শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

কুষ্টিয়া

বাংলাদেশের নগর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

কুষ্টিয়া
Remove ads

কুষ্টিয়া বাংলাদেশের একটি নগর এবং 'সাংস্কৃতিক রাজধানী'।[][] শহরটি দক্ষিণবঙ্গের গড়াইকালীগঙ্গা নদীর তীরে কুষ্টিয়া জেলায় অবস্থিত।[] এটি লোকমুখে কুষ্টে নামেও পরিচিত।[] লালন শাহের মাজার, কুলফি মালাইতিলের খাজার জন্য কুষ্টিয়ার খ্যাতি রয়েছে।[][] স্থানীয়দের সহজ-সরল জীবনধারা[] ও সমন্বয়ধর্মী জীবনবোধ[] এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।[]

দ্রুত তথ্য কুষ্টিয়া কুষ্টে, দেশ ...

কুষ্টিয়ায় প্রচুর পরিমাণে মাঝারি ও ভারি শিল্পকারখানা রয়েছে যা জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করে। খাজানগরে দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম রয়েছে।[১০] কুষ্টিয়াকে দেশের অন্যতম কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পাঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১১] ব্রিটিশ শাসনামলে রেলপথ স্থাপন হওয়ার পর থেকেই এখানে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে ধরা হতো।[১২] ১৯০৮ সালে মোহিনী মিল প্রতিষ্ঠিত হয় যা একসময় এশিয়ার বৃহত্তম টেক্সটাইল মিল ছিল।[১৩]

কুষ্টিয়া পৌরসভার তথ্যানুযায়ী পৌরসভার মোট আয়তন ৪২.৭৯ বর্গকিলোমিটার (১৬.৫২ বর্গমাইল)[১৪] জিও কোড অনুযায়ী কুষ্টিয়া পৌরসভার আয়তন ৫৪.১৩ বর্গকিলোমিটার (২০.৯০ বর্গমাইল)[১৫] ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী কুষ্টিয়া পৌরসভায় ২,২১,৮০৬ জন মানুষ বসবাস করে।[১৬] ২০১৯ সালে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ সার্ধশতবর্শ স্মারকগ্রন্থ ১৮৬৯–২০১৯ প্রকাশ করে। যেখানে ২০১৭ সালের পৌরসভার জনসংখ্যা ৩,৭৫,১৪৯ উল্লেখ করা হয়েছে।[১৭]

Remove ads

নামকরণ

'কুষ্টিয়া' নামটি কীভাবে এলো তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে সমর্থিত মতটি ১৮২০ প্রকাশিত হেমিলটনসের গেজেট-এর সূত্রে পাওয়া যায়। সেটি হলো, কুষ্টিয়াতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদন হতো। পাটকে স্থানীয় ভাষায় 'কোষ্টা' বা 'কুষ্টি' বলা হয় যার থেকে 'কুষ্টিয়া' নামটি এসেছে।[১৮]

অন্য মতে ফার্সি শব্দ 'কুশতহ' (অর্থ: ছাই দ্বীপ) বা 'কুশা' থেকে 'কুষ্টিয়া' নামকরণ হয়েছে।[১৯][২০]

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

সপ্তম শতাব্দীতে হিউয়েন সাঙ কুষ্টিয়া অঞ্চলকে সমতটের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন। দশম এবং একাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চল পাল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।[১৯] মুঘল শাসনামলে নৌযান চলাচলের জন্য পদ্মা, গড়াই এবং কালীগঙ্গা নদীর কারণে কুষ্টিয়া গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিতি পায়। সম্রাট শাহ জাহানের সময় কুষ্টিয়াতে পাটের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নদীবন্দর গড়ে উঠেছিল।[২১][২২]

১৭২৫ সালে কুষ্টিয়া নাটোর জমিদারীর অধীনে ছিল। ১৮২৩ সালে কুষ্টিয়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮২৮ সালে পাবনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে কুষ্টিয়া থানাকে পাবনা জেলার অধীনে দেওয়া হয়। এর আগে কুষ্টিয়া অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ রাজশাহীর অধিনে এবং কিছু অংশ যশোরের অধীনে ছিল।[২৩][২৪]

কুষ্টিয়া থানার অবস্থান পদ্মা নদীর তীরবর্তী হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের বর্তমান পুরাতন কুষ্টিয়া গ্রামে ছিল। ১৮৫৫ সালে কুষ্টিয়া থানার কার্যালয় মজমপুর মৌজায় বর্তমান থানাপাড়ায় স্থানান্তর করা হয়।[২৫] ১৮৬০ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির লেফটেন্যান্ট গভর্নর নীল বিদ্রোহের কারণে জন পিটার গ্রান্ট পাবনায় আসেন। কুষ্টিয়ার নীলচাষীরা পদ্মা নদী পার হয়ে পাবনা আসার অসুবিধা তুলে ধরেন। জন পিটার গ্রান্ট এই সমস্যা সমাধানের জন্য কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৮৬২ সালে রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথ চালু হয়[২৬] ও কুষ্টিয়া মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৬৩ সালে কুষ্টিয়া অঞ্চল নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।[২৩] এসময় কুষ্টিয়াকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী জেলার কয়েকটি মহুকুমা একত্র করে কুষ্টিয়া নামে একটি স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব হয়। পরিশেষে এবিষয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি।[২৭] ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল মজমপুর, কালিশংকরপুর ও বাহাদুরখালী মৌজার ১০টি গ্রাম নিয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭১ সালে কুমারখালী মহুকুমাক বিলুপ্ত করে কুমারখালীখোকসা থানাকে কুষ্টিয়া মহকুমার সাথে যুক্ত করা হয়।[] ১৮৭১ সালে কুষ্টিয়া থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত রেলপথ চালু হয়।[২৬]

১৮৬২ সালে প্রথম রেলপথ চালু হওয়ার পর থেকে কুষ্টিয়াতে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে থাকে। ১৮৮১ সালে উইলিয়াম রেনউইক গড়াই নদীর তীরে পরিত্যক্ত রেলের লোকো ওয়ার্কশপে রেনউইক কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৬ সালে মিলপাড়ায় টেগোর অ্যান্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেন যা পরবর্তীতে যজ্ঞেশ্বর সর নামের এক ব্যক্তি ক্রয় করে যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নাম দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সাথে একীভূত করা হয়।[৩০] ১৯০৬ সালে মোহিনী মোহন চক্রবর্তী তাঁত শিল্পকারখানা চক্রবর্তী অ্যান্ড সন্স স্থাপন করেন যা পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে মোহিনী মিল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড হিসেবে স্বীকৃতি পায়।[৩০][২৭]

পূর্ব পাকিস্তান (১৯৪৭–১৯৭১)

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর অবিভক্ত নদিয়া জেলা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। অবিভক্ত নদিয়া জেলার কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর মহকুমা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে 'পূর্ব নদিয়া' নামে জেলা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব হয়। তবে ১৯৪৮ সালে জেলার নাম 'কুষ্টিয়া' রাখা হয়।[৩১] ভারত বিভাজনের পূর্বে কুষ্টিয়া প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে কুষ্টিয়া রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়।[৩২] ১৯৬০ সালে খুলনা বিভাগ গঠিত হলে কুষ্টিয়া খুলনা বিভাগের অধীনে চলে আসে।[৩৩]

জেলা সদরে পরিণত হলেও কুষ্টিয়া মহকুমা শহরে তখন জেলা শহরের কোনো অবকাঠামো ছিল না। এইসময় শহরের জনমিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।[৩১] ১৯৫১ সালে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৩২ শতাংশ যা বিগত ১৮৭২–১৯৪১ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৮৬৩ প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া হাসপাতাল ১৯৬৩ সালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে বর্তমান স্থানে নির্মাণ করা হয়। বর্তমান বঙ্গবন্ধু পৌর সুপার মার্কেটের স্থানে কুষ্টিয়া পৌরসভার কার্যালয় ছিল। ১৯৬৬ সালে পৌরসভার কার্যালয় সতীশ সাহার জমিদার বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কুষ্টিয়া মহকুমা কারাগার ১৯৬৮ সালে কুষ্টিয়া জেলা কারাগার হিসেবে নির্মাণ হয়।[৩৪] ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কুষ্টিয়াতে গণমিছিল হয়েছিল। এই গণমিছিলে পুলিশের গুলিতে আব্দুর রাজ্জাক নামক এক ব্যক্তির নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।[]

বাংলা ভাষা আন্দোলন

কুষ্টিয়াতে ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের তেমন প্রভাব পড়েনি।[৩৫] ১৯৫০ সালে কুষ্টিয়াতে তমদ্দুন মজলিসের জেলা শাখা গঠিত হয়। ১৯৫১ সালে শাখাটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। পরিমল থিয়েটারে এই কমিটি বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। এই সম্মেলনে আবদুল গফুর, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, খালিদ হোসেন সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেছিলেন।[৩৬]

Thumb
২০২৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কুষ্টিয়াতে ভাষা আন্দোলন পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়াতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। এই সভায় বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে চক্রান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়াতে ধর্মঘট পালিত হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে শিক্ষার্থীদের মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। কুষ্টিয়া ইউনাইটেড হাই স্কুলে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় দূর দূরান্ত থেকে আগত অসংখ্য মানুষ যোগদান করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়াতে হরতাল ছিল। কুষ্টিয়া কলেজ, কুষ্টিয়া ইংরেজি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া ইউনাইটেড হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী মিছিল কর। সাধারণ জনতাও মিছিলে অংশগ্রহণ করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়াতে সর্বাত্মক হরতাল ও ধর্মঘট পালিত হয়। ইউনাইটেড হাই স্কুল মাঠে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে প্রায় ২৫ হাজার বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা অংশগ্রহণ করেছিলেন।[৩৫]

২০১২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার উদ্বোধন করা হয়।[৩৭] প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ও ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছাড়াও সরকারি কলেজজিলা স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়াও জেলা প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।[৩৮][৩৯]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় (১৭ এপ্রিল) বর্তমান বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল। কুষ্টিয়া ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল।[৪০] মেজর আবু ওসমান চৌধুরীমোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর পর্যায়ক্রমে ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন।[৪১]

Thumb
কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ

৩ মার্চ ইসলামিয়া কলেজ প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৩ মার্চ কুষ্টিয়া হাই স্কুল মাঠে পুনরায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে গোলাম কিবরিয়াআবদুর রউফ চৌধুরী স্থানীয় ছাত্রদের দ্বারা গঠিত জয় বাংলা বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন।[৪২][৩১]

কুষ্টিয়ার যুদ্ধ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি।[৪৩] ২৫ মার্চ রাতে যশোর থেকে ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের ২১৬ জন (মতান্তরে ২৫০ জন) পাকিস্তানি সেনা কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে। প্রথম তারা পুলিশ লাইন্স দখল করে। এরপর জিলা স্কুল, টেলিগ্রাফ অফিস, থানা ও আড়ুয়াপাড়ায় অবস্থিত ওয়্যারলেস অফিস দখল করে তাদের ঘাঁটি গড়ে তোলে।[৪৪] ২৬ মার্চ শহরে ৩০ ঘন্টার কারফিউ জারি করা হয়।[৩১][৪৫] ৩১ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করে।[৪৬]

৯ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনী ঝিনাইদহ মহাসড়ক হয়ে কুষ্টিয়াতে প্রবেশ করার সময় চৌড়হাস খালের কাছ থেকে পাকিস্তানি সেনারা ট্যাংক দ্বারা অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলায় মিত্র বাহিনীর ৭০ জন সেনা নিহত হয়।[৪৭] মিত্র বাহিনীর স্মরণে ২০১৫ সালে চৌড়হাস মোড়ে মুক্তি মৈত্রী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয় যা বাংলাদেশে মিত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মরণে নির্মিত সর্বপ্রথম স্মৃতিস্তম্ভ।[৪৮] ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া পুরোপুরি শত্রু মুক্ত হয়।[৪৯] প্রতি বছর ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে 'কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস' পালিত হয়।[৫০]

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়

Thumb
১৯৭২ সালে নির্মিত স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা মঞ্চ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরতে ১৯৭২ সালে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা মঞ্চ নির্মাণ করা হয়।[৫১] এই মঞ্চে বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাসের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম চিত্রায়িত হয়েছে।[৫২]

১৮৯৭ সালে থানাপাড়ায় কুষ্টিয়া পোস্ট অফিস নির্মাণ করা হয়েছিল তা ১৯৭৩ সালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের পশ্চিম দিকে স্থানান্তর করা হয়।[৩৪] ১৯৮৪ সালে বৃহত্তর কুষ্টিয়াকে ভেঙে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করা হয়।[৫৩]

Remove ads

সংস্কৃতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি না থাকলেও কুষ্টিয়া বাংলাদেশের 'সাংস্কৃতিক রাজধানী' হিসেবে পরিচিত।[] কুষ্টিয়া অঞ্চলের সংস্কৃতির কিছুটা নিজস্বতা রয়েছে। এই অঞ্চলের বড় বৈশিষ্ট্য হলো সমন্বয়ধর্মীতা বা সমন্বয়বাদী। কুষ্টিয়ার সংস্কৃতিতে বাউল সঙ্গীত, লোকসঙ্গীত, সাহিত্য এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী উৎসব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[] সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি রয়েছে যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পকলা একাডেমি।[৫৪]

ক্র্যাক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প

Thumb
ক্র্যাক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প, ২০০৯

ক্র্যাক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প কুষ্টিয়াতে আয়োজিত বহু-বিষয়ক শিল্প শিবির। এই বহিরাঙ্গন শিল্প শিবিরের মূল লক্ষ্য হলো বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।[৫৫] এটি ২০০৭ সালে থেকে শুরু হয়েছে।[৫৬] সর্বশেষ ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ১৮তম ক্র্যাক আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের শিল্পগণ এই শিল্প শিবিরে অংশগ্রহণ করে থাকেন।[৫৭]

মেলাসমূহ

প্রতিবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রার সময় বড় বাজারের মধ্যে এনএস রোডের পূর্ব প্রান্তে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।[৫৮] কুষ্টিয়ার রথ যাত্রার সূচনা হয় ১৯০৫ সালে। প্রতিবছর গোপীনাথ জিউর মন্দিরের কমিটি এই মেলার আয়োজন করে।[৫৯] রথযাত্রার অনুষ্ঠান চলাকালীন এনএস রোডের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে রাজার হাট পর্যন্ত মেলা বসে।[৬০]

কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় কালীগঙ্গা নদীর তীরে লালন উদ্যানে লালন মেলার আয়োজন করা হয়।[৬১] বছরে ২ বার লালনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমি লালন মেলার আয়োজন করে থাকে। এই মেলায় দেশ-বিদেশে থেকে লালনের শিষ্য ও ভক্তদের আগমন ঘটে।[৬২]

অনেক আগে থেকেই আশুরা উপলক্ষে কুষ্টিয়াতে মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। আশুরার দিন শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়ারা শোভাযাত্রা বের করে। এই মেলায় লাঠি খেলা, কুস্তি, কাওয়ালি ও ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কুষ্টিয়ার বিহারীপাড়ায় এই মেলার আয়োজন হয় তবে এখন এই মেলার পরিসর আগের মতো বড় হয় না।[]

সংবাদপত্র

কুষ্টিয়ার থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সাথে হরিনাথ মজুমদারমীর মোশাররফ হোসেন গভীর ভাবে জড়িত।[৬৩]

১৮৬৪ সালে কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রথম পত্রিকা গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা কুমারখালী থেকে প্রকাশিত হয়। হরিনাথ মজুমদার এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।[৬৪] কুষ্টিয়া শহর থেকে সর্বপ্রথম আজীজন নেহার পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ সালে। পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন মীর মোশাররফ হোসেন যিনি তার প্রথম স্ত্রীর নামানুসারে পত্রিকার নামকরণ করেন।[৬৫] ধারনা করা হয় আজীজন নেহার পত্রিকা বাঙালি মুসলিম ব্যক্তি দ্বারা প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র।[৬৬] মীর মোশাররফ হোসেন ১৮৯০ সালে কুষ্টিয়া থেকে হিতকরী নামের আরও একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।[৬৫]

১৮৯৮ সালে কুষ্টিয়া থেকে কোহিনূর পত্রিকা প্রকাশিত হয়। রওশন আলী চৌধুরীএয়াকুব আলী চৌধুরী কোহিনূর পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এবং লেখকবৃন্দের মধ্যে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, সৈয়দ এমদাদ আলী, শেখ ফজলল করিম, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মীর মশাররফ হোসেনমোহাম্মদ লুৎফর রহমান উল্লেখযোগ্য।[৬৭]

জাগরণ কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত আরও একটি পত্রিকা যা ১৯২১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। হেমন্তকুমার সরকার এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের প্রগতিশীল ভূমিকা ও সরকারের সমালোচনার জন্য পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়।[৬৩]

Remove ads

রন্ধনশৈলী

বাংলাদেশে অঞ্চলভিত্তিক খাবারের নানা বৈচিত্র্য দেখা যায়। তেমনি কুষ্টিয়াতেও বেশকিছু ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রচলন রয়েছে। এর মধ্যে মাষকলাই ডালের খিচুড়ি, কুমড়ো ভাপা চিংড়ি, কই মাছের পাতুরি, আনারসের খাট্টা, সেমাই সুজির ঝাল পিঠা ও খেজুরের গুড়ের দিয়ে কাউনের চালের ক্ষীর উল্লেখযোগ্য।[৬৮]

তিলের খাজা হলো এক প্রকার মিষ্টান্ন যার মূল উপকরণ তিল ও চিনি। ১৯০০ সালের কাছাকাছি সময়ে কুষ্টিয়ার মিলপাড়া ও দেশওয়ালীপাড়ার তেলি সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবার তিলের খাজা তৈরি করা শুরু করে।[][][৬৯] ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল তিলের খাজা শিল্প মন্ত্রণালয় কতৃক জিআই সনদ লাভ করে।[৭০]

Thumb
একজন কুলফি মালাই বিক্রেতার সরঞ্জাম

কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় কুলফি মালাই। এই কুলফি মালাই কুষ্টিয়া শহরের পার্শ্ববর্তী শিলাইদহকয়া এলাকায় বেশি তৈরি হয়।[৭১] বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের নারীদের দায়িত্ব কুলফি মালাই বানানো আর পরিবারের পুরুষদের দায়িত্ব সেগুলো বিক্রি করা।[৭২]

কুষ্টিয়ার শনপাপড়ি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় শনপাপড়ি। সাধারণত যারা তিলের খাজা তৈরি করে তারা এই শনপাপড়ি তৈরি করে থাকে। কুষ্টিয়ার মিলপাড়া ও ছেউড়িয়ায় শনপাপড়ি তৈরি হয়।[৭৩][৭৪]

Remove ads

প্রশাসন

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
মোহিনী মোহন চক্রবর্তীর বাড়ি যা মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে

১৮২৩ সালে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার হরিপুরে পদ্মা নদীর তীরে 'কুষ্টিয়া থানা' স্থাপন করা হয়।[৭৫] ১৮৫৫ সালে পদ্মা নদী ভাঙ্গনের কারণে থানার কার্যালয় বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। বর্তমান থানার কার্যালয় কুষ্টিয়া শহরের প্রানকেন্দ্রে থানাপাড়ায় অবস্থিত।[২৮] থানা স্থানান্তরের ফলে হরিপুর 'পুরাতন কুষ্টিয়া' নামে পরিচিতি পায়।[২৫] ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আধুনিকায়ন কার্যক্রম শুরু হলে কুষ্টিয়া থানাকে একটি মডেল থানায় রূপান্তর করা হয়। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া মডেল থানা বিভক্ত করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা গঠন করা হয়।

বর্তমানে কুষ্টিয়া মডেল থানার অধীনে কুষ্টিয়া পৌরসভাসহ ও ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরে দুইটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে তা হলো কুষ্টিয়া সদর পুলিশ ফাঁড়ি ও মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি।[৭৬]

Thumb
পৌরসেবার মূল্য তালিকা

১৮৬০ সালে 'কুষ্টিয়া ইউনিয়ন কমিটি' গঠিত হয়। ১৮৬৮ সালে পৌর আইন গৃহীত হলে একই বছর ৩১ ডিসেম্বর একটি গেজেটে ঘোষনা দেওয়া হয় কুষ্টিয়া মহকুমা শহরে একটি শহর কমিটি গঠিত হবে। ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল কুষ্টিয়া শহর কমিটি বা কুষ্টিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া পৌরসভা হলো শহরব্যাপী স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ যা জনসাধারণের কাজ, পানি সরবরাহ, পরিবহন ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিষেবা এবং অন্যান্য কাজের জন্য দায়ী।[৭৭] ১৮৮৪ সালের ১৫ নভেম্বর পৌরসভার করদাতাদের হাত উত্তোলনের মাধ্যমে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৮৫ সালের ১৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সদস্যদের প্রস্তাব ও সমর্থনের ভিত্তিতে হরিশ্চন্দ্র রায় পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে (মেয়াদ ১৯৭৪–১৯৭৭) প্রথম পৌর নির্বাচন সম্পন্ন হয়।[৭৮]

Remove ads

ভূগোল

ভৌগলিক ভাবে কুষ্টিয়া বঙ্গ অঞ্চলে অবস্থিত। এটি গাঙ্গেয় অববাহিকার অন্তর্গত সমতলভূমি।[] এর উত্তর দিক দিয়ে পদ্মাগড়াই এবং পূর্ব দিক দিয়েও গড়াই ও কালীগঙ্গা নদী প্রবাহিত হয়েছে। মূলত গড়াই নদীকে কেন্দ্র করেই শহরটি গড়ে উঠছে। গড়াই পদ্মার শাখা নদী আবার কালীগঙ্গা গড়াইয়ের শাখা নদী। শহরের সঙ্গে হরিপুরকয়া ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ সহজতর করার জন্য গড়াই নদীর উপরছ ২০১৩–২০১৭ সালে থানাপাড়া থেকে হরিপুর পর্যন্ত একটি সড়ক সেতু নির্মাণ করা হয়।[৭৯] বড় বাজারের ঘোড়ার ঘাট দিয়েও মানুষ নদী পারাপার হয়ে থাকে।[৮০]

Thumb
গড়াই নদী থেকে কুষ্টিয়া শহর

১৯৪৯ সালে কুষ্টিয়া পৌরবাসীর সুবিধা, মিরপুর উপজেলার আংশিক কৃষি জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও স্থানীয় জলপথ সম্প্রসারণের জন্য শহরের পশ্চিম দিকে গড়াই খাল খনন করে। এই খালটির দৈর্ঘ্য ৮.৫ কিলোমিটার (৫.৩ মাইল)[৮১] ১৯৫৪–৫৫ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতায় শহরের দক্ষিণ দিকে চৌড়হাস খাল খনন করা হয়।

পাড়াসমূহ

কুষ্টিয়া পৌরসভা ২১টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। ওয়ার্ডগুলো এক বা একাধিক পাড়া নিয়ে গঠিত।[৮২]

  • আমলাপাড়া
  • আলোকদিয়া
  • আড়ুয়াপাড়া
  • কমলাপুর
  • কবুরহাট
Remove ads

অর্থনীতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

কুষ্টিয়ার অর্থনীতি শিল্প নির্ভর। এখানে অবস্থিত মাঝারি ও ভারি শিল্পকারখানা জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করে।[১০][১২] বিসিক শিল্প এলাকা কুমারগাড়া ছাড়াও খাজানগর, বটতৈলপোড়াদহ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ২০১৯ সালে প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের চালের চাহিদার ৩০ শতাংশ খাজানগরে উৎপাদন হয়।[৮৩]

Thumb
জেলা পরিষদ শপিং মল
Thumb
চাঁদ মোহাম্মদ রোড
Thumb
দিশা ট্র্যাক

কুষ্টিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হলো বড় বাজার[৮৪] বড় বাজার এনএস রোডের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। কুষ্টিয়ার সরকারি-বেসরকারি মার্কেট, ব্যাংক গুলো এনএস রোডে অবস্থিত।

কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্প এলাকায় (কুমারগাড়া) ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর প্রক্রিয়াজাতকরণে কারখানা, বিআরবি গ্রুপের কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও কেএনবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।[৮৫][৮৬]

বিভিন্ন গণমাধ্যমের মতে খাজানগর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম। খাজানগর কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে কুষ্টিয়া–চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে।[৮৭][৮৮] ২০২৩ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী খাজানগরসহ আশেপাশের এলাকা আইলচারা, কবুরহাট, বটতৈল, জগতিপোড়াদহে প্রায় ৩০০টি চালের মিল রয়েছে।[৮৯]

পাইকারি কাপড় বেচাকেনার জন্য পোড়াদহ বাজারে কাপড়ের হাট বসে যা দেশের অন্যতম বৃহৎ কাপড়ের হাট।[৯০][৯১] প্রতি হাটে ৩৫–৪০ কোটি এবং ব্যক্তিমালিকানা দোকানগুলোয় প্রায় ৬০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়ে থাকে। এই হাট থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হয়।[৯২]

Remove ads

পরিবহন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

সড়ক

১৯৬২ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের খুলনা জোনের অধীনে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।[৯৩] ১৯৯০ সালের ১৫ মে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কুষ্টিয়া সার্কেল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কুষ্টিয়ার পরিবহন মালিক, পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও সাধারণ গ্রাহকদের পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে।[৯৪] ১৯৯১ সালে একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয় যা কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল বা চৌড়হাস বাস টার্মিনাল নামে পরিচিত।[৯৫] তবে রাজধানী ঢাকাগামী অধিকাংশ বাসের কাউন্টার মজমপুর গেটে অবস্থিত। শহরের প্রধান ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড এনএস রোডের উপর নির্ভরশীল। কুষ্টিয়ার সাথে সরাসরি এশীয় মহাসড়কের সংযোগ রয়েছে।[৯৬]

Thumb
চৌড়হাস মোড়ে কুষ্টিয়া–ঝিনাইদহ মহাসড়ক

শহরে ২টি জাতীয় মহাসড়কের সংযোগ রয়েছে। জাতীয় মহাসড়কগুলো হলো এন৭০৪ এবং এন৭১৩। এ৭০৪ মজমপুর গেট থেকে বটতৈল বরাবর কুষ্টিয়া–ঝিনাইদহ মহাসড়ক এবং মজমপুর গেট থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত দাদাপুর সড়ক নামে পরিচিত। এই মহাসড়কটি দক্ষিণবঙ্গের সাথে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক। ত্রিমোহনী থেকে বটতৈল মোড় (এন৭০৪) পর্যন্ত ২০২০–২০২৫ সালে ৪ লেনে উন্নীত করা হয়েছে।[৯৭][৯৩] উল্লেখ্য যে এন৭০৪ এশীয় মহাসড়ক ৪১-এর অংশ।[৯৬] এন৭১৩ কুষ্টিয়া বাইপাস রোড নামে পরিচিত। যানজট নিরসনের জন্য ২০১৬–২০১৮ সালে শহরের পশ্চিম দিকে বটতৈল থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।[৯৮]

আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো হলো আর৭১০, আর৭৪৫ এবং আর৭৪৭। সড়কপথে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সড়ক হলো আর৭১০[৯৩] এই সড়কটি ঢাকা রোড ও কুষ্টিয়া–রাজবাড়ী মহাসড়ক নামে পরিচিত। কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর যাওয়ার জন্য আর৭৪৫চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার জন্য আর৭৪৭ সড়ক ব্যবহার করা হয়।[৯৯][১০০]

রেল

Thumb
জগতি রেলওয়ে স্টেশন

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের রাণাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার (৩৩.০০ মা) ব্রডগেজ রেলপথ চালু হলে জগতি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়। জগতি স্টেশনকে বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে ধরা হয়। একই বছরে জগতি থেকে বর্তমান রেনউইক ঘাট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হয়। এই ঘাটে তখন স্টিমার চলাচল করত। ১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়া কোর্টকুষ্টিয়া রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়। গড়াই রেল সেতু নির্মাণের জন্য ১৮৬৫ সালে জগতি থেকে চৌড়হাস হয়ে রেল সেতু পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করা হয়েছিল।[] বর্তমানে এই লাইনের অস্তিত্ব নেই।[৩৪] ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হয়।[২৬][১০১]

Thumb
কুষ্টিয়া কোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের ওঠানামার দৃশ্য

বর্তমানে কুষ্টিয়া কোর্ট শহরের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে চার জোড়া আন্তঃনগর, এক জোড়া কমিউটার ও এক জোড়া লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতি দিয়ে থাকে।[১০২] ট্রেনগুলো হলো সুন্দরবন এক্সপ্রেস (খুলনা–ঢাকা–খুলনা), মধুমতি এক্সপ্রেস (ঢাকা–রাজশাহী–ঢাকা), বেনাপোল এক্সপ্রেস (বেনাপোল–ঢাকা–বেনাপোল), টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস (রাজশাহী–গোপালগঞ্জ–রাজশাহী), নকশীকাঁথা কমিউটার (খুলনা–ঢাকা–খুলনা) ও পোড়াদহ শাটল (পোড়াদহ–গোয়ালন্দ)।[১০৩]

পোড়াদহ–গোয়ালন্দ রেলপথ শহরের মাঝবরাবর অবস্থিত। ফলে ট্রেন শহরে প্রবেশ করলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা সমাধানে ২০১৮ সালে জগতি স্টেশন থেকে চৌড়হাস খাল হয়ে গড়াই রেল সেতু পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[৮৪]

Remove ads

স্বাস্থ্য

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
নগর মাতৃসদন কেন্দ্র

কুষ্টিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[১০৪] কুষ্টিয়া পৌরসভা ও প্রিজম বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ ও জাপান সরকারের সহযোগিতায় ২০২৫ সালের ২ জুন থেকে কুষ্টিয়ায় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। কুষ্টিয়া ছাড়াও ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গামেহেরপুরের মেডিকেল বর্জ্য কুষ্টিয়াতে রিসাইকেল করা হয়।[১০৫]

১৯৬০ সালে কুষ্টিয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়।[১০৬] ১৮৬৩ সালে এনএস রোডের বর্তমান সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে আট শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়।[১০৭] ১৮৮৭ সালে জুবিলি ডিসপেনসারি নির্মিত হয় যা পরবর্তীতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।[৩৪] ১৯৬২ সালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৩ সালে ১০০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে।[৪৬] ২০০০ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৫০।[১০৮][১০৯]

২০১১ সালে কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটকুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে অস্থায়ী ভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় ও বহির্বিভাগ চালু হয়। ২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল আন্তবিভাগ উদ্বোধনের মাধ্যমে পূর্নাঙ্গভাবে হাসপাতালটি চালু হয়।[১১০]

২০১২ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়াতে ৬ তলা ভবন বিশিষ্ট নগর মাতৃসদন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগর মাতৃসদনের উদ্বোধন করেন।[১১১]

শিক্ষা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী কুষ্টিয়াতে শিক্ষার হার শতকরা ৮৪.০৪ শতাংশ (৭ বছর এবং তার বেশি বয়সী)। পুরুষদের সাক্ষরতার হার শতকরা ৮৬.৩৭ শতাংশ এবং মহিলাদের সাক্ষরতার হার শতকরা ৮১.৬৭ শতাংশ। শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১,৬৪,৩৯৬ জন জেনারেল, ৪১০৫ জন কারিগরি, ৫৮৮১ ধর্মীয় এবং ৩৮৮৮ জন অন্যান্য শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন।[৮২]

Thumb
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ
Thumb
নির্মাণাধীন সেলিমা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ব্রিটিশ শাসনামলে কুষ্টিয়াতে কয়েকটা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে কুষ্টিয়া হাই স্কুল (১৮৬১), কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৪), কুষ্টিয়া মিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯৮), জগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৪), দিনমণি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), মোহিনী মোহন বিদ্যাপীঠ (১৯৪১) ও সিরাজুল হক মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৫) উল্লেখযোগ্য। ১৯৬১ সালে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় যা বর্তমানে শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিদ্যালয়।[১১২][১১৩]

১৯০৮–১৯১০ সালে কুষ্টিয়াতে একটি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়।[১৭] পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠত হয়। কলেজটি ১৯৬৫ সালে সরকারিকরণ করা হয় ও 'কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ' নামকরণ করা হয়। ১৯৬৪ সালে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৬ সালে কুষ্টিয়া মহিলা কলেজ স্থাপিত হয় যা ১৯৭৯ সালে সরকারিকরণ হয় ও 'কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ' নামকরণ করা হয়। ১৯৬৭ গভ. কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট' স্থাপন করা হয় যা বর্তমানে নাম কুষ্টিয়া সরকারি সেন্ট্রাল কলেজ নামে পরিচিত। ১৯৮৩ সালে কুষ্টিয়া হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে কুষ্টিয়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮–১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়াতে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয় কিন্তু পরিকল্পনাটি স্থগিত করা হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।[১১৪] ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে মেডিকেল কলেজের মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।[১১০] ২০২৩ সালে মেডিকেল কলেজটি উদ্বোধন করা হয়।[১১৫]

কুষ্টিয়াতে মোট সাতটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মহাবিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো হলো কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ, কুষ্টিয়া ল' কলেজ, কুষ্টিয়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, গড়াই মহিলা কলেজসৈয়দ মাসুদ রুমি ডিগ্রী কলেজ। অন্যান্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যশোর বোর্ডের আওতাভুক্ত।

Remove ads

স্থাপত্য

সারাংশ
প্রসঙ্গ

পুরাতন ভবন

সূচনা বা কুষ্টিয়া পৌর ভবন ব্রিটিশ আমলে ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত একটি ভবন। এর সঠিক নির্মাণ সাল অজানা। এটি কুষ্টিয়ার জমিদার সতীশ সাহা ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। ভবনটির উচ্চতা ৪২ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬২ ফুট লম্বা। পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে দেখলে মনে হবে ভবনটি দেখতে ইংরেজি 'H' অক্ষরের মতো। ১৯৬৬ সাল থেকে ভবনটি কুষ্টিয়া পৌরসভার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[১১৬]

টেগর লজ বা কুষ্টিয়া কুঠিবাড়ি কুষ্টিয়া রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত একটি ভবন যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৮৯৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টেগোর এন্ড কোম্পানি শিলাইদহ থেকে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করেন। তিনি একই বছর এই দোতলা ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন।[১১৭][১১৮] ২০০৪ সালে ৳৫,০০,০০০ দিয়ে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটি কিনে নেয়।[১১৯]

রজব আলী খান চৌধুরী ভবন মিলপাড়ায় টেগর লজের পশ্চিমে অবস্থিত একটি ভবন যার নির্মাণ সাল ১৮৯৫। ভবনটি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। তৎকালীন সময়ের কুষ্টিয়ার সমাজ সেবক রজব আলী খান এই ভবন নির্মাণ করেছিলেন।[১২০]

চন্দ্র ভিলা থানা পাড়ায় অবস্থিত একটি পুরাতন ভবন। ১৯৩২ সালে প্রিয়নাথ দাশ নামক এক ব্যক্তি ভবনটি নির্মাণ করেন। প্রিয়নাথ দাশ ভারত বিভাজনের কিছুকাল পর ভারতে চলে যান। বর্তমানে ভবনটি কুষ্টিয়ার সিনিয়র তথ্য অফিসারের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।[১২১]

স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য

বিজয় উল্লাস ভাস্কর্য কুষ্টিয়া পৌরসভা কার্যালয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত একটি ভাস্কর্যমুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের আনন্দকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৫ সালে কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে ভাস্কর্যটির নির্মাণ করা হয়।[১২২]

মুক্তি মৈত্রী চৌড়হাস মোড়ে অবস্থিত একটি ভাস্কর্য বা স্মৃতিসৌধ। ১৯৭১ সালের ৯–১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীর অনেক সেনা নিহত হয়। পরেরদিন ১১ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয় এবং কুষ্টিয়া শত্রু মুক্ত হয়।[১২৩] ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গভর্নর তথাগত রায় স্তম্ভটি উদ্বোধন করেন। এটি বাংলাদেশে মিত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মরণে নির্মিত সর্বপ্রথম স্মৃতিস্তম্ভ।[৪৮]

গগন হরকরা বা ডাকহরকরা একটি ভাস্কর্য যার মাধ্যমে ডাকহরকরার জীবনযাপনের চিত্র ফুটে উঠেছে। ভাস্কর্যটি কুমারখালীর গগন হরকরার প্রতিকৃতি।[১২৪] ইতিহাসের অংশ ডাকহরকরা পেশা আর এই কুষ্টিয়া জেলার ব্যক্তি গগন হরকরাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃক ভাস্কর্টি নির্মিত হয়েছে।[১২৫]

পালকি ও বেহারা ভাস্কর্যটি পৌরসভা কার্যালয়ে অবস্থিত। ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া পৌরসভার তৎকালীন নগর প্রধান আনোয়ার আলী এই ভাস্কর্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভাস্কর্যের মূল নকশা প্রণয়ন করেন কিরিটী রঞ্জন বিশ্বাস। ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন।[১২৬][১২৭]

Remove ads

জনপরিসংখ্যান

আরও তথ্য বছর, জন. ...

বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী কুষ্টিয়া পৌরসভায় মোট ৫৮,২৯৫টি খানা রয়েছে ও ২,২১,৮০৬ জন মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে পুরুষ ১,১২২,২৬ জন, নারী ১,০৯৫,৭৮ জন ও হিজড়া ২ জন।[১৬][১৩১]

কুষ্টিয়া পৌরসভায় মোট ৬৬,৬৯৯ জন কর্মজীবী রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৯,০১৯ জন এবং নারী ৮,৬৮০ জন। অন্যদিকে মোট ৫৫,৩১০ জন ব্যক্তি গৃহকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন যাদের মধ্যে ৫৪,৮০৭ জনই নারী। কর্মজীবীদের মধ্যে ৭৪.৬৯ শতাংশ সেবামূলক, ২০.০২ শতাংশ শিল্প ও ৫.২৯ শতাংশ কৃষি কর্মের সঙ্গে জড়িত।[৮২]

২০১৭ সালের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জরিপ অনুযায়ী কুষ্টিয়া পৌরসভায় অভিবাসনের হার ছিল শতকরা ১১.২৪ শতাংশ। অভিবাসীদের মধ্যে শতকরা ৭৫ শতাংশ গ্রামাঞ্চলের এবং বাকিরা অন্য শহরের।[১৩২]

ধর্ম

সারাংশ
প্রসঙ্গ
কুষ্টিয়া পৌরসভায় ধর্ম (২০২২)[৮২]
  1. ইসলাম (৯৩.৬৪%)
  2. হিন্দু (৬.৩১%)
  3. খ্রিস্ট (০.০৪%)
  4. বৌদ্ধ (০.০০৬%)
  5. অন্যান্য (০.০০৩%)

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী কুষ্টিয়া পৌরসভায় বসবাসকারী ২,২১,৮০৬ জন মানুষের মধ্যে ২,০৭,৭০০ জন ইসলাম, ১৩,৯৯৯ জন হিন্দু, ৮৮ জন খ্রিস্ট, ১৩ জন বৌদ্ধ ও ৬ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী ছিলেন।[৮২]

২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী কুষ্টিয়া পৌরসভায় বসবাসকারী ১,০৮,৪২৩ জন মানুষের মধ্যে ৯৭,৮০৭ জন ইসলাম, ১০,০৯৩ জন হিন্দু, ১৩২ জন খ্রিস্ট, ২৯ জন বৌদ্ধ ও ৩৬২ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী ছিলেন।[১৩০][১৩৩]

ইসলাম

২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী কুষ্টিয়া পৌরসভায় ১২৮টি মসজিদ, ৫৭টি ঈদগাহ ও ২১টি কবরস্থান রয়েছে।[১৪] কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ শহরের প্রধান মসজিদ। মসজিদটি ১৮৯৬ সালে স্থাপিত হয়। শহরের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ হলো চৌড়হাস শাহী জামে মসজিদ যা ১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[১৩৪] ঈদগাহ ময়দানের মধ্যে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, হাউজিং কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, হাউজিং এস্টেট ঈদগাহ ও চৌড়হাস কেন্দ্রীয় ঈদগাহ উল্লেখযোগ্য।[১৩৫] কবরস্থানগুলোর মধ্যে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্থান ও চৌড়হাস কেন্দ্রীয় গোরস্থান উল্লেখযোগ্য।

কুষ্টিয়াতে লালন শাহের মাজার ছাড়াও বেশ কয়েকটি মাজার রয়েছে। জগতিতে হযরত পীর গোড়াচাঁদ-এর মাজার রয়েছে। পীর গোড়াচাঁদ কুষ্টিয়া অঞ্চল সহ নদিয়াচব্বিশ পরগনা জেলায় ইসলাম প্রচার করতেন। কথিত আছে বাদশাহ জাহাঙ্গীর তার নামে তিনশো বিঘা নিষ্কন্টক ভূমি দান করেছিলেন যা ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে নেয়। আড়ুয়াপাড়ায় প্রায় দুইশো বছরের পুরাতন একটি মাজার রয়েছে যা নফর শাহ-এর মাজার নামে পরিচিত। এখানে প্রতিবছর নফর শাহের স্মৃতিচারণায় বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোর্টপাড়ায় পীর হযরত মীর মাসুদ হেলালী এর (১৯৪১-১৯৮৬) মাজার রয়েছে। এই মাজারটি বারো শরীফ দরবার নামে পরিচিত। হিজরি সনের ১২ রবিউল আওয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এই দরবার শরীফে ভক্ত সুফীদের মিলন মেলার আয়োজন করা হয়।[১৩৬]

হিন্দুধর্ম

২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী কুষ্টিয়া পৌরসভায় ৩৫টি মন্দির ও ২টি শ্মশান রয়েছে।[১৪] কুষ্টিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য হিন্দু মন্দির হলো গোপীনাথ জিউর মন্দির। মন্দিরটি ১৯০০ সালে নলডাঙ্গার মহারাজা প্রমথ ভূষণ দেবরায়ের দানকৃত জমির উপর নির্মাণ করা হয়।[৫৯]

খ্রিস্টধর্ম

১৮৫০ সালে কুষ্টিয়াতে সাধু যোহনের গীর্জা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৮ সালে উইলিয়াম রেনউইকের মাধ্যমে গীর্জাটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি উইলিয়াম রেনউইক গীর্জার পাকা ভবন উদ্বোধন করেন। গীর্জাটি থানাপাড়ায় এনএস রোডের উত্তর পাশে অবস্থিত। গীর্জাটি পুনর্নির্মাণ করা হলে ১৯৯১ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা ও কুষ্টিয়ার বিশপ একত্রে উদ্বোধন করেন।[১৩৭]

কুষ্টিয়া খ্রিস্টান কবরস্থান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৬ সালে।[] ১৮৬৬ সালের ৬ ডিসেম্বর কলকাতা ধর্মপ্রদেশের তৎকালীন বিশপ জর্জ কটন এই কবরস্থান উদ্বোধন করেন। জর্জ কটন এইদিনে গড়াই নদীতে নিখোঁজ হন এবং আর কখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।[১৩৮] কবরস্থানের মোট আয়তন ০.৪২ একর (১৮,০০০ ফু)। এখানে মোট ২২টি স্মৃতিফলকের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন স্মৃতিফলকটি ১৮৭৬ সালের।[১৩৯]

১৯৯০ সালে ঢাকা ধর্মপ্রদেশ থেকে আলাদা হয়ে কুষ্টিয়া ধর্মপ্রদেশ গঠিত হয়। তখন থেকে কুষ্টিয়া বাংলাদেশ চার্চের একটি ধর্মপ্রদেশের সদরদপ্তর।[১৪০]

দর্শনীয় স্থান

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

চিত্রশালা

গ্রন্থপঞ্জি

  • শ. ম. শওকত আলী (১৯৮৭)। কুষ্টিয়ার ইতিহাস। কুষ্টিয়া: কল্লোল মুদ্রায়ণ।
  • মোঃ রেজাউল করিম, সম্পাদক (২০২৩)। কুষ্টিয়ার প্রত্ননিদর্শন। ঢাকা: গতিধারা। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৩৪৬০৮-১-৩
  • ড. মুহাম্মদ এমদাদ হাসনায়েন; ড. সারিয়া সুলতানা (২০২০)। ধর্মীয় ইতিহাস স্থাপত্যে কুষ্টিয়া। ঢাকা: কন্ঠধ্বনি প্রকাশনী। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৯৪৪৩৫-০-৬
  • আনোয়ার আলী। সার্ধশতবর্শ স্মারকগ্রন্থ ১৮৬৯-২০১৯ (পিডিএফ)। কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া পৌরসভাআইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৩৪৬০৮-১-৩। ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত।
  • কুমুদনাথ মল্লিক (১৯১২)। নদীয়া-কাহিনী (পিডিএফ)। রানাঘাট: পুস্তক বিপণি।
  • কুমুদনাথ মল্লিক (১৯৮৮) [১৯১২]। মোহিত রায় (সম্পাদক)। নদীয়া-কাহিনী (পিডিএফ) (দ্বিতীয় সংস্করণ)। রানাঘাট: পুস্তক বিপণি।
  • বিষ্ণু বসু, সম্পাদক (১৫ আগস্ট ১৯৫৭)। মীর মশার্‌রফ হোসেন রচনাসংগ্রহ (পিডিএফ)। কলকাতা: কমলা সাহিত্য ভবন।{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বছর (লিঙ্ক)
  • মোঃ আব্দুল হান্নান (১২ ডিসেম্বর ১৯৯২)। স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহত্তর কুষ্টিয়া। ঢাকা: পূণর্বাসন প্রকাশনী।{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বছর (লিঙ্ক)

পাদটীকা

  1. কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃক প্রকাশিত সার্ধশতবর্শ স্মারকগ্রন্থে (১৮৬৯–২০১৯) ১৮৭১ ও প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ১৮৭২ সালে উল্লেখ রয়েছে।[২৮][২৯]
  2. দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে 'তেলি সম্প্রদায়' ও প্রথম আলোর প্রতিবেদনে 'পাল সম্প্রদায়' উল্লেখ করেছে।[][৬৯]
  3. কুষ্টিয়া পৌরসভা থেকে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থের ২০০৭ এর সংস্করণে ১৮৬৬ ও ২০১৯ এর সংস্করণে ১৮৮৬ উল্লেখ রয়েছে। জর্জ কটন এই কবরস্থান উদ্বোধন অর্থাৎ পবিত্রকরণ করেন। যেহেতু তার মৃত্যু সাল ১৮৬৬ সেহেতু কবরস্থানের প্রতিষ্ঠা সালে ১৮৬৬ গ্রহণযোগ্য

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads