শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

বাংলা বুলবুল

পাখি প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বাংলা বুলবুল
Remove ads

বাংলা বুলবুল (বৈজ্ঞানিক নাম: Pycnonotus cafer) লালপুচ্ছ বুলবুলি বা কালচে বুলবুলি Pycnonotidae (পাইকনোনোটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Pycnonotus (পাইকনোনোটাস) গণের এক প্রজাতির অতি পরিচিত দুঃসাহসী এক পাখি।[][] বুলবুলি হিসেবে এরা সুপরিচিত। পাখিটি পূর্ব, দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয়। এছাড়া বহু দেশে পাখিটি অবমুক্ত করা হয়েছে। বাংলা বুলবুলের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দক্ষিণ আফ্রিকার নিবিড়পিঠ পাখি (গ্রিক puknos = নিবিড়, noton = পিঠ; ল্যাটিন cafer = দক্ষিণ আফ্রিকার)।[] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৪১ লাখ ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[] পৃথিবীতে এদের মোট সংখ্যা কত তা এখনও অজানা। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[] লড়াকু পাখি হিসেবে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি রয়েছে পাখিটির।[] বাংলার শহর-নগর-গ্রামে-গঞ্জে প্রচুর পরিমানে বাংলা বুলবুল দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যের গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও লোকগাঁথায় বার বার এসেছে এ পাখিটির নাম।

দ্রুত তথ্য বাংলা বুলবুল, সংরক্ষণ অবস্থা ...
Remove ads

বিস্তৃতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বাংলা বুলবুল দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় পাখি। এই এলাকার বাইরে চীনেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, মায়ানমারভিয়েতনাম বাংলা বুলবুলের স্থায়ী আবাস।[] এছাড়া আরও বিভিন্ন দেশে পাখিটি অবমুক্ত করা হয়েছে। ১৯০৩ সালে ফিজিতে চুক্তিবদ্ধ ভারতীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে পাখিটি ছড়িয়ে পড়ে।[] ১৯৪৩ সালে সামোয়ায় পাখিটির bengalensis উপপ্রজাতি অবমুক্ত করা হয়েছে। ১৯১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে পাখিটি অবমুক্ত করা হলেও ১৯৪২-এর পরে এখানে আর তাদের দেখা যায়নি।[] অকল্যান্ডে ১৯৫০ সালে এদের ছাড়া হয়। অকল্যান্ডে এদের বিলোপ ঘটানো হলেও নিউজিল্যান্ডের বহু জায়গায় এরা ছড়িয়ে পড়ে।[] এছাড়া বাহরাইন, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নিউ ক্যালিডোনিয়া, ওমান, কাতার, টোঙ্গাযুক্তরাষ্ট্রেও এদের অবমুক্ত করা হয়েছে।[]

বুলবুলি

Thumb
P. leucogenys x P. c. humayuni সংকর, ভুল করে একে নতুন আরেকটি প্রজাতি Molpastes magrathi মনে করা হয়

১৭৬৬ সালে দ্বিপদ নামকরণের জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস প্রজাতিটির নাম রাখেন Turdus cafer। তার প্রাপ্ত নমুনাটি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সংগৃহীত হয়েছিল বলে তিনি মনে করেছিলেন। সেকারণে বৈজ্ঞানিক নামের শেষে তিনি cafer বা উত্তমাশা অন্তরীপের নাম যোগ করেছিলেন। আরেকবার নমুনাটি শ্রীলঙ্কা থেকে সংগৃহীত বলে তিনি মনে করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে নমুনাটি ভারতের পন্ডিচেরী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। বাংলা বুলবুলের উপপ্রজাতিসমূহের মধ্যে অঙ্গসংস্থান, স্বর, আচরণ ও বংশগতির মধ্যে যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান, তা নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

সুরমামাথা বুলবুলের (P. aurigaster) সাথে মিলে প্রজাতিটি একটি মহাপ্রজাতির সৃষ্টি করেছে। এ দু'টি প্রজাতি নিজেদের মধ্যে সংকর বংশধর সৃষ্টি করতে সক্ষম। ভুল করে এদের সংকরদের অনেকসময় ভিন্ন আরেকটি প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরকম সংকরের উদাহরণ হল P. nigropileusP. burmanicus। উত্তর-পশ্চিম ভারতে বাংলা বুলবুল হিমালয়ী বুলবুলের (P. leucogenys) সাথে মিলিত হয়ে সংকর সৃষ্টি করে। এ সংকরকে ভুল করে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে এর নামও দেওয়া হয়েছে, Molpastes magrathi. সাদাকান বুলবুলের (P. leucotis) সাথেও এদের সংকরায়ন হয়।[]

P. c. saturatus উপপ্রজাতিকে বাতিল করে তার পরিবর্তে নতুন উপপ্রজাতি P. c. wetmorei-কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। খুব পরিষ্কারভাবে কয়েকটি উপপ্রজাতিকে একটি আরেকটির থেকে আলাদা করা হয়নি। প্রধানত সংকরায়নের এলাকা থেকে এদের নির্ধারণ করা হয়েছে, এ ব্যাপারে আরও গবেষণার প্রয়োজন। প্রচলিত কয়েকটি উপপ্রজাতি আসলে একটি আরেকটির প্রতিশব্দ মাত্র। যেমন: ভারতে primrosei (আসাম) এবং afer (মেঘালয়) উপপ্রজাতি দু'টি bengalensis উপপ্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। আবার vicinus (মাইসোর) ও pusillus (তামিলনাড়ু) উপপ্রজাতি দু'টি মনোনিত উপপ্রজাতি cafer-এর অন্তর্ভুক্ত।[]

Remove ads

উপপ্রজাতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বাংলা বুলবুলের মোট আটটি উপপ্রজাতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[] উপপ্রজাতিগুলো হল:

  • P. c. intermedius (Blyth, 1846) - হিমালয়ের পশ্চিমে পাকিস্তান, জম্মু ও কাশ্মীর হয়ে নেপালের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এরা বিস্তৃত। মাথার কালো বোরখা বুকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে আসে।
  • P. c. bengalensis (Blyth, 1845) - গাঙ্গেয় সমভূমি ও বাংলাদেশে এদের প্রধান আবাস। এ উপপ্রজাতির মাথার কালো বোরখা ঘাড় ও বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। সারা পিঠ কালচে-বাদামি বা কালচে। পেটের দিকে কালচে আভা থাকে। দেহে আঁশ ভাব অস্পষ্ট। কানপট্টি গাঢ় বাদামি। মাথার ঝুঁটি বেশি স্পষ্ট।
  • P. c. humayuni (Deignan, 1951) - এ উপপ্রজাতিটির আবাস দক্ষিণ-পূর্ব পাকিস্তান (সিন্ধু প্রদেশ) ও উত্তর-পশ্চিম ভারত জুড়ে। বাংলাদেশেও দেখা যায়। মাথার কালো বোরখার মত আবরণ বুক পর্যন্ত বিস্তৃত নয়। পিঠের দিক গাঢ় বাদামি ও তাতে ফিকে রঙের আঁশ খুব স্পষ্ট। পেটের দিক ফিকে বাদামি ও কানপট্টি হালকা বাদামি। মাথার ঝুঁটি অস্পষ্ট।
  • P. c. stanfordi (Deignan, 1949) - উত্তর-পূর্ব ভারত, উত্তর মায়ানমার ও চীনের দক্ষিণে এদের দেখা যায়।
  • P. c. melanchimus (Deignan, 1949) - এদের মূল আবাস দক্ষিণ মায়ানমার ও উত্তর থাইল্যান্ডে।
  • P. c. saturatus (Whistler & Kinnear, 1932) - ভারতীয় উপদ্বীপের উত্তর-পূর্বাংশে এদের বিস্তৃতি।
  • P. c. cafer (Linnaeus, 1766) - মনোনিত উপপ্রজাতি, দক্ষিণ ভারতে এদের বিচরণ সীমাবদ্ধ।
  • P. c. haemorrhousus (J. F. Gmelin, 1789) - শ্রীলঙ্কায় এদের বিচরণ সীমাবদ্ধ।
Remove ads

বিবরণ

বাংলা বুলবুল আমাদের অতি পরিচিত ছোট বাদামি রঙের এক বৃক্ষচারী পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ২০ সেন্টিমিটার, ডানা ১০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২ সেন্টিমিটার, লেজ ৯.৫ সেন্টিমিটার ও পা ২.২ সেন্টিমিটার। ওজন ৪২ গ্রাম।[] মাথার কালো ঝুঁটি দেখে খুব সহজেই এদের শনাক্ত করা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালো বা কালচে-বাদামি। বাদামি দেহের শেষাংশ ও ডানার প্রান্ত কালচে-বাদামি। পেট অপেক্ষাকৃত ফিকে বাদামি। দেহতলে এবং কখনও কখনও উপপ্রজাতিভেদে পিঠে মাছের আঁশের মত ফিকে দাগ থাকে। পালকের গড়ন আঁশের মত বলে এমনটা হয়। লেজ বাদামি হলেও লেজের আগা কিছু দূর গাঢ় বাদামি হয়ে প্রান্ত একদম সাদা। লেজের গোড়ার দিকটা সাদা। এর দেহের সবচেয়ে দৃষ্টব্য ও বিচিত্র স্থানটি হল এর টকটকে লাল অবসারণী-ঢাকনি। এ লাল অবসারনীর জন্যই এর ইংরেজি নাম হয়েছে Red-vented Bulbul।

বাংলা বুলবুলের ঠোঁট দূর থেকে কালো দেখালেও তা আসলে কালচে-নীল। চোখ কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা সামান্য বাদামি-কালো। মুখের ভেতরটা ধূসর, বেগুনি ও হলুদে মেশানো। স্ত্রী ও পুরুষ বুলবুল দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অপেক্ষাকৃত হালকা।

আচরণ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বাংলা বুলবুল প্রচণ্ড লড়াকু পাখি। লড়াইবাজ পাখি হিসেবে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি ছিল এর। ইরান-ইরাক-আফগানিস্তানের কোথাও কোথাও এখনও বুলবুলির লড়াই হয়। বাংলাদেশেও একসময় এদের লড়াই হত। শুধু পোষা বুলবুল নয়, বুনো বুলবুলও লড়াইয়ে মেতে ওঠে অনেকসময়। লড়াইয়ে এতই মশগুল হয়ে পড়ে যে কখনও কখনও শিকারীর কবলে পড়ে যায়।[]

বাংলা বুলবুল শহর, গঞ্জ, গ্রাম, পাতাঝরা বন, প্যারাবন, গ্রামীণ বন, বনের প্রান্ত, ক্ষেতখামার ও বাগানে বিচরণ করে। ঝোপঝাড় ও গাছের পাতায় এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। তীব্র রাসায়নিক পদার্থ এরা এড়িয়ে চলে।[১০] এদের খাদ্যতালিকার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পোকামাকড়। এছাড়া ফুলের পাপড়ি[১১], মধু ও ফলও খায় এরা। প্রয়োজনে ছোট সরীসৃপও খায়।[১২][১৩][১৪][১৫][১৬][১৭] বিজ্ঞানীরা পাখি নিয়ে গবেষণা করার একটি পর্যায়ে লক্ষ্য করেন যে কিছু কিছু পাখি ভিটামিন সি হজম করতে পারে না৷ বাংলা বুলবুল হল সেই পাখি যার মধ্যে বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম এই গুণটি দেখতে পান৷[১৮] আগাছাজাতীয় গাছের বীজও এরা খায়। সচরাচর জোড়ায় জোড়ায় বা ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। উড়ন্ত শিকার ধরার সময় এরা সামান্য উড়ে আবার মাটিতে ফিরে আসে। সচরাচর ডাকে: বি-কুইক-কুইক......। ভয় পেলে তীক্ষ্ণ ও উচ্চস্বরে ডাকে: পীক....। সারাবছর এরা ডাকে। কয়েক প্রজাতির বাসা পরজীবী পাখি বাংলা বুলবুলের বাসায় ডিম পেড়ে যায়।[১৯])

Thumb
ডিমসহ বাসা
Remove ads

প্রজনন

এপ্রিল-আগস্ট বাংলা বুলবুলের প্রধান প্রজনন মৌসুম। কখনও কখনও সেপ্টেম্বর পর্যন্তও এরা ডিম পাড়ে, ছানা ফোটায়। একজোড়া বাংলা বুলবুল এক প্রজনন মৌসুমে একাধিকবার ছানা তোলে। এসময় পুরুষ বুলবুল আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। পুরুষ বুলবুল মাথার ওপর ডানা মেলে ধরে ও স্ত্রী পাখির দিকে লেজ থড়িয়ে দিয়ে মনোরঞ্জনের চেষ্টা করে। বাসা বানাতে সময় লাগে ২-৫ দিন।[] সাধারণত এরা ছোট ঝোপঝাড়ে বাসা বানায়। এছাড়া গাছের গর্ত, ঝাপালো গাছ, নদীতীরের গর্ত, ভাসমান কচুরিপানা[২০], বাসা-বাড়ির কার্নিশ[২১][২২] এমনকি বাসের মধ্যেও বাসা বানায়।[২৩] বাসার উচ্চতা ভূমি থেকে ৭-১০ ফুট উপরে হয়। ডাল, ধাতব তার[২৪], পাতা, কঞ্চি, ঘাস, চুল ইত্যাদি মাকড়শার জালে জড়িয়ে পরিপাটি করে বাটির মত বাসা বানায় এরা। বাসা বানানো হয়ে গেলে তিনটি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো হালকা গোলাপি রঙের, তার উপরে লাল লাল ছিটমত থাকে। ডিমের প্রশস্ত দিকে ছিট তুলনামূলক ঘন। ডিমের মাপ ২.২ × ১.৬ সেমি।[] ১৪ দিনের মাথায় ডিম ফুটে ছানা বের হয়।[২৫] বাবা-মা উভয়েই সন্তান দেখাশোনার ভার নেয়।

Remove ads

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads