শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

দেব্যুপনিষদ্‌

হিন্দু শাক্ত সম্প্রদায়ের অন্যতম উপনিষদ্‌ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

দেব্যুপনিষদ্‌
Remove ads

দেব্যুপনিষদ্‌ বা দেবী উপনিষদ্‌ (সংস্কৃত: देवी उपनिषत्) হল হিন্দুধর্মের অন্যতম অপ্রধান উপনিষদ্‌। যে ১৯টি উপনিষদ্‌ অথর্ববেদের সঙ্গে সংযুক্ত, দেব্যুপনিষদ্‌ তার অন্যতম। এটি আটটি শাক্ত উপনিষদেরও অন্যতম উপনিষদ্‌। উপনিষদ্‌ হিসেবে এটি হিন্দুধর্মের দার্শনিক ধারণার প্রবক্তা বেদান্ত সাহিত্যের একটি অংশ।

দ্রুত তথ্য দেব্যুপনিষদ্‌, দেবনাগরী ...

দেব্যুপনিষদ্‌ সম্ভবত খ্রিস্টীয় ৯ম থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে রচিত হয়েছিল। এই উপনিষদে ‘মহাদেবী’কে সকল দেবীর প্রতিনিধি বলা হয়েছে। দেব্যুপনিষদ্‌ তন্ত্র ও শাক্ত দর্শনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি অথর্বশীর্ষ উপনিষদের অন্যতমও বটে।

এই উপনিষদে বলা হয়েছে যে, দেবী হলেন ব্রহ্ম (সর্বোচ্চ অদিবিদ্যামূলক সত্য) এবং তিনিই প্রকৃতি (বস্তু) ঈ পুরুষের (চৈতন্য) উৎস। তিনি হলেন একাধারে আনন্দ ও নিরানন্দ, বেদ ও যা বেদের পরিপন্থী, জাত ও অজাত এবং ব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছু।

Remove ads

নাম-ব্যুৎপত্তি

বৈদিক সাহিত্যে ‘দেবী’ ও দেব’ শব্দদুটি পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে রচিত ঋগ্বেদে এই শব্দদুটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।[] ‘দেব’ শব্দটি পুংলিঙ্গ এবং তৎসংক্রান্ত স্ত্রীলিঙ্গ শব্দটি হল ‘দেবী’।[] এই দুই শব্দের অর্থ “মহৎ গুণান্বিত, গৌরবময়, জ্যোতির্ময় স্বর্গীয়, দিব্য, বিশ্বজনীন সত্ত্বা।”[][] ব্যুৎপত্তিগতভাবে সংস্কৃত ‘দেবী’ শব্দটি লাতিন dea ও গ্রিক thea শব্দের অনুরূপ।[]

‘উপনিষদ্‌’ হল জ্ঞানমূলক বা ‘গুপ্ত মতবাদমূলক’ ধর্মগ্রন্থ যা হিন্দুধর্মের দার্শনিক ধারণাগুলির প্রতিনিধিত্বকারী বেদান্ত সাহিত্যের অন্তর্গত। এটিকে হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদের প্রধান ব্যাখ্যা মনে করা হয়।[]

Remove ads

ইতিহাস

ট্রিনিটি ইউনিভার্সিটির ধর্ম বিষয়ের অধ্যাপক চিভার ম্যাকেঞ্জি ব্রাউনের মতে,[] এই গুরুত্বপূর্ণ তান্ত্রিকশাক্ত ধর্মগ্রন্থটি সম্ভবত খ্রিস্টীয় ৯ম থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে রচিত হয়েছিল।[১০]

দেব্যুপনিষদ্‌ পাঁচটি অথর্বশীর্ষ উপনিষদের অন্যতম। এই পাঁচটি অথর্বশীর্ষ উপনিষদ্‌ হিন্দুধর্মে পাঁচ প্রধান দেবদেবীর (‘পঞ্চায়তন’) নামে চিহ্নিত। যথা, গণপতি, নারায়ণ, রুদ্র, সূর্যদেবী[১১] এই উপনিষদে প্রচারিত দর্শনটি ত্রিপুরোপনিষদ্‌, বাহবৃচোপনিষদ্‌গুহ্যকালোপনিষদ্‌ গ্রন্থেও পাওয়া যায়।[১২]

সংস্কৃতে রচিত দেব্যুপনিষদ্‌ একটি অপ্রধান উপনিষদ্‌।[১৩] মুক্তিকোপনিষদ্‌ রামহনুমানের কথোপকথনের আকারে যে ১০৮টি উপনিষদের তালিকা পাওয়া যায়, তাতে দেব্যুপনিষদ্‌ গ্রন্থটি ৮১ সংখ্যক।[১৪][১৫] পাণ্ডুলিপি ভেদে এই উপনিষদ্‌ দেব্যুপনিষদ্‌দেবী উপনিষদ্‌ নামে পরিচিত।[১৬]

Remove ads

গঠন ও বিন্যাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

দেব্যুপনিষদ্‌ গ্রন্থে অথর্ববেদ থেকে একটি প্রার্থনা এবং ৩২টি শ্লোক রয়েছে।[১৭] এই গ্রন্থে দেবীকে সর্বোচ্চ সত্ত্বা[১৮][১৯][২০] ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ সত্য (ব্রহ্ম) রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।[২১][২২]

নারীসত্ত্বাকে সম্মান জানানোর যে মৌলিক ভিত্তিটি দেব্যুপনিষদ্‌ গ্রন্থে পাওয়া যায়, তা ঋগ্বেদের নিম্নোক্ত সূক্তেও বিদ্যমান:[১২][১৯]

আমিই সমগ্র জগতের ঈশ্বরী, উপাসকগণের ধনপ্রদাত্রী, পরব্রহ্মকে আত্মা হইতে অভিন্নরূপে সাক্ষাৎকারিণী। অতএব যজ্ঞার্হগণের মধ্যে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠা। আমি প্রপঞ্চরূপে বহুভাবে অবস্থিতা ও সর্বভূতে জীবরূপে প্রবিষ্ঠা। আমাকেই সর্বদেশে সুরনরাদি যজমানগণ বিবিধভাবে আরাধনা করে।
আমারই শক্তিতে সকলে আহার ও দর্শন করে, শ্বাসপ্রশ্বাসাদি নির্বাহ করে এবং উক্ত বিষয় শ্রবণ করে। যাহারা আমাকে অন্তর্যামিনীরূপে জানে না, তাহারাই জন্মমরণাদি ক্লেশ প্রাপ্ত হয় বা সংসারে হীন হয়। হে কীর্তিমান সখা, আমি তোমাকে শ্রদ্ধালব্ধ ব্রহ্মতত্ত্ব বলিতেছি, শ্রবণ কর।
      দেবগণ ও মনুষ্যগণের প্রার্থিত ব্রহ্মতত্ত্ব আমি স্বয়ং উপদেশ করিতেছি। আমি ঈদৃশ ব্রহ্মস্বরূপিণী। আমি যাহাকে যাহাকে ইচ্ছা করি, তাহাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ করি। আমি কাহাকে ব্রহ্মা করি, কাহাকে ঋষি করি এবং কাহাকেও বা অতি ব্রহ্মমেধাবান্‌ করি।
ব্রাহ্মণবিদ্বেষী হিংস্র-প্রকৃতি ত্রিপুরাসুর-বধার্থ রুদ্রের ধনুকে আমি জ্যা সংযুক্ত করি। ভক্তজনের কল্যাণার্থ আমিই যুদ্ধ করি এবং স্বর্গে ও পৃথিবীতে অন্তর্যামিনীরূপে আমিই প্রবেশ করি।
আমিই সর্বাধার পরমাত্মার উপরে দ্যুলোককে প্রসব করিয়াছি। বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যস্থ যে ব্রহ্মচৈতন্য তাহাই আমার অধিষ্ঠান। আমিই ভূরাদি সমস্ত লোকে সর্বভূতে ব্রহ্মরূপে বিবিধভাবে বিরাজিতা। আমিই মায়াময় দেহ দ্বারা সমগ্র দ্যুলোক পরিব্যাপ্ত আছি।
আমিই ভূরাদি সমস্ত লোকে সর্বভূত সৃষ্টি করিয়া বায়ুর মত স্বচ্ছন্দে উহাদের অন্তরে বাহিরে সর্বত্র বিচরণ করি। যদিও স্বরূপতঃ আমি এই আকাশের অতীত ও পৃথিবীর অতীত অসঙ্গ-ব্রহ্মস্বরূপিণী, তথাপি স্বীয় মহিমায় এই সমগ্র জগদ্‌-রূপ ধারণ করিয়াছি।

দেবীসূক্ত, ঋগ্বেদ ১০.১২৫.৩ – ১০.১২৫.৮ (স্বামী জগদীশ্বরানন্দ কৃত অনুবাদ), [১২][১৯][২৩][২৪]

দেব্যুপনিষদ্‌ গ্রন্থেও এই ঋগ্বৈদিক সূক্তটির মতো দেবীকে প্রকৃতিপুরুষ (চৈতন্য), আনন্দ ও নিরানন্দ, বেদ ও বেদবিরোধী সব কিছুর উৎস, জাত ও জাত এবং সকল ব্রহ্মাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৮][১৭] দেবীর মতে, “ব্রহ্ম ও অব্রহ্মকে অবশ্যই জানতে হবে” এবং তিনিই পঞ্চভূত এবং পঞ্চভূত নয় এমন সব কিছু। তিনি আরও বলেছেন যে, যা কিছু উপরে আছে, যা কিছু নিচে আছে, যা কিছু চারপাশে আছে, সবই তিনি। তাই তিনিই সম্পূর্ণত এই ব্রহ্মাণ্ড।[২৫] এই উপনিষদে দেবী বলছেন যে, তিনি শিবের সৃষ্টিশক্তি। মহাদেবীকে এই উপনিষদে সকল দেবীর প্রতিনিধি বলা হয়েছে।[২৬]

Remove ads

বিষয়বস্তু

সারাংশ
প্রসঙ্গ

দেবী কে?

দেব্যুপনিষদ্‌ গ্রন্থের শুরুতে দেখা যায়, একটি সম্মেলনে দেবতারা প্রশ্ন করছেন, “মহাদবী, আপনি কে?”[২০]

দেবী বলছেন, তিনি ব্রহ্মস্বরূপিণী (অর্থাৎ, ব্রহ্ম ও দেবী অভিন্ন)।[২০][note ১] টমাস বি. কোবার্নের মতে, ২য় ও ৩য় শ্লোকে দেবী তার ‘নির্গুণ’ (নিরাকার) ও ‘সগুণ’ (সাকার), ‘সৎ’ (সত্য সত্ত্বা), ‘চিৎ’ (চৈতন্য) ও ‘আনন্দ’ রূপ ব্যাখ্যা করছেন।[২৮][note ২]

২য় ও ৩য় শ্লোকে আরও বয়লা হয়েছে, দেবী হলেন ব্রহ্মাণ্ড, ‘প্রকৃতি’ (বস্তু) ও ‘পুরুষ’ (চৈতন্য), জ্ঞান ও অজ্ঞানতা, ব্রহ্ম ও অব্রহ্ম, বেদ ও বেদবিরোধী, “জাত ও অজাত, আমি নিম্ন, উচ্চ ও পারিপার্শ্বিক।”[১৭]

৪র্থ ও ৫ম শ্লোকদুটি ঋগ্বেদের দেবীসূক্তম্‌ অংশের অনুরূপ।

আমি রুদ্রগণ, বসুগণ, আদিত্যগণবিশ্বদেবগণের সঙ্গে সঞ্চারিত হই।
মিত্র, বরুণ, ইন্দ্রঅগ্নিকে আমি সাহায্য করি। সাহায্য করি অশ্বিনীদ্বয়কে
আমি পুষ্ট করি সোম, ত্বষ্টার, পূষণভগকে,
পদবিস্তারকারী বিষ্ণু, ব্রহ্মা, প্রজাপতিকে

দেব্যুপনিষদ্‌, ৪ – ৫, এজি কৃষ্ণ ওয়ারিয়ারের অনুবাদ অবলম্বনে[১৭][৩১]

আমি ভ্রমণ করি রুদ্র ও বসুগণের সঙ্গে, আদিত্যগণের সঙ্গে, সর্বদেবতার সঙ্গে আমি ভ্রমণ করি।
বরুণ ও মিত্র, ইন্দ্র ও অগ্নি এবং অশ্বিনীদ্বয়কে আমি উন্নীত করি।
উদ্গত সোমকে আমি পুষ্ট করি, ত্বষ্টা, পূষণ ও ভগকে আমি বহন করি।
আহুতিদাতা ও শ্রদ্ধালু উদ্গ্রীব যজ্ঞকর্তাকে আমি ধনদান করি।

ঋগ্বেদ, ১০.১২৫.১ – ১০.১২৫.২, ভারততত্ত্বব্দ র্যা লফ গ্রিফিথের অনুবাদ অবলম্বনে [২৩]

দেব্যুপনিষদ্‌ গ্রন্থের প্রথম পাঁচটি শ্লোকের সঙ্গে মহানারায়ণোপনিষদ্‌শ্বেতাশ্বেতরোপনিষদ্‌ গ্রন্থের ধারণাগুলির মিল পাওয়া যায়।[২৬] ধর্মীয় বিদ্যার অধ্যাপক জুন ম্যাকড্যানিয়েল বলেছেন,[৩২] এখানে ব্রহ্ম নামে পরিচিত অধিবিদ্যক সত্যের ধারণাগুলি যা “নিচে, চারপাশে ও উপরে সবকিছুর মধ্যে রয়েছে, তা তাঁর নিজস্ব মূর্তিস্বরূপ।”[১২]

প্রথম ছয়টি শ্লোকে দেবীকে মহাদেবী, দুর্গা, কালী, মহালক্ষ্মী, বৈষ্ণবী, সরস্বতী ও সকল দেবীর সঙ্গে একরূপ বলা হয়েছে। এরপর দেবী বলছেন, তার কাছেই যজ্ঞের সকল আহুতি পৌঁছায়।[৩১] ৭ম শ্লোকটি গায়ত্রী মন্ত্রের অনুরূপ একটি স্তোত্রাকার শ্লোক।[৩১][৩৩] এই শ্লোকে দেবী বলছেন যে, যিনি “অন্তঃসমুদ্রের জলে আমার সার জানেন”, তিনিই তাকে প্রাপ্ত হন।[১৭]

দেবীস্তুতি ও মূর্তিতত্ত্ব

৮ম থেকে ১৪শ শ্লোক পর্যন্ত সমবেত দেবতারা দেবীর উত্তরটির স্বীকৃতি জানাচ্ছেন। "দেব্যুপনিষদ্‌" গ্রন্থের বিবৃতি অনুসারে, দেবী যে শক্তি, মহাবিদ্যা, বেদ, বিষ্ণুর শক্তি, প্রেরণাদাত্রী, দেবগণের জন্মের কারণ, বিশ্বপ্রেমী, ব্রহ্মাণ্ডের আদ্যাশক্তি, বজ্রবাহিনী, গুহা, বায়ু, মেঘ, মন্ত্র ও আত্মার শক্তি, তা দেবতারা স্বীকার করছেন।[১৭][৩১] উপনিষদের এই অংশটি "দেবীভাগবত পুরাণ" গ্রন্থের অন্তর্গত "দেবীগীতা" অংশের (১.৪৪-১.৪৮) অনুরূপ।[৩৪]

Thumb
"দেব্যুপনিষদ্‌" গ্রন্থের মূর্তিতত্ত্ব অনুসারে বিভিন্ন ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় দুর্গাকে দেবীর মূর্তিস্বরূপ হিসেবে দেখা যায়। উপরে ১১শ শতাব্দীর নেপালের একটি দুর্গামূর্তি

১৫শ শ্লোকে মহাদেবীর মূর্তিতত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে। এই মূর্তিতত্ত্ব অনুসারে, দেবী একটি পাশ, একটি অঙ্কুশ, একটি ধনুক ও তির ধারণ করেন এবং সকলকে মোহিত করেন।[২৬]

১৮শ শ্লোকে দেবীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। কারণ, দেবী ইন্দ্রের আটজন সহকারী দেবতা (অষ্টবসু), একাদশ রুদ্র ও দ্বাদশ আদিত্য (বছরের প্রত্যেকটি মাসের প্রতিনিধি সূর্যদেবতা)। বৈদিক যজ্ঞে সোমরস পানকারী সকল দেবতার প্রতিনিধি হলেন দেবী। যাঁরা তা পান করেন না, তাদেরও প্রতিনিধি হলেন দেবী। দেবীই হলেন সকল দৈত্য, দানব, অশুভ আত্মা, ভূত, অতিমানব ও উপদেবতা; সকল বৃক্ষ, তারকা এবং আকাশে দীপ্তিমান যা কিছু; তিনিই হলেন সময় ও সময়ের বিভাগ; ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু ছিল, আছে এবং আসবে সব কিছুই তিনি।[১৭][৩১]

এই উপনিষদ্‌ অনুসারে, দেবীই হলেন তিন গুণসত্ত্ব, রজঃতমঃ[১৭] তিনিই হলেন প্রজাপতি, ইন্দ্রমনু[৩১].১৯শ শ্লোক অনুসারে, তিনি অনন্ত, শুদ্ধ, শিব, শরণার্থীর আশ্রয় ও মঙ্গলময়ী।[১৭]

২০শ ও ২৪শ শ্লোকের অন্য একটি মূর্তিবর্ণনায় বলা হয়েছে যে, তিনি ব্যক্তির ‘হৃদকমলে’ উপবিষ্ট থাকেন। তার মস্তকে থাকে অর্ধচন্দ্র। তিনি অগ্নিসংযুক্তা এবং সকালের সূর্যের মতো দীপ্তিমান। তিনি কল্যাণী। তার হাতে থাকে পাশ ও অঙ্কুশ। তার মূর্তিতে দয়া ও অভয়ের প্রতিচ্ছবি মূর্তিমান। তার তিনটি নয়ন। তার গাত্রবস্ত্র লাল। তিনি কোমলস্বভাবা এবং ভক্তদের মনোবাঞ্ছাপূর্ণকারিণী।[২৬][৩১]

উপসংহার

এই উপনিষদের ২৬শ থেকে ২৮শ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, দেবী হলেন “জ্ঞানের অতীত, অসীম, বোধের অগম্য, অজ্ঞাত, এক ও বহু।” এই উপনিষদের মতে, দেবী হলেন সকল মন্ত্রের উৎস।[১৭][৩১] সকল জ্ঞান তার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। তার বাইরে কিছুই নেই। তিনিই জাগতিক জীবনের পরিচালিকা।[১৭][৩১]

২৯শ থেকে ৩২শ শ্লোকে এই উপনিষদ্‌ পাঠের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময় ও দিনের কথা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, দশবার এই উপনিষদ্‌ পাঠ করলে সকল পাপ ও বাধাবিঘ্ন দূর হয়। এছাড়া একই ফল পেতে সকালে ও সন্ধ্যায় এই উপনিষদ্‌ পাঠ করতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে, মধ্যরাতে এই উপনিষদ্‌ পাঠ করলে বাকসিদ্ধ হওয়া যায়। মূর্তি প্রতিষ্ঠার সময় এই উপনিষদ্‌ পাঠ করলে মূর্তির মধ্যে শক্তি সঞ্চারিত হয়।আমি মহামায়া পুরান অনুসারে (দেবী পার্বতী)[১৭]

Remove ads

তন্ত্রে প্রভাব

ম্যাকড্যানিয়েলের মতে, এই উপনিষদের তান্ত্রিক দিকগুলি নিহিত রয়েছে যন্ত্র, বিন্দু, বীজ, মন্ত্র, শক্তি ও চক্র শব্দগুলির ব্যবহারের মধ্যে।[১২]

৮ম থেকে ১২শ শ্লোক ‘দেবীস্তুতি’র অংশ (দেবীগীতা গ্রন্থে ১। ৪৪-৪৮)। এটি দেব্যুপনিষদ্‌ গ্রন্থের তান্ত্রিকী প্রকৃতির বৈদিকীকরণের প্রতিচ্ছবি। দেব্যুপনিষদ্‌ তান্ত্রিক ও বৈদিক ধারার মিশ্রণ। এই প্রসঙ্গে দেবীগীতা গ্রন্থের রচয়িতা বলেছেন, “এগুলির মধ্যে একটি গ্রন্থ পাঠ করলে দেবী তুষ্ট হন।”[৩৪] ৮ম থেকে ১৪শ শ্লোকে তার শিবের সন্তান অদিতিস্কন্দ, সরস্বতীলক্ষ্মীর সাহচর্য, মায়া (পরীক্ষামূলক সত্য) রূপে তার অবস্থান এবং বায়ু, মেঘ ও ইন্দ্রের প্রতিনিধি রূপে দেবীর ক্রিয়াকলাপ আলোচিত হয়েছে।[১৭]

Remove ads

টীকা

  1. দেব্যুপনিষদ্‌-এর কোনও কোনও পাণ্ডুলিপিতে এই কথাটি ১৭শ শ্লোকে পাওয়া যায়;[২৭]
  2. এটি হিন্দুধর্মের ‘সচ্চিদানন্দ’ ধারণার অনুরূপ;[২৯][৩০]

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads