শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া

একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া
Remove ads

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ( ১৯১১ - ১ জুন, ১৯৬৯) বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ও রাজনীতিক। তিনি মানিক মিয়া নামেই সমধিক পরিচিত। শেখ মুজিব তাঁকে 'মানিক ভাই' নামে ডাকতেন এবং তার অবদানের কথা স্বীকার করতেন।[] ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক ইত্তেফাকে রূপান্তরিত হয় এবং একাধারে প্রকাশক, মুদ্রাকর হিসেবে মানিক মিয়ার নামই ছাপানো হয়।[][] ষাটের দশকে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলন ও ছয় দফার আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রুপ দেওয়ার পেছনে মানিক মিয়া ছিলেন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।[][] [] শেখ মুজিব নির্দেশক্রমে ১৯৭৪ সালের জুনে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তাটির নামকরণ 'মানিক মিয়া এভিনিউ' করা হয়েছিল তাঁরই নামানুসারে।[]

দ্রুত তথ্য তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জন্ম ...
Remove ads

প্রারম্ভিক ও শিক্ষা জীবন

মানিক মিয়ার জন্ম ১৯১১ সালে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মুসলেম উদ্দিন মিয়া। শৈশবেই মানিক মিয়ার মা মারা যান। গ্রামের পূর্ব ভান্ডারিয়া মডেল প্রাইমারি স্কুলে মানিক মিয়ার শিক্ষা জীবনের শুরু। সেখানে কিছুদিন পড়ার পর তিনি ভর্তি হন ভান্ডারিয়া হাই স্কুলে। স্কুল জীবন থেকেই তার মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। তখন থেকেই তিনি ছিলেন সহচর-সহপাঠীদের কাছে ক্ষুদে নেতা। ভান্ডারিয়া স্কুলে মানিক মিয়া অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর চলে যান পিরোজপুর জেলা সরকারী হাই স্কুলে। সেখান থেকেই তিনি কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৩৫ সালে মানিক মিয়া ডিস্টিংশন সহ বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।[]

Remove ads

কর্মজীবন

পড়াশোনা শেষ করে তিনি পিরোজপুর জেলা সিভিল কোর্টে চাকরি শুরু করেন। চাকরি করার সময় তিনি একবার বরিশাল জেলা তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পান। কোর্টের চাকরিকালীন সময়ে জনৈক মুন্সেফ একদিন তার সাথে খারাপ আচরণ করেন। এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করে চাকুরি ছেড়ে দেন। এ চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি যোগ দেন করেন তদানীন্তন বাংলা সরকারের জনসংযোগ বিভাগে বরিশাল জেলার সংযোগ অফিসার হিসেবে। সে চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর তিনি কলকাতার প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অফিস সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। রাজনৈতিক প্রচারকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে একটি প্রচারপত্রের প্রয়োজন ছিলো এবং সেই চিন্তা থেকেই মানিক মিয়ার উদ্যোগে ১৯৪৬ সালে আবুল মনসুর আহমেদের সম্পাদনায় বের হয় 'দৈনিক ইত্তেহাদ'। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে 'দৈনিক ইত্তেহাদ'-এর পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। এ পত্রিকার সাথে মানিক মিয়া মাত্র দেড় বছরের মতো যুক্ত ছিলেন। এই পত্রিকার মাধ্যমেই তার গণমাধ্যম জগতের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। দেশ বিভাগের পর থেকে পত্রিকাটি ঢাকায় নিয়ে আসার অনেক চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তিনবার পত্রিকাটিকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশে বাধা দেয়া হয় এবং এখানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বার বার এভাবে পাকিস্তানি সরকার কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। মানিক মিয়াও তখন ঢাকায় চলে আসেন।

Thumb
ঢাকায় মানিক মিয়ার বাড়ি

১৯৪৮ সালেই পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরা মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে নামে। এই ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালির পাকিস্তান মোহ কিছুটা কাটতে থাকে। ১৯৪৯ সালে মুসলীম লীগের বিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়। একই বছরে এই রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক-এর। আবদুল হামিদ খান ভাসানী পত্রিকাটির আনুষ্ঠানিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৫১ সালের ১৪ আগস্ট থেকে মানিক মিয়া এই পত্রিকার পূর্ণ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক ইত্তেফাকে রূপান্তরিত হয়। এ সময়ে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৯৫৯ সালে তিনি এক বছর জেল খাটেন। ১৯৬৩ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন। এ সময় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা নিষিদ্ধ এবং নিউ নেশন পৃন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর ফলে তার প্রতিষ্ঠিত অন্য দুটি পত্রিকা ঢাকা টাইমসপূর্বাণী বন্ধ হয়ে যায়। গণআন্দোলনের মুখে সরকার ইত্তেফাকের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ফলে ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটি আবার প্রকাশিত হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ইত্তেফাকের রাজনৈতিক হালচাল ও পরবর্তী সময়ে মঞ্চে নেপথ্যে কলামে মোসাফির ছদ্মনামে নিয়মিত উপসম্পাদকীয় লিখতেন। [] ১৯৬৩ সালে তিনি আন্তর্জাতিক প্রেস ইন্সটিটিউটের পাকিস্তান শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কাশ্মীরে সৃষ্ট দাঙ্গা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়লে তা প্রতিরোধে স্থাপিত দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির প্রথম সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

Remove ads

মৃত্যু

দীর্ঘ সংগ্রামের পর একটা সময়ে এসে মানিক মিয়া কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তার শরীর ভেঙ্গে পড়ে। এ অবস্থায় ১৯৬৯ সালে ২৬ মে এই ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়েই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কাজে রাওয়ালপিন্ডি যান। সেখানেই ১৯৬৯ সালের ১ জুন রাতে তিনি মারা যান।[১০]

পরিবারের সদস্য

পিরোজপুর জেলা সিভিল কোর্টে কর্মরত থাকাবস্থায় ১৯৩৭ সালে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার অন্তর্গত গোয়ালদি গ্রামের অভিজাত পরিবারের মরহুম খোন্দকার আবুল হাসান সাহেবের কন্যা মাজেদা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার দুই ছেলে হলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনআনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মইনুল হোসেন শেখ মুজিব সরকারের এমপি ও ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। মানিক মিয়ার ছোট ছেলে জাতীয় পার্টি (জেপি) সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি এরশাদশেখ হাসিনার সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিএনপির প্রথম আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

Remove ads

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads