শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

আল্লাহ

আরবি ভাষায় মুসলমানদের উপাস্যের নাম উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

আল্লাহ
Remove ads

আল্লাহ (আরবি: الله, আইপিএ: [ʔaɫ.ɫaːh] (শুনুন)) হলো সৃষ্টিকর্তার জন্য একটি আরবি শব্দ। এটি ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহে সৃষ্টিকর্তা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষায়, শব্দটি সাধারণত ইসলাম ধর্মে স্রষ্টাকে বুঝায়।[][] ‘আল্লাহ’ শব্দটি ‘আল’ ও ‘ইলাহ’ (الإله) এর সংক্ষিপ্ত রূপের সমন্বয়ে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। এটি ভাষাগতভাবে হিব্রু এবং আরামীয় ভাষায় ঈশ্বরের প্রতিশব্দ ‘এল’ (এলোহিম) ও ‘এলাহ’ এর সাথে সম্পর্কিত।[]

Thumb
আরবি ক্যালিগ্রাফিতে 'আল্লাহ' শব্দটি

ইসলাম-পূর্ব সময় থেকে আরবের বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহার করে আসছে।[] সুনির্দিষ্টভাবে, স্রষ্টা বুঝাতে মুসলিমগণ (আরব ও অনারব উভয়) ও আরব খ্রিস্টানগণ এই শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। বাহাই, মাল্টাবাসী, মিজরাহী ইহুদি এবং শিখ সম্প্রদায়ও ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।[][] পশ্চিম মালয়েশিয়ায় খ্রিস্টান ও শিখদের ‘আল্লাহ’ শব্দটির ব্যবহার সম্প্রতি রাজনৈতিক ও আইনগত বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।[][][] এছাড়াও ভারত এবং বাংলাদেশের সিলেটি হিন্দু, ইয়াহুদী এবং খ্রিস্টানরা অনেক সময় ঈশ্বর বুঝাতে আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন।[১০][১১]

Remove ads

ব্যুৎপত্তি

Thumb
আরবি ভাষায় লিখিত আল্লাহ নামের অংশসমূহ:
  1. আলিফ
  2. হামযাতুল ওয়াসল (همزة وصل)
  3. লাম
  4. লাম
  5. তাশদিদ (شدة)
  6. খাড়া আলিফ (ألف خنجرية)
  7. হা'

আল্লাহ শব্দটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে ধ্রুপদী আরব ভাষাতত্ত্ববিদগণ ব্যাপক আলোচনা করেছেন।[১২] বাসরা বিদ্যালয়ের ব্যাকরণবিদগণ এই শব্দটিকে "স্বতঃস্ফূর্তভাবে" গঠিত শব্দ বা "লাহ" (ক্রিয়ামূল "লিহ" থেকে আগত) এর একটি নির্দিষ্ট রূপ হিসেবে বিবেচনা করেন।[১২] অন্যরা ধারণা করেন শব্দটি সিরিয়াক বা হিব্রু থেকে এসেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ভাষাতত্ত্ববিদ আরবি ভাষার নির্দিষ্ট পদাশ্রিত নির্দেশক "আল" ও "ইলাহ" এই দুটি শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপের সমন্বয়ে আল্লাহ শব্দটি উদ্ভূত বলে মনে করেন।[১২] আধুনিক পণ্ডিতদের অধিকাংশই এই তত্ত্বটি সমর্থন করেন এবং সিরিয়াক বা হিব্রু থেকে আগত হওয়ার ধারণাটি সন্দেহের সাথে দেখেন।[১৩]

আল্লাহ শব্দটির সমজাতীয় (একই মূল বিশিষ্ট) শব্দ হিব্রুআরামীয় ভাষাসহ অন্যান্য সেমিটিক ভাষায় বিদ্যমান।[১৪] শব্দটির আরামীয় রূপ হলো "এলাহ" (אלה), কিন্তু নির্দিষ্ট রূপ "এলাহা" (אלהא)। এটি প্রাচীন আরামীয় ভাষায় "এলাহা" (ܐܠܗܐ) ও সিরিয়াক ভাষায় "আলাহা" (ܐܲܠܵܗܵܐ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যা আসিরীয় খ্রিস্টানগণ ব্যবহার করে। কিন্তু উভয় ভাষাতেই এর অর্থ "স্রষ্টা"।[১৫] প্রাচীন হিব্রু ভাষায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বহুবচন "এলোহিম" (אלהים) এবং কদাচিৎ একবচন "এলোয়া" (אלוהּ) ব্যবহৃত হয়েছে।[১৬]

Remove ads

উচ্চারণ

‘আল্লাহ’ শব্দের দ্বিতীয় অক্ষর লাম (ل) কয়েক ভাবে উচ্চারিত হয়। এই শব্দটির পূর্ববর্তী অক্ষরে জবর বা পেশ থাকলে 'লাম' ভাবগম্ভীর স্বরে উচ্চারিত হয়। আবার যদি পূর্ববর্তী অক্ষরে জের থাকে তাহলে 'লাম' হালকা স্বরে উচ্চারিত হয় (যেমন: বিসমিল্লাহ)।[১৭]

ব্যবহার

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ইসলাম-পূর্ব আরব

‘আল্লাহ’ শব্দের আঞ্চলিক রূপগুলো পৌত্তলিক ও খ্রিস্টান উভয়ের ইসলাম-পূর্ব শিলালিপিতে পাওয়া যায়।[] ইসলাম-পূর্ব বহুঈশ্বরবাদী ধর্মগুলোতে আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে। ইসলামি পণ্ডিত ইবনে কাসিরের মতে, আরব পৌত্তলিকরা আল্লাহকে অদৃশ্য ঈশ্বর এবং মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিবেচনা করতো।[১৮] পৌত্তলিকরা বিশ্বাস করতো, যেসব মানুষ বা প্রাণিদের জীবনে সৌভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল, সেইসব মানুষ ও প্রাণিদের উপাসনা করলে, তা তাদেরকে ঈশ্বরের আরও কাছে নিয়ে আসবে। ইসলামে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা (শির্‌ক) সর্বোচ্চ পাপ হিসেবে গণ্য হয়।[১৯] কিছু লেখক পরামর্শ দিয়েছেন, বহুঈশ্বরবাদী আরবরা সৃষ্টিকর্তা বা তাদের সর্বোচ্চ দেবতাকে বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করতো।[২০][২১] কিন্তু একক এবং অদ্বিতীয় ঐশ্বরিক শক্তি হিসেবে নয়। বরং পৃথিবী-সৃষ্টিকারী এবং বৃষ্টি-দানকারী সত্তা হিসেবে। আল্লাহর প্রকৃত স্বরূপ তাদের ধারণায় খুব পরিষ্কার ছিল না। তাদের ধারণা ছিলো যে, আল্লাহর আরও সঙ্গী-সাথী আছে, যাদেরকে তারা অধীনস্থ দেবতা হিসেবে পূজা করতো। তারা আরও ধারণা করতো যে, আল্লাহর সঙ্গে জ্বিনজাতির আত্মীয়তা-ধরনের কোনো সম্পর্ক আছে[২২] তারা আল্লাহর পুত্র বলেও সাব্যস্থ করেছিলো [২৩] এবং তৎকালীন আঞ্চলিক দেবতা লা'ত, উজ্জা, মানাতকে তারা আল্লাহর কন্যা সাব্যস্থ করেছিলো [২৪]। খুব সম্ভবত, মক্কার আরবরা আল্লাহকে ফেরেশতা বা স্বর্গীয় দূত হিসেবে ধারণা করতো।[২৫][২৬] যার কারণে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় তারা আল্লাহ ডাকতো।[২৬][২৭] এমনকি নিজেদের নামকরণেও তারা আব্দুল্লাহ(অর্থাৎ, আল্লাহর বান্দা বা গোলাম) শব্দটি ব্যবহার করতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মুহাম্মাদের পিতার নাম ছিল ʿAbd-Allāh(عبدالله ) আব্দুল্লাহ'[২৬]

ইসলাম

Thumb
তুরস্কের ইস্তানবুলের হাজিয়া সোফিয়ায় একটি মেডেলে ‘আল্লাহ’ শব্দটি লিখিত
Thumb
তুরস্কের পুরাতন মসজিদের বাইরে আল্লাহ শব্দটি লিখিত

ইসলামি ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, ‘আল্লাহ’ হলো একমাত্র প্রশংসাযোগ্য ও সর্বশক্তিমান সত্তার প্রকৃত নাম[২৮] এবং তার ইচ্ছা ও আদেশসমূহের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রদর্শন ইসলামি ধর্মবিশ্বাসের মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।[২৯] "তিনিই একমাত্র উপাস্য, সমগ্র মহাবিশ্বের স্রষ্টা এবং মানবজাতির বিচারক।"[][২৯] "তিনি এক (ٱلْوَٰحِدُ), অদ্বিতীয় (ٱلْأَحَد), পরম করুণাময় ও সর্বশক্তিমান।"[২৯] বিচার দিবস পর্যন্ত কোন মানুষের চোখ আল্লাহকে দেখতে পাবে না।[৩০] ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনে আল্লাহ বাস্তব সত্তা, তার গুণাবলি ও বিভিন্ন নাম, তার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক ও আরও অনেক বিষয় বর্ণিত হয়েছে।[২৯] আল্লাহ কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল নন[৩১] এবং খ্রীষ্টীয় ত্রিত্বের অংশ নন।[৩২] আল্লাহর কোন পিতা-মাতা নেই এবং সন্তান নেই।[৩৩]

কুরআনের ১১২তম সূরা আল-ইখলাসে তাওহিদ অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে:

۝[৩৪] বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়;
۝ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী;
۝ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি;
۝ এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।[৩৫][৩৬]

কুরআনের দীর্ঘতম ও ২য় সূরা আল-বাকারা-এর আয়াতুল কুরসিতে (২৫৫তম ও শক্তিশালী আয়াত) বর্ণিত হয়েছে:

۝ আল্লাহ! তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আকাশ ও ভূমিতে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তার অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু তা ব্যতীত - যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর আসন সমস্ত আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তার পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।[৩৭]

মুসলিমগণ ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পিত কাজের ব্যাপারে আলোচনা করলে তার আগে বা পরে আরবি "ইনশাআল্লাহ’ (আরবি: إِنْ شَاءَ ٱللَّٰهُ, অনুবাদ'যদি আল্লাহ চান') বাক্যাংশটি ব্যবহার করেন।[৩৮] ইসলামি পরিভাষায়, যে কোন কাজ শুরু করার পূর্বে একজন মুসলিমের "বিসমিল্লাহ" (আরবি: بَسْمَلَة, অনুবাদ'আল্লাহর নামে (শুরু করছি)') বলে শুরু করা উচিত, যাতে সেই কাজটি আল্লাহ পছন্দ করেন এবং তাতে সাহায্য করেন।[৩৯] এগুলো ছাড়াও সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করার উপায় হিসেবে মুসলিমদের মধ্যে বহুল প্রচলিত আল্লাহর প্রশংসামূলক আরও কিছু বাক্য হলো "সুবহানাল্লাহ" (আরবি: سُبْحَانَ ٱللَّٰهِ, অনুবাদ'সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর'), "আলহামদুলিল্লাহ" (আরবি: ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ, অনুবাদ'সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর'), প্রথম কালেমা "লা~ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুহাম্মাদুর রসুলুল্ল-হ" (আরবি: لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ ٱللَّٰهِ‎, অনুবাদ'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তার প্রেরিত রাসূল') এবং "আল্লাহু আকবার" (আরবি: ٱللَّٰهُ أَكْبَرُ, অনুবাদ'আল্লাহ সুমহান')।[৪০]

সুফি সাধকদের মধ্যে একটি বহুল-প্রচলিত সাধনা হলো আল্লাহর যিকর (আরবি: ذكر الله, অনুবাদ'আল্লাহর স্মরণ') যেখানে সুফিরা নিজেদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে মনোযোগ সহকারে ‘আল্লাহ’ শব্দ অথবা আল্লাহর কোনো গুণবাচক নাম একাধারে অজস্রবার পাঠ করেন।[৪১]

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, "আল-কুরআন জোরালোভাবে ঘোষণা করেছে, মুসলিমরা বিশ্বাস করে, এবং ঐতিহাসিকরা নিশ্চিত করেছেন যে, মুহাম্মাদ এবং তাঁর অনুসারীরা সেই একই উপাসনা করতেন, যার উপাসনা ইহুদিরা করতো (২৯:৪৬)। এবং কুরআনের আল্লাহ এবং ইব্রাহিমের আল্লাহ এক এবং অভিন্ন"।[৪২]

ইসলামে কুরআনীয় শব্দ হিসেবে গুরুত্ব

কিছু মুসলিম আলেম মূল ইসলামী আরবি শব্দ আল্লাহ (ﷲ)-এর ব্যবহারকে অধিক উৎসাহিত করে থাকেন, যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, আল্লাহ শব্দটি কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই শব্দটি বলার সময় প্রতি হরফে দশ নেকি করে ৪ হরফে মোট ৪০ নেকি সাওয়াব পাওয়া যাবে, যা খোদা বা অন্যান্য অ-কুরআনীয় প্রতিশব্দ উচ্চারণে পাওয়া যাবে না। কুরআনীয় শব্দ বলায় প্রতি হরফে দশ নেকির ক্ষেত্রে তারা ইসলামি নবি মুহাম্মাদের উক্ত হাদিসটি পেশ করেন,

রাসূল (সা.) বলেছেন,

مَنْ ‌قَرَأَ ‌حَرْفًا ‌مِنْ ‌كِتَابِ ‌اللَّهِ ‌فَلَهُ ‌بِهِ ‌حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ

‘আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সওয়াব আছে। আর সওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’

[সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ২৯১০]

ইসলামি মতে আল্লাহর অন্যান্য নাম ও বৈশিষ্ট্য

কুরআনহাদিস অনুযায়ী, আল্লাহর অনেকগুলো গুণবাচক নাম রয়েছে যেগুলোকে একত্রে আসমাউল হুসনা (আরবি: الأسماء الحسنى, অনুবাদ'সুন্দরতম নামসমূহ') বলা হয়। তন্মধ্যে, একটি প্রসিদ্ধ হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে এবং নামগুলোর প্রত্যেকটির মাধ্যমে আল্লাহর একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।[৪৩][৪৪] আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত নামসমূহ হলো:

  1. আর-রহমান (আরবি: ٱلْرَّحْمَـٰنُ, অনুবাদ'করুণাময়')
  2. আর-রহিম (আরবি: ٱلْرَّحِيْمُ, অনুবাদ'পরম দয়ালু')
  3. আল-গফুর (আরবি: ٱلْغَفُورُ, অনুবাদ'অতি ক্ষমাশীল')
  4. আল-আহাদ (আরবি: ٱلْأَحَد, অনুবাদ'এক')
  5. আল-ওয়াহিদ (আরবি: ٱلْوَٰحِدُ, অনুবাদ'অনন্য, একক')[৪৩]

একটি হাদিসে আল্লাহর নাম সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে:

আবু হুরাইরা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত:
নবি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলার নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে লোক এই নামসমূহ মুখস্থ করবে বা পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

জামি আত-তিরমিজি, হাদিস নং- ৩৫০৬[৪৫]

ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহর কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:[৪৬][৪৭][৪৮][৪৯][৫০]

  • আল্লাহর কোন অংশীদার নেই, কোন সমকক্ষ নেই এবং কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই;
  • তার কোন সন্তান বা স্ত্রী নেই এবং তিনি কারও সন্তান নন;
  • তার উপাসনা অথবা সহায়তা প্রার্থনার জন্যে কাউকে বা কিছুর মধ্যস্থতার প্রয়োজন নাই;
  • তার কাউকে উপাসনার প্রয়োজন হয় না;
  • তিনি সার্বভৌম অর্থাৎ কারো নিকট জবাবদিহি করেন না;
  • তিনি কোন ব্যক্তি বা জিনিসের উপর নির্ভরশীল নন, বরং সকলকিছু তার উপর নির্ভরশীল;
  • তিনি কারো সহায়তা ছাড়াই সবকিছু সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন;
  • কোনো কিছুই তার উপরে বা সঙ্গে তুলনীয় নয়;
  • বিদ্যমান কোনো কিছুই সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর পরাধীন নয়;
  • কেউ প্রতিরোধ করতে পারেন না, যা আল্লাহ প্রদান করে, আর কেউ প্রদান করতে পারেনা যা তিনি প্রতিরোধ করে;
  • শুধুমাত্র আল্লাহই কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে, এই ক্ষমতা অন্য কেউ রাখে না;
  • তার কোনও অভাব নেই, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন;
  • নিদ্রা, তন্দ্রা ও ক্লান্তি আল্লাহকে স্পর্শ করে না;
  • তাঁর আকার তাঁর মতোই, যা কেউ কল্পনা করতে পারেনা;[৫১]
  • তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান ও পবিত্র;
  • তার অনুরূপ কেউ নেই

খ্রিস্টধর্ম

আসিরীয় খ্রিস্টানদের ভাষায়, ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার জন্য আরামাইক শব্দ হলো ʼĔlāhā, বা en:Alaha। খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা সহ আব্রাহামীয় সকল ধর্মের আরবি-ভাষী লোকই, ঈশ্বরকে বুঝাতে আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করে থাকে।[] বর্তমান যুগের আরবি-ভাষী খ্রিস্টানদের ব্যবহারের জন্য ঈশ্বরকে ইঙ্গিত করতে আল্লাহ ব্যতীত উপযোগী অন্য কোনো শব্দই নেই। (এমনকি আরবি-বংশোদ্ভূত মাল্টাবাসী, যাদের অধিকাংশই রোমান ক্যাথলিক, ঈশ্বরকে বুঝাতে Alla(আল্লা) শব্দ ব্যবহার করে)। তবে আরবীয় খ্রিষ্টানরা অনেক সময়ই তাদের ত্রিত্ববাদ অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা বুঝাতে Allāh al-ʾab (الله الأب) অর্থাৎ, পিতা ঈশ্বর, ঈসা বা জিসাসকে বুঝাতে Allāh al-ibn (الله الابن) অর্থাৎ, পুত্র ঈশ্বর, এবং জিবরাঈল বা গেব্রিলকে বুঝাতেAllāh ar-rūḥ al-quds (الله الروح القدس) অর্থাৎ,পবিত্র আত্মা কথাগুলো ব্যবহার করে। (খ্রিস্টান ধর্ম-বিশ্বাস অনুযায়ী ঈশ্বরের ধারণার বিস্তারিতের জন্য দেখুন খ্রিস্টান ধর্মে ঈশ্বরের ধারণা)।

লেখার সময় আরবীয় খ্রিষ্টানদের মধ্যে দুই ধরনের প্রচলন পাওয়া যায়, মুসলিমদের থেকে গৃহীত বিসমিল্লাহ এবং অষ্টম-শতক থেকে নিজেদের ত্রিত্ববাদই ধারণার বিসমিল্লাহ[৫২]। মুসলিমদের থেকে গৃহীত বিসমিল্লাহর অর্থ করা হয়, আল্লাহর নামে, যিনি পরম দয়ালু এবং অতিশয় মেহেরবান। অপরপক্ষে, ত্রিত্ববাদই বিসমিল্লাহর অর্থ করা হয়, এক ঈশ্বরের নামে যিনি পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা। তবে সিরীয়, ল্যাটিন বা গ্রিক প্রার্থনার মধ্যে এক কথাটি যুক্ত করা হয় না। এই এক কথাটি যুক্ত করা হয় ত্রিত্ববাদের এক ঈশ্বর ধারণাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এবং কিছুটা মুসলিমদের নিকট গ্রহণযোগ্য রূপ দেয়ার জন্য[৫২]

কারো মতে, ইসলাম-পূর্ব আরব-এ কিছু কিছু আরবীয় খ্রিষ্টান সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহর সম্মানে কাবায় যেত, তবে তৎকালীন কাবা ছিলো মূর্তি পূজারীদের প্রার্থনাস্থল।[৫৩]

ইহুদি ধর্ম

যেহেতু আরবি এবং হিব্রু খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত সেমিটিক ভাষা, এটি বহুল প্রচলিত মতামত যে, আল্লাহ(আরবি শব্দমূল: ইলাহ) এবং বাইবেলে বর্ণিত ইলোহিম এর আদিশব্দ একই। ইহুদি ধর্মগ্রন্থে, ইলোহিম শব্দকে ঈশ্বরের (ইহুদি মতানুযায়ী যাকে ইয়াওহে বা জেহোবা বলা হয়) একটি বর্ণনামূলক নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার একই সাথে শব্দটিকে সময়ের বিবর্তনে এক সময়ে পৌত্তলিকদের দেবতাদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে।

Remove ads

অন্যান্য ভাষায় ব্যবহার

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ইংরেজি ও অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায়

ইংরেজি ভাষায় ‘আল্লাহ’ শব্দের ইতিহাস সম্ভবত ঊনবিংশ শতাব্দীতে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, টমাস কার্লাইল (১৮৪০) কখনও কখনও আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতেন, কিন্তু তিনি বুঝাননি যে আল্লাহ ঈশ্বরের থেকে আলাদা কেউ ছিলেন। তবে টর আন্দ্রে তার রচিত মুহাম্মাদের জীবনীতে (১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত) সর্বদা 'আল্লাহ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যদিও তার বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুহাম্মাদের বর্ণিত আল্লাহ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বর্ণিত ঈশ্বরের থেকে ভিন্ন।[৫৪]

কিছু ভাষা আছে যেগুলোতে ঈশ্বরকে বুঝাতে আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু কিছু প্রচলিত শব্দের মধ্যে তা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, আন্দালুসে শতাব্দীব্যাপী মুসলিম উপস্থিতির কারণে বর্তমানে স্প্যানিশ ভাষায় "ojalá" (অনু.'আশা করি') এবং পর্তুগিজ ভাষায় "oxalá" (অনু.'আশা করি') শব্দগুলো পাওয়া যায়, যেগুলো মূলত আরবি "ইনশাআল্লাহ" (আরবি: إن شاء الله) বাক্যাংশটি থেকে উদ্ভূত। এই আরবি বাক্যাংশের আক্ষরিক অর্থ "যদি আল্লাহ চান" (অনেকটাই "আশা করি" বুঝায়)।[৫৫]

জার্মান কবি সিগফ্রিড মাহলমান সর্বময় কর্তৃত্বসম্পন্ন সত্তা সম্পর্কে লেখা কবিতার শিরোনাম হিসেবে 'আল্লাহ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তিনি কতটুকু ইসলামি চিন্তা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। মুসলিমরা সাধারণত ইংরেজিতে 'আল্লাহ' শব্দটিকে সরাসরি ব্যবহার করে থাকেন।[৫৬]

মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় ভাষায়

Thumb
১৬৫০ সালে এ.সি. রুয়েল, জাস্টাস হিউরনিয়াস ও ক্যাসপার উইলটেনসের প্রথম ওলন্দাজ-মালয় অভিধানে ওলন্দাজ শব্দ "গডট" এর অনুবাদ হিসেবে আল্লাহ শব্দটি লিপিবদ্ধ করা হয়।
Thumb
ইন্দোনেশিয়ার "ওয়ার্ড অফ গড রিভাইভাল চার্চ" (ইন্দোনেশীয়: Gereja Kalam Kebangunan Allah)। ইন্দোনেশীয় ভাষায় এবং খ্রিস্টানদের বাইবেলের অনুবাদে "ঈশ্বর" বুঝাতে 'আল্লাহ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যেখানে "তুহান" শব্দটি দ্বারা "প্রভু" বুঝায়।

মালয়েশিয়াইন্দোনেশিয়ার খ্রিস্টানগণ মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় ভাষায় ঈশ্বরকে বোঝাতে আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করে (ভাষা দুটি মালয় ভাষার প্রমিত রূপ)। এই দুই ভাষায় প্রচলিত বাইবেল অনুবাদগুলোতে হিব্রু ‘এলোহিম’ শব্দের অনুবাদ হিসেবে আল্লাহ শব্দটি ব্যবহৃত হয় (ইংরেজি বাইবেলে "গড" হিসেবে অনুবাদ করা হয়)।[৫৭] এই শব্দটি ষোড়শ শতাব্দীতে ফ্রান্সিস জেভিয়ারের প্রাথমিক অনুবাদ থেকে বিদ্যমান।[৫৮] ১৬৫০ সালে আলবার্ট কর্নেলিয়াস রুয়েল, জাস্টাস হিউরনিয়াস এবং ক্যাসপার উইলটেনস কর্তৃক প্রথম ওলন্দাজ-মালয় অভিধানে (১৬২৩ সংস্করণ ও ১৬৩১ ল্যাটিন সংস্করণ থেকে সংশোধিত সংস্করণ) ওলন্দাজ শব্দ "গডট" এর অনুবাদ হিসেবে আল্লাহ শব্দটি লিপিবদ্ধ করা হয়।[৫৯] রুয়েল ১৬১২ সালে মালয় ভাষায় মথির সুসমাচার অনুবাদ করেন (অ-ইউরোপীয় ভাষায় বাইবেলের প্রাথমিক অনুবাদ,[৬০] রাজা জেমস সংস্করণ প্রকাশের এক বছর পরে তৈরি[৬১]), যা ১৬২৯ সালে নেদারল্যান্ডে মুদ্রিত হয়। এরপর তিনি মার্কের সুসমাচার অনুবাদ করেন যা ১৬৩৮ সালে প্রকাশিত হয়।[৬২][৬৩]

২০০৭ সালে মালয়েশিয়ার সরকার মুসলিম ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহ শব্দটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, কিন্তু ২০০৯ সালে মালয়ান হাইকোর্ট আইনটি বাতিল করে এবং এটিকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। চার শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মালয় ভাষায় খ্রিস্টানদের ঈশ্বরকে বুঝাতে ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহৃত হলেও রোমান ক্যাথলিক সংবাদপত্র "দ্য হেরাল্ড" এই শব্দটি ব্যবহার করায় সমসাময়িক বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সরকার আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং আপিলের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট রায় বাস্তবায়ন স্থগিত করে। ২০১৩ সালে অক্টোবর মাসে আদালত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দেয়।[৬৪] ২০১৪ সালের শুরুতে মালয়েশিয়ার সরকার ৩০০টিরও বেশি বাইবেল বাজেয়াপ্ত করে যেগুলোতে উপদ্বীপীয় মালয়েশিয়ায় খ্রিস্টানদের ঈশ্বরকে বুঝাতে আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিলো।[৬৫] তবে মালয়েশিয়ার দুই রাজ্য সাবাহ ও সারাওয়াক-এ আল্লাহ শব্দটির ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়।[৬৬][৬৭] এর প্রধান কারণ শব্দটির ব্যবহার দীর্ঘকাল ধরে প্রতিষ্ঠিত এবং স্থানীয় বাইবেল পূর্ব মালয়েশিয়ায় বছরের পর বছর ধরে বিনা নিষেধাজ্ঞায় বিতরণ করা হয়েছে।[৬৬] এছাড়া উভয় রাজ্যেই পশ্চিম মালয়েশিয়ার মতো একই ইসলামি রাষ্ট্রীয় আইন নেই।[৬৮]

কিছু প্রচার মাধ্যমের সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় মালয়েশিয়া সরকার বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য এড়াতে একটি "১০ দফা সমাধান" চালু করেছে।[৬৯] এই ১০ দফা সমাধান সারাওয়াক ও সাবাহের ১৮ ও ২০ দফা চুক্তির মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।[৬৮]

Remove ads

আল্লাহ শব্দটি লিখিত বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকা

মুদ্রণবিদ্যা

Thumb
আল্লাহ শব্দের বিভিন্ন ভাষার প্রতিবর্ণীকরণ

ইউনিকোড

ইউনিকোডে আল্লাহ শব্দের জন্য একটি সংরক্ষিত কোড রয়েছে, U+FDF2 [৭০][৭১] অনেক আরবি ফন্টেও শব্দটিকে একটি অখণ্ড অক্ষর হিসেবে প্রণয়ন করা হয়েছে।[৭২][৭৩]

ইরানের জাতীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত আল্লাহ শব্দের ক্যালিগ্রাফিক রূপটি ইউনিকোডে বিভিন্ন প্রতীকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যার কোড U+262B (☫)।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads