শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,[খ] সংক্ষেপে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। দলটি ১৯৭১/২–৭৫, ১৯৯৬–২০০১ এবং ২০০৯–২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ছিল। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী প্রধানতম দল।[১১] ২০২৪ সালের জুলাই গণহত্যার দায়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালের ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।[১২] এরই ধারাবাহিকতায় ১২ মে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে।[১৩]
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন হয়। পরবর্তীকালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে এর নামকরণ করা হয় "আওয়ামী লীগ"। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের প্রতীকের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সাল থেকে দলটির নির্বাচনী প্রতীক নৌকা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বামপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহ একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করে, যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকগণ প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালের আগস্টে সংঘটিত অভ্যুত্থানের পর দলটি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং এর বহু জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মী নিহত হন বা কারাবন্দি হন। ১৯৮১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা দলটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এখনও তিনি সেই পদে রয়েছেন।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ-এর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। দলটি ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ শাসনকালে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থেকে পশ্চাদপসরণ ঘটে,[১৪] এবং দলটিকে ধারাবাহিকভাবে কর্তৃত্ববাদী[গ] এবং স্বৈরতান্ত্রিক[ঘ] দল হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর দলটি গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। ২০২৫ সালের ১০ মে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের সকল ধরনের অনলাইন ও সরাসরি কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[২১] এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে যতদিন না আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দলের ও নেতাদের বিচার সম্পন্ন করে।[১২] বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদের যথাক্রমে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, চারজন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রতিষ্ঠা

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন টাঙ্গাইলের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরবর্তীকালে, ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয়: 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'।[২২]
আওয়ামী লীগের জন্মসূত্রের সঙ্গে ঢাকা ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের উদ্যোগের সম্পর্ক অনস্বীকার্য। ২৩ জুনের সম্মেলনের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শওকত আলী। তার উদ্যোগে ১৫০ নং মোগলটুলিস্থ শওকত আলীর বাসভবন এবং কর্মী শিবির অফিসকে ঘিরে বেশ কয়েক মাসের প্রস্তুতিমূলক তৎপরতার পর ২৩ জুনের কর্মী সম্মেলনে দলের ঘোষণা দেয়া হয়। শওকত আলীর অনুরোধে কলকাতা থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি মামলা পরিচালনার কাজে ঢাকায় এলে তিনি শওকত আলীকে মুসলিম লীগ ছেড়ে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। শওকত আলী এ পরামর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের নেতৃবৃন্দকে নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন। এসময় কর্মী শিবিরের প্রধান নেতা ছিলেন শামসুল হক। কামরুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, তাজউদ্দীন আহমদ, আতাউর রহমান খান, আবদুল আউয়াল, মুহম্মদ আলমাস, শামসুজ্জোহা প্রমুখ প্রথম দিকে এবং পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান কর্মী শিবির কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন। মুসলিম লীগের আবুল হাশিম-হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী গ্রুপ নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের অন্যায় কাজগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যেই এখানে কর্মী শিবির গড়ে তুলেছিলেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৪৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকা এলে তার সঙ্গে শওকত আলীর আলোচনা হয়। শওকত আলী মওলানাকে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরকেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতার কথা জানান। এসময় মওলানা ভাসানী আলী আমজাদ খানের বাসায় অবস্থান করছিলেন। শওকত আলীর সঙ্গে তার প্রাথমিক আলোচনা সেখানেই হয়। এই আলোচনার সূত্র ধরে নতুন দল গঠনের জন্য একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন শওকত আলী। সেজন্যে ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মওলানা ভাসানী সেই বৈঠকে যোগদান করেন। এসময় খোন্দকার আবদুল হামিদের সঙ্গে পরামর্শ করে শওকত আলীর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, ইয়ার মুহম্মদ খানকে সম্পাদক এবং খন্দকার মুশতাক আহমদকে দপ্তর সম্পাদক করে অন্যদেরসহ একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়।[২৩]
উপর্যুক্ত সাংগঠনিক কমিটি ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এক সম্মেলন আহ্বান করে। রোজ গার্ডেনে ২৩ জুনের বিকেল ৩টায় সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, শওকত আলী, আনোয়ারা খাতুন, ফজলুল কাদের চৌধুরী, আবদুল জব্বার খদ্দর, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আতাউর রহমান খান, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আলী আমজাদ খান, শামসুদ্দীন আহমদ (কুষ্টিয়া), ইয়ার মুহম্মদ খান, মওলানা শামসুল হক, মওলানা এয়াকুব শরীফ, আবদুর রশিদ প্রমুখ।[২৩]
প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন টাঙ্গাইলের মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক। শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে (খায়ের মিয়া) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। এসময় শেখ মুজিব কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
২৪ জুন বিকেলে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্যে জনসভা করে। সভায় আনুমানিক প্রায় চার হাজার লোক উপস্থিত হয়।
১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। উল্লেখ্য যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিলো তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু'অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর দলটি কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও নেজামে ইসলামের সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।
১৯৫৪ সালের মার্চের আট থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।
২৪ বছরের পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী মুসলিম লীগ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে দু'বছর প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১৩ মাস কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার ছিল।
১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নতুন নাম রাখা হয়: 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'।
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে দল ভাঙন দেখা দেয়। ওই বছরের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারি সম্মেলনে দলে বিভক্তির ঘটনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় মাওলানা ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।[২৪]
সরকার গঠন
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট-সরকার গঠন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ও শোষণের ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০টি আসন লাভ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে।
ছয় দফা আন্দোলন
ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৬৬ সালে পাঁচ ও ছয়ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি যৌথরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয় দফার সমর্থনে সর্ব প্রথম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘিরপাড়ে চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর তৎকালীন বৃহত্তর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এক দফার প্রবক্তা চট্টল শার্দুল জননেতা এম এ আজিজের নেতৃত্বে প্রথম প্রকাশ্যে সভা করেন বঙ্গবন্ধু। সেই সভায় এম এ আজিজ ঘোষণা করেন যে ছয় দফা না মানলে এক দফার আন্দোলন চলবে, সেটা হচ্ছে স্বাধীনতার আন্দোলন।পরবর্তীতে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়।
ছয় দফা দাবির দাবিগুলো নিম্নরূপ:
- প্রথম দফা: সরকারের বৈশিষ্ট্য হবে যৌথরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয় পদ্ধতির; তাতে যৌথরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে প্রত্যক্ষ এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার প্রতিনিধি নির্বাচন জনসংখ্যার ভিত্তিতে হবে।
- দ্বিতীয় দফা: কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয় এবং তৃতীয় দফায় ব্যবস্থিত শর্তসাপেক্ষ বিষয়।
- তৃতীয় দফা: পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা পারস্পরিকভাবে কিংবা অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময় করা চলবে। অথবা এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে এই শর্তে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না পারে।
- চতুর্থ দফা: রাজস্ব ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে। প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান দেয়া হবে। সংবিধানে নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে জমা হয়ে যাবে। এহেন সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারটি এমন একটি লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে থাকে।
- পঞ্চম দফা: যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে, সেই অঙ্গরাজ্যের সরকার যাতে স্বীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে তার পৃথক হিসাব রাখতে পারে, সংবিধানে সেরূপ বিধান থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে, সংবিধান নির্দেশিত বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত অনুপাতের ভিত্তিতে অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে তা আদায় করা হবে। সংবিধান নির্দেশিত বিধানানুযায়ী দেশের বৈদেশিক নীতির কাঠামোর মধ্যে, যার দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্য সম্পর্কে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সরকারগুলোর হাতে থাকবে।
- ষষ্ঠ দফা: ফলপ্রসূভাবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সাহায্যের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে মিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনীতিক সংগ্রামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এই সময়ে শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ আরও কিছু ছাত্র সংগঠন এক সাথে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে তাদের ঐতিহাসিক এগারো দফা কর্মসূচী পেশ করেন যা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হিসেবে সহায়তা করে।
সত্তরের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ উভয় ক্ষেত্রে নির্বাচন করে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের চিত্ররূপঃ
একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলন
গণআন্দোলন ও আইয়ুব খানের পতনের পটভূমিতে '৭০ এর নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আইনসভায় (জাতীয় পরিষদ) পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ ৩১৩ আসন-বিশিষ্ট পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সরকার গঠনে ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যোগ্যতা অর্জন করে। প্রাদেশিক পরিষদের আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন পায় দলটি। জাতীয় পরিষদের সাতটি মহিলা আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের দশটি মহিলা আসনের সবগুলোতেই জয়ী হয় আওয়ামী লীগ।[২৫]
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বাঙালির অধিকার নস্যাৎ করার পথ বেছে নেয়।
যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকার
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে গণপরিষদের সদস্যদের নিয়ে ১০ ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। ১৭ ই এপ্রিল ১৯৭১ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে।
রাষ্ট্রপতি - শেখ মুজিবুর রহমান
উপ-রাষ্ট্রপতি - সৈয়দ নজরুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী - তাজউদ্দীন আহমদ
অর্থমন্ত্রী - মুহাম্মদ মনসুর আলী
পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী - খন্দকার মোশতাক আহমেদ
স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী - আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান
বাকশাল গঠন
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে রচিত হয়েছিল এক নতুন অধ্যায়ের। ওইদিন সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান পেশকৃত চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস হয়। এর মাধ্যমে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন তথা বাকশাল গঠনের পথ উন্মুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়। বিল পাসের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতিতে পরিণত হন। এক নজিরবিহীন ন্যূনতম সময়ের মধ্যে (মাত্র ১১ মিনিট) চতুর্থ সংশোধনী বিলটি সংসদে গৃহীত হয় এবং তা আইনে পরিণত হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিলটি নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা বা বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়নি। এই বিলের মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থায় এক নজিরবিহীন পরিবর্তন সাধন করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান দেশের নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকারী হন। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে তিনি এ পদক্ষেপকে তার ‘দ্বিতীয় বিপ্লবে’র সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেন।[২৬]
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন
১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে। এই আন্দোলন চলাকালে ১০ই নভেম্বর পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নিহত হন।
জোট গঠন
১৯৯৮ সালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম শক্তিকে একতাবদ্ধ করে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন করার উদ্দেশে এগারোটি দল মিলে গঠন করে একটি রাজনৈতিক জোট, যা ১১ দলীয় জোট নামেই পরিচিত হয়।
২০০৪ সালে ২৩ দফা দাবিতে ১১ দলীয় জোটের সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-মশাল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-কুঁড়েঘর) এই তিনটি দল মিলে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট।
পরবর্তীতে, ৪টি দল ১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল,বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মাহবুব) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) - এই ৪টি দল ১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। তবে, বাসদের একাংশ ১৪ দলীয় জোটে থেকে যায়। ফলে, ১৪ দলীয় জোটে দলের সংখ্যা হয় ১১টি।
অল্প কিছুদিন পরে, গণফোরাম বাংলাদেশ ১৪ দলীয় জোট ত্যাগ করলে দলের সংখ্যা হয় ১০টি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে দলের সংখ্যা হয় ১২টি।
কিছুদিন আগে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) দুই ভাগে বিভক্ত হয়। দুই ভাগই ১৪ দলীয় জোটে আছে বিধায় ১৪ দলীয় জোটের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৩টি দল।[২৭][২৮]
৯ম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৬ জানুয়ারি ২০০৯-এ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মত শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২ জানুয়ারি ২০০৯ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ৩ জানুয়ারি ২০০৯ স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ৩য় তফসিলের ৫ বিধি অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও স্বতন্ত্র ২৫৮ জন সংসদ সদস্যের শপথ বাক্য পাঠ করান। প্রথম দিনে শপথ গ্রহণকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২২৭ জন, জাতীয় পার্টির ২৫ জন, জাসদের ৩ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ২ জন ও স্বতন্ত্র ১ জন সংসদ সদস্য ছিলেন। শপথ গ্রহণের আগে মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন রেখে বাকি দুটি আসন (রংপুর-৬ ও বাগেরহাট-১) ছেড়ে দেন। ৪ জানুয়ারি ২০০৯ আওয়ামী লীগের একজন, এলডিপি’র একজন ও স্বতন্ত্র তিনজনসহ মোট পাঁচজন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন।
শপথ গ্রহণের পরপরই আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের প্রবীণ নেতা জিল্লুর রহমানকে উপনেতা নির্বাচন করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সংসদীয় নেতা হওয়ায় শেখ হাসিনাই সংসদ নেতা। নবম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নির্বাচিত হন অষ্টম সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ।
দশম জাতীয় সংসদ
০৫ জানুয়ারি ২০১৪ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মত শপথ নেন শেখ হাসিনা। তবে আইন পাশের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন করায় দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি সহ অধিকাংশ দল এই নির্বাচন বয়কট করে। ফলে ১৫৩ টি আসনে আওয়ামীলীগ বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় জয় লাভ করে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত নির্বাচন হিসেবে পরিচিত।
একাদশ জাতীয় সংসদ
২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত শপথ নেন। এই নির্বাচনে বিএনপি সহ অন্যান্য দলগুলো অংশগ্রহণ করলে তারা রাতে ব্যালটবাক্স ভরে রাখার অভিযোগ করে। একারনে একে রাতের ভোটের নির্বাচন বলা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ এর মত এই নির্বাচনেও বিএনপি সহ অধিকাংশ বিরোধী মতাদর্শের দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে এবং জনগণকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান করে। শক্ত বিরোধী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামীলীগ তাদের দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায়। ফলে এই নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। এই সংসদ প্রায় ছয় মাস স্থায়ী হয়। এরপর ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে এই সরকারের পতন ঘটে।
২৪ এর সরকার পতন
২০২৪ সালের ৫ই জুন হাইকোর্ট ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহ অন্য কোটা বহালের পক্ষে রায় দিলে দেশে আবারও কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন গড়ে ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর একটি প্লাটফর্ম থেকে কোটা সংস্কার ও এর স্থায়ী সমাধানের জন্য সংসদে আইন পাশের দাবির প্রেক্ষিতে আন্দোলন শুরু করে। ফলে তারা বাংলা ব্লকেড ও কমপ্লিট শাটডাউনের মত কর্মসূচির ডাক দেয়। আন্দোলন দমনে সরকার ছাত্রলীগ, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিকে ব্যবহার করে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে ব্যাপক গণহত্যা সংঘটিত করে। এক পর্যায়ে কারফিউ জারী করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ সহ অসংখ্য তরুন-তরুণী, শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ এই আন্দোলন শহীদ হন। ফলে গণহত্যার বিচার সহ ছাত্ররা ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করে। পরবর্তী ছাত্ররা ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের ১ দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। এরপর ৫ আগস্ট ঢাকায় লং মার্চ ঘোষণা করে। ওইদিন ছাত্রজনতার ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটে।
Remove ads
বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
২৪ শে ডিসেম্বর ২০২২ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২ তম কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়[২৯]। সেখানে ৪৮ জনের নাম ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে আগামী তিন বছরের জন্যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়[৩০] এরপর ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে মাশরাফিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়[৩১]। তারপর বাকি ফাঁকা পদগুলোতে নাম আসে ০১ জানুয়ারি ২০২৩ অনুষ্ঠিত গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভা শেষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণা মাধ্যমে[১৫]। ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ৩টি পদ এখনো ফাঁকা রয়েছে[১৫]।
সভাপতি
- সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য
- ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন
- মতিয়া চৌধুরী
- শেখ ফজলুল করিম সেলিম
- কাজী জাফর উল্লাহ
- পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য
- আবদুর রাজ্জাক
- মুহাম্মদ ফারুক খান
- শাজাহান খান
- মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম
- অ্যাড. কামরুল ইসলাম
- ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন
- জাহাঙ্গীর কবির নানক
- আব্দুর রহমান
- জেবুন্নেছা হক
- এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
- সিমিন হোসেন রিমি
সাধারণ সম্পাদক
- যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক
- কোষাধ্যক্ষ এইচ. এন. আশিকুর রহমান
- অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক: ওয়াসিকা আয়শা খান
- আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: ড. শাম্মী আহমেদ
- আইন বিষয়ক সম্পাদক: অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু
- কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক: ফরিদুন্নাহার লাইলী
- তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক: ড. সেলিম মাহমুদ
- ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক: আমিনুল ইসলাম আমিন
- দপ্তর সম্পাদক: ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
- ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক: অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা
- প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক: আব্দুস সোবহান গোলাপ
- বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক: দেলোয়ার হোসেন
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক: ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবদুস সবুর
- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক: অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস
- যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক: মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা
- শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক: শামসুন নাহার চাঁপা
- শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক: মোঃ সিদ্দিকুর রহমান
- সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক: শ্রী অসীম কুমার উকিল
- স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক: ডা. রোকেয়া সুলতানা
- মহিলা বিষয়ক সম্পাদক: জাহানারা বেগম
- সাংগঠনিক সম্পাদক
- আহমদ হোসেন
- বি এম মোজাম্মেল হক
- আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন
- এস এম কামাল হোসেন
- মির্জা আজম
- আফজাল হোসেন
- শফিউল আলম নাদেল
- শ্রী সুজিত রায় নন্দী
- উপ-সম্পাদক
- উপ-দপ্তর সম্পাদকঃ সায়েম খান
- উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকঃ সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম
- কার্যনির্বাহী সদস্যবৃন্দ
- আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ
- নুরুল ইসলাম ঠান্ডু
- বিপুল ঘোষ
- দীপঙ্কর তালুকদার
- আমিরুল ইসলাম মিলন
- বেগম আখতার জাহান
- ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী
- প্রফেসর মেরিনা জাহান
- পারভীন জামান কল্পনা
- অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম সুমি
- অধ্যাপক মোঃ আলী আরাফাত
- অ্যাডভোকেট তারানা হালিম
- অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম
- অ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া
- আনোয়ার হোসেন
- আনিসুর রহমান
- শাহাবুদ্দিন ফরাজী
- ইকবাল হোসেন অপু
- মোঃ গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু
- মারুফা আক্তার পপি
- উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং
- অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা
- মোহাম্মদ সাঈদ খোকন
- আজিজুস সামাদ আজাদ ডন
- সাখাওয়াত হোসেন শফিক
- নির্মল কুমার চ্যাটার্জি
- তারিক সুজাত
বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ
০১ জানুয়ারি ২০২৩ পরবর্তী তিন বছরের জন্য বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়। বর্তমান কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৪৬[৩২]। দলের গঠনতন্ত্রে অনুযায়ী উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা সর্বনিম্ন ৫১[৩৩]। দলীয় সভাপতি চাইলে উপদেষ্টা পরিষদে আরও বেশি নেতাদের স্থান দিতে পারেন।[১৫]
- আমির হোসেন আমু
- তোফায়েল আহমেদ
- ড. মশিউর রহমান
- অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন
- রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু
- শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন
- নুরুল ইসলাম নাহিদ
- হাবিবুর রহমান সিরাজ
- ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর
- ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ
- সতীশ চন্দ্র রায়
- অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেক
- অধ্যাপক আ. ফ. ম. রুহুল হক
- কাজী আকরাম উদ্দীন
- অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান
- অনুপম সেন
- অধ্যাপক হামিদা বানু
- অধ্যাপক হোসেন মনসুর
- অধ্যাপিকা সুলতানা শফি
- মির্জা এম এ জলিল
- গোলাম মওলা নকশবন্দি
- এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী
- মোহাম্মদ জমির
- প্রণব কুমার বড়ুয়া
- মেজর জেনারেল আব্দুল হাফিজ মল্লিক পি. এস. সি. (অব.)
- অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান খান
- গওহর রিজভী
- অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক
- মো. রশিদুল আলম
- স্থপতি ইয়াফেস ওসমান
- অধ্যক্ষ মতিউর রহমান
- সালমান এফ রহমান
- চৌধুরী খালেকুজ্জামান
- ইনাম আহমেদ চৌধুরী
- মোজাফফর হোসেন পল্টু
- আতাউর রহমান
- আলহাজ্ব এ কে এম রহমত উল্লাহ
- ড. শামসুল আলম
- মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপপু
- অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান
- অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা
- মতিয়ার রহমান খান
- হারুনুর রশিদ
- অধ্যাপিকা সাদেকা হালিম
- অধ্যাপিকা ড ফারজানা ইসলাম
- মাজেদা রফিকুন্নেছা (সাবেক রাষ্ট্রদূত)
Remove ads
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
মতাদর্শ
সারাংশ
প্রসঙ্গ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা

আওয়ামী লীগের মতাদর্শ গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটের মধ্য দিয়ে। দলটির গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত বর্তমান মতাদর্শে দলের দর্শন ও কর্মসূচি পরিচালনার জন্য চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে।[৩৪] তন্মধ্যে রয়েছে: গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে এসব নীতির উৎস খুঁজে পাওয়া যায়।[৩৫][৩৬][৩৭]
অর্থনীতি
পূর্বে দলটি গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পক্ষে কথা বলেছিল। সোভিয়েত ও ভারতীয় অর্থনৈতিক মডেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত অর্থনীতির অধীনে কঠোর সুরক্ষাবাদ, রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ এবং অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং সীমিত বাজার কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছিল, যেই ব্যবস্থাটিকে "না পুঁজিবাদী, না সমাজতান্ত্রিক" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।[৩৮] ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার পর থেকে দলটি অর্থনৈতিকভাবে আরও উদার অবস্থানকে সমর্থন করতে শুরু করে এবং রাজনৈতিক মতপরিসরে কেন্দ্রপন্থী মতাদর্শের দিকে সরে আসে। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে সমাজতন্ত্র একটি ব্যর্থ ব্যবস্থা ছিল।[৩৯] বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাজার অর্থনীতি ও বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান অর্থনৈতিক মতাদর্শকে সামাজিক উদারনীতিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ তার ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি দ্রুত-উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করার কর্মপরিকল্পনা "রূপকল্প ২০২১" এবং "ডিজিটাল বাংলাদেশ" ঘোষণা করেছিল।[৪০] তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কর্মসূচিটি প্রযুক্তিগত আশাবাদ ও গণমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় দমন, স্বল্প ইন্টারনেট অনুপ্রবেশ, অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্মসূচির প্রতীক হিসেবে সমালোচিত হয়েছিল।[৪১] দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ তার ইশতেহারে রূপকল্প ২০৪১ কাঠামোর সাথে যুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, এটি একটি জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা যার লক্ষ্য দেশকে নিম্ন আয় বৈষম্য ও উচ্চ জীবনযাত্রার মানসহ প্রযুক্তিগতভাবে একটি উন্নত ও টেকসই সমাজ হিসাবে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানকে আরও উন্নত করা।[৪২][৪৩][৪৪]
পরিবেশবাদ
২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫শ সংশোধনী পাস করে যেখানে ১৮ক অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করা হয় যেখানে পরিবেশের রক্ষা ও উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[৪৫] শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে দেশের পরিবেশ রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। তাঁর সরকার ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ও গ্রহণ করেছে, এটি একটি "অভিযোজন-ভিত্তিক প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা, যেখানে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবহার, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং উন্নয়ন ফলাফলের উপর এর মিথস্ক্রিয়া বিবেচনা করা হয়"।[৪৬] শেখ হাসিনা সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, দেশকে সবুজায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোভাব প্রচারের জন্য প্রশংসিত হয়েছে।[৪৭]
পররাষ্ট্রনীতি
সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও প্রভুত্ব নয়, কারো সাথে বৈরিতা নয়–বঙ্গবন্ধুর এই চেতনায় আওয়ামী লীগ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর এই উক্তিটি ২০২৩ সালে জাতিসংঘের এক প্রস্তাবনায়ও স্থান লাভ করে।[৪৮] ১৯৭২ এবং ১৯৭৫ সালের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে "ব্যক্তি মুজিবের প্রভাব ছিল প্রকট"।[৪৯](p92) শেখ মুজিব নিজে তাঁর দেশকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।[৪৯](p92) তাঁর সরকার ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর মধ্যেই বিশ্বের প্রধান দেশগুলোর থেকে স্বীকৃতি অর্জনে সফল হয়েছিল, যদিও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও সৌদি আরব ১৫ আগস্টের পরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।[৪৯](p92)
আওয়ামী লীগকে প্রায়ই ভারতপন্থী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক উপভোগ করেছে।"[৫০] ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার অধীনে সরকার গঠন করার পর তাঁর সরকার একটি ভারতমুখী পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে।[৪৯](p97) এটি ২০০৯ সালে যখন তিনি দ্বিতীয়বার ক্ষমতা লাভ করেন তখন থেকে অব্যাহত রয়েছে। ২০১৫ সালে হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে একটি ঐতিহাসিক ভূমি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করেন যা দশকব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে।
চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। "হাসিনার অধীনে ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।"[৫১]
শেখ হাসিনা সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেয়, যার জন্য তিনি দেশে-বিদেশে কৃতিত্ব ও প্রশংসা লাভ করেন।[৫২]
আওয়ামী লীগ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ইসরায়েলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছিল।[৫৩] ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, "আমরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছি এবং ইসরায়েলিদের দ্বারা তাঁদের ভূমি দখল কখনই গ্রহণযোগ্য নয়"।[৫৪]
Remove ads
সমালোচনা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
কর্তৃত্ববাদ
বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আওয়ামী লীগকে কর্তৃত্ববাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[১৫][৫৫][৫৬][৫৭][৫৮] ২০১১ সালে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও[৫৯] আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে সংবিধানের ১৫শ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে।[৬০] ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার অনেক নেতৃস্থানীয় সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল এবং বিরোধী পক্ষের সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে ও আটক করেছে।[৬১] আলী রিয়াজের মতে, ২০১৮ সাল থেকে "আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাজনীতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে"।[৫৭] ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে দলটি সরকারে "বাকস্বাধীনতার উপর কর্তৃত্ববাদী হামলা, সমালোচকদের গ্রেপ্তার এবং গণমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।"[৬২] ২০১৮ সালে যাঁরা দলের সমালোচনা করেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে পূর্বের সহিংস একটি হামলার পর এটি সংঘটিত হয়।[৬৩] দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনগুলো অনিয়মের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল।[৬৪][৬৫]
রক্ষীবাহিনীর বর্বরতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে গঠিত এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সক্রিয় আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত সশস্ত্র শাখা জাতীয় রক্ষীবাহিনী, রাজনৈতিক হত্যা, ডেথ স্কোয়াড দ্বারা গুলি এবং ধর্ষণের অসংখ্য অভিযোগে জড়িত ছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, জাতীয় রক্ষীবাহিনী কর্তৃক সংঘবদ্ধ সংস্থাগত সহিংসতা দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছিল, যার সাহায্যে স্বাধীন বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী মানবাধিকারের অপব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।[৬৬]
ইসলামবাদ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দলের আনুষ্ঠানিক ও ঐতিহাসিক অবস্থান সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে বহুবার আশ্চর্যজনকভাবে নীরব রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রেখেছেন এবং দেশে-বিদেশে বহুবার ইসলামের পক্ষে প্রচার করেছেন। দলটি সরকারে থাকাকালীন দেশে সংঘটিত "ব্লগার, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, নাস্তিক, শিক্ষক, মুক্তচিন্তক ও সেক্যুলার আন্দোলনকারীদের হত্যার ঘটনায়" নীরব থাকার অভিযোগ রয়েছে।[৬৭] হাসিনা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসারণের আহ্বানকে সমর্থন করেছিলেন। অনেকেই এই আহ্বানের সমালোচনা করে বলেছেন, শেখ হাসিনা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক কট্টরপন্থীদের চাপের মুখে মাথা নত করছেন।[৬৮]
এলজিবিটি ইস্যু
২০১৭ সালে অভিযোগ করা হয়েছিল যে সরকারে থাকা দলটি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাচ্ছে। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সমকামী হওয়ার দায়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার।[৬৭]
যাইহোক, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক ছেঁড়ার ঘটনার সময়, যখন একজন ভার্সিটি শিক্ষক আসিফ মাহতাব উত্স ট্রান্সজেন্ডার ধারণা প্রচারের অভিযোগে একটি পাঠ্যপুস্তক ছিঁড়ে ফেলেছিলেন, দলটির সমালোচকের প্রায় বিপরীত একটি দাবি করেছিল যে তাঁরা জানতে পেরেছিল যে আওয়ামী শাসন ও এনসিটিবি আসিফের হোমোফোবিক আচরণের বিরুদ্ধে অনলাইনে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।[৬৯]
"রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ" প্রচার
উগ্র জাতীয়তাবাদের একটি রূপ "রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ" প্রচারের জন্য আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত হয়েছে। জাতীয়তাবাদের এই রূপটি অন্যান্য উপাদানের পরিবর্তে "রাজনৈতিক পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে পৃথকীকরণ" এর উপর জোর প্রদান করে, যদিও এই ধরনের জাতীয়তাবাদে "একটি রাষ্ট্রের মধ্যে ধর্মীয় বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক পার্থক্য ও জাতিগত বৈচিত্র্যকে গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়, কিন্তু [এখানে] আদর্শ বা দলীয় সমর্থনে রাজনৈতিক মতভেদকে সহ্য করা হয় না"। দলটি সর্বদা নিজেকে "মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি" হিসাবে অভিহিত করে এবং নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার "একমাত্র অভিভাবক" হিসেবে উল্লেখ করে অবস্থান নেয়, যার ফলে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীদের অবদানকে হ্রাস পায়; নির্বাচনী রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যাকে বিরোধী দলকে অবৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে দলটির এই ধরনের স্বঘোষিত ব্যাখ্যার ফলে দেশে একটি উদার সামাজিক-রাজনৈতিক পট সৃষ্টি হয় যা বিরোধীদের একপাশে সরিয়ে দেয়।[৫৮]
Remove ads
আরও দেখুন
টীকা
- ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে। ১৯৫৭ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক লাভ করে। এর ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পরও আওয়ামী লীগ এই নৌকা প্রতীক ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় একইসাথে এই মার্কার অনুমোদনও বাতিল হয়ে যায়।
- উর্দু ভাষা হতে আগত; বাংলাদেশ গণসংঘ[১০]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads