে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস এর মধ্যে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়।এই চুক্তি দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুরাট ও অন্যান্য অঞ্চলে বসবাস করার ও কলকারখানা স্থাপনার একচ্ছত্র অধিকার হাসিল করে। ফলে ঐ অঞ্চলগুলিতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরী হয় । সেই সময় পার্সিরা গুজরাটের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন এবং মূলত কৃষির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্ত এই চুক্তি ইংরেজ পরিচালিত সুরাট ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে । জীবিকার সন্ধানে বহু পার্সি পূর্বের জীবন ছেড়ে সুরাট ও সংলগ্ন অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন।বহু বছর পর, ১৬৬৮ সালে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের কাছ থেকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বোম্বের সাতটি দ্বীপ ইজারা হিসেবে নেয় । দ্বীপগুলোর পূর্ব তটে তাঁরা একটি পোতাশ্রয়ের সন্ধানও পায়, যা নৌ বন্দর গড়বার জন্য উপযুক্ত। উপমহাদেশে নিজেদের প্রথম সমুদ্র বন্দর স্থাপনার জন্য তাই বোম্বেকেই মনোনীত করে তাঁরা।পরিণামে ১৬৮৭ সালে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাঁদের সদর দফতর সুরাট থেকে বোম্বে্তে স্থানান্তর করে। সদর দফতর স্থানান্তরের সাথে সাথে সুরাট ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কর্মরত পার্সিরা সুরাট ছেড়ে বোম্বে চলে আসতে শুরু করেন ।অচিরেই তারা শাসকদের আস্থা অর্জন করে সরকা্র ও জনসেবা সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত পদেগুলোতে নিয়োগ পেতে শুরু করেন।
একসময় পার্সি সমাজে শিক্ষা গ্রহণ ও জ্ঞান চর্চা শুধুমাত্র পুরোহিত ও ধর্মযাজক শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ব্রিটিশ পরিচালিত স্কুলগুলোতে প্রথমবারের মত পার্সি সমাজের সাধারণ তরুণরাও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান। লিখতে ও পড়তে শেখার পাশাপাশি তাঁরা সত্যিকার অর্থে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পান।ব্রিটিশ সভত্যা ও সংস্কৃতির সাথেও তাঁদের পরিচয় ঘটে। ফলে তাঁরা নিজেদের আধুনিক ও ‘ব্রিটিশ’ ঢঙে গড়ে তুলতে শুরু করেন। নিজেদেরকে তাঁরা “ব্রিটিশদের মতই একটি জাতি” হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করেন, এবং নিঃসন্দেহে ব্রিটিশদের অনুসরণ ও অনুকরনে তাঁরা “উপমহাদেশের অন্যান্য সকল জাতির চেয়ে বেশি সফল ছিলেন।“।এর সুফলও তাঁরা পেয়েছিলেন। উপমহাদেশের অন্যান্য জাতিগুলোকে যেখানে ব্রিটিশরা অনেকটাই অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখতেন ও তাঁদের সমন্ধে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন, সেখানে পার্সিদের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। বিট্রিশদের মতে সাধারণ ভারতীয়রা ছিলেন, “অলস, অজ্ঞ, অযৌক্তিক, ও নতমস্তক তবে অন্তরে স্পর্ধা পোষণকারী”। কিন্তপারসিদের সাথে নিজদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করেন তাঁরা । তাঁদের ভেতরে এমন কিছু গুনাবলী খুঁজে পান যা নিজেদের ভেতরেও বিদ্যমান। জোহান অ্যালব্রেক্ট ডি ম্যান্ডেলস্লো পার্সিদের আখ্যায়িত করেন পরিশ্রমী “নিষ্ঠাবান”, বিবেকসম্পন্ন ও তুখোড় ব্যাবসায়ী” একটি জাতি হিসেবে যারা বাণিজ্যে অগ্রগতি করার ব্যাপারে সদা তৎপর। জেমস ম্যকিন্টশের পর্যবেক্ষণেও ফুটে উঠে একই সুর, “ভারতের পার্সি সম্প্রদায় পৃথিবীর একদা পরাক্রমশালী একটি জাতির বংশধর যারা হাজার বছর পূর্বে নিষ্পেষণ ও অত্যাচার থেকে পালিয়ে ভারতবর্ষে এসে বসতি গেড়েছিলেন । বহু শতাব্দী দারিদ্রতা আর অবহেলার চাদরে ঢাকা পড়ে থাকার পর অবশেষে তাঁরা নিজেদের যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছেন বর্তমান শাসকদের দ্বারা। কাছে। এই শাসক দের অধীনে তাঁরা দ্রুত এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ী শ্রেণীর একটি হয়ে উঠতে পেরেছেন।"
এমন সফল ব্যাবসায়ীদের মধ্যে ছিলেন উদ্যমী এক এজেন্ট যার নাম রুস্তম মানেক ।১৭০২ সালে তিনি ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম ব্রোকার হিসেবে নিয়োগ পান। তাকে তিনিই কোম্পানীর প্রথম ব্রোকার।এ কারনে তাঁকে শেঠ উপাধি দেওয়া হয়। অবশ্য এই পদে যোগ দেওয়ার পূর্বেই, ওলন্দাজ ও পর্তুগিজ শাসনামলে মানেক নিজের অবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধন তিনি এবং আর্থিক যথেষ্ট সম্পদ ও সাফল্য অর্জন করেন। অঢেল সম্পত্তির মালিক হন। বিস্তর টাকা কড়ি / ছিলেন। তিনি, ও এবং তার কিছু সহযোগীদের বদৌলতে / কল্যানে পার্সি সমাজের বহু লোক ব্যাক্তি কর্ম সংস্থানের সুযোগ পান । ফলে বছর খানেকের ভেতরে / কিছু কয়েক বছরে পার্সি সমাজের পেশাগত ও অরথন্তিক উন্নতির উওরণ নতুন ্নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়।নতুন মাত্রা এবং নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি অবস্থায় পরিবর্তন আনতে সফলকাম / সক্ষম হন । ব্রোকারি সংক্রান্ত পেশা ও পদে গুলোতে পাসিদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে । ১৭৫০ নাগাদ বোম্বে প্রেসিডেন্সি প্রদেশের অন্তরভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস গুলো তে ছিল তাঁদেরই একছত্র আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়।ব্রোচ(বর্তমানে ভরুচ) অঞ্চলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কালেক্টর পদে নিযুক্ত জেমস ফোরবস তাঁর রচিত অরিয়েন্টাল মেমোয়ার্স (১৭৭০) গ্রন্থে লেখেনঃ “বোম্বে ও সুরাট অঞ্চলের মুখ্য বিশিষ্ট প্রথম সারীর ব্যাবসায়ী ও জাহাজ মালিকদের তালিকয় অনেকেই পার্সি।”“ শক্ত সমর্থ, কর্মতৎপর, সৎ এবং অধ্যাবসায়ী এই জাতিটি নিঃসন্দেহে কোম্পানির গর্ব ও জন্য বড় সম্পদ। হিন্দুস্তানের পশ্চিম তটের বহু জাতির মধ্যে তাঁরা অনন্য তাঁরা কোম্পানির গর্ব এবং আপন নিজ সমাজেও যথেষ্ট সমাদৃত।””অষ্টাদশ শতাব্দীতে চীন এবং ভারতের মধ্যে জলপথে বাণিজ্য শুরু হয়। জাহাজ নির্মাণে পারদর্শিতা ও তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক বুদ্ধি কে পুঁজি করে থাকায় দরুণ আবারো পার্সি রা এই বাণিজ্যে বণিক দ্রুত সাফল্যের মুখ দেখেন। মূলত কাঠ, সিল্ক, তুলা ও আফিমের জনপ্রিয়তা ছিল বেশি। ব্যবসা বাণিজ্য চলত বেশি। আফিম ও তুলার সওদায়ী করে জামশেতজি জেজিভয় নামক এক পার্সি ব্যাবসায়ী বণিক কে দ্রুত সাফল্য এনে দেয় ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন। ভারত চীন নৌ পথে বাণিজ্যে করে বহু পার্সি পরিবার ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন । শুধু অর্থ সম্পতিই নয় সমাজে তাঁদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি ও বাড়তে থাকে। এক সময়ে তাঁরা নজরে আসতে শুরু করেন সোরাবজি, মোদী, কামা, ওড়িয়া, জিজিভোয়, রেডমনি, দাদিসেথ, পেটিট, প্যাটেল, মেহতা, অলিব্লাস, টাটা ও প্রমুখ পরিবার গুলো ।
বোম্বে শহরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পার্সি সমাজের যে ধরনের অবকাঠামো কাঠামো ও সহায়তার প্রয়োজন ছিল তার অনেকটাই মানেক তাঁর বদান্যতা দিয়ে তৈরি করে দিয়ে যান স্বীয় প্রচেষ্টা ও আর্থিক সহায়তায় । ১৭২০ এর দশকে পার্সি সমাজের জীবন ও জীবিকার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে জায়গা করে নেয় বোম্বে শহর উথিত হয়ে ওঠে। এদিকে ১৭২০ ও ১৭৩০ এর দশকে সুরাট অঞ্চল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। এর কারন সুরাট অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা মোঘল প্রশাসকদের (অবশিষ্ট) সাথে ক্রমশ পরাক্রমশালী হতে থাকা মারাঠা জাতি প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও বিরোধ । এর ফলেও বহু পার্সি পরিবার সুরাট ত্যাগ করে বোম্বে চলে আসেন ।যেখানে ১৭০০ সালে “শহরের বণিকে ও ব্যাবসায়ীদের নাম তালিকায় মুষ্টিমেয় কিছু পার্সি ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়, সেখানেই, মাত্র ৫০ বছরের ব্যাবধানে, পার্সি ব্যাবসায়ীরা শহরে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান অংশ হয়ে দাঁড়ান।“ রুস্তম মানেকই পার্সি সমাজের প্রথম ব্যাক্তি যার দানশীলতা ও বদান্যতার লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় ।তিনি ও তার পরিবারের দ্অয়া দাক্ষিণ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় এংলিক্যান খ্রিস্ট প্রতিষ্ঠানের যাজক জন অভিংটনে’র বর্ণনায়ঃ “পরিবারটি এতটাই দানশীল যে এংলিক্যান খ্রিস্ট প্রতিষ্ঠানের যাজক জন অভিংটন এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, “এই পরিবার টি প্রচন্ড সহানুভূতিশীল ও দারিদ্রের সাহায্যে সদা প্রস্তুত। দরিদ্রের সহায়তায় করতে সদা প্রস্তুত। তাঁরা কর্মক্ষম ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন ও অক্ষম ব্যক্তির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন । এই ভাবে নিজ সমাজে দুঃখ-দুর্দশা ও অভাব কে চিরতরে সম্পূর্ণ রুপে নির্মূল করেছেন।”
পার্সি সম্প্রদায় দ্বারা অনুসৃত জরথ্রুষ্ট ধর্মের প্রধান আনুষ্ঠানিকতাগুলো হলঃ- শুদ্ধতা ও অশুচিতা্র বিধান (নাসু), দীক্ষা (নাভজোট), দৈনিক প্রার্থনা, অগ্নি মন্দিরে উপাসনা, বিবাহ, অন্তিম সংস্কার এবং সার্বিক ধর্মীয় উপাসনা।
জরথ্রুষ্ট ধর্মে শুদ্ধতা বা শুচিতা কে পবিত্র ও শুভ বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে অশুদ্ধতা বা অশুচিতাকে মনে করা হয় অপবিত্র এবং অশুভ। তাই শুদ্ধতা বা শুচিতাই বজিয়ে রাখাই পরম ধর্ম । অন্যদিকে দূষণ, অপরিচ্ছন্নতা ও অশুচিতা পবিত্র জীবন যাপনের পথে প্রধান অন্তরায় । অশুচিতা বরাবরই পবিত্রকা ধবুংসের ও নির্মূল এর চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। ম্রতুর মাধ্যমে অপবিত্র বা অশুভ শক্তির জয় হয় । জরথ্রুষ্টরা বিশ্বাস করেন ঈশ্বর দেহকে সৃষ্টি করেছেন শুদ্ধ ও পবিত্র রুপে। তাই তাঁরা আমতু দেহের পরিশুদ্ধি তথা পবিত্র তা বজিয়ে রাখায় সচেষ্ট থাকেন। জরথ্রুষ্ট ধর্মের পুরোহিতেরাও পবিত্র জীবন যাপনে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখেন। জীবনকে উৎসর্গ করেন। আত্মার পরিশুদ্ধি
নভজ্যোতে একটি ধর্মীয় প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জরাথ্রুস্টিয়ান শিশু আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নিজ ধর্ম গ্রহণ করে এবং ধর্মীয় দীক্ষায় দীক্ষিত হয়। প্রক্রিয়াটি খ্রিষ্টীয়দের ব্যাপ্টিজম অনুষ্ঠান এর সাথে তুলনীয়, তবে ব্যাপ্টিজম এর মত এটি নবজাতকের উপর সম্পন্ন করা হয় না। কারণ হল নভজ্যোত প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হলে পুরোহিতের পাশাপাশি অংশ গ্রহণ কারী শিশুটিকেও মন্ত্র পাঠ করতে হয়। তাই বয়ঃসন্ধির প্রাক্কালই নভওজাত সম্পাদন কারার উপযুক্ত সময় । এতে অংশ নেবার যদিও নির্দিষ্ট কোনও বয়স নেই, , তবে স্বাবালকত্ব প্রাপ্তির পর নভজ্যোতে সম্পন্ন করার সূযোগ থাকে না।। সাত বছরের পর যেকোনো সময়কেই উপযোগী ধরা হয় । দীক্ষা গ্রহণ অনুষ্ঠানটি্র শুরুতে শিশুকে স্নান করানো হয়। তাঁর আত্মা পরিশুদ্ধির উদ্দেশ্যে একটি প্রার্থন মন্ত্রও পাঠ করা হয়। এরপর শিশুটি তাঁকে তাঁর পুরাতন পোশাক ছেড়ে সাদা রঙের পায়জামা, শাল ও ছোট আকারের একটি টুপি পরিধান করে নেয়। জরথ্রুষ্ট ধর্মের অতিপরিচিত দু ‘টি নিদর্শন -সুদ্র ও কুস্টি- তাকে উপহার দেওয়া হয়। সুদ্র ও কুস্টি যথাক্রমে একধরনের জামা ও সুতা, যাকে জরথ্রুষ্টরা পবিত্র মনে করেন । । যেহেতু আগুন ঈশ্বর এর প্রতিনিধি, তাই এই অনুষ্ঠান এ আগুন ও আনা হয়। ঈশ্বর এর প্রতিনিধি হিসেবে আগুন এনে রাখা হয়। শিশুটি পুরোহিত এর মুখোমুখি আসন গ্রহণ করলে পুরোহিত তাঁর যাবতীয় প্রার্থনা শুরু করেন। পুরোহিত এর প্রার্থনা পাঠ শেষ হলে নভজ্যোত অনুষ্ঠান টিও সমাপ্ত হয়। ঐ সেই মুহূর্ত থেকে শিশুটিকে নিজ জাতি ও ধর্মের একজন অনুসারী ও সদস্য হিসেবে গন্য করা হয় ।
পার্সি সম্প্রদায় বিবাহকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন । ঈশ্বরের প্রদত্ত সাম্রাজ্যর বিস্তার তাদের দ্বায়িত্ব বলে বিশ্বাস করেন এবং নিজেদের বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁরা এই বিস্তার এ ভূমিকা রাখতে পারবেন । যদি তাঁদের ধর্মে বাল্যবিবাহের বিধান বা বাধ্যবাধকতা নেই /না থাকলেও, পার্সি সমাজে বাল্যবিবাহের বহুল প্রচলন ছিল, বিংশ শতকের মাঝ অবধি পর্যন্ত এই প্রচলন টিকে ছিল। এরপর ভারতে সামাজিক সংস্কারের সুচনা শুরু হলে, পার্সিদের মধ্যে বাল্য বিবাহের প্রচলন উঠে যায়। হয়, যার ফলশ্রুতিতে সমাজে এখন বর্তমান যুগে বাল্যবিবাহের প্রকোপ না থাকলেও, পার্সি সমাজ দেখা দিয়েছে ভিন্ন এক সংকট - বিবাহ ইচ্ছুক পাত্রীর অভাব। এই অভাব দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। পার্সি সমাজে নারীর শিক্ষাগ্রহণের হার দ্রুত বাড়ছে । উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত পার্সি নারীরা ক্রমেই বিলম্বে বিবাহ করছেন এবং আবার অনেক ক্ষেত্রে বিয়ে করছেনই না। সমীক্ষা অনুযায়ী ৯৭% পার্সি নারী সুশিক্ষিত, ৪২ শতাংশ নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েছেন, আরও ২৯ % যুক্ত আছেন এমন পেশা বা বৃত্তিতে যার আয় সন্তোষজনক। পার্সিদের বিবাহ অনুষ্ঠানের কথা বলতে হলে নভজ্যোত অনুষ্ঠান এর সাথে তুলনা চলে আসে। কারণ দুটিরই সুচনা হয় একটি শুদ্ধিকরন স্নান দিয়ে।স্নান সেরে বর ও কনে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হন ফুল সজ্জিত একটি গাড়িতে চড়ে। অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের পুরোহিতও উপস্থিত থাকেন এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বর ও কনে কে মুখোমুখি বসানো হয় এবং কিন্তু একটি চাদর দিয়ে দুজনের মাঝখানে আড়াল রাখা হয়। দুজনের মাথার উপরএকটি উল সাত বার পাক খাওয়ানো হয় এবং তাঁদেরকে একটি বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়। এরপর বর কনে একে অপরের গা’য়ে চাল নিক্ষেপ করেন । এর প্রতীকী অর্থ একে অপরের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা। এসব কিছু শেষ হলে বিবাহ এর ধর্মীয় আচার গুলো শুরু হয়। বড় ও কনে পাশাপাশি আসন গ্রহণ করেন। এবং পুরোহিত তাঁদের মুখোমুখি হয়ে বসেন।
যেহেতু জরথুস্ত্র ধর্মমতে মৃতদেহকে দুষিত বা অবিশুধ অপবিত্র মনে করেন, তাই মৃতদেহের সংস্পর্শে এসে জাগতিক কোনো বস্তু যেন অশুচি ও অপবিত্র না হতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকেন পার্সিরা । তাঁদের বাড়িতে নির্দিষ্ট একটি কক্ষ বরাদ্দই থাকে রাখেন মৃতদেহ রাখান জন্য সংরক্ষিত । পরিবারের কেউ মারা গেলে তাঁর মরদেহকে ঐ ঘরে রাখা হয় সৎকারের পূর্ব পর্যন্ত। এই ঘরে রেখেই মৃত্যু পরবর্তী যাবতীয় সকল ধর্মীয় আচার সম্পন করা হয়। সৎকারের পূর্বে বাড়ীতে একজন পুরোহিত আসেন ।কে ডেকে আনা হয়। তিনি মৃতের পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে মন্ত্র পাঠ করেন। এবং মৃতের ধর্ম সত্যাপন করেন । জরথুস্ত্র ধরমের রীতি অনুযায়ী সেই ঘরে আগুন ও আনা হয়। এরপর শব দেহ কে স্নান করিয়ে ঐতিহ্যবাহী সুদ্র ও কুশতে বস্ত্রে মোড়ানো হয় । শবদেহ কে ঘিরে বৃত্তের আকারে একটি সীমা আঁকা হয় এবং স্মিয়া ।এবং মৃত্যু পরবর্তী যাবতীয় ধর্মীয় আচার ও অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। এরপর শবযাত্রা শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট স্বজন ও ধর্মীয় ব্যাক্তিরা যাত্রাকারীরা বিষিপ্ত বিক্ষিপ্ত ভাবে না হেঁটে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে জোড়ায় জোড়ায় অগ্রসর হন। তাঁরা এবং একটি সাদা বস্ত্র বহন করেন । তাঁদের সঙ্গী হয় একটি থাকে কুকুর কেননা জরথুস্ত্র মতে কুকুর মৃত্যু কে দেখতে সক্ষম । শব দেহটির অন্তিম ঠাই হয় টাওয়ার অফ ডেথে (মৃত্যুর মিনার), যেখানে অচিরেই এটি শকুনের খাদ্যে পরিণত হয় । শকুনের ভক্ষণ শেষে পড়ে থাকা হাড় গোড় গুলোকে রোদে পুড়ে ব্লীচ’ড হতে থাকে হবার সময় দেওয়া হয়। পরে সেগুলোকে টাওয়ারের মাঝখানের খোলা মুখের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। পার্সিরা মৃতের জন্য চারদিন ব্যাপী শোক পালন করে থাকেন। মৃতের সম্মানে কোনো সমাধি নয় বরং দাত্যব্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়ে থাকে
জরথ্রুষ্ট সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় উৎসব গুলো সাধারণত উন্মুক্ত স্থানে / প্রান্তরে পালন করতেন। এ সময় মন্দিরের প্রচলন খুব একটা ছিল না মন্দিরের প্রচলন শুরু হয় আরও পরে একটা সময় ধনী পার্সি গন একটি পবিত্র গৃহ বা অঙ্গন এর প্রয়োজন বোধ করতে শুরু করেনে যার ফল স্বরুপ তারা এই প্রয়োজন বোধ থেকে তারা মন্দির নির্মাণ করেন / শুরু করেন আগেই বলা হয়েছে, আগুন আহুরা মাজদা র প্রতিনিধি স্বরুপ এবং তার উপস্থিতির প্রতীক বহন করে । আগেই বলা হয়েছে যে , আগুন আহুরা মাজদার উপস্থিতর প্রতীক বিভিন্ন মন্দিরের আগুন এর মধ্যেও ভিন্ন ভিন্ন বেষিস্ট লক্ষ্য করা যায় এবং মূলত দুটি বিষয়ে স্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় এক ধরনের মন্দির কে বলা হয় আতশ বেহরাম, এবং এর আগুন সবচেয়ে উচ্চ অবস্থানের / স্তরের। যে টী সবচেয়ে উঁচু স্তর এর আগুন। এটি জ্বালিয়ে মন্দিরে স্থাপনার জন্য প্রস্তুত করতে প্রয়োজন হয় গোটা একটি বছর সময় প্রয়োজন হয় । এবং স্থাপনার পরেও এটি কে সর্ব চ্চ সর্বব্বচ সরবোচ্চ সতর্কতার সাথে জিইয়ে রাখা হয়। এই ধরনের মন্দির পুরো ভারতবর্ষে সব মিলিয়ে কেবল আট টি দেখতে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় ধরনের মন্দির আরেক ধরনের মন্দির কে বলা হয় দার-ই-মিহ্র, যার আগুন এর প্রস্তুতি পর্ব এতটা ব্যাপক জটিল বা দীর্ঘ নয় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল মিলিয়ে এই ধরনের মন্দিরের সংখ্যা প্রায় ১৬০ টি।
কবর খনন বা শব দাহ নয়, পার্সিরা তাঁদের মৃতদেহ সৎকার করেন সম্পূর্ণ ভিন্ন রীতিতে। মৃত্যুর পর পার্সিরা মরদেহটিকে রেখে আসা হয় উঁচু এক মিনারের ছাদে ।এখানে খোলা আকাশের নীচে শব দেহ টি পড়ে থাকে, যতদিন না শকুনের ঝাঁক এসে একে ভক্ষণ করে নিশ্চিহ্ন করে। এই রীতিতেই মৃতদেহ সৎকারের করে আসছেন পার্সি্রা, বহুকাল ধরে.বিশেষত মুম্বাই ও করাচি শহরে এই রীতিতেই মৃতদেহ সৎকার করেন পার্সি সমাজ । উঁচু এই মিনার কে তাঁরা বলে থাকেন টাওয়ার অফ সাইলেন্স, যার অর্থ নৈঃশব্দের মিনার ।তবে সাম্প্রতিক কালে মুম্বাই ও করাচি শহরে শকুনের সংখ্যা মারাত্মক ভাবে হ্রাস পাওয়াতে এই রীতি অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। শুধু মুম্বাই বা করাচিই না, পুরো ভারতজুড়েই শকুনের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে । গবাদি পশু ও মানুষের রোগ নিরাময়ে বহুল ব্যাবহারিত এন্টীবায়টিক ও ডিক্লোফেনাক নামক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি একটি পদার্থ শকুন এর প্রাণ নাশ এর বড় কারন ।এছাড়াও নগরায়নের বিরুপ প্রভাব তো আছেই । আগের মত শকুনের দৌরাত্ম না থাকায় শব দেহ ক্ষয় হতে দীর্ঘ সময় লাগছে ।মৃত দেহের পচনর পক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য কিছু কিছু জায়গায়টাওয়ার অফ সাইলেন্সে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে, এতে যাতে সমস্যার খানিকটা সমাধান হয়েছে, বিশেষত বর্ষা মৌসুমে। এদিকে পেশাওয়ার শহরে পার্সিদের যে সমাধিক্ষেত্র টি আছে সেটি নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম কেননা সেখানে কোনো টাওয়ার অফ সাইলেন্স নেই । বরং কবর দিয়ে মৃতের সৎকার করাটাই সেখানে প্রচলিত রীতি / সেখানকার প্রচলন । উনিশ শতকের শেষ ভাগে যখন এটি নির্মিত হয়েছিল তখন থেকেই এই প্রচলন চলে আসছে । তা সে যাই হোক, সর্বোপরি , আত্মীয় ও আপনজনের অন্তিম সংস্কার এর জন্য পার্সি সমাজ আজও টাওয়ার অফ সাইলেন্স কেই বাঞ্ছনীয় মনে করেন । কেননা এই ব্যবস্থায় মৃত ব্যক্তি তাঁর দেহটিকে কে প্রকৃতির তরে উৎসর্গ করে যেতে পারেন। মুম্বাই শহরের টাওয়ার অফ সাইলেন্সটি মালাবর হিল এলাকায় অবস্থিত, অন্যদিকে করাচি শহরের টাওয়ার অফ সাইলেন্সটি চানেশার গথ এবং মাহমুদাবাদ এলাকার নিকটস্থ পার্সি কলোনি তে অবস্থিত।
সামরিক বাহিনীতেও পার্সি সম্প্রদায় রেখেছেন উজ্জলতার স্বাক্ষর।সামরিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেপার্সি সম্প্রদায় ভারতকে উপহার দিয়েছে বিভিন্ন বিশিষ্ট সামরিক কর্মকর্তা ।ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম ফিল্ড মার্শাল একজন পার্সি,। ১৯৭১ এর যুদ্ধে (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে) ভারত মিত্র বাহিনীর জয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও কারিগর এবং প্রধান নায়ক।। তাঁর নাম স্যাম হরমাসজি ফ্রেমজি জামশেদজি মানেকশ'। তিনি ব্রিটিশ সামরিক সম্মাননা মিলিটারী ক্রস প্রাপ্ত। নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রথম পার্সী সামরিক ব্যাক্তিত্ব অ্যাডমিরাল জল কুরসেটজি ।ভারতীয় বিমানবাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান এয়ার মার্শাল অ্যাস্পি ইঞ্জিনিয়ার ও একজন পার্সি । তিনি স্বাধীনতা পরবর্তীতে ভারতে চীফ অফ এয়ার স্টাফ পদে দায়িত্ব পালন করেন ও পরবর্তীতে এয়ার চিফ মার্শাল হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর এই একই পদে নিযুক্ত হওয়া ১৮তম ব্যাক্তিটিও আর এক জন পার্সি, নাম ফালি হোমি মেজর। ভারতীয় কোস্ট গার্ড বাহিনী প্রধান প্রধানের পদে দায়িত্ব পালন করা ১৭তম ব্যাক্তি টি আর এক জন পার্সি, নাম আর . এফ . কনট্রাক্টর। এছাড়া আছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরদেশির বুর্জোরজি । তিনি ১৯৬৫ সনে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে শত্রুর হাতে নিহত হন শত্রুর হামলায় নিহত হন, যার স্বীকৃতি স্বরুপ তাঁকে “পরম বীর চক্র” পদকে ভূষিত করা হয় (মরণোত্তর)। এটি ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কার / পদক । লেফটেন্যান্ট জেনারেল এফএন বিলিমোরিয়া ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সিনিয়র অফিসার এবং কোবরা বিয়ার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা লর্ড করণ বিলিমোরিয়ার পিতা।
|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|শেষাংশ3=
অনুপস্থিত (সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.