শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
উসমান ইবন আফফান
ইসলামের তৃতীয় খলিফা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
উসমান ইবনে আফ্ফান ( আরবি: عثمان بن عفان; আনু. ৫৭৯ – ১৭ জুন, ৬৫৬) ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা এবং মুহাম্মদ সা. এর একজন প্রসিদ্ধ সাহাবি। তিনি ৬৪৪ থেকে ৬৫৬ সাল পর্যন্ত খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং খলিফা হিসেবে তিনি চারজন খুলাফায়ে রাশিদুনের একজন। উসমান ছিলেন আস-সাবিকুনাল আওয়ালুনের (প্রথমেই ইসলাম গ্রহণকারী) অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও তিনি আশারায়ে মুবাশ্শারার একজন এবং সেই ৬ জন সাহাবীর মধ্যে, অন্যতম যাদের উপর নবি মুহাম্মাদ অধিক সন্তুষ্ট ছিলেন। [৮][৯] তাকে সাধারণত হযরত উসমান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি কুরাইশ গোত্রের বিশিষ্ট বংশ বনু উমাইয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম দিকের ইসলামি ইতিহাসে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালনকারী।তিনি কুরআন সংকলনের আদেশ দেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন।[৮]
উসমানের নেতৃত্বে ৬৫০ সালে ইসলামী সাম্রাজ্য ফার্স (বর্তমান ইরান) এবং ৬৫১ সালে খোরাসান (বর্তমান আফগানিস্তান) অঞ্চলে প্রসারিত হয়েছিল। ৬৪০ এর দশকে তার আমলে আর্মেনিয়া বিজয় শুরু হয়েছিল। [১০]
Remove ads
জীবনী
সারাংশ
প্রসঙ্গ
জন্ম
উসমানের জন্ম সন ও তারিখ নিয়ে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশের মতে তার জন্ম ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ হস্তীসনের ছয় বছর পর।[১১] এ হিসেবে তিনি মুহাম্মাদ এর চেয়ে বয়সে ছয় বছরের ছোট। অধিকাংশ বর্ণনামতেই তার জন্ম সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে। অবশ্য অনেকের বর্ণনামতে তার জন্ম তায়েফ নগরীতে বলা হয়েছে।[১২] ২০তম শতাব্দীর অমুসলিম মুসলিম পণ্ডিত ডেভিড স্যামুয়েল মার্গোলিউথ লিখেছেন :
নবীর থেকে ছয় বছরের ছোট উসমান একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন; এছাড়াও তিনি মহাজনের ব্যবসা করতেন, অর্থাৎ বিভিন্ন উদ্যোগে অর্থ বিনিয়োগ করতেন যার লভ্যাংশের অর্ধেক তিনি পেতেন (ইবন সা'দ, iii, ১১১) এবং অর্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি ছিলেন অতি সূক্ষ্ণ (আল-ওয়াকিদি ডব্লিউ.২৩১)। [১৩]
পরিবার ও বংশ
উসমানের উপাধি জুন-নুরাইন এবং জুল-হিজরাতাইন। তার পিতা আফ্ফান এবং মাতা আরওয়া বিনতু কুরাইজ। তিনি কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা শাখার সন্তান ছিলেন।[১৪] তার ঊর্ধ্ব পুরুষ আবদে মান্নাফে গিয়ে মুহাম্মদের বংশের সাথে মিলিত হয়েছে। তার নানী বায়দা বিনতু আবদুল মুত্তালিব ছিলেন মুহাম্মদের ফুফু।[১৫] সেই হিসাবে তিনি মুহাম্মদ এর ভাগ্নে।
ইসলাম গ্রহণের পর মুহাম্মদ তার কন্যা রুকাইয়্যার সাথে তার বিয়ে দেন। হিজরি দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পরপর মদিনায় রুকাইয়্যা মারা যায়। এরপর নবী তার দ্বিতীয় কন্যা উম্মু কুলসুমের সাথে তার বিয়ে দেন। এ কারণেই তিনি মুসলিমদের কাছে জুন-নুরাইন বা দুই জ্যোতির অধিকারী হিসেবে খ্যাত। তবে এ নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে।[১৬] যেমন ইমাম সুয়ুতি মনে করেন ইসলাম গ্রহণের পূর্বেই ওসমানের সাথে রুকাইয়্যার বিয়ে হয়েছিল।[৯] তবে অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা এই ধারণা পরিত্যাগ করেছেন। উসমান এবং রুকাইয়্যা ছিলেন প্রথম হিজরতকারী মুসলিম পরিবার। তারা প্রথম আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন। সেখানে তাদের একটি ছেলে জন্ম নেয় যার নাম রাখা হয় আবদুল্লাহ ইবন উসমান। এরপর উসমানের কুনিয়া হয় আবী আবদিল্লাহ। হিজরি ৪র্থ সনে আবদুল্লাহ মারা যায়। বদেরের যুদ্ধের পরপর রুকাইয়্যা মারা যান। এরপর উসমানের সাথে উম্মু কুলসুমের বিয়ে হয় যদিও তাদের ঘরে কোনো সন্তান আসে নি। হিজরি নবম সনে উম্মু কুলসুমও মারা যান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রাথমিক জীবন
অন্যান্য অনেক সাহাবীর মতোই ইসলাম গ্রহণের পূর্বে উসমানের জীবন সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায় নি। উসমান কুরাইশ বংশের অন্যতম বিখ্যাত কোষ্ঠীবিদ্যা বিশারদ ছিলেন। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও তার এমন বিশেষ কোনো অভ্যাস ছিল না যা ইসলামী নীতিতে ঘৃণিত। যৌবনকালে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো ব্যবসায় শুরু করেন। ব্যবসায়ে তার সাফল্য ছিল উল্লেখযোগ্য। মক্কার সমাজে একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন বলেই তার উপাধি হয়েছিল গণি যার অর্ধ ধনী।
২০তম শতাব্দীর সুন্নী মুসলিম পণ্ডিত ই.এ. বেলায়েভ লিখেছেন :
ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে অর্থাৎ যৌবনকালে উসমান মুনাফাভিত্তিক এবং লাভজনক লেনদেনের মাধ্যমে অনেক টাকার মালিক হন।[১৭]
Remove ads
মক্কায় থাকাকালীন অবস্থায়
ইসলাম গ্রহণ
তিনি প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। ৬১১ সালে তিনি সিরিয়া থেকে বাণিজ্য করে ফিরে মুহাম্মদ কর্তৃক ইসলাম প্রচার সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে এক সূত্রে জানা যায় তাঁর খালার উৎসাহেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, তাঁর সেই খালা ছিলেন একজন বিশিষ্ট গণক যার নাম সুওদা বিনতে কুরাইজ। তিনি তার কবিতার মাধ্যমে উসমানকে বেশ কিছু কথা বলেন। তিনি উসমানকে আল্লাহর রাসূল সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলেন। তারপর উসমান একদিন চিন্তা করতে করতে পথ অতিক্রম করছিলেন। পথে চিনতা ক রেন বন্ধু আবু বকরের সাথে দেখা হলে তিনি তার খালার কথাগুলো আবু বকরকে বলেন। আবু বকর উত্তরে বলেন, ‘তোমার খালা আল্লাহর রাসূল সম্পর্কে সত্য কথা বলেছেন। উসমান! তুমি সত্য মেনে নাও। তুমি আল্লাহর রাসূলের কাছে যাও এবং তার কথাগুলো শোনো।’ তিনি আবু বকরের কথা অনুযায়ী আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে তার কথা শোনেন; অতঃপর অবিলম্বে ইসলাম গ্রহণ করেন।[১৮][১৯]
Remove ads
হিজরতের পর মদীনায় থাকাকালীন অবস্থায়
হজরত উসমান খুব লাজুক সভাবের ছিলেন নবী (সঃ) ভবিষ্যত বানি করেছিলেন যে উসমান আল্লাহ্ তোমাকে পোশাক পরাবে কিন্তু লোকেরা সেটা খোলার চেষ্টাকরবে। তুমি খুলবেনা। সেই পোশাকটির উদ্দেশ্য ছিলো খিলাফতের দায়িত্ব পাওয়া।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রশাসন

তিনি বায়তুল মাল থেকে জনগণকে দেওয়া ভাতা ২৫% বাড়িয়ে দেন যা উমারের সময় সবার জন্য নিদির্ষ্ট ছিল। বিজিত অঞ্চলের কৃষি[২০] জমি বিক্রির উপর উমারের নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে তিনি এর অনুমোদন প্রদান করেন। তার করা অর্থনৈতিক পুনঃগঠনের কারণে খিলাফাতের মুসলিম অমুসলিম সবাই অর্থনৈতিক সুফল ভোগ করতে পারতো।[২১]
মৃত্যু

ওসমান যেদিন খলিফা নির্বাচিত হন, সেদিন তিনি সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন। আর যখন তাকে হত্যা করা হয়, সেদিনও তিনি উত্তম ছিলেন। মুহাম্মদ সা. বলেছেন, "আল্লাহর হিকমত অনুসারে জিননুরাইনের ওপর মতানৈক্য দেখা দেবে এবং লোকেরা তাকে শহীদ করবে। অথচ তিনি তখন হকের ওপরই থাকবেন এবং তার বিরোধীরা থাকবে বাতিলের ওপর।"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] শেষ পর্যন্ত মিসর, বসরা ও কুফার বিদ্রোহী গোষ্ঠী একাট্টা হয়ে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় সমবেত হয়ে খলিফার পদত্যাগ দাবি করে। হজ উপলক্ষে অধিকাংশ মদিনাবাসী মক্কা গমন করায় তারা এ সময়কেই মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। খলিফা পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে তারা হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। হযরত ওসমান রক্তপাতের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন। বিশাল মুসলিম জাহানের খলিফা হিসেবে মুষ্টিমেয় বিদ্রোহীর কঠোর শাস্তিদানের পরিবর্তে তিনি তাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে থাকলেন। আলী, তালহা ও জুবাইরের ছেলেদের দ্বারা গঠিত ১৮ নিরাপত্তারক্ষী বিপথগামী বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় ব্যর্থ হন। অবশেষে তারা ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন[২২] হিজরি ৩৫ সনের ১৮ জিলহজ শুক্রবার আসরের নামাজের পর ৮২ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ খলিফাকে অত্যন্ত বর্বরভাবে পবিত্র কোরআন পাঠরত অবস্থায় হত্যা করা হয়।
Remove ads
উসমান (রা)-এর হত্যার পর সাহাবীগণের প্রতিক্রিয়া
সারাংশ
প্রসঙ্গ
এ হীন ঘৃণ্য জঘন্য ঘটনা সংঘটিত হলে সকলে স্তম্ভিত হয়ে যান এবং সকল মানুষ এ ঘটনার নিন্দা করে। অজ্ঞ-মূর্থ ও পাষণ্ড বিদ্রোহীদের অনেকেই এজন্য লজ্জিত-অনুতপ্ত হয়। এ কর্ম দ্বারা নিজেদেরকে বাছুর পূজারীদের অনুরুপ বিবেচনা করে, যাদের সম্পর্কে কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন:
- “তারা যখন অনুতপ্ত হলো এবং দেখলো যে, তারা বিপথগামী হয়েছে তখন তারা বললো- আমাদের পালনকর্তা যদি আমাদেরকে দয়া এবং ক্ষমা না করেন তবে তো আমরা নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত হবো। (আ'রাফ ৭ঃ১৪৯)।
- হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার সময় জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা) মদীনার বাইরে ছিলেন। এ সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি পাঠ করেন:
- নিঃসন্দেহে আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর সমীপেই আমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। (বাকারা ২ঃ১৫৬)।
- এরপর উসমান (রা.)-এর রূহের কল্যাণ কামনা করেন। উসমান (রা)-এর হত্যাকারীরা লজ্জিত অনুতপ্ত হয়েছে জানতে পেরে তিনি বলেন, তারা ধ্বংস হোক। তারপর তিনি আল্লাহ্ তা'আলার নিম্নোক্ত বাণী তিলাওয়াত করেন:
- ওরা তো কেবল এক মহানাদের অপেক্ষায় আছে যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের বাকবিতন্ডাকালে। তখন তারা ওসীয়ত করতে সমর্থ হবে না আর না সমর্থ হবে তাদের পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে যেতে। (সূরা ইয়াসীন ৩৬ঃ৪৯)।
- আলী (রা.) এ সম্পর্কে জানতে পেরে তাঁর জন্য আল্লাহ্র রহমত কামনা করেন। আর হত্যাকারীরা লজ্জিত-অনুতপ্ত হয়েছে জানতে পেরে তিনি তিলাওয়াত করেন:
- যেমন শয়তানের দৃষ্টান্ত, সে মানুষকে বলে, কুফরী করো। তারপর সে কুফরী করলে তখন
সে বলে- আমি তোমার থেকে মুক্ত, আমি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনকে ভয় করি। (সূরা হাশর ৫৯ঃ১৬)।
- সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা) এ সম্পর্কে জানতে পেরে তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং রহমতের জন্য দু'আ করেন। আর হত্যাকারীদের প্রসঙ্গে তিলাওয়াত করেন:
- বল, আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেবো কর্মে বিশেষ? তারা ওরা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়; অথচ তারা ধারণা করে যে ভাল কাজই তারা করে যাচ্ছে। (কাহফ্ ১৮ঃ১০৩-১০৪)।
- তারপর সা“দ বলেন: হে আল্লাহ্! তুমি তাদেরকে লাঞ্ছিত কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর।
- অতীত পন্ডিত মনীষীদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলেন যে, উসমান (রা)-এর হত্যাকারীদের মধ্যে কারো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি, সকলকেই ঘাতকের হাতে জীবন দিতে হয়েছে। এ মন্তব্য ঐতিহাসিক ইবন্ জারীর তাবারীর।
- কতিপয় কারণে এমন হতে পারে। তার মধ্যে একটা হলো: সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস এর দু'আ আল্লাহর দরবারে মকুবল হলো। বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত। ঐতিহাসিকদের কারো কারো মন্তব্য এই যে, কোন হত্যাকারী পাগল-মাতাল না হয়ে মারা যায়নি। ঐতিহাসিক ওয়াকিদী আব্দুর রহমান ইবন্ আবুয যিনাদ সূত্রে আব্দুর রহমান ইবনূল হারিসের বরাতে বলেন: উসমান (রা)-এর হত্যা ছিলো কিনানা ইবন্ বিশর ইবন ইতাব তুজীবী। আর মনসুর ইব্ন সাইয়্যার ফিযারীর স্ত্রী বলতেন:আমরা হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হই, তখনো উসমান (রা)-এর হত্যা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। “মারজ' নামক স্থানে পৌঁছে আমরা জনৈক ব্যক্তিকে রাত্রিকালে গান গাইতে শুনি।
Remove ads
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads

