শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

ভুবনেশ্বরী

হিন্দুধর্মের একজন দেবী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ভুবনেশ্বরী
Remove ads

ভুবনেশ্বরী (সংস্কৃত: भुवनेश्वरी) হিন্দুধর্মের মহাবিদ্যা দেবীদের মধ্যে চতুর্থ, এবং নিখিল ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির সঞ্চালিকা তিনি মহাদেবীর সর্বোচ্চ মূর্ত প্রতীক। তিনি দেবী ভাগবতে আদ্যাশক্তি নামে পরিচিত। প্রথমা মহাবিদ্যা কালীর সঙ্গে অভিন্নতা বিধায় তিনি রক্তা বা রক্তকালী নামে পরিচিতা। আবার মহাভাগবত পুরাণে তাঁর অরুণবর্ণা ত্রিনেত্রা চতুর্ভুজা বরাভীতিপাশাঙ্কুশধারিণী মূর্তি দুর্গার তান্ত্রিক রূপ বলে বর্ণিত। ত্র্যম্বক শিব তাঁর ভৈরব।

দ্রুত তথ্য ভুবনেশ্বরী, দেবনাগরী ...

তিনি মহাবিশ্ব ও বিশ্বের স্রষ্টা। তার নাম জগদ্ধাত্রী। তিনি মহাবিশ্বের শাসিকা শক্তি। দেবী ভুবনেশ্বরীকে মহামায়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যাকে মূলা প্রকৃতি নামেও পরিচিত। তিনি নির্গুণব্রহ্মের দুই মূর্ত রূপ, পুরুষপ্রকৃতি। ভুবনেশ্বরী সমস্ত সৃষ্টির সম্রাজ্ঞী। মহাবিশ্বের শুরুতে তিনি গোপাল সুন্দরীর জন্ম দেন এবং তাঁর মাধ্যমে অন্যান্য সমস্ত কার্য সম্পাদন করেন। গোপাল সুন্দরী আর কেউ নন, ভগবান কৃষ্ণ। তোড়ল তন্ত্রে তিনি আদ্যা নামে পরিচিত। দেবীভাগবত পুরাণ মতে তিনি পঞ্চ প্রকৃতির (দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গায়ত্রীরাধা) মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।[]

এই পাঁচ প্রকৃতির দেবী। তার সমর্থনের মাধ্যমে সর্বজনীন পরম পুরুষের সাথে তার বিভিন্ন রূপ উপভোগ করা হয়। প্রকৃতি হল ভৌত জগতে শক্তির উৎস। তিনি সকল প্রাণীর স্রষ্টা। তার মধ্যে সবকিছুর জন্ম হয় এবং শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভুবনেশ্বরীতে বিলীন হয়।

Remove ads

কিংবদন্তি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে আদিকালে ত্রিদেবব্রহ্মা, বিষ্ণুশিব জানতেন না তাঁরা কে এবং তাঁদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কি। একদা এক উড়ন্ত রথ তাঁদের সামনে আসে, এবং এক দৈববাণী তাঁদের সে রথে আরোহণের নির্দেশ দেয়। ত্রিদেব রথে আরোহণ করার সাথে সাথে এটি মনের গতিতে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং তাদের রহস্যময় স্থানে নিয়ে যায়, সে স্থান সুধা(অমৃত)সমুদ্রে ঘেরা রত্নদ্বীপ। রথ হতে অবতরণ করার সাথে সাথে ত্রিদেব সবিস্ময়ে লক্ষ্য করেন যে তাঁরা নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। যাই হোক, দ্বীপটি পরিভ্রমণ কালে তাঁরা নয়টি বেষ্টনীতে আবৃত এবং ভয়ানক ভৈরব, মাতৃকা, ক্ষেত্রপাল ও দিকপাল দ্বারা রক্ষিত রাজকীয় এক নগরী দেখতে পান। অবশেষে যোগিনীদের দ্বারা সুরক্ষিত চিন্তামণিগৃহ নামে প্রসিদ্ধ অনিন্দ্যসুন্দর এক পুরীতে পৌঁছান। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীপুর (দেবীপত্তন)মণিদ্বীপের অধিষ্ঠাত্রী, আদ্যাশক্তি ভুবনেশ্বরীর আলয়। শ্রীপুরে প্রবেশ করে তাঁরা সমস্ত জগতের রাজ্ঞী দেবী ভুবনেশ্বরীকে প্রত্যক্ষ করেন।[]

তাঁর গায়ের রং লাল। তিনি ত্রিনয়না, চতুর্ভুজা। তাঁর সুবিমল কেশদাম বেণীবদ্ধ এবং তিনি রক্তালঙ্কার পরিহিতা ছিলেন। তিনি পদ্মের মালা ধারিণী এবং তাঁর দিব্যতনু রক্তচন্দনে অনুলিপ্ত। তিনি তাঁর বাম হাতে বরদমুদ্রা ও পাশ ধরেছিলেন, এবং তাঁর দক্ষিণ হাতে অভয়মুদ্রা ও অঙ্কুশ ধৃত ছিল। তিনি বিবিধ মহার্ঘ অলঙ্কারে ভূষিতা ছিলেন এবং প্রধান গহনা হিসাবে বরাঙ্গ শোভিত ছিল চন্দ্রকলালাঞ্ছিত সুন্দর মুকুটে।

তিনি ভুবনেশ্বর ত্র্যম্বকের বামাঙ্কে উপবিষ্টা ছিলেন। সৃষ্টির পূর্বে লীলাছলে দেবী ভগবতী তাঁর দেহকে দুটি ভাগে ভাগ করেন, দক্ষিণার্ধে ভুবনেশ্বর ত্র্যম্বক আবির্ভূত হন। তিনি হয় কুন্দধবল - রজতশুভ্র , কৃত্তিবসন এবং রত্নরাজির বিভা যুক্ত। জটামুকুটমণ্ডিত পাঁচটি আনন, জটাজাল নবোদিত চন্দ্রকলায় ভূষিত ও গঙ্গাবিধৌত। তিনি ত্রিনয়ন,পঞ্চবক্ত্র,চতুর্ভুজ - পরশু/কুঠার, মৃগমুদ্রা, বর ও অভয়মুদ্রা ধারণ করে রয়েছেন।

ঐ দেবদম্পতি পঞ্চপ্রেতাসনে উপবিষ্ট - সদাশিব সে আসনের পীঠ আর পরম শিব, ঈশ্বর, রুদ্র, বিষ্ণুব্রহ্মার পাঁচটি পদ। অনেক যোগিনী তাঁদের পরিচর্যায় নিয়োজিত - কেউ তাঁদের চামর ব্যজন করছেন, কেউ বা দর্পন ধরছেন, কেউ কর্পূরের মিশ্রিত তাম্বুল(পান) আর কেউ মধুপর্ক পানীয় পরিবেশন করছেন। কেউ ভুবনেশ্বরীর কেলসজ্জায় ব্যাপৃত, কেউ অঙ্গরাগে, কেউ বা মালা রচনায় ব্যস্ত আবার কেউ বা ব্যস্ত নৃত্যগীত পরিবেশনায়। ভুবনেশ্বরী স্বীয় প্রভায় ত্রিদেব তথা নিখিল ব্রহ্মাণ্ড আলোকিত করেছেন। ত্র্যম্বক আদিপুরুষ, ভুবনেশ্বরী মূলাপ্রকৃতি। ত্র্যম্বক সাক্ষাৎ ব্রহ্ম, ভুবনেশ্বরী সচ্চিদানন্দময়ী পরব্রহ্মমহিষী পরমাপ্রকৃতি। তাঁরা এক ও অভিন্ন। ত্র্যম্বককে তাঁর ত্রিবিধ লীলা সম্পাদনে সাহায্য করার জন্য ভুবনেশ্বরী তাঁর তিনটি রূপ সৃষ্টি করেছেন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। তাই ত্রিমূর্তি ত্র্যম্বকেরই যথাক্রমে রজঃ, স্বত্ত্বঃ ও তমঃ গুণপ্রধান রূপভেদ। ভুবনেশ্বরী সৃষ্টি সঞ্চালন হেতু এই ত্রিমূর্তিকে শক্তি প্রদান করেন। প্রথমে স্বত্ত্বগুণপ্রধানা সরস্বতী ব্রহ্মাকে ; দেবী আরও বলেন, "হে ব্রহ্মা, এই সরস্বতীকে সহধর্মিণীরূপে গ্রহণ করুন। তাঁর শক্তিতে একটি নতুন বিশ্বচরাচর তৈরি করুন।" তারপর তিনি স্বত্ত্বগুণময় বিষ্ণুর হাতে রজোগুণময়ী লক্ষ্মীকে দিলেন এবং বললেন "লক্ষ্মী আপনার চিরন্তন স্ত্রী হবেন এবং আপনার পার্থিব অবতারে আপনার সাথে থাকবেন।" "হে ভগবান শিব, এই সুন্দর মহাকালীকে শক্তিরূপে গ্রহণ করুন। সৃষ্টির আয়ু শেষে তা গ্রাস করুন।" তারপর ত্রিমূর্তি নিজ নিজ স্থানে চলে গেলেন।

Remove ads

মন্দির

ভারতর ভুবনেশ্বরী দেবীর প্রতি উৎসর্গীকৃত কয়েকটি মন্দির আছে। দ‌ক্ষিণ ভারতে শ্রীবিদ্যা পরম্পরার বেশিরভাগ উপাসক তাঁকে পূজা করেন। কেরালায় শাক্তদের মধ্যে তিনি জনপ্রিয়।

  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিপীঠ উত্তর শ্রীলঙ্কার জাফনা উপদ্বীপের কাছের নাইনাটিবু (মণিপলবম)তে অবস্থিত। তাঁর সঙ্গী শিবের এক অবতার লিঙ্গরাজ। তাঁকে ভুবনেশ্বরের দেবীরূপে ওড়িশার উৎকল ব্রাহ্মণরা পূজা করেন।
  • পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দেবী সুভদ্রা স্বয়ং ভুবনেশ্বরী রূপে পূজিত হন।
  • তামিলনাডুর পুডুকটাইতে অন্য একটি মন্দির অবস্থিত।
  • ওড়িষার সামলেশ্বরী মন্দির এবং কটক চণ্ডী মন্দিরে তাঁর পূজা করা হয়।
  • আসামর গুয়াহাটীর কামাখ্যা মন্দিরের কাছেও ভুবনেশ্বরীর একটি পৃথক মন্দির অবস্থিত।[]
  • কর্নাটকের মহীশূরের রাজপ্রাসাদের কাছে একটি ভুবনেশ্বরী মন্দির আছে।
  • গুজরাটের গোন্দাতে ১৯৪৬ সালে ভুবনেশ্বরী মন্দির স্থাপন করা হয়েছিল।
  • কেরালার আডুরের চুরাকোডুতে একটি ভুবনেশ্বরী মন্দির আছে।
  • মহারাষ্ট্রের চাংলি জেলায় ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দির অবস্থিত।.
  • উত্তর আমেরিকায় পন্টিআক, মিচিগানের পরাশক্তি মন্দিরে ভুবনেশ্বরীর উপাসনা করা হয়।
  • পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার চন্দননগরে চালকেপাড়ার ভুবনেশ্বরী মন্দির।

[]

Remove ads

তথ্যসূত্র

উৎস

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads