শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

জাহানারা ইমাম

বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ ও লেখিকা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

জাহানারা ইমাম
Remove ads

জাহানারা ইমাম (৩ মে ১৯২৯ - ২৬ জুন ১৯৯৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশি লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী। তিনি বাংলাদেশে শহীদ জননী হিসেবে পরিচিত। তার বিখ্যাত গ্রন্থ "একাত্তরের দিনগুলি"। একাত্তরে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীকালে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণ করেন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন। রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননী মর্যাদায় ভূষিত হন।[]

দ্রুত তথ্য জাহানারা ইমাম, জন্ম ...
Remove ads

জন্ম ও শৈশব

জাহানারা ইমাম (ডাক নাম জুড়ু) ১৯২৯ সালের ৩ মে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে বড়ঞা থানার অন্তর্ভুক্ত সুন্দরপুর গ্রামে রক্ষণশীল বাঙালি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[] জাহানারা ইমামের পিতা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মাতা সৈয়দা হামিদা বেগম।

শিক্ষা

জাহানারা ইমাম মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৪২ সালে। ১৯৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজে এবং ১৯৪৭ সালে সেখান থেকে বি.এ পাস করেন।[] বিখ্যাত স্থপতি শরিফুল আলম ইমাম তার স্বামী। দেশবিভাগের পর পরিবারের সঙ্গে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৬০ সালে বি.এড ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে এম.এ পড়াকালীন ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে ছয় মাস আমেরিকায় কাটান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ১৯৬৫ সালে বাংলায় এম.এ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

Remove ads

কর্মজীবন

শিক্ষক হিসাবে তার কর্মময় জীবনের প্রথম কাল কাটে ময়মনসিংহ শহরে। সেখানে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসাবে ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা (১৯৫২-১৯৬০), বুলবুল একাডেমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা (১৯৬২-১৯৬৬)এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক (১৯৬৬‌-১৯৬৮)হিসাবে তার কর্মজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও অংশকালীন শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করেন।

রাজনৈতিক জীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শাফি ইমাম রুমী শহীদ হন। এছাড়া যুদ্ধের সময় তার স্বামী মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী শরীফ ইমামও মৃত্যুবরণ করেন।[] আশির দশকের শুরুতে, ১৯৮২ সালে তিনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। প্রতি বছর একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো তাকে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠা

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়।

সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ গণ-আদালত-এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠান করে। গণ আদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণ আদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।

গণ আদালতের রায় প্রতিষ্ঠা

জাহানারা ইমাম গণ আদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এই গণ আদালতের সদস্য ছিলেনঃ এডভোকেট গাজিউল হক, ডঃ আহমদ শরীফ, মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সুফিয়া কামাল, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, শওকত ওসমান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) কাজী নুরুজ্জামান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার শওকত আলী খান, আসিফ নজরুল

গণআদালত অনুষ্ঠিত হবার পর সরকার ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে অ-জামিনযোগ্য মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর লাখো জনতার পদযাত্রার মাধ্যমে জাহানারা ইমাম ১২ এপ্রিল ১৯৯২ সালে গণ আদালতের রায় কার্যকর করার দাবি সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করেন। ১০০ জন সাংসদ গণ আদালতের রায়ের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেন।

জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, সংসদ যাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মহাসমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। সরকার ৩০ জুন ১৯৯২ সালে সংসদে ৪ দফা চুক্তি করে। ২৮ মার্চ ১৯৯৩ সালে নির্মূল কমিটির সমাবেশে পুলিশ বাহিনী হামলা চালায়। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন জাহানারা ইমাম, এবং তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করা হয়।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও গঠিত হয় নির্মূল কমিটি এবং শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠলে আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন জাহানারা ইমাম। গোলাম আযমসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনকে সমর্থন দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে।

২৬ মার্চ ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণআদালত বার্ষিকীতে জাহানারা ইমামের নেত্রত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষিত হয় এবং আরও আটজন যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন, আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মোঃ কামরুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আব্দুল কাদের মোল্লা

২৬ মার্চ ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণ আদালতের ২য় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাজপথের বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা হচ্ছেনঃ শওকত ওসমান, কে এম সোবহান, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ, অনুপম সেন, দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, খান সারওয়ার মুরশিদ, শামসুর রাহমান, শফিক আহমেদ, আবদুল খালেক এবং সদরুদ্দিন। এই সমাবেশে আরও আটজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়।

Remove ads

মৃত্যু

Thumb
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কবর।

জাহানারা ইমাম ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ডেট্রয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এরপূর্বে অসুস্থতার জন্য তাকে ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। ৪ জুলাই তার মৃতদেহ বাংলাদেশে আনা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার মৃতদেহ গ্রহণ করেন জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ৫ জুলাই সকালে জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার কফিন রাখা হয়। দুপুরে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাযা শেষে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের আটজন সেক্টর কমান্ডার শহীদ জননীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

তার মৃত্যুর পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি ২৮ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত শোক সপ্তাহ এবং ৬ জুলাই জাতীয় শোক দিবস পালন করে।

Remove ads

গ্রন্থতালিকা

শিশু সাহিত্য

  • গজকচ্ছপ (১৯৬৭)
  • সাতটি তারার ঝিকিমিকি (১৯৭৩)
  • বিদায় দে মা ঘুরে আসি (১৯৮৯)

অনুবাদ গ্রন্থ

  • জাগ্রত ধরিত্রী (১৯৬৮)
  • তেপান্তরের ছোট্ট শহর (১৯৭১)
  • নদীর তীরে ফুলের মেলা (১৯৬৬)

মুক্তিযুদ্ধ

  • বীরশ্রেষ্ঠ (১৯৮৫)
  • একাত্তরের দিনগুলি (১৯৮৬) []

অন্যান্য

  • অন্য জীবন (১৯৮৫)
  • জীবন মৃত্যু (১৯৮৮)
  • শেক্সপীয়রের ট্রাজেডি (১৯৮৯)
  • নিঃসঙ্গ পাইন (১৯৯০)
  • বুকের ভিতরে আগুন (১৯৯০)
  • নাটকের অবসান (১৯৯০)
  • দুই মেরু (১৯৯০)
  • প্রবাসের দিনগুলি (১৯৯২)
  • ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস (১৯৯১)
  • বাংলা উচ্চারণ অভিধান (যৌথভাবে সম্পাদিত) (১৩৭৫)
  • এন ইনট্রোডাকশন টু বেঙ্গালি ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার (খণ্ড-১) (১৯৮৩)
Remove ads

পুরস্কার ও সম্মাননা

জাহানারা ইমাম বিভিন্ন সময় নিম্নোক্ত পুরস্কার/পদকে ভূষিত হন-

  • বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮)
  • কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮)
  • বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১)
  • আজকের কাগজ হতে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার (বাংলা ১৪০১ সনে)
  • নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা (১৯৯৪)
  • স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৭)
  • রোকেয়া পদক (১৯৯৮)
  • অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (২০০১)
  • ইউনিভার্সাল শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কার (২০০১)
  • শাপলা ইয়ূথ ফোর্স
  • কারমাইকেল কলেজ গুণীজন সম্মাননা
  • মাস্টারদা সূর্য সেন পদক
  • মুক্তিযুদ্ধ উৎসব-ত্রিপুরা সাংগঠনিক কমিটি
  • বাংলাদেশ নারী পরিষদ
  • রোটারাক্ট ক্লাব অব স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ
  • বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কার (২০০১)
  • বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংঘ
  • মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
Remove ads

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads